ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দা’ওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আওলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আ’যম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম
উনার স্মরণে-
একজন কুতুবুয্ যামান উনার দীদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
তিন
দিনব্যাপী অঝোর ধারার বৃষ্টি
নেক দুআ’র উসীলায় নিমিষেই বন্ধ
চলমান
আলোচনায় আমরা ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা দাদা হুযূর ক্বিবলা হযরতুল আল্লামা
সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার অগণিত কারামতের মধ্যে দু’ একটি বিষয়ে কিঞ্চিৎ
আলোকপাত করার কোশেশ করছি। মূলত তিনি নিজেই ছিলেন কারামত। এ
সম্পর্কে পূর্বেও আমরা আলোচনা করেছি। জানা প্রয়োজন যে, কারামতের মূল অর্থ হলো সম্মান, বুযুর্গী। অপরকে
অক্ষম করে দেয়ার শক্তি, ক্ষমতা, প্রভাব, প্রতিপত্তি।
এ বুযুর্গী, সম্মান ও ক্ষমতা
অভ্যন্তরীণ বিষয়। নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যে কাজ, তা প্রকাশ্যে
সংঘটিত হয়। তবে মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সঙ্গে মাহবূব ওলীআল্লাহ উনাদের যে
দায়িমী মুয়ামিলা, দায়িমী দীদার সে বিষয়গুলো অবশ্যই স্বতন্ত্র। এমর্মে
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন: æমহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে আমার এমন নিগূঢ় দায়িমী
নৈকট্য-সম্পর্ক, যেখানে নিকটবর্তী কোন ফেরেশতা আলাইহিস সালাম এবং
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্থান সংকুলান হয় না।” সুবহানাল্লাহ!
ওলীআল্লাহগণ উনাদের সঙ্গে যে কাজ, তা মূলত গোপনে
সংঘটিত হয়। তাই নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মু’জিযা প্রকাশ পাওয়া
জরুরী। কিন্তু ওলীআল্লাহগণ উনাদের কারামত প্রকাশ পাওয়া
অবধারিত সাব্যস্ত হয়নি। কারামত, কামালতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া সত্ত্বেও কামালত কখনোই
কারামতের উপর নির্ভরশীল নয়। সূক্ষ্মদর্শী ওলীআল্লাহগণ উনাদের মাক্বাম নিরূপণে
বাহ্যিক কারামত আদৌ কোন মানদ- নয়। মহান আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আহকাম প্রকাশ এবং তা’ প্রতিপালনের
মাধ্যমে মুহব্বত-মা’রিফাত হাছিলের লক্ষ্যে মানুষকে প্রত্যয়ী ও অভ্যস্ত করে
তোলার ক্ষেত্রে বাহ্যিক কারামতের অবদান অতুলনীয়।
সাধারণ মানুষ কারামতকে কামালতের অনুষঙ্গ না ভেবে শুধু
অলৌকিক বিষয় হিসেবে একে মূল কারামত ভাবতে অভ্যস্ত। কামিয়াবীর
স্তরভেদে ওলীআল্লাহগণ উনাদের কারামত শতধা বিভক্ত। সাধারণ
মানুষ এসবে বেখবর। প্রকৃত প্রস্তাবে কামালতই যে কারামত, সে সম্পর্কে মানুষ
অজ্ঞ। এমন সূক্ষ্ম কারামত এবং এর মহিমা ও তাৎপর্য আম মানুষের
উপলব্ধির কাছাকাছি নয়। কামিয়াবীর শীর্ষ সোপানে অধিষ্ঠিত ওলীআল্লাহগণ
উনাদের পাওয়ার আনন্দ ও না পাওয়ার বেদনা অন্তর্লীন হওয়ার মধ্যে উনাদের কারামত-এর
পৃথক কোন তাৎপর্য ও মহিমা তালাশের প্রয়োজন আর থাকেনা।
মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি হাছিলের অনিবার্যতা সম্পর্কে
উদাসীন মানুষ অন্তরের নির্মলতা লাভের (ইখলাছ) কোশেশ-এর পরিবর্তে কেবল দুনিয়ার
স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বাহ্যিক সমস্যা ও সঙ্কট নিরসনের জন্য ওলীআল্লাহগণ উনাদের মুবারক
আশ্রয় খোঁজে। বাহ্যিক বালা-মুছীবত থেকে মুক্তিলাভের জন্য এসব মানুষ
ওলীআল্লাহগণ উনাদেরকে কেবলই অব্যর্থ ডাক্তার বা কবিরাজ ভাবতে অভ্যস্ত। সংশ্লিষ্ট
ওলীআল্লাহ উনার মুবারক ওসীলায় বিপদ-আপদ দূর হয়ে কাঙ্খিত ফললাভকেই সাধারণ মানুষ
কারামত মনে করে থাকে। নিঃসন্দেহে এটি কারামত। কিন্তু
নৈকট্যপ্রাপ্ত ওলীআল্লাহগণ উনাদের মান-শান পরিপন্থী বিরূপ আক্বীদার কারণে মানুষ
বিনাশপ্রাপ্ত হয়। ইছলাহ হাছিল করে আল্লাহওয়ালা হওয়া তাদের পক্ষে আর
সম্ভব হয়ে উঠেনা।
মানুষের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ যাবতীয় সমস্যা-সঙ্কটই
মাহবূব ওলীআল্লাহগণ উনাদের মুবারক ওসীলায় দূর হয়ে যায়। তাই
উনারা মানুষের সামগ্রিক বিষয়ের চিকিৎসক।
উনারা অন্তরের রোগ নিরাময়কারী। ওলীআল্লাহগণ
উনাদের মূল কারামত হলো আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাদের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য নৈকট্য সংযোগে সুন্নতের ইত্তিবায় অধিষ্ঠিত হয়ে
ইস্তিক্বামত হাছিল করা এবং মুহব্বত-মা’রিফাতে অনুক্ষণ নিমগ্ন থাকা। বিষয়টি
সাধারণ মানুষের আক্বল ও সমঝ-এর সীমাহীন উর্ধ্বে থাকায় স্থূল বিবেচনায় বাহ্যিক
কারামত-এর প্রতি সাধারণ মানুষের এতো আকর্ষণ।
যদিও বাহ্যিক কারামতের তাৎপর্য ও
গভীরতা বুঝাও তাদের পক্ষে দুরূহ। (চলবে)
আবা-২১৩
0 Comments:
Post a Comment