নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে খুশি প্রকাশ করা-পর্ব-১
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
رضوان من الله أكبر (٧٢) سورة التوبة
খলিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক সবচেয়ে বড়। [সূরা তওবা শরীফ: ৭২]
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন
والله ورسوله أحق أن يرضوه إن كانوا مؤمنين (٦٢) سورة التوبة
মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (উনারাই সন্তুষ্টি লাভের) অধিক হক্বদার বা উপযুক্ত, যদি তারা মু'মিন হয়ে থাকে, তাহলে যেন (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে সন্তুষ্ট করে। [সূরা তওবা শরীফ: ৬২]
অর্থাৎ প্রত্যেক মু'মিনের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট করা বা খুশী করা। কেননা উনারাই এ বিষয়ে অধিক হক্বদার।
যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকই বড়। আর এই সন্তুষ্টি মুবারক পেতে হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সন্তুষ্ট করতে হবে। তাই এই আয়াত শরীফ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি মু'মিনদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনাকে সন্তুষ্ট করার সাথে সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও সন্তুষ্ট করার আদেশ মুবারক করে উনার দিকে রুজু করে দিয়েছেন।
এজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
إن الله وملائكته يصلون على النّبي : يا أيها الذين آمنوا صلوا عليه وسلموا تسليما (۵۶) سورة الأحزاب
নিশ্চয়ই খলিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত মুবারক পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম নূরানী শান মুবারকে ছলাত মুবারক পাঠ করো এবং সালাম দেয়ার মতো সালাম দাও। [সূরা আহযাব শরীফ: ৫৬]
মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করে খুশি প্রকাশার্থে নিজেও ছলাত মুবারক পাঠ করেন এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে দিয়ে ছলাত মুবারক পাঠ করান এবং মু'মিনদেরকেও নির্দেশ মুবারক দান করেছেন উনারা যেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে খুশি প্রকাশের লক্ষ্যে উনার দিকে রুজু হয়ে ছলাত মুবারক পাঠ করার মাধ্যমে উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করার কোশেশ করেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন,
إنا أرسلناك شاهدا ومبشرا ونذيرا (۸) لتؤمنوا بالله ورسوله وتعززوه وثوقروة وتسبحوه بكرة وأصيلا (9) سورة الفتح
(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে উপস্থিত বা সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদ দানকারী এবং সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। যাতে তোমরা (বান্দারা) মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনো এবং উনার গোলামীর আনজাম দাও এবং উনাকে সম্মান করো এবং ছানা-ছিফত করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়েমীভাবে। [সূরা ফাত্হ শরীফ: ৮-৯]
এখানে বলা হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত বা সাক্ষ্যদাতা, যারা খুশি প্রকাশের লক্ষ্যে উনার দিকে রুজু হয় তাদের জন্য তিনি সুসংবাদ প্রদান করেন আর যারা রুজু হয় না তাদেরকে ভয় প্রদর্শন বা সতর্ক করেন। তারা (বান্দারা) যেন মহান আল্লাহ পাক উনাকে বিশ্বাস করার সাথে সাথে উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও বিশ্বাস করে এবং সম্মান করে, উনার গোলামীতে আনজাম দেয় এবং সকাল-সন্ধ্যা উনার ছানা-ছিফতে মশগুল থাকে। যারা এরূপ আমল করবে তাদের পক্ষে মহান আল্লাহ পাক ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা সম্ভব হবে। বান্দাদের স্মরণ রাখতে হবে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত বা হাযির-নাযির। তিনি প্রত্যেকের আমল দেখেন, কে আমল করে আর কে করে না। এ প্রসঙ্গে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
وقل اعملوا فسيرى الله عملكم ورسوله والمؤمنون ، وستردون إلى
عالم الغيب والشهادة فينبئكم بما كنتم تعملون (۱۰۵)
আপনি বলুন, তোমরা আমল করো। অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল শাহিদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা এবং যারা হাক্বীক্বী মু'মিন উনারাও তোমাদের আমল দেখেন। যিনি দৃশ্য-অদৃশ্য সম্পর্কে জানেন উনার নিকট অচিরেই তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে অবহিত করবেন। [সূরা তওবা শরীফ: ১০৫]
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت عبد الله ابن عمر رضی الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن الله عز وجل قد رفع لي الدنيا فأنا أنظر إليها وإلى ما هو كائن فيها إلى يوم القيامة كانّما أنظر إلى كافي (i) Seine ও sirb o19) ) is و
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, শাহিদুন নবী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এ দুনিয়াকে আমার সামনে এরূপভাবে তুলে ধরেছেন যে, এই দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সৃষ্টি হবে সবকিছু আমি এরূপভাবে দেখি, যেভাবে আমার হাতের তালু মুবারককে দেখে থাকি। সুবহানাল্লাহ! [ত্ববারানী ও মিশকাত শরীফ]
অপর হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
عن أنس رضي الله تعالى عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يقول إستؤوا إستووا إستووا فوالذي نفسي بيده إني لأراكم من
خلفي كما أراكم من بين يدي. (رواه ابو داود)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায়ই বলতেন, তোমরা কাতার সোজা করো, তোমরা কাতার সোজা করো, তোমরা কাতার সোজা করো। ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! যার কুদরতি হাত মুবারকে আমার প্রাণ মুবারক। নিশ্চয়ই আমি আমার পিছনে আপনাদেরকে দেখি যেরূপ আমার সামনে আপনাদেরকে দেখি। [আবূ দাউদ শরীফ]
তাই বান্দাদের উচিত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাযির-নাযির জেনে, উনাকে পাওয়ার কারণে আমল করার মাধ্যমে খুশি প্রকাশ করা। আর বান্দাদের পক্ষে আমল করা তখনই সম্ভব হবে যখন তারা পবিত্র দ্বীন ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হবে। আর এজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
يا أيها الذين آمنوا ادخلوا في السلم كافة ولا تتبعوا خطوات الشيطان ، إنه لكم عدو مبين (۲۰۸) سورة البقرة
হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা, কেননা সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা বাক্বারা শরীফ: ২০৮]
মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু, তার ধোঁকায় পড়ে তার অনুসরণ করে দ্বীন ইসলামে মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হওয়া থেকে বিরত থেকো না। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নিয়ামত স্বরূপ দ্বীন ইসলাম নিয়ে আমাদের মাঝে তাশরীফ মুবারক এনেছেন।
خلفي كما أراكم من بين يدي. (رواه ابو داود)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায়ই বলতেন, তোমরা কাতার সোজা করো, তোমরা কাতার সোজা করো, তোমরা কাতার সোজা করো। ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! যার কুদরতি হাত মুবারকে আমার প্রাণ মুবারক। নিশ্চয়ই আমি আমার পিছনে আপনাদেরকে দেখি যেরূপ আমার সামনে আপনাদেরকে দেখি। [আবূ দাউদ শরীফ]
তাই বান্দাদের উচিত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাযির-নাযির জেনে, উনাকে পাওয়ার কারণে আমল করার মাধ্যমে খুশি প্রকাশ করা। আর বান্দাদের পক্ষে আমল করা তখনই সম্ভব হবে যখন তারা পবিত্র দ্বীন ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হবে। আর এজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
يا أيها الذين آمنوا ادخلوا في السلم كافة ولا تتبعوا خطوات الشيطان ، إنه لكم عدو مبين (۲۰۸) سورة البقرة
হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা, কেননা সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা বাক্বারা শরীফ: ২০৮]
মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু, তার ধোঁকায় পড়ে তার অনুসরণ করে দ্বীন ইসলামে মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হওয়া থেকে বিরত থেকো না। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নিয়ামত স্বরূপ দ্বীন ইসলাম নিয়ে আমাদের মাঝে তাশরীফ মুবারক এনেছেন।
বলেছেন। কারণ এই দ্বীন ইসলাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন। এছাড়াও উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার রচিত পবিত্র না'ত শরীফে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, “আপনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ, পবিত্র মক্কা শরীফ ও সারা দুনিয়াবাসীদের মাঝে হক্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য মহাসম্মানিত নবী এবং রসূলরূপে প্রেরণ করা হয়েছে”। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং এ সমস্ত দলীল আদিল্লাহ দ্বারা এটাই প্রমানিত হয় যে, সত্য দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক হয়েছে। তাই আমাদের উচিৎ হবে উনাকে পাওয়ার কারণে খুশি প্রকাশ করা। আর হাক্বীক্বী খুশি প্রকাশ করা হবে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করে তা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। অর্থাৎ চলা-ফেরা, উঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, কথা-বার্তা, আমল-আখলাক্ব, স্বভাব-চরিত্র ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করতে হবে। কাজেই, উনার দিকে রুজু না হয়ে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করা কখনো সম্ভব হবে না। উনার আদর্শ মুবারকই সম্মানিত দ্বীন ইসলামের বিধান তথা সম্মানিত শরীয়ত ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে রুজু হয়ে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করার তাওফীক্ব দান করেন। (আমীন)