১৮ নং- সুওয়াল : আপনারা বলে থাকেন- মাথার তালু থেকে পায়ের তালু, হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত সুন্নতের উপর কায়িম থাকার চেষ্টা করে যাওয়ার। অথচ অনেকে বলেন এতো কিছু লাগেনা। একটা হলেই হলো ইত্যাদি। এখন আমরা কোন পথ ধরবো? জানাইয়া বাধিত করবেন।

সুওয়াল : আপনারা বলে থাকেন- মাথার তালু থেকে পায়ের তালু, হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত সুন্নতের উপর কায়িম থাকার চেষ্টা করে যাওয়ার। অথচ অনেকে বলেন এতো কিছু লাগেনা। একটা হলেই হলো ইত্যাদি। এখন আমরা কোন পথ ধরবো? জানাইয়া বাধিত করবেন।
জাওয়াব : আমরা যে বলে থাকি মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত সুন্নতে পূর্ণ অনুসরন করার কোশেষ করে যেতে হবে। মূলত এ কথাগুলি আমাদের নিজস্ব কথা নয় এ কথাগুলি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা, কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ উনার ১৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার প্রথম অংশে বলেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দ্বীন হিসাবে একমাত্র ইসলামই মনোনীত দ্বীন। মুফাসসিরে কিরামগণ দ্বীনের ব্যাখ্যায় বলেন, একজন লোকের মাথার তালু থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত বরং জন্মের পূর্বে থেকে মৃত্যুর পর পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে তথা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সর্বাবস্থায় করণীয় পরিপূর্ণ যে নিয়ম পদ্ধতি, মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে জানিয়েছেন তাকেই দ্বীন ইসলাম বলে। এই মর্মে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা মায়েদা শরীফ উনার মধ্যে ৩নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেন, “আজকে আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণতা দান করলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম, তোমাদের জন্য দ্বীন ইসলামে সন্তুষ্ট রইলাম। এই আয়াতের দ্বারা ইহাই প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ দ্বীন। কাজেই যারা বলে থাকে যে একটা হলেই হল ইহা সম্পূর্ণ অবান্তর, অযৌক্তিক ও অজ্ঞতাসূচক কথা।
একটা হলেই যদি হতো হাহলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদীছ শরীফ বলতেন না যে, “আমি তোমাদের জন্য দুটো জিনিস রেখে গেলাম। এ দুটো জিনিস যতদিন আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে ততদিন গোমরাহ হবে না। একটা হলো আল্লাহ পাক উনার কিতাব এবং দ্বিতীয়টি হল আমার সুন্নত। (মিসকাত)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ, ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে ইহাই বুঝা যায় পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ব্যতীত যত নিয়ম পদ্ধতি আছে সমস্তই বাতিল ও গুমরাহির অন্তর্ভুক্ত। এই মর্মে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা বাকারা শরীফ উনার মধ্যে ২১৬নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “তোমরা যা খারাপ মনে কর, হয়তো তাই তোমাদের জন্য ভাল, তোমরা যা ভাল মনে করো হয়তো তাই তোমাদের জন্য খারাপ। এবং মহান আল্লাহ পাক জানেন কোনটা ভাল কোনটা মন্দ যা তোমরা জাননা।
এই পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা বুঝায় বান্দা, তার ভাল মন্দ সম্পর্কে অজ্ঞ। আল্লাহ পাকই পরিপূর্ণ জ্ঞাত, কাজেই কোন বান্দার পক্ষেই তার মনগড়া একটা করলেই চলবেনা বরং মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুতাবেকই তাকে সমস্ত কাজগুলি করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত বর্হিভূত কোন কিছু বলা ও অমান্য করা প্রকৃত প্রস্তাবে কুফরীর নামান্তর।
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা আহজাব শরীফ উনার ২১ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার প্রথম অংশে বলেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ বিদ্যমান রয়েছে। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক ফরমান যাহা হযরত এরমাজ ইবনে জারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেছেন, তোমাদের জন্য আমর ও আমার হিদায়েত প্রাপ্ত খলীফাগণের সুন্নত অবশ্যই পালনীয়। এ সুন্নত আকড়িয়ে থাক এবং মাড়ির দাঁড় দিয়ে শক্তভাবে কামড়িয়ে ধর।” (মিশকাত) এই পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা ইহাই প্রতীয়মান হয় যে মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে আদেশ করেছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ অনুসরন করার জন্য। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ দিয়েছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নতগুলো দৃঢ়ভাবে পালন করার জন্য। কাজেই যারা বলেন যে, এত সুন্নত লাগেনা তামূলত তাদের অজ্ঞতা, স্বেচ্ছাচারীতা ও বিরোধতার নামান্তর। কারণ আল্লাহ পাক সূরা হাশর এর ৭নম্বর আয়াত শরীফ-এ বলেন, “আল্লাহ পাক উনার রসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা অবলম্বন কর এবং যা থেকে বারন করেছেন তা বর্জন কর। আল্লাহ পাক উনার এই আদেশ মুতাবেক কোন মুসলমানের মনগড়া কোন কথা বলার ও আমল করার অবকাশ নাই। কাজেই কোন মুসলমানের পক্ষেই এ ধরনের কুফুরীমূলক কথা বলে নিজের ও অন্যদের ঈমান নষ্ট করা উচিৎ নয়।
আবা-৩

0 Comments: