সুওয়াল : আমার পিতা মাতা বিগত এক বৎসর হলো মারা গিয়েছেন। এবং আমার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর।
আমি কোনো পীর ছাহেব উনার মুরীদ হয়নি। অনেকে বলে, পীর ছাহেব উদাদের নিকট মুরীদ না
হলে বেহেশতে যাওয়া যাবে না। কথাটি সত্য না মিথ্যা জানতে বাসনা রাখি। এবং যদি মুরীদ
হতেই হয় তবে কোন্ ধরনের পীর ছাহেব বা দরবেশ উনাদের কাছে মুরীদ হতে হবে তা আপনাদের
কাছে জানতে চাই।
জাওয়াব : বেহেশতে যাওয়া না যাওয়া মহান আল্লাহ পাক উনার ইখতিয়ার। কাজেই পীর ছাহেব উনার
নিকট মুরীদ না হলে বেহেশতে যাওয়া যাবে না আর পীর ছাহেব উনার নিকট মুরীদ হলে
বেহেশতে যাওয়া যাবে এ কথা বলা শুদ্ধ হবে না। তবে একথা অবশ্যই সত্য যে, কোনো
খালিছ আল্লাহওয়ালা পীর ছাহেব উনার নিকট মুরীদ হলে এবং উনার তরীক্বায় কায়িম থাকলে
বেহেশতে যাওয়া সহজ হবে। আর কোথাও মুরীদ না হলে বেহেশতে যাওয়া বা নাজাত পাওয়া
সত্যিই কঠিন ব্যাপার। কেননা, পীর ছাহেব গ্রহণ করা ও ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করা উভয়াই ফরয।
কারণ, ইলমে তাছাউফ ছাড়া দিল ইছলাহ বা সংশোধন হয় না। আর যে দিল ইসলাহ বা সংশোধন হয়নি
তার আমল মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুলযোগ্য নয়। কাজেই, পীর
ছাহেব গ্রহণ করে ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করে দিল ইসলাহ বা সংশোধন করতে হবে। অথবা ইসলাহ
বা সংশোধণ করার কোশেশ করতে হবে। কেননা, পীর ছাহেব ছাড়া ইলমে তাছাউফ
শিক্ষা করা যায় না। এই জন্য হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার ‘কিমিয়ায়ে সা’আদাত’ কিতাবে, হযরত গাউসুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার ‘ফাতহুর রাব্বানী’
কিতাবে, হযরত ইসমাইল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাফসীরে ‘রুহুল
বয়ান’ ইত্যাদি আরো অনেক কিতাবে পীর ছাহেব গ্রহণ করা ফরয বলে
উল্লেখ করা হয়েছে।
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে জিজ্ঞাসা বরা হয়,
ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের জন্য কোন সঙ্গী উত্তম হবে? (আমরা কার
ছোহবত ইখতিয়ার করবো)। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, যাকে দেখলে মহান মহান আল্লাহ পাক
উনার কথা স্মরণ হয়,
যার কথা শুনলে দ্বীনি ইলম বৃদ্ধি পায় এবং যার আমল দেখলে
পরকালের আমল করতে ইচ্ছে হয় (পরকালের কথা স্মরণ হয়)। অর্থাৎ যিনি সীরত, ছূরত ও
আমল ইত্যাদিতে সম্পূর্ণ সুন্নত মুবারক উনার পাবন্দ।
হযরত
মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমুতল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, হুযূর!
লোকেরা আপনার পর কার ছোহবত ইখতিয়ার করবে বা কার নিকট মুরীদ হবে। তিনি বললেন, তোমরা
যাকে আল্লাহওয়ালা মনে করো উনার নিকট আসা-যাওয়া করতে থাকবে। যদি আসা যাওয়ার করার
কারণে দিলে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত মুবারক পয়দা হয়
ও নেক কাজ করার ইচ্ছে হয় এবং দুনিয়ার মুহব্বত দূর হয়ে যায়, তবে উনার
ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা ও উনার নিকট মুরীদ হওয়া জরুরী। আর যদি উনার নিকটে আসা
যাওয়ার করার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার ও হাবীবুল্লাহ, নূরে
মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত তো বৃদ্ধি হয়ই
না, বরং দুনিয়াবী মুহব্বত বৃদ্ধি পায় আর নেক কাজ করার ইচ্ছে হয় না বা আমলে
পরিবর্তন হয় না তবে উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা বা উনার কাছে আসা যাওয়া করা
সম্পূর্ণ নাজায়িয। আর তার নিকট মুরীদ হওয়া হারাম।
আবা-৪
0 Comments:
Post a Comment