হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৩৭৮-৪৮০) (ক)


(৩৭৮-৪৮০)

আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত প্রকাশ ও এতদসম্পর্কিত মু’জিযা শরীফ

হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
وأخرج حضرت الحارث بن أبى اسامة رحمة الله عليه فى مسنده، عن حضرت عكرمة بن خالد رضى الله تعالى عنه ان ناسأ من قريش ركبوا البحر عند مبعث النبى صلى الله عليه وسلم فألقتهم الريح الى جزيرة من جزائر البحر، فإذا فيها رجل فقال من انتم؟ قالوا نحن ناس من قريش قال وما قريش؟ قالوا اهل الحرم، واهل كذا، فلما عرف قال نحن أهلها لا انتم، فإذا هو رجل من جرهم. قال أتدرون لأى شئ سمى أجياد؟ كانت خيولنا جيادا عطفت عليه، فقالوا له إنه قد خرج فينا رجل يزعم انه نبى وذكروا له أمره فقال اتبعوه فلولا حالى
التى انا عليها لحقت معكم به.
 অর্থ: হযরত হারিছ ইবনে আবী উসামা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় মুসনাদ শরীফ-এ হযরত ইকরামা ইবনে খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ বা আগমনের সময় কুরাইশ গোত্রের কিছু লোক সমুদ্রে এক কিস্তি বা নৌকায় সাওয়ার হয়। একটি ঝড় এসে উনাদেরকে এক অজানা সামুদ্রিক দ্বীপে নিয়ে যায়। উনারা সেই দ্বীপে এক ব্যক্তিকে দেখতে পান। সেই ব্যক্তি উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনারা কে? উনারা বললেন, আমরা কুরাইশ। প্রশ্ন হলো- কুরাইশ কারা? উনারা বললেন, হেরেম শরীফ-এর অধিবাসী এবং তৎসঙ্গে পরিচিতিমূলক কিছু বর্ণনা দিলেন। তিনি বললেন না, আপনারা হেরেম শরীফ-এর অধিবাসী, না আমরা। পরে দেখা গেলো যে, ওই লোকটি জুরহাম গোত্রের একজন। তিনি বললেন, আপনারা জানেন কী উৎকৃষ্ট ঘোড়ার নাম ‘জিয়াদ’ কেন হলো? কারণ আমাদের ঘোড়া অত্যন্ত দ্রুতগামী।
এরপর কুরাইশগণ বললেন, আমাদের মধ্যে একজন সুমহান বেমেছাল এক ব্যক্তি, তিনি উনার নবুওওয়াত শরীফ-এর কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন। একথা শুনে তিনি বললেন, আপনারা এই সম্মানিত রসূল, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ করুন। আমার হায়াতও শেষ হয়ে গেছে তা না হলে আমিও আপনাদের সাথে সেই আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছে যেতাম। অর্থাৎ উনার প্রতি ঈমান এনে নিজেকে ধন্য করে নিতাম।” সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৬৮ পৃষ্ঠা)

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
قال حضرت أبو نعيم رحمة الله عليه فى الدلائل قال حضرت سعير بن سوادة العامرى رضى الله تعالى عنه. كنت عشيقا لعقيلة من عقائل الحى، أركب لها الصعب والذلول لاأبقى من البلاد مسرحا أرجو ربحا فى متجر إلا أتيته، فانصرفت من الشام بحرث وأثاث أريدبه كبة الموسم. ودهماء العرب، فدخلت مكة بليل مسدف فأقمت حتى تعرى عنى قميص الليل فرفعت رأسى فاذا قباب مسامتة شعف اجبال، مضروبة بأنطاع الطائف وإذ جزر تنحر وأخرى تساق، وإذا أكلة وحثثة على الطهاة يقولون الا عجلوا الا عجلوا، وإذا رجل يجهر على فشز من الارض، ينادى ياوفد الله ميلوا إلى النداء. وأنيسان على مدرجة يقول يا وفد الله من طعم فليرح إلى العشاء،
অর্থ: হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘দালায়িল’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, হযরত সায়ির ইবনে সাওয়াদা আল আমিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একটি উন্নত জাতের উট আমার খুব প্রিয় ছিলো। সেই উটের পিঠে চড়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে আমি দূর-দূরান্ত সফর করতাম। একবার আমি ব্যবসার পণ্য নিয়ে সিরিয়া থেকে পবিত্র আরব দেশে আসি। সফর শেষে কোনো এক রাতে মক্কা শরীফ-এ এসে উপনীত হই। রাতের আঁধার কেটে জোছনা এলো। হঠাৎ মাথা তুলে আমি দেখতে পেলাম পাহাড়ের মতো উঁচু কয়েকটি তাঁবু। তাঁবুগুলো তায়েফের চামড়ায় ঢাকা। তারই পার্শ্বে কয়েকটি উট জবাই করা হলো আর কয়েকটি উট কোথায় যেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সম্মুখের পাত্রে খাদ্যদ্রব্য রাখা। কয়েকজন লোক বলছেন, আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন, আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন। অপর এক ব্যক্তি এক উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বলছেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার মেহমানগণ! আপনারা খেতে আসুন। কয়েকজন সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলছেন, আপনাদের যাদের খাওয়া শেষ হয়েছে, চলে যান; আবার রাতের খাওয়ায় অংশ নিবেন। এসব দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।
فجهرنى ما رأيت فاقبلت أريد عميد القوم، فعرف رجل الذى بى، فقال أمامك، وإذا شيخ كأن فى خديه الأساريع، وكأن الشعرى توقد من جبينه، قد لاث على رأسه عمامة سوداء قد أبرز من ملائها جمة فينانة كأنها سماسم. قال فى بعض الروايات تحته كرسى سماسم- ومن دونها نمرقة بيده قضيب متخصر به حوله مشايخ جلس نواكس الأذقان مامنهم أحد يفيض بكلمة. وقد كان نمر إلى خبر من أخبار الشام أن النبى الأمى صلى الله عليه وسلم هذا أوان نجومه، فلما رأيته ظننته ذلك. فقلت السلام عليك يارسول الله صلى الله عليه وسلم. فقال مهمه، كلا وكأن قد وليتنى إياه فقلت من هذا الشيخ؟ فقالوا هذا أبو نضلة، هذا هاشم بن عبد مناف، فوليت وأنا أقول هذا والله المجد لامجد ال جفنة- يعنى ملوك عرب الشام من غسان كان يقال لهم ال جفنة- وهذه الوظيفة التى حكاها عن هاشم هى الرفادة يعنى إطعام الحجيج زمن الموسم.
 আমি সরদারের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেলাম। আমাকে আমার এক সঙ্গী চিনে ফেলেন। সে বলল, আপনি সামনে এগিয়ে যান। সামনে এগিয়ে গিয়ে একজন প্রবীণ ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম। লোকটির দু’চোয়াল দাগে ভরা। ব্যক্তিত্বের জ্যোতি যেন তার দুই কপাল থেকে ঠিকরে পড়ছে। মাথায় উনার কালো পাগড়ি। পাগড়ির পাশ দিয়ে কালো চুল দেখা যাচ্ছিলো। আর হাতে একটি লাঠি। উনার চারপাশে আরো কয়েকজন প্রবীণ লোক উপবিষ্ট। উনারা সকলেই নীরব। সিরিয়া থেকে আসা একটি সংবাদের প্রতি উনাদের সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ। সংবাদটি হলো, সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিনি মূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক উদয়ের এটি সময়। প্রবীণ লোকটিকে দেখে আমি ভাবলাম, ইনি বুঝি তিনি। তাই আমি বললাম, ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি বললেন- না, না, আমি না। তুমি আমাকে নবী বানিয়ে ফেললে। বিব্রত হয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি তাহলে কে? পার্শ্বের লোকেরা জবাব দিলেন, ইনি আবু নাজলাহ অর্থাৎ হাশিম ইবনে আবদে মানাফ। আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! ইনি নিশ্চয়ই সিরিয়ার গাসসানের নয়; বরং আরবের কোনো সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি হবেন। উল্লেখ্য যে, হাশিম ইবনে আবদে মানাফের যে মেহমানদারির কাহিনী বর্ণনা করা হলো, তা ছিলো ‘রিফাদাহ’ তথা হজ্জের মাসে হাজীদের আপ্যায়ন মেহমানদারী।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩১৬ ও ৩১৭ পৃষ্ঠা) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
 অপর এক বর্ণনায় হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত জাহম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি উনার পিতা থেকে এবং তিনি উনার দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি শুনেছি আবূ ত্বালিব উনার থেকে, তিনি বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার থেকে। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন
أنا نائم فى الحجر إذ رأيت رؤيا هالتنى ففزعت منها فزعا شديدا، فأتيت كاهنة قريش وعلى مطرف خز وجمتى تضرب منكبى فلما نظرت إلى عرفت فى وجهى التغيير وأنا يومئذ سيد قومى فقالت ما بال سيدنا قد أتانا متغير اللون؟ هل رابه من حدثان الدهر شئ؟ فقلت لها بلى! وكان لا يكلمها أحد من الناس حتى يقبل يدها النينى، ثم يضع يده على أم رأسها ثم يذكر حاجته ولم أفعل لأنى كبير قومى. فجلست فقلت إنى رأيت الليلة وأنا نائم فى الحجر كأن شجرة تنبت قد نال رأسها السماء وضربت بأغصانها المشرق والمغرب، وما رأيت نورا  أزهر منها أعظم من نور الشمس سبعين ضعفا. ورأيت العرب والعجم ساجدين لها وهى تزداد كل ساعة عظما ونورا وار تفاعا ساعة تخفى وساعة تزهر
অর্থ: একদিন আমি হিজর বা হাতীমে ঘুমিয়ে ছিলাম। এই ঘুমের মধ্যে আমি এক বিস্ময়কর এক স্বপ্ন দেখে আমি আতঙ্কিত হয়ে উঠলাম। ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আমি খ্রিস্টান পুরোহিত বা পাদরীর নিকট গেলাম। আমার গায়ে ছিলো নকশী রেশমী চাদর এবং আমার লম্বা বাবরি চুল ঘাড়ের কাছাকাছি ঝুলছিলো। আমার প্রতি দৃষ্টিপাত করে তিনি আমার চেহারার পরিবর্তন টের পেয়ে যান। আমি তখন আমার সম্প্রদায়ের সরদার। পাদরী বললেন, ঘটনা কী? আমাদের যিনি সরদার এমন বিবর্ণ চেহারায় আমার নিকট আসলেন কেন? কোনো বিপদ-আপদ, মুছিবতে পড়েছেন বুঝি? আমি বললাম, হ্যাঁ। পাদরীর নিয়ম ছিলো কেউ উনার নিকট আসলে প্রথমে আগুন্তুককে উনার ডান হাত চুম্বন করতে হতো এবং উনার মাথার তালুতে হাত রাখতে হতো। অতঃপর উনার সঙ্গে কথা বলার ও সমস্যার কথা জানানোর সুযোগ পাওয়া যেতো। আমি আমার ক্বওমের সরদার হওয়ার কারণে আমি এসব কিছু করলাম না। এবার আমি বসে পড়লাম এবং বললাম, নিশ্চয়ই গত রাত্রিতে আমি হিজর বা হাতিমে ঘুমিয়ে ছিলাম। দেখি, একটি গাছ মাটি থেকে অঙ্কুরিত হয়ে বড় হয়ে আকাশ ছুঁইছুঁই করছে। ডালগুলো ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত। গাছটি এতোই নূরানীময় এবং এতই সুন্দর উজ্জ্বল আলোকময় যে, তার চেয়ে উজ্জ্বল নূরানী আলো আমি আর দেখেনি। সূর্যের আলো থেকে এর উজ্জ্বলতা ছিলো সত্তর গুণ বেশি। আরো দেখতে লাগলাম, আরব ও আজম উনাকে সিজদা করে যাচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে গাছটির পরিধি, ঐজ্জ্বলতা ও উচ্চতা বেড়েই চলেছে। গাছটির আলো বা উজ্জ্বলতা ক্ষণে খানিকটা ম্লান হয় আবার পরক্ষণে উজ্জ্বল হয়।
ورأيت رهطا من قريش قد تعلقوا بأغصانها، ورأيت قوما من قريش يريدون قطعها. فاذا دنوا منها أخرهم شاب لم أر قط أحسن منه وجها ولا أطيب منه ريحا فيكسر أظهرهم- ويقلع أعينهم. فرفعت يدى لأتناول منها نصيبا، فمنعنى الشاب فقلت لمن النصيب؟ فقال النصيب لهؤلاء الذين تعلقوا بها وسبقوك اليها. فانتبهت مذعورا فزعا فرأيت وجه الكاهنة قد تغير، ثم قالت لئن صدقت رؤياك ليخرجن من صلبك رجل يملك المشرق والمغرب ويدين له الناس. ثم قال- يعنى حضرت عبد المطلب عليه السلام- لأبى طالب، لعلك تكون هذا المولود قال فكان أبو طالب يحدث بهذا الحديث بعد ما ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم وبعد ما بث. ثم قال كانت الشجرة والله أعلم أبا القاسم الأمين، فيقال لأبى طالب ألا تؤمن؟ فيقول السبة والعار.

আমি আরো দেখলাম কুরাইশ গোত্রের একদল লোক গাছটির ডাল ধরে ঝুলে আছে। অপর একটি কুরাইশ দল গাছটি কেটে ফেলার চেষ্টা করছে। কেটে ফেলার উদ্দেশ্যে তারা গাছের নিকটে গেলে এক সুমহান যুবক তাদেরকে হটিয়ে দেন। সেই সুমহান যুবকের মতো এতো সুন্দর সুশ্রী আর সৌরভময় সুমহান যুবক আমি আর কখনো দেখিনি। ওই সুমহান যুবক পিটিয়ে তাদের হাড়-গোড় ভেঙে দিচ্ছিলেন এবং চোখগুলো উপড়ে ফেলছিলেন। আমি আমার দু’হাত বাড়িয়ে গাছ থেকে কিছু নিতে চাইলাম। কিন্তু সেই সুমহান যুবক তিনি আমাকে বারণ করলেন, আমি বললাম হে যুবক! তাহলে এ গাছ কাদের জন্য? তিনি বললেন, যারা গাছ ধরে ঝুলে আছেন এবং যারা আপনার আগে এসেছেন এ গাছ তাদের জন্য। এতোটুকু দেখার পর আমি এক ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় ঘুম থেকে উঠলাম।
আমি দেখতে পেলাম আমার নিকট থেকে স্বপ্নের বিবরণ শুনে পাদরীর চেহারার রং পাল্টিয়ে গেছে। পাদরী বললেন, আপনার স্বপ্ন যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে আপনার বংশে এমন একজন সুমহান ব্যক্তি আগমন করবেন যিনি মাশরিক (পূর্ব) থেকে মাগরিব (পশ্চিম) পর্যন্ত গোটা পৃথিবীর তথা সারা আলমের নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হবেন। (জিন) ইনসান উনার ধর্মগ্রহণ করবেন।
এই ঘটনার বিবরণ দেয়ার পর সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তাবিল আলাইহিস সালাম তিনি আবূ ত্বালিবকে বললেন, সম্ভবত ওই সন্তানটি আপনিই হবেন।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ এবং উনার আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের পর আবূ ত্বালিব তিনি প্রায়শই এই ঘটনাটি বলতেন। তারপর তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল কাসিম, আল আমীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই ছিলেন সেই গাছ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! মানুষ আবূ ত্বালিব উনাকে জিজ্ঞাসা করতো, আপনি কী উনার উপর ঈমান আনবেন না? জবাবে তিনি বলতেন, গালমন্দ আর নিন্দার কারণেই তো তা পারছি না। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩১৭ ও ৩১৮)
উল্লেখ্য যে, চীশতিয়া খান্দানের বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা হাদীছ শরীফ-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেন, হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে যমীনে আগমন করবেন তখন হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সেটা প্রমাণ করার জন্য উনার সুমহান এক মু’জিযা শরীফ ‘মুর্দাকে জিন্দা করা’ সেটা প্রকাশের জন্য তিনি আবু ত্বালিব উনাকে উনার কবরে যেয়ে قم باذن الله  বলে জিন্দা করবেন। অতঃপর আবু ত্বালিব তিনি ঈমান এনে মুসলমান হবেন এবং মুসলমান হিসেবে বিছাল শরীফ লাভ করবেন।) সুবহানাল্লাহ!
          হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
وقال حضرت أبو نعيم رحمة الله عليه عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه. قال قال حضرت العباس رضى الله تعالى عنه خرجت فى تجارة إلى اليمن فى ركب منهم حضرت أبو سفيان بن حرب رضى الله تعالى عنه، فقدمت اليمن فكنت أصنع يوما طعاما وانصرف بأبى سفيان رضى الله تعالى عنه وبالنفر ويصنع  حضرت أبو سفيان رضى الله تعالى عنه يوما، ويفعل مثل ذلك، فقال لى فى يومى الذى كنت أصنع فيه، هل لك يا أبا الفضل أن تنصرف إلى بيتى وترسل إلى غداءك؟ فقلت نعم. فانصرفت أنا والنفر إلى بيته وأرسلت إلى الغداء فلما تغدى القوم قاموا واحتبسنى. فقال هل علمت يا أبا الفضل أن ابن أخيك يزعم أنه رسول الله صلى الله عليه وسلم فقلت أى بنى أخى؟ فقال حضرت أبو سفيان رضى الله تعالى عنه اياى تكتم؟ وأى بنى أخيك ينبغى أن يقول هذا الا رجل واحد؟ قلت وأيهم على ذلك؟ قال هو حضرت محمد بن عبد الله صلى الله عليه وسلم، فقلت قد فعل؟ قال بلى قد فعل. واخرج كتابا باسمه من ابنه حضرت حنظلة بن أبى سفيان رضى الله تعالى عنه فيه-        
অর্থ: হযরত আবু নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ব্যবসার উদ্দেশ্যে এক কাফিলার সাথে আমি ইয়ামেনের দিকে বের হই। সেখানে একদিন আমি খাবার তৈরি করতাম এবং হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও অন্যদের নিয়ে খেতাম আর অন্যদিন হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি রান্না-বান্না করতেন এবং সবাইকে নিয়ে খেতেন। একদিন আমার রান্না করার দায়িত্ব ছিলো। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আবুল ফদ্বল (সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু!) আপনি কী আহার্য ও সঙ্গীদের নিয়ে আমার বাসস্থানে আসবেন। আমি রাজী হলাম। সেখানে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন কাফিলার অন্যতম সদস্য। আমরা ইয়ামেন পৌঁছলাম। একদিন আহার শেষে অন্যদের বিদায় করে একান্তে বসে আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে বললেন, আবুল ফদ্বল! আপনি কী জানেন যে, আপনার সম্মানিত ভাতিজা তিনি ঘোষণা করেন যে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমি বললাম, আমার কোন ভাতিজা? হযরত আবূ সূফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমার নিকট বিষয়টি গোপন করছেন দেখছি। একজন ছাড়া আপনার কোন ভাতিজা এমনটি বলতে পারেন। আমি বললাম, তিনি কি সত্যিই এরূপ কথা বলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ-এর ঘোষণা দিয়েছেন। এই বলে তিনি হানযালা ইবনে আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রেরিত একটি পত্র বের করলেন।

أخبرك ان حضرت محمدا صلى الله عليه وسلم قام بالا بطح فقال- انا رسول ادعوكم الى الله عزوجل- فقال حضرت العباس رضى الله تعالى عنه قلت اجده يا أبا حنظلة صادق. فقال مهلا يا أبا الفضل فو الله ما أحب أن يقول مثل هذا، إنى لاأخشى أن يكون على ضير من هذا الحديث يابنى عبد المطلب، إنه والله مابرحت قريش تزعم ان لكم هنة وهنة، كل واحدة منهما غاية. لنشدتك يا أبا الفضل هل سمعت ذلك؟ قلت نعم قد سمعت. قال فهذه والله شؤمتكم. قلت فلعلها، قال فما كان بعد ذلك الاليال حتى قدم عبد الله بن حذافة بالخبر وهو مؤمن، ففشا ذلك فى مجالس اليمن، وكان حضرت أبو سفيان رضى الله تعالى عنه يمجلس مجلسا باليمن يتحدث فيه حبر من أحبار اليهود، فقال له اليهودى ماهذا الخبر؟ بلغنى أن فيكم عم هذا الرجل الذى قال ما قال؟ قال حضرت أبو سفيان رضى الله تعالى عنه صدقوا وانا عمه، فقال اليهودى اخو ابيه؟ قال نعم!
তাতে লেখা ছিলো, ‘আমি আপনাকে অবহিত করছি যে, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবতাহে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছেন যে, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আপনাদেরকে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার পথে আহবান করছি। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “জবাবে আমি বললাম, হে আবূ হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আমি তো উনাকে হক্ব তথা সত্যিবাদীই পাচ্ছি। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, “(তখনও আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মুসলমান হননি) থামুন হে আবুল ফদ্বল। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি পছন্দ করি না যে, হাবীবুল্লাহ হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এরূপ বলেন, আমি তা পছন্দ করি না। হে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সন্তান! উনার এরূপ ঘোষণায় আমি উনার ক্ষতির আশঙ্কা করছি। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম দিয়ে বলছি, কুরাঈশগণ এমনিতেই বলাবলি করছে যে, আপনার হাতে বহু ক্ষমতা পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। আমি আপনাকে দোহাই দিয়ে জিজ্ঞেস করছি হে আবুল ফদ্বল! আপনি কি এ কথা শুনেননি? আমি বললাম, হ্যাঁ, শুনেছি বটে। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এটা আপনার অকল্যাণ বয়ে আনবে। আমি বললাম, নিশ্চয়ই এটা আমাদের জন্য খইর, বরকত তথা কল্যাণ বয়ে আনবে।
এরপর অল্প কয়েকদিন যেতে না যেতেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খবর নিয়ে এলেন। তখন তিনি ঈমান গ্রহণ করেছেন। সেই খবর ইয়ামেনের বিভিন্ন মজলিস বা অনুষ্ঠানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও ইয়ামেনের এক মজলিসে বসতেন। এক ইহুদী আলিম সেই মজলিসে আলোচনা করতো। সেই ইহুদী হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, আমি জানতে পেলাম যে, আগত ব্যক্তিটি কি যেন বলছেন, উনার সম্মানিত চাচা নাকি আপনাদের মধ্যে আছেন? হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ঠিকই শুনেছেন, আমি হচ্ছি উনার চাচা। ইহুদী আলিম বলল, আপনি উনার সম্মানিত পিতা অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ভাই? হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হ্যাঁ।
قال فحدثنى عنه قال تسألنى مااحب ان يدعى هذا الامر ابدا- وما أحب ان أعيبه وغيره خير منه، فرأى اليهودى انه لا يغمس عليه ولا يحب ان يعببه. فقال اليهودى ليس به بأس على اليهود، وتوراة حضرت موسى عليه السلام. قال حضرت العباس رضى الله تعالى عنه فنادانى الحبر، فجئت فخرجت حتى جلست ذلك المجلس من الغد، وفيه حضرت أبو سفيان بن حرب رضى الله تعالى عنه والحبر، فقلت للحبر بلغنى انك سألت ابن عمى عن رجل منا زعم انه رسول الله صلى الله عليه وسلم وأخبرك أنه عمه، وليس بعمه. ولكن ابن عمه وانا عمه واخو ابيه. قال أخوأبيه؟ قلت أخو أبيه، فاقبل على حضرت أبى سفيان رضى الله تعالى عنه فقال صدق؟ قال نعم صدق، فقلت سلنى فان كذبت فليرد على، فاقبل على فقال نشدتك هل كان لابن أخيك صبوة أوسفهة؟ قلت لا وإله حضرت عبد المطلب عليه السلام ولا كذب ولاخان، وانه كان اسمه عند قريش الامين.

ইহুদী বললো, তবে উনার সম্পর্কে কিছু বলুন। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমাকে এসব জিজ্ঞেস করবেন না। সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমন কিছু বলেন, আমি কিন্তু তা পছন্দ করি না। আবার উনার এটা ভুল এটাও আমি বলবো না। এতে ইহুদী বুঝতে পারলো যে, হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মিথ্যাও বলতে পারছেন না আবার উনার ছানা-ছিফত বর্ণনাও করতে চাচ্ছেন না। তাই তিনি বললেন, এতে ইহুদী ও সাইয়্যিদুনা হযরত মুসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার তাওরাত শরীফ-এর কোনো ক্ষতিও হবে না।
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, তারপর ইহুদী আলিম আমাকে ডেকে পাঠান। আমি পরের দিন সেই মজলিসে গিয়ে বসি। হযরত আবু সুফিয়ান ইবনে হারব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেই মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। ইহুদী আলিমও সেখানে উপস্থিত। আমি ইহুদী আলিমকে বললাম, আমি খবর পেলাম, আপনি আমার চাচাতো ভাই উনার নিকট সেই ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। উনার ঘোষণা তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর আপনাকে তিনি আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি তো উনার চাচা নন। তিনি উনার চাচাতো ভাই। উনার চাচা হচ্ছি আমি অর্থাৎ আমি উনার সম্মানিত পিতা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ভাই। সুবহানাল্লাহ!
এরূপ শুনে ইহুদী হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি মুখ ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কি সত্যি বলেছেন? হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হ্যাঁ, সত্য বলেছেন। আমি বললাম, আরো কিছু জানবার থাকলে আমাকে জিজ্ঞেস করুন, আমি যদি মিথ্যা বলি, তাহলে তিনি তার প্রতিবাদ করবেন। এবার ইহুদী আলিম আমার প্রতি মুখ ফিরিয়ে বলল, দোহাই আপনার! সত্য বলবেন। আপনার ভাতিজার কী কারো প্রতি আসক্ত ছিলেন, না তিনি অজ্ঞ? আমি বললাম, না সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার রব উনার ক্বসম। তিনি কখন মিথ্যাও বলেননি, খিয়ানতও করেননি। কুরাইশগণ উনাদের নিকট উনার লক্বব মুবারক ছিলো ‘আল আমীন’।
....... فوثب الحبر ونزل رداؤه وقال ذبحت يهود، وقتلت يهود. قال حضرت العباس رضى الله تعالى عنه فلما رجعنا الى منزلنا، قال حضرت أبو سفيان رضى الله تعالى عنه يا أبا الفضل إن اليهود تفزع من ابن أخيك، قلت قد رأيت مارأيت، فهل لك يا حضرت أبا سفيان رضى الله تعالى عنه ان تؤمن به، فان كان حقا كنت قد سبقت وان كان باطلا فمعك غيرك من اكفائك؟ قال لا أؤمن به حتى أرى الخيل فى كداء، قلت ماتقول؟ قال كلمة جاءت على فمى الا انى اعلم أن الله لا يترك خيلا تطلع من كداء. قال حضرت العباس رضى الله تعالى عنه فلما استفتح رسول الله صلى الله عليه وسلم مكة ونظرنا الى الخيل وقد طلعت من كداء، قلت يا  حضرت أبا سفيان رضى الله تعالى عنه تذكر الكلمة؟ قال اى والله إنى
لذاكرها فالحمد لله الذى هدانى للاسلام.

..........এসব তথ্য শুনে ইহুদী আলিম লাফিয়ে উঠলো। তবে তার শরীরের চাদর খসে পড়ে। সে বলল, ইহুদীরা জবাই হয়ে গেছে। ইহুদীরা খুন হয়ে গেছে। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, তারপর আমরা যখন বাড়ি ফিরে আসি তখন হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আবুল ফদ্বল! ইহুদীরা তো আপনার ভাতিজার নাম মুবারক শুনে আঁতকে উঠে। আমি বললাম, আপনি তো যা দেখার তাই দেখেছেন। আমিও তাই দেখছি। আচ্ছা উনার প্রতি ঈমান আনতে আপনার অসুবিধা কোথায়? হে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! তিনি যদি হক্ব হয়ে থাকেন তাহলে আপনি সকলের আগে ভাগে উনার প্রতি ঈমান এনে ফেলবেন। আর যদি তিনি নাহক্ব হয়ে থাকেন, তাহলে মনে করবেন আপনার সমমর্যাদার আর দশজন যা করলো, আপনি তাই করলেন! হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি উনার প্রতি ঈমান আনবো না যতক্ষণ না আমি কোদায় ঘোড় সাওয়ার বাহিনী দেখবো। আমি বললাম, আপনি কী বলছেন? তিনি বললেন, মুখে একটি কথা এসে গেলো তাই বললাম। অন্যথায় আমি জানি, কোদা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো ঘোড় সাওয়ার বাহিনী ছেড়ে দেবেন না। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মক্কা শরীফ বিজয়ের জন্য আসলেন এবং আমরা কোদা থেকে উনার ঘোড়া সাওয়ার বাহিনী বেরিয়ে আসছে দেখতে পাই তখন আমি হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! কথাটি কী এখন আপনার মনে পড়ছে? হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! মনে পড়ছে কি? আমি হামদ বা প্রশংসা করছি সেই মহান আল্লাহ পাক উনার, যিনি আমাকে ইসলামের পথ দেখিয়েছেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩১৮ ও ৩১৯ পৃষ্ঠা) 

0 Comments: