৭৫৫ নং- সুওয়াল : মাসিক মদীনা জানুয়ারী/৯৭ঈঃ সংখ্যায় নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়। প্রশ্ন : তৃতীয় খলীফা হযরত ওসমানের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পূর্বে জুমার নামাজে এক আযান দেওয়া হতো। এ আযান মসজিদের বাইরে, দরজায় না ইমাম সাহেবের সামনে দেওয়া হতো? দ্বিতীয় আযান প্রচলিত হলে সে আযানই বা কোথায় দেওয়া হতো?

 


সুওয়াল : মাসিক মদীনা জানুয়ারী/৯৭ঈঃ সংখ্যায় নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়।

প্রশ্ন : তৃতীয় খলীফা হযরত ওসমানের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পূর্বে জুমার নামাজে এক আযান দেওয়া হতো। এ আযান মসজিদের বাইরে, দরজায় না ইমাম সাহেবের সামনে দেওয়া হতো? দ্বিতীয় আযান প্রচলিত হলে সে আযানই বা কোথায় দেওয়া হতো?

উত্তর : হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং প্রথম দুই খলীফার আমলে জুমার নামাজের জন্য একটিমাত্র আযানই দেয়ার নিয়ম ছিল। সে আযান মসজিদের ভিতরে ইমামের সামনে দেওয়া হতো। আযান দেয়ার সাথে সাথেই খুতবা শুরু হয়ে যেতো। তৃতীয় খলীফা হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাসনামলে মদীনার জনসংখ্যা যখন অনেক বেড়ে যায়, তখন জুমার ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে জনসাধারণকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে আর একটি আযানের ব্যবস্থা করা হয়। এই আযান মসজিদের বাইরে বাজারে যাওয়ার মুখে কোন একটি উচ্চস্থানে দাঁড়িয়ে দেওয়া হতো।  

এখন আমার সুওয়াল হলো- মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম ও হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনাদের সময় জুমুয়ার নামাজের আজান সত্যিই কি মসজিদের ভিতরে ইমামের সামনে দেয়া হতো। দলীলসহ এর সঠিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

 

জাওয়াব : মাসিক মদীনার উপরোক্ত উত্তর শুদ্ধ তো হয়নি, বরং তা সম্পূর্ণ মনগড়া, জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন হয়েছে এবং তাতে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে- আখেরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, দ্বীন ইসলাম ‍উনার প্রথম দুই খলীফা- হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম ও হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনাদের উপর। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, দ্বীন ইসলাম উনার প্রথম দুই খলীফা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম ও হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনাদের সময় (যামানায়) জুমুয়ার নামাজের আজান মসজিদের ভিতরে ইমামের সামনে দেয়া হতো না বরং মসজিদের দরজায় দেয়া হতো। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,

عن السائب بن يزيد قال كان يؤذن بين يدي رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا جلس على المنبر يوم الجمعة على باب المسجد وابى بكرو عمر.

অর্থ : হযরত সাইব ইবনে ইয়াযিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যখন জুমুয়ার দিন মিম্বরে বসতেন, তখন তাঁর উপস্থিতিতে মসজিদের দরজায় আযান দেয়া হতো। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম ও হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনাদের খিলাফতকালেও দেয়া হতো। (আবু দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ শাজী, তোহ্ফাতুল আহওয়াজী)

এছাড়াও নিম্নোক্ত কিতাবসমূহে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইসলামের প্রথম দুই খলীফা- হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম ও হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনাদেরসময় জুমুয়ার নামাজের আজান মসজিদের ভিতরে ইমামের সামনে দেয়া হতোনা বলে উল্লেখ রয়েছে। যেমন- বোখারী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফ, বায়হাক্বী শরীফ, ইবনে মাযাহ্, ফয়জুল বারী, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, হকামুল কুরআন- আবু বকর জাস্সাস, হকামুল কুরআন- মুফতী শফী ইত্যাদি আরো অনেক কিতাবসমূহ)

অতএব সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মাসিক মদীনার সম্পাদকের উত্তর সম্পূর্ণই ভুল ও মিথ্যা অপবাদমূলক হয়েছে। এ ধরণের উত্তর দেয়া থেকে বিরত থেকে খালেছ তওবা করা উচিত। কারণ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,

من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.

অর্থ : যে আমার নামে স্বেচ্ছায় মিথ্যা আরোপ করে, সে যেন দুনিয়ায় থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।” (বোখারী শরীফ, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, তাইসীরুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী)

(বিঃ দ্রঃ বিস্তারিত ফতওয়া জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ৯ম সংখ্যা পাঠ করুন)

আবা-৪২

0 Comments: