হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৪৮১-৫৮৪) (ঙ)


হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর কাফির মুশরিকদের যুলুম নির্যাতন :
হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাফির মুশরিক কর্তৃক অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন। এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছে, “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কাফির মুশরিক ও বিধর্মীরা ইসলাম গ্রহণকারী আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর কঠোর যুলুম- নির্যাতন শুরু করে। প্রত্যেক গোত্রের কাফির, মুশরিক লোকেরা তাদের নিজ নিজ গোত্রের মুসলমানগণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইসলাম ত্যাগে বাধ্য করার লক্ষ্যে তারা দুর্বল মুসলমানদেরকে বন্দী করে রাখে, ক্ষুধা, তৃষ্ণায় কষ্ট দেয়, প্রহার করা এবং প্রখর রৌদ্রে উত্তপ্ত মরুভুমিতে পাথরচাপা দেয়াসহ নানা প্রকারের নির্যাতন চালাতে থাকে। সীমাহীন যুলুম-নির্যাতনের মুখে সকলেই ঈমানের উপর অটল বা অবিচল থাকেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে কাফির মুশরিকদের হাত থেকে হিফাযত করেন।
হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তখনও বনূ জুমাহ গোত্রের নিকট পরাধীন ছিলেন। উনার বিলাদত শরীফ লগ্ন থেকে তিনি তাদের পরাধীন ছিলেন। হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পুরো নাম মুবারক ছিলো হযরত বিলাল ইবনে রাবাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনার মাতার নাম ছিলো হামামা। হযরত বিলাল ইবনে রাবাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে অন্যতম। উনার মুনিব কাফির উমাইয়া ইবনে খালফ প্রচন্ড রৌদ্র তাপদগ্ধ দুপুরে উনাকে মাঠে নিয়ে যেতো। তারপর উনাকে চিৎ করে শুইয়ে বুকের উপর বড় বড় পাথর চাপিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিতো। নাঊযুবিল্লাহ! তার নির্দেশানুসারে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বুক মুবারকের উপর বড় বড় পাথর চাপিয়ে দেয়া হতো। এরপর পাষ- কাট্টা কাফির উমাইয়া বলতো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যতক্ষন আপনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ছেড়ে দিয়ে লাত ও উযযার উপাসনা না করবেন কিংবা যতক্ষন আপনি শহীদ না হবেন ততক্ষন আপনি এভাবেই থাকবেন। কিন্তু এ কঠিন অবস্থায়ও হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অবিরত বলতে থাকতেন আহাদ! আহাদ! মহান আল্লাহ পাক তিনি এক! মহান আল্লাহ পাক তিনি এক!” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৫৭ ও ৫৮ পৃষ্ঠা)
এভাবে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর অত্যাচার নির্যাতন কাফির মুশরিকরা চালিয়ে যেতে লাগলো। নাঊযুবিল্লাহ! পরবর্তীতে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে যুলুমবাজ কাফির মুশরিকদের অত্যাচার থেকে আযাদ বা মুক্ত করেন।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছে, “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর নির্যাতন হওয়ার সময় সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি উনার পার্শ্বে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এরপর একটি কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসের বিনিময় তিনি কাট্টা কাফির উমাইয়া ইবনে খালফ থেকে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কিনে নিয়ে মুক্ত করেন এবং কঠোর যুলুম-নির্যাতন থেকে নাজাত দেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ইসলাম গ্রহণকারী যাঁদেরকে ক্রয় করে আযাদ বা মুক্ত করেন উনাদের সংখ্যা ছিলো অনেক। উনাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আমীর ইবনে ফুহায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উম্মু উমায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (উনার চক্ষু মুবারক অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে মহান আল্লাহ পাক উনার দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।) সুবহানাল্লাহ! হযরত নাহদিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও উনার কন্যা। (উনাদেরকে বনু আবদুদদার গোত্র থেকে তিনি আযাদ বা মুক্ত করেন।)
উল্লেখ্য যে, হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে যখন উমাইয়া ইবনে খলফ কঠোর অত্যাচার ও নির্যাতন করেছিলো তখন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি সেই দিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ দৃশ্য দেখে তিনি খুবই ব্যাথিত হলেন। তখন তিনি উমাইয়াকে সম্বোধন করে বললেন-
الا تتقى الله فى هذا المسكين حتى متى انت.
(হে উমাইয়া) তুমি কি এ মুসলমানের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর না? এ অত্যাচার নিপীড়ন আর কতদিন চালাবে।
উমাইয়া বললো, আপনিইতো উনাকে পথভ্রষ্ট করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! এখন আপনি উনাকে উদ্ধার করুন। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, উত্তম! আমার কাছে একটি গোলাম আছে যে খুবই শক্তিশালী এবং তোমার ধর্মের উপর অটল ও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত আছে। তাকে তুমি নিয়ে নাও, এবং তার পরিবর্তে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আমার হাতে সোপর্দ করো। উমাইয়া বললো, ঠিক আছে আমি তাই করবো। সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি উমাইয়ার নিকট থেকে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আযাদ বা মুক্ত করেছিলেন।
(তাবাকাতে ইবনে সা’দ, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পরবর্তীতে যখন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পবিত্র পৃষ্ঠদেশ উম্মুক্ত করতেন, তখন মুশরিকদের অত্যাচার নির্যাতনের যখম ও চিহ্ন সুস্পষ্টভাবে দেখা যেতো।
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-এর ৩য় জিলদ ৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ আতিক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন হযরত আমির ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে। উনার পরিবারের জনৈক লোকের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, হযরত আবূ কুহাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তদীয় পুত্র হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে বলেছিলেন, হে আমার প্রিয় পুত্র! আমি তো আপনাকে দেখছি যে, শুধু দুর্বল গোলামদের মুক্ত করছেন। গোলাম মুক্ত করতে গিয়ে আপনি যদি স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী ব্যক্তিদের মুক্ত করতেন তবে তারা আপনার হিফাযত করতে পারতো এবং আপনার পাশে দাঁড়াতো। তখন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে আমার পিতা! আমি যা ইচ্ছা পোষণ করছি তা কিন্তু আপনি করছেন না। অর্থাৎ এর পিছনে সুমহান এক উদ্দেশ্য রয়েছে।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর একথা সর্বত্র আলোচিত হয়েছে যে, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম ও উনার পিতার কথোপকথন উপলক্ষে নিম্নোক্ত আয়াত শরীফগুলো নাযিল হয়।
فَأَمَّا مَن أَعْطَى وَاتَّقَى - وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى- فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى- وَأَمَّا مَن بَخِلَ وَاسْتَغْنَى-وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى- فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى- وَمَا يُغْنِي عَنْهُ مَالُهُ إِذَا تَرَدَّى- إِنَّ عَلَيْنَا لَلْهُدَى- وَإِنَّ لَنَا لَلْآخِرَةَ وَالْأُولَى- فَأَنذَرْتُكُمْ نَارًا تَلَظَّى- لَا يَصْلَاهَا إِلَّا الْأَشْقَى - الَّذِي كَذَّبَ وَتَوَلَّى- وَسَيُجَنَّبُهَا الْأَتْقَى- الَّذِي يُؤْتِي مَالَهُ يَتَزَكَّى- وَمَا لِأَحَدٍ عِندَهُ مِن نِّعْمَةٍ تُجْزَى- إِلَّا ابْتِغَاء وَجْهِ رَبِّهِ الْأَعْلَى- وَلَسَوْفَ يَرْضَى-
অর্থ: অতঃপর কেউ দান করলেন এবং মুত্তাক্বী হলেন, আর যা উত্তম তা সত্য বলে গ্রহণ করলেন। আমি উনাদের জন্যে সুগম করে দিবো সহজ পথ। আর যারা বখিলী বা কার্পণ্য করলো এবং নিজকে স্বয়ংসম্পুর্ণ মনে করলো এবং যা উত্তম তা অস্বীকার করলো, তার জন্য আমি সহজ করে দিবো কঠিন পথ এবং তার সম্পদ তার কোনো কাজে আসবে না, যখন সে ধ্বংস হবে। নিশ্চয়ই আমার দায়িত্ব হলো হিদায়েত দান করা। আর আমি তো মালিক পরলোকের এবং ইহলোকের। আমি তোমাদেরকে লেলিহান অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি। তাতে প্রবেশ করবে সে যে নিতান্ত হতভাগ্য। যে অস্বীকার করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর সেটি থেকে বহু দূরে রাখা হবে পরম মুত্তাক্বীদের যিনি স্বীয় সম্পদ দান করেন আত্মশুদ্ধির জন্যে এবং উনার প্রতি কারো অনুগ্রহের প্রতিদানে নয়। কেবল উনার মহান রব আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়। তিনি তো অচিরেই সন্তোষ লাভ করবেন। (সূরাতুল লাইল : আয়াত শরীফ- ৫-২১)
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ও সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, “হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, সর্ব প্রথম সাতজন ব্যক্তি ইসলামের কথা প্রকাশ করেন। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম, হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাতা হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত সুহাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত মিকদাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে হিফাযত করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকেও হিফাযত করেছেন। সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকেও মহান আল্লাহ পাক তিনি হিফাযত করেন। তবে পরীক্ষা স্বরূপ অনেককে অনেক অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে। যেমন অনেককে মুশরিকরা ধরে নিয়ে যায় এবং লোহার বর্ম পরিয়ে প্রখর রৌদ্রে উনাদের দাঁড় করিয়ে রাখত।
স্মরণীয় যে, হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এমন ছিলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি কামনায় নিজের জীবনকেও তিনি তুচ্ছ মনে গুরুত্ব দেননি এবং নিজের সম্প্রদায়ের লোকদের দ্বারা তিনি কঠিন যুলুমের স্বীকার হন। উনার গলায় রশি বেঁধে তারা উনাকে মক্কা শরীফ-এর পথে পথে ঘুরাতে থাকে। হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শুধু বলেছিলেন আহাদ! আহাদ!।”
একদিন আবু জাহিল উনাদের সামনে এসে পড়লো এবং হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার শরমগাহে সে বর্শা দ্বারা আঘাত করলো, এতে তিনি শহীদ হয়ে যান।
আবু বকর ইবনে আবু শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে সহীহ মুরসাল সনদে বর্ণনা করেছেন।
হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাহতানী বংশোদ্ভূত ছিলেন। উনার সম্মানিত পিতা হযরত ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের সন্ধানে মক্কা শরীফ-এ আসেন। উনার অপর দুই ভাই হারিছ এবং মালিকও উনার সাথে ছিলেন। হারিছ ও মালিক পরে ইয়েমেনে ফিরে যায় কিন্তু হযরত ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মক্কা শরীফ-এ থেকে যান এবং আবু হুযায়ফা মাখযুমীর সাথে মিত্রতার সম্পর্ক গড়ে তুলেন। আবু হুযায়ফা বাঁদী হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে উনার সাথে নিকাহ দিয়ে দেন।
হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার রেহেম শরীফ-এ হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন। আবু হুযায়ফা-এর মৃত্যু পর্যন্ত হযরত ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার সাথেই থাকেন। এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে ইসলাম প্রকাশ করেন। আর হযরত ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার আরো একজন ভাই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারভ সবাই ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আরো একজন ভাই ছিলো যে ছিলো হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে ছোট তার নাম ছিলো হারিছ ইবনে ইয়াসির। জাহিলিয়া যুগে বনী দায়লের হাতে সে নিহত হয়।
মক্কা শরীফ-এ যেহেতু হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এমন কোনো গোত্র কিংবা সম্প্রদায় ছিলেন না, যারা উনাদের অভিভাবক ও সাহায্যকারী হতে পারে; এ জন্য উনার প্রতি কুরায়শ কাফিররা খুবই কঠিন কঠিন যুলুম করে। দুপুরের সময় উত্তপ্ত যমীনে উনাকে শুইয়ে দিত এবং এমনভাবে মারধর করতো যে, তিনি বেহুশ হয়ে যেতেন। কখনো পানিতে চুবাতো আবার কখনো জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর শুইয়ে দিত। এ অবস্থায় যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পাশ দিয়ে অতিক্রম করতেন, তখন উনার মাথা মুবারক-এ হাত মুবারক বুলিয়ে দিতেন। এবং বলতেন-
يا نار كونى بردا وسلاما على عمار كما كنت على ابراهيم.
হে আগুন! তুমি ঠা-া এবং হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য শান্তিদায়ক হয়ে যাও, যেমনটি হয়েছিলে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উপর।”
যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা হযরত ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার মাতা হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে দুঃখ কষ্টে দেখতেন, তখন বলতেন, হে ইয়াসির পরিবার, সবর করুন। কখনো বলতেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি ইয়াসির পরিবারকে ক্ষমা করুন। আবার কখনো বলতেন, আপনাদের জন্য বেহেশতের সুসংবাদ, আপনাদের আশা পূর্ণ হবে। ইনশাআল্লাহ! (তাবাকাতে ইবনে সা’দ, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
عن حضرت جضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال ان رسول الله صلى الله عليه و سلم مر بعمار رضى الله تعالى عنه و اهله وهم يعذبون فقال ابشروا ال حضرت عمار رضى الله تعالى عنه و ال ياسر رضى الله تعالى عنه فان موعدكم الجنة- فاما امه فيقتلوها فتأبى الا الاسلام-
অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার আহাল-ইয়াল উনাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন উনাদের উপর কাফির মুশরিকরা অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছিলো। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, হে আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও ইয়াসীররের পরিবার! আপনারা সুসংবাদ গ্রহণ করুন, আপনাদের প্রতিশ্রুত স্থান হলো জান্নাত। হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাতাকে কাফির, মুশরিকরা শহীদ করেছিলো। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ইসলাম ব্যতীত অন্যসব কিছুই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম শহীদ।” (আল বিদায়া ওয়ান নিয়াহা ২য় জিলদ ৫৯ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে ইসলামের প্রথম পুরুষ শহীদ ছিলেন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পূর্বের স্বামীর ঔরসজাত সন্তান হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আর মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের মধ্যে প্রথম শহীদ হন হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিকগণের মতে ইসলামের প্রথম শহীদ হলেন হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। পাপিষ্ঠ আবূ জাহিল একটি বল্লম দিয়ে উনাকে আঘাত করে এবং এই আঘাতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। এটি মুরসাল বর্ণনা।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
قال حضرت محمد بن اسحاق رحمة الله عليه- وكان ابوجهل الفاسق الذى يغرى بهم فى رجال من قر يش، ان سمع برجل قد اسلم له شرف ومنعة انبه رخزاه وقال تركت دين أبيك و هو خير منك، لنسفهن حلمك، و لنفلين رأيك، ولنضعن  شرفك، وان كان تاجرا قال والله لنكسدن تجارتك، ولنهلكن مالك، وان كان ضعيفا ضربه وأغرس به لعنه الله وقبحه-
অর্থ: “হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পাপিষ্ট আবূ জাহল ছিলো কাফির মুশরিকদের অন্যতম প্রধান। যে কুরাইশ বংশীয় কাফির মুশরিকদের নিয়ে মুসলমানদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন চালাতো। কোন মর্যাদাবান ও আত্মরক্ষায় সক্ষম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছেন এই সংবাদ পাওয়ার পর সে দ্রƒত উনার নিকট গিয়ে উপস্থিত হতো এবং উনাকে অপমান ও লাঞ্ছিত করতো এবং বলতো আপনি আপনার পিতৃধর্ম ত্যাগ করেছেন। অথচ আপনার পিতা আপনার চেয়ে অনেক ভালো লোক ছিলো। আপনার ইলম বা জ্ঞানকে আমরা অবশ্যই অজ্ঞতা ও মূর্খতা রূপে চিহ্নিত করবো। আপনার মতামতকে আমরা অবশ্যই ভ্রান্ত আখ্যায়িত করবো। নাঊযুবিল্লাহ!
ইসলাম গ্রহণ করা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ব্যবসায়ী হলে সে বলতো মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনার ব্যবসাকে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত করে দিবো এবং আপনার ধন-সম্পদ নষ্ট ও ধ্বংস করে দিবো। ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দুর্বল হলে সে উনাকে প্রহার করতো এবং উনার উপর যুলুম নির্যাতন, অত্যাচার চালাতো। নাঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আবূ জাহিলের উপর লা’নত বর্ষণ করুন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৫৯ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت خباب بن الأرت رضى الله تعالى عنه- قال كنت رجلا قينا وكان لى على العاص بن وائل دين، فا تيته اتقا ضاه فقال لا والله لا اقضيك حتى تكفر بمحمد صلى الله عليه و سلم- فقلت لا و الله لا أكفر بمحمد صلى الله عليه و سلم حتى تموت ثم تبعث- قال فانى اذا مت ثم بعثت جئتنى ولى ثم مال وولد فاعطيك فانزل الله تعالى (افرأيت الذى كفر باياتنا و قال لاوتين مالا و ولدا) الى قوله (ويأتينا فردا)
অর্থ: হযরত খব্বাব ইবনে আরাত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক সময় কর্মকার ব্যক্তি ছিলাম। আস ইবনে ওয়াইলের নিকট আমার কিছু পাওনা ছিলো। পাওনা উসুল করার জন্যে আমি তার নিকট উপস্থিত হই। সে বলে, আপনি যতক্ষন পর্যন্ত আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রত্যাখ্যান না করবেন ততক্ষন পর্যন্ত আপনার পাওনা আমি পরিশোধ করবো না। তখন আমি বললাম, আমি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কখনও প্রত্যাখ্যান করবো না। এমনকি তোমার মৃত্যু হলে এবং মৃত্যুর পর তুমি পুনরুত্থিত হলেও না। তখন সে বললো, তাহলে আমার মৃত্যুর পর আমি পুনরুত্থিত হলে তখন সেখানে আমার ধন-সম্পদ ও ছেলে মেয়ে নিশ্চয়ই থাকবে। তখন আপনি আমার নিকট আসবেন, আমি সেখানে আপনার পাওনা পরিশোধ করে দিবো। এ প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি আয়াত শরীফ নাযিল করলেন।
أَفَرَأَيْتَ الَّذِي كَفَرَ بِآيَاتِنَا وَقَالَ لَأُوتَيَنَّ مَالًا وَوَلَدًا-أَاطَّلَعَ الْغَيْبَ أَمِ اتَّخَذَ عِندَ الرَّحْمَنِ عَهْدًا- كَلَّا سَنَكْتُبُ مَا يَقُولُ وَنَمُدُّ لَهُ مِنَ الْعَذَابِ مَدًّا- وَنَرِثُهُ مَا يَقُولُ وَيَأْتِينَا فَرْدًا
অর্থ: “আপনি কি দেখেছেন অর্থাৎ আপনি দেখেছেন ওই ব্যক্তিকে যে আমার আয়াত শরীফসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে আমাকে ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি দেয়া হবেই। সে কি অদৃশ্য সম্বন্ধে অবগত হয়েছে অথবা দয়াময় আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে? কখনই নয় সে যা বলে তা আমি লিখে রাখবই এবং তার শাস্তি বৃদ্ধি করতে থাকবো। সে যে বিষয়ে কথা বলে, তা থাকবে আমার অধিকারে এবং সে আমার নিকট আসবে নিঃসঙ্গ অবস্থায়।” (সূরা মারিয়াম : আয়াত শরীফ- ৭৭-৭৮)       
স্মরণীয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর কাফির, মুশরিক, বেদ্বীন, বদদ্বীনরা তথা বিধর্মীরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে যুলুম-নির্যাতন করতো। দ্বিপ্রহরের আরবের উত্তপ্ত বালুকরাশি যখন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতো তখন মুসলমানগণকে ধরে নিয়ে তারা অগ্নিসম তপ্ত বালুকার উপর শোয়ায়ে দিতো এবং উনাদের বুক মুবারক-এর উপর ভারী পাথর চাপা দিয়ে রাখতো যেনো পাশ ফিরাতে না পারেন। নাঊযুবিল্লাহ! শরীর মুবারক-এর উপর গরম বালু বিছায়ে দিতো। লোহা আগুনে পুড়ে তা দ্বারা দাগা দিতো আবার কখনও কখনও গরম পানি ঢেলে দিতো। এ সকল যন্ত্রণা নিরীহ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর ছিলো ব্যাপক। তামীম গোত্রের হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করলেন কুরাইশ মুশরিকরা উনাকে ধরে নিয়ে নানাভাবে যুলুম-নির্যাতন চালাতে লাগলো। একদিন উনাকে নিয়ে মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে দিলো। একজন কাফির উনার বুক মুবারক-এর উপর পা একত্রিত করে বসে পড়লো যেনো তিনি পাশ ফিরাতে না পারেন। নাঊযুবিল্লাহ! পিঠের নিচের জ্বলন্ত আগুন। পিঠ মুবারক-এর চামড়া পুড়ে গিয়ে আগুন নীভে গেলো, কিন্তু পিঠ মুবারক-এর ক্ষতস্থানের ঝলসানো গোশত মুবারক খসে পড়লো অনেক খানি। এ ঘটনা হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার নিকট বলতে গিয়ে নিজের পিঠ মুবারক খুলে দেখালেন। সেখানে বসন্তের দাগের মতো সাদা সাদা বহু দাগের শ্বেতচিহ্ন বিদ্যমান ছিলো। (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এরূপ যুলুম নির্যাতনের শিকার হয়ে হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত ইয়াসীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা শাহাদত বরণ করেন।
হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে ছহীহ সনদে ‘তাবাকাতে ইবনে সাদ’-এ বর্ণিত আছে যে, ইসলামের প্রথম শহীদ ছিলেন হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি। বর্ণিত রয়েছে বদরের জিহাদে যখন আবু জাহিল মারা গেলো। তখন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
قتل الله تعالى قاتل امك
 মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার মায়ের শহীদকারীকে কতল করেছেন।’ আর হযরত ইয়াসির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঐ কঠিন নির্যাতনের ফলে হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার পরে শাহাদত বরণ করেন। (ফাতহুল বারী, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১ম খ- ২১৫ পৃষ্ঠা)
হযরত সুহায়িব ইবনে সিনান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মাসূল এলাকার আশপাশের অধিবাসী ছিলেন। উনার পিতা এবং পিতৃব্য পারস্য স¤্রাটের পক্ষে ওবুল্লার শাসনকর্তা ছিলেন। একবার রোমক বাহিনী ঐ এলাকা আক্রমণ করে। হযরত সুহায়িব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঐ সময় অল্প বয়স্ক বালক ছিলেন। লুটপাটের সময় রোমানরা উনাকে ধরে নিয়ে যায়। সেখানেই তিনি বড় হন। এজন্য তিনি সুহায়িব রূমী নামে প্রসিদ্ধ হন।
বনী কালবের এক ব্যক্তি উনাকে রোমানদের নিকট থেকে ক্রয় করে পবিত্র মক্কা শরীফ-এ নিয়ে আসে। পবিত্র মক্কা শরীফ-এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুদয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ক্রয় করে আযাদ করে দেন। আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম-এর কথা প্রকাশ করলেন- তখন হযরত সুহায়িব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একই সময়ে হযরত আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হুজরা শরীফ-এ উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত সুহায়িব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে মক্কার কাফির মুশরিকরা অনেক যুলুম-নির্যাতন করে। এমন কি তিনি যখন হিজরতের ইচ্ছা পোষণ করেন তখন মক্কার কাফির মুশরিকরা উনাকে বললো যে, আপনি যদি হিজরত করতে চান তাহলে আপনার ধন-সম্পদ মক্কা শরীফ থেকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। এখন আপনি যেতে পারেন অথবা থাকতে পারেন। হযরত সুহায়িব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পার্থিব সম্পদকে তুচ্ছ মনে করে মদীনা শরীফ-এ হিজরত করেন। মদীনা শরীফ-এ পৌঁছে তিনি আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র খিদমত শরীফ-এ সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত ঘটনা শুনে বললেন, ربح البيع এ ব্যবসায় হযরত সুহায়িব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অধিক মুনাফা অর্জন করেছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি এ প্রসঙ্গে অত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন।
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاء مَرْضَاتِ اللّهِ وَاللّهُ رَؤُوفٌ بِالْعِبَادِ
অর্থ: “মানুষের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজেকে বিক্রি করে থাকেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল।” (সূরা বাকারা : আয়াত শরীফ ২০৭)
অপর এক বর্ণনায় আছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বার বার বলতে থাকেন
ربح صهيب ربح صهيب
হযরত সুহায়িব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খুবই মুনাফা অর্জন করেছেন, হযরত সুহায়িব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খুবই মুনাফা অর্জন করেছেন।”
হযরত উমর ইবনে হামাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, ‘মক্কা শরীফ-এর মুশরিকরা হযরত সুহায়িব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আবূ ফায়িদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আমির ইবনে ফুহায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমূখ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে এমনই নির্যাতন করতো যে, উনারা বেহুশ ও অপ্রকৃতস্থ হয়ে যেতেন। অপ্রকৃস্থতা এমনই ছিলেন যে, মুখ মুবারক দিয়ে উনারা কি বলতেন সে বিষয়ে উনাদের হুশ থাকতো না।
এ প্রেক্ষিতে আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে,
ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِينَ هَاجَرُواْ مِن بَعْدِ مَا فُتِنُواْ ثُمَّ جَاهَدُواْ وَصَبَرُواْ إِنَّ رَبَّكَ مِن بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থ: “যারা যুলুম-নির্যাতন হওয়ার পর হিজরত করেন, পরে জিহাদ করেন এবং ধৈর্য্য ধারণ করেন, আপনার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এ সবরের পর তাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” (সূরা নাহল : আয়াত শরীফ ১১০)
হযরত আবূ ফুকায়হা জুহানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার লক্বব মুবারক আবূ ফুকায়হা প্রকৃত নাম মুবারক ছিলো ইয়াসির। তবে তিনি এ লক্বব মুবারকেই বেশি প্রসিদ্ধ। তিনি সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার ক্রীতদাস ছিলেন। উমাইয়া ইবনে খলফ কখনো উনার পা মুবারকে রশি বেঁধে হেঁচরিয়ে নিয়ে বেড়াতো, কখনো লোহার বেড়ী পরিয়ে উত্তপ্ত যমীনে উপুড় করে শুইয়ে রেখে পিঠে একটা মস্ত বড় ভারী পাথর রেখে দিতো। এমন কি তিনি বেহুশ হয়ে যেতেন। আর কখনো উনার গলা মুবারক টিপে ধরা হতো। নাঊযুবিল্লাহ!
একদিন উমাইয়া ইবনে খলফ উনাকে উত্তপ্ত যমীনে শুইয়ে উনার গলা মুবারক টিপে ধরলো। সেই কাফির দুষ্ট বদকার সে এমন জোরে উনার গলা মুবারক টিপে ধরেছিলো যে, লোকজন মনে করলো উনার দম মুবারক হয়ত বেরিয়ে গেছে। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি উনার পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন এরূপ যুলুম-নির্যাতন করা হচ্ছে দেখে তিনি হযরত আবূ ফুকায়হা জুহানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আযাদ বা মুক্ত করলেন। (সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১ম খন্ড ২১৮ পৃষ্ঠা)
হযরত যানিরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা প্রথম যুগের মুসলমানগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। হযরত যানিরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে আবূ জাহিল যুলুম-নির্যাতন করতো। আবূ জাহিলসহ অন্যান্য কাফির, মুশরিক সরদাররা উনাকে দেখলে বলতো, ইসলাম যদি এতো ভালো কিছু হতো তাহলে যানিরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি মুসলমান হতেন না। নাঊযুবিল্লাহ!
কুরআন শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِلَّذِينَ آمَنُوا لَوْ كَانَ خَيْرًا مَّا سَبَقُونَا إِلَيْهِ
অর্থ: “মুমিনগণ সম্বন্ধে কাফিরেরা বলে যে, যদি এ দ্বীন ভালোই হতো তবে উনারা এর প্রতি আমাদের অগ্রগামী হতেন না।” (সূরা আহকাফ : আয়াত শরীফ ১১)
বর্ণিত রয়েছে, এরূপ কঠিন যুলুম-নির্যাতনের ফলে হযরত যানিরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার দৃষ্টি শক্তি লোপ পেতে থাকে। মক্কার কাফির, মুশরিকরা বলতে থাকে লাত ও উযযা তাকে অন্ধ বানিয়ে দিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! হযরত যানিরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা কাফির মুশরিকদের জবাবে বলতেন লাত ও উযযার তো এ খবরও নেই যে কে তাদের পূজা করে। ইহা তো মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি চান তাহলে আমার দৃষ্টি শক্তি আবার ফিরিয়ে দিতে পারেন। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত সেই রাতের পরদিন সকালেই তিনি দৃষ্টি শক্তি ফিরে পান। কাফির, মুশরিকরা বলতে লাগলো আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে যাদু করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!
হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি পরবর্তীতে উনাকে আযাদ বা মুক্ত করেন। (সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১ম খন্ড ২১৮ ও ২১৯ পৃষ্ঠা)
মোটকথা, কাফির, মুশরিক, বেদ্বীন, বদদ্বীন, ইহুদী, নাছারা তথা বিধর্মীরা প্রত্যেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর যুলুম-নির্যাতন করেছে। মুসলমানগণ উনাদের কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে তারা সদা সর্বদাই ব্যস্ত ছিলো। নাঊযুবিল্লাহ! এতো যুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পরও উনারা ঈমান থেকে সরে যাননি। যদিও উনারা কখনো শহীদ হয়েছেন কখনো বেহুশ হয়েছেন কখনো বা ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন। সমস্ত কষ্ট, দুঃখ উনারা গ্রহণ করেছেন। শুধু মাত্র মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টির জন্যে। সুবহানাল্লাহ!
এছাড়া যে সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়ল্লাহু তায়ালা আনহুম বংশীয় মর্যাদাবান ও সম্পদশালী ছিলেন উনাদের উপরও কাফির, মুশরিকরা যুলুম-নির্যাতন করেছে।
* হযরত উছমান গনী আলাইহিস সালাম তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করলেন তখন উনার চাচা হাকিম ইবনে আবুল আস উনাকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখলো এবং বললো যে, আপনি কি বাপ দাদাদের ধর্ম ছেড়ে একটি নতুন ধর্ম গ্রহণ করলেন? নাঊযুবিল্লাহ! তিনি জবাবে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি কখনো এ দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করবো না এবং এর থেকে কখনো পৃথক হবো না। হাকিম যখন দেখলো যে হযরত উছমান আলাইহিস সালাম তিনি দ্বীন ইসলামের উপর খুবই ইস্তিকামত, দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত, তখন উনার চাচা উনাকে ছেড়ে দেয়। (তাবাকাতে ইবনে সা’দ)
* হযরত যুবায়ির ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করলেন তখন উনার চাচা উনাকে একটি বস্তায় ভরে ধোঁয়া দিতো, যাতে তিনি পুনরায় কুফরী ধর্মে ফিরে আসেন। কিন্তু হযরত যুবায়ির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি কখনোই আর কুফরী করবো না। (ইসাবা ১ম খন্ড ৫৪৫ পৃষ্ঠা)
* হযরত খালিদ ইবনে সাঈদ ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন উনার পিতা উনাকে এতোই প্রহার করলো যে, উনার মাথা মুবারক ফেটে যায় এবং উনার খানাপিনা বন্ধ করে দেয়।
* হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম ও হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন কুরাইশের ব্যাঘ্র বলে কথিত নওফেল ইবনে খুয়ায়লিদ উনাদের দু’জনকে ধরে একই রশি দিয়ে বেঁধে রাখে। এ কারণে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম ও হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে কারনাইন (অর্থাৎ দু’জন এক ‘কারন’ বা একই রশি দিয়ে বাঁধা) বলা হতো। (তাবাকাতে ইবনে সা’দা, হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জীবন চরিত্র)
* হযরত ওলীদ ইবনে ওলীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আয়াশ ইবনে আবূ রবীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত সালমা ইবনে হিশাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনারা যখন ইসলাম গ্রহণ করলেন তখন কাফির, মুশরিকরা উনাদের উপর নির্মম যুলুম-নির্যাতন চালায় এবং উনাদেরকে হিজরত পর্যন্ত করতে দেয়নি। যাতে করে হিজরতের ফলে এ অত্যাচারের পরিসমাপ্তি না ঘটে। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মদীনা মুনাওওয়ারা থেকে উনাদেরকে কাফির, মুশরিকদের কবল থেকে হিফাযতের জন্যে ফজর নামায শেষে প্রত্যেকের নাম মুবারক নিয়ে দু’য়া করতেন যে, আয় আল্লাহ পাক! আপনি ওলীদ ইবনে ওলীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আয়াশ ইবনে আবূ রাবীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত সালমা ইবনে হিশাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে মুশরিকদের যুলুম-অত্যাচার থেকে মুক্তি দিন। (বুখারী শরীফ)
* হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন তিনি কা’বা শরীফ-এ প্রবেশ করে নিজের ইসলাম গ্রহণের কথা ঘোষণা দেন। ফলে মক্কার কাফির, মুশরিকরা উনাকে মারতে মারতে মাটিতে ফেলে দেয়। হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এসে উনাকে উদ্ধার করেন। (বুখারী শরীফ, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

0 Comments: