সুওয়াল ঃ- জনৈক মাওলানা
সাহেব সুরা ওয়াল আছরের তাফসীর করতে গিয়ে এক পর্যায়ে রাব্বানা ------ আযাবান্নার-এর
উল্লেখ করে খুব জোরের সাথে বলে উঠলেন, দোযখ আগুনের তৈরি। যারা সিগারেট
খায় তারা টাটকা দোযখের আগুন খায়। রহ্মতের ফেরেস্তা কাছে আসে না, নামায
তিলাওয়াত কোন কাজে আসবেনা। আমার প্রশ্ন যদি তাই হয়, তাহলে ধুমপায়ী উম্মতে হাবীবীর কি
দশা হবে? দলীলসহ জানাবেন।]
জাওয়াব ঃ- ধুমপান করা
মাকরূহ্ তাহরীমী,
যা ইমামুল হিন্দ শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দূররে ছামীন কিতাবে, শাহ
আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার ফতোয়ায়ে আযিযী কিতাবে এবং হযরত আব্দুল হাই লক্ষনভী রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার ফতয়ায়ে আব্দুল হাই কিতাবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া মাজালিসুল আবরার, শারবুদ্দোখান ইত্যাদি কিতাবে
ধুমপান করা হারাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশ্নকারীর প্রশ্ন মোতাবেক মাওলানা সাহেব
যদি উপরোক্ত কথা বলে থাকেন,
তাহলে কথাগুলি শুদ্ধ হয়নি। কারণ যে সিগারেট বা বিড়ি খায়, সে টাটকা
দোযখের আগুন খাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কারণ দুনিয়াতে তো দোযখের আগুন নেই, তবে
হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে- “দোযখের আগুনের সত্তুর ভাগের এক ভাগ হচ্ছে দুনিয়ার আগুন।”
কাজেই যে ধুমপান করে সে আগুন খায় না, তবে
আগুনের ধুয়া খেয়ে থাকে। কোন কোন ফিক্বাহ্রে কিতাবে ধুমপান মাকরূহ্ তাহরীমী হওয়ার
কারণ স্বরূপ বলা হয়েছে যে-
১। ধুমপায়ী ব্যক্তি
ধন-সম্পদের অপচয় করে থাকে,
আর মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফে বলেছেন- “অপচয়কারী
শয়তানের ভাই।”
২। জাহান্নামীদেরকে আগুনের
দ্বারা শাস্তি দেয়া হবে,
আর ধুমপায়ী ব্যক্তি দুনিয়ায়ই আগুনের ধুয়া টেনে নিজেকে কষ্ট
দিয়ে থাকে।
৩। ধুমপায়ী ব্যক্তি নিজের
স্বাস্থের ক্ষতি করে থাকে।
৪। ধুমপায়ী ধুমপানের
দ্বারা তার মুখে এবং শরীরে দুগর্ন্ধ পয়দা করে থাকে। আর হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা
হয়েছে- “দুর্গন্ধ বা বদ গন্ধের কারণে কোন কোন ফেরেস্তা দূরে সরে চলে যায়।”
ফতয়ায়ে আশরাফিয়া ইত্যাদি ফিক্বাহ্রে কিতাবে ধুমপান আযাবের
কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই বলে ধুমপায়ীর কোন ইবাদত বন্দেগী কবুল হবে না বলে
কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। কারণ মহান আলাহ্ পাক তিনি কুরআন শরীফে বলেন-
فمن يعمل مثقال ذرة خيرايره ومن يعمل مثقال ذرة شرايره.
অর্থঃ- “যে
ব্যক্তি একবিন্দু নেকী করবে, সে তার প্রতিদান পাবে। আর যে এক বিন্দু বদী বা পাপ কাজ করবে, সেও তার
বদলা ভোগ করবে।” কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “কোন
ব্যক্তি যদি রমযান মাসে রোজা রাখে কিন্তু নামায না পড়ে, তাহলে
তার নামায না পড়ার দরুণ রোজা বাতীল বলে গণ্য হবে না। রোজা রাখলে রোজার সওয়াব পাবে, আর নামায
না পড়লে নামায না পড়ার গুণাহ তার উপর বর্তাবে।”
আরো উল্লেখ করা হয়েছে, “কোন
মহিলা যদি নামায পড়ে অথচ পর্দা করে না, তাহলে তার নামায বাতিল বলে গণ্য
হবে না। নামায পড়লে নামাযের সওয়াব সে পাবে, আর পর্দা না করার কারণে পর্দা তরক
করার গুণাহ্ তার উপর বর্তাবে। তদ্রূপ ধুমপায়ী ব্যক্তির নামায-কালাম, ইবাদত-বন্দিগী
ধুমপানের কারণে বাতিল বলে গণ্য হবে না। সে ইবাদত-বন্দেগী যা করবে, তার নেকী
আলাদা পাবে। আর ধুমপান করার কারণে মাকরূহ্ তাহরীমী বা হারামের গুণাহ্ তার উপর
বর্তাবে। (ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পাত্রিকায় আগামীতে ধুমপান
সম্পর্কে বিস্তারীত ফতওয়া দেব।)
আবা-২২
0 Comments:
Post a Comment