জাওয়াব : হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবের
পাতিয়ালা রাজ্যের উমরগড় নিজামতের ফতেহগড় তহশীলে ৯৭১ হিজরী সনের ১৪ই শাওয়াল রোড
শুক্রবার সুবহে সাদিকের সময় জন্মগ্রহণ করেন। উনার পিতা ছিলেন শায়েশ আব্দুল আহাদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি চিশতীয়া তরীক্বার একজন বিশিষ্ট বুযূর্গ ছিলেন। উনার নাম
মুবারক ছিলো শায়খ আহমদ। উনার কুনিয়াত ছিলো আবুল বারাকাত বদরুদ্দিন। তিনি দ্বিতীয়
সহস্রাব্দের সংস্কারক ছিলেন। সেজন্য উনাকে মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি
আলাইহি বলা হয় এবং তিনি মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি নামেই মশহুর।
আখিরী রসূল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যা কিনা জামউল জাওয়াম ও জামেউস দোরার কিতাবে উল্লেখ করা
হয়েছে। উনার সংস্কারের বিশেষ বিশেষ দিকগুলো হচ্ছে বাদশাহ আকবর প্রবর্তীত দ্বীনে
ইলামীকে রদ করে বা মিটিয়ে দিয়ে তৎস্থলে ইসলামী আইন কানুন প্রবর্তন বা জারী করা।
কারণ, বাদশাহ আকবর কতিপয় উলামায়ে ‘সূ’
অর্থাৎ দুনিয়াদার আলিম যেমন, মোল্লা মোবারক নাগরী, আবুল ফজল, ফৈজী এবং
আরো অন্যান্যদের সহযোগিতায় হিন্দু পারসিক জৈন, জরথুষ্ট, রাজপুত্র
ইত্যাদি ধর্মের সমন্বয়ে এক নতুন ধর্ম প্রবর্তন করে, যার নাম রাখা হয় দ্বীনে ইলাহী।
দ্বীনে ইলাহীর অনুসারীদের চেলা বলা হতো। দ্বীনে ইলামের মধ্যে বিশেষভাবে সূর্য
পূঁজা, মাথায় টিকি রাখা ও মুখের দাড়ি কাটাকে প্রাধান্য দেয়া হতো। ইসলাম যাকে হালাল
বলেছে তাকে তারা হালাল বলতো। যেমন শুকর, বাঘ, ভল্লুক
ইত্যাদি জন্তুকে খাওয়া তাদের ধর্মে হালাল ছিলো। আর গরু, ছাগল, বকরী, ভেড়া
ইত্যাদি প্রাণী খাওয়া তাদের ধর্মে অর্থাৎ দ্বীনে ইলাহীতে হারাম ছিলো। এছাড়া তারা
শরাব পান করাকে হালাল মনে করে। তাদের কলেমা ছিলো লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবারু
খলীফাতুল্লাহ। দ্বীনে ইলাহীতে সালাম প্রথার পরিবর্তে সেজদার প্রথা জারী ছিলো।
দ্বীনে ইলাহীর মূল বিষয়ই ছিলো দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধিতা করা। তাছাড়া হযরত
মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইলমে তাছাউফ সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করে
দিয়ে সঠিক ধারণা তুলে ধরেন। এবং তাছাউফের মাকামাত সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য দান
করেন। যা পূর্বে কেউই উল্লেখ করেনি। তিনি সমস্ত তরীক্বাগুলিকে সংস্কার করেন। উনার
মর্যাদা মর্তবা সম্পর্কে অনেক কিতাবে অনেক কিছু বর্ণনা করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি
উল্লেখযোগ্য বর্ণনা পেশা করা হলো।
হযরত
মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মাবাদা
মা’আদ’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন, আমি একদিন আমার সঙ্গী-সাথীগণ উনাদের সাথে বসা ছিলাম, তখন আমার
দৃষ্টি স্বীয় খারাবীর দিকে পতিত হলো। কিছুক্ষণ এই অবস্থায় থাকার পর আমার মনে হলো, ফকিরী
দরবেশীর সাথে আমি পূর্ণভাবে সম্পর্কহীন। মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য যে অবনত হয়, মহান
আল্লাহ পাক তাকে উচ্চ করেন। এই পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী মহান আল্লাহ পাক তিনি
যেন আমাকে মাটি হতে উত্তোলন করলেন এবং আমি আমার অন্তকরণে শব্দ শুনতে পেলাম- আমি
আপনাকে ক্ষমা করলাম এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যারা আপনাকে মধ্যস্থতায় অথবা বিনা
মধ্যস্থতায় ওছীলা করবে তাদেরকেও ক্ষমা করে দিলাম। এই কথা আমার অন্তরে পুনঃ পুনঃ
নিক্ষিপ্ত হচ্ছিলো। যখন আমি সন্দেহহীন হলাম, তখন এটা প্রকাশ করার জন্য আদেশ
প্রাপ্ত হলাম। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ ইলহাম দ্বারা
এটাই প্রমাণিত হয়,
যারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত এ তরিক্বায় দালিখ হবে এবং মউতের
পূর্ব পর্যন্ত কায়িম থাবে তাদের পরকালে নাজাত নিশ্চিত।
হযরত
মুজাদ্দিদ আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি কিছুসংখ্যক কিতাবও রচনা করেন। তার মধ্যে
উল্লেখযোগ্য কিতাবসমূহ হচ্ছে, ‘মাকতুবাত শরীফ’, ‘মাআরীফে লাদুন্নিয়া’, ‘মাব্দা
মাআদ’, ‘মুকাশিফাতে আইনিয়া’
ইত্যাদি। কাইয়্যূমে আউয়াল হিসাবে তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
উনার সাত ছেলে এবং তিন মেয়ে ছিলো। উনার তৃতীয় ছেলে খাজা মুহম্মদ মাছূম উরওয়াতুল
উসক্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ওফাতের
পর গদিন্নশীন হন। তিনি কাইয়্যূমে ছানী ছিলেন।
হযরত
মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ১০৩৪ হিজরীর ২৮শে ছফর, বুধবার
পূর্বাহ্ণে ৬৩ বৎসর বয়সে ইন্তিকাল ফরমান। উনার মাজার শরীফ সিরহিন্দ শরীফ-এ
অবস্থিত।
আবা-৪
0 Comments:
Post a Comment