সুওয়াল : মাসিক মদীনা জুলাই/৯৬ইং সংখ্যায় নিম্ন বর্ণিত
প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়- প্রশ্ন : আমাদের নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাথার চুল বাবরী রাখতেন না
মুড়াইতেন?
উত্তর : আমাদের প্রিয় নবী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যৌবনে
মাথায় বাবড়ী চুল রাখতেন। সপ্তম হিজরীতে, অষ্টম হিজরীতে ও দশম হিজরীতে
ওমরাহ্ এবং হজ্ব করার পর মাথা মুণ্ডন করেছিলেন। শেষের দিকে মাথার চুল খাটো করেও
রাখতেন।
এখন আমার
জানার বিষয় হলো যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার চুল মুবারক রাখার ব্যাপারে মদীনার প্রদত্ত উত্তর কতটুকু সঠিক হয়েছে?
জাওয়াব : মাসিক মদীনায় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার চুল মুবারক সম্পর্কে যে উত্তর প্রদান করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মনগড়া, অশুদ্ধ ও হাদীছ শরীফ উনার খেলাফ। যা পাঠক সমাজকে ভুল
ফতওয়ার মাধ্যমে বিভ্রান্ত করে সুন্নতের খেলাফ (বিপরীত) আমল করতে উৎসাহিত
করেছে। মাসিক
মদীনায় যে,
তিনবার চুল মুবারকমুণ্ডন করার কথা বলা হয়েছে, তা শুদ্ধ নয়। সঠিক জবাব হলো- নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৬ষ্ঠ হিজরী, ৭ম হিজরী, ৮ম হিজরী,
তিনবার ওমরার নিয়তে চুল মুবারকমুণ্ডন করেছেন। আর ১০ম
হিজরীতে বিদায় হজ্বের সাথে ওমরাহ্ করেছেন। তখনো চুল মুবারকমুণ্ডন করেছেন। সর্বমোট
এ চারবারই তিনি চুল মুবারকমুণ্ডন করেছেন, যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে,
عن
انس رضى الله تعلى عنه قال اعتمر رسول
الله صلى الله عليه وسلم اربع عمر كلهن فى ذى القعدة الا التى كانت مع حجته عمرة
من الحديبية فى ذى القعدة وعمرة من العام المقبل فى ذى القعدة وعمرة من الجعرانة
حيث قسم غنائم حنين فى ذى القعدة وعمرة مع حجته.
অর্থ :“হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারবার ওমরাহ্ করেছেন।
প্রত্যেকটিই করেছেন, জিলক্বদ মাসে। তবে হজ্বের সাথে যেটা আদায় করেছেন, সেটা ব্যতীত। (কেননা তা ছিল জিলহজ্ব মাসে) একটি ওমরাহ্ করেছেন, হুদায়বিয়া হতে জিলক্বদ মাসে ৬ষ্ঠ হিজরীতে। একটি তার পরবর্তী বছর (৭ম হিজরীর)
জিলক্বদ মাসে,
যাকে ওমরাতুল কাজ্বাও বলা হয়। একটি ওমরাহ্ করেছেন, জি’রানা থেকে যেখানে তিনি হুনাইনের গণীমত বন্টন করেছেন, (৮ম
হিজরীর) জিলক্বদ মাসে। আর একটি ছিল, উনার হজ্বের সাথে। অর্থাৎ ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্বে।” (বোখারী, মুসলিম,
মেশকাত, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, শরহে নববী, ফতহুল মুল্হিম, মেরকাত,
আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্
ত্বীবী,
তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)
মাসিক
মদীনায় আরো বলা হয়েছে যে, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষের দিকে চুল মুবারক খাটো করেও
রাখতেন।তার এ জবাবও সঠিক হয়নি। কারণ তিনি (নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে চারবার ওমরাহ ও একবার হজ্ব
করেছেন,
শুধু তখনই স্বীয় মাথা মুবারকের চুল মুবারকমুণ্ডন করেছেন।
এছাড়া আর কখনো মাথা মুবারকমুণ্ডন করেননি বা চুল মুবারক খাটো করে রাখেননি। অন্য
সময়ে তিনি সর্বদা তিন প্রকারের এক প্রকারে চুল মুবারক রাখতেন। যাকে হাদীছ শরীফের
বর্ণনায় জুম্মা,
লিম্মা ও ওফরা বলে। অর্থাৎ কানের লতি বরাবর, কাঁধ ও কানের লতির মাঝামাঝি এবং কাঁধের কাছাকাছি। আবার কোন কোন সময় কানের
মাঝামাঝি চুল মুবারকও রাখতেন, যাকে নিছ্ফু উজুনাইহে বলা হয়।
উল্লিখিত
সুন্নতি পরিমাপ ব্যতীত অন্যকোন প্রকারে তিনি কখনো চুল মুবারক রাখেননি। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার
নুবুওওয়াতী জিন্দেগী মুবারকের শুরুতে কিম্বা শেষে কখনই চুল মুবারক সুন্নতি
পরিমাপের চেয়ে বড় করেও রাখেননি এবং খাট বা ছোট করেও রাখেননি। (তিরমিযী, জামউল ওসায়েল, সমূহ সীরতের কিতাব)
অতএব, মাসিক মদীনার সম্পাদকের দলীল বিহীন, মনগড়া ও অশুদ্ধ ফতওয়া দেয়া থেকে
বিরত থাকা উচিৎ। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত
রয়েছে,
“যারা মনগড়া ও ভুল ফতওয়া দেয়, ক্বিয়ামতের
দিন তাদের জিহ্বা কেটে
দেয়া হবে।”
বিশেষ করে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপ করা কঠিণ
শাস্তির কারণ। যা পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ
করা হয়েছে,
من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থ :“যে ব্যক্তি সেচ্ছায় আমার প্রতি
মিথ্যারোপ করে,
সে যেন দুনিয়ায় থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে
নেয়।”
(বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ফতহুল
বারী,
ওমদাতুল ক্বারী, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত,
শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব) অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম যা বলেননি, তা বলেছেন, যা করেননি, তা করেছেন,
যার অনুমোদন দেননি, তার
অনুমোদন দিয়েছেন ইত্যাদি বলা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয ও হারাম। যার শেষ পরিণতি হচ্ছে-
জাহান্নাম। সুতরাং এ দূর আসমানে উদ্ভাসিত ধরণের
জেহালতপূর্ণ,
বানোয়াট, দলীলবিহীন ফতওয়া হতে সতর্ক থাকা
সকলের জন্য অপরিহার্য।
আবা-৩৭
0 Comments:
Post a Comment