সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিসা আলাইহিন্নাস সালামগণ! আপনারা অন্যান্য মহিলাদের মতো নন।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)
অর্থাৎ উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সমস্ত মহিলা উনাদের সাইয়্যিদা উনাদের মর্যাদা ও সম্মান সবার উপরে; এমনকি সমস্ত মু’মিন-মুসলমানগণ উনাদের উপরে উনাদের সম্মান রয়েছে, যেটা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে নাযিল করেছেন, “উনার মতো কোনো পুরুষও নন।” অর্থাৎ হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি এতো বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা হাদিয়া দান করেছেন যে, তিনি উনার যামানায় সমস্ত মুসলমান তথা সমস্ত পুরুষদের থেকে সম্মানিতা ও ফযীলতপূর্ণ। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম তিনিসহ সকল পুরুষ-মহিলা সকলের চেয়ে মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিমন্নাস সালাম উনারা। আর হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন সমস্ত মু’মিন-মুসলমানগণ উনাদের সম্মানিতা মাতা আলাইহিন্নাস সালাম।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঈমানদারগণ উনাদের নিকট উনাদের প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়। আর সম্মানিত উম্মাহাতুল মু’মিনীন উনারা হচ্ছেন মু’মিনগণ উনাদের মাতা।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন, সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে শুরু করে সমস্ত মু’মিন-মুসলমান সকলের নিকট সবচেয়ে প্রিয়, পছন্দনীয়। তিনি সকলের নিকট সবচেয়ে কাছে। সুবহানাল্লাহ! আর উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে শুরু করে সমস্ত মু’মিন-মুসলমান উনাদের মাতা। উনাদের মর্যাদা-মর্তবা হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরেই। সুবহানাল্লাহ!
উনাদের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে আরো উল্লেখ রয়েছে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন একদিকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী। আরেকদিকে উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। আর খাছ করে উনারা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা উম্মাহাতুল মু’মিনীন। সুবহানাল্লাহ!
উনাদের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে মুজাদ্দিদে আ’যম, গাউছুল আ’যম, রঈসুল মুহাদ্দিসীন ওয়াল মুফাসসিরীন ওয়াল ফুক্বাহা, জামিউল আলক্বাব, সাইয়্যিদুনা রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “আন নূরুর রবি’য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি জান্নাতে মহিলা উনাদের সাইয়্যিদা হবেন সত্যিই, তবে তিনি জান্নাতে অবস্থান করবেন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে। কিন্তু উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা জান্নাতে অবস্থান করবেন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনারও মাতা। কাজেই উনাদের ফযীলত-মর্যাদা, মর্তবা যে কত বেমেছাল রয়েছে তা সহজেই উপলব্ধি করার বিষয়।
উল্লেখ্য যে, উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা, ত্বাহিরাহ, ত্বইয়িবাহ, মুহসিনাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মর্যাদা-মর্তবা আরো অনেক অনেক ঊর্ধ্বে। উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হযরত মারইয়াম বিনতে ইমরান আলাইহাস সালাম তিনি উনার যামানার সমস্ত মহিলা উনাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠা।” আর সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত মহিলা উনাদের থেকে সর্বশ্রেষ্ঠা সকলের তিনি সাইয়্যিদাহ।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র বুখারী শরীফ, পবিত্র মুসলিম শরীফ)
অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আল উলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনার থেকে শুরু করে আখির পর্যন্ত সমস্ত নারীদের তিনি সাইয়্যিদা এমনকি তিনি সকল উম্মতেরই সম্মানিতা মাতা। তিনি সমস্ত পুরুষদের থেকেও তিনি ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! আর উনারই সন্তান সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি রয়েছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বংশ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই ত্বহিরাহ, ত্বয়্যিবাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ফাযায়িল-ফযীলত যা বর্ণনা করার অপেক্ষাই রাখে না। বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা উনাকে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা হাদিয়া করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার তরফ থেকে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি মুনকার-নাকীর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুওয়ালের জাওয়াব দিয়ে দেন
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিধান অনুযায়ী উনাকে গোসল মুবারক করিয়ে বরকতময় কাফন মুবারক পরিয়ে দাফন মুবারক সম্পন্ন করা হলো তখন অবশ্য জানাযা পড়ার বিধান নাযিল হয়নি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আপন কাপড় মুবারক দ্বারা উনাকে কাফন মুবারক পরালেন এবং নিজ হাত মুবারক-এ পবিত্র রওযা শরীফ-এ নামালেন।
উনার দাফন মুবারক যখন সম্পন্ন করলেন, কিছুক্ষণের মধ্যে সকলেই চলে গেল, কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পবিত্র রওযা শরীফ উনার পাশে অনেকক্ষণ অবস্থান করলেন, উনারপর উনার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দরবারে দোয়া করে চলে আসলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এ দৃশ্য দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে তো ইতঃপূর্বে কোনো মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে অবস্থান করতে দেখিনি। জাওয়াবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। উনার উপর আমার অনেক হক্ব ছিল। সাধারণত মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করার পর উভয় দিক হতে মাটি এসে মৃত ব্যক্তিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলে। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার কবরের আযাবের প্রতি অত্যন্ত ভয় ছিল। পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পূর্বে তিনি আমার থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন। আমি সেই ওয়াদা পালন করার জন্যই ঐরূপ করেছি। উনার দাফন মুবারক সম্পন্ন করার পর আমি মুনকার-নাকীর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুওয়ালের জাওয়াব দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে আমাকে জানালেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কী জন্য এখানে অপেক্ষা করছেন? আপনি যে কারণে এখানে অপেক্ষা করছেন তা তো ফায়ছালা হয়ে গেছে। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি মুনকার-নাকীর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম সালাম উনাদের ডেকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার তরফ থেকে সুওয়ালের জাওয়াব দিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আপনাকে এ সংবাদ জানানোর জন্যই আমাকে পাঠানো হয়েছে।
সর্বপ্রথম নামায আদায়কারি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার জীবদ্দশায় পাঁচ ওয়াক্তের নির্দিষ্ট নামাযসমূহ ফরয হয়নি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মি’রাজ শরীফ-এ যাওয়ার ঘটনাটি ঘটে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর। পবিত্র মি’রাজ শরীফ-এ পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়। উনার পূর্ব থেকে অবশ্য নামাযের বিধান ছিল। ফলে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নামায আদায় করতেন।
“বেদায়া” গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মি’রাজ শরীফ-এ যাওয়ার পূর্বে একদা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার নিকট আগমন করে যমীনের এক স্থানে স্বীয় পা দ্বারা আঘাত করেন। ফলে সেই স্থান হতে পানির ধারা প্রবাহিত হতে আরম্ভ করে। ফেরেশতা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি সেই পানি দ্বারা ওযূ করেন। অতঃপর দু’রাকায়াত নামায পড়েন। সেখান থেকে ঘরে ফিরে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হাত ধরে সেই ঝরণার নিকট নিয়ে যান। অতঃপর উনারা ওযূ করে দু’রাকায়াত নামায পড়েন।
‘হায়াতুছ ছাহাবা’ গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে, একদিন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি দেখতে পেলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনারা দু’জন নামায আদায় করছেন, নামায আদায়ের দৃশ্য দেখে সাইয়্যিদুনা হযরত কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি? হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার কাছে পবিত্র দ্বীন উনার দাওয়াত পেশ করলেন এবং আপাতত এ কথা অন্য কাউকে বলতে বারণ করলেন।
এ বর্ণনা দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, আখিরী উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নামায আদায়ের গৌরব অর্জন করেন। সুবহানাল্লাহ!
ত্বহিরাহ, ত্বইয়্যিবাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বিশেষ কিছু লক্বব মুবারক
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা প্রথমা জীবনসঙ্গিনী হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক মর্যাদা সম্পর্কে অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যেমন একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পূর্ববর্তী উম্মতগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠা মহিলা হচ্ছেন হযরত মারইয়াম বিনতে ইউনারান আলাইহাস সালাম আর পরবর্তী উম্মতগণ উনাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠা নারী হচ্ছেন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ আলাইহাস সালাম।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
উনার অগণিত লক্বব মুবারক থেকে বরকতময় বিশেষ কিছু লক্বব মুবারকের বর্ণনা এখানে উল্লেখ করা হলো।
১) ইমরাআতুন নাবিইয়ি- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা উম্মুল মু’মিনীন।
২) আউওয়ালু তাছদীক্বিন নবুওওয়াতী- নবুওওয়াত উনার প্রথম সত্যায়নকারিণী।
৩) ওয়াযীরাতু ছিদক্বীন- সঠিক পরামর্শদানকারিণী।
৪) আউওয়ালু খলক্বিল্লাহি আসলামা- সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারীণী।
৫) সাবিক্বাতু নিসায়িল আলামীনা- সমস্ত মহিলা উনাদের মধ্যে অগ্রগামী।
৬) ছাহিবু সালামিম মিনাল্লাহি- মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সালাম প্রাপ্তা।
৭) মুতামাওওয়ালাতুন- প্রচুর সম্পদশালিনী। (তথ্যসূত্র: কিতাবুল আলক্বাব ২য় খ-)
রাহবারে আউওয়াল
কুবরা কুবরা কুবরা কুবরা
কুবরা কুবরা কুবরা
তিনি মা’বুদের মাহবুবা, যাওজাতুম মুতাহহারায়ে মুস্তফা
হন রহমে কায়িনাত, রাহনুমায়ে পেয়ারা।
হলেন প্রথমা মুসলিমা, দ্বীন ঈবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আযীমা
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, রহমতী বুশরা।
মহিলা জাতির শিরোমণি, শান শওক্বতে তিনি
হন রাহবারে আউওয়াল, আখলাকে মুনিরা।
প্রিয় নবীজির সংসার, কুবরাহীতেই গুলজার
সাইয়্যিদায়ে আতহার, আউওয়াল আখিরী ত্বাহিরা।
উনার কোলে উপহার, নবীজির বংশ বিস্তার
কুল্লু আলমী মাঝার, নিদানেরই সাহারা।
মামদূহ মুজাদ্দিদ মহান, তিনি কুবরাহী সন্তান
ইমামে মুসলিম প্রধান, মামদূহ সাইয়্যিদে সেরা।
হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বংশ জারি রয়েছে
হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদাসমূহের মধ্যে অনন্যতম একটি মর্যাদা হলো, তিনিই একমাত্র উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার মুবারক রেহেম শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন ব্যতিত সব ক’জন আওলাদ বা সন্তান যমীনে তাশরীফ নেন এবং উনাদের মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নছব বা বংশধারা যমীনে জারি রয়েছে। অবশ্য উনার পুত্র সন্তানগণ উনাদের মধ্যে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে যমীনে আগমন করেন।
হযরত মুহাদ্দিছীন ও মুয়াররিখীনগণ উনারা এ বিষয়ে একমত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কন্যা সন্তানগণ উনারা ছিলেন সর্বমোট চারজন। উনাদের মধ্যে প্রথম হলেন হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম, দ্বিতীয় হলেন হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম, তৃতীয় হলেন হযরত উম্মে কুলছূম আলাইহাস সালাম এবং চতুর্থ হলেন হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পুত্র সন্তানগণ উনাদের সংখ্যার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। উনার অন্যতম কারণ হলো, পুত্র সন্তানগণ উনারা সকলে শৈশবকালেই বিদায় নিয়েছিলেন। তবে এক্ষেত্রে অধিকাংশ আলিম উনাদের অভিমত হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পুত্র সন্তানগণ উনারাও ছিলেন মোট চারজন। তন্মধ্যে তিনজন পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফ-এ এবং অপর একজন বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফ-এ। এই হিসেবে উম্মুল মু’মিনীন আল উলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ চার বানাত ও তিন আবনা মিলে মোট সাতজন সন্তান পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন। ছেলেদের মধ্যে প্রথম ছিলেন হযরত ক্বাসিম আলাইহিস সালাম। এই নামানুসারেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘আবুল ক্বাসিম’ (হযরত ক্বাসিম আলাইহিস সালাম উনার পিতা) নামে সম্বোধিত হতেন। আন নূরুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বাসিম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের পূর্বেই পবিত্র মক্কা শরীফ-এ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং মাত্র প্রায় দু’ বছর বয়স মুবারক-এ সেখানেই পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
দ্বিতীয় হলেন আন নূরুছ ছানী সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বইয়িব আলাইহিস সালাম। তিনিও শৈশবেই পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
তৃতীয় হলেন আন নূরুছ ছালিছ সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বাহির আলাইহিস সালাম। তিনিও পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর শৈশবেই পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
চতুর্থ হলেন আন নূরুর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মদীনা শরীফ হিজরতের পরে এবং প্রায় ১৮ মাস দুনিয়াবী হায়াত মুবারক-এ থাকার পর তিনিও শৈশবেই পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, ছেলে আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার পর কাফিরেরা বিশেষতঃ আছ ইবনে ওয়ায়িল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আবতার বা নির্বংশ বলে উপহাস করতে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ‘আল কাওছার’ নাযিল করেন- অর্থাৎ হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আপনার শত্রুরাই লেজকাটা, নির্বংশ।
এখানে স্মরণযোগ্য যে, যদিও অন্যান্য ব্যক্তির বংশধারা ছেলে সন্তানের মাধ্যমে জারি থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নছব বা বংশ মুবারক জারি থাকার বিষয়টি ব্যতিক্রম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার নছব বা বংশ মুবারক জারি থাকবে আমার মেয়ে সাইয়্যিদাতুন নিসা আন নূরুর রবি’য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে। অর্থাৎ উনার দু’ছেলে হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার এবং হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাদের মাধ্যমে। যাঁরা উভয়ে পবিত্র জান্নাত উনার যুবকগণ উনাদের সাইয়্যিদ। উনাদের বংশদ্ভূত সন্তানগণই সাইয়্যিদ বা আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এছাড়া সাইয়্যিদাতুন নিসা আন নূরুর রবি’য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার অন্যান্য সন্তানগণ উনাদের দ্বারা যে বংশ মুবারক জারি রয়েছে উনারা ফাতিমী নামে পরিচিত। আর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহাস সালাম উনার অন্যান্য আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের আওলাদগণ উনাদের মধ্যমে যে বংশ মুবারক জারি রয়েছে উনারা আলূবী নামে পরিচিত।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্রতম বিছালী শান প্রকাশ উনার পূর্ব মুহূর্তে মুবারক ওয়াকিয়া
যদিও সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মুল মু’মিনীন, উম্মুল কায়িনাত আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নিম্নোক্ত বিষয়গুলো থেকে ছিলেন সম্পূর্ণরূপে পবিত্র থেকে পবিত্রতম। উনারপরও বর্ণনায় যা এসেছে তা হচ্ছে- বয়স মুবারক বৃদ্ধি পাওয়ায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আনজামে ব্যঘাত হচ্ছে কিনা এ আশঙ্কায় বারবার দুঃখ প্রকাশ করতেন এবং মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দরবারে ক্রন্দন করে ফরিয়াদ মুবারক করতেন, ওগো পরম করুণাময় মহান আল্লাহ পাক! আমি আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আপনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক যেন করে যেতে পারি এইজন্য তাওফীক চাই।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নিজের মারীদ্বী শান অনুভব করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সারা জীবনের খিদমত মুবারক সম্পর্কে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। যদিও তিনি তা থেকে ছিলেন সম্পূর্ণরূপে পবিত্র থেকে পবিত্রতম। সুবহানাল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে সান্তনা মুবারক প্রদান করে উনার জীবনের সর্বশক্তি মুবারক দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি অতুলনীয় খিদমত মুবারক, সীমাহীন দান-বদান্যতা মুবারক ও সীমাহীন আত্মত্যাগ মুবারক সম্পর্কীয় কথা উল্লেখ করে পরকালে উনার সৌভাগ্যের সুসংবাদ শুনিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এমনি মুহূর্তে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি অন্তিম শয্যাবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আরজ মুবারক করেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম! আমার বিদায় বা পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পর আপনি দয়া করে আমার গোসল মুবারক দিবেন এবং আপনার কাপড় মুবারক দ্বারা আমার কাফনের কাপড় প্রস্তুত করবেন বলে আমি আবেদন মুবারক করছি। আর আমার কবর মুবারক-এ হযরত মুনকার ও নকীর ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের সুওয়ালের জাওয়াব মুবারকও দিয়ে দিবেন, এ মর্মে আরজু মুবারকও পেশ করছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আপনার সমস্ত আরজু মুবারকই আমি অবশ্য অবশ্যই পূরণ করবো।
কিছুক্ষণ পরেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম কোল মুবারক-এ ও হাত মুবারক উনার তালু মুবারক-এ মাথা মুবারক রেখে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্রতম ইতমিনানের সাথে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্রতম দীদার মুবারক-এ প্রস্থান করেন।
অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পর পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিধান অনুযায়ী গোসল মুবারক করিয়ে বরকতময় কাফন মুবারক পড়িয়ে দাফন মুবারক সম্পন্ন করা হলো তখন অবশ্য জানাযা মুবারক পড়ার বিধান নাযিল হয়নি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উনার গোসল মুবারক সম্পন্ন করে উনার কাপড় মুবারক দ্বারা উনাকে কাফন মুবারক পরালেন এবং নিজ হাত মুবারকে কবর মুবারক উনার মধ্যে নামালেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার দাফন মুবারক সম্পন্ন করলেন, উনার কিছুক্ষণের মধ্যে সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা চলে গেলেন, তখন তিনি উনার কবর মুবারক উনার পাশে অনেকক্ষণ অবস্থান করলেন, উনারপর উনার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দরবারে দুয়া মুবারক করে চলে আসলেন। হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ দৃশ্য দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে তো ইতঃপূর্বে কোনো মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে অবস্থান করতে দেখিনি। জাওয়াবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি মুহব্বতের চির সঙ্গিনী।
উনার উপর আমার অনেক হক্ব রয়েছে। মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করার পর উভয় দিক হতে মাটি এসে মৃত ব্যক্তিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলে। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি কবরের আযাবের প্রতি অত্যন্ত ভয় করতেন। অবশ্যই তিনি তা থেকে পবিত্র থেকে পবিত্রতম। পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পূর্বে তিনি আমার থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন। আমি সেই ওয়াদা পালন করার জন্যই ঐরূপ করেছি। উনার দাফন মুবারক সুসম্পন্ন করার পর আমি হযরত মুনকার-নাকীর ফেরেশতাদ্বয় আলাইহিমাস সালাম উনাদের সুওয়ালের জাওয়াব মুবারক দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম তিনি এসে আমাকে জানালেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কি জন্য এখানে অপেক্ষা করছেন? আপনি যে কারণে এখানে অপেক্ষা করছেন তা তো ফায়ছালা হয়ে গেছে। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি হযরত মুনকার-নাকীর ফেরেশতাদ্বয় আলাইহিমাস সালাম উনাদের ডেকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার তরফ থেকে সুওয়ালের জাওয়াব মুবারক দিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ। আপনাকে এ সংবাদ জানানোর জন্যই আমাকে পাঠানো হয়েছে। এখান থেকে মৃত ব্যক্তিকে তালক্বীন দেয়ার সূত্রপাত ঘটে। যা করাটা খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।
পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার তারিখ:
আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের পর দশম বর্ষে পবিত্র ১৭ই রমাদ্বান শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পঁয়ষট্টি বছর বয়স মুবারকে ইহজগৎ থেকে বিদায় নেন। তিনি ৪০ বছর দুনিয়াবী বয়স মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম হুজরা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। তিনি প্রায় সুদীর্ঘ ২৫ বৎসর পর্যন্ত দুনিয়াবী জিন্দেগী মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম খিদমত মুবারক-এ নিজের জীবন মুবারক অতিবাহিত করেন। সুবহানাল্লাহ! পনের বৎসর আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের পূর্বে এবং দশ বৎসর আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের পর। উনাকে ‘হুযূন’ নামক স্থানে সমাহিত করা হয়। যা বর্তমানে ‘জান্নাতুল মুয়াল্লাহ’ নামে পরিচিত। উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক জীবনের অন্যতম একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটে।
তিনি হচ্ছেন পবিত্রতম আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যমণি। আর পবিত্রতম আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সীমাহীন শান-মান, বুযুর্গী, মর্যাদা, খুছুছিয়ত ও পবিত্রতা মুবারক- সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার অনেক পবিত্র আয়াত শরীফে এবং অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে। যা মানুষের বর্ণনা, কল্পনা ও চিন্তাশক্তির সীমাহীন ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি ক্ষেত্রে উনার অবদান মুবারক অপরিসীম, উনাকে ব্যতীত পবিত্র দ্বীন ইসলাম, পবিত্র ঈমান ও মুসলমান উনাদের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। আয় আল্লাহ পাক! আপনি উনার প্রতি সর্বোচ্চ হুসনে-যন, মুহব্বত, তায়াল্লুক, নিসবত, ইতায়াত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি ও হাক্বীক্বীভাবে অনুসরণের জন্য বর্তমান যামানার যিনি খাছ লক্ষ্যস্থল, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, রাহবারে আ’যম, হাবীবে, নূরে মুকাররম, জামিউল আলক্বাব, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, আস্ সাফ্ফাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার- ছাহিবাতুল মুকাররমাহ, উম্মুল খায়ের, আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আ’লাম, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, মহিলাজাতির মুক্তির দিশারী, ত্বহিরা, ত্বইয়িবা, নূরে মুকাররম, নূরে মুয়াযযাম, আখাছ্ছুল খাছ আওলাদুর রসূল, ক্বায়িম মাক্বামে হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম, উম্মুল উমাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক ছোহবত, মুহব্বত, তায়াল্লুক, নিসবত ও হাক্বীক্বীভাবে অনুসরণ-অনুকরণ করার আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

0 Comments:
Post a Comment