ছাহিবে কা’বা কাওসাইনে আও আদনা, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মি’রাজ শরীফ
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত ঘোষণার পর দুনিয়াবী
হিসেবে ৫১তম বয়স মুবারকে ২৭শে রজব ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার রাত্রে উনার
চাচাতো বোন হযরত উম্মু হানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার বাড়ির এক হুজরা শরীফ-এ
অবস্থান করছিলেন। তখন খালিক্ব, মালিক, রব
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এক পার্শ্বে শুয়ে ছিলেন প্রাণপ্রিয় চাচাজান
হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং অন্য পাশে ঘুমিয়ে ছিলেন চাচাতো ভাই
হযরত জাফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
এমতাবস্থায় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনি ও হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম উনারা
হুজরা শরীফ-এ প্রবেশ করে সালাম পেশ করেন এবং খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে অত্যন্ত তা’যীম-তাকরীম করে মসজিদুল হারাম (কা’বা শরীফ) উনার হাত্বীমের নিকটে
নিয়ে আসেন। (ফতহুল বারী)
হযরত উম্মু হানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খালিক্ব, মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার
হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার মি’রাজ শরীফ আমার হুজরা শরীফ থেকেই হয়েছিল। আমি রাত্রে উনাকে বিছানা মুবারকে
না দেখে খোঁজ করতে থাকি, কিন্তু কোথাও পাইনি। তখন আমার ভয়
হচ্ছিলো যে, না জানি কুরাঈশ কাফির, মুশরিকরা
উনাকে কোথাও নিয়ে গেল কি না!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ করেন, অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমার নিকট
আগমন করে আমার হাত মুবারক ধরে আমাকে নিয়ে আসেন, দরজার সামনে
সেখানে একটি জন্তু দাঁড়িয়েছিল যা খচ্চরের চেয়ে ছোট এবং গাঁধার চেয়ে বড়। তিনি আমাকে
সেই জন্তুর উপর সাওয়ার করিয়ে নেন। অতঃপর আমরা বাইতুল মুকাদ্দাসে পৌঁছে যাই।
(ফতহুল বারী)
মূলত, খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মি’রাজ শরীফ হয়েছে ৩৩ থেকে ৩৪ বার।
একবার জিসমানী বাকি ৩২ থেকে ৩৩ বার রূহানীভাবে হয়েছে। ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম
(সোমবার) ২৭শে রজবের রাত্রে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কা’বা শরীফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস, সিদরাতুল
মুনতাহা হয়ে আরশে মুয়াল্লায় খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক সাক্ষাৎ করে আবার যমীনে তাশরীফ আনেন যা
বিশিষ্ট ৪৫ জন ছাহাবী বর্ণনা করেছেন।
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খালিক্ব, মালিক রব মহান আল্লাহ পাক
উনার মুবারক সাক্ষাতে মি’রাজ শরীফ-এ যাওয়ার সময় যখন কা’বা শরীফ-এ তাশরীফ নেন তখন
উনার সিনা মুবারক চাক করা হয়।
হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূর, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে
তা’যীমের সাথে জমজম কূপের নিকট শোয়ার ব্যবস্থা করেন এবং বক্ষ মুবারক বিদীর্ণ করেন।
তৎপর হিকমত ও ঈমান-এর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের
তশতরি (পাত্র) আনেন এবং এটা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা
মুবারক-এ উনার স্পর্শ মুবারক-এ আনেন। এনে মর্যাদা বৃদ্ধি করে অতঃপর সিনা মুবারক
জোড়া লাগিয়ে দেন। (তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৫ম জিলদ ১৬ পৃষ্ঠা)
মহান খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ
“আমি কি আপনার সিনা মুবারক চাক ও প্রসারিত করিনি? অর্থাৎ আমি আপনার সিনা মুবারক চাক ও প্রসারিত করেছি।” (সূরা
ইনশিরাহ : আয়াত শরীফ- ১)
উক্ত আয়াত শরীফ-এ খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরহে ছুদূর বা সিনা মুবারক
প্রসারিত করার কথা বলেছেন। যা খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে প্রকাশকৃত উনার রসূল নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি
নিয়ামতসমূহের মধ্যে বিশেষ এক নিয়ামত।
ছহীহ ও বিশুদ্ধ মতে, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা
মুবারক চাক করা হয়েছিলো চারবার। প্রথম বার যখন তিনি স্বীয় দুধ মা সাইয়্যিদাতুনা হযরত
হালীমা সা’দিয়া আলাইহাস সালাম উনার লালন-পালনে, তখন উনার বয়স
মুবারক তিন থেকে পাঁচ বছর ছিল। দ্বিতীয় বার দশ থেকে চৌদ্দ বছর বয়স মুবারকে।
তৃতীয়বার আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত প্রকাশের সময় হিরা গুহায় এবং চতুর্থবার
আনুষ্ঠানিকভাবে মি’রাজ শরীফ-এর রাতে কা’বা শরীফ-এ।
কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, পথভ্রষ্ট, ফিতনাবাজ,
বেয়াদব ও বাতিল ফিরকার লোকেরা বলে থাকে যে, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিইয়ীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রথমবার
সিনা মুবারক চাকের সময় উনার ভিতর থেকে ক্বলব বের করে তা চাক করে শয়তানের অংশ বের
করে ফেলে দিয়ে ক্বলবকে পবিত্র করা হয়েছিল এবং শিশুসুলভ আচরণ দূরীভূত করা হয়েছিল।
নাঊযুবিল্লাহ!
মূলত তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ কুফরীমূলক এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান ও মান মুবারক উনার
খিলাফ যা প্রকৃতপক্ষে ইহানত ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শামিল। কারণ উম্মতদেরকে শয়তানের
ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকার জন্য খালিক্ব, মালিক রব মহান
আল্লাহ পাক তিনি যাকে প্রেরণ করলেন উনারই মধ্যে যদি শয়তানের অংশ থাকে তাহলে তিনি
হিদায়েত করবেন কিভাবে? নাঊযুবিল্লাহ! আর শিশুসুলভ আচরণ
সম্পর্কে বলা হয়েছে,
النبي نبيا و لوكان صبيا
‘হযরত নবী আলাইহিস সালামগণ উনারা তো নবী যদিও উনারা শিশু হন না কেন।’ (আল
ইতকান)।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
كنت نبيا وادم بين الماء و الطين وبين الروح و الجسد
“আমি তখনও নবী ছিলাম যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি মাটি ও পানিতে অবস্থান
করছিলেন এবং রূহও শরীরে ছিলেন।” (মিশকাত শরীফ, মিরকাত ১১ জিলদ ৫৮ পৃষ্ঠা, তারীখে
বুখারী, আহমদ, আলহাবী, ইত্তেহাফুচ্ছাদাত, তাযকিরাতুল মাউজুয়াত, কানযুল উম্মাল, দাইলামী, ত্ববারানী,
আবূ নায়ীম)
কেননা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ,
ইজমা ও কিয়াস তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মতে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সমস্ত প্রকার খারাপ বিষয় এবং
অপবিত্রতা থেকে সম্পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র; এমনকি পবিত্র থেকে
পবিত্রতম।
ওই সমস্ত কাফির, মুনাফিক, বেয়াদব, ওহাবী, খারিজীরা আরো
বলে যে, দ্বিতীয়বার সিনা মুবারক চাকের সময় উনার ভিতর থেকে
হিংসা, বিদ্বেষ ও কামভাব দূর করা হয়েছিলো। নাঊযুবিল্লাহ!
তাদের এ বক্তব্যও কুফরীমূলক এবং খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনার প্রতি চরম অপবাদ। হাদীছে কুদসী শরীফ-এ
খালিক্ব, মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
اتخذت خليلا وحبيبا
“আমি আপনাকে খলীল ও হাবীব হিসেবে গ্রহণ করেছি।”
তারা আরো বলে যে, তৃতীয় বার সিনা
মুবারক চাক করা হয়েছিলো নুবুওওয়াত-এর ভার বহন ও ধারণ করার জন্য। নাঊযুবিল্লাহ!
গুমরাহ ও বাতিল ফিরকার লোকদের এ বক্তব্য কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর খিলাফ।
কারণ খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ব্যতীত এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার হযরত
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা বিনা সিনা মুবারক চাকে নুবুওওয়াত ও রিসালতের ভার
ধারণ ও বহন করলেন। আর যিনি নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল
আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, যিনি সৃষ্টি না হলে খালিক্ব,
মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি কিছুই সৃষ্টি
করতেন না- উনার পক্ষে সিনা মুবারক চাক ব্যতীত নুবুওওয়াত ও রিসালতের ভার বহন ও ধারণ
করা সম্ভব ছিলো না? নাঊযুবিল্লাহ! এ ধারণা পোষণ করা কাট্টা
কুফরী; যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ। খালিক্ব, মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
اللَّهُ يَصْطَفِي
مِنَ الْمَلَائِكَةِ رُسُلًا وَمِنَ النَّاسِ
“খালিক্ব, মালিক রব মহান
আল্লাহ পাক তিনি ফেরেশতা ও মানুষের মধ্য হতে রসূল মনোনীত করেছেন।” (সূরা হজ্জ :
আয়াত শরীফ- ৭৫)
কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, পথভ্রষ্ট, ফিতনাবাজ,
বেয়াদব ও বাতিল ফিরকার লোকেরা বলে থাকে যে, মি’রাজ
শরীফ-এর পূর্বে সিনা মুবারক চাক করা হয়েছিল মি’রাজ শরীফ করা ও তা বরদাশত করার
যোগ্যতা হাছিলের জন্য। নাঊযুবিল্লাহ।
মূলত, তাদের এ বক্তব্য
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও
কিয়াসের সম্পূর্ণ খিলাফ; যা কুফরীমূলক। কারণ খালিক্ব,
মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিটি বিষয় ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
সুতরাং উনার ত্রুটি, অক্ষমতা, অযোগ্যতা
ইত্যাদি ছিল বলে চিন্তা করাটাও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
উল্লেখ্য, কাফির, মুনাফিক, ওহাবী, খারিজী,
বিদয়াতি, বেশরা লোকেরা হাদীছ শরীফ-এর সঠিক
অর্থ করতে ব্যর্থ। এ কারণেই তারা কুফরীমূলক বক্তব্য প্রদান করে থাকে।
দালায়িলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাক্বী, ইবনু আবী হাতিম,
তাফসীরুত ত্ববারী, তাফসীরু ইবনি কাছীরের
বর্ণনা মতে, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি খালিক্ব, মালিক
রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, একবার হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট মি’রাজ শরীফ সম্বন্ধে জানতে
চাইলেন। তখন খালিক্ব, মালিক, রব মহান
আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল, মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘সূরা বণী ইসরাইল’-এর ১ নম্বর আয়াত শরীফ
তিলাওয়াত করেন।
سُبْحَانَ
الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
অর্থ: ‘পূত-পবিত্র ও মহিমাময় মহান আল্লাহ পাক যিনি উনার বান্দা (হাবীব)
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কোনো এক রাতের সামান্য সময়ে (প্রথমে)
বাইতুল্লাহ শরীফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ পর্যন্ত, যার আশপাশ বরকতময়; অতঃপর উনার
নিদর্শনসমূহ দেখানোর জন্য অর্থাৎ দীদার মুবারক আরশে আযীমে দেয়ার জন্য ভ্রমণ
করিয়েছেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’
খালিক্ব, মালিক রব মহান
আল্লাহ পাক উনার হাবীব, আখিরী নবী, নূরে
মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করলেন
এবং ইরশাদ করলেন। (রজব মাসের ২৭ তারিখ) ইশার নামাযের পর আমার কাছে আগমন করেন হযরত
জিবরীল আলাইহিস সালাম। তখন আমি মক্কা (কা’বা) শরীফ-এ অবস্থান করছিলাম। কা’বা শরীফ
থেকে বের হয়ে দেখতে পেলাম একটি বিস্ময়কর, খুবই সুন্দর,
দীর্ঘ কান বিশিষ্ট বাহন দাঁড়িয়ে রয়েছে; যা
সাদা রঙ বিশিষ্ট গাধার চেয়ে একটু বড়, খচ্চরের চেয়ে একটু ছোট।
যার নাম ছিলো বোরাক।
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি বলেন, অতঃপর উহাতে আরোহণ করি। আমি যখন বোরাকের
উপর সাওয়ার হয়ে চলছিলাম এমন সময় আমার ডান দিক থেকে একজন লোক ডাক দিয়ে বললেন,
ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার দিকে একটু তাকান এবং আমার কিছু সুওয়াল রয়েছে। কিন্তু
এখানে আমি দাঁড়াইনি এবং জাওয়াবও দেইনি। এরপর কিছুদূর গেলে আবার বামদিক থেকেও কে
যেন আহবান করলেন কিন্তু এখানেও আমি থামিনি ও জাওয়াবও দেইনি। আবার কিছুদূর গিয়ে
দেখতে পাই একটি স্ত্রীলোক তার সৌন্দর্য জাহির করে দাঁড়িয়ে আছে। সেও আমাকে লক্ষ্য
করে বললো, আমার কিছু সুওয়াল রয়েছে কিন্তু আমি তার দিকে
লক্ষ্য করিনি ও থামিওনি। খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি বলেন, যখন আমরা বাইতুল মুকাদ্দাসে পৌঁছলাম এবং
আমি আমার বাহনকে সেই হালকার সাথে বাঁধলাম; যাতে অন্যান্য
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাদের বাহন বেঁধে রাখতেন। অতঃপর হযরত জিবরীল
আলাইহিস সালাম তিনি আমার নিকট দুটি পেয়ালা আনলেন। একটি ছিল শরাব অপরটিতে দুধ। আমি
দুধের পেয়ালা পান করলাম। কিন্তু শরাব পান করিনি। তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম
তিনি বললেন, আপনি ফিৎরাত তথা সুন্নতকে গ্রহণ করেছেন। তখন আমি
খুশি হয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ তাকবীর দিলাম এবং হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি দু’বার
তাকবীর পাঠ করেন।
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তা’যীম-তাকরীম-এর সাথে অভ্যর্থনা করে হযরত জিবরীল
আলাইহিস সালাম তিনি উনার সাথে বাইতুল মুকাদ্দাসে পৌঁছে পথের ঘটনার কথা বলছিলেন।
তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, পথিমধ্যে প্রথম
যে ব্যক্তি আপনাকে ডান দিক থেকে ডেকেছিল সে হলো একটা ইহুদী লোক। যদি আপনি তার কথার
উত্তর দিতেন এবং সেখানে দাঁড়াতেন তাহলে আপনার উম্মত ইহুদী হয়ে যেতো। আর দ্বিতীয়বার
বাম দিক থেকে যে ব্যক্তি আপনাকে আহবান করেছিল সে হচ্ছে একজন খ্রিস্টান। যদি আপনি
সেখানে দাঁড়াতেন তবে আপনার উম্মত খ্রিস্টান হয়ে যেতো। আর ওই স্ত্রী লোকটি ছিলো
দুনিয়া। যদি আপনি সেখানে থেকে তার সাথে কথা বলতেন তবে আপনার উম্মত আখিরাতের উপর
দুনিয়াকে প্রাধান্য দিয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতো।
মুসনাদে বাযযার, তাবারানী ও
দালায়িলুন নবুওয়াহ লিল বাইহাক্বীতে বর্ণিত আছে, “খালিক্ব,
মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যখন আমরা কা’বা শরীফ থেকে বুরাকে করে যাচ্ছিলাম তখন আমরা খেজুর গাছওয়ালা
একটি যমীনে পৌঁছলাম। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম! আপনি দয়া করে এখানে তাশরীফ নিন। আমি নামলাম এবং সেখানে নামায আদায়
করলাম। তারপর আবার বুরাকে উঠলাম। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন:
আপনি কি জানেন অর্থাৎ আপনি তো জানেন, কোথায় আপনি নামায
পড়েছেন? আমি বললাম, খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন।
তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি নামায
পড়েছেন মদীনা শরীফ-এ (মসজিদুন নববী শরীফ-এ)। নাসায়ী শরীফ-এও বর্ণিত রয়েছে, এটাই আপনার হিজরতের স্থান হবে ইনশাআল্লাহ। (মূলত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবশ্যই তা
জানতেন। কেননা তিনি সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ের ইলমের অধিকারী।
এখানে উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্যই এরূপ বলা হয়েছে।) অতঃপর বুরাক চলতে লাগলো এবং
আমরা এক স্থানে পৌঁছলাম। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম! আপনি দয়া করে এখানে তাশরীফ রাখুন। অতঃপর খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বুরাক থেকে
নামলেন এবং নামায আদায় করলেন। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি কি জানেন, অর্থাৎ আপনি তো জানেন কোথায় নামায
আদায় করলেন? আমি বললাম, মহান আল্লাহ
পাক তিনিই ভালো জানেন। তিনি বললেন, আপনি মাদায়েন শহরে নামায
পড়েছেন, হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গাছের
নিচে। অন্য বর্ণনায় আছে, এটা সিনা বা তুর পর্বতের উপত্যকা,
যেখানে খালিক্ব, মালিক, রব
মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে কথা বলেছেন।
অতঃপর বুরাক খুব দ্রুত গতিতে তার দৃষ্টি পর্যন্ত পা ফেলে চলতে লাগলো। তারপর
আমরা এক জায়গায় পৌঁছলাম যার সৌধগুলো আমাদের সামনে প্রকাশিত হলো। তখন হযরত জিবরীল
আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ,
ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এখানে তাশরীফ নেন।
তারপর আমি নামলাম এবং নামায আদায় করলাম। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি
বললেন: আপনি কি জানেন কোথায় নামায পড়েছেন? অর্থাৎ আপনি তো
জানেন। তিনি সবকিছুই জানার পরও বললেন: মহান আল্লাহ পাক তিনিই ভালো জানেন। তখন হযরত
জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এটা বাইতুল লাহাম। যেখানে
হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন।
পরিশেষে আমরা ইয়ামনী দরজা মুবারক দিয়ে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এ প্রবেশ করি এবং
সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম অসংখ্য অগণিত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সেখানে
আমার আগমনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। হযরত জিবরীল আলাইহিমুস সালাম তিনি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার
নির্দেশে আমাকে জামায়াতের ইমামতি করতে হবে তা জানালে আমি সমস্ত হযরত নবী-রসূল
আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইমাম হিসেবে নামায আদায় করি।
‘বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ-এ’ রয়েছে অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি
আমার হাত মুবারক ধরে বুরাকে করে আকাশের দিকে নিয়ে গেলেন। অন্যত্র রয়েছে, আমাদের সামনে মি’রাজ শরীফ (আরোহণের সিঁড়ি) হাজির করা হলো আমরা
বুরাকে করে সিঁড়ি পথ দিয়ে আসমানে উঠে গেলাম। হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম নামক
ফেরেশতা উনার সাথে সাক্ষাৎ হলো। যিনি দুনিয়ার আকাশের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তার
অধীনে সত্তর হাজার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা রয়েছেন। উনাদের মধ্যে
প্রত্যেক হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সঙ্গীয় বাহিনী হযরত ফেরেশতা
আলাইহিমুস সালাম উনাদের সংখ্যা হলো এক লাখ। মহান খালিক্ব, মালিক,
রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, ‘খালিক্ব,
মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনিই শুধুমাত্র
উনার বাহিনীদের সংখ্যা জানেন।’
বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ-এও বর্ণিত রয়েছে, ‘যখন আমরা নিকটবর্তী তথা প্রথম আসমানে উপস্থিত হলাম। তখন হযরত
জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আসমানের দরজা খুলতে বললেন। অতঃপর আসমানের দ্বাররক্ষী
বললেন, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম। দ্বাররক্ষী বললেন, আপনার
সঙ্গে আর কেউ আছেন কি? আমি বললাম, আমার
সাথে নবী আলাইহিস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিস সালাম
উনাদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি রয়েছেন; উনাকে খালিক্ব, মালিক
রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মুবারক দীদার দানের লক্ষ্যে দাওয়াত
দিয়েছেন। তারপর যখন দরজা খুলল, তখন আমি প্রথম নবী ও রসূল
হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে দেখতে পেলাম সেই আকৃতিতে যেই আকৃতিতে উনাকে প্রথমে
সৃষ্টি করা হয়েছিল। তিনি আমাকে দেখে বলেন, হে শ্রেষ্ঠ নবী!
আমার পবিত্রতম সন্তান, আপনার প্রতি মারহাবা, মুবারকবাদ। এরপর সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ডান পার্শ্বে
অসংখ্য রূহ এবং বাম পার্শ্বেও অনেক রূহ। তিনি ডান দিকে তাকালে হাসেন আর বাম দিকে
তাকালে কাঁদেন। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ডানদিকের
রূহগুলো বেহেশতী ও বাম দিকের রূহগুলো দোযখী। যারা হলো সাইয়্যিদুনা হযরত আদম
আলাইহিস সালাম উনার সন্তান। অন্য বর্ণনায় রয়েছে সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস
সালাম উনার সমস্ত সন্তানের রূহসমূহ উনার সামনে পেশ করা হয়। নেককারদের রূহগুলো দেখে
বলেন, “এই সমস্ত রূহ ও দেহ পবিত্র; এদের
ইল্লীনে নিয়ে যাও। আর বদকারদের রূহগুলো দেখে বলেন, এদের রূহ
অপবিত্র, দেহও অপবিত্র; এদের সিজ্জীনে
নিয়ে যাও।”
কিছুদূর গিয়ে দেখতে পেলাম একটি খাঞ্চা রাখা আছে এবং তাতে উত্তম ভাজা গোশত
রয়েছে। আর একদিকে রয়েছে অন্য একটি খাঞ্চা। তাতে আছে পঁচা দুর্গন্ধময় ভাজা গোশত।
এমন কতকগুলো লোকদের দেখলাম যারা উত্তম ভালো গোশতের কাছে না যেয়ে ওই পচা দুর্গন্ধময়
ভাজা গোশত খাচ্ছে। আমি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে বললাম, এ লোকগুলো কারা? উত্তরে হযরত জিবরীল
আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এরা হলো আপনার উম্মতের ওই সব লোক
যারা হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করতো এবং হারামের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করতো।
[অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীর
প্রত্যেকটা দেশের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, আজকের যারা নামধারী
মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিস, হাদী দাবি করছে, তারাই হালাল বিষয়গুলোকে হারাম ফতওয়া
দিচ্ছে, হারাম বিষয়গুলোকে হালাল ফতওয়া দিচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ!
যেমন পর্দা করা ফরয, এ সমস্ত মাওলানারা
আজকে বলছে- এখন এত পর্দা লাগে না। নাঊযুবিল্লাহ!। ছবি তোলা হারাম, ভোট, নির্বাচন, গণতন্ত্র,
হরতাল, লংমার্চ ইত্যাদি হাজারো হারাম বিষয়কে
হালাল বলছে। নাঊযুবিল্লাহ! তাহলে দেখা যাচ্ছে, এই সমস্ত
মাওলানা, মুফতী তথা উলামায়ে ‘ছূ’ ধর্মব্যবসায়ী তারাই যাদেরকে
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক
উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি পঁচা দুর্গন্ধময় ভাজা গোশত খেতে দেখেন।]
আরো কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দেখি যে, কতগুলো লোকের ঠোঁট
উটের মতো। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা তাদের মুখ ফেঁড়ে ফেঁড়ে ওই গোশত
তাদের মুখের মধ্যে ভরে দিচ্ছেন; যা তাদের নি¤œ পথ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। তারা ভীষণ চিৎকার করছে এবং খালিক্ব,
মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার সামনে মিনতি
করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? জবাবে
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এরা আপনার উম্মতের
ওইসব লোক যারা ইয়াতিমদের মাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করে; তারা
নিজেদের পেটের মধ্যে আগুন ভরে দিচ্ছে এবং অবশ্যই অবশ্যই তারা জাহান্নামের জ্বলন্ত
অগ্নির মধ্যে প্রবেশ করবে।
আরো কিছুদূর গিয়ে আমি দেখতে পাই যে, কতগুলো স্ত্রীলোক
নিজেদের বুকের দ্বারা লটকানো রয়েছে এবং হায়! হায়! করছে। আমি জিজ্ঞাস করলাম,
এরা কারা? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি
বললেন, এরা হচ্ছে আপনার উম্মতের মধ্যে যারা ব্যভিচারিনী
স্ত্রীলোক।
আর একটু অগ্রসর হয়ে দেখি যে, কতকগুলো লোকের পেট
বড় বড় ঘরের মতো। যখন উঠতে চাচ্ছে তখন পড়ে যাচ্ছে এবং বার বার বলতেছে, ‘হে আল্লাহ পাক! কিয়ামত যেন সংঘটিত না হয়।’ কতগুলি জন্তু দ্বারা তারা
পদদলিত হচ্ছে। আর তারা খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবারে হা-হুতাশ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
এরা কারা? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি
বললেন, এরা হচ্ছে আপনার উম্মতের ওইসব লোক যারা সুদ খেতো।
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক
তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “যারা সুদ খায় কিয়ামতের দিন
তারা ঠিক সেই ব্যক্তির ন্যায় উঠবে, যাদেরকে শয়তান পাগল করে
রেখেছে।”
আরো কিছুদূর গিয়ে দেখি যে, কতকগুলি লোকের
পার্শ্বদেশের গোশত কেটে কেটে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা তাদের
খাওয়াচ্ছেন। আর তাদেরকে তারা বলছেন, ‘যেমন তোমরা তোমাদের
জীবদ্দশায় তোমাদের ভাইদের গোশত খেতে; তেমনই এখনো খেতে থাকো।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল আলাইহিস সালাম! এরা কারা।’
উত্তরে তিনি বললেন, ‘এরা হচ্ছে আপনার উম্মতের ওইসব লোক যারা
অপরের গীবত করতো অর্থাৎ দোষ অন্বেষণ করে বেড়াতো।’
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, অতঃপর
আমরা দ্বিতীয় আসমানে আরোহণ করলাম। সেখানে দেখতে পেলাম হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম
ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাদেরকে। উনারা দু’জন পরস্পর খালাতো ভাই। খালিক্ব,
মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি উনাদের সালাম দিলাম। উনারা আমার সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন: ইয়া
রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! আপনার প্রতি মুবারকবাদ।
তারপর তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে দেখতে পেলাম। আমি উনাকে
সালাম দিলাম। তিনি আমার সালামের জবাব দিয়ে বললেন: ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি
মুবারকবাদ।
অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানে আরোহণ করলেন।
সেখানে হযরত ইদরিস আলাইহিস সালাম তিনি অবস্থান করছিলেন। আমি উনাকে সালাম দিলাম।
তিনি আমার সালামের জবাব দিয়ে বললেন: ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি
মুবারকবাদ।
অতঃপর আমরা পঞ্চম আসমানে আরোহণ করলাম। সেখানে হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনাকে
দেখতে পেলাম এবং উনাকে সালাম দিলাম। তিনি আমার সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন: ইয়া
রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি মুবারকবাদ।
অতঃপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে আরোহণ করলাম, সেখানে হযরত মূসা
কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে দেখতে পেলাম। আমি উনাকে সালাম দিলাম। তিনি আমার
সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন: আপনার প্রতি মুবারকবাদ।
হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, লোকেরা বলে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আমার বড় মর্যাদা রয়েছে। অথচ আমার সামনে যিনি
তাশরীফ এনেছেন উনার মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত, খালিক্ব, মালিক, রব মহান
আল্লাহ পাক উনার কাছে সর্বাধিক প্রিয়, পছন্দনীয়। তিনি হচ্ছেন
হাবীবুল্লাহ। উনার মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত ও মাক্বাম
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক
উনার পরেই। অর্থাৎ তিনি শুধু খালিক্ব, মালিক রব মহান আল্লাহ
পাক নন; এছাড়া সবই। সুবহানাল্লাহ!
এরপর আমরা সপ্তম আসমানে আরোহণ করলাম। সেখানে আমি আমার পিতা হযরত ইবরাহীম
খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে দেখলাম। তিনি স্বীয় পিঠ মুবারক বাইতুল মা’মুরে
লাগিয়ে বসে রয়েছেন। আমি বললাম, হে হযরত জিবরীল
আলাইহিস সালাম! ইনি কে? তিনি বললেন: ইনি হচ্ছেন, আপনার পিতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুর রহমান আলাইহিস সালাম। উনার
সাথে উনার ক্বওমের কিছু লোক ছিলেন। আমি উনাদের সালাম দিলাম অতঃপর উনারা সালামের
জবাব দিলেন।
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমি
আমার উম্মতকে দু’ভাগে বিভক্ত দেখলাম। অর্ধেকের কাপড় ছিলো বকের মতো সাদা এবং বাকি
অর্ধেকের কাপড় ছিলো অত্যন্ত কালো। তিনি বলেন, আমি বাইতুল
মা’মুরে গেলাম। সাদা পোশাকযুক্ত লোক সবাই আমার পিছনে পিছনে গেল এবং কালো পোশাকধারী
লোকদেরকে আমার সাথে যেতে দেয়া হলো না। আর আমি ছিলাম সবার থেকে অনেক অনেক উত্তম
(শ্রেষ্ঠ) মর্যাদার অধিকারী। অতঃপর বাইতুল মা’মুর শরীফ-এ নামায আদায় করলাম। অতঃপর
আমি সেখান থেকে বের হলে আমার পিছনে সবাই বের হয়ে আসেন। খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি বলেন, “এই বাইতুল মা’মুর শরীফ-এ প্রত্যেক দিন ৭০ হাজার
হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নামায পড়ে থাকেন। কিন্তু যাঁরা একদিন নামায
পড়েছেন উনারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত এখানে আর আসবেন না।”
নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস
সালাম উনাদের রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “অতঃপর
আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় উঠিয়ে নেয়া হয়। যার প্রত্যেকটি পাতা এতো বড় যে, আমার সমস্ত উম্মতকে ঢেকে ফেলবে। তাতে একটি নহর প্রবাহিত ছিলো যার নাম
সালসাবীল। এর থেকে দুটি প্রস্রবণ বের হয়েছে। একটি হচ্ছে কাওছার।” এই কাওছার
সম্পর্কে খালিক্ব, মালিক রব মহান আল্লাহ পাক সূরা কাওছারের
মধ্যে বলেছেন, “হে খালিক্ব, মালিক রব
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে ‘কাওছার’ হাদিয়া করেছি।”
কাওছারের লক্ষ কোটি অর্থ রয়েছে তার মধ্যে দুটি অর্থ প্রধান একটা হচ্ছে, ‘হাউজে কাওছার’ যা বর্ণনা করা হলো আর দ্বিতীয় হচ্ছে ‘খাইরে
কাছীর’। অর্থাৎ খালিক্ব, মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার
হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে সমস্ত ভালাই হাদিয়া করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
আর একটি হচ্ছে ‘নহরে রহমত।’ আমি সেই ঝর্ণায় গোসল মুবারক করলাম অর্থাৎ সেই রহমত
আমাকে আবৃত করলো। আর আমার উম্মতের পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে যদি তারা
এই পবিত্র নহর পেতে পারে।
অতঃপর আমাকে জান্নাতের দিকে তা’যীমের সাথে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে আমি একটি
হুর দেখলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কার? উত্তরে সে বলল, আমি হলাম হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার। আমি সেখানে বিশুদ্ধ নষ্ট না হওয়া পানি, স্বাদ পরিবর্তন না হওয়া দুধ, নেশাহীন সুস্বাদু শরাব
এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মধুর নহর দেখতে পেলাম। জান্নাতের ডালিম ফল ছিলো বড় বড়
বালতির সমান। পাখিগুলো তোমাদের এই তক্তা ও কাঠের ফালির মত। নিশ্চয়ই খালিক্ব,
মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নেককার বান্দাদের জন্যেই ওইসব নিয়ামত
প্রস্তুত করে রেখেছেন যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ণ
শ্রবণ করেনি এবং কোন অন্তরে কল্পনাও জাগেনি। সুবহানাল্লাহ!
আসমানে সফরের সময়ই নবী আলাইহিস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিস সালাম উনাদের রসূল, ছাহিবে
মিরাজ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বেহেশত দোযখ প্রত্যক্ষ করেন
এবং বিভিন্ন পাপের কি রকম শাস্তি পরকালে হবে তা তিনি প্রত্যক্ষ করেন। সুদ, ঘুষ, অত্যাচার, নামায বর্জন,
ইয়াতিমের মাল ভক্ষণ, প্রতিবেশীদের উপর জুলুম
স্বামীর অবাধ্যতা, বেপর্দা ও অন্য পুরুষকে নিজের রূপ
প্রদর্শন, জিনা-ব্যভিচার ইত্যাদির শাস্তি খালিক্ব, মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বচক্ষে দেখেন। বেহেশতে উম্মুল
মু’মিনীন হযরত খাদিজা আলাইহাস সালাম উনার মাক্বাম, হযরত উমর
ফারূক্ব আলাইহিস সালাম উনার মাক্বাম, হযরত বিলাল
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নালাইন মুবারকের শব্দ এসব দেখেন এবং শুনেন।
এরপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি খালিক্ব, মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সিদরাতুল মুনতাহা বা
সীমান্তের কুলবৃক্ষের নিকট নিয়ে যান।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “এই বৃক্ষের
পাতাগুলো হাতির কানের ন্যায় বড় এবং ফলগুলো উহুদ পাহাড়ের মত। শহীদগণের রূহ মুবারক
সবুজ পাখির ছূরতে উক্ত বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করছেন।”
সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছে নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে হযরত জিবরীল আলাইহিস
সালাম তিনি বিদায় নিলেন এবং বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যদি ‘সিদরাতুল
মুনতাহা’ থেকে এক আঙুল সম্মুখে অগ্রসর হই তাহলে আমার ছয়শত থেকে ছয় হাজার পাখা
নূরের তাজাল্লীতে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।” সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মতো কেউই নেই, ছিল না ও হবেও না। কারণ তিনি হচ্ছেন খালিক্ব, মালিক,
রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব। নিছবত, তায়াল্লুক,
সম্পর্ক, অবস্থান সবকিছুই দায়িমীভাবে খালিক্ব,
মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, “খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
لى مع الله وقت لايسعن فيه ملك مقرب و لانبى مرسل
“খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে আমার প্রতিটি মুহূর্ত বা সময় এমনভাবে
অতিবাহিত হয়, যেখানে কোনো হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও
কোনো নৈকট্যশীল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও স্থান নেই।” সুবহানাল্লাহ!
মূলত খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার বিষয়গুলো যেমন কুদরতের অন্তর্ভুক্ত; একইভাবে হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল
আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়গুলোও কুদরতের অধীন। উনার সৃষ্টি, অবস্থান, ইসরা, মি’রাজ শরীফ
ইত্যাদি সবকিছুই কুদরতের অন্তর্ভুক্ত। এক কথায় উনার পরিচয়- উনি শুধু খালিক্ব,
মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক নন, এছাড়া সবদিক থেকে তিনি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুণান্বিত। যা মিরাজ শরীফ-এর মাধ্যমে উনার
বেমেছাল শান মুবারক-এর যৎকিঞ্চিৎ প্রকাশ করা হয়েছে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, যেখানে হযরত
ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাইয়্যিদ হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি
জ্বলে-পুড়ে যান, উনার সীমানা শেষ; সেখান
থেকে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ
পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভ্রমণ শুরু।
সুবহানাল্লাহ!
হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বিদায়ের পর ‘রফরফ’ নামক একটি বাহন সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাযির
হলো। তিনি বাহনে তাশরীফ নিলেন। এরপর ‘রফরফ’ খালিক্ব, মালিক,
রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে সত্তর হাজার নূরের পর্দা
মুবারক পাড়ি দিলেন। এক একটি পর্দা মুবারকের ঘনত্ব ছিল পাঁচশত বৎসরের রাস্তা। এরপর
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক
উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ‘আরশে মুয়াল্লায়’ পৌঁছলেন। এ পথে যখন খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একাই যাচ্ছেন,
তখন ছিদ্দীক্বে আকবর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার গলা
মুবারকের আওয়াজ শুনতে পেলেন। আর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক
উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার একান্ত ছাহিব বা সঙ্গী খাদিম। দুনিয়া, আখিরাত,
হাশরে, জান্নাতে এমনকি মি’রাজ শরীফ-এও তিনি
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক
উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার ছাহিব ছিলেন।
‘আরশে আ’যীমে’ পৌঁছে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দেখতে পেলেন ‘লাওহে মাহফুজ’। সেখানে লেখা রয়েছে- হাদীছে
কুদসী শরীফ-এ খালিক্ব, মালিক, রব মহান
আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “আমার রহমত গযবের উপর প্রাধান্য
পেয়েছে।”
এরপর হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, রহমতুল্লিল আলামীন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘আরশে মুয়াল্লা উনাকে’ লক্ষ্য করে বললেন, ‘আমি গোটা আলমের জন্য রহমতস্বরূপ।’ তোমাদের জন্য কিরূপ রহমত? ‘আরশে মুয়াল্লা’ তিনি তখন বিনয় ও আদবের সাথে জবাব দিলেন, “খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ
পাক তিনি আমাকে সৃষ্টি করার পর আমার মধ্যে কালিমা শরীফ-এর প্রথম অংশ
لا اله الا الله
)‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’( লিখে দিলেন তখন খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী
শান মুবারকের কারণে আমার মধ্যে কম্পন শুরু হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে যেন আমি ‘আরশে মুয়াল্লা’
ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যাবো। তারপর যখন আপনার নূরময় নাম মুবারক
محمد رسول الله صلى الله عليه و سلم
‘মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ লিখে দিলেন, তখন আমার কম্পন বন্ধ হয়ে গেলো। সুতরাং আমার জন্য আপনি সবচেয়ে
বড় রহমত।” সুবহানাল্লাহ!
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি যখন ‘আরশে মুয়াল্লায়’ উনার না’লাইন শরীফ খুলে তাশরীফ নিবেন।
এমতাবস্থায় ‘আরশ পাক’ তিনি আর্জি জানালেন, হে বারে ইলাহী!
আমি ‘আরশে মুয়াল্লা’ আপনার রসূল, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের
নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, রহমতুল্লিল আলামীন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম মুবারকের ধুলি পেয়ে ধন্য হওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ।
আপনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি যেন উনার না’লাইন (স্যান্ডেল) মুবারক পরেই ‘আরশে মুয়াল্লায়’ (তাশরীফ
নেন) ক্বদম মুবারক রাখেন। তাহলে ‘আরশে মুয়াল্লা’ সম্মানিত হয়ে যাবে, মর্যাদাবান হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ!
নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস
সালাম উনাদের রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘আরশে মুয়াল্লায়’ না’লাইন শরীফ পরেই তাশরীফ নিলেন। ‘আরশে
মুয়াল্লা’ ধন্য হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
এবার খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লা-মাকামের দিকে অর্থাৎ অজানার দিকে রওনা হলেন। যেখানে
স্থান কাল বলতে কিছুই নেই। গোটা আলম, এখন খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম
মুবারকের নিচে। আসমান, যমীন, চন্দ্র,
সূর্য, আরশ-কুরসী এমনকি ‘আলমে খালক্ব’ ‘আলমে
আমর’ সবকিছুই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ক্বদম
মুবারকের তলে। তিনি সবকিছু অতিক্রম করে খালিক্ব, মালিক,
রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটবর্তী হলেন।
এ কারণে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হাদীছে কুদসী শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
يا حبيبى صلى الله عليه و سلم! انا و انت و ما سواك خلقت لاجلك، و (قال حبيب الله صلى الله عليه وسلم يا ربى) ما انا و ما سواك تركت لاجلك-
“হে হাবীব আমার! আমি এবং আপনি, আর কেউ না। আর
আপনার মুহব্বতেই আমি সবকিছু সৃষ্টি করেছি।” তখন খালিক্ব, মালিক,
রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব তিনি জবাব দিলেন, “হে বারে ইলাহী! আমিও না, শুধুমাত্র আপনিই; আর আপনার মুহব্বতে আমি সমস্ত কিছুই তরক করেছি।” সুবহানাল্লাহ!
মি’রাজ শরীফ-এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, ঊর্ধ্বারোহণ।
শরীয়তের পরিভাষায় খালিক্ব, মালিক, রব
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে খালিক্ব, মালিক,
রব মহান আল্লাহ পাক উনার যে মুবারক সাক্ষাৎ বা মুবারক দীদার হয়েছে
সেটাই মি’রাজ শরীফ।
মি’রাজ শরীফ-এ খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ মুবারক সাক্ষাৎ তথা ছোহবত লাভ করেছেন। যা
দ্বারা খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ
পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সাথে খালিক্ব, মালিক, রব
মহান আল্লাহ পাক উনার যে নিগূঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ
পেয়েছে।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হচ্ছে, যমীনে কেউ সরাসরি স্বচক্ষে হাক্বীক্বীভাবে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে কখনো দেখবে না।
কিন্তু খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ
পাক উনার রসূল, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যেহেতু বেমেছাল হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, সেজন্য তিনি খালিক্ব, মালিক, রব
মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক সাক্ষাতে গিয়েছেন, খালিক্ব,
মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক দীদার
ও ছোহবত লাভ করেছেন।
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার মি’রাজ শরীফ হয়েছে ৩৪ বার। একবার জিসমানী বাকি ৩৩ বার রূহানীভাবে
হয়েছে। খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ
পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হিসেবে ৫১তম বয়স মুবারকে ২৬শে মাহে রজব ইয়াওমুল আহাদি বা
রোববার দিবাগত রাত্রে অর্থাৎ ২৭ মাহে রজব ইওয়ামুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার শরীফ
রাত্রে কা’বা শরীফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস, সিদরাতুল মুনতাহা
হয়ে আরশে মুয়াল্লায় খালিক্ব, মালিক, রব
মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক সাক্ষাৎ করে আবার যমীনে তাশরীফ আনেন।
এ সম্পর্কে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা বনী ইসরাইল-এর ১ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বর্ণনা
করেন।
سُبْحَانَ
الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
অর্থ: “পূতঃপবিত্র ও মহিমাময় খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক, তিনি স্বীয় হাবীব সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রাত্রে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে
আকসা পর্যন্ত ছফর করিয়েছেন; যার চারদিকে আমি বরকতময় করেছি
যাতে আমি উনাকে দেখিয়ে দেই আমার নিদর্শনগুলো। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও
সর্বদ্রষ্টা।”
অর্থাৎ উক্ত আয়াত শরীফ-এ উল্লেখ্য পবিত্র রাত্রিতে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার
রসূল, আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুসরালীন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আরশে মুয়াল্লায় উনার মুবারক দীদার দান করেন।
অত্র আয়াত শরীফ-এ
لِنُرِيَهُ
مِنْ آيَاتِنَا
‘লিনুরিয়াহু মিন আয়াতিনা’ এর তাফসীরে বিশ্ব সমাদৃত তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে
মাযহারী’তে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘ওই রাত্রিতে
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক
তিনি উনার হাবীব, আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন
নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খালিক্ব, মালিক,
রব মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতের বিস্ময়কর নিদর্শনগুলো দেখিয়েছেন।
নিদর্শনসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় মহান নিদর্শন হচ্ছে খালিক্ব, মালিক,
রব মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক দীদার বা মুবারক সাক্ষাৎ এবং
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক
উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি খালিক্ব, মালিক, রব মহান
আল্লাহ পাক উনার সাথে একান্তভাবে নিরিবিলি আরশে মুয়াল্লায় আলাপ-আলোচনা করেছেন। আর
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক
উনার সঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একান্তভাবে মুবারক
দীদার মুবারক বা দর্শন মুবারক ও কথাবার্তা হয়েছে এবং আরো অনেক নিদর্শন দেখানো
হয়েছে।’ সুবহানাল্লাহ!
এজন্য আয়াত শরীফ-এ বলেছেন, ‘উনাকে দেখিয়ে দেই
আমার নিদর্শনগুলো’। অর্থাৎ খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব তিনি খালিক্ব, মালিক,
রব মহান আল্লাহ পাক উনার সবচেয়ে প্রিয়তম হাবীব বা আশিক ও মাশুক;
যার কারণে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কায়িনাতকে বুঝিয়ে দিলেন যে, খালিক্ব, মালিক, রব মহান
আল্লাহ পাক উনার সাথে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতটুকু
নিগূঢ় সম্পর্ক, নিছবত ও তায়াল্লুক। উনাদের মাঝে কত গভীর
মুহব্বত। এই মুহব্বতের প্রকাশ ঘটানো হলো আনুষ্ঠানিকভাবে মি’রাজ শরীফ-এর মাধ্যমে।
সুবহানাল্লাহ!
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন ‘ছিদরাতুল
মুনতাহা’ পাড়ি দিয়ে ‘আরশে মুয়াল্লায়’ তাশরীফ নিলেন; তখন
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক
উনার সঙ্গে নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস
সালাম উনাদের রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দীদার
ও মুবারক সাক্ষাৎ হলো এ রকম- যেন দু’ধনুকের মাথা একত্র করলে যত কাছাকাছি হয় তদ্রƒপ অথবা দু’ধনুকের মাথা মিলালে যতটুকু কাছাকাছি হয় তার চেয়েও নিকটবর্তী।
সুবহানাল্লাহ! অতঃপর খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার একান্ত কথাবার্তা আলাপ-আলোচনা হলো। (তাফসীরে মাযহারী/৪০০)
0 Comments:
Post a Comment