নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘ইলমে গইব’-এর অধিকারী নন’ একথা বলার অর্থ হলো- সরাসরি কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াত শরীফকেই অস্বীকার করা; যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

Related imageনূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘ইলমে গইব’-এর অধিকারী নন’ একথা বলার অর্থ হলো- সরাসরি কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াত শরীফকেই অস্বীকার করা; যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।


মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক আলিমুল গইব। তিনি তাঁর মনোনীত রসূলগণ ব্যতীত কারো নিকট ইলমে গইব প্রকাশ করেন না।” নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবশ্যই ‘আল্লাহ পাক প্রদত্ত ইলমে গইবের অধিকারী’, যা কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াত শরীফ দ্বারাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত। কাজেই তিনি ‘ইলমে গইব’-এর অধিকারী নন’ একথা বলা- সরাসরি কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াত শরীফকেই অস্বীকার করার শামীল। আর কোন মুসলমান কুরআন শরীফকে অস্বীকার করলে সে ঈমানদার থাকতে পারে না বরং সে কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হবে
‘গইব’ হচ্ছে এরূপ এক অদৃশ্য বস্তু বা বিষয়; যা মানুষ চোখ, নাক, কান ইত্যাদি ইন্দ্রিয়সমূহের সাহায্যে উপলব্ধি করতে পারে না এবং যা কোন দলীল-প্রমাণ ব্যতীত সুস্পষ্টভাবে ইলমের আওতায়ও আসে না। যেমন- জিন, ফেরেশতা, বেহেশত, দোযখ ইত্যাদি আমাদের জন্য গইব বা অদৃশ্য। কেননা এগুলোকে ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অথবা বিনা দলীলে শুধুমাত্র বিবেক বুদ্ধির দ্বারা অনুভব করা যায় না।
 ‘গইব’ দুই প্রকার। যথা- (১) যা যুক্তি প্রমাণভিত্তিক অর্থাৎ প্রমাণাদি দ্বারা অনুভব করা যায়। যেমন- বেহেশত, দোযখ মাখলুকাত, মহান আল্লাহ পাক-এর জাত, গুণাবলী এবং কুরআন শরীফ-এর আয়াতসমূহ দেখে এ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।
(২) যা দলীলের দ্বারাও অনুভব করা যায় না। যেমন- ক্বিয়ামত কখন হবে, মানুষ কখন মারা যাবে ইত্যাদি। আর এ দ্বিতীয় প্রকার গইবকেই ‘মাফাতীহুল গইব’ বলা হয়।
কুরআন শরীফ-এ বর্ণিত ‘আল্লাহ পাক-এর নিকটেই রয়েছে গইবের চাবিকাঠি’ এ আয়াত শরীফ দ্বারা এরূপ গইবকেই বুঝানো হয়েছে।
 গইব যত প্রকারই হোক না কেন মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন হচ্ছেন (আলিমুল গইব) অর্থাৎ সর্ব প্রকার গইব বা অদৃশ্য বস্তু বা বিষয়ের ইলম আল্লাহ পাক-এর রয়েছে। আল্লাহ পাক বিনা মধ্যস্থতায় বা কারো মাধ্যম ছাড়াই ইলমে গইবের অধিকারী। আর এরূপ ইলমে গইব সম্পর্কেই মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন, “আসমান-যমীনে আল্লাহ পাক ব্যতীত কারো ইলমে গইব নেই।” সূরা নমল/৬৫) অর্থাৎ বিনা মধ্যস্থতায় বা কারো মাধ্যম ব্যতীত যে ইলমে গইব তা শুধুমাত্র আল্লাহ পাক-এরই রয়েছে।
 পক্ষান্তরে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন “মুত্তালা আলাল গইব” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবকে সর্বপ্রকার ইলমে গইব দান করেছেন। যা কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াত শরীফ দ্বারাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত।
মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফ-এর সূরা জিন’ এর ২৬, ২৭ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “তিনি (আল্লাহ পাক) আলিমুল গইব, তাঁর ইলমে গইব তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত কারো নিকট প্রকাশ করেন না।” অর্থাৎ রসূলগণকে তিনি ইলমে গইব দান করেছেন। (সুবহানাল্লাহ)
এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে খাযিন ও বাগবী শরীফ-এ” উল্লেখ আছে যে, “যাঁকে তাঁর নুবুওওয়াত ও রিসালতের জন্য মনোনীত করেন, তাঁকে যতটুকু ইচ্ছা ইলমে গইব দান করেন। তাঁর ইলমে গইব তাঁর নুবুওওয়াতের প্রমাণ স্বরূপ এবং তাঁর মু’জিযাও বটে।” শাব্দিক কিছু পার্থক্যসহ অনুরূপ ব্যাখ্যা তাফসীরে রুহুল বয়ান, জালালাইন, ছাবী ও আযীযীতেও উল্লেখ আছে।
মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাক-এ ‘সূরা আলে ইমরান’-এর ১৭৯ নম্বর আয়াত শরীফ-এ আরো ইরশাদ করেন, “এটা আল্লাহ পাক-এর দায়িত্ব নয় যে, গইব বা অদৃশ্য সম্পর্কে তোমাদের (সাধারণ লোকদের) অবহিত করবেন। তবে আল্লাহ পাক তাঁর রসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা ইলমে গইব দান করেন।”
উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও মশহুর তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে জালালাইন শরীফে” উল্লেখ আছে যে, “তবে আল্লাহ পাক যাঁকে (রসূল হিসেবে) মনোনীত করেন, তাঁকে ইলমে গইব দান করেন। যেমন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মুনাফিকদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল।” উক্ত আয়াত শরীফ-এর এরূপ ব্যাখ্যা তাফসীরে বাইযাবী, খাযিন, কবীর, জুমাল, ছাবীসহ আরো বহু নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থে উল্লেখ আছে।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ইলমে গইবের অধিকারী তা ‘সূরা তাকভীর’-এর ২৪ নম্বর আয়াত শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত হয়। যেমন, মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গইবের সংবাদ প্রকাশে কৃপণতা করেন না।”
এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে “মায়ালিমুত তানযীল”- কিতাবে উল্লেখ আছে, আল্লাহ পাক বলেন, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ইলমে গইব রয়েছে। সুতরাং তিনি তোমাদেরকে তার সংবাদদানে কৃপণতা করেন না। বরং তোমাদেরকে তা শিক্ষা দেন এবং গইব-এর সংবাদ প্রদান করেন।” অনুরূপ তাফসীরে খাযীন ও বাগবীতেও উল্লেখ আছে।
মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা আর রহমান’-এর ১-৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “দয়াময় আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবকে কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি ইনসান সৃষ্টি করেন এবং তাঁকে বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।”
এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে খাযিনে’ উল্লেখ আছে, “বলা হয়েছে যে, ইনসান দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন হুযূর পাক ছল্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর বয়ান দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, যা ঘটেছে এবং যা ঘটবে, পূর্বাপর সমস্ত কিছুর ইলম আল্লাহ পাক তাঁকে দান করেছেন। কেননা তাঁকে পূর্ববর্তী-পরবর্তী এবং পরকালের সম্পর্কে সকল গইবী বিষয়ে ইলম দান করেছেন।” অনুরূপ তাফসীরে মায়ালিমুত তানযীল, হুসাইনী, ছাবীতেও উল্লেখ আছে।”
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো অবশ্যই এমনকি পূর্ববর্তী নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ সকলেই যে ইলমে গইবের অধিকারী ছিলেন তার সূস্পষ্ট প্রমাণও কুরআন শরীফ-এ রয়েছে।
যেমন, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “তোমরা কি খেয়েছ আর কি ঘরে রেখে এসেছ তা সবই আমি (হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম) বলে দিতে পারি।” (সূরা আলে ইমরান/৪৯)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন, “যখন তারা (হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম-এর সৈন্যবাহিনী) পিপিলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছলেন তখন এক পিপিলিকা বললো, হে পিপিলিকার দল! তোমরা তোমাদের ঘরে প্রবেশ কর। অন্যথায় হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম এবং তাঁর বাহিনী অজান্তেই তোমাদের পিষ্ট করে ফেলবেন। তার (পিপিলিকার) কথা শুনে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আমার রব! আপনি আমাকে সামর্থ্য দান করুন যাতে আমি আপনার সেই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি যা আপনি আমাকে এবং আমার পিতা-মাতাকে দান করেছেন।” (সূরা নমল/১৮,১৯)
উক্ত আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে রয়েছে, হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম পিপিলিকার সেই কথা তিন মাইল দূরবর্তী স্থান থেকে শুনেছিলেন যা তাঁর ইলমে গইবের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে জালালাইন, হাশিয়ায়ে শাইখযাদাহ)
কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফসমূহ ও তার নির্ভরযোগ্য তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারা অকাট্য ও সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহ পাক পূর্ববর্তী সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণকেই ‘ইলমে গইব’ দান করেছেন। আর বিশেষ করে তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইলমে গইবসহ সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল বিষয়ের ইলমই দান করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ের ইলম দেয়া হয়েছে। (মিশকাত শরীফ) অর্থাৎ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন, ‘মুত্তালা আলাল গইব’ যা উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহ এবং অন্যান্য বহু আয়াত শরীফ দ্বারাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
কাজেই ‘নূরে মুজাস্‌সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘ইলমে গইব’-এর অধিকারী নন’ একথা বলার অর্থ হলো- সরাসরি কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াত শরীফকেই অস্বীকার করা; যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

0 Comments: