পবিত্র মক্কা শরীফ-এর কাফির, মুশরিকরা যখন দেখলো যে, মানুষ ক্রমান্নয়ে দ্বীন ইসলামে দাখিল হচ্ছেন, দিন দিন ইসলামের পরিধি প্রশস্ত হচ্ছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা প্রকাশিত হচ্ছে তখন
তারা সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর যুলুম নির্যাতনের
মাত্রা বাড়িয়ে দিলো এবং নানাভাবে কষ্ট দেয়া শুরু করলো। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
জুলুম ও নির্যাতিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উদ্দেশ্যে
বললেন,
تفرقوا فى الارض فان الله سيجمعكم فالوا الى اين نذهب قال الى هنا واشار بيده الى ارض الحبشة
অর্থ: “আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার যমীনের কোথাও চলে যান, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি অতিশীঘ্রই আপনাদের একত্রিত
করবেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, আমরা কোথায় যাবো? আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ওই দিকে ইঙ্গিত করলেন অর্থাৎ তিনি উনার হাত মুবারক দ্বারা আবিসিনিয়ার দিকে ইশারা
বা ইঙ্গিত করলেন।” (সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
কারণ হাবশা বা আবিসিনিয়ায় হিযরত ছিলো একদিকে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নির্দেশ অন্যদিকে আবিসিনিয়া ছিলো একটি নিরাপদ স্থান। আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ
প্রকাশের পঞ্চম বর্ষের রজব মাসে এই হিযরত সংঘটিত হয়েছিলো। প্রথমতঃ ১১জন পুরুষ এবং
অপর বর্ণনায় ১২জন পুরুষ ও ৪ জন অন্য বর্ণনায় ৫ জন হযরত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মক্কা শরীফ থেকে হিযরত করে আবিসিনিয়ার দিকে
রওয়ানা দেন। উনাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ পরিবার পরিজনসহ আবার কেউ স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ছাড়াই হিজরত করেছিলেন।
(মাদারিজুন নুবুওওয়াত)
হযরত ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা
পদব্রজে এবং সাওয়ারীতে আরোহন করে সাগর তীরে গিয়ে পৌঁছেন। অর্থাৎ দীনারের বিনিময়ে
আবিসিনিয়ায় হিজরতের জন্যে একটি কিস্তি বা নৌকা ভাড়া করেন। উনারা হলেন হযরত উছমান
ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম, উনার সম্মানিতা আহলিয়া বা
সহ-ধর্মিনী যিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা মেয়ে হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম, হযরত আবূ হুযাইফা ইবনে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং
উনার সহ- ধর্মিনী হযরত সাহলা বিনতে সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুসয়াব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ সালামা ইবনে আব্দুল আসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু এবং উনার সহধর্মিনী হযরত লায়লা বিনতে আবূ হাছামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত আবূ সাবুরা ইবনে আবূ রুমাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা
মতান্তরে হযরত হাতিব ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সুহাইল ইবনে বায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
হযরত ইবনে জাবির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহিলা ও শিশু ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
ব্যতীত শুধু পুরুষ ছিলেন ৮২ জন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি হযরত কাতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সর্বপ্রথম সপরিবারে যিনি হিজরত করেন তিনি হলেন হযরত উছমান
ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম। আমি নযর ইবনে আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে
বলতে শুনেছি, তিনি বলেছিলেন যে, আমি হযরত আবূ হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অর্থাৎ হযরত
আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম তিনি আবিসিনিয়ায়
হিযরতের উদ্দেশ্যে ঘর মুবারক থেকে বের হলেন। উনার সঙ্গে ছিলেন উনার সম্মানিতা
আহলিয়া আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদরের দুলালী লখতে জিগার সম্মানিতা মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা
হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম। দীর্ঘ দিন ধরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে উনাদের কোন খোঁজ-খবর কেউ দেয়নি। এরপর এক কুরাইশি মহিলা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তো আপনার দামাদ হযরত উছমান যূন নূরাইন
আলাইহিস সালাম উনাকে দেখে এসেছি। উনার সঙ্গে উনার আহলিয়া সাইয়্যিদাতুনা হযরত
রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনিও রয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, উনাদের কি অবস্থা দেখে এসেছো? সেই মহিলাটি বললেন, আমি দেখেছি যে, তিনি উনার আহলিয়া উনাকে একটি গাধার
পিঠে আরোহন করিয়ে গাধাটিকে হাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
صحبهما الله
“মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের সঙ্গী
হয়ে থাকুন! হযরত লুত আলাইহিস সালাম উনার পরে হযরত উছমান যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম
তিনিই সর্বপ্রথম সপরিবারে হিজরত করেন।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
أخرج حضرت البيهقى رحمة الله عليه، عن حضرت موسى بن عقبة رضى الله تعالى عنه قال خرج حضرت جعفر بن أبى طالب رضى الله تعالى عنه فى رهط من المسلمين فرارأ بدينهم ان يفتنوا عنه إلى أرض الحبشة، وبعثت قريش عمرو بن العاص وعمارة بن الوليد بن المغيرة، وأمروهما ان يسرعا السير ففعلا وأهدوا للنجاشى فرسا وجبة ديباج وأهدوا لعظماء الحبشة هدايا، فلما قدما على النجاشى قبل هداياهم وأجلس عمرو بن العاص على سريره، فقال عمرو بن العاص إن بأرضك رجالا منها سفهاء ليسوا على دينكم ولا على ديننا، فادفعهم إلينا، فقالت عظماء الحبشة للنجاشى اجل فادفعهم اليهم، فقال النجاشى لا والله لا أدفعهم إليه حتى أكلمهم واعلم على أى شئ هم، فقال عمر و بن العاص هم أصحاب الرجل الذى خرج فينا و سنخبرك بما تعرف من سفههم و خلافهم الحق إنهم لا يشهدون ان حضرت عيسى عليه السلام ابن الله ولا يسجدون لك إذا دخلوا عليك كما يفعل من أتاك فى سلطانك،
অর্থ: হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মূসা ইবনে উকবা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, হযরত জাফর ইবনে আবী ত্বলীব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
নির্যাতিত মুসলমান ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের জান ও ঈমান
হিফাযতের লক্ষ্যে একদল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সঙ্গে
নিয়ে আবিসিনিয়ায় রওয়ানা হয়ে যান। এদিকে কুরাইশরা আমর ইবনে আস ও আম্মারা ইবনে
ওয়ালীদকে আবিসিনিয়ায় প্রেরণ করে। তারা উভয়ে নেহায়েত দ্রুতগতিতে সেখানে পৌঁছে যায়।
কুরাইশ কাফির মুশরিকরা তাদের নিজ হাতে আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশীর জন্যে অনেক
মূল্যবান উপঢৌকনও প্রেরণ করে। আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশী কুরাইশদের উপঢৌকন গ্রহণ
করলেন এবং আমর ইবনে আসকে সিংহাসনে বসালেন। আমর ইবনে আস বললো, আমাদের কিছু লোকজন আপনাদের দেশে এসেছেন। উনারা না আপনার
ধর্ম মানেন, না আমাদের ধর্ম। তাই উনাদেরকে
আমাদের হাতে সমর্পণ করুন।
এ কথা শুনে গুমরাহ সভাসদরা বাদশাহকে বললো, হ্যাঁ, উনাদেরকে কুরাইশদের হাতে সমর্পণ
করাই ভালো হবে।
বাদশাহ (স¤্রাট) বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! উনারা
কোন ধর্মের অনুসারী সেটা উনাদের নিকট থেকে না জানা পর্যন্ত আমি কিছুতেই উনাদেরকে
তাদের হাতে তথা কাফির, মুশরিকদের হাতে সমর্পণ করতে পারবো
না।
আমর ইবনে আস পুনরায় বললো, উনারা আমাদেরই মধ্যে একজন কুরাইশ
ব্যক্তির অনুসরণ করছেন। নাঊযুবিল্লাহ! আমি আপনাকে এমন কতগুলো বিষয় বলবো, যেগুলো শুনে আপনি উনাদের নির্বুদ্ধিতা আঁচ করতে পারবেন।
উনারা এ বিষয়ে সাক্ষ্য দেন না যে, হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম
মহান আল্লাহ পাক উনার পুত্র। উনারা যখন আপনার দরবারে আসবেন তখন আপনাকে সিজদা করবেন
না, যেমন আপনার রাজ্যের প্রত্যেক আগন্তুক তা করে।
فأرسل النجاشى الى حضرت جعفر رضى الله تعالى عنه وأصحابه، وقد أجلس النجاشى عمر و بن العاص على سريره، فلم يسجد له حضرت جعفر رضى الله تعالى عنه ولا أصحابه وحيوه بالسلام، فقال عمرو وعمارة ألم نخبرك خبر القوم؟ فقال النجاشى ألا تحدثونى ايها الرهط ما لكم لا تحيونى كما يحيينى من اتانى من قومكم، وأخبرونى ماذا تقولون فى حضرت عيسى بن مريم عليه السلام، وما دينكم أنصارى أنتم؟ قالوا لا، قال فيهود انتم؟ قالوا لا. قال فعلى دين قومكم؟ قالوا لا. قال فما دينكم؟ قالوا الاسلام، قال وما الإسلام؟ قالوا نعبد الله وحده لا شريك له ولا نشرك به شيئا، قال من جاءكم بهذا؟ قالوا جاءنا به رجل من أنفسنا قد عرفنا وجهه ونسبه، قد بعثه الله إلينا كما بعث الرسل إلى من قبلنا، فأمرنا بالبر للوالدين،
والصدق، والوفاء، وأدانا الامانة، ونهانا ان نعبد الأوثان،
অতঃপর বাদশাহ (স¤্রাট) নাজ্জাশী তিনি হযরত জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার ও উনার সঙ্গীগণদের বাদশাহর দরবারে ডাকার জন্যে দূত পাঠালেন। আমর ইবনে আস সে
সিংহাসনে উপবিষ্ট ছিলো। হযরত জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার
সঙ্গী-সাথীগণদের ডেকে বাদশাহর দরবারে আনা হলো। কিন্তু উনারা বাদশাহকে সিজদা করলেন
না; বরং সালামের মাধ্যমে স্বাগতম ও অভিনন্দন জানালেন। এতে আমর ও
আম্মারা বললো, আমরা উনাদের সম্পর্কে পূর্বেই
বলেছিলাম যে, উনারা আপনাকে সিজদা করবেন না। বাদশা
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উদ্দেশ্যে বাদশাহ বললেন, আপনাদের ক্বওমের যারা আমার নিকট আসে, তারা যেভাবে আমার প্রতি তা’যীম, সম্মান প্রদর্শন করে, আপনারা সেভাবে তা’যীম-তাকরীম আমাকে
করলেন না কেন? আর আপনারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম
উনার সম্পর্কে কি বলেন? আপনারা কি খ্রিস্টান?
হযরত জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমরা খ্রিস্টান নই। বাদশাহ বললেন, তা হলে আপনারা ইহুদী? উনারা বললেন, আমরা ইহুদীও নই। বাদশাহ বললেন, তবে কি আপনারা স্বজাতীয় ধর্মে কায়েম আছেন? উনারা বললেন, আমরা আমাদের ক্বওমের মধ্যেও নই।
বাদশাহ বললেন, তাহলে আপনাদের ধর্ম কি? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা
বললেন, আমাদের ধর্ম ইসলাম। বাদশাহ জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলাম কি? উনারা বললেন, আমরা লা-শরিক মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী করি। উনার
সাথে কাউকে শরীক করি না। বাদশাহ আবার সুওয়াল করলো, এই ইসলাম দ্বীন আপনাদের কাছে কে নিয়ে এসেছেন?
হযরত জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এই দ্বীন আমাদের জ্ঞাতি গোষ্ঠির একজন সুমহান ব্যক্তিত্ব
তিনি নিয়ে এসেছেন। যাঁর সুমহান ব্যক্তিত্ব ও বংশ মর্যাদা সম্পর্কে আমরা পূর্ণ
ওয়াকিফহাল। উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি এমন বেমেছাল শান-মান, ফযীলত সহকারে আমাদের কাছে প্রেরণ করেছেন যেমন আমাদের পূর্বে
মানুষের কাছে অন্যান্য পয়গাম্বার আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রেরণ করেছেন। তিনি
আমাদের অঙ্গীকার বা ওয়াদা পুরণ করা ও আমানত প্রত্যার্পণ করার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি
আমাদেরকে প্রতিমার পূজা করতে নিষেধ করেছেন।
وأمرنا ان نعبد الله وحده ولا نشرك به شيئا، فصدقناه وعرفنا كلام الله، وعلمنا ان الذى جاء به من عند الله فلما فعلنا ذلك عادانا قومنا وعادوا النبى صلى الله عليه السلام الصادق وكذبوه، وارادوا قتله، وأرادونا على عبادة الأوثان، ففررنا إليك بديننا ودمائنا من قومنا، فقال النجاشى والله إن خرج هذا الامر إلا من المشكاة التى خرج منها امر حضرت موسى عليه السلام قال حضرت جعفر رضى الله تعالى عنه واما التحية، فان رسولنا اخبرنا ان تحية أهل الجنة السلام،
আমরা উনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছি এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম শরীফ-এর
উপর ঈমান এনেছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস বা আমাদের পূর্ণ আক্বীদা তিনি যা কিছু নিয়ে
এসেছেন তা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকেই। আমরা যখন এসব বিষয়কে হক্ব বা সত্য বলে
মেনে নিলাম, তখন আমাদের স্বজাতির প্রভাবশালী
ব্যক্তিরা আমাদের ঘোর শত্রু হয়ে গেলো। তারা তথা এই কাফির, মুশরিকরা এই সম্মানিত সত্য নবী ও রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে উঠেপড়ে লাগলো।
এমনকি তারা উনাকে শহীদ করার ষড়যন্ত্র করলো। তারা চায় আমরা তাদের মতো প্রতিমা তথা
মূর্তিপূজা করি। কিন্তু আমরা কখনো তা করবো না। আমরা নিজেদের দ্বীন ইসলামকে ও
আমাদের প্রাণটাকে হিফাযতের খাতিরে তাদের কাছ থেকে হিজরত করে আপনার কাছে এসেছি।
বাদশা বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এই
ইসলাম দ্বীন সেই নূর বা আলোকবর্তিকা থেকেই নির্গত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, যা থেকে হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দ্বীন
নির্গত হয়েছিলো।
হযরত জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, অভিবাদনের বিষয় সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য এই যে, আমাদের যিনি নবী, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ করেছেন যে, জান্নাতবাসীর অভিবাদন হচ্ছে-
السلام عليكم
‘আস সালামু আলাইকুম’।
فأمرنا بذلك فحييناك بالذى يحيى به بعضنا بعضا، وأما عيسى فهو عبد الله ورسوله وكلمته القاها إلى حضرت مريم وروح منه، وابن العذراء البتول فخفض النجاشى يده إلى الارض وأخذ منها عودا، وقال والله ما زاد ابن مريم على هذا وزن هذا العود، فقال عظماء الحبشة والله لئن سمعت هذا الحبشة لتخلعنك، فقال النجاشى، والله لا اقول فى حضرت عيسى عليه السلام غير هذا أبدا، ثم قال ارجعوا إلى هذا هديته يريد عمرو بن العاص، والله لو رشونى فى هذا دبر ذهب والدبر فى لسان الحبشة الجبل، ما قبلته، وقال لجعفر رضى الله تعالى عنه وأصحابه امكثوا فانتم سيوم، والسيوم، الامنون،
আমাদেরকে তিনি এই আদেশেই দিয়েছেন। আমরা পরস্পর পরস্পরের সাথে যেভাবে অভিবাদন
করি আপনাকেও সেভাবেই করেছি। আর হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ
পাক উনার বান্দা ও রসূল আলাইহিস সালাম। মহান আল্লাহ পাক উনার কালিমা তিনি যা হযরত
মারইয়াম আলাইহাস সালমা উনার প্রতি অর্পিত হয়েছেন। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রূহ
এবং সম্মানিত কুমারী মাতার পুত্র রত্ম।
একথা গুলো শুনে বাদশা নাজ্জাশী তিনি মাটির দিকে হাত প্রসারিত করে একটি তৃনখন্ড
হাতে তুললেন এবং বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এই
পরিচিতি ছাড়া হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম তনয় এই তৃণখন্ডের মতোও বেশি কিছু নন।
এই বক্তব্য শুনে সভাসদরা বললো, আবিসিনিয়ার জনসাধারণ আপনার এ উক্তি
শুনলে আপনাকে গতিচ্যুত করবে।
বাদশা বললেন, হযরত ঈসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম
উনার সম্পর্কে আমি কখনো কোনো কথা বলবো না। অতঃপর বাদশা বললেন, আমর ইবনে আসের উপঢৌকন ফিরিয়ে দাও। এ সম্পর্কে সে যদি আমাকে
স্বর্ণের পাহাড়ও উপঢৌকন প্রদান করে আমি তা গ্রহণ করবো না। এরপর বাদশা নাজ্জাশী
তিনি হযরত জাফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার সঙ্গী-সাথীগণকে বললেন, আপনারা এখানে নিশ্চিন্তে বসবাস করুন।
وأمر لهم بما يصلحهم من الرزق، وقال من نظر إلى هؤلاء الرهط نظرة تؤذيهم، فقد عرم اى فقد عصانى، وكان الله قد ألقى العداوة بين عمرو بن العاص وعمارة فى مسيرهما قبل أن يقدما الى النجاشى، ثم اصطلحا حين قدما على النجاشى ليدركا حاجتهما التى خرجا اليها من طلب المسلمين،
فلما أخطأهما ذلك إلى شر ما كان عليه من العداوة، فمكر عمرو بعمارة، فقال يا عمارة إنك رجل جميل فاذهب إلى امرأة النجاشى فتحدث عندها إذا خرج زوجها فإن ذلك عون لنا فى حاجتنا، فراسلها عمارة حتى دخل عليها، فلما دخل عليها انطلق عمرو إلى النجاشى فقال له إن صاحبى هذا صاحب نساء وأنه يريد أهلك، فاعلم علم ذلك، فبعث النجاشى، فإذا عمارة عند امرأته، فأمر به فنفخ فى أحليله ثم القى فى جزيرة من البحر، فجن واستوحش مع الوحش، ورجع عمرو الى مكة قد أهلك الله صاحبه وخيب مسيره، ومنعه حاجته،
বাদশাহ নাজ্জাশী তিনি হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের খিদমতে ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করারও আদেশ
দিলেন এবং বললেন যে, যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে অন্যায় দৃষ্টিতে দেখবে সে আমার নাফরমানী করার
শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত বিবেচিত হবে।
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি বাদশাহ
নাজ্জাশীর কাছে আমর ইবনে আস ও আম্মারা আসার পূর্বেই তাদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি
করে দিয়েছিলেন। অতঃপর তারা যখন বাদশাহর নিকট পৌঁছলো তখন পরস্পরে সন্ধি করে নিলো, যাতে অভীষ্ট কাজ অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু যখন তারা উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ
হলো, তখন তাদের মধ্যকার শত্রুতা পূর্বের তুলনায় আরো বড় হয়ে মাথা
চাড়া দিয়ে উঠলো। আমর চক্রান্তের ছলে আম্মারাকে বললো আম্মারা! তুমি সুন্দর, সুপুরুষ ও সুঠাম দেহী। তুমি বাদশাহর মেয়ের কাছে যাও। বাদশাহ
যখন বাইরে চলে আসেন; তখন উনার মেয়ের সাথে আমাদের
ব্যাপারটি নিয়ে আলাপ আলোচনা করবো। এটা আমাদের উদ্দেশ্য সাধনে সহায়ক হতে পারে। সে
মতে আম্মারা সরল মনে বাদশাহর মেয়ের সাথে যোগাযোগ করলো এবং শেষ পর্যন্ত তার কাছে
পৌঁছে গেলো।
এদিকে আমর বাদশাহর নিকট এসে বললো যে, আমার সঙ্গী অত্যন্ত নারী পিপাসু। সে
আপনার মেয়ের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। আপনি এর সত্যতা তদন্ত করুন। বাদশাহ খোঁজ
নেয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে পাঠালেন। সে ব্যক্তি আম্মারাকে বাদশাহর মেয়ের কাছে পেলো।
এরপর শাস্তির পালা। আম্মারাকে গ্রেফতার করা হলো এবং বাদশাহর নির্দেশে তার শরমগাহে
বাতাস ভরে দেয়া হলো। অতঃপর তাকে এক দ্বীপে নির্বাসন করা হলো। সেখানে সে উম্মাদ
অবস্থায় জংলী মানুষের সাথে বসবাস করতে লাগলো। আমর একা মক্কায় ফিরে এলো। মহান
আল্লাহ পাক তিনি এভাবে তাদের সফর ও ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিলেন। ফলে কুরাইশ কাফির
মুশরিকদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হলো না। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ২৪৭, ২৪৮ ও ২৪৯ পৃষ্ঠা)
‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ কিতাবের ২য়
জিলদ ৭২, ৭৩, ৭৪ ও ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
عن حضرت أم سلمة عليها السلام. أنها قالت لما ضاقت مكة وأوذى أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم وفتنوا ورأوا ما يصيبهم من البلاء والفتنة فى دينهم، ........ فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم إن بارض الحبشة ملكا لا يظلم أحد عنده فالحقوا ببلاده حتى يجعل الله لكم فرجا ومخرجا مما أنتم فيه فخرجنا اليها ارسالا حتى اجتمعنا بها، فنزلنا بخير دار إلى خير جار امنين على ديننا، ولم نخش فيها ظلما.
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত।
নিশ্চয়ই তিনি বলেন, পবিত্র মক্কা শরীফ-এর হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের জীবন যাত্রা মুবারক যখন দুর্বিষহ হয়ে উঠে
এবং উনারা কঠিনভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হতে থাকেন, ঈমানকে টিকিয়ে রাখা ও দ্বীন ইসলাম পালনের প্রেক্ষিতে নানা
প্রকার যুলুম-পীড়নের সম্মুখীন হচ্ছিলেন। ........ এমন পরিস্থিতিতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের লক্ষ্য করে বললেন যে, আবিসিনিয়ায় একজন রাজা রয়েছেন, যাঁর রাজ্যে কারো প্রতি যুলুম করা হয় না। আপনারা উনার
রাজ্যে চলে যেতে পারেন। এখানে যে আপনারা যুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, সেখানে গেলে (ইনশাআল্লাহ) আপনাদেরকে সেই যুলুম-নির্যাতন
থেকে মহান আল্লাহ পাক তিনি হিফাযত করবেন। তখন আমরা সেই রাজ্যের উদ্দেশ্যে হিজরত
করি। সেখানে আমরা সকলেই একত্রিত হই। আমাদের দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে নিরাপদ হয়ে
আমরা সেই দেশে যুলুম নির্যাতন মুক্ত পরিবেশে গিয়ে পৌঁছি। সেখানে আমাদের উপর কোনো
যুলুম-নির্যাতনের আশঙ্কা ছিলো না।
فلما رأت قريش أنا قد أصبنا دارا وأما، غار وامنا، فاجتمعوا على أن يبعثوا إلى حضرت النجاشى رحمة الله عليه فينا ليخرجونا من بلاده وليردنا عليهم فبعثوا عمرو بن العاص وعبد الله بن أبى ربيعة، فجمعوا له هدايا ولبطارقته،
فلم يدعوا منهم رجلا إلا هيئوا له هدية على حدة، وقالوا لهم ادفعوا إلى كل بطريق هديته قبل أن تتكلموا فيهم، ثم ادفعوا اليه هداياه فان استعطتم أن يردهم عليكم قبل أن يكلمهم فافعلوا. فقدما عليه فلم يبق بطريق من بطارقته إلا قدموا اليه هديته، فكلموه فقالوا له إنما قدمنا على هذا الملك فى سفهائنا، فارقوا أقوامهم فى دينهم ولم يدخلوا فى دينكم. فبعثنا قومهم ليردهم الملك عليهم، فاذا نحن كلمناه فاشيروا عليه بأن يفعل فقالوا نفعل. ثم قدموا إلى حضرت النجاشى رحمة الله عليه هداياه، وكان من أحب ما يهدون اليه من مكة الأدم-
কুরাইশ কাফির, মুশরিকরা যখন লক্ষ্য করলো যে, আমরা একটি নিরাপদ বাসস্থান পেয়েছি, তখন তারা আমাদের উপর আরো মারমুখো হয়ে উঠে। তারা একমত হয় যে, আমাদেরকে ওই রাজ্য থেকে বের করে তাদের হাতে সোপর্দ করে
দেয়ার জন্যে তারা হযরত বাদশাহ নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট একটি
প্রতিনিধিদল পাঠাবে। তারা আমর ইবনে আস ও আব্দুল্লাহ ইবনে আবু রবীয়াকে হযরত
নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট পাঠায়। মক্কার মুশরিকরা হযরত নাজ্জাশী
রহমতুল্লাহি আলাইহি ও উনার প্রত্যেক সেনাপতির জন্যে পৃথক পৃথক উপহার সামগ্রী
প্রস্তুত করে। প্রতিনিধি দু’জনকে তারা নির্দেশ দেয় যে, বাদশাহর সাথে হিজরতকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের প্রত্যার্পণের আলোচনা শুরু করার পূর্বেই প্রত্যেক সেনাপতিকে
নির্ধারিত উপহার দিয়ে দিবে। তারপর বাদশাহর জন্য নির্ধারিত উপহার উনাকে দিবে।
হিজরতকারী উনাদের সাথে বাদশাহর কথোপকথন হওয়ার পূর্বে যদি উনার নিকট থেকে উনাদেরকে
ফেরত নিতে পারো, তবে তাই করবে। পরিকল্পনা মুতাবিক
আমর ইবনে আস এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ রবীয়া হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
দরবারে উপস্থিত হয়ে প্রত্যেক সেনাপতিকে নির্ধারিত উপহার প্রদান করে। তারা বলে যে, আমরা এ রাজ্যে এসেছি আমাদের কতক মুসলমান ব্যক্তিদের ফেরত
নিয়ে যেতে। উনারা পিতৃধর্ম ত্যাগ করেছেন কিন্তু আপনাদের ধর্মও গ্রহণ করেননি।
উনাদের সম্প্রদায়ের লোকজন আমাদেরকে এজন্যে বাদশাহ মহাদয়ের নিকট পাঠিয়েছে যে, তিনি যেনো ওই সমস্ত ব্যক্তিগণকে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেন।
আমরা এ বিষয় বাদশাহর সাথে যখন আলোচনা করবো, তখন আপনারা সেনাপতিবর্গ উনাদেরকে
ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে উনাকে উৎসাহিত করবেন। তারা বললো, আমরা তাই করবো। অতপর তারা বাদশাহ হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার নিকট যায় এবং উনার জন্যে নির্ধারিত উপঢৌকন উনার হাতে তুলে দেয়। মক্কার
কাফির মুশরিকদের থেকে প্রেরিত উপঢৌকন সামগ্রীর মধ্যে সার্বাধিক প্রিয় ও মূল্যবান
ছিলো চামড়া।
وذكر حضرت موسى بن عقبة رضى الله تعالى عنه أنهم أهدوا اليه فرسا وجبة ديباج- فلما أدخلوا عليه هداياه. قالوا له أيها الملك-إن فتية منا سفهاء فارقوا دين قومهم ولم يدخلوا فى دينك وجاؤا بدين مبتدع لا نعرفه، وقد لجئوا إلى بلادك، وقد بعثنا اليك فيهم عشائرهم، اباؤهم وأعمامهم وقومهم لتردهم عليهم، فانهم أعلا بهم عينا، فانهم لن يدخلوا فى دينك فتمنعهم لذلك. فغضب ثم قال لا لعمر الله! لا أردهم عليهم حتى أدعوهم، فأكلهم وأنظر ما أمرهم، قوم لجئوا الى بلادى واختاروا جوارى على جوار غيرى فان كانوا كما يقولون رددتهم عليهم، وان كانوا على غير ذلك منعتهم ولم أدخل بينهم وبينهم، ولم أنعم عينا – وذكر حضرت موسى بن عقبة رضى الله تعالى عنه أن أمراءه أشاروا عليه بان يردهم اليهم. فقال لا والله! حتى اسمع كلامهم واعلم على أى شئ هم عليه؟
হযরত মূসা ইবনে উকবা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি উল্লেখ করেন যে, তারা বাদশাহ নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনাকে একটি ঘোড়া ও একটি রেশমী জুব্বাও উপহার দেয়। উপহার হস্তান্তর করে তারা
বললো, হে মুহতারাম বাদশাহ! আমাদের সম্প্রদায়ের কতক মুসলমান যুবক
পিতৃধর্ম ত্যাগ করেছেন কিন্তু আপনার ধর্মও গ্রহণ করেননি। উনারা এমন একটি নতুন ধর্ম
এনেছেন যা সম্পর্কে আমাদের কোনো জ্ঞান নেই।
এখন উনারা আপনার রাজ্যে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। উনাদের বাপ-চাচা ও সম্প্রদায়ের লোকেরা
আমাদেরকে আপনার নিকট পাঠিয়েছে যাতে করে আপনি উনাদেরকে তাদের নিকট ফেরত পাঠিয়ে দেন।
এই সমস্ত ব্যক্তিগণ উনারা বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ববান। উনারা কোনো দিন আপনার ধর্ম গ্রহণ
করবেন না, যে আপনি উনাদেরকে নিরাপত্তা দিবেন।
এ কথা শুনে বাদশাহ তিনি গোসসা করলেন। তিনি বললেন, না মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! উনাদেরকে ডেকে এনে উনাদের
কথা না শোনা এবং উনাদের প্রকৃত অবস্থান না জানা পর্যন্ত আমি উনাদেরকে ফেরত দিবো
না। উনারা তো এমন কতক ব্যক্তি যাঁরা আমার রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন এবং অন্যের
প্রতিবেশী হওয়া অপেক্ষা আমার প্রতিবেশী হওয়ার অগ্রাধিকার দিয়েছেন। হ্যাঁ, তোমরা যা বলছো উনারা যদি সত্যি সত্যি সেরূপ হয়ে থাকেন, তবে আমি উনাদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দিবো। কিন্তু উনারা যদি সেরূপ
না হন তবে আমি উনাদেরকে আশ্রয় দিবো। উনাদের উপর কোনো হস্তক্ষেপ করবো না এবং উনাদের
প্রতিপক্ষকে খুশি করবো না। হযরত মূসা ইবনে উকবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
বলেন, তখন উনার সভাসদ হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে
ইঙ্গিতে বলেছিলো, যেনো উনাদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়।
বাদশাহ বললেন- না, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম!
উনাদেরকে ফেরত দিবো না। আমি যতোক্ষণ পর্যন্ত উনাদের কথা না শুনবো এবং এ সম্পর্কে
না জানবো।
فلما دخلوا عليه سلموا ولم يسجدوا له. فقال أيها الرهط ألا تحدثونى مالكم لا تحيونى كما يحيينى من أتانا من قومكم؟ فاخبرونى ماذا تقولون فى حضرت عيسى عليه السلام وما دينكم؟ أنصارى أنتم؟ قالوا لا. قال أفيهود أنتم؟ قالوا لا. قال فعلى دين قومكم؟ قالوا لا. قال فما دينكم؟ قالوا الاسلام. قال وما الاسلام؟ قالوا نعبد الله لا نشرك به شيئا. قال من جاءكم بهذا؟ قالوا جاءنا به رجل من أنفسنا، قد عرفنا وجهه ونسبه، بعثه الله الينا كما بعث الرسل الى من قبلنا، فأمرنا بالبر والصدقة والوفاء واداء الامانة، ونهانا أن نعبد الاوثان وأمرنا بعبادة الله وحده لا شريك له، فصدقناه وعرفنا كلام الله وعلمنا أن الذى جاء به من عند الله،
এদিকে হিজরতকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা
বাদশাহর দরবারে এলেন। উনারা বাদশাহকে সালাম দিলেন বটে কিন্তু সিজদা করলেন না।
বাদশাহ বললেন, হে ব্যক্তিগণ! বলুন দেখি! আপনাদের
সম্প্রদায়ের যারা ইতঃপূর্বে আমার নিকট এলো তারা আমাকে যেভাবে অভিবাদন জানালো
আপনারা সেভাবে অভিবাদন জানালেন না কেন? আমাকে আগে বলুন, হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে আপনাদের
বক্তব্য কি এবং আপনাদের ধর্ম কি? আপনারা কি খ্রিস্টান? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা
জাওয়াবে বললেন- না আমরা খ্রিস্টান নই। বাদশাহ বললেন, তাহলে আপনারা কি ইহুদী? উনারা বললেন- না, আমরা ইহুদীও নই। তিনি বললেন, তাহলে আপনারা আপনাদের স্বজাতির ধর্মানুসারী? উনারা বললেন- না, আমরা তাও নই। এবার বাদশাহ বললেন, তাহলে আপনাদের ধর্ম কি? উনারা বললেন, ইসলাম। বাদশাহ বললেন, ইসলাম কি? উনারা বললেন, আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী করি আর উনার সাথে
কাউকে শরীক করি না। তিনি বললেন, এই দ্বীন (ধর্ম) কে নিয়ে এসেছেন? উনারা বললেন, এটি আমাদের নিকট নিয়ে এসেছেন আমাদের
মধ্যকার একজন সুমহান ব্যক্তি যিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি। আমরা উনাকে সকলেই চিনি এবং জানি। উনার সুমহান নছব বা বংশ মুবারক সম্পর্কেও
জানি। আমাদের পূর্ববর্তী সম্প্রদায়সমূহের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করেছেন, তেমনি উনাকে আমাদের প্রতি রসূলরূপে মহান আল্লাহ পাক তিনি
প্রেরণ করেছেন। তিনি আমাদের সততা, সত্যবাদিতা, অঙ্গীকার পূরণ ও আমানত রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন এবং
মূর্তিপূজা করতে নিষেধ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি আমাদের আদেশ করেছেন- একক
লা-শারীক মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী করতে। আমরা উনাকে সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে মেনে নিয়েছি। মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম আমরা উপলব্ধি
করেছি এবং তিনি যা এনেছেন তা যে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকেই এনেছেন তা
অনুধাবন করেছি।
فلما فعلنا ذلك عادانا قومنا وعادوا النبى صلى الله عليه و سلم الصادق وكذبوه وأرادوا قتله، وأرادونا على عبادة الاوثان، ففررنا اليك بديننا ودمائنا من قومنا.
قال والله إن هذا لمن المشكاة التى خرج منها أمر حضرت موسى عليه السلام. قال حضرت جعفر رضى الله تعالى عنه وأما التحية فان رسول الله صلى اله عليه وسلم أخبرنا أن تحية أهل الجنة السلام، وأمرنا بذلك فحييناك بالذى يحيى بعضنا بعضا. واما حضرت عيسى ابن مريم عليه السلام فعبد الله ورسوله وكلمته ألقاها الى حضرت مريم عليها السلام وروح منه وابن العذراء البتول. فاخذ عودا وقال والله مازاد ابن حضرت مريم عليها السلام على هذا وزن هذا العود. فقال عظماء الحبشة والله لئن سمعت الحبشة لتخلعنك. فقال والله لا أقول فى حضرت عيسى عليه السلام غير هذا أبدا، وما أطاع الله الناس فى حين رد على ملكى فاطع الناس فى دين الله. معاذ الله من ذلك.
আমরা উনাকে মেনে নেয়ার কারণে আমাদের সম্প্রদায় আমাদের শত্রুতে পরিণত হয়েছে।
তারা হক্ব বা সত্য নবী আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে শত্রুতা পোষণ করেছে, করছে। উনাকে তারা মিথ্যাবাদী (পাগল, যাদুকর) বলে। নাঊযুবিল্লাহ! এবং উনাকে তারা শহীদ করতে
চাচ্ছে। তারা আমাদেরকে হারাম মূর্তিপূজার দিকে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে। যার ফলে আমরা
আমাদের জান রক্ষার জন্যে আমাদের দ্বীনকে হিফাযতের লক্ষ্যে আমরা আপনার দেশে হিজরত
করে এসেছি। বাদশাহ বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এতো সেই সুমহান নূর বা জ্যোতির
উৎস থেকে উৎসারিত, যেখান থেকে এসেছিলো হযরত মুসা
কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দ্বীন।
হযরত জা’ফর ইবনে আবূ ত্বলিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, অভিবাদন সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
আমাদেরকে বলেছেন যে, জান্নাতবাসীগণের অভিবাদন হলো
‘সালাম’। তিনি আমাদেরকে সালামের মাধ্যমে অভিবাদন জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং
আমরা যেভাবে পরস্পরে অভিবাদন জানাই, আপনাকেও সেভাবে অভিবাদন জানিয়েছি।
আর হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে আমাদের আক্বীদা হলো, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা ও রসূল আলাইহিস সালাম।
তিনি হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম উনার প্রতি নিক্ষিপ্ত মহান আল্লাহ পাক উনার
কালিমা ও রূহ মুবারক এবং তিনি সম্মানিত পূতঃপবিত্রা কুমারী মাতার পুত্র সন্তান।
এবার বাদশাহ একটি শুষ্ক কাষ্ঠখ- হাতে তুলে নিলেন এবং বললেন, উনারা যা বলছেন হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত
সন্তান হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তদ্রƒপ; এর চেয়ে অন্যকিছু নন। তখন আবিসিনিয়ার নেতৃস্থানীয় লোকরা
বললো, হে বাদশাহ! হাবশী লোকেরা আপনার একথা শুনলে তারা অবশ্যই
আপনাকে সিংহাসনচ্যুত করবে। বাদশাহ বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি
হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে যা বলেছি কখনো তার ব্যক্তিক্রম
কিছু বলবো না। মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন আমাকে আমার রাজত্ব ফিরিয়ে দেন, তখন লোকজন তো মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য করেনি। সুতরাং
আমিও মহান আল্লাহ পাক উনার দ্বীনের ব্যাপারে লোকজনের কথাও মানবো না। এ জাতীয় বদ
আক্বীদা ও আমল থেকে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
وقال حضرت يونس رحمة الله عليه عن حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه فارسل اليهم حضرت النجاشى رحمة الله عليه فجمعهم ولم يكن شئ ابغض لعمرو بن العاص وعبد الله بن أبى ربيعة من أن يسمع كلامهم، فلما جاءهم رسول صلى الله عليه و سلم حضرت النجاشى رحمة الله عليه اجتمع القوم فقالوا ماذا تقولون؟ فقالوا وماذا نقول؟ نقول والله مانعرف، وما نحن عليه من أمر ديننا، وما جاء به نبينا صلى الله عليه وسلم كائن من ذلك ما كان، فلما دخلوا عليه كان الذى يكلمه منهم حضرت جعفربن أبى طالب رضى الله تعالى عنه. فقال له حضرت النجاشى رحمة الله عليه ماهذا الدين الذى أنتم عليه؟ فارقتم دين قومكم ولم تدخلوا فى يهودية، ولا نصرانية. فقال له حضرت جعفر رضى الله تعالى عنه أيها الملك كنا قوما على الشرك نعبد الاوثان ونأكل الميتة ونسئ الجوار، يستحل المحارم بعضنا من بعض فى سفك الدماء وغيرها، لانحل شيئا ولا نحرمه. فبعث الله الينا نبيا من أنفسنا نعرف وفاءه وصدقه وامانته فدعانا الى أن نعبد الله وحده لاشريك له ونصل الارحام ونحمى الجوار ونصلى لله عزوجل، ونصوم له، ولا نعبد غيره.
হযরত ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে হযরত ইউনুস রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বর্ণনা করেছেন যে, বাদশাহ হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি
আলাইহি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিকট লোক পাঠিয়ে
একত্রিত হতে বললেন। তিনি মুসলমানগণের কথা শুনবেন। আমর ইবনে আস ও আব্দুল্লাহ ইবনে রবীয়ার
নিকট-এর চেয়ে ক্ষোভের বিষয় অন্য কিছু ছিলো না। হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার দূত দ্রুত আগমন করার পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুম উনারা
একত্রিত হলেন এবং পরস্পরে আলোচনা করলেন যে, উনারা বাদশাহকে কি বলবেন। শেষে
উনারা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, পরিস্থিতি যাই হোক মহান আল্লাহ পাক
উনার ক্বসম! আমরা তাই বলবো যা আমরা জানি। আমরা যে দ্বীন ইসলামের উপর আছি এবং আখিরী
রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
আমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন, তাই বলবো। তাতে যা হয় হবে।
বাদশাহর দরবারে উপস্থিত হয়ে হযরত জা’ফর ইবনে আবু ত্বলিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনি সকলের পক্ষে কথা বললেন। বাদশাহ বললেন, আপনারা যে দ্বীনের অনুসরণ করছেন সেটা কি? আপনারাতো স্বজাতির ধর্ম ত্যাগ করেছেন অথচ খ্রিস্টান ধর্মও
গ্রহণ করেননি?
হযরত জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে বাদশাহ! আমরা ছিলাম অংশীবাদী। আমরা মূর্তিপূজা করতাম।
মৃত প্রাণীর গোশত খেতাম। প্রতিবেশীর সাথে অসদাচরণ করতাম। খুন-খারাবী ও অন্যন্য
অপকর্মও আমাদের কেউ কেউ বৈধ মনে করতো। আমরা হালাল হারামের ধার ধারতাম না। এ
অবস্থায় মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের প্রতি একজন সুমহান ব্যক্তিকে অর্থাৎ আখিরী
রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে প্রেরণ করছেন।
উনার বেমেছাল সত্যবাদিতা, প্রতিজ্ঞাপূরণ ও আমানতদারী সম্পর্কে
আমরা সম্যক অবগত ছিলাম। তিনি আমাদের আহ্বান জানালেন আমরা যেনো লা-শারীক মহান
আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করি। আমরা যেনো আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করি, প্রতিবেশীর হক্ব নষ্ট না করি। মহান আল্লাহ পাক উনার
উদ্দেশ্যে নামায আদায় করি। উনার সন্তুষ্টির জন্যে রোযা পালন করি এবং তিনি ব্যতীত
অন্য কারো ইবাদত না করি।
0 Comments:
Post a Comment