১৭ই অক্টোবর, ২০১৯ তারিখে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের সম্পূর্ণ প্রেসরিলিজ-এনটিভির মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডার বিরুদ্ধে
১৭ই অক্টোবর, ২০১৯ তারিখে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের সম্পূর্ণ প্রেসরিলিজ-

বিষয়: আশুলিয়ার চাঞ্চল্যকর শিশু আব্দুস সাত্তার আহরার হত্যাকাণ্ডের খুনীদের বাঁচাতে এনটিভি’তে ‘প্রতারণাপূর্ণ’ প্রতিবেদন প্রচার এবং এনটিভি’র সাংবাদিক ‘সফিক শাহীন’ কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
স্থান: জাতীয় প্রেসক্লাব, ৩য় তলা
আয়োজনে : শিশু আব্দুস সাত্তার আহরারের পরিবারবর্গ।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ!
সম্প্রতি এনটিভি নামক বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত সাংবাদিক সফিক শাহীনের একটি প্রতিবেদনে আশুলিয়ার চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যা মামলার চার্জশিটভূক্ত খুনীদের পক্ষাবলম্বন এবং খুনীদের বাচাতে বাদী ও সাক্ষী হিসেবে আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে জঘণ্য মিথ্যাচারের প্রতিবাদে আপনাদের সম্মুখে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে ৩য়তলায় কনফারেন্স রুমে উপস্থিত হয়েছি।

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আপনাদের হয়তো জানা আছে বিগত ১১/১০/২০১৯ তারিখে এনটিভি “মামলাবাজ সিন্ডিকেট” শীর্ষক একটি ধারবাহিক প্রতিবেদন প্রচার করে। সেটা তাদের দুপুরের খবর, মধ্যাহ্নের খবর, সন্ধ্যার খবর, রাতের খবর ইত্যাদি বিভিন্ন সংবাদের মধ্যে আমার নামে মিথ্যা, বানোয়াট কাহিনী প্রচার করে।
সেখানে দেখানো হয়, আশুলিয়া থানার চারাবাগ এলাকার হত্যা মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামী ফযলে হামীম সায়মন, সোহরাব হোসেনগং (মামলা নং ১৬৮৮/১৮) এবং মাহবুবুর রহমান খোকন, নাজমা আক্তার এরকম কিছু প্রতারক শ্রেণীর লোক আমার নামে বিভিন্ন মিথ্যা মামলার অভিযোগ করছে।
সেই প্রতিবেদনে এনটিভির রিপোর্টার শফিক শাহীন বলেছে, আমি নাকি “শতাধিক মানুষের বিরুদ্ধে দায়ের করা, অন্তত ১০ টি মিথ্যা মামলার বাদি।” এরকম আরো অনেক মিথ্যা মামলা নাকি আমি পরিচালনা করছি।
আমি নিশ্চিত, সফিক শাহীন খুনীদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে খুনীদের বাঁচাতে এরুপ চরম মিথ্যা, বানোয়াট ও প্রতারণাপূর্ণ প্রতিবেদন এনটিভিতে প্রচার করে, যেখানে মামলার বাদী হিসেবে বিন্দুমাত্র আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়নি, উপরন্তু আমার অগোচরে ভিডিও করে সেটা টিভিতে প্রচার করে উল্টো আমাকে দোষী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সে যদি নিরপেক্ষ ও সৎ সাংবাদিক হতো, তবে সে আড়াল থেকে লুকিয়ে কেন আমার ছবি তুললো ? কেন সামনে থেকে আমার বক্তব্য নিলো না ? তার ভয় কিসের ?

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আমি উক্ত প্রতারণাপূর্ণ রিপোর্টের মুখোশ উন্মোচনের জন্য আপনাদের জ্ঞাতার্থে মূল ঘটনা তুলে ধরছি।
আমি মুহম্মদ মফজিুল ইসলাম। আমার শশুড়বাড়ী আশুলয়িা থানার চারাবাগ ইউনয়িনরে কুমকুমারী গ্রামরে খলফিাবাড়ী। আমি এই মামলার বাদী।
অত্র মামলার ভিকটিম মোঃ আব্দুস সাত্তার আহরার, বয়স- ১৩ বছর সম্পর্কে আমার শ্যালক (স্ত্রীর ছোট ভাই)। ঘটনার তারিখে বিগত ২৯/০৮/২০১৬ ইং, সময়- অনুমান সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিট।

অত্র মামলার ঘটনার ১৫ দিন আগে আমার শ্বশুর (ভিকটিমের বাবা) মারা যান। আমি আমার স্ত্রী সহ স্ত্রীর বাপের বাড়ীতে অবস্থান করতাম। ঘটনার দিন আমার শ্যালক (ভিকটিম) সন্ধ্যার আগ মূহূর্তে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। অনেক রাত পর্যন্ত বাসায় না ফিরে আসায় আমরা চিন্তিত হয়ে যাই রবং বিভিন্ন স্থানে অনেক খোজা খুজি করি। এবং আমাদের খোজা খুজি অব্যাহত থাকে কিন্তু শ্যালককে না পেয়ে বিগত ৩১/০৮/২০১৬ ইং তারিখ আমার অপর শ্যালক মুহম্মদ আহমুদুল্লাহ মাসুদ আশুলিয়া থানায় সাধারণ ডাইরী করেন। খোজা খুজি অব্যাহত থাকা কালে বিগত ০৮/০৯/২০১৬ ইং তারিখ কামাল সিকদার নামের আমাদের এক পরিচিত ব্যাক্তি আমাদেরকে জানায় যে, বিগত ২৯/০৮/২০১৬ ইং তারিখ সন্ধ্যা ৭.৩০ ঘটিকায় আসামী সজিব আমার শ্যালককে নিয়ে তার বাসায় যায়। সজীব তার পরিবার অর্থাৎ পিতা-মাতা সহ আমাদের এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করত। আমি সজিব এর মা বাবার কাছে আমার শ্যালক এর কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় যে, আমরাও খোজা খুজি করে সজীব ও আব্দুস ছাত্তারের বিষয়ে খবর জানাবো। কিন্তু কোন খবর না দেওয়ায় আমি সজিব এর বাসায় গিয়ে জানতে পারি গত ১৫/০৯/২০১৬ ইং তারিখ সজিবের মা বাবা সহ অন্যান্যরা উক্ত বাসা ছেড়ে চলে গেছে। আমি আসামীদের গ্রামের বাড়ীর ঠিকানা সংগ্রহ করে বিগত ১৭/০৯/২০১৬ ইং তারিখ সজীবের গ্রামের বাড়ীতে যাই । সেখানে গিয়ে জানতে পারি যে, সজীব এর পুরো পরিবার (মা-বাবা) সহ আবার ঢাকায় চলে এসেছে এবং তাদের সাথে একজন নাবালক ছেলে ছিল। ঐ নাবালক ছেলেটি আমার শ্যালক আব্দুস ছাত্তার আহরার ছিল মনে করিয়া এবং আমার শ্যালকের খ্জো না পেয়ে অপহরণ হয়েছে মনে করিয়া বিগত ২৫/০৯/২০১৬ ইং তারিখে আশুলিয়া থানায় মামলা করতে যাই, উক্ত থানা মামলা গ্রহন না করায় আমি বাদী হইয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল নং-০১, ঢাকায় বিগত ২৮/০৯/২০১৬ ইং তারিখে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। বিজ্ঞ আদালত আমার অভিযোগটি গ্রহণ করিয়া উহা এজাহার হিসাবে গণ্য করার জন্য আশুলিয়া থানা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিলে বিগত ০৭/১০/২০১৬ ইং তারিখ আশুলিয়া থানায় অত্র মামলাটি এজাহার হিসাবে গণ্য করিয়া তদন্ত শুরু করে।

তদন্তের এক পর্যায়ে বিগত ০৭/০১/২০১৭ ইং তারিখ থানা পুলিশ আমার শ্যালক অপহরণের সহিত জড়িত সন্ধেহে আসামী হিসাবে ফজলে হামীম সাইমন কে গ্রেফতার করে, পুলিশ আমাকে সংবাদ দিলে আমি আশুলিয়া থানায় যাই। আমার সম্মূখে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামী সাইমন স্বীকার করে যে, সে তার পিতা মোঃ সোহরাব হোসেন এর নির্দেশে আসামী সজিব এর মাধ্যমে আঃ সাত্তার আহরারকে নিয়ে ঘুমের ঔষধ চায়ের সাথে মিশিয়ে হখাওয়াইয়া অজ্ঞান করিয়া মরা গাংঙ এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে আসামী সাইমন, সজীব, মালেক এই তিন জন মিলে আমার শ্যালকে জবাই করে হত্যা করে লাশ মরা গাংঙ এর কচুরী পানার নীচে লুকিয়ে রাখে।
অত্র মামলার আসামী সোহরাব হোসেন আমার শ্বশুরের চাচাত ভাই। আমার শ্বশুরের সাথে সোহরাব হোসেনের সাথে দীর্ঘ দিন যাবৎ বিরোধ চলিয়া আসতে ছিল। আমার শ্যালক অপহরণ হইবার ১৫ দিন পূর্বে আমার শ্বশুর মারা যায়। আমার শ্বশুর মারা যাওয়ার পরে তার জানাযা ও দাফন নিয়ে সোহরাবের সহিত ঝগড়া ঝাটি হয় এবং শত্রুতা আরো বৃদ্ধি পায়।

আসামী সোহরাব ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচনের সময় আসামী সজিব সোহরাবের পক্ষে কাজ করে সেই সুবাদে সজীব এর সাথে আসামী সোহরাব ও তার ছেলে সাইমন এর সম্পর্ক ভালো ছিল। আমার শ্যালকের সাথেও সজীবের সম্পর্ক ভালো ছিল। আসামী ফজলে হামীম সাইমনের তথ্য মতে পুলিশ বিগত ০৮/০১/২০১৭ ইং তারিখ আসামী সজীবকে গ্রেফতার করে । সজীব গ্রেফতারের বিষয় জানতে পেরে আমি থানায় যাই। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আমার সম্মূখে স্বীকার করে যে, আসামী সোহরাব হোসেন মেম্বার প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে। ঐ নির্বাচন উপলক্ষে সজীব সোবরাব মেম্বারের পক্ষে কাজ করে। সেই সুবাদে সোহরাব মেম্বার ও তার ছেলে সাইমনের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পূর্ব শত্রুতার জের হিসাবে আসামী সোহরাব আমার শ্যালক আব্দুস সাত্তার আহরারকে অপহরণ করিয়া হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সাইমনের মাধ্যমে সজীবকে ডাকিয়া হত্যা করানোর বিনিময়ে ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এরপর সাইমন ও সজীব তাদের পরিচিত আসামী মালেকের সাথে আমার শ্যালককে হত্যার বিষয়ে পরিকল্পনা করে। ঘটনার দুই দিন পূর্বে আসামী মালেক এক পাতা ঘুমের ঔষধ ক্রয় করিয়া সজীবকে দেয় এবং ঐ ঘুমের ঔষধ খাওয়াইয়া সাত্তারকে অজ্ঞান করিয়া হত্যার পরিকল্পনা করে। তাদের এই পরিকল্পনা মতে ২৯/০৮/২০১৬ ইং তারিখ মাগরিবের নামাজের পর সন্ধ্যা অনুমান ৭.৩০ ঘটিকা সময় সজীব, সাত্তারকে জনৈক রবিউলের চায়ের দোকানে দুই কাপ চা তৈরী করে। এককাপ চায়ের ভিতরে ৪টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশাইয়া সাত্তারকে খাওয়ায়। এরপর সাত্তারকে নিয়ে সজীব মরাগাঙ এলাকার দিকে যাইতে থাকে। পিছনে পিছনে আসামী সাইমন ও মালেক যায়। মরাগাঙ এলাকায় গিয়ে আব্দুস ছাত্তার ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তখন সাইমন ও মালেক সাত্তারকে পানির মধ্যে নিয়ে চুবাতে চুবাতে চরের দিকে নিয়ে যায়। তারপর মালেক সাত্তারের দুই হাত ধরিয়া রাখে, সাইমন সজীবের নিকট থাকা ছুরি দিয়া আব্দুস সাত্তারের গলা কাটিয় হত্যা নিশ্চিত করে। এরপর তিনজন মিলে ছাত্তারের লাশ কচুরি পানার নিচে ঢাকিয়া রেখে ছুরি ও মোবাইল সেট পানিতে ফেলিয়া উক্ত স্থান হইতে চলিয়া আসে,পরে জানতে পারি আসামী সজীব ও মালেক বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। আসামীদের স্বীকারোক্তীতে দেওয়া তথ্য ও স্থান হতে আমার শ্যালকের দাঁতসহ মাথার খুলির অংশ উদ্ধার করেন। উহা ময়না তদন্ত করে। অতঃপর উক্ত মাথার খুলি এবং হাড় ‘ডিএনএ’ পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়। সেখানে ভিকটিমের মা ও সহোদর ভাইয়ের সাথে ৯৯.৯৯% মিল পাওয়া যায়।

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আমরা যেন মামলা তুলে নেই, সে জন্য্ খুনিরা বহুদিন ধরে আমাদের পরিবারকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলো। যা বিভিন্ন সময় মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। শুধু তাই নয়, খুনীদের আত্মীয় এমপি ইলিয়াস মুল্লা এই হত্যা মামলা আড়াল করতে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন রকম তদবির করে আসছিলে। এতেও কাজ না হওয়ায় এই নৃশংস হত্যাকান্ডের খুনীদের আড়াল করতে, মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এবং এনটিভি’র প্রতিবেদনের কারণে মামলার স্বাক্ষীরা যেন ভয়ে স্বাক্ষী দিতে না আসে সেজন্যই খুনীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এনটিভিতে আমার নামে মিথ্যা জালিয়াতিপূর্ণ প্রতিবেদন প্রচার করেছে।

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
খুনী সোহরাব, সায়মনগংদের বিরুদ্ধে আমরা কোন মামলা করিনি। আমরা শিশু আহরারকে প্রথমে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে আশুলিয়া থানায় জিডি করেছি। পরবর্তিতে যে ছেলে শিশু আহরারকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল এবং এলাকা ছেড়ে পরিবারসহ পালিয়ে গিয়েছিল তার নামে আমরা অপহরণ মামলা করি। মামলার এজাহারে সোহরাবগংদের কোন নাম ছিলনা। বরং তদন্ত কর্মকর্তার তদন্তে তাদের নাম প্রমাণিত হওয়ায় এবং মৃতের হাড়ের ডিএনএ টেস্টে আহরারের হত্যা নিশ্চিত হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশীটে “তদন্তে প্রকাশিত আসামী” হিসেবে সোহরাব, সায়মনগংদের নাম আদালতে দাখিল করে এবং তারা খুনী হিসেবে চিহ্নিত হয়।
অথচ উক্ত প্রতিবেদনে দাবী করা হয়, আমি নাকি ১০টি মিথ্যা মামলার বাদী। আমি সফিক শাহীনসহ খুনীদের চ্যালেঞ্জ করছি যে, তাদের দাবি অনুযায়ী আমি যদি কথিত ১০টি মিথ্যা মামলা করে থাকি তাহলে তারা পারলে মামলা নাম্বারসহ প্রমাণ দেখাক।

তা কিন্তু তারা তাদের প্রতিবেদনে দেখাতে পারেনি। বরং উল্টো প্রতারক সফিক শাহীন তার প্রতিবেদনে দূর থেকে অগোচরে ভিডিও করার মাধ্যমে দেখায়, আমি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের ২য় তলার বারান্দায় দাড়িয়ে আছি। সেই ভিডিও দিয়ে সে প্রচার করে যে, আমি দেশব্যাপী মিথ্যা মামলা দেয়ার জন্য আদালত পাড়ায় ঘুরে বেড়াই। অথচ আমি উক্ত মামলার স্বাক্ষীদের নিয়ে আদালতে গিয়েছিলাম। এটা কি সাংবাদিকতা নাকি প্রতারণা!
পাশাপাশি আমার শ্যালক আহমদুল্লাহ মাসুম ভিকটিমের আপন বড় ভাই এবং অত্র মামলার একজন স্বাক্ষী। তার সাক্ষাতকার নেয় এনটিভির কথিত প্রতিবেদক। সেই সাক্ষাৎকারে আহমদুল্লাহ মাসুম তার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। কিন্তু সেই এনটিভির প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক অংশটুকু কেটে কথিত প্রতিবেদনে প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে আরো স্পষ্ট হয় যে, কথিত সাংবাদিক সফিক শাহীন ইচ্ছাকৃতভাবে খুনীদের বাচানোর চেষ্টা করছে।

কাজেই প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আপনাদেরকে স্বাক্ষী রেখে সরকার ও প্রশাসনের নিকট আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ৫টি দাবী উত্থাপন করছি-
১) শিশু হত্যাকারীদের বাচাতে সফিক শাহীন প্রতারণাপূর্ণ সংবাদ প্রচার করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন করায় তাকে আইন আনুসারে বিচার করা।
২) খুনীদের পক্ষ নিয়ে বাদী ও সাক্ষীদের ভীতি প্রদর্শণ করতে সাংবাদিকতা মত দায়িত্বপূর্ণ পেশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করায় প্রতারক সফিক শাহীনকে সাংবাদিক মহল থেকে বয়কট করা।
৩) এই চাঞ্চল্যকর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খুনীদের আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করা।
৪) খুনিদের প্রাণনাশের হুমকি ধামকি থেকে রক্ষা পেতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার শিশু আব্দুস সাত্তার আহরারের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৫) মিডিয়াকে ব্যবহার করে একটি শিশু হত্যা মামলার খুনীদের আড়াল করতে এবং মামলার বাদী ও সাক্ষীদের ভীতি প্রদর্শন করতে যারা এনটিভিকে ব্যবহার করেছে সেই ফযলে হামীম সায়মন, সোহরাব হোসেন এবং মাহবুবুর রহমান খোকনের আত্মীয়দেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা।
সবশেষে আমি প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়ের প্রতি আহবান করবো-
মানবতার খাতিরে আপনারা নিহত শিশু আব্দুস সাত্তার আহরারের অসহায় পরিবারের পক্ষে এগিয়ে আসুন এবং হত্যাকারীদের সঠিক বিচার নিশ্চিতে প্রকৃত খুনীদের মিডিয়ায় চিহ্নিত করুন। পাশাপাশি খুনীদের সহযোগী এবং পক্ষ অবলম্বনকারীদের হলুদ সাংবাদিক সফিক শাহীনের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

নিবেদন-
মুহম্মদ মফিজুল ইসলাম
নিহত মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার আহরারের ভগ্নিপতি
-----------
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন চাঞ্চল্যকর নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার আহরারের ভগ্নিপতি মুহম্মদ মফিজুল ইসলাম। আরো বক্তব্য রাখেন, নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার আহরারের ভাই মুহম্মদ আহমদুল্লাহ মাসুম, মুহম্মদ হামিদুল্লাহ মাসুদ, ‍মুহম্মদ আনোয়ার, মুহম্মদ মনোয়ার এবং বাদীপক্ষের এ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।
সংযুক্তি-
১) মামলার চার্জশিট
২) ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট







এনটিভি যদি সত্যবাদী হবে, তবে ভিডিও ডিলিট করলো কেন?
এনটিভি যদি সত্যবাদী হবে, তবে ভিডিও ডিলিট করলো কেন?
রাজারবাগ দরবার শরীফ সম্পর্কে অপপ্রচারে ভরপুর এনটিভিতে ধারবাহিক পর্বগুলো এনটিভির ফেসবুক ও ইউটিউব পেইজ থেকে ডিলিট করে দিযেছে। এনটিভি’র যদি সত্যই হয়, তবে ভিডিওগুলো ডিলিট করলো কেন ?
ডিলিটকৃত ভিডিও লিঙ্ক-
১) https://tinyurl.com/y2jto3vp
২) https://tinyurl.com/y6tqcnt8
এনটিভি’র মিথ্যা প্রতিবেদনের গোমড় ফাঁস-ক) https://tinyurl.com/y2mte4dh
খ) https://tinyurl.com/y5h65hzy
গ) https://tinyurl.com/y6pequ9n
ঘ) https://tinyurl.com/y68hb8d6

কেন রাজারবাগ দরবার শরীফের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ?
Image result for রাজারবাগকেন রাজারবাগ দরবার শরীফের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ?
সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন অসংখ্য মুসলমান ছাত্রী যখন হিজাব ও বোরকা পরিধান করার কারণে নিপীড়নের শিকার হচ্ছিলো, ঠিক তখন তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে ঢাকাস্থ রাজারবাগ দরবার শরীফ। দরবার শরীফ থেকে প্রকাশিত দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার পক্ষ থেকে হাইকোর্টে এই বৈষম্যের প্রতিবাদে রিট দায়ের করা হয় এবং সেই রিটের কারণে হাইকোর্ট রুল দেয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বোরকা ও হিজাব পরিধান করার কারণে কোন ছাত্রীকে এখন থেকে আর হয়রানী করা যাবে না এবং হয়রানী করাকে অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য প্রশাসনকে আদেশ দেয়।
বোরকা ও হিজাব পরিহিতা ছাত্রীদের হয়নারী বন্ধে করতে রাজারবাগ দরবার শরীফের পক্ষ থেকে যে রিট করা হয় তা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত-
১) দৈনিক যুগান্তর- https://tinyurl.com/y39aeh79
২) দৈনিক ইনকিলাব- https://tinyurl.com/y6t5y4ae
৩) বাংলাট্রিবিউন- https://tinyurl.com/y3ftvwrg
মূলতঃ যাদের এজেন্ডা ছিলো পর্দানশীন ছাত্রীদের হেনস্তা করে বাংলাদেশে বোরকা নিষিদ্ধ করবে এই ঘটনার পরেই তারা ঢাকাস্থ রাজারবাগ দরবার শরীফের বিরুদ্ধে ক্ষেপে যায়, কারণ এ রিটের মাধ্যমে পর্দানশীন নারীদের বোরকা ও হিজাবের পক্ষে একটি আইনী ভিত্তি তৈরী হয়, যা আগে কখন ছিলো না। এরপরই ঐ বিশেষ দলটি ঢাকাস্থ রাজারবাগ শরীফের বিরুদ্ধে নানান প্রোপাগাণ্ডা ও অপপ্রচার তৈরীর উদ্যোগ নেয়। সম্প্রতি এনটিভি’তে প্রচারিত ধারবাহিক প্রতিবেদন সেই প্রোপাগাণ্ডারই অংশবিশেষ।
ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন, এনটিভির সেই কুখ্যাত সাংবাদিক সাংবাদিক সফিক শাহীনকে, যে রাজারবাগ দরবার শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা ধারাবাহিক রিপোর্ট তৈরী করেছে। সে মূূলতঃ সুলতানা কামালদের গোত্রের সদস্য, যাদের মূল কাজ মুসলমান নারীদের পর্দা ও বোরকার বিরুদ্ধে কাজ করা।
সুলতান মাহমুদ গযনবীর পীর সাহেব এর নিকট গমন


Image result for অলী আল্লাহ









সুলতান মাহমুদ গযনবীর পীর সাহেব এর নিকট গমন-
সতেরবার ভারত বিজয়ী গজনীর সুলতান মাহমুদের খেয়াল হলো তিনি ওলী আল্লাহর জিয়ারতে যাবেন। এদিকে-সেদিকে অনেক নামধারীর সাক্ষাতই হলো। তারা তাকে অনেক তাযীম-তাকরীমও করলো। কিন্তু সুলতান মাহমুদের ব্যাকুল মন তাতে শান্তি পেলনা। তিনি উজীরে আযমকে বললেন, অন্য কোথাও নিয়ে যেতে।

উজীরে আযম এবার তাকে নিয়ে আসলেন হযরত আবুল হাসান খারক্বানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আছে। অন্যান্যদের মত ইনি, তাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন না, এমনকি মোসাফাহ্ করার জন্য হাতও বাড়িয়ে দিলেন না। অতঃপর সুলতান মাহমুদ নিজেই সেখানে যথা নিয়মে বসে পড়লেন। তার তাক্বওয়া, রূহানী জ্ঞান তথা ইলমে লাদুন্নী সমৃদ্ধ তত্ত্বমূলক কথা সুলতান মাহমুদকে অভিভূত করলো। এক পর্যায় হযরত আবুল হাসান খারক্বানী রমহতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় পীর ছাহেব সুলতানুল আরিফীন, হযরত বায়েযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রশংসা করতে গিয়ে বললেন, “আমার পীর ছাহেব সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে যারা দেখেছেন তারা নাযাত পেয়েছেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়েছেন।” দ্বিগ্বীজয়ী সুলতান মাহমুদ এবার আর চুপ থাকতে পারলেননা। তিনি বলে উঠলেন, “হুযূর! আপনার পীর ছাহেব কি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আ’লামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকেও বড় হয়ে গেলেন? আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আবূ জেহেল, আবূ লাহাব সারাজীবনে লাখ-লাখ বার দেখলো এতদ্বসত্ত্বেও তারা জাহান্নামী বলে সাব্যস্ত হলো, আর আপনার পীর ছাহেবকে যেই দেখেছে সেই জামান্নাম থেকে নাযাত পেয়েছে, এটা কেমন কথা হলো?” সুলতান মাহমুদের প্রশ্ন শেষ না হতেই হযরত আবুল হাসান খারক্বানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বদনমন্ডলে ফুটে উঠলো রক্তিম আভা। তিনি জ্বালালী তবিয়তে বলে উঠলেন, “মুখ সামলে কথা বলো হে সুলতান।” আবূ জেহেল, আবূ লাহাব কখনও মহান আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আ’লামীন, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেনি। তারা দেখেছে তাদের ভাতিজা মুহম্মদকে (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।

গাছ, পাথর, বনের হরিণী, মেঘমালা মহান আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চিনেছে। তারা ছালাম দিয়েছে, ঈমান এনেছে। কিন্তু মক্কার কাফিরদের বেলায় কি তাই হয়েছে? বরং মহান আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তাদের জিহালতি ও গোমরাহী প্রকাশ পেয়েছে। নিন্মোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফে, “উনি কেমন রসূল, যিনি বাজারে যান, খাদ্য খান” অর্থাৎ কাফিররা মহান আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বাজার এবং খাদ্য ক্রয়ের মাঝে জ্যান্ত একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই দেখেছে। (নাউযুবিল্লাহ্)



ঢাকাস্থ রাজারবাগ দরবার শরীফ নিয়ে এনটিভি’র অপপ্রচারের জবাব (পর্ব– ৪)

Related imageঢাকাস্থ রাজারবাগ দরবার শরীফ নিয়ে এনটিভি’র অপপ্রচারের জবাব (পর্ব– ৪)

জমির দখলদারের পক্ষে এনটিভি সাংবাদিক

এনটিভি সাংবাদিক সফিক শাহীনের বানানো মিথ্যা রিপোর্টের ৫ম পর্বে খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালায় খলিল হাওলাদার নামক এক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যেখানে খলিল হাওলাদার বলে, ঢাকাস্থ রাজারবাগ দরবার নাকি জমি নিয়ে গেছে। ভিডিওতে দেখানো হয় ঐ জমির এক অংশে পুকুর করা হয়েছে, অন্য অংশে টিনের একটি ঘর তুলে মাদ্রাসার সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে। ভিডিও’র উপস্থাপন ছিলো এমন যে, এই কাজগুলো করে ঢাকাস্থ রাজারবাগ দরবার শরীফ মস্ত অপরাধ করে ফেলেছে।
[তথ্যসূত্র: https://youtu.be/1y1CiJtYEfI?t=341]

তবে ভিডিওতে একটি কথা স্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে, ঐ জমির মালিকের নাম আবুল হোসেন লিডার (এনটিভি তার সাক্ষাৎকার নেয়নি) এবং জমির ক্রেতা ঢাকাস্থ রাজারবাগ দরবার শরীফের মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ মাদ্রাসা।
তাহলে কথা হচ্ছে, খলিল হাওলাদার নামক যে ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেয়া হলো,
সে মালিকও না আবার ক্রেতাও না।
তাহলে সে কে ?
আসলে সাক্ষাৎকার দেয়া ব্যক্তি ছিলো জমির দখলদার।
সে এতদিন আবুল হোসেন লিডার নামক ব্যক্তির জমি অবৈধ দখল করে আসছিলো।
আবুল হোসেন লিডার ঐ দখলকারকে উচ্ছেদ করে জমিটা মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ মাদ্রাসার কাছে বিক্রি করে। এই উচ্ছেদ করা নিয়ে জমির পূর্বের মালিক আবুল হোসেন ও দখলদার খলিল হাওলাদারের সাথে বহুদিন ধরে একাধিক মামলা মোকাদ্দমা হয়, যা তাদের সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যাপার।

কথা হচ্ছে, মাদ্রাসার জন্য একটা জমি ক্রয় করে কি রাজারবাগ দরবার শরীফ মস্ত অপরাধ করে ফেললো ?
আর এনটিভি সাংবাদিক অবৈধ দখলদারের সাক্ষাৎকার নিয়ে ক্রেতাকে অপরাধী বানিয়ে দিলো।
কিন্তু জমির ক্রেতা বা বিক্রেতা কারো সাক্ষাৎকার নিতে পারলো না !
আশ্চর্য !!

মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ মাদ্রাসা উক্ত জমির বৈধ মালিক এবং সরকারকে নিয়মিত জমির খাজনা প্রদান করে, তার দলিল হিসেবে খাজনার কাগজ পোস্টের ছবিতে সংযুক্ত করা হলো।
ঢাকাস্থ রাজারবার দরবার শরীফ নিয়ে এনটিভি’র অপপ্রচারের জবাব (পর্ব– ২)
Image result for রাজারবাগঢাকাস্থ রাজারবার দরবার শরীফ নিয়ে এনটিভি’র অপপ্রচারের জবাব (পর্ব– ২)
ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের মুখপাত্র এনটিভি সাংবাদিক
ঢাকা রাজারবাগ দরবার শরীফ নিয়ে যখন এনটিভিতে ধারবাহিক অপপ্রচার হচ্ছে, তখন একজন তাদের ইউটিউব পেইজের লিঙ্ক দিয়ে বললো- “দেখুন রাজারবাগ শরীফের বিরুদ্ধে কত অভিযোগ। ”
আমি লিঙ্কের ভিডিও দেখা শুরু করলাম। কিন্তু প্রথমেই আমরা খটকা লাগলো, যখন দেখলাম- যে লোকগুলো রাজারবাগ দরবার শরীফ সম্পর্কে কটূকথা বলছে, তাদের একজনকে আমি খুব ভালো করি চিনি। সে খবরের মধ্যে খুব ইনোসেন্ট সাজছিলো, দু’চোখ বেয়ে তার পানি ঝড়ছে। [https://youtu.be/jXYgZoF811k?t=294]।
কিন্তু বাস্তবে ঐ লোকটা এত ইনোসেন্ট নয়। এনটিভির খবরে তার নাম দেখানো হয় ‘আব্দুল কাদের’ নামে। কিন্তু এলাকাবাসী তাকে চিনে ‘নবা’ নামে। তার আলাদা কোন পেশা নেই। সে ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশরাফুজ্জামান ফরিদের ডান হাত। এই আব্দুল কাদের ওরফে নবা নামক লোকটি নিজেই এলাকায় সন্ত্রাসী, চাদাবাজ ও জমি দখলকারী হিসেবে এক নামে পরিচিত। এই ধরনের এক সন্ত্রাসী কোয়ালিটির লোক কিভাবে একজন সম্মানিত ব্যক্তির নামে জমি জবর দখলের অভিযোগ দেয়, তা আমার মাথায় আসে না।।
কারণ বর্তমান সরকারের যুগে একজন হুজুর মানুষ এলাকার কাউন্সিলরের সঙ্গীসাথীদের জমি জোর দখল চাইবে, এটা হতে পারে না। নিশ্চয়ই এর পেছনে অন্য কারণ আছে। আর তাছাড়া নবা যে ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশরাফুজ্জামান ফরিদের ডান হাত হিসেবে কাজ করে সেই কাউন্সিলর কোন সাধারণ কাউন্সিলর নন, তিনি বর্তমান সময়ে বেশ আলোচিত একজন ও যুবলীগ নেতা সম্রাটের ঘনিষ্টজন। কিছুদিন আগে ক্যাসিনোকাণ্ডে যাদের নাম এসেছে এবং ঐ কারণে প্রশাসনের তরফ থেকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তাদের মধ্যে আশরাফুজ্জামান ফরিদ অন্যতম।
[তথ্যসূত্র: https://www.dailyjagaran.com/crime/news/31762]
সেই আশরাফুজ্জামান ফরিদের ডান হাত আব্দুল কাদের ওরফে নবা’র জমি হুজুররা জবর-দখল চাইবে এটা তো স্বাভাবিক বিষয় নয়। আমি এক সময় বাসাবো কদমতলার অধিবাসী থাকায়, বিষয়টি পরিচিতদের মারফত খবর নিলাম। খবর নিয়ে জানলাম ভিন্ন কথা। এই নবা নামক লোকটি নিজেই অপরাধী ও দখলদার। সেই বরং অন্য কারো জমি দখল করে নিজের নামে মিথ্যা দলিল করিয়ে এক পর্যায়ে বিক্রি করতে চায়। তখন এক লোকের থেকেও বায়না বাবদ নগদ বেশ কিছু টাকা নেয়। কিন্তু পরে নিজের প্রভাব খাটিয়ে জমি দিতে অস্বীকার করে আবার বায়নার টাকা ফেরত দিতেও অস্বীকার করে। এই নিয়ে দুইজনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা মোকাদ্দমা হয়। যেই লোক জমির বায়নাতে টাকা দেয়, সে আবার ঢাকাস্থ রাজারবাগ দরবারে মাঝে মাঝে আসা যাওয়া করে। আমার জানা মতে, এ রকম লক্ষ লক্ষ লোক প্রতিনিয়ত রাজারবাগ দরবার শরীফে আসা যাওয়া করে, তাদের ব্যক্তিগত জীবনে অনেক ঘটনা, মামলা-মোকাদ্দমা, লেনদেন আছে। কিন্তু সেটা সম্পুর্ণ তাদের ব্যক্তিগত বিষয়, এর সাথে ঢাকাস্থ রাজারবাগ দরবার শরীফের কোন সম্পর্ক থাকার কথা নয়। কিন্তু এনটিভি’র সাংবাদিক সম্পূর্ণ অযাচিতভাবে এক যায়গার ঘটনা অন্য যায়গায় লাগিয়ে রাজারবাগ দরবার শরীফ সম্পর্কে অপপ্রচার করেছে, যা তার ধারবাহিক রিপোর্টে স্পষ্ট হয়েছে।
[ধারাবাহিক]
ঢাকাস্থ রাজারবার দরবার শরীফ নিয়ে এনটিভি’র অপপ্রচারের জবাব (পর্ব– ৩)
Image result for রাজারবাগঢাকাস্থ রাজারবার দরবার শরীফ নিয়ে এনটিভি’র অপপ্রচারের জবাব (পর্ব– ৩)
ভুয়া ছবি ব্যবহার করে মানহানীর চেষ্টা এনটিভি সাংবাদিকের
এনটিভি থেকে ৬ পর্বের অপপ্রচার ছিলো ঢাকাস্থ রাজারবাগ দরবার শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা তথ্যে ভরপুর। কথিত সাংবাদিক শফিক শাহীন নিজেকে মানবাধিকার বিভাগের সাংবাদিক হিসেবে প্রচার করলেও উক্ত প্রতিবেদেনে সে নিজের সাংবাদিকতার শক্তিকে ব্যক্তি প্রতিহিংসার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, যার সবচেয়ে বড় উদহারণ হলো ঢাকা রাজারবাগ শরীফের পীর সাহেব হুজুরের নামে মিথ্যা ছবি ছড়ানো।
বাংলাদেশের সবাই জানে, কোরআন হাদীসে ছবি তোলা হারাম বলে যে ফতওয়া আছে, সে ফতওয়া একমাত্র ঢাকাস্থ রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেব হুজুর মেনে চলেন। তিনি কখনই কোন ছবি তুলেননি এবং কেউ দেখাতেও পারবে না। কিন্তু সে বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করতে পীর সাহেব হুজুরের নামে একটি মিথ্যা ছবি ছড়িয়ে দেয়া হয়। অথচ উক্ত ছবিটি মোটেও পীর সাহেবের নয়। বরং ছবিটি আশরাফ জাহাঙ্গীর নামক এক ব্যক্তির, যিনি ২০০৭-২০১২ পর্যন্ত দরবার শরীফের মেইন গেইটে সিকিউরিটি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়ি ‍মুন্সিগঞ্জ সদরে থাকেন। মেইন গেইটে থাকা অবস্থায় লুক্বয়িত কোন ক্যামেরা দিয়ে বিনা অনুমতিতে ছবিটি তোলা হয়। অথচ শুধুমাত্র অপপ্রচার ও প্রোপাগাণ্ডা তৈরীর উদ্দেশ্যে একজন সিকিউরিটির ছবি পীর সাহেব হুজুরের মিথ্যা চালিয়ে দেয়া হয়। এ ধরনের নিকৃষ্ট সাংবাদিকতা বাংলাদেশের পুরো সাংবাদিক মহলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, ছিঃ।
[ধারাবাহিক]
ঢাকাস্থ রাজারবার দরবার শরীফ নিয়ে এনটিভি’র অপপ্রচারের জবাব (পর্ব– ১)
Image result for রাজারবাগঢাকাস্থ রাজারবার দরবার শরীফ নিয়ে এনটিভি’র অপপ্রচারের জবাব (পর্ব– ১)
শিশু হত্যাকারীদের বাঁচাতে মাঠে নেমেছে এনটিভি’ সাংবাদিক।
তার মিথ্যা ও প্রোপাগান্ডামূলক তথ্যে ভরপুর ৬ পর্বের এক ধারাবাহিক প্রতিবেদনে মিরপুরের সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা’র তিন আত্মীয়ের ছবি প্রকাশ করে বলছে, এই নিরাপরাধ লোকগুলোকে ঢাকা রাজারবাগ দরবার শরীফ থেকে মামলা দিয়ে জেলে বন্দি করা হয়। লোকগুলোর নাম- ১) মাহবুবুর রহমান খোকন, ২) সোহরাব হোসেন, ৩) ফজলে হামিম সায়মন [https://youtu.be/TyRedqa3NXU?t=52]
প্রশ্ন আসছে, মিরপুরের সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা’র তিন আত্মীয় কি আসলেই নিষ্পাপ?
প্রকৃতসত্য হলো, এই লোকগুলো, আশুলিয়ার চাঞ্চল্যকর শিশু আব্দুস সাত্তার আহরার হত্যা মামলার আসামী। ২০১৬ সালে নিজেদের ভাইদের মধ্যে জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করে ভাতিজা ১১ বছরের শিশু আব্দুস সাত্তার আহরারকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় অজ্ঞান করে জবাই করে স্থানীয় ডোবার মধ্যে নিচে লাশ লুকিয়ে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে লাশের অংশ পেয়ে ঘটনার সত্যতা পায় এবং দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর -
ক) https://tinyurl.com/yxnocxqg
খ) https://tinyurl.com/yxdzcagw
গ) https://tinyurl.com/yyuj4vuz
(এরপরও যদি কারো সন্দেহ থাকে, তবে আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকায় শিশু আব্দুস সাত্তার আহরার হত্যা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আসতে পারেন)
দীর্ঘ ৩ বছরের বিচারকার্য বর্তমানে প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুনিদের স্বীকারক্তি এবং তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের দোষ প্রমাণিত হয়েছে। শিশু হত্যা মামলায় খুনিদের ফাঁসি রায় এখন সময়ের ব্যাপার। এই অবস্থায় খুনিদের আত্মীয়-স্বজন এনটিভি’র সাথে যোগাযোগ করে এই অপপ্রচারমূলক ভিডিও তৈরী করায়। তারা ভিডিও’র মধ্যে খুনের মামলার বাদি ও স্বাক্ষীর দূর থেকে ভিডিও নিয়ে অপপ্রচার করে। সেখানে মামলার বাদী ঢাকা রাজারবাগ দরবার শরীফের ভক্ত মফিজুল ইসলামের যিনি নিহত শিশুর বোন জামাই এবং মামলার স্বাক্ষী নিহত শিশুর বড় ভাই মাসুমের ছবি উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেখানো হয়। [https://youtu.be/__nQAHcxbXY?t=228] ।
এখানে স্পষ্ট এনটিভি সাংবাদিক দূরভিসন্ধিমূলকভাবে খুনিদের বাঁচাতে এবং বাদী ও স্বাক্ষীদের ভয় দেখাতে এই ধারাবাহিক প্রোপাগান্ডা তৈরী করেছে।
[ধারাবাহিক]
কদমবুছী খাছ সুন্নত
Image result for কদমবুছিকদমবুছী খাছ সুন্নত
কদমবুছীর সংজ্ঞাঃ “কদমবুছী” (بوسي قدم)-এর “কদম” (قدم) শব্দটি আরবী যার অর্থ “পা”, আর “বুছী” (بوسي) শব্দটি ফার্সী যার অর্থ “চুম্বন করা”। সুতরাং “কদমবুছী” অর্থ হলো “পায়ে চুম্বন করা”। অর্থাৎ সরাসরি মুখ দিয়ে পায়ে চুম্বন দেয়াকে “কদমবুছী” বলে। কিন্তু প্রচলিত অর্থে কদমবুছী বলতে আমাদের দেশে হাত দিয়ে পা স্পর্শ করে হাতে চুমু খাওয়ার যে প্রচলন তা মূলতঃ কদমবুছী নয় বরং তা দস্তবুছী।
কদমবুছীর প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেখিয়েছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কদম মুবারকে সরাসরি চুম্বন করতেন বা বুছা দিতেন তাঁরা, এমনকি তাঁরা একে অপরকেও কদমবুছী করেছেন। আর তাই কদমবুছী হচ্ছে খাছ সুন্নত।

কদমবুছী হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিতঃ
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, “হযরত ওযায়ে ইবনে যারে, তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা আব্দুল কায়েস গোত্রে থাকা অবস্থায় যখন মদীনা শরীফ-এ আসতাম তখন তাড়াতাড়ি করে নিজেদের সওয়ারী হতে নেমে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারক এবং কদম মুবারকে চুম্বন করতাম।” (আবূ দাউদ শরীফ, ২য় জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৭০৯; বযলুল মাজহুদ, ৬ষ্ঠ জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৩২৮; ফতহুল বারী, ১১ জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫৭; মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ৭ম জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৮০; আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব)
হযরত সাফওয়ান ইবনে আস্‌সাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “একবার ইহুদীদের একটি দল এসে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উভয় হাত মুবারক ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দিলো।” (আবূ দাউদ শরীফ; নাসাঈ শরীফ; ইবনে মাযাহ শরীফ, পৃষ্ঠা ২৭০; তিরমিযী শরীফ, ২য় জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৯৮; ফতহুল বারী, ১১ জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫৭; তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমিযী, ৭ম জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫২৫; মুছান্নিফে ইবনে আবী শায়বা, ৭ম জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫৬২)

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত আছে, “এক ব্যক্তি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ্‌ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে এমন কোন বিষয়ে আদেশ করেন, যা আমার বিশ্বাসকে আরো বৃদ্ধি করবে। তখন আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, “তুমি ঐ গাছটিকে ডেকে আনো।” অতঃপর সে ব্যক্তি গাছটির নিকটে গিয়ে বললো, নিশ্চয় রসূলাল্লাহ্‌ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাকে ডেকেছেন। সুতরাং গাছটি এসে আল্লাহ্‌ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম করলো। আল্লাহ্‌ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে চলে যেতে বললেন, গাছটি তখন চলে গেল। অতঃপর ঐ ব্যক্তি অনুমতি সাপেক্ষে আল্লাহ্‌ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথা মুবারক ও উভয় কদম মুবারক বুছা দিল।” (মুস্তাদিরেকে হাকিম; ফতহুল বারী, ১১ জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫৭; তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমিযী, ৭ম জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫২৮; আল কালামুল মুবীন, পৃষ্ঠা ১৪৬)
হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “(গাছের সিজদা দেয়ার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর) একদিন আমি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্‌, ইয়া হাবীবাল্লাহ্‌ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাক আপনার উভয় হাত মুবারক এবং পা মুবারকে বুছা দেয়ার অনুমতি দিন। আল্লাহ্‌ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুমতি দিলেন। অতঃপর তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উভয় হাত মুবারক এবং পা মুবারকে বুছা দিলেন।” (নাসীমুর রিয়াজ শরহে কাজী আয়াজ ৩য় জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫০; কিতাবুল আযকার লিন্‌ নববী)
হযরত যায়েদ বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা রয়েছে যে, “নিশ্চয়ই তিনি হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাত মুবারকে বুছা দিয়েছেন। তিনি এটাও বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাত ও পা মুবারকে বুছা দিয়েছেন।” (ফতহুল বারী, ১১ জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫৭; তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমিযী, ৭ম জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ৫২৮)

শুধু তাই নয় বরং হাদীছ শরীফ-এ মাকেও কদমবুছী করার ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে, যেমন এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ আছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি তার মায়ের কদমবুছী করলো সে যেন জান্নাতের চৌকাঠে চুম্বন করলো।” (মাবসূত লিস্‌ সারাখ্‌সী, ১ম জিলদ্‌, পৃষ্ঠা ১৪৯)

ইমাম-মুজতাহিদ তথা আউলিয়ায়ে কিরাম রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি-এর জীবনীতে কদমবুছীঃ
বস্তুত গভীর শ্রদ্ধা, আদব, মুহব্বত এবং আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে কদমবুছীর মাধ্যমে। আর তাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কদম মুবারকে সরাসরি চুম্বন দিয়ে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, মুহব্বত, তা’যীম এবং আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রকাশ করেছেন। এই ধারাবাহিকতায় মুরীদও তাঁদের অনুসরণে একইভাবে স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, পরম মুহব্বত এবং আনুগত্য প্রকাশ করে থাকে কদমবুছীর মাধ্যমে। কেননা হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, শায়খ (বা মুর্শিদ বা পীর ছাহেব) তাঁর ক্বওম তথা মুরীদের কাছে তেমন; নবী (আলাইহিস্‌ সালাম) তাঁর উম্মতের মাঝে যেমন।” (দাইলামী শরীফ, মাকতুবাত শরীফ, আত্‌ তায্‌কিরাহ ফি আহাদীসিল মুশ্তাহিরাহ, মাকাছিদুল হাসানা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে, “হযরত আনাছ বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা পীর-মাশায়িখকে সম্মান করবে। পীর-মাশায়িখকে সম্মান করা আল্লাহ্‌ পাককে সম্মান করারই নামান্তর। কাজেই যে ব্যক্তি তাঁদের যথাযথ সম্মান করে না সে আমাদের দলভূক্ত নয়।” (দাইলামী শরীফ, আত্‌ তায্‌কিরাহ ফি আহাদীসিল মুশ্তাহিরাহ)
আর তাই চিশ্‌তীয়া তরীক্বার মাশায়িখ (রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিম)-এর মাঝে কদমবুছীর এতো অধিক প্রচলন ছিল যে, তাঁরা স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলার কদমবুছী করতে পারাকে বিশেষ নিয়ামত প্রাপ্তি মনে করতেন। যখনই কোন সালিক মুর্শিদ ক্বিবলার দরবার শরীফ-এ যেতেন তখনই মুর্শিদ ক্বিবলার কদমবুছী করতেন।
শায়খুল মাশায়িখ, সুলতানুল আউলিয়া, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাক্বী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “বুধবার আমার পীর ছাহেব সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি-এর কদমবুছীর বরকত নছীব হলো।” (দলীলুল আরিফীন)
চিশ্‌তীয়া তরীক্বার ইমাম, ইমামুশ্‌ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, হাবীবুল্লাহ্‌, সুলতানুল মাশায়িখ, কুতুবুল আক্তাব, কুতুবুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্‌তী আজমিরী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি একবার দিল্লীতে আসলেন। তাঁর প্রধান খলীফা শায়খুল মাশায়িখ, সুলতানুল আউলিয়া, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাক্বী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবার শরীফ-এ হাজির হলেন। কদমবুছী করার জন্য দিল্লীর লোকেরা দলে দলে তাঁর খিদমতে ভিড় জমালো। সুলতান আলতামাশা রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিও আসলেন। কিন্তু শায়খুল আলম, বাবা ফরীদুদ্দীন গঞ্জে শকর রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি আসলেন না। সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্‌তী আজমিরী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সম্মন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। শায়খুল মাশায়িখ, সুলতানুল আউলিয়া, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাক্বী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি বললেন, সে রিয়াজত-মুশাক্কাতে রত রয়েছে। এটা শুনে তিনি বললেন, তুমি সত্যি বখ্‌তিয়ার। এমন “শাহ্‌বায”কে কবলে এনেছ যার বাস “সিদরাতুল মুন্তাহা”র এদিকে নয়। এমন লোকের উপর আর কঠোরতা করা সমীচীন নয়। তাঁর রিয়াজত-মুশাক্কাত বন্ধ করে দেয়া উচিত।
অতঃপর তাঁরা উভয়েই শায়খুল আলম, বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি-এর হুজরা শরীফ-এ গেলেন এবং বাবা ছাহেব রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিকে উভয়ের মাঝে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে দু’য়া করলেন, “আল্লাহ্‌ পাক! আপনি ফরীদকে কবুল করুন।” গায়েব হতে আওয়াজ আসলো, “আমি ফরীদকে কবুল করলাম।” তারপর তাঁরা উভয়ে তাঁকে অনেক ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ দান করলেন এবং বললেন, “ফরীদ এমন একটি প্রদীপ যা আমাদের সিলসিলাকে আলোকিত করবে এবং যুগের অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব হবে।”

সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্‌তী আজমিরী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহিও তাঁকে “বাবা” বলে সম্বোধন করতেন। এই বরকতে আজ পর্যন্ত তাঁকে “বাবা” লক্ববে সম্বোধন করা হয়।
ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ প্রদানের পর শায়খুল মাশায়িখ, সুলতানুল আউলিয়া, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাক্বী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “তোমার দাদা পীর ছাহেব, তাঁর কদমবুছী করো।”
শায়খুল আলম, বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি গিয়ে স্বীয় পীর ছাহেব হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাক্বী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি–এর কদমবুছী করলেন। তিনি আবার আদেশ করলেন, “তোমার দাদা পীর ছাহেব সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি–এর কদমবুছী করো।” এবারো তিনি স্বীয় পীর ছাহেব শায়খুল মাশায়িখ, হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাক্বী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি–এর কদমবুছী করলেন। হযরত বখতিয়ার কাক্বী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি এবার একটু ধমকের স্বরে বললেন, “আমি তোমাকে “তোমার দাদা পীর ছাহেব সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি–এর কদমবুছী করতে বলছি। আর তুমি করছ আমার কদমবুছী তার কারণ কি?”
বিনিত-বিনম্র স্বরে জাওয়াব দিলেন শায়খুল আলম, বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি, “আমি আপনার কদম মুবারক ব্যতীত আর কোন কদম মুবারক দেখতে পাচ্ছি না।”
শায়খুল আলম, হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি-এর এরূপ জাওয়াব শুনে সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “বখতিয়ার! মাসউদ ঠিকই বলেছে। সে মঞ্জিলে মাকছুদে পৌঁছেছে। সেখানে এক ভিন্ন দ্বিতীয়ের কোন অস্তিত্বই নেই। কাজেই সেখানে তুমি ভিন্ন আমি তাঁর দৃষ্টিতে আসবো কেন?” (তাযকিরাতুল আউলিয়া)
সুতরাং কদমবুছী গভীর শ্রদ্ধা, আদব, মুহব্বত এবং আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ তো বটেই, অধিকিন্তু এটা কামিয়াবী ও বিজয়ের সোপানও বটে। কারণ কদমবুছী করা সেই ব্যক্তির পক্ষে সহজ ও সম্ভব যে স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলাকে সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মনে করে। আর নিজেকে ভাবে সর্বনিকৃষ্ট, হীন ও তুচ্ছ, যা ইলমে তাছাউফের বুনিয়াদী শিক্ষা। এরূপ মনোভাবই তাকে আল্লাহ্‌ পাক পর্যন্ত পৌঁছে দেয় এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্‌, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নৈকট্যভাজনে পরিণত করে। কেননা হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, “যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ পাক-এর জন্য বিনয়ী হয় আল্লাহ্‌ পাক তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।” (ইহ্‌ইয়াউ উলুমিদ্দীন, কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত)
পক্ষান্তরে যারা অহংকারী, যাদের অন্তরে রয়েছে আত্ম-অহংকার তারা কখনও কদমবুছীর ফযীলত, বরকত লাভ করতে পারে না। অন্তরে লালিত অহংকারই তাকে কদমবুছী থেকে বিরত রাখে। অহংকার ব্যক্তি কখনও হাক্বীক্বীভাবে কদমবুছী করে না। যদি লোক লজ্জার ভয়ে কিংবা অবস্থার চাপে করে তা হয় একান্ত অন্তঃসারশুন্য। খুব কমসংখ্যক লোক নিজেকে নিকৃষ্ট, হীন ও তুচ্ছ মনে করতে পারে, “বড় যদি হতে চাও ছোট হও আগে” এই নীতি বাক্যের উপর আমল করতে পারে।

কদমবুছীর সময় অনিচ্ছাকৃত মাথা ঝুঁকে যাওয়া সিজদার অন্তর্ভূক্ত নয়ঃ
আমাদের সমাজে কিছু আত্ম-অহংকারী মহল আছে যারা কিল্লতে ইলম কিল্লতে ফাহম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের অধিকারী তারা কদমবুছীকে নাজায়িয ও শিরক বলে থাকে। তারা বলে থাকে কোন সম্মানিত ব্যক্তিকে মাথা নীচু করে কদমবুছী করা, তাশাব্বুহ্‌ বিস্‌ সিজদাহ-এর কারণে হারাম।
মূলতঃ কদমবুছীর সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও যে মাথা ঝুঁকে যায় তা সিজদার অন্তর্ভূক্ত নয়। কেননা শুধুমাত্র মাথা নীচু করলেই সিজদা হয় না বরং সিজদার জন্য যমীনে কপাল ও নাক লাগানোর সাথে সাথে সিজদার নিয়ত থাকাও শর্ত। কিন্তু কদমবুছীর ক্ষেত্রে এসবই অনুপস্থিত। উল্লেখ্য, মাথা নীচু করলেই যদি হারাম হয়, তবে দৈনন্দিন অনেক কাজ করার সময় মাথা নীচু করতে হয়। যেমন- ঘর ঝাড়ু দিতে, খুঁটি পুতার সময়, যমীনে চারা রোপন করতে ইত্যাদি কাজগুলি কি হারাম হবে? কখনই নয়।

কদমবুছী করার সময় মাথা ঝুঁকানো সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়, “কদমবুছীর সময় মাথা ঝুঁকানো মূলতঃ উদ্দেশ্য নয়। কারো সম্মানার্থে ইচ্ছাকৃত সিজদার ন্যায় মাথা ঝুঁকানো নাজায়িয। তাই, সিজদার নিয়ত ব্যতীত মাথা ঝুঁকানো নিষেধ নয় এবং স্থান বিশেষে এর থেকে বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়। যেমনঃ কোন বস্তু উঠাবার সময়, রাখার সময়, দেখার সময় ইত্যাদি কারণে স্থান বিশেষে মাথা নিচু করতে হয়। অথচ উপরোক্ত কারণে মাথা ঝুঁকানোকে কেউ নাজায়িয বলেন না, কারণ সিজদার নিয়ত করে তা করা হয় না।” (রদ্দুল মুহতার, মুহীত, যাহিদী, শেফা লি কাজী আয়াজ, মকতুবাতে ইমামে রব্বানী)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে একটি ঘটনা উল্লেখ আছে, এক মাওলানা ছাহেব বিদেশ হতে সদ্য পাশ করে এসেছে। সে যখন তার গ্রামের বাড়ীতে গেল, বাড়ীতে যাওয়ার পথে দেখলো কৃষকরা ক্ষেত্রের মধ্যে ধানের চারা রোপন করছে। যেহেতু ক্ষেতের মধ্যে পানি ও কাদায় ভর্তি, তাই কৃষকরা উপুড় হয়ে মাথা নীচু করে ধানের চারা রোপন করছিল। মাওলানা ছাহেব কৃষকদের এ অবস্থা দেখে বলতে লাগলো, আস্তাগফিরুল্লাহ্‌! শেরেক করে করে ধান রোপন করার কারণেই তো ফসলে বরকত হয় না। সেই কৃষকদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি মোটামুটি আলিম। মাওলানা ছাহেবের উক্ত ফতওয়া যখন তিনি শুনলেন, তখন তিনি বললেন, মাওলানা ছাহেব আপনার ফতওয়াটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি ফতওয়াটি লিখিতভাবে দিলে হয়ত আমরা এ শিরক থেকে বেঁচে থাকতে পারবো। মাওলানা ছাহেব যখন তার পকেট থেকে কাগজ-কলম বের করতে লাগলো, ঘটনাক্রমে কলমখানা তার হাত থেকে মাটিতে পড়ে যায়। মাওলানা ছাহেব (মাটি থেকে কলমটি উঠাবার সময় মাথা নীচু করতে হয়) যখনই কলম উঠাবার সময় মাথা নীচু করল, তখন সেই কৃষক বললেন, আস্তাগফিরুল্লাহ্‌! শেরেক করে করে ফতওয়া দিলে সে ফতওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। তখন মাওলানা ছাহেব বুঝতে পারলো যে, শুধুমাত্র মাথা ঝুঁকালেই সিজদা হয় না, বরং নিয়ত থাকা শর্ত।
তাই ফুক্বাহায়ে কিরাম রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যদি সিজদার নিয়তে মাথা ঝুঁকানো হয়, তবে তা সম্পূর্ণ হারাম। আর যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও কদমবুছী করার সময় মাথা কিছুটা ঝুঁকে যায়, তবে তা কদমবুছীরই অন্তর্ভূক্ত, তা সিজদার অন্তর্ভূক্ত নয়।

তা’যীমি সিজদা ও কদমবুছী এক নয়ঃ
তা’যিমী সিজদা এবং কদমবুছী একতো নয়ই বরং ব্যবধানে আসমান-যমীন পার্থক্য। তা’যীমি সিজদা তথা সম্মান প্রদর্শনার্থে কাউকে সিজদা করা প্রকাশ্য হারাম ও শির্‌কের অন্তর্ভুক্ত।
আখিরী রসুল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমি যদি মানুষকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম তবে স্ত্রীদেরকে আদেশ করতাম তারা যেন তাদের স্বামীকে সিজদা করে।” (আহমদ, মিশকাত শরীফ)
এ হাদীছ শরীফ, পূর্বের সমস্ত তা’যীমি সিজদাকে রহিত বা বাতিল করেছে। একজন মানুষ যত মর্যাদা-মর্তবা সম্পন্ন হোক না কেন তাকে সিজদা করা জায়িয নেই। আল্লাহ পাকই একমাত্র সিজদার উপযুক্ত অন্য কেউ নয়। কাজেই যারা সিজদা করে আর যারা সিজদা নেয় উভয়ই কাট্টা কাফির এবং মুশরিক।
আল্লাহ পাক বলেন, “আল্লাহ পাক-এর সাথে শরীক (অংশীদার স্থাপন) করো না। নিশ্চয়ই শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ্‌।” (সূরা লুকমান ১৩)
আখিরী রসুল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যদি তোমাকে হত্যা করা হয় কিংবা আগুনে নিক্ষেপ করা হয় তথাপি আল্লাহ পাক-এর সাথে কোন ব্যাপারে কাউকে শরীক করবে না।” (মিশকাত শরীফ)
পক্ষান্তরে কদমবুছী সুন্নতে ছাহাবা। সেই সুন্নতের মধ্যে আছে আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরম সন্তুষ্টি, নৈকট্য। কাজেই যারা কদমবুছীকে নাজায়িয ও হারাম বলবে, শিরক বলে ফতওয়া দিবে তারা শরীয়তের বিধানকে অস্বীকার, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, হালালকে হারাম বলার কারণে কাট্টা কাফিরের অন্তর্ভূক্ত। কেননা হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, নূরে মুজাস্‌সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি তোমরা তোমাদের নবী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নতকে (অবজ্ঞা বা অপছন্দ করে) তরক কর, তবে তোমরা নিঃসন্দেহে কুফরী করলে।” (আবূ দাউদ শরীফ)
এর উপর ভিত্তি করে আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়, “সুন্নতকে ইহানত করা কুফরী।”
আর শরীয়তে ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে, তার ফায়সালা হলো-
তার স্ত্রী তালাক হবে যদি বিয়ে করে থাকে এবং এক্ষেত্রে পুনরায় তওবা না করে বিয়ে না দোহরানো ব্যতীত তার স্ত্রী সাথে বসবাস করা বৈধ হবে না। আর অবৈধ অবস্থায় সন্তান হলে সে সন্তানও অবৈধ হবে। হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে যদি হজ্জ করে থাকে। সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তার ওয়ারিশ স্বত্ত্ব বাতিল হবে। তাকে ৩ দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য এবং যদি তওবা করে তবে ক্ষমা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কেননা হাদীস শরীফে রয়েছে, তিন কারণে মৃত্যুদন্ড দেয়া জায়িয। যথাঃ (১) ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে, (২) ঐ যিনাকার বা যিনাকারিণী যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা, (৩) যে অন্যায়ভাবে কাউকে ক্বতল করে। (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, মসনদে শাফিয়ী, মসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরিকে হাকিম)
আর মুরতাদ মারা যাওয়ার পর যারা জানাযার নামাজ পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাজে সাহায্য-সহযোগীতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানদের কবরস্তানে দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।
কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ্‌ পাক ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং কুফরী অবস্থায় মারা গিয়েছে, তারা যদি পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণ তার ফিদিয়া বা (কুফরীর পরিবর্তে) কাফ্‌ফারা বাবদ দেয় (আমার থেকে বাঁচার জন্য), তা কখনো গ্রহণ করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি বা আযাব এবং তাদের জন্য কস্মিনকালেও সাহায্যকারী নেই।” (সূরা আল ইমরান ৯১)