শিয়াবে আবূ ত্বালিবে অবস্থান, কুরাইশদের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর ও
আনুষঙ্গিক ঘটনাবলী
ونزل فى إعجاب المشركين بقول حضرت ابن الزبعرى (ولما ضرب ابن مريم مثلا إذا قومك منه يصدون وقالوا الهتنا خير أم هو ما ضربوه لك إلا جدلا بل هم قوم خصمون) وهذا الجدل الذى سلكوه باطل وهم يعلمون ذلك لأنهم قوم عرب ومن لعتهم أن مالما لا يعقل، فقوله (إنكم وما تعبدون من دون الله حصب جهنم أنتم لها واردون) إنما أريد بذلك ما كانوا يعبدونه من الاحجار التى كانت صور أصنام، ولا يتنال ذلك الملائكة الذين زعموا انهم يعبدونه هذه الصور- ولا المسيح، ولا عزيرا، ولا أحدا من الصالحين لأن اللفظ لا يتناولهم لا لفظا ولا معنى. فهم يعلمون أن ما ضربوه بعيسى ابن مريم عليها السلام من المثل جدل باطل
হযরত ইবনে যাবয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, অত্র আয়াত শরীফ কাফির মুশরিকদের হাসি-ঠাট্টা সম্পর্কে নাযিল
হয়
وَلَمَّا ضُرِبَ ابْنُ مَرْيَمَ مَثَلًا إِذَا قَوْمُكَ مِنْهُ يَصِدُّونَ
- وَقَالُوا أَآلِهَتُنَا خَيْرٌ أَمْ هُوَ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلًا بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ
অর্থ: “যখন হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম উনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয় তখন
আপনার সম্প্রদায় শোরগোল আরম্ভ করে দেয় এবং বলে আমাদের দেবতাগুলো শ্রেষ্ঠ না হযরত
ঈসা আলাইহিস সালাম? ওরা কেবল
বাক-বিত-ার উদ্দেশ্যেই আপনাকে এ কথা বলে। বস্তুত ওরা এক বিত-াকারী সম্প্রদায়।”
(সূরা যুখরুফ : আয়াত শরীফ ৫৭, ৫৮)
তারা যে যুক্তি পেশ করছে তা নিঃসন্দেহে অসার বা মিথ্যা। তারা নিজেরাও এর
অসারতা সম্পর্কে অবগত। কারণ তারা তো আরবী ভাষাভাষী লোক। তাদের ভাষায় ما (যেগুলো) শব্দটি জড় পদার্থের জন্যে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং
إِنَّكُمْ
وَمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنتُمْ لَهَا وَارِدُونَ
অর্থ: “তোমরা এবং তোমরা যাদের উপাসনা করো সকলেই জাহান্নামের ইন্ধন। তোমরা সকলে
জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (সূরা আম্বিয়া : আয়াত শরীফ ৯৮)
অত্র আয়াত শরীফ-এ ما (যে গুলো) দ্বারা ওই সকল জড় পাথরকে বুঝানো হয়েছে প্রতিমারূপে তারা যেগুলোর
উপসনা করে। কল্পিত আকৃতি তৈরি করে তারা, যে সব ফেরেশতা
আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইবাদত করে, সে সকল ফেরেশতা আলাইহিমুস
সালাম ওই শব্দের আওতায় পড়েন না। অনুরূপভাবে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম, হযরত উযায়র আলাইহিস সালাম এবং কোনো পূণ্যবান বান্দা ما (যেগুলো) শব্দের আওতায় পড়েন না। কারণ ما শব্দটি শব্দগত ও অর্থগত কোনোভাবেই উনাদেরকে বুঝায় না। তাই
ওই ঝগরাটে কাফির মুশরিকরা জানে যে, উল্লিখিত মাজলিসে
তর্কস্থলে তারা যে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছে তা নিশ্চিতভাবেই
অসার ও ভিত্তিহীন।
كما قال الله تعالى (ما ضربوه لك إلا جدلا بل هم قوم خصمون) ثم قال (إن هو) أى حضرت عيسى عليه السلام (إلا عبد أنعمنا عليه) أى بنبوتنا (وجعلناه مثلا لبنى اسرائيل) أى دليلا على تمام قدرتنا على ما نشاء حيث خلقناه من أنثى بلا ذكر، وقد خلقنا حواء من ذكر بلا أنثى، وخلقنا حضرت ادم عليه السلام لا من هذا ولا من هذا، وخلقنا سائر بنى ادم من ذكر وأنى كما قال فى الا ية الاخرى (ولنجعله اية للناس) أى أمارة ودليلا على قدرتنا الباهرة (ورحمة منا) ترحم بها من نشاء.
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
مَا ضَرَبُوهُ
لَكَ إِلَّا جَدَلًا بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ
অর্থ: “ওরা কেবল বাক বিত-ার উদ্দেশ্যেই আপনাকে ওই সব কথা বলে।” (সূরা যুখরুফ :
আয়াত শরীফ ৫৮)
এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেছেন,
إِنْ هُوَ
তিনি তো হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম
إِلَّا عَبْدٌ أَنْعَمْنَا
عَلَيْهِ
“আমার এক বান্দা বা রসূল আলাইহিস
সালাম, যাঁকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম।” (সূরা যুখরুফ
: আয়াত শরীফ ৫৯)
আমার নুবুওওয়াত প্রকাশের মাধ্যমে
و جعلنه مثلا لبنى اسرا ئيل
অর্থ: “এবং উনাকে করেছিলাম আমি বনী ইসরাইলদের জন্যে এক দৃষ্টান্ত।” অর্থাৎ
আমার পরিপূর্ণ শক্তির প্রমাণ যে, আমি যা চাই করতে
পারি। যেমন উনাকে আমি সৃষ্টি করেছি একজন নারী থেকে পুরুষের স্পর্শ ব্যতিরেকে। হযরত
হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছি, একজন পুরুষ থেকে
নারী ব্যতিরেকে। হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছি নারী পুরুষ ব্যতিরেকে।
অন্য সকল মানুষকে সৃষ্টি করেছি পুরুষ ও নারী থেকে। সুবহানাল্লাহ!
অন্য আয়াত শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
وَلِنَجْعَلَهُ
آيَةً لِلنَّاسِ
অর্থ: “যেনো আমি উনাকে মানুষের জন্যে নিদর্শনস্বরূপ স্থির করি।” (সূরা মারইয়াম
: আয়াত শরীফ ২১) অর্থাৎ আমার অনন্য শক্তির প্রমাণস্বরূপ و رحمة منا এবং আমার নিকট থেকে এক অনুগ্রহ আমি যাঁকে ইচ্ছা ওই রহমত ও দয়া
প্রদানে কামিয়াবী করি।
وذكر حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه حضرت الاخنس بن شريق رحمة الله عليه ونزول قوله تعالى فيه (ولا تطع كل حلاف مهين) الا يات، وذكر الوليد بن المغيرة حيث. قال أينزل على حضرت محمد صلى الله عليه و سلم وأترك وأنا كبير قريش وسيدها، ويترك أبو مسعود عمروثبن عمرو الثقفى سيد ثقيف فنحن عظيما القريتين. ونزل قوله فيه (وقال لولا نزل هذا القران على رجل من القريتين عظيم) والتى بعدها،
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আখনাস ইবনে শুরায়ক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে,
وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَّهِينٍ
অর্থাৎ তোমরা অনুসরণ করবে না সে ব্যক্তির যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত। (সূরা ক্বলম : আয়াত শরীফ ১০)
কাট্টা কাফির ওয়ালীদ ইবনে মুগীরার কথা উল্লেখ করে হযরত ইবনে ইসহাক্ব
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মুগীরা বলেছিলো ওহী
কি শুধু আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর অবতীর্ণ হতে থাকবে আর আমি বঞ্চিত হতে থাকবো। অথচ আমি
কুরাইশ বংশের অন্যতম গণ্যমান্য ব্যক্তি ও নেতা? নাঊযুবিল্লাহ!
ছাক্বীফ গোত্রের প্রধান আবূ মাসউদ আমর ইবনে আমর ছাকাফীও কি বঞ্চিত হবে? দু’জনপদের আমরা দু’জনই তো প্রতিপত্তিশালী, শীর্ষস্থানীয়
নেতা।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
وَقَالُوا
لَوْلَا نُزِّلَ هَذَا الْقُرْآنُ عَلَى رَجُلٍ مِّنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ
অর্থ: “তারা বলে এই কুরআন শরীফ কেন অবতীর্ণ হলো না দু’জনপদের কোনো
প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির উপর।” (সূরা যুখরুফ : আয়াত শরীফ ৩১)
উল্লেখ্য যে, আখিরী রসূল,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা তথা সমস্ত বিধর্মীরা ভিন্ন
প্রকার কষ্ট দেয়ার চেষ্টা করতো এবং ষড়যন্ত্রের জাল বুনতো। অপর দিকে মহান আল্লাহ
পাক তিনি কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ নাযিল করে তাদের সেই কুট কৌশল ষড়যন্ত্রের জাল
ধ্বংস করে দিতেন। এক পর্যায় আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম তিনি শিয়াবে আবূ ত্বালিবে তাশরীফ নেন।
এই কঠিন অবস্থায় আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত করার প্রশ্নে বনু হাশিম ও বনু
আবদিল মুত্তালিব গোত্রের আহ্বানের প্রেক্ষিতে কুরায়শী অন্যান্য গোত্ররা বিরোধিতা
করে এবং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তাদের নিকট হস্তান্তর না করা পর্যন্ত ওই গোত্রদ্বয়ের
সাথে বিয়ে শাদী ও বেচা-কেনার সম্পর্ক ছিন্ন রাখার ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে চুক্তি
সম্পাদন করে এবং দীর্ঘদিন যাবৎ উনাদেরকে আবূ ত্বালিব গিরি সঙ্কটে অন্তরীণ করে
রাখে। এ বিষয় তাদের নিবর্তনমূলক ও অন্যায় চুক্তিপত্র তৈরি এবং এ সকল প্রেক্ষাপটে
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত ও সত্যতার পক্ষে প্রকাশিত দলীল প্রমাণাদি
সম্পর্কে উল্লেখ করতে হয়।
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-এর ২য় জিলদের ৮৪ ও ৮৫ পৃষ্ঠা উল্লেখ রয়েছে,
قال حضرت موسى بن عقبة رحمة الله عليه عن حضرت الزهرى رحمة الله عليه ثم إن المشركين اشتدوا على المسلمين كأشد ما كانوا حتى بلغ المسلمين الجهد، واشند عليهم البلاء، وجمعت قريش فى مكرها أن يقتلوا رسول الله صلى الله عليه وسلم علانية. فلما رأى أبو طالب عمل القوم جمع بنى عبد المطلب وأمرهم أن يدخلوا رسول الله صلى الله عليه وسلم شعبهم، وأمرهم أن يمنعوه ممن أرادوا قتله. فاجتمع على ذلك مسلمهم وكافرهم، فمنهم من فعله حمية، ومنهم من فعله إبمانا ويقينا.
অর্থ: “হযরত যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে হযরত মূসা ইবনে উকবা
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন যে, মুশরিকরা ইতঃপূর্বে
মুসলমানগণের প্রতি যত অত্যাচার ও যুলুম, নির্যাতন চালাচ্ছিলো
পরবর্তীতে তারা তার চেয়েও কঠোরতম নির্যাতন চালাতে শুরু করে। যার ফলে হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের জীবন-যাপন খুবই কঠিনতম হয়ে উঠে। উনারা
নানা প্রকার কঠোর বিপদ-আপদের সম্মুখীন হন। কাফির-মুশরিক, কুরাইশরা
প্রকাশ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার ষড়যন্ত্রে ঐক্যমতে পৌঁছে। তাদের নিকৃষ্টতম
কাজ কারবার লক্ষ্য করে আবূ ত্বালিব তিনি নিজে বনু আব্দুল মুত্তালিব গোত্রের সকল
লোককে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হতে বললেন এবং শহীদ প্রয়াসীদের হাত থেকে
উনার খিদমত করতে নির্দেশ দিলেন। বনু আব্দুল মুত্তালিব সম্প্রদায়ের হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও সাধারণ সকল লোকজন সকলে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পার্শ্বে এসে
দাঁড়ান। কেউ আসেন গোষ্ঠীগত সম্মান রক্ষার তাড়নায় আবার কেউ আসেন ঈমানী চেতনায়।
فلما عرفت قريش أن القوم قدمنعوا رسول الله صلى الله عليه وسلم، وأجمعوا على ذلك اجتمع المشركون من قريش فاجمعوا أمرهم أن لايجالسوهم
ولا يدخلوا بيوتهم حتى يسلموا رسول الله صلى الله عليه وسلم للقتل، وكتبوا فى مكرهم صحيفة وعهودا ومواثيق لا يقبلوا من بنى هاشم صلحا أبدا ولا يأخذهم بهم رأفة حتى يسلموه للقتل. فلبث بنو هاشم فى شعبهم ثلاث سنين، واشتد عليهم البلاء والجهد وقطعوا عنهم الاسواق فلا يتركوا لهم طعاما يقدم مكة ولابيعا إلا بادروهم اليه فا شتروه يريدون بذلك ان يدركوا سفك دم رسول الله صلي الله عليه وسلم
কুরাইশ গোত্রের কাফির মুশরিকরা দেখলো
যে, স্বগোত্রীয় লোকজন উনার নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পক্ষপাতে
প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন এবং ওই প্রশ্নে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছেন। তখন কাফির
মুশরিকরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার
জন্যে উনারা যতক্ষন তাদের হাতে সমপর্ন না করবেন ততক্ষন পর্যন্ত তারা উনাদের সাথে
উঠা-বসা করবে না, ক্রয়-বিক্রয় করবে না এবং তাদের ঘর-বাড়ীতে
উনারা প্রবেশ করতে পারবেন না। এ মর্মে তারা একটি চুক্তিনামা ও অঙ্গীকার পত্র
সম্পাদন করে নিলো যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তাদের কাছে সমর্পন না করা পর্যন্ত
তারা বনু হাশিম গোত্রের সাথে কোনো আপোষ-মীমাংসা করবে না এবং কোনো প্রকার সহানুভূতি,
সহমর্মিতা প্রদর্শন করবে না। এ প্রেক্ষিতে বনু হাশিম গোত্রের লোকজন
শিয়াবে আবূ ত্বালিবে ৩ বৎসর অন্তরীন থাকেন এ সময় উনারা অবর্ণনীয় দুঃখ, কষ্টে দিন অতিবাহিত করেন। কুরাইশরা উনাদের হাট বাজারে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।
উনাদেরকে তারা কোনো ভোগ্য পণ্য বিক্রির জন্যে মক্কা শরীফ-এর শহরের বাইরে আসতে দিতো
না। আবার তাদের কিছু ক্রয়ের প্রয়োজন হলে কুরাইশী লোকেরা এগিয়ে গিয়ে তা ক্রয় করে
নিত যাতে শিয়াবে আবূ ত্বালিব অন্তরীন লোকজন উনাদের নিকট ওই পন্যদ্রব্য পৌঁছতে না
পারে। এর দ্বারা কাফির মুশরিকদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নাগালের
মধ্যে পাওয়া ও উনাকে শহীদ করা। নাঊযুবিল্লাহ!
فكان ابو طالب اذا أخذ الناس مضاجعهم أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم فاضطجع على فراشه حتى يرى ذلك من أراد به مكرا واغتيالا له، فاذا نام الناس أمرا أحد بنيه أو أخوته أو بنى عمه فاضطجعوا على فراش رسول الله صلى الله عليه وسلم وأمر رسول الله صلى الله عليه وسلم أن يأتى بعض فرشهم فينام عليه، فلما كان رأس ثلاث سنين تلاوم رجال من بنى عبد مناف ومن قصى ورجال من سواهم من قريش قد ولدتهم نساء من بنى هاشم، ورأوا أنهم قد قطعوا الرحم واستخفوا بالحق، واجتمع أمرهم من ليلتهم على نقض ما تعاهدوا عليه من الغدر والبراءة منه، وبث الله على صحيفتهم الارضة فلحست كلما كان فيها من عهد وميثق.
চাচা আবূ ত্বালিব তিনি যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত
করার জন্যে নানা কৌশল অবলম্বন করতেন। রাতের বেলা অন্তরীণ লোকজন যখন ঘুমাতে যেতেন,
তখন তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার বিছানা মুবারকে শুয়াতেন। উদ্দেশ্য হলো
কোনো ষড়যন্ত্রকারী যদি সেখানে থাকে, তবে সে যেনো নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে ওখানে দেখে। পরে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আবূ ত্বালিব তিনি উনার কোনো
পুত্রকে কিংবা ভাইকে কিংবা চাচাতো ভাইকে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহু
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছানা মুবারকে যেতে বলতেন এবং
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্য একটি বিছানায় নিয়ে আসতেন এবং তিনি সেখানে ঘুমাতেন। এ
অবস্থায় তৃতীয় বছরের মাথায় বনু আবদ, বনু মানাফ, বনু কুসাই এবং বনু হাশিমের মহিলাদের গর্ভজাত কতক লোক এ অমানবিক আচরণের
জন্যে নিজেদেরকে দোষারোপ করে। তারা উপলব্ধি করে যে, এর
মাধ্যমে তারা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করছে। সে রাতেই তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে,
ইতঃপূর্বে সম্পাদিত চুক্তিনামা তারা ভঙ্গ করবে এবং ওই চুক্তির সাথে
সম্পর্কচ্ছেদ করবে। এদিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের চুক্তিপত্রের প্রতি উইপোকা
পাঠালেন। চুক্তিপত্রের যে যে স্থানে চুক্তি বিষয়ক শব্দ ছিলো সে সে স্থানগুলো পোকায়
খেয়ে ফেলে।
ويقال كانت معلقة فى سقف البيت فلم تترك اسما لله فيها إلا لحسته، وبقى ما كان فيها من شرك وظلم وقطيعة رحم، وأطلع الله عزوجل رسوله على الذى صنع بصحيفتهم فذكر ذلك رسول الله صلى الله عليه و سلم لابى طالب فقال ابوطالب لا و الثوا قب ما كذبنى فانطلق يمشى بعصابته من بنى عبد المطلب- حتى اتى المسجد وهو حافل من قريش- فلما رأ وهم عامدين لجماعتهم انكروا ذلك وظنوا أنهم خرجوا من شدة البلاء فاتوهم ليعطوهم رسول الله صلى الله عليه وسلم. فتكلم أبو طالب فقال قد حدثت أمور بينكم لم نذ كرها لكم، فاتوا بصحيفتكم التى تعاهدتم عليها فعله أن يكون بيننا وبينكم صلح، وإنما قال ذلك خشية أن ينظروا فى الصحيفة قبل أن يأتوابها.
বর্ণিত আছে যে, চুক্তিপত্রটি কা’বা
শরীফ-এর ছাদের সাথে ঝুলানো ছিলো। মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারকের স্থানগুলোও
পোকায় খেয়ে ফেলে। ফলে শিরক, যুলুম-অত্যাচার এবং আত্মীয়তা
ছিন্নকারী বিষয় সম্বলিত বিবরণগুলো অবশিষ্ট থাকে। চুক্তিনামার এ অবস্থা সম্পর্কে
মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় রসুল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবহিত করেন।
তিনি উনার চাচা আবূ ত্বালিব উনাকে তা জানালেন। আবূ ত্বালিব তিনি বললেন, উজ্জ্বল নক্ষত্র রাজির ক্বসম! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার সাথে মিথ্যা বলেননি। বনু
আব্দুল মুত্তালিব গোত্রের কতক সঙ্গী-সাথী নিয়ে তিনি মসজিদুল হারামে উপস্থিত হন।
সেখানে কুরাইশ কাফির-মুশরিকরা উপস্থিত ছিলো। উনাদেরকে এদিকে আসতে দেখে কুরাইশ
কাফির, মুশরিকরা মনে করছিলো যে, সুকঠিন
দুঃখ-কষ্টে অতিষ্ট উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হস্তান্তর করার উদ্দেশ্যে গিরিসঙ্কট
থেকে বেরিয়ে এসেছেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে আবূ ত্বালিব তিনি বললেন, তোমাদের এখানে একটা ঘটনা ঘটেছে তা আমরা এখন তোমাদেরকে বলবো না তোমরা যে
চুক্তিনামা তৈরি করেছো আগে সেটি নিয়ে এসো। তারপর তোমাদের আর আমাদের মাঝে কোনো
ফায়ছালা করা যায় কিনা দেখা যাবে। চুক্তিনামা উপস্থিত করার পূর্বে তারা সেটি দেখে
ফেলে কিনা এ আশঙ্কায় তিনি এ কথা বললেন।
فاتوا بصحيفتهم معجبين بها لا يشكون أن رسول الله صلى الله عليه وسلم مدفوعا اليهم فوضعوها بينهم. وقالوا قد ان لكم أن تقبلوا وترجعوا إلى أمر يجمع قومكم فانما قطع بيننا وبينكم رجل واحد جعلتموه خطرا لهلكة قومكم وعشيرتكم وفسادهم. فقالوا أبو طالب إنما أتيتكم لاعطيكم أمرا لكم فيه نصف. إن ابن أخى أخبرنى - ولم يكذبنى- إن الله برئ من هذه الصحيفة التى فى أيديكم ومحا كل اسم هوله فيها وترك فيها غدركم وقطيعتكم إيانا وتظاهركم علينا بالظلم. فان كان الحديث الذى قال ابن أخى كما قال فافيقوا فوالله لا نسلمه أبدا حتى يموت من عندنا اخرنا، وإن كان الذى قال باطلا دفعناه اليكم فقتلتموه أو استحييتم. قالوا قد رضينا بالذى تقول ففتحوا الصحيفة فوجدوا الصادق المصدوق صلى الله عليه وسلم قد أخبر خبرها،
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম উনাকে তাদের হাতে সমর্পণ করা হবে। এ ব্যাপারে
সন্দেহ সংশয়ের ঊর্ধ্বে উঠে এবং নিশ্চিত হয়ে তারা চুক্তিনামাটি হাযির করে। সেটি
সকলের সম্মুখে রাখা হয়। তারা বললো, এখন সে সময় এসেছে যে,
তোমরা আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করবে এবং এমন এক বিষয়ের প্রতি তোমরা
ফিরে আসবে যা তোমাদের সম্প্রদায়কে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করবে। সেই মহান আল্লাহ পাক উনার
হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন মাত্র ব্যক্তি যিনি
আমাদের ও তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন। নাঊযুবিল্লাহ! তোমরা
নিজেদের সম্প্রদায় ও গোত্রকে ধ্বংস ও বিপর্যস্ত করে দেয়ার জন্যে আখিরী রসূল,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুযোগ
দিয়েছো। নাঊযুবিল্লাহ!
আবূ ত্বালিব তিনি বললেন, আমি তোমাদের নিকট
এসেছি তোমাদেরকে একটি ন্যায়ানুগত প্রস্তাব দেয়ার জন্যে। আমার ভাতিজা কখনো মিথ্যা
কথা বলেন না। তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে, তোমাদের নিকট যে
চুক্তিনামা রয়েছে তার সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো সম্পর্ক নেই। সেটিতে মহান
আল্লাহ পাক উনার যত নাম মুবারক ছিলো তার সবগুলো তিনি মিটিয়ে দিয়েছেন। তোমাদের
অকৃতজ্ঞতা আমাদের সাথে আত্মীয়তা ছিন্ন করা এবং আমাদের প্রতি তোমাদের
যুলুম-নির্যাতনের বিষয়গুলো তাতে অবশিষ্ট রেখেছেন। সুতরাং আমার ভাতিজা যা বলেছেন
ঘটনা যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে তোমরা হুশিয়ার হও! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম!
আমাদের শেষ ব্যক্তিটির ইন্তিকাল না হওয়া পর্যন্ত আমরা কখনো উনাকে তোমাদের হাতে
সমর্পণ করবো না। আর তিনি যা বলেছেন তা যদি অসত্য হয়, তবে
আমরা নিশ্চয়ই উনাকে তোমাদের হাতে তুলে দিবো। এরপর তোমরা উনাকে শহীদ করবে; নাকি জীবিত রাখবে সেটা তোমাদের ইচ্ছা। তারা বললো, ঠিক
আছে, আপনার প্রস্তাবে আমরা রাজি। এরপর তারা চুক্তিনামা খুললো
এবং সত্যবাদী সত্যায়িত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন বলেছেন ঘটনা হুবহু তেমনি দেখতে পেলো।
0 Comments:
Post a Comment