সুওয়াল : খোলা তালাক কি?
স্ত্রীর পক্ষে স্বামীকে তালাক দেয়া পবিত্র শরীয়ত উনার জায়িয কিনা জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল-মুহব্বত না হলে এবং স্বামী যদি তালাক না দেয় এই
অবস্থার সমাধানের জন্য শরীয়তে খোলা তালাকের বিধান জারি কর হয়েছে। স্ত্রীর মন
স্বামীর সাথে না মিললে প্রথমেই তালাক না চেয়ে সবর করবে এবং মিল-মুহব্বতের চেষ্টা
করবে। কিছুতেই যদি সবর না করতে পারে এবং মন না বসাতে পারে তবে স্বামীকে বলতে পারে
যে, আপনি কিছু টাকা পয়সা নিয়ে অথবা আপনার জিম্মায় যে মোহরের টাকা আছে তার দাবি আমি
পরিত্যাগ করলাম, আমাকে রেহাই দিন। অত:পর উক্ত মজলিসেই স্বামী যদি বলে, ‘আমি
তোমাকে ছাড়িয়া দিলাম’
তবে এটাতে স্ত্রীর উপর এক তালাক বায়েন হবে। স্বামী তাকে আর ফিরায়ে
আনার ক্ষমতা থাকবে না। অবশ্য ঐ মজলিসে স্বামী কিছু না বলে যদি চলে যায় বা স্বামী
কিছু বলবার পূর্বেই যদি স্ত্রী উঠে চলে যায়, তারপর স্বামী বলে, ‘আচ্ছা
আমি তোমাকে ছেড়ে দিলাম’
তবে এটাতে খোলা হবে না। অর্থাৎ একই স্থানে সুওয়াল-জাওয়াব
হওয়া চাই। এই উপায়ে স্ত্রী নিজেকে স্বামীর বিবাহ বন্ধন থেকে জুদা করে নেয়াকে ‘খোলা
তালাক’ বলে।
স্ত্রীর পক্ষে স্বামীকে
তালাক দেয়া পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে জায়িয নেই। হ্যাঁ তবে যদি তাফবীজে তালাক
অর্থাৎ স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ক্ষমতা দান করেন। যেমন, স্বামী-
স্ত্রীকে মৌখিক বললো বা লিখে দিলো, যদি আমি ছয় মাসের মধ্যে তোমার
কোনো খোঁজ খবর না নেই,
তবে আমি তোমাকে ক্ষমতা প্রদান করলাম, ছয় মাস
অতীত হয়ে গেলে যে কোনো সময় তুমি তোমার নফসকে (নিজেকে) তালাক দিতে পারবে। স্বামী
এরূপ বললে বা লিখে দিলে শর্ত পূর্ণ হওয়ার পর স্ত্রী নিজেকে তালাক দিয়ে ঐ স্বামী
হতে মুক্ত হবার ক্ষমতাশালি হবে বটে কিন্তু
তাফবীজ ছহীহ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত আছে। (১) স্বামীর কথার মধ্যে ‘নফস বা
নিজ’ শব্দের উল্লেখ হওয়া জরুরী। বিয়ের আকদ হওয়ার পর এরূপ কথা বলা বা লিখা জরুরী।
(২) বিয়ে আকদ হওয়ার পূর্বে এরূপ কথা লিখলে তাফবীজ ছহীহ হবে না এবং স্ত্রীর তালাল
নেওয়ার ক্ষমতাও হবে না। (৩) স্বামীর কথার মধ্যে অতীত বা বর্তমানকালের ক্রিয়া থাকা
চাই, নতুবা ভবিষ্যতকালের ক্রিয়া হলে তাফবীজ ছহীহ হবে না। (৪) স্বামী যে শর্ত করেছে, সেই শর্ত
পূর্ণ হয়ে যাওয়া চাই। শর্ত পূর্ণ না হলে স্ত্রীর তালাক নেবার ক্ষমতা হবে না। (৫)
স্বামীর শর্তের মধ্যে ‘যে কোনো সময় শব্দের উল্লেখ হওয়া চাই, নতুবা যখন শর্ত পূর্ণ হবে তখনই
সেই মজলিসেই যদি তালাক নেয়,
তবে তা তালাক হবে। মজলিস পরিবর্তন হয়ে গেলে আর তালাক নেবার
ক্ষমতা থাকবে না। অবশ্য যে কোনো সময় শব্দের উল্লেখ থাকলে শর্ত পূর্ণ হওয়ার পর যে
কোনো সময় ইচ্ছা তালাক নিতে পারবে।
0 Comments:
Post a Comment