ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দা’ওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ্ ওয়া কারামত, ফখরুল আওলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আ’যম, লিসানুল
হক্ব, গরীবে নেওয়াজ,
আওলাদে রসূল,
আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর
ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে-
একজন কুতুবুয্ যামান উনার দীদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
দীর্ঘদিন নিখোঁজ
থাকা একজন ছেলের
সুস্থ অবস্থায়
সন্ধান লাভ
মুহম্মদ
আব্দুর রশীদ। অত্যন্ত সাদাসিধে মানুষ। বাক সংযমী। প্রয়োজন না হলে কথা বলেন না। এখন বয়ঃবৃদ্ধ। গ্রামের বাড়ী গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ
থানায়। প্রায় সবারই প্রিয়পাত্র। নিদেন পক্ষে আজ অনেক বছর যাবৎ তিনি ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদুর রসূল, মুসতাজাবুদ দাওয়াত সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ৫
নম্বর আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ দরবার শরীফস্থ
বাড়ীতে থাকেন। সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ অবধি
মুহম্মদ আব্দুর রশীদ তিনি উনার মুবারক খিদমতে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি এখনো এ বাড়ীতেই থাকেন। এতো একাত্ম
হয়েছেন যে, এ বাড়ীকেই তিনি নিজের বাড়ী
বলে মনে করেন। মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়ী গাজীপুরে যান। আর্থিক অবস্থা খুব সচ্ছল নয়।
বিদেশে ছেলে পাঠালে আর্থিক দুরবস্থা দূর হবে ভেবে মুহম্মদ আব্দুর রশীদ তার
ছেলে মুহম্মদ ইউসুফ আলীকে বিশ বছর আগে দু’লক্ষ টাকা ব্যয়ে দালালের মাধ্যমে সউদী আরব পাঠান। দালাল কর্তৃক টাকা আত্মসাতের কারণে
যাওয়ার কিছুদিন পরেই মুহম্মদ ইউসুফ আলী সউদী আরব থেকে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। ধার-দেনা করা
দু’লক্ষ টাকা লোকসানে মুহম্মদ আব্দুর রশীদ
প্রকট মনোবেদনায় আক্রান্ত হন। প্রায় বিশ বছর বয়সী পুত্র মুহম্মদ ইউসুফ আলীও নিজেকে ধিকৃত
মনে করতে থাকে। শোকে-দুঃখে পিতা-পুত্র মুহ্যমান। এক পর্যায়ে মুহম্মদ ইউসুফ আলী বাড়ী থেকে হারিয়ে যায়। নিঁখাজ হয়ে
যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়না। পুত্র শোকে পিতা-মাতার অন্তরে নিদারুণ
কষ্ট। আত্মীয়-পরিজনেরও দুর্ভাবনার অন্ত নেই। দুঃখ ভারাক্রান্ত পিতা ছেলেকে ফিরে পেতে বিভিন্ন কবিরাজসহ
অনেকের কাছেই গিয়েছেন। ছেলের বর্ণনা দিয়েছেন। অর্থ খরচ করেছেন। কবিরাজরা অনেক চেষ্টা করেছে, অনেক কথা বলেছে, ব্যবস্থাপত্র দিয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ
নিতে বলেছে। কবিরাজের নির্দেশ মুহম্মদ আব্দুর রশীদ সঠিকভাবে পালন করেছেন। কতো যে
কান্নাকাটি করেছেন, সাধ্যমতো দান খয়রাত করেছেন
তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু ছেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ছেলে ফেরত আসেনি। পিতার ধারণা, ছেলে নিহত হয়েছে অথবা তার ইন্তিকাল হয়েছে। সে আর কোনদিনও ফিরে আসবে না। তাই মুহম্মদ
আব্দুর রশীদ নিরাশ।
ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ দাওয়াত, আফদ্বালুল আওলিয়া, ছাহিবে ইলম ওয়াল হিকাম ওয়াল কাশফ ওয়াল কারামত, খাজিনাতুর রহমাহ, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, ছাহিবে ইসমে আ’যম, মিছদাক্বে কুরআন ওয়াল হাদীছ, ফখরুল আওলিয়া, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি
ছিলেন ছূফীয়ে বাতিন। তিনি ছিলেন প্রকাশ ও প্রচার বিমুখ। গভীর সমঝ এবং একান্ত সূক্ষ্মদর্শিতা ছাড়া উনার সম্পর্কে ধারণা
লাভের কোন উপায়ই কারো ছিলোনা। এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, একান্ত কাছে থেকেও আমরা অনেকেই উনার মান, শান, বুযুর্গী, ইযযত, ঐতিহ্য, মাক্বাম উপলব্ধি করতে পারিনি। আর উনার মান, শান, বুযুর্গী ও মাক্বাম এতো
উচ্চতায় এবং এতো অতল গভীর ছিলো যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে তা বুঝা সম্ভব হবে কী করে? প্রেক্ষিত কারণে দীর্ঘ অনেকগুলো বছর একাদিক্রমে মুবারক খিদমতে নিয়োজিত থেকেও
খাদিম মুহম্মদ আব্দুর রশীদ যে ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরতুল
আল্লামা দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে আদৌ চিনতে পারবেন না এবং উনার
কারামত, বুযুর্গী ও মাক্বাম সম্পর্কে অনবহিত
থাকবেন, এটিই অতি স্বাভাবিক। অনবহিতির
কারণে নিখোঁজ ছেলেকে ফেরত পাবার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা
আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারকে তিনি যে কোন আরজি পেশ করবেন না, এটিও সঙ্গত ও স্বাভাবিক।
মুহম্মদ আব্দুর রশীদ প্রতিক্ষণ বিমর্ষ। কাজকর্মে, দায়িত্ব পালনে, খিদমতে ইচ্ছে সত্ত্বেও অনীহ, উদাসীন, আনমনা। খাওয়া-দাওয়ায়
নিষ্পৃহ। জীবনের প্রাত্যহিকতায় একান্তই অনিয়ম। ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা
হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি একদিন জানতে চান: “তোমার কী হয়েছে আব্দুর রশীদ? তুমি এতো বিমর্ষ কেন? আমাকে বলো।” স্বল্পভাষী মুহম্মদ আব্দুর
রশীদ অবনত দৃষ্টিতে শুধু দাঁড়িয়ে থাকেন। কোন কথা বলেন না, বলতে পারেন না। কেবল চোখ দিয়ে টপ টপ পানি পড়তে থাকে। সাইয়্যিদুনা দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি আবার
প্রশ্ন করেন: “কী হয়েছে তোমার? আমাকে খুলে বলো।” কান্নাজড়িত কণ্ঠে মুহম্মদ আব্দুর রশীদ তিনি বলেন: “হুযূর বেয়াদবী ক্ষমা চাই। আমার এক ছেলেকে সউদী আরব পাঠিয়েছিলাম। দালালরা টাকা
আত্মসাৎ করেছে। এ কারণে সেখান থেকে সে ফেরত এসেছে। ফেরত এসে হারিয়ে গেছে। নিখোঁজ হয়েছে। অনেকদিন হয় তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খোঁজ
করেছি। কিন্তু ছেলেকে পাইনি হুযূর! দয়া করে আমার ছেলেকে আমার কাছে ফেরত এনে দিন হুযূর।” (চলবে)
(চলবে)
আবা-২১৭
0 Comments:
Post a Comment