ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দা’ওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ্
ওয়া কারামত, ফখরুল আওলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আ’যম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত
দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে-
একজন কুতুবুয্ যামান উনার দীদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকা একজন ছেলের
সুস্থ অবস্থায় সন্ধান লাভ
সাইয়্যিদুনা
হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে অনুপলব্ধির কারণে সাদামাটা প্রকৃতির
মানুষ মুহম্মদ আব্দুর রশীদকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। আমরা পূর্বেই বলেছি, সাধারণ
মানুষ তো বটেই, এমনকি স্বার্থান্ধ ও অজ্ঞ মানুষ এবং তথাকথিত বিদ্বান-বিদুষীরাও মাহবূব
ওলীআল্লাহ উনাদেরকে অব্যর্থ কবিরাজ এবং বাকসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব ভাবতে অভ্যস্ত। নাউযুবিল্লাহ! হারানো ছেলেকে ফিরে পাবার ব্যাকুলতা মুহম্মদ
আব্দুর রশীদের স্বার্থপরতা নয়। এটি
পিতৃসুলভ সহজাত আগ্রহ,
উৎকণ্ঠা ও আকুতি। সময়ের
অতিবাহন কষ্টের হলেও মুহম্মদ আব্দুর রশীদের প্রত্যয়ী আশাবাদ যে, ছেলে
মুহম্মদ ইউসুফ আলী সহসাই ফিরে আসবে।
মহান
আল্লাহ পাক সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এবং উনার প্রিয়তম হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা উনাদের উদ্দিষ্ট ব্যবস্থায় মনোনীত
মাহবূব ওলীগণ উনাদের মুবারক উছীলায় কত যে কাজ সম্পাদন করেন! আর কত যে অতুলনীয়
মর্যাদা, সম্মান, বুযুর্গী ও ক্ষমতা উনাদেরকে দান করেছেন! এ মর্মে প্রসিদ্ধ উক্তি রয়েছে।
তা হলো :
اولیاءرا
ہست قدرت از الہ + تیر جستہ باز گرداند
زراہ
অর্থ : “সূক্ষ্মদর্শী
ওলীআল্লাহগণ উনার নিক্ষিপ্ত তীর নিশানায় বিদ্ধ হওয়ার পূর্বেই আপন নিয়ন্ত্রণে
ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।”
সুবহানাল্লাহ! শুধুই উক্তির জন্য এ উক্তি নয়। মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহু তায়ালা এবং নূরে মুজাসসাম, মাশুকে
মাওলা, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুবারক বখশিশে
মাহবূব ওলীআল্লাহ উনাদের মান, শান,
মর্যদা ও অতুলনীয় ক্ষমতার এটি এক বাস্তব
উদাহরণ। প্রেক্ষিত কারণে সাইয়্যিদুনা হযরত
দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল সম্মান ও কারামতসমৃদ্ধ মুবারক
ইচ্ছায় মুহম্মদ ইউসুফ আলী’র ফিরে আসাও অবধারিত এবং তার আসার সময়ও সমাগত।
রাতের
গভীরে মুহম্মদ আব্দুর রশীদের মনে হয়েছে, তার ছেলে আজই আসবে। রাত শেষে দিনেও ছেলের কথাই মনে হচ্ছে বারবার। মুহম্মদ আব্দুর রশীদ রাজারবাগ পাক দরবার শরীফ-এ উদ্দিষ্ট
কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ তিনি পেছন ফিরে দেখেন
মুহম্মদ ইউসুফ আলী তার একান্ত কাছে দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষণ
অপলক তাকিয়ে থেকে বাঁধভাঙ্গা মমতায় ছেলেকে তিনি বুকে জড়িয়ে ধরেন। পিতা-পুত্রের বুকের নিবিড় আলিঙ্গনে এখন উভয়ের মুখের কথার
মৃত্যু ঘটেছে। দুজনেই নির্বাক। মনের মধ্যে বেদনা-বিমুগ্ধ আবেগের উথাল-পাথাল ঢেউ। পিতার দুচোখে আনন্দ ও ইতমিনানের মহাপ্লাবন। এ প্লাবন সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস
সালাম উনাকে উপলব্ধিজনিত কারণে নয়। বুকের
গভীরে হারানো ছেলে মুহম্মদ ইউসুফ আলী’র উষ্ণ সান্নিধ্যের কারণে। মুহম্মদ ইউসুফ আলী’র দুচোখেও পানি। কারণ অনেক দিন পর সে আপন ঠিকানায় প্রত্যাবর্তন করেছে।
সাইয়্যিদুনা
হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি পূর্বেই বলেছেন, মুহম্মদ
ইউসুফ আলী থাকা খাওয়ার বিনিময়ে কোনো এক দোকানে কাজ করছে এবং সে ভাল আছে। ছেলের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তার কাছে সে কথাই জানতে
পেলেন মুহম্মদ আব্দুর রশীদ। ছেলের
কাছে আরো জানা গেলো,
গত ক’দিন ধরেই বাড়ি আসার জন্য সে অন্তরে ব্যাকুল ইচ্ছে অনুভব
করছিল। অশ্রুভেজা চোখে ছেলেকে নিয়ে তিনি
গেলেন সূক্ষ্মদর্শী ও মাহবূব ওলীআল্লাহ, ওলীয়ে মাদারজাদ, ছাহিবে
কাশফ ওয়া কারামত,
আওলাদুর রসূল সাইয়্যিদুনা দাদা হুযূর ক্বিবলা হযরতুল
আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারক-এ। ক্বদমবুছী করলেন। নিবেদন
করলেন : “হে দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! এই তো আমার ছেলে। এইমাত্র সে এসেছে। আপনার মুবারক উছীলায়
ছেলেকে আমি ফিরে পেয়েছি।” ছেলে মুহম্মদ ইউসুফ আলীও
সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে ক্বদমবুছী করে।
সাইয়্যিদুনা
হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মুহম্মদ আব্দুর রশীদকে বলেন : “মহান
আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের
শুকরিয়া আদায় কর। ছেলেকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাও। ছেলের মা এবং অন্যান্য আত্মীয়-পরিজনের মনের ব্যথা উপশম কর। তাদেরকে ইতমিনান দান কর।” এ মুবারক
নির্দেশের অনতিপরেই মুহম্মদ আব্দুর রশীদ তার প্রাণপ্রিয় ছেলেকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি
অভিমুখে রওয়ানা হন। দীর্ঘদিন পর পিতা-পুত্রের একসঙ্গে
বাড়ি যাওয়া। এ যে কী অতুলনীয় আনন্দের, তা
প্রকাশের ভাষা আছে কী?
নেই। শুধু
সাদাসিধে মানুষ মুহম্মদ আব্দুর রশীদ কেন! এ ক্ষেত্রে নানা কারণে প্রকাশ রীতি ও
অনুভবের গভীরতার ভিন্নতা থাকলেও অজ্ঞ-প্রাজ্ঞ, মুর্খ-পণ্ডিত,
শিক্ষিত-অশিক্ষিত, বিদ্বান-বিদুষী, ধনী-নির্ধন
সকল পিতারই আপন সন্তানের প্রতি প্রেম, ভালোবাসা ও স্নেহবাৎসল্যের প্রকৃতি, পরিধি, ব্যাপ্তি
ও স্থিতি অভিন্ন। (অসমাপ্ত)
আবা-২২০
0 Comments:
Post a Comment