সুওয়াল: মাসিক হক পয়গাম আগষ্ট-৯৪ সংখ্যায় কোন এক জিজ্ঞাসার জবাবে লিখা হয়েছে, “পবিত্র কুরআন
শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যার প্রমাণ পাওয়া যায়না, তাকে
সুন্নত উনার মত আমল করতে থাকা এবং আসল সুন্নত বাদ দিয়ে তাকে প্রথা বানিয়ে নেয়া
দ্বীন উনার মধ্যে মধ্যে দ্বীন উনার নামে নব উদ্ভাবনের শামীল। আর দ্বীন উনার নামে
প্রত্যেক নব উদ্ভাবনই বিদয়াত। তা দ্বীন উনার কোন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট না হলে বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্ বা বর্জনীয় বিদয়াত বলে পরিগণিত হবে।”
আমরা
জানি নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
কখনো কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী ও কিসতি টুপি পরিধান করেননি, আর
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও কোনাফাড়া পাঞ্জাবী ও কিসতি
টুপির বর্ণনা নেই,
কিন্তু উপরোল্লিখিত পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও
আরো অনেকেই কোনাফাড়া পাঞ্জাবী ও কিসতি টুপি পরিধান করে থাকেন, এখন দেখা
যাচ্ছে কোনাফাড়া পাঞ্জাবী,
ও কিসতি টুপি সুন্নাত নয়। অথচ তারা নিয়মিত পরিধান করছে, তাদেরই
উসুল অনুযায়ী এ ধরনের পোশাক, প্রথা হিসেবে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বা বর্জনীয় বিদয়াত নয় কি? এ
ব্যাপারে কিতাবের দলীল দিয়ে জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব : তাদের বর্ণিত মত হতে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়- (১) কোন কিছুকে সুন্নাত বলতে হলে
তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে থাকতে হবে। (২) পবিত্র কুরআন
শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যা নেই, তা বিদয়াত। (৩) পবিত্র কুরআন শরীফ
ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যার নযীর নেই, এমন বিষয়কে প্রথা বানিয়ে সব সময়
আমল করতে থাকা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্। সুওয়ালে উল্লিখিত কোনাফাড়া পাঞ্জাবী ও কিসতি
টুপি কোন পর্যায়ের অন্তর্ভূক্ত, তা পর্যালোচনা করা যাক-
১। কোন
কিছুকে পবিত্র সুন্নত মুবারক বলতে হলে, তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে থাকতে হবে- কোনাফাড়া পাঞ্জাবী ও কিসতি টুপি সম্পর্কিত কোন বর্ণনা পবিত্র
কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে কোথাও নেই। কোনাফাড়া পাঞ্জাবী ও কিসতি টুপি
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা, হযরত তাবেঈন রহমতুল্লাহি আলাইহিম
উনারা, হযরত
তাবে-তাবেঈন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা কখনো পরিধান করেননি, তার একটি
দলীলও পাওয়া যাবেনা এবং পবিত্র সুন্নত মুবারক হিসাবে প্রমাণও করা যাবেনা। কারণ পবিত্র
কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কোথাও এর উল্লেখ নেই।
২। আর
যেহেতু কোনাফাড়া পাঞ্জাবী ও কিসতি টুপির বর্ণনা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও নেই, তাই এ
সমস্ত পোশাক বিদয়াত।
৩। পবিত্র
কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবীর নযীরও নেই বা
উল্লেখও নেই। তাই এ ধরণের পোশাককে প্রথা বানিয়ে আমল করতে থাকা যা আসল সুন্নত নয়, তা বিদয়াতে সাইয়্যিয়ার অন্তর্ভূক্ত। পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের কোর্তা ছিল কোনাবন্দ অর্থাৎ গোল। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ,
আবু দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ, সুনানুল কুবরা লি নাসাঈ ইত্যাদি) মিশকাত
শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনারা শুধু কোর্তা পরিধান করে নামায পড়েছেন। লুঙ্গি, সালোয়ার
ব্যতীত শুধু কোনাফাড়া কোর্তা পরিধান করা কখনই সম্ভব নয়, তাই হুযূর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোর্তা মুবারক ছিল গোল, আর এটাই
আসল সুন্নাত মুবারক। এ মূল আসল সুন্নাত মুবারক বাদ দিয়ে হিন্দুদের পোশাক কোনাফাড়া পাঞ্জাবী, যা তারা
ধুতির কোনা গুজিয়ে রাখার জন্য কোনাফাড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করে থাকে, এর আমল পবিত্র
দ্বীন উনার মধ্যে নব উদ্ভাবনের শামিল হিসেবে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ তো বটেই বরং তা হিন্দুদের
সাথে তাশাব্বুহ্ বা সাদৃশ্য হওয়ার কারণে হারাম হবে। কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী ও কিস্তি
টুপির ইতিহাস সম্পর্কে কিতাকে উল্লেখ করা হয়-
তাওয়ারিখে মোগল বইয়ে উল্লেখ আছে- দ্বীনে ইলাহীর প্রবর্তক, বাদশাহ আকবর যখন হিন্দুদেরকে
প্রাধান্য দিল, তখন হিন্দুরা বাদশাহর দরবারে আসা-যাওয়া শুরু করলো। বিশেষ করে যারা হিন্দুদের
ধর্মগুরু, তারা শুধু ধুতী ও পৈতা পরিধান করে টিকী রেখে আসা-যাওয়া করতো। যার কারণে তাদের
শরীরের অধিকাংশই অনাবৃত থাকতো। তখন বাদশাহ আকবর তাদেরকে বললো- আমার দরবারের মর্যদা
রক্ষা করার জন্যে তোমরা পোশাক পরিধান করে আসবে, তবে এমন পোশাক পরবে, যাতে
মুসলমানদের সাথে সাদৃশ্য না হয়। তখন হিন্দুরা ধুতীর সাথে কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী ও
কিসতি টুপি পরিধান করে বাদশাহর দরবারে আসতো। আর পাঞ্জাবীর কোনা ফাড়া রাখার
উদ্দেশ্য হলো- ধুতীর লেজটা যেন সহজেই পকেটে রাখা যায়। কারণ জামার কোনা যদি ফাড়া না
হয়, তবে কাপড় উপরে উঠে থাকবে, যা দৃষ্টিকটু ও অশালীন। আর টুপি সম্পর্কে ফতওয়ার কিতাবে
উল্লেখ করা হয়েছে যে,
“বুরনূস (উঁচু, লম্বা যা মাথার সাথে এঁটে থাকেনা)
টুপি পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ্ (তাহরীমী)।” (ফতওয়ায়ে ইতাবিয়া, তাতারখানীয়া, আলমগীরী
১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-১০৬) অতএব, কোনা
ফাড়া পাঞ্জাবী ও কিসতি টুপির বর্ণনা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
কোথাও নেই, তাই উক্ত পত্রিকায় বর্ণিত মত অনুযায়ীই উপরোক্ত আমলসমূহ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহর অন্তর্ভূক্ত, যা
অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
আবা-২১
0 Comments:
Post a Comment