ওহাবী সালাফীদের গুরু ইবনে তাইমিয়া ও আব্দুল ওহাব নজদীর ঈদে মীলাদুন্নবীর পক্ষে ফতোয়া
ওহাবী সালাফীদের গুরু ইবনে তাইমিয়া ও আব্দুল ওহাব নজদীর ঈদে মীলাদুন্নবীর পক্ষে ফতোয়া-
.
বর্তমানে যারা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্ননবীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারাই স্বীকার করবে তাদের একমাত্র পছন্দনীয় ইমাম হচ্ছে ইবনে তাইমিয়া ও আব্দুল ওহাব নজদী। এরা ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে শুরু করে সকল ইমাম মুস্তাহিদ আওলিয়ায়ে কিরামের বিরোধীতা করলেও ইবনে তাইমিয়া ও আব্দুল ওহাব নজদীর কোন বিরোধীতা করে না। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে তাদের কোন ফতোওয়া যদি নিজেদের মন মত না হয় তবে সেটা সযত্নে গোপন করে রাখে। কিন্তু সত্য কি গোপন রাখা যায়?
.
ওহাবী সালাফীদের গুরু ইবনে তাইমিয়া (১২৬৩খৃঃ – ১৩২৮খৃঃ) তার কিতাব “ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম” এ লিখেছে,
”যদি মিলাদ মাহফিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য করা হয়ে থাকে তবে আল্লাহ এ মুহাব্বত ও সম্মান প্রদর্শনের কারণে সওয়াব বা প্রতিদান দেবেন।”
(দলীলঃ ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ ৩১৩)।
.
একই কিতাবের অন্যত্র সে লিখেছে, “বরং ঐ দিনে (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মদিনে) পরিপূর্ণরূপে অনুষ্ঠান করা এবং এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, উত্তম নিয়ত এবং হুজুরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি মুহাব্বত প্রদর্শন বড় প্রতিদানের কারন হবে।” (দলীলঃ ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ ৩১৫)।
.
ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ ৩১৫।
মাজমা' ফাতাওয়ী : ইবনে তাঈমিয়া, খন্ড ২৩, পৃঃ ১৬৩।
.
ইবনে তাঈমিয়া আরও বলেছেন, 
“মীলাদুন্নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর দিনে মীলাদুন্নাবী (صلى الله عليه و آله و سلم) উদযাপনকারীরা তাদের বিশুদ্ধ কাজগুলোর জন্যে পুরষ্কৃত হবে, যেমন- ঈদে মীলাদুন্নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) উপলক্ষে তাদের সম্পাদিত আল্লাহর সে সকল ইবাদাতগুলো যা তারা করে থাকে”।
সূত্রঃ ঈক্তিদা সীরাত আল মুস্তাকিম।
.
তিনি আরো বলেছেন,
“....মুস্তাহীদই হোক, কিংবা মুস্তাহীদের মুকাল্লিদই হোক, যে মীলাদুন্নবীর আলোচনার চর্চা করবে তার জন্যে পুরষ্কার রয়েছে...এ চর্চায় সম্পাদিত কাজগুলো অবশ্যই শরীয়ত বিরোধী হবে না”।
সূত্রঃ ঈক্তিদা সীরাত আল মুস্তাকিম।
.
ইবনে তাইমিয়া নিজের সেই একই কিতাব ’আল-সীরাত আল-মুস্তাকীম’ (২৬৬ পৃষ্ঠা) পুস্তকে বলেছে:
“অনুরূপভাবে, খৃষ্টানদের যীশু খৃষ্টের (হযরত ঈসা আ:) জন্মদিন পালনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বরুপ হোক কিংবা মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এঁর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপই হোক, মুসলমান সমাজ মীলাদ অনুষ্ঠানে যা আমল করেন তাঁদের এই ধরনের এজতেহাদের জন্যে আল্লাহ পাক অবশ্যই তাঁদেরকে পুরস্কৃত করবেন।” 
.
ইবনে তাইমিয়া অতঃপর লিখেছে, 
“মীলাদ যদিওবা সালাফ (প্রাথমিক যুগের পুণ্যাত্মাগণ) কর্তৃক আচরিত হয় নি, তথাপি তাঁদের তা অনুশীলন করা উচিত ছিল। কেননা, শরীয়তের দৃষ্টিতে এর বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি ছিল না।” এখানে ইবনে তাইমিয়া ধর্মীয় গোঁড়ামি বাদ দিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم)-এঁর রেযামন্দি হাসিলের কথা বলেছে। 
[ঈক্তিদা]
.
ইবনে তাইমিয়া যা বলেছে ওই উদ্দেশ্যেই, অর্থাৎ “মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এঁর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ”- ই এই ভালোবাসা ও নেক উদ্যোগের জন্যে আল্লাহতা’লা আমাদের পুরস্কৃত করুন, আমীন! আল্লাহ্ তাকেও পুরস্কৃত করুন যে ব্যক্তি বলেছিল - “খৃষ্টানরা তাদের নবী সম্পর্কে যা দাবি করে তা বাদই দিন, আপনারা যেভাবে চান মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এঁর প্রশংসা করতে পারেন এবং তাঁর সত্তা মোবারকের প্রতি সকল গুণ/বৈশিষ্ট্য ও তাঁর মর্যাদার প্রতি সকল মাহাত্ম্য আরোপ করতে পারেন; কেননা তাঁর অসীম গুণাবলী ভাষায় ব্যক্ত করা যে কোনো বক্তার পক্ষেই সাধ্যাতীত।”
.
ইবনে তাইমিয়ার আরেকটি কথাতো এরুপ যে, তা কোন কোন ক্ষেত্রে শরীয়তসম্মত না হলেও সওয়াব পাওয়া যাবে; সেটি হলো, 
من كان له نية صالحة اثيب علي نيته وان كان الفعل الذي فعله ليس بمشروع- اذا لم يتعمد مخالفة الشرع-
অর্থাৎ নিয়ত ঠিক থাকলে আর শরীয়তের বিরোধিতা করার ইচ্ছা না থাকলে সে যে কাজ করছে, তা যদি শরীয়ত সম্মত নাও হয়, তবুও সে ছওয়াব পাবে। 
(ঈক্তিদা)
এখন বলুন, ইবনু তাইমিয়ার এ কথা দ্বারা আমাদের সমাজে প্রচলিত কী কী শরীয়তবিরোধী কাজে উৎসাহ দেয়া হল?
.
ওহাবী সালাফীদের নেতা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী (১৭০৩খৃঃ-১৭৯২খৃঃ) তার কিতাব “মুখতাসার সিরাতে রাসুল” এ লিখেছেন, “কট্টর কাফির আবু লাহাব রাসুলে কারিমে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র জন্মের সুসংবাদ শুনে মনের খুশীতে নিজ দাসী সুয়ায়বাহকে (রদ্বিয়াল্লাহু আনহা) মুক্তি দেয়ার কারনে সে প্রতি সোমবার (নবীজীর বেলাদত শরীফের দিন) দোযখে থেকেও শান্তিদায়ক পানীয় পেয়ে থাকে।
উল্লেখ্য , আব্দুল ওহাব নজদী আবু লাহাবের শাস্তি হ্রাসের বিষয় উল্লেখ করে মিলাদুন্ননবী পালনের গুরুত্বের কথা স্বীকার করে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, তিনি শামসুদ্দীন নাসের দামিস্কির কিতাব ‘মওরদুস সাদী ফি মওলদিল হাদী’ থেকে এ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে এবং সেখানে দামিস্কির রহমতুল্লাহি আলাইহি রচিত শেরটিও হুবহু উদ্ধৃত করেছে।
.
বিরোধিতাকারীদের কাছে জানতে চাই , আপনারা কুরআন শরীফের দলীল মানেন না… তাফসিরের দলীল মানেন না… হাদীস শরীফ এর দলীল মানেন না … ইমাম মুস্তাহিদের ঐক্যমত্যের দলীল মানেন না…. মানবেন না এটাই স্বাভাবিক। কারন অস্বীকারকারী দুনিয়াতে সব সময়ই ছিলো , কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। তাই বলে কি এখন নিজেদের মুরুব্বীদের ফতোওয়াও মানবেন না ? তাহলে মানবেন কাকে ?