শিয়াবে আবূ ত্বালিবে অবস্থান,
কুরাইশদের
চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর ও আনুষঙ্গিক ঘটনাবলী
আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশ-এর সপ্তম বর্ষ। কুরাইশ কাফির, মুশরিকরা লক্ষ্য করলো যে, হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ইবনুল
খত্তাব আলাইহিস সালাম উনাদের ইসলাম গ্রহণ করা অন্যদিকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আবিসিনিয়ায় হিজরত। আরব দেশসহ সারা পৃথিবীর দিক
দিগন্তে ইসলামের সুনাম, সুখ্যাতির কথা প্রচারিত-প্রসারিত
হয়ে চলছে। ফলে কাফির, মুশরিকদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষের
আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। তারা দ্বীন ইসলামকে নির্মূল করে দেয়ার জন্যে উঠে পড়ে
লাগলো। সর্বোপরি যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হলো। যেহেতু নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবূ ত্বালিব-এর বাড়িতে ছিলেন, আর আবূ ত্বালিব তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
খিদমতের আঞ্জাম দিতেন।
কাজেই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর সরাসরি কোনো প্রকার অত্যাচার নির্যাতন চালানো তাদের
পক্ষে সম্ভবপর হয় নাই। তারা দলবদ্ধ হয়ে আবূ ত্বালিব উনার নিকট উপস্থিত হয়ে
প্রস্তাব পেশ করে, আপনি আপনার ভ্রাতুষ্পুত্র আখিরী
রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
আমাদের হাতে ছেড়ে দিন, আমরা উনার সঙ্গে বুঝাপড়া করি।
নাঊযুবিল্লাহ! অথবা উনাকে আমাদের উপাস্য দেব-দেবীর দাষ-ত্রুটি বর্ণনা করা
থেকে বিরত রাখুন। অথবা আমাদের সঙ্গে জিহাদ
করতে প্রস্তুত হন। কুরাইশ কাফির, মুশরিকরা আবূ ত্বালিব উনাকে এই
চরমপত্র দিলো। (মাদারিজুন নুবুওওয়াত)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
يُرِيدُونَ
لِيُطْفِؤُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
অর্থ: তারা মহান আল্লাহ পাক উনার নূর মুবারক উনাকে তাদের মুখের ফুৎকারে নিভিয়ে
দিতে চায়। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার নূর মুবারক উনাকে পরিপূর্ণ করবেন যদিও
তারা অসন্তুষ্ট হোক না কেন। (সূরা ছফফ : আয়াত শরীফ ০৮)
এ প্রসঙ্গে আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৮৬, ৮৭, ৮৮, ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
عن حضرت ابن هشام رحمة الله عليه عن حضرت زياد رحمة الله عليه عن حضرت محمد بن اسحاق رحمة الله عليه فلما رأت قريش أن أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم قد نزلوا بلدا أصابوا منه امنا وقرارا، وأن النجاشى رحمة الله عليه قد منع من لجأ اليه منهم، وأن حضرت عمر عليه السلام قد أسلم فكان هو و حضرت حمزة رضى الله تعالى عنه مع رسول الله صلى الله عليه وسلم وأصحابه، وجعل الاسلام يفشو فى القبائل فاجتمعوا وأئتتمروا
على أن يكتبوا كتابا يتعاقدون فيه على بنى هاشم وبنى عبد المطلب عليه السلام على أن لا ينكحوا اليهم ولا ينكحوهم ولا يبيعوهم شيئا ولا يبتاعوا منهم فلما اجتمعوا لذلك كتبوا فى صحيفة ثم تعاهدوا وتواثقوا على ذلك ثم علقوا الصحيفة فى جوف الكعبة توكيدا على أنفسهم، وكان كاتب الصحيفة منصور ابن عكرمة بن عامر بن هاشم بن عبد مناف بن عبد الدار بن قصى.
قال حضرت ابن هشام رحمة الله عليه ويقال النضر ابن الحارث، فدعا عليه رسول الله صلى الله عليه وسلم فشل بعض أصابعه. وقال حضرت الواقدى رحمة الله عليه كان الذى كتب الصحيفة طلحة بن أبى طلحة العبدوى.
قلت والمشهو رأنه منصور بن عكرمة كما ذكره حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه، وهوالذى شلت يده فما كان ينتفع بها وكانت قريش تقول بينها- أنظروا إلى منصور بن عكرمة. قال حضرت الواقدى رحمة الله عليه وكانت الصحيفة معلقة فى جوف الكعبة.
অর্থ: “হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত যিয়াদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে
বর্ণনা করেন। কুরাইশরা যখন দেখলো যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা এমন এক স্থানে গিয়ে হিজরত করে
অবস্থান করছেন যেখানে উনারা খুবই শান্তি ও নিরাপত্তায় রয়েছেন। উনাদের মধ্যে যাঁরা
হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট গিয়েছেন তিনি উনাদেরকে যথাযথ খিদমতের
ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া ইতোমধ্যে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি ইসলাম
গ্রহণ করেছেন, এখন হযরত উমর ফারূক আলাইহিস সালাম ও
হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা দু’জনেই আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদের সঙ্গে রয়েছেন। বিভিন্ন গোত্রে উপ-গোত্রে ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ছে।
এ পরিস্থিতিতে কুরাইশ কাফির, মুশরিকরা এক সমাবেশে মিলিত হয় এবং
তারা বনূ হাশিম ও বনূ আব্দুল মুত্তালিব গোত্রের বিরুদ্ধে এমন একটি চুক্তিনামা
সম্পাদনের বিষয় পরামর্শ করে যার বিষয়বস্তু এ হবে যে, তারা উনাদের নিকট নিজেদের পুত্র কন্যা বিয়ে দিবে না, উনাদের নিকট কিছু বিক্রি করবে না এবং উনাদের থেকে কিছু
ক্রয়ও করবে না। আলোচনা শেষে তারা এ বিষয়ে একমত হয় এবং এই চুক্তিনামা তৈরি করে, সকলে তা মেনে চলতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। এর গুরুত্ব বৃদ্ধির
জন্যে তারা সেটিকে কা’বা শরীফ-এর অভ্যন্তরে ঝুলিয়ে রাখে। চুক্তিনামাটির লেখক ছিলো
মানছূর ইবনে ইকরামা ইবনে আমির ইবনে হাশিম ইবনে আবদে মানাফ ইবনে আব্দুদ দার ইবনে
কুসাই। হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কারো কারো মতে সেটি লিখেছিলো নাদ্বর ইবনে হারিছ। আখিরী রসুল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
লিখকের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করেছিলেন, ফলে তার হাতের কতক আঙ্গুল অবশ হয়ে
যায়। হযরত ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, চুক্তিনামাটি লিখেছিলো তালহা ইবনে আবূ ত্বলহা আবদাবী।
প্রসিদ্ধ কথা হচ্ছে, হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন, আমি বলি মানছুর ইবনে ইকরামা
চুক্তিনামাটির লেখক ছিলো। যেমনটি হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
উল্লেখ করেছেন। তার হাত অবশ হয়ে গিয়েছিলো। ওই হাত দ্বারা সে কোনো কাজ করতে পারতো
না। এ প্রসঙ্গে কুরাইশ গোত্রের লোকজন বলতো, দেখ দেখ, ওই যে, মানছুর ইবনে ইকরামা! হযরত ওয়াকীদি
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, চুক্তিনামাটি কা’বা শরীফ-এর অভ্যন্তরে
ঝুলানো ছিলো।
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه فلما فعلت ذلك قريش انحازت بنوهاشم وبنو المطلب إلى أبى طالب فدخلوا معه فى شعبه واجتمعوا اليه، وخرج من بنى هاشم أبولهب عبد العزى بن عبد المطلب إلى قريش فظاهرهم. وحدثنى حضرت حسين بن عبد الله رضى الله تعالى عنه أن أبا لهب لقى هند بنت عتبة ابن ربيعة حين فارق قومه وظاهر عليهم قريشا. فقال ياابنة عتبة هل نصرت اللات والعزى وفارقت من فارقها وظاهر عليها؟ قالت نعم! فجزاك الله خيرا يا أبا عتبة.
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه وحدثت أنه كان يقول- فى بعض مايقول- يعدنى حضرت محمد صلى الله عليه و سلم أشياء لاأراها يزعم أنها كائنة بعد الموت، فماذا وضع فى يدى بعد ذلك، ثم ينفخ فى يديه فيقول تبالكما لا أرى فيكما شيئا مما يقول حضرت محمد صلى الله عليه و سلم. فانزل الله تعالى (تبت يدا أبى لهب وتب).
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কুরাইশরা যখন এই চুক্তি সম্পাদন করে, তখন বনূ হাশিম ও বনু আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার
গোত্রের লোকেরা আবূ ত্বালিব উনার নিকট উপস্থিত হয় এবং উনার সাথে তারা সবাই শিয়াবে
আবূ ত্বালিব-এ গিয়ে সমবেত হয়। আবূ লাহাব আব্দুল উযযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব বনূ
হাশিম গোত্র থেকে বেরিয়ে যায়। সে কুরাইশদের সাথে মিলিত হয় এবং তাদের শক্তি বৃদ্ধি
করে। হযরত হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে, আপন সম্প্রদায়কে ছেড়ে কুরাইশদের শক্তি বৃদ্ধি করার পর আবূ
লাহাব সে হিন্দা বিনতে উতবা ইবনে রাবীয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে। সে হিন্দাকে বলে হে
উতবার কন্যা! আমি কি লাত ও উযযা প্রতিমাকে সাহায্য করতে পেরেছি? এবং যে ব্যক্তি তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেন উনাদের বিরুদ্ধে
শক্তি প্রয়োগ করে আমি কি উনাকে ত্যাগ করতে পেরেছি? হিনদা বললো, হ্যাঁ, অবশ্যই, হে আবূ উতবা! মহান আল্লাহ পাক
তোমাকে কল্যাণ দান করুন।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, আবূ লাহাব যেসব কথাবার্তা বলতো তার একটি এই যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে বহু বিষয়ের ভয় প্রদর্শন করেছেন। অথচ তার কিছুই আমি
এখনও বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি না। নাঊযুবিল্লাহ!
তিনি মনে করেন যে, ওগুলো মৃত্যুর পর পাওয়া যাবে। এরপর
আমার হাতে কি দেয়া হবে এ কথা বলে সে তার দু’হাতে ফুঁ দেয় এবং বলে ‘আপনার দু’হাত
ধ্বংস হয়ে যাক, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
যা বলেছেন তার কিছুই তো উনার মধ্যে দেখছি না। নাঊযুবিল্লাহ! এ প্রেক্ষিতে মহান
আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করেন,
تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ
অর্থ: “ধ্বংস হোক আবূ লাহাবের দু’হাত এবং সে নিজেও ধ্বংস হোক। (সূরা লাহাব :
আয়াত শরীফ- ১)
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه فلما اجتمعت على ذلك قريش وصنعوا فيه الذى صنعوا قال أبو طالب:
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, চুক্তিনামা সম্পাদনে কুরাইশ কাফির, মুশরিকরা যখন ঐক্যবদ্ধ হলো এবং যা করার তা করলো, তখন আবূ ত্বালিব তিনি নি¤েœাক্ত কবিতা আবৃত্তি করলেন,
ألا أبلغا عنى على ذات بيننا - لؤيا وخصا من لؤى بنى كعب.
আমাদের মাঝে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে সে সম্পর্কে আমার পক্ষ থেকে লুওয়াই
গোত্রকে বিশেষ করে লুওয়াই গোত্রের খুস এবং বনূ কাআব উপগোত্রকে এ সংবাদ পৌছায়ে দাও।
ألم تعلموا أنا وجدنا حضرت محمدا - نبيا صلى الله عليه و سلم كموسى خط فى أول الكتب.
তোমরা কি জানো না যে, আমরা হযরত মুহম্মদ রসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নবী-রসূল হিসেবে পেয়েছি যেমন, নবী ছিলেন হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম। পূর্ববর্তী
আসমানী কিতাবসমূহে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক লিপিবদ্ধ রয়েছে।
وأن عليه فى العباد محبة - ولا خيرممن خصه الله بالحب.
উনার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাদের মুহব্বত তথা ভালোবাসা রয়েছে। মহান
আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে মাহবুব তথা হাবীবুল্লাহ হিসেবে বৈশিষ্ট্যম-িত করেছেন, উনার চেয়ে উত্তম অন্য কেউ হয় না।
وأن الذى الصقتموا من كتابكم - لكم كائن نحسا كراغية السقب.
তোমাদের কিতাবের মধ্যে তোমরা বিপদাপদ বা আযাব-গযব সম্পর্কিত যে সমস্ত বিবরণ
পেয়েছো তোমাদের দুর্ভোগস্বরূপ হযরত ছলিহ আলাইহিস সালাম উনার উষ্ট্রীর চিৎকারের
ন্যায় সেগুলো তোমাদের উপর আপতিত হবেই।
أفيقوا أفيقوا قبل أن يحفر الثرى - ويصبح من لم يجن ذنبا كذى الذنب.
তোমরা সচেতন হও! তোমরা সতর্ক হও! কবর খোঁড়ার পূর্বেই এবং সজাগ হও! সে সময়
আসার আগে যখন নির্দোষ ব্যক্তি দোষী ব্যক্তির ন্যায় বিপন্ন হয়ে যাবে।
ولا تتبعوا أمر الوشاة وتقطعوا - أواصرنا بعد المودة والقرب.
তোমরা মিথ্যাবাদীদের অনুসরণ করো না এবং বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনের
পর আমাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করো
না।
وتستجلبوا
حربا عوانا وربما - أمر على من ذاقه حلب الحرب.
কঠিন যুদ্ধ-বিগ্রহ তোমরা টেনে এনো না। অনেক সময় স্বাদ গ্রহণকারীর জন্যে
যুদ্ধের দুধ ভীষণ তিক্ত হয়।
فلسنا ورب البيت نسلم حضرت أحمدا نبيا صلى الله عليه و سلم - لعزاء من عض الزمان ولا كرب.
বাইতুল্লাহ শরীফ-এর মালিক উনার ক্বসম! আমরা আখিরী রসূল হযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাকে কখনো হস্তান্তর করবো না কোনো কুকুরের হাতে এবং না কোনো দুঃখ
দুর্দশার মুখে।
ولما تبن منا ومنكم سوالف - وأيد أترت بالقساسية
الشهب.
আামরা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তোমাদের হাতে সমর্পণ করব না, যতক্ষণ না আমাদের আর তোমাদের মাঝে যুদ্ধ বিজেতা অশ্বদল এবং
যুদ্ধে পারদর্শী হস্তগুলোর ফায়ছালা হয়। যে হস্ত কাসাসী তরবারী দ্বারা দুর্ধর্ষ
যোদ্ধাকে কেটে টুকরো টুকরো করে দেয়।
بمعترك ضيق ترى كسر القنا - به والنسور الطخم يعكفن كالشرب.
ফায়ছালা হবে একটি সংকীর্ণ যুদ্ধ ক্ষেত্রে, যেখানে তুমি দেখতে পাবে তীর ও বল্লমের ভগ্নাংশগুলো এবং
দেখতে পাবে কালো কালো বড় বড় শকুন, যেনো সেগুলো একত্রিত হয়েছে পানির
ঘাটে।
كأن ضحال الخيل فى حجراته - ومعمعة الابطال معركة الحرب.
আস্তাবল ও অশ্বশালার অশ্বদলের উত্তেজনাকর পাঁয়চারি এবং সাহসী বীর যোদ্ধাদের
সদম্ভ হাঁক ডাক, যেনো নিজেই একটি যুদ্ধক্ষেত্র।
أليس أبونا هاشم شد أزره - وأوصى بنيه بالطعان وبالضرب.
আমাদের পিতা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম তিনি কি জিহাদ করার জন্যে কোমর বেঁধে
ঝাঁপিয়ে পরেননি। এবং তিনি কি উনার বংশধরগণকে বল্লম নিক্ষেপ ও তরবারী পরিচালনায়
পারদর্শী হওয়ার উপদেশ দিয়ে যাননি।
ولسنا نمل الحرب حتى تملنا - ولا نشتكى ماقد ينوب من النكب.
যুদ্ধ বিগ্রহে আমরা ক্লান্ত হই না যতক্ষণ না যুদ্ধ নিজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
মাঝে মাঝে যে সমস্ত কঠিন ও বড় বড় বিপদাপদ আমাদের উপর আপতিত হয় তাতে আমরা কোনো
অভিযোগ করি না। আমরা তাতে ক্লান্ত হই না।
ولكننا أهل الحفائظ والنهى - إذا طار أرواح الكماة من الرعب.
আমরা তখনও নিরাপত্তারক্ষী ও সুবিবেচক থাকি, যখন প্রচ- ভয়ে অন্যান্য বীর যোদ্ধাদের প্রাণ উড়ে যায়।
অন্য হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে,
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه فاقاموا على ذلك سنتين أو ثلاثا حتى جهدوا ولم يصل اليهم شئ الا سرا مسختفيا به من أراد صلتهم من قريش، وقد كان أبو جهل بن هشام- فيما يذكرون- لقى حكيم بن حزام بن خويلد بن أسد معه غلام يحمل قمحا يريد به عمته حضرت خديجة بنت خويلد عليها السلام وهى عند رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الشعب فتعلق به وقال أتذهب بالطعام إلى بنى هاشم؟ والله لا تذهب أنت وطعامك حتى أفضحك بمكة، فجاءه أبو البخترى بن هشام بن الحارث بن أسد. فقال مالك وله. فقال يحمل الطعام إلى بنى هاشم فقال له أبو البخترى طعام كان لعمته عنده بعثت به اليه أتمنعه أن يأتيها بطعامها؟ خل سبيل الرجل قال فابى أبوجهل لعنه الله حتى نال أحدهما من صاحبه فاخذ أبو البخترى لحى بعير فضربه فشجه ووطئه وطئا شديدا،
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এরপর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী ও সঙ্গীগণ দুই বছর বা তিন বছর সেখানে থাকলেন। কঠিন
দুঃখ-কষ্টে উনাদের দিন কাটতো। কুরাইশ বংশের যারা আত্মীয় স্বজন ছিলো গোপনে
তাদের পাঠানো সামান্যদ্রব্য সামগ্রী
ব্যতীত অন্য কিছুই উনাদের নিকট পৌঁছাতো না।
বর্ণিত আছে যে, একদিন হাকীম ইবনে হিযাম ইবনে
খুওয়ায়লিদ ইবনে আসাদের সাথে আবূ জাহিল ইবনে হিশামের সাক্ষাৎ হয়। হাকীমের সাথে একজন
ক্রীতদাসও ছিলো। সে গম বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলো। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো তার ফুফু
উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজা বিনতে খুওয়ায়লিদ আলাইহাস সালাম উনার নিকট তা পৌঁছিয়ে
দেয়া। হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহিস সালাম তিনি তখন শিয়াবে আবূ ত্বালিবে ছিলেন।
আবূ জাহিল তার পিছু নিলো। সে বললো, তুমি কি বনু হাশিমের নিকট খাদ্য
নিয়ে যাচ্ছ? শাসিয়ে দিয়ে সে আরো বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তুমি খাদ্য নিয়ে উনাদের নিকট
যেতে পারবে না। যদি যাও তবে আমি তোমাকে মক্কা শরীফ-এর মাটিতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত
করে ছাড়বো। তখন সেখানে উপস্থিত হয় আবুল বুখতারী ইবনে হিশাম ইবনে হারিছ ইবনে আসাদ।
সে বললো, তোমাদের দু’জনের মধ্যে কি ঘটনা ঘটেছে? কাট্টা কাফির আবূ জাহিল অভিযোগ করে বললো, হাকীম ইবনে হিশাম বনূ হাশিমের নিকট খাদ্য নিয়ে যাচ্ছে। আবুল
বুখতারী বললো, সে তো খাদ্য সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে
তার ফুফুর জন্যে। আমি তাকে খাদ্য সামগ্রীসহ পাঠিয়েছি। উম্মুল মু’মিনীন হযরত
খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট খাদ্য পৌঁছাতে তুমি কি বাঁধা দিবে? তার পথ ছেড়ে দাও। আবু জাহিল কথা শুনলো না। দু’জনের মধ্যে
হাতাহাতি ও মারামারি শুরু হলো। একটি উটের চোয়াল দিয়ে আবুল বুখতারী তাকে মেরে
রক্তাক্ত করে দেয় এবং মাটিতে ফেলে মাড়িয়ে দেয়।
حضرت حمزة بن عبد المطلب رضى الله تعالى عنه قريب يرى ذلك وهم يكرهون أن يبلغ ذلك رسول الله صلى الله عليه وسلم وأصحابه فيشمتون بهم ورسول الله صلى الله عليه وسلم على ذلك يدعو قومه ليلا ونهارا وسرا وجهارا مناديا بامر الله تعالى لا يتقى فيه أحدا من الناس. فجعلت قريش حين منعه الله منها وقام عمه وقومه من بنى هاشم وبنى عبد المطلب دونه وحالوا بينهم وبين ما أرادوا من البطش به يهمزونه ويستهزؤن به ويخاصمونه
কাছে দাঁড়িয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এসব
দেখছিলেন। নিজেদের মধ্যে মারামারির এ সংবাদ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও
উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিকট পৌঁছুক তাতে উনারা
খুশি প্রকাশ করেন এটা কাফির মুশরিকরা পছন্দ করেনি।
বস্তুত এমন দুঃখ কষ্টের সময়েও আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা
মানুষকে দিনে রাতে, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে যথাযথভাবে
মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ নিষেধ তথা দ্বীন ইসলামের প্রতি আহ্বান করে যাচ্ছিলেন।
এতে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাউকে বিন্দুমাত্র ভয় করতেন না। এভাবে কুরাইশ কাফির
মুশরিক থেকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে হিফাযত করেন। উনার চাচা এবং বনূ হাশিম ও
বনূ মুত্তালিব গোত্রদ্বয় উনার খিদমতে এগিয়ে এলেন। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে উনারা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালেন।
তখন কুরাইশ কাফিরেরা উনাদের সমালোচনা ও মিথ্যা দুর্নাম শুরু করলো। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে থাকে এবং উনার বিরুদ্ধে অযথা ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি
করতে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ!
وجعل القران ينزل فى قريش باحدائهم وفيمن نصب لعداوته، منهم من سمى لنا ومنهم من نزل القران فى عامة من ذكر الله من الكفار. فذكر حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه أبالهب ونزول السورة فيه، وأمية بن خلف ونزول قوله تعالى (ويل لكل همزة لمزة) السورة بكمالها فيه. والعاص بن وائل ونزول قوله (أفرأيت الذى كفر باياتنا وقال لاوتين مالا وولدا) فيه.
এদিকে কুরাইশ কাফির, মুশরিকদের এ সকল অন্যায় আচার-আচরণ ও
কর্মকা-ের কথা উল্লেখ করে কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াত শরীফ নাযিল হতে থাকে। যারা নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে শত্রুতা পোষণ করতো, তাদের সম্পর্কে আয়াত শরীফ আসতে থাকে। এ জাতীয় কতক কাফির, মুশরিকদের কথা কুরআন শরীফ-এ এসেছে স্পষ্টভাবে নাম উল্লেখ
করে। আর কতকের কথা এসেছে সাধারণভাবে।
এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আবু লাহাব এবং তাকে
উপলক্ষ করে সূরা লাহাব (সূরা নং ১১১) নাযিল হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। অনুরূপভাবে
কাফির উমাইয়া ইবনে খালফকে উপলক্ষ করে
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ
অর্থ: “প্রত্যেক সম্মুখে দোষারোপকারী ও পশ্চাতে গীবতকারীর জন্য ধ্বংস, জাহান্নাম ও আফসুস।” পূর্ণ সূরা (সূরা নং ১০৪) নাযিল হওয়ার
কথা এবং কাফির আছ ইবনে ওয়াইলকে উপলক্ষ করে
أَفَرَأَيْتَ
الَّذِي كَفَرَ بِآيَاتِنَا وَقَالَ لَأُوتَيَنَّ مَالًا وَوَلَدًا
অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কী লক্ষ্য করেছেন
অর্থাৎ আপনি লক্ষ্য করেছেন উহাকে (তথা আস ইবনে ওয়াইলকে), যে আমার নির্দশনগুলো প্রত্যাখান করে এবং বলে আমাকে ধন-সম্পদ
ও সন্তান-সন্তুতি দেয়া হবে।” (সূরা মরিয়ম : আয়াত শরীফ ৭৭)
আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
والنضر بن الحارث بن كلدة بن علقمة- ومنهم من يقول علقمة بن كلدة قاله السهيلى- وجلوسه بعد النبى صلى الله عليه وسلم فى مجالسه حيث يتلو القران ويدعو إلى الله، فيتلو عليهم النضر شيئا من أخبار رستم واسقنديار
وما جرى بينهما من الحروب فى زمن الفرس، ثم يقول والله ما حضرت محمد صلى الله عليه و سلم باحسن حديثا منى، وما حديثه إلا أساطير الاولين اكتتبها كما اكتتبها، فانزل الله تعالى (وقالوا أساطير الاولين اكتتبها فهى تملى عليه بكرة وأصيلا) وقوله (ويل لكل أفاك أثيم).
অর্থ: হযরত সুহায়িল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন, নদ্বর ইবনে হারিছ ইবনে কালদাহ ইবনে আলকামা মতান্তরে আলকামা
ইবনে কালদা সম্পর্কে। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে সকল মাজলিসে বসে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন এবং মহান
আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে আহ্বান
করতেন। উনারা উঠে যাওয়ার পর নদ্বর ইবনে হারিছ ওই সকল মাজলিসে বসত। সে রুস্তম এবং
ইসকানদিয়ারের কাহিনী এবং পারসিক স¤্রাটদের আমলে তাদের যুদ্ধ বিগ্রহের কথা আলোচনা করতো। তারপর
বলতো মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
কথা মুবারক আমার চেয়ে মোটেও উত্তম নয়। নাঊযুবিল্লাহ! আমার এগুলো যেমন লিখিত কাহিনী
উনার কথা মুবারকও তেমন লিখিত কাহিনী তা পূর্ববর্তীদের কিচ্ছা কাহিনী ব্যতিত কিছু
নয়। নাঊযুবিল্লাহ!
এ প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করেন,
وَقَالُوا
أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ اكْتَتَبَهَا فَهِيَ تُمْلَى عَلَيْهِ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
অর্থ: “(কাফির মুশরিক) তারা বলে, এগুলো তো সে কালের উপকথা যা তিনি
লিখে নিয়েছেন। এগুলো সকাল-সন্ধ্যা উনার নিকট পাঠ করা হয়। (সূরা ফুরকান : আয়াত
শরীফ-৫)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন,
وَيْلٌ لِّكُلِّ أَفَّاكٍ أَثِيمٍ
অর্থ: “দুর্ভোগ প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী পাপীর।” (সূরা জাছিয়া : আয়াত শরীফ ৭)
বর্ণিত রয়েছে,
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه وجلس رسول الله صلى الله عليه وسلم- فيما بلغنا- يوما مع الوليد بن المغيرة فى المسجد فجاء النضر بن الحارث حتى جلس معهم، وفى المجلس غير واحد من رجال قريش فتكلم رسول الله صلى الله عليه وسلم فعرض له النضر، فكلمه رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى أفحمه، ثم تلا عليه وعليهم (إنكم وما تعبدون من دون الله حصب جهنم أنتم لها واردون لو كان هؤلاء الهة ما و ردوها وكل فيها خالدون لهم فيها زفير وهم فيها لا يسمعون).
অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একদিন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওয়ালীদ ইবনে মুগীরাকে নিয়ে মসজিদে বসেছিলেন। তখন নদ্বর
ইবনে হারিছ এসে উনাদের নিকট বসে। ওই মাজলিসে কুরাইশদের অন্যান্য লোকজনও ছিলো আখিরী
রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
কথা মুবারক বলছিলেন। কাফির নদ্বর ইবনে হারিছ উনার কথা মুবারক বলার মাঝে প্রশ্ন
উত্থাপন করে। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমন দলীলভিত্তিক কঠোর ভাষায় নদ্বরের প্রত্যুত্তর দেন যে, সে লা-জাওয়াব হয়ে যায়। এরপর তিনি নদ্বর ইবনে হারিছ ও
অন্যান্য লোকদের নিকট এ আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে শুনালেন।
إِنَّكُمْ
وَمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنتُمْ لَهَا وَارِدُونَ - لَوْ كَانَ هَؤُلَاء آلِهَةً مَّا وَرَدُوهَا وَكُلٌّ فِيهَا خَالِدُونَ- لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ وَهُمْ فِيهَا لَا يَسْمَعُونَ
অর্থ: “নিশ্চয়ই তোমরা এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পরিবর্তে তোমরা যাদের উপাসনা
করো, সেগুলোতো জাহান্নামের ইন্ধন। তোমরা সকলে তার মধ্যে প্রবেশ
করবে। ওগুলো যদি প্রকৃতই ইলাহ হতো, তবে ওগুলো জাহান্নামে প্রবেশ করতো
না। ওদের সকলেই তার মধ্যে স্থায়ী হবে। সেখানে থাকবে তাদের আর্তনাদ এবং সেখানে তারা
কিছুই শুনতে পারবে না। (সূরা আম্বিয়া : আয়াত শরীফ ৯৮-১০০)
ثم قام رسول الله صلى الله عليه وسلم وأقبل عبد الله بن الزبعرى السهمى حتى جلس. فقال الوليد بن المغيرةله
والله ما قام والله ما قام النضر بن الحرث لابن عبد المطلب انفا وما قعد، وقد زعم حضرت محمد صلى الله عليه وسلم أنا وما نعبد من الهتنا هذه حصب جهنم. فقال عبد الله بن الزبعرى أما والله لو وجدته لخصمته، فسلوا حضرت محمدا صلى الله عليه وسلم أكل من نعبد من دون الله حصب جهنم مع من عبده؟ فنحن نعبد الملائكة واليهود تعبد حضرت عزيرا عليه السلام والنصارى تعبد حضرت عيسى عليه السلام. فعجب الوليد ومن كان معه فى المجلس من قول ابن الزبعرى ورأوا أنه قد احتج وخاصم
এরপর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখান থেকে উঠে আসলেন। এবার সেখানে উপস্থিত হলো
আব্দুল্লাহ ইবনে যাবআরী সাহমী। সেখানে সে বসলো। ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা তাকে বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! একটু আগে হযরত আব্দুল
মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার পৌত্র আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মুকাবিলায় নদ্বর ইবনে হারিছ দাঁড়াতেই পারেনি। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বলেছেন যে, আমরা সবাই এবং আমরা যাদের উপসনা করি
তারা সবাই জাহান্নামের ইন্ধন হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে যাবআরী বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি যদি উনাকে পেতাম, তবে উপযুক্ত জবাব দিয়ে দিতাম। নাঊযুবিল্লাহ! তোমরা আখিরী
রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে জিজ্ঞেস করো মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্য যাদের আমরা উপসনা করি তারা
এবং আমরা উপাসকরা সকলেই কি জাহান্নামের ইন্ধন হবো? তাহলে আমরাতো হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপসনা
করি। ইয়াহুদীরা হযরত উযায়র আলাইহিস সালাম উনার ইবাদত করে এবং খ্রিস্টানরা হযরত ঈসা
আলাইহিস সালাম উনার ইবাদত করে। ইবনে যাবআরীর কথায় ওয়ালীদ নিজে এবং তার সাথে যারা
মজলিসে উপস্থিত ছিলো সকলে খুব খুশি হয়। নাঊযুবিল্লাহ। তাদের দৃষ্টিতে তারা বুঝে
নেয় এটা উপযুক্ত উত্তর এবং তাতে যাবআরীর জয় সুনিশ্চিত। নাঊযুবিল্লাহ!
فذكر ذلك لرسول الله صلى الله عليه وسلم. فقال كل من أحب أن يعبد من دون الله فهومع من عبده فى النار، انهم إنما يعبدون الشياطين ومن أمرتهم بعبادته. فانزل الله تعالى (إن الذين سبقت لهم منا الحسنى أولئك عنها مبعدون لا يسمعون حسيسها وهم فيما اشتهت أنفسهم خالدون) أى حضرت عيسى عليه السلام و حضرت عزير عليه السلام ومن عبد من الاحبار والرهبان الذين مضوا على طاعة الله تعالى. ونزل فيما يذكرون أنهم يعبدون الملائكة وأنها بنات الله- وقالوا اتخذ الرحمن ولدا سبحانه بل عباد مكرمون والايات بعدها.
এ সংবাদ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছে। ফলে তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত যে সকল উপাস্য নিজেদের উপাসনা
করাকে ভালোবাসে সে সকল উপাস্য তাদের উপাসকদের সাথে জাহান্নামের ইন্ধন হবে। ওরা তো
মূলত শয়তানের উপাসনা করে এবং শয়তানরা যাদের উপাসনার নির্দেশ দেয়, সেগুলোর উপাসনা করে।
এ প্রেক্ষাপটে মহান আল্লাহ পাক তিনি এ আয়াত শরীফ নাযিল করলেন,
إِنَّ الَّذِينَ
سَبَقَتْ لَهُم مِّنَّا الْحُسْنَى أُوْلَئِكَ عَنْهَا مُبْعَدُونَ - لَا يَسْمَعُونَ حَسِيسَهَا وَهُمْ فِي مَا اشْتَهَتْ أَنفُسُهُمْ خَالِدُونَ
অর্থ: “যাদের জন্যে আমার নিকট থেকে
পূর্ব থেকে কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে উনাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে। উনারা
সেটির ক্ষীণতম শব্দও শুনবেন না এবং সেথায় (জান্নাতে) উনারা উনাদের মন যা চায়
চিরকাল তা ভোগ করবেন।” (সূরা আম্বিয়া : আয়াত শরীফ- ১০১-১০২)
অর্থাৎ হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম, হযরত উযায়র আলাইহিস সালাম এবং মহান আল্লাহ পাক উনার
আনুগত্যকারী আহবার ও রোহবান তথা মুত্তাক্বী বান্দাগণ উনারা শাস্তির অন্তর্ভুক্ত
হবেন না। যে সকল মুশরিক লোকেরা হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপাসনা করে
এবং এ কথা বিশ্বাস করে যে, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা
মহান আল্লাহ পাক উনার কন্যা (নাঊযুবিল্লাহ!) তাদের সম্পর্কে নি¤েœাক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হয়।
وَقَالُوا
اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ
অর্থ: “তারা বলে দয়াময় মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি
পূতঃপবিত্র সুমহান। বরং উনারাতো (মহান আল্লাহ পাক) উনার সম্মানিত বান্দা বা রসূল
আলাইহিস সালাম।” (সূরা আম্বিয়া : আয়াত শরীফ ২৬)
0 Comments:
Post a Comment