فلما رأتها قريش كالذى قال أبو طالب قالوا والله إن كان هذا قط الاسحر من صاحبكم فارتكسوا وعادوا بشرماكانوا عليه من كفرهم، والشدة على رسول الله صلى الله عليه وسلم والقيام على رهطه بما تعاهدوا عليه. فقال أولئك النفر من بنى عبد المطلب إن أولى بالكذب والسحر غيرنا فكيف ترون فانا نعلم إن الذى اجتمعتم عليه من قطيعتنا أقرب إلى الجبت والسحر من أمرنا، ولولا أنكم اجتمعتم على السحر لم تفسد صحيفتكم وهى فى أيديكم طمس ما كان فيها من اسمه وما كان فيها من بغى تركه أفنحن السحرة أم أنتم؟ فقال عند ذلك النفر من بنى عبد مناف وبنى قصى ورجال من قريش ولدتهم نساء من بنى هاشم منهم أبو البخترى والمطعم بن عدى وزهير بن أبى أمية بن المغيرة وزمعة بن الاسود وهشام بن عمرو وكانت الصحيفة عنده وهو من بنى عامر بن لؤى- فى رجال من اشرافهم ووجوههم نحن برءاء مما فى هذه الصحيفة عنده. فقال أبو جهل لعنه الله هذا أمر قضى بليل
.............
কুরাইশ কাফির মুশরিকরা যখন দেখলো যে, ঘটনা আবূ ত্বালিব
উনার বর্ণনা মুতাবিকই ঘটেছে তখন তারা বললো, মহান আল্লাহ পাক
উনার ক্বসম! এটি নিশ্চয়ই তোমাদের যিনি রসূল, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জাদু। নাঊযুবিল্লাহ! এ কথা বলে
তারা ইতঃপূর্বেকার সম্মতি প্রত্যাহার করে এবং পূর্বের চাইতে আরো জঘন্য কুফরীতে
প্রত্যাবর্তন করে এবং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও উনার স্বগোত্রীয়দের প্রতি কঠোর
যুলুম-নির্যাতনের অঙ্গীকারে অবিচল থাকে।
আবূ ত্বালিব উনার গোত্রের লোকজন বললেন, আমরা নই, বরং আমাদের বিরোধী পক্ষই যাদু-মন্ত্র ও মিথ্যাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত
হওয়ার যোগ্যতম পাত্র, তোমরা কি মনে করো? আমরা তো দেখছি যে, আমাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের
প্রশ্নে তোমরা যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছো আমাদের কর্ম অপেক্ষা সেটিই জাদু-মন্ত্রের বলে
অভিহিত হওয়ার অধিক যোগ্য। তোমাদের ঐকমত্যের বিষয় যদি জাদুর ভেল্কিবাজি না হতো,
তাহলে তোমাদের চুক্তিনামা নষ্ট হতো না। সেটিতো তোমাদের হাতে ছিলো।
ওই চুক্তিনামায় মহান আল্লাহ পাক উনার যতো নাম মুবারক ছিলো তিনি তার সবগুলো মুছে
দিয়েছেন। আর সীমালঙ্ঘন ও সত্যদ্রোহিতার কথাগুলো অবশিষ্ট রেখেছেন। এখন বলো- আমরা
জাদুকর, নাকি তোমরা?
এ প্রেক্ষিতে বনু আবদে মানাফ, বনু কুসাই, হাশিমী নারীদের গর্ভজাত কতক কুরাইশী পুরুষ- যাদের মধ্যে ছিলেন আবূল
বুখতারী, মুতঈম ইবনে আদী, যুহায়ব ইবনে
আবূ উমাইয়া ইবনে মুগীরা, যামআ ইবনে আসওয়াদ, হিশাম ইবনে আমর (চুক্তিনামাটি তার কাছে ছিলো। সে বনু আমির ইবনে লুওয়াই
গোত্রের লোক ছিলো) এবং বনু আমির গোত্রের অন্য কতক সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় লোক
বলে উঠলো, এ চুক্তিনামায় যা আছে তার সাথে আমাদের কোনো
সম্পর্ক বা দায়-দায়িত্ব নেই।
তখন আবূ জাহিল বললো, এটি একটি পূর্ব
পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। রাতের বেলা এ ষড়যন্ত্র চুড়ান্ত করা হয়েছে .....। নাঊযুবিল্লাহ
মিন জালিক!
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-এর ২ জিলদ ৯৫, ৯৬, ৯৭, ৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
قال ابن اسحاق هذا وبنو هاشم، وبنو المطلب فى منزلهم الذى تعاقدت فيه قريش عليهم فى الصحيفة التى كتبوها، ثم إنه قام فى نقض الصحيفة نفر من قريش، ولم يبل فيها أحد أحسن من بلاء هشام بن عمرو بن الحارث بن حبيب بن نصر بن مالك بن حسل بن عامر بن لؤى، وذلك أنه كان ابن اخى نضلة بن هشام بن عبد مناف لامه، وكان هشام لبنى هاشم واصلا، وكان ذا شرف فى قومه فكان فيما بلغنى - يأتى بالبعير وبنو هاشم وبنو المطلب فى الشعب ليلا قد أوقره طعاما، حتى إذا بلغ به فم الشعب خلع خطامه من رأسه ثم ضرب على جنبيه فدخل الشعب عليهم ثم يأتى به قد أوقره برا فيفعل به مثل ذلك،
অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বনু হাশিম ও বনু আব্দুল মুত্তালিবের সেই স্থানেই অবস্থান
করছিলেন যেখানে অবস্থানের কথা কুরাইশের লোকেরা লিখিত চুক্তিনামায় উল্লেখ করেছিলো।
তারপর কুরাইশ বংশের কতক লোক ওই চুক্তিনামা ভঙ্গ করতে উদ্যোগী হন। এই লক্ষ্য
বাস্তবায়নে হিশাম ইবনে আমর ইবনে হারিছ ইবনে হাবীব ইবনে নাসর ইবনে মালিক ইবনে হাসান
ইবনে আমির ইবনে নুওয়াই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। হিশাম ছিলো নাযলা ইবনে হিশাম ইবনে
আবদে মানাফ-এর বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলে। বনু হাশিম গোত্রের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিলো।
নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যেও সে অন্যতম প্রভাবশালী লোক ছিলো। হযরত ইবনে ইসহাক্ব
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা পৌঁছেছে যে,
বনু হাশিম ও বনু আব্দুল মুত্তালিব শিয়াবে আবূ ত্বলিবে অন্তরীণ থাকা
অবস্থায় হাশিম উট বোঝাই করে খাদ্য নিয়ে তাদের নিকট আসতো। শিয়াবে আবূ ত্বালিব বা
গিরিসঙ্কটের মুখে এসে তিনি উটের লাগাম খুলে দিয়ে উটটির দু’পাশে আঘাত করতেন। যার
ফলে উটনি সোজা শিয়াবে আবূ ত্বালিব গিরিসঙ্কটের মধ্যে ঢুকে অন্তরীণ লোকজনের নিকট
চলে যেতো। হাশিম মাঝে মাঝে উট বোঝাই করে গমও নিয়ে আসতেন এবং একইভাবে উটটি পাঠিয়ে
দিতেন।
ثم إنه مشى إلى زهير بن أبى أمية بن المغيرة بن عبد الله ابن عمرو بن مخزوم وكانت أمه عاتكة بنت عبد المطلب. فقال يأزهير أقد رضيت أن تأكل الطعام وتلبس الثياب وتنكح النساء وأخوالك حيث علمت لا يباعون ولا يبتاع منهم، ولا ينكحون ولا ينكح اليهم؟ أما إنى أحلف بالله لوكانوا أخوال أبى الحكم بن هشام ثم دعوته إلى مثل مادعاك اليه منهم ما أجابك إليه أبدا. قال وبحك ياهشام فماذا أصنع إنما أنا رجل واحد والله لو كان معى رجل اخر لقمت فى نقضها. قال قد وجدت رجلا، قال من هو؟ قال أنا قال له زهير أبغنا ثالثا،
একদিন তিনি যুহায়র ইবনে আবূ উমাইয়া ইবনে মুগীরা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে
মাখযূম-এর নিকট এসে উপস্থিত হন। যুহায়রের মা ছিলেন হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস
সালাম উনার কন্যা আতিকা। হিশাম বললেন, হে যুহায়র! তুমি কি
এতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছো যে, তুমি পেট পুরে খাদ্য খাচ্ছ,
জামা-কাপড় পরিধান করছো এবং বিয়ে-শাদী করছো আর অন্যদিকে তোমার মাতুল
গোত্রের লোকেরা কোনো প্রকারের বেঁচা-কেনা ও বিয়ে-শাদী দিতে বা করতে পারছেন না?
আমি তো মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম করে বলতে পারি, তোমার মাতুল গোত্রের স্থলে যদি আবূল হাকাম ইবনে হিশামের মাতুল গোত্র হতো
এবং এরা তোমাকে যে অমানবিক অবরোধে অংশগ্রহনের আহ্বান জানিয়েছে তুমি যদি তোমাদের
তাদের মাতুল গোত্রের বিরুদ্ধে এ প্রকারের আহ্বান জানাতে তবে তারা কখনো তোমার
আহ্বানে সাড়া দিতো না। যুহায়র বললেন, আফসোস! হে হিশাম! আমি
এখন কি করতে পারি? আমি তো একা। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম!
আমি যদি একজন সহযোগীও পেতাম তবে ওই চুক্তি ভঙ্গ করার জন্যে উদ্যোগী হতাম। হিশাম
বললেন, একজন সহযোগীতো তুমি পেয়ে গেছো। যুহায়র বললেন, কে সে ব্যক্তি? হিশাম বললেন, আমি।
যুহায়র বললেন, আমাদের সাথী হিসেবে তৃতীয় একজনের খোঁজ করো।
فذهب إلى المطعم بن عدى فقال له يامطعم أقد رضيت أن يهلك بطنان من بنى عبد مناف وأنت شاهد على ذلك موافق لقريش فيه، أما والله لئن أمكنتموهم
من هذه لتجدنهم اليها منكم سراعا، قال ويحك فماذا أصنع إنما أنا رجل واحد، قال قد وجدت لك ثانيا. قال من؟ قال أنا، قال أبغنا ثالثا قال قد فعلت. قال من هو؟ قال زهير بن أبى أمية. قال أبغنا رابعا، فذهب الى أبى البخترى بن هشام فقال نحوما قال للمطعم بن عدى، فقال وهل تجد أحدا يعين على هذا؟ قال نعم! قال من هو؟ قال زهير بن أبى أمية والمطعم بن عدى وأنا معك. قال أبغنا خا مسا،
তৃতীয় ব্যক্তির খোঁজে হিশাম হাযির হলেন মুতঈম ইবনে আদীর নিকট। তিনি বললেন, হে মুতঈম! কুরাইশদের প্রতি আপনার সমর্থনের কারণে আপনার চোখের
সামনে বনু আবদে মানাফ গোত্রের দু’টো শাখা বিদায় গ্রহণ করবেন আর চেয়ে চেয়ে তা দেখলে
তাতে কি আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন? কুরাইশ সম্প্রদায়কে যদি
আপনি ওই সুযোগ দেন, তবে গোত্র দু’টোকে ধ্বংস করে দিতে তারা
আপনার চেয়ে দ্রুত এগিয়ে যাবে। মুতঈম বললেন, হায় আমি কিই বা
করতে পারি? আমি তো একা। হিশাম বললেন, আপনার
সহযোগীরূপে আপনি দ্বিতীয়জন পেয়ে গেছেন। তিনি বললেন, ওই
ব্যক্তি কে? হিশাম বললেন, আমি। মুতঈম
বললেন, তবে তৃতীয় একজনের খোঁজ করো। হিশাম বললেন, তৃতীয় জনের ব্যবস্থাও আমি করে রেখেছি। মুতঈম বললেন, ওই
তৃতীয় ব্যক্তিটি কে? হিশাম বললেন, যুহায়র
ইবনে আবূ উমাইয়া। মুতঈম বললেন, তাহলে চতুর্থ একজন খুঁজে নাও।
এবার হিশাম উপস্থিত হলেন, আবূল বুখতারী ইবনে হিশামের নিকট।
মুতঈমকে যা বলেছিলেন তাকেও তিনি তা বললেন। সে বললো, তুমি
অন্য কাউকে কি পাবে, যে এ ব্যাপারে সাহায্য করবে? হিশাম বললো, হ্যাঁ, পাবো। আবূল
বুখতারী বললো, কে সে? হিশাম বললেন,
যুহায়র ইবনে আবূ উমাইয়া, মুতঈম ইবনে আদী এবং
আমি আছি আপনার সাথে। সে বললো, তবে পঞ্চম ব্যক্তির খোঁজ করো।
خامسا. فذهب إلى زمعة بن الاسود بن المطلب بن أسد فكلمه وذكرله قرابتهم وحقهم، فقال له وهل على هذا الأمر الذى تدعونى اليه من أحد؟ قال نعم ثم سمى القوم. فاتعدوا حطم الحجون ليلا باعلا مكة فاجتمعوا هنالك وأجمعوا أمرهم وتعاقدوا على القيام فى الصحيفة حتى ينقضوها. وقال زهير. أنا أبدؤكم فاكون أول من يتكلم. فلما أصبحوا غدوا غدوا إلى أنديتهم، وغدا زهير بن أبى أمية عليه حلة فطاف بالبيت سبعا ثم أقبل على الناس. فقال ياأهل مكة أنا كل الطعام ونلبس الثياب وبنو هاشم هلكى لا يبتاعون ولا يبتاع منهم، والله لا أقعد حتى تشق هذه الصحيفة القاطعة الظالمة.
পঞ্চম ব্যক্তির খোঁজে হিশাম গেলেন যাময়া ইবনে আসওয়াদ ইবনে মুত্তালিব ইবনে
আসাদের নিকট। সে অবরুদ্ধ লোকদের সাথে উনার আত্মীয়তা এবং উনাদের প্রতি তার দায়িত্ব
ও কর্তব্যের কথা তিনি তাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন। সে বললো, আপনি আমাকে যে কাজের প্রতি আহ্বান করেছেন ওই কাজে সহযোগিতা
করার জন্যে অন্য কেউ আছে কি? হিশাম বললেন, হ্যাঁ, আছে এবং তিনি উপরোক্ত ব্যক্তিদের নাম বললেন।
এরপর তারা সকলে মক্কার উচ্চভূমি হাতম আল হাজূন নামক স্থানে রাতের বেলা সমবেত হওয়ার
জন্যে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলেন। যথা সময়ে উনারা সকলে সেখানে সমবেত হলেন। সবাই একমত হয়ে
অঙ্গীকারাবদ্ধ হলেন যে, ওই চুক্তিনামা বিনষ্ট করার জন্যে
তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
যুহায়র বললেন, আমি সর্বাগ্রে কথা
বলবো। সকাল বেলা তারা তাদের মজলিসে উপস্থিত হন। যুহায়র ইবনে উমাইয়া উপস্থিত হন
বিশেষ একটি পোশাক পরিধান করে। তিনি সাতবার বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করেন, তারপর লোক সম্মুখে উপস্থিত হন। তিনি বললেন, হে মক্কা
শরীফ-এর অধিবাসীগণ! আমরা কি এভাবে আহার্য গ্রহণ ও জামা কাপড় পরিধান করতে থাকবো। আর
বনু হাশিম গোত্র ধ্বংস হয়ে যাবেন? উনারা কোনো কিছু
ক্রয়-বিক্রয় করতে পারছেন না। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এই আত্মীয়তা ছেদকারী,
যুলুমমূলক চুক্তিনামা ছিঁড়ে না ফেলা পর্যন্ত আমি ক্ষ্যান্ত হবো না।
قال أبوجهل- وكان فى ناحية المسجد- والله لاتشق. قال زمعة بن الاسود أنت والله أكذب، مارضينا كتابها حين كتبت. قال أبو البخترى صدق زمعة لاترضى ما كتب فيها ولا نقربه. قال المطعم بن عدى صدقتما وكذب من قال غير ذلك، نبرأ إلى الله منها ومما كتب فيها. قال هشام بن عمرو نحوا من ذلك. قال أبو جهل هذا أمر قدقضى بليل تشور فيه بغير هذا المكان، وأبو طالب جالس فى ناحية المسجد وقام المطعم بن عدى إلى الصحيفة ليشقها فوجد الارضة قد أكلتها إلا باسمك اللهم،
বাইতুল্লাহ শরীফ-এর এক পাশে বসে থাকা আবূ জাহিল বলে উঠলো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তুমি সেটি ছিঁড়তে পারবে না। এবার
যামআ ইবনে আসওয়াদ বলে উঠলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম!
তুমি তো জঘন্য মিথ্যাবাদী তুমি যখন এ চুক্তিনামা তৈরি করেছিলে তখন আমরা তাতে রাজি
ছিলাম না।
আবূল বুখতারী বললেন, যামআ ঠিকই বলেছেন,
ওই চুক্তিনামায় যা লিখা রয়েছে আমরা তাতে সম্মত নই। আমরা তা সমর্থন
করি না। মুতঈম ইবনে আদী বললেন, আপনারা দু’জনে সত্য বলেছেন,
আপনাদের কথার বিপরীতে কথা যে বলে সে মিথ্যাবাদী। ওই চুক্তিপত্র ও
তাতে উল্লেখিত বিষয়ের ব্যাপারে আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আমাদের
সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করেছি। হিশাম ইবনে আমরও অনুরূপ বক্তব্য রাখলেন। আবূ জাহিল
বললো, এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। নিশ্চয়ই রাতের বেলা
অন্যত্র এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় আবূ ত্বালিব
তিনি বাইতুল্লাহ শরীফ-এর একপ্রান্তে বসা ছিলেন। চুক্তিনামা ছিড়ে ফেলার জন্যে মুতঈম
ইবনে আদী এগিয়ে গেলেন। তিনি চুক্তিপত্রটি এমতাবস্থায় পেলেন যে, با سمك اللهم “(হে মহান আল্লাহ পাক আপনার নাম মুবারকে শুরু করছি) অংশ ছাড়া
অন্য সব লেখা পোকায় খেয়ে ফেলেছে।”
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ওই চুক্তিনামা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া এবং তাতে বর্ণিত বিষয়াদি
অকার্যকর হয়ে যাওয়ার পর আবূ ত্বালিব তিনি একটি কবিতা আবৃত্তি করলেন। চুক্তিনামা
বিনষ্ট করে দেয়ার জন্য যাঁরা ঐতিহাসিক ভুমিকা পালন করেন কবিতায় তিনি তাদের প্রশংসা
করেন।
ألا هل أتى بحرينا صنع ربنا
–
على نأيهم والله بالناس أرود
ওহে, আমাদের সমুদ্র অভিযাত্রী আবিসিনিয়ায়
অবস্থানকারী ভাইগণ! দূর দেশে অবস্থান করা সত্ত্বেও তাদের প্রতি আমাদের রব মহান
আল্লাহ পাক উনার দয়া অবতীর্ণ হয়েছে কি? বস্তুত মহান আল্লাহ
পাক তিনি মানব জাতিকে বহু অবকাশ দান করেন।
فيخبرهم أن الصحيفة مزقت
–
وأن كل مالم يرضه الله مفسد
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে অবগত করিয়েছেন যে, চুক্তিনামা ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি
যা পছন্দ করেন না, তা বিনষ্ট হবেই
تراوحها إفك وسحر مجمع
–
ولم يلف سحرا اخر الدهر يصعد
সেটিতে একাধারা মিথ্যা ও যাদু সন্নিবেশিত হয়েছে। জাদু ও ইন্দ্রজাল শেষপর্যন্ত
উচ্চাগামী থাকে না।
تداعى لها من ليس فيها بقرقر
–
فطائرها فى رأسها يتردد
সেটির জন্যে এমন লোকেরা পরস্পরকে আহ্বান করেছে যারা সুশ্রী নয়। ফলে সেটির
দুর্ভাগ্য তার মাথার উপরই চক্কর দিচ্ছে।
وكانت كفاء وقعة باثيمة
–
ليقطع منها ساعد ومقلد
ওই চুক্তিপত্রের জন্মই হয়েছিলো পাপের গর্ভে। এটির উদ্দেশ্য ছিলো পরস্পর
সহযোগীতাকারী ও আনুগত্য প্রদর্শনকারী গোত্রীয় ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করা।
ويظعن أهل المكتين فيهربوا
–
فرأئصهم من خشية الشر ترعد
মক্কাবাসীরা যেনো সফর করে অন্যত্র পালিয়ে যায়। অকল্যাণ ও অনিষ্টের আশঙ্কায়
তাদের বুক যেনো সদা থরথর করে কাঁপছে।
ويترك حراث يقلب أمره
–
أيتهم فيها عند ذاك وينجد
এটি প্রস্তুত করা হয়েছিলো এ জন্য যে, যেনো মক্কা শরীফ-এ
রেখে যাওয়া হয় একজন কৃষককে। যে ওখানকার কাজকর্ম পরিচালনা করবে। সে হবে তখন সেখানে
পলায়নকারীদের পক্ষ থেকে নিদর্শন ও চিহ্ন। সেই সব কাজ করবে।
وتصعد بين الاخشبين كتيبة
–
لها حدج سهم وقوس ومرهد
পলায়নরত লোকগুলো যেনো দলবদ্ধভাবে দুটি টিলার মধ্যখানে আরোহন করে। তীরের আক্রমণ, ধনুক নিক্ষেপ এবং অগ্নিদাহন যেনো তাদেরকে তাড়া করে ফিরে।
فمن ينش من حضار مكة عزة
–
فعزتنا فى بطن مكة أتلد
কোনো অনিষ্টকারী ব্যক্তি যদি মক্কা শরীফ-এর সম্মানিত ও মর্যাদাবান হতে চায় তবে
তো এটা সকলেরই জানা উচিত যে, মক্কা ভূমিতে আমরা
প্রাচীনকাল থেকেই মর্যাদাবান ও সম্মানিত বংশ।
نشأنا بها والناس فيها قلائل
–
فلم ننفكك نزداد خيرا ونحمد
আমরা পবিত্র মক্কা শরীফ-এ লালিত-পালিত হচ্ছি সেই কাল থেকে যখন সেখানে মানব
বসতি ছিলো নিতান্ত কম। এরপর আমরা অনবরত কল্যাণ অর্জনকারী ও প্রশংসা লাভকারী হয়ে
জীবনযাপন করে আসছি।
ونطعم حتى يترك الناس فضلهم
–
إذا جعلت أيدى المفيضين ترعد
আমরা লোকজনকে খাদ্য দান করতে থাকি যতক্ষণ না দানশীলতায় সম্মান অন্যদের থেকে
খসে পড়ে একমাত্র আমাদের জন্যে হয়ে যায়। আমরা তখনও দান করি যখন (দরিদ্র হয়ে যাওয়ার
আশঙ্কায়) নামী-দামী দানশীলদের হাত কাঁপতে শুরু করে।
جزى الله رهطا بالحجون تجمعوا
–
على ملاء يهدى لحزم ويرشد
ওই মানবগোষ্ঠীকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পুরস্কার দান করুন, যারা হুযূন এলাকায় একত্রিত হয়েছিলো একটি সুমহান লক্ষ্য নিয়ে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার পথ নির্দেশ করুন।
قعودا لذى حطم الحجون كأنهم
–
مقاولة بل هم أعز وأمجد
তারা আলোচনায় বসেছিলো হাতম ‘আল-হুযূন’ নামক স্থানে। তারা যেনো এক একজন নেতা।
বস্তুত তারা সর্বাধিক সম্মানিত ও মর্যাদাবান।
أعان عليها كل صقر كأنه
–
إذا ما مشى فى رفرف الدرع أحرد
ওই চুক্তিনামা ছিঁড়ে ফেলতে সহযোগিতা করেছিলো প্রত্যেক যুদ্ধবাজ তীরন্দাজ
ব্যক্তি, যে আত্মরক্ষার্থে এমন মজবুত লৌহবর্ম পরিধান
করে যাতে চলাফেরার সময় বর্মের ভারে যেনো সে নুয়ে যায়।
جرئ على جل الخطوب كأنه
–
شهاب بكفى قابس يتوقد
কঠিন সমস্যা এবং বিপদ উত্তরণে তাদের প্রত্যেকে পারদর্শী ও সাহসী। মশালধারীর
দু’হাতে একেক জন যেনো দেদীপ্যমান অগ্নিমশাল।
من الاكرمين من لؤى بن غالب
–
اذا سيم خسفا وجهه يتربد
তিনি (আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লুওয়াই ইবনে গালিব গোত্রের সম্ভ্রান্ত লোকদের
অন্যতম। অপমান ও লাঞ্ছনার মুখোমুখি হলে তার চেহারা মলিন হয়ে যায়।
طويل النجاد خارج نصف ساقه
–
على وجهه يسقى الغمام ويسعد
তিনি দীর্ঘাঙ্গী মানুষ। পায়ের গোছার অর্ধেক পোশাকের বাইরে থাকে। উনার চেহারা
মুবারকের উসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা ও সৌভাগ্য কামনা করা হয়ে থাকে।
عظيم الرماد سيد وابن سيد
–
يحض على مقرى الضيوف ويحشد
তিনি মহান দানশীল পুরুষ। তিনি সরদার এবং সরদারের পুত্র। অতিথি আপ্যায়নে তিনি
অপরকে উৎসাহিত করেন এবং নিজেও অতিথি আপ্যায়নে নিয়োজিত থাকেন।
ويبنى لأبناء العشيرة صالحا
–
اذا نحن طفنا فى البلاد ويمهد
আমরা যখন দেশে-বিদেশে ভ্রমণরত থাকি, তখন স্বগোত্রীয়দের
পরিবার-পরিজনের প্রতি সদাচরণ করেন এবং তাদের জন্য সুব্যবস্থা করে দেন।
ألظ بهذا الصلح كل مبرأ
–
عظيم اللواء أمره ثم يحمد
সম্পাদিত চুক্তিনামা বিনষ্টকরণে এই চুক্তি প্রত্যাখ্যানকারী নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ
ছিলেন আপোসহীন। এ কাজে তারা প্রশংসা লাভ করেছেন।
قضوا ما قضوا فى ليلهم ثم أصبحوا
–
على مهل وسائر الناس رقد
তাদের যা সিদ্ধান্ত নেয়ার তারা রাতেই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরপর ভোর বেলা
তারা ধীরে ধীরে যথা স্থানে উপস্থিত হন। অথচ লোকজন তখনও নিদ্রামগ্ন।
هم رجعوا سهل بن بيضاء راضيا
–
وسر أبو بكر بها ومحمد صلى الله عليه و سلم
তারা সাহল ইবনে বায়যার নিকট ফিরে গেলেন। এ কাজে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও
সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনারা খুশি হন।
متى شرك الاقوام فى حل أمرنا
–
وكنا قديما قبلها نتودد
যখনই আমাদের কোনো সমস্যা সমাধানে লোকজন এগিয়ে এসেছেন তখনই প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রাচীনকাল থেকে আমরা সবার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রক্ষা করে
এসেছি।
وكنا قديما لا نقر ظلامة
–
وندرك ماشئنا ولا نتشدد
প্রাচীনকাল থেকেই আমরা কখনো অন্যায়-অবিচার সমর্থন করিনি। আমরা যা ইচ্ছা করি তা
অর্জন করি। কিন্তু জোর-জবরদস্তি করি না।
فيال قصى هل لكم فى نفوسكم
–
وهل لكم فيما يجئ به غد
হে কুসাই গোত্র! নিজেদেরকে রক্ষা করার চিন্তা-ভাবনা কি তোমরাদের রয়েছে? ভবিষ্যতে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হবে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলার
কোনো প্রস্তুতি কি তোমাদের রয়েছে?
فانى وإيا كم كما قال قائل
–
لديك البيان لو تكلمت أسود
বস্তুত আমার আর তোমাদের অবস্থা এখন সে ব্যক্তির ন্যায়, যে ব্যক্তি বলেছিলে হে আসওয়াদ পাহাড়। নিহত ব্যক্তির
হত্যাকারীকে শনাক্ত করার সুযোগ তোমারাই আছে যদি তুমি কথা বলতে পারো।”
হযরত ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আমি মুহম্মদ ইবনে ছালিহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আব্দুর রহমান
ইবনে আব্দুল আযীযকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, বনু হাশিম গোত্র
শিয়াবে আবূ ত্বালিব থেকে বের হয়ে এসেছিলেন কোন সময়ে? জবাবে
তারা বলেন, আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াতের দশব বছর। অর্থাৎ হিজরতের
তিন বছর পূর্বে। শিয়াবে আবূ ত্বালিব থেকে উনাদের বেরিয়ে আসার বছরেই আখিরী রসূল,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা
আবূ ত্বালিব এবং উম্মুহাতুল মু’মিনীন হযরত খাদিজা বিনতে খুওয়ায়লিদ আলাইহাস সালাম
তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন।”
স্মরণীয় যে, শিয়াবে আবূ
ত্বালিব-এ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার
যে অবর্ণনিয় কষ্ট করেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উনারা খুধার কারণে ছাল-বাকল
খেয়েছেন, উনাদের ইস্তেঞ্জা ছাগলের লেদার মতো হয়ে গিয়েছিলো।
উনারা চামড়ার স্যান্ডেল পর্যন্ত সিদ্ধ করে তা চিবিয়েছেন। তা একমাত্র আখিরী রসূল,
হাবীবুল্লাহ হুযূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মুহব্বতের কারণেই। সুবহানাল্লাহ!
0 Comments:
Post a Comment