“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ
উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি
সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া”-
পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র
দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের
মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত
থাকা ফরয
যে কোন একটি পবিত্র মাযহাব ইন্তিকাল পর্যন্ত
মান্য করা ফরয-ওয়াজিব এবং পবিত্র মাযহাব পরিবর্তন করা হারাম
বা নাজায়িয হওয়ার প্রমাণ
পূর্ব প্রকাশিতের পর
‘মাযহাব’ শব্দের সমার্থবোধক লাফ্য বা শব্দ পবিত্র কুরআন
শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অনেক স্থানেই রয়েছে
৮. سنة (সুন্নত) : سنة শব্দটি একবচন। এর বহুবচন سنن সুনান। সুন্নত শব্দটিও মাযহাব শব্দের সমার্থবোধক। মাযহাব শব্দটির
মতোই সুন্নত উনার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- পবিত্র সুন্নত, হাদীছ শরীফ, পন্থা, রীতি, নীতি,
নিয়ম, আইন,
পথ, স্বভাব,
আদর্শ, সঠিক পথ,
মাযহাব, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ ইত্যাদি। আর পারিভাষিক
দৃষ্টিতে সুন্নত শব্দটিও মাযহাব শব্দের মতোই অর্থ প্রদান করে।
মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার কালামুল্লাহ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
(২৩৭)
سنة من قد ارسلنا قبلك من رسلنا و لا تجد لسنتنا
تحويلا. (سورة بنى اسراءيل شريف ۷۷ الاية شريف)
অর্থ : আপনার পূর্বে আমি যত রসূল আলাইহিমুস
সালাম উনাদেরকে পাঠিয়েছি, উনাদের ক্ষেত্রেও
এরূপ নিয়ম ছিল। আপনি আমার নিয়মের কোনই ব্যতিক্রম পাবেন না। (পবিত্র সূরাতু বানী ইসরাঈল
শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৭)
পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার অনেক পবিত্র আয়াত
শরীফ উনাদের মধ্যে সুন্নত শব্দটি নিয়ম-নীতি,
পদ্ধতি, মত,
পথ, আদর্শ,
মাযহাব, ইসলাম,
দ্বীন, শরীয়ত ইত্যাদি অর্থে এসেছে।
اهل السنة والجماعة
(আহলুস
সুন্নত ওয়াল জামায়াত) : اهل অর্থ: দল, ফিরক্বা,
মিল্লাত, পরিবার-পরিজন, স্ত্রী, অধিকারী, যোগ্য,
উপযুক্ত, বাসিন্দা, অধিবাসী, লোকজন ইত্যাদি। السنة অর্থ: সুন্নত, আদর্শ,
পবিত্র
হাদীছ শরীফ, রীতি, নীতি,
নিয়ম, পথ,
পন্থা, স্বভাব ইত্যাদি। الجماعة অর্থ: দল, জামায়াত,
উম্মত, সম্প্রদায়, বড় দল ইত্যাদি।
একত্রে اهل السنة والجماعة অর্থ: পবিত্র সুন্নত উনার পূর্ণ
অনুসারী বড় হক্ব দল। আর এই বড় হক্ব দলই হচ্ছেন- মাযহাব চতুষ্ঠয় অর্থাৎ হানাফী, মালিকী,
শাফিয়ী
ও হাম্বলী বা হানাবালাহ। সুবহানাল্লাহ!
তাকলীদ তথা সম্মানিত মাযহাব উনার মহামান্য
ইমাম উনাকে অনুসরণ করার উদ্দেশ্য
পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস
তথা দীনী শরীয়াত উনার বিশুদ্ধ ফায়সালা মোতাবেক সুশৃঙ্খলভাবে ইসলামী হুকুম-আহকাম
পালন করা এবং এ পদ্ধতিতে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাস্সাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক
অর্জন করাই তাকলীদ তথা সম্মানিত মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের যে কোন একজন মহামান্য ইমাম
রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে অনুসরনের
উদ্দেশ্য।
সম্মানিত মাযহাব ও তাকলীদ উনাদের আলোচ্য বিষয়
সম্মানিত মাযহাব ও তাকলীদ উনাদের আলোচ্য বিষয়
হলো চারটি। যথা:
(২৩৮)
مواضيع الـمذهب اربعة القران الـمجيد و الحديث
الشريف اى السنة الشريفة و اجماع الامة و القياس الصحيح.
অর্থ: পবিত্র মাযহাব উনার আলোচ্য বিষয়
চারখানা: ১. পবিত্র কুরআন মাজীদ ২. পবিত্র হাদীছ শরীফ তথা পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ৩.
পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ ও ৪. পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াছ শরীফ।
তাকলীদ তথা মাযহাব মান্য করার উপকারীতা
হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম
উনাদেরকে তাকলীদ করা তথা অনুসরণ করা অর্থাৎ মাযহাব মান্য করার দ্বারা অনেক উপকার ও
ফায়দা অর্জিত হয়। যেমন: ১. বিশুদ্ধভাবে সম্মানিত শরীয়াত পালন করা যায়, ২. পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনাদের সঠিক তাফসীর ও ব্যাখ্যা জেনে আমল করা যায়, ৩. ইজমাউল উম্মাহ ও ছহীহ ক্বিয়াছ উনাদের মাসয়ালা গুলো সহজেই
জানা যায় এবং সে অনুযায়ী আমল করতে সুবিধা হয়,
৪.
মানসূখ বা রহিত বিধান জেনে তা বর্জন করা এবং নাসিখ বা রহিতকারী বিধান জেনে তা গ্রহণ
করা সহজ ও সম্ভব হয়, ৫. মহান আল্লাহ
তায়ালা রব্বুল আলামীন উনার ও উনার রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টিমূলক কাজগুলো করা সহজ হয়। সুবহানাল্লাহ।
সম্মানিত মাযহাব কতটি ও কি কি ?
ফিক্হী মাযহাব চারটি আর আক্বায়িদী মাযহাব দুটি। নি¤েœ সে সম্পর্কে
আলোচনা করা হলো-
আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার
ফিক্হী মাযহাব
‘আহলুস্ সুন্নাত
ওয়াল জামায়াত’ তথা ‘আল ফিরক্বাতুন্ নাজিয়াহ’ ফিক্হী মাসয়ালার দৃষ্টিতে ৪ ভাগে বিভক্ত।
১. মাযহাবুল হানাফী বা হানাফী মাযহাব:
ইমাম আ’যম হাকিমুল হাদীছ
তাবিয়ী হযরত ইমাম নু’মান বিন ছাবিত আবূ
হানীফা কুফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ: ৮০ হিজরী, ওফাত শরীফ: ১৫০ হিজরী) উনার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত
মাযহাব হচ্ছে ‘হানাফী মাযহাব’। ইহাই সর্বশ্রেষ্ঠ মাযহাব। সারাবিশ্বে ৯০ শতাংশ লোক এ
সম্মানিত মাযহাব উনার অনুসারী।
২. মাযহাবুল মালিকী বা মালিকী মাযহাব:
তাবে’
তাবিয়ীন
হযরত ইমাম মালিক বিন আনাস মাদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ: ৯৩ মতান্তরে ৯৫
হিজরী, বিছাল শরীফ: ১৭৯ হিজরী)
উনার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাযহাব হচ্ছে ‘মালিকী মাযহাব’।
৩. মাযহাবুশ্ শাফিয়ী বা শাফিয়ী মাযহাব:
হযরত ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ মুহম্মদ শাফিয়ী
আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ: ১৫০ হিজরী, বিছাল: ২০৪ হিজরী) উনার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত
মাযহাব হচ্ছে ‘শাফিয়ী মাযহাব’।
৪. মাযহাবুল হাম্বালী বা হাম্বালী মাযহাব:
হযরত ইমাম আহমদ বিন মুহম্মদ বিন হাম্বাল
বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ: ১৬৪ হিজরী, বিছাল শরীফ: ২৪১ হিজরী) উনার কর্তৃক
প্রতিষ্ঠিত মাযহাব হচ্ছে ‘হাম্বালী বা
হানাবালা মাযহাব’।
যেমনটি কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-
(২৩৯)
مذاهب الاسلام اربعة الحنفى وهو مذهب السلطان
لعصرنا والشافعى والحنبلى والـمالكى. (افرات الـموارد فى فصح العربية والشوارد
الجلد ۱ الصفحة ۳۷۵)
অর্থ: ‘মাযাহিবুল ইসলাম’ তথা পবিত্র দীন ইসলাম উনার সঠিক পথ বা
পন্থাসমূহ চারটি। ১. হানাফী মাযহাব, ইহাই আমাদের যুগে
মাযহাব উনার বাদশা। ২. শাফিয়ী মাযহাব ৩. হাম্বালী মাযহাব তথা হানাবালা মাযহাব ও
৪. মালিকী মাযহাব। (আফরাতুল মাওয়ারিদ ফী ফুছাহিল আরাবিয়াহ ওয়াশ শাওয়ারিদ ১ম খ-
৩৭৫ পৃষ্ঠা)
(২৪০)
مذاهب الاسلام: اربعة الحنفى والشافعى والـمالكى
والحنبلى. (التعريفات الفقهية للمفتى الاعظم السيد محمد عميم الاحسان الـمجددى
البركتى الحنفى الـماتريدى رحمة الله عليه الصفحة ۴۷۵)
অর্থ : মাযাহিবুল ইসলাম তথা পবিত্র দীন ইসলাম
উনার সঠিক ও পূর্ণ পথ বা পন্থাসমূহ চরটি। ১. হানাফী ২. শাফিয়ী ৩. মালিকী ও ৪. হাম্বালী। (আত তা’রীফাতুল ফিকহিয়্যাহ- মুফতী আ’যম সাইয়্যিদ মুহম্মদ আমীমুল ইহসান মুজাদ্দিদী বারকাতী হানাফী মাতুরীদী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি ৪৭৫ পৃষ্ঠ)
স্মরণীয় যে, এই চার সম্মানিত মাযহাবই হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত। প্রত্যেক মুসলমান
নর ও নারীর জন্য এই চার সম্মানিত মাযহাব উনার যেকোন একটি সম্মানিত মাযহাব উনার
অনুসরণ করা ফরযে আইন। সম্মানিত মাযহাব প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকার করা হারাম ও কুফরী। তথাকথিত সালাফী, আহলে হাদীছ, ওহাবী ও লা মাযহাবীরাই মূলতঃ বাতিল ৭২ ফিরক্বার অন্তর্ভূক্ত। যে ব্যক্তি যে
সম্মানিত মাযহাব উনার অনুসারী তাকে আজীবন সেই সম্মানিত মাযহাব উনারই আনুগত্য করে
যেতে হবে। সম্মানিত মাযহাব পবিবর্তন করা হারাম ও নাজায়িয। ইহাই ছহীহ মত।
আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বায়িদী
মাযহাব
মূলত: ‘আহলুস্ সুন্নাত
ওয়াল জামায়াত’ তথা ‘আল ফিরক্বাতুন্ নাজিয়াহ’ উনার আক্বায়িদের মৌলিক মাসয়ালাসমূহ নির্ণয় করেন ইমাম আ’যম হাকিমুল হাদীছ তাবিয়ী হযরত ইমাম আবূ হানীফা নু’মান বিন ছাবিত বিন জাওতী কূফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। সেখান থেকে পরবর্তীতে
সে মাসয়ালাসমূহের দলীলভিত্তিক বিস্তারিত রূপ দান করেন-
১. হযরত ইমাম আবূ মানছূর মাতুরীদী হানাফী
রহমতুল্লাহি আলাইহি। (বিছাল শরীফ: ৩৩৩ হিজরী)
২. হযরত ইমাম আবুল হাসান আশয়ারী শাফিয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি। (বিছাল শরীফ: প্রায় ৩৩০ হিজরী)
তাই ‘আহলুস্ সুন্নাত
ওয়াল জামায়াত’ বা ‘আল ফিরক্বাতুন্ নাজিয়াহ’ উনার আক্বায়িদী মাযহাব হলো ২টি।
১. আক্বায়িদুল মাতুরীদী: হানাফী মাযহাবের
অনুসারীগণ এ আক্বীদায় বিশ্বাসী।
২. আক্বায়িদুল্ আশয়ারী: মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বালী মাযহাবের অনুসারীগণ এ
আক্বীদায় বিশ্বাসী।
তাকলীদ তথা অনুসরণ উনার প্রকারভেদ
তাক্বলীদ তথা অনুসরণ সাধারণত: দুই প্রকার। যথা :
১. التقليد الشرعى আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়াত
সমর্থিত অনুসরণ:
পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস
উনাদের দলীল-আদিল্লাহ মুতাবিক ইসলামী শরীয়াত উনার যাবতীয় হুকুম-আহকাম মেনে চলাকে ‘আত-তাকলীদুশ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ বলে। উনাকে ‘তাকলীদুল ইসলাম’, ‘তাকলীদুদ্ দ্বীন’ ও ‘তাকলীদুদ্ দালায়িল
আরবায়াহ’ অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম উনার
চারখানা দলীল উনাদের অনুসরণও বলা হয়ে থাকে।
২. التقليد غير الشرعى আত-তাকলীদু গাইরুশ্ শারয়ী তথা
শরীয়াত বহির্ভুত অনুসরণ:
পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস
উনাদের দলীল-আদিল্লাহ উনাদের বিপরীতে নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো শায়তান ও তাগূতী
যাবতীয় বাতিল মত-পথ মেনে চলাকে ‘আত-তাকলীদু গাইরুশ
শারয়ী তথা শারীয়াত বহির্ভুত অনুসরণ’
বলে। একে ‘তাকলীদুন নাফ্স’
ও ‘তাকলীদুল হাওয়া’
তথা
প্রবৃত্তির অনুসরণও বলা হয়ে থাকে।
১. ‘আত-তাক্বলীদুশ্
শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ উনার আলোচনা ও
বিধান
التقليد الشرعى আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়াত
সমর্থিত অনুসরণ:
পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমাউল উম্মাহ ও ছহীহ ক্বিয়াস উনাদের
দলীল-আদিল্লাহ মোতাবেক ইসলামী শরীয়াত উনার যাবতীয় হুকুম-আহকাম মেনে চলার জন্য কারো
অনুসরণ করাকে ‘আত-তাকলীদুশ শারয়ী
তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ বলে। উনাকে ‘তাকলীদুল ইসলাম’,
‘তাকলীদুদ্
দীন’ ও ‘তাকলীদুদ্ দালায়িলিল আরবায়াহ’ অর্থাৎ দীন ইসলাম উনার চারখানা দলীল উনাদের অনুসরণও বলা হয়ে
থাকে।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ,
হযরত
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস
সালাম উনাদেরকে, হযরত আহলু বাইত
শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে, হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদেরকে এবং উলিল্ আমর তথা হযরত ইমাম মুজতাহিদ-আউলিয়া
কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে অনুসরণ করাই ‘আত-তাকলীদুশ্ শারয়ী তথা শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’।
সম্মানিত শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ করা ফরযে আইন। আর শারীয়াত
বহির্ভুত অনুসরণ করা হারাম ও নাজায়িয। কারণ,
শারীয়াত
সম্মত অনুসরণ করতে নির্দেশ করা হয়েছে। শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ করা যে ফরয-ওয়াজিব এ
সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে যথেষ্ট আলোচনা
উল্লেখ আছে। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
(২৪১)
اهدنا الصراط الـمستقيم صراط الذين انعمت عليهم.
(سورة الفاتحة رقم الاية ۶-۵ )
অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ
তায়ালা! আপনি আমাদেরকে সঠিক পথ দান করুন। এমন পথ যে পথের পথিক উনাদেরকে আপনি নিয়ামত
দিয়েছেন।” (পবিত্র সূরাতুল ফাতিহাহ
শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫-৬)
(২৪২)
انعم الله عليهم من النبيين والصديقين والشهداء
والصالـحين. (سورة النساء رقم الاية ۶۹)
অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি নিয়ামত হাদিয়া
করেছেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাদেরকে, হযরত ছিদ্দীক্বীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনাদেরকে, হযরত শুহাদা রহমতুল্লাহি
আলাইহিম উনাদেরকে ও হযরত ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে। (পবিত্র সূরাতুন
নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৯)
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে চার শ্রেণী
উনাদের মত-পথ তালাশ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত: উক্ত চার শ্রেণী দুই
শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। যথা: ১. হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাদের
পথ, ২. ছিদ্দীক্বীন, শুহাদা ও ছালিহীন উনারা উম্মত উনাদের তবক্বা।
আর দ্বিতীয় তবক্বার উনারা হলেন- ইমাম, মুজতাহিদ, ফক্বীহ, উলামায়ে কিরাম, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম প্রমুখ।
অতএব উনাদেরকে অনুসরণ করাই ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা সম্মানিত শারীয়াত উনার অনুসরণ’।
মহান
আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
(২৪৩)
واذ قيل لـهم امنوا كما امن الناس.
অর্থ: যখন তাদেরকে বলা হয় তোমরা ঈমান আনো, যেরকম অন্যান্য ব্যক্তিগণ ঈমান এনেছেন। (পবিত্র সূরাতুল
বাক্বারাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)
এখানে আন-নাস বা ব্যক্তি বলতে হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ উনাদের অনুসরণে
উনাদের মতো ঈমান গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। ইহাই ‘আত-তাক্বলীদুশ
শারয়ী তথা সম্মানিত শারীয়াত উনার অনুসরণ’।
মহান
আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
(২৪৪)
يايها الذين امنوا اطيعوا الله و اطيعوا الرسول
و اولى الامر منكم فان تنازعتم فى شىء فردوه الى الله و الرسول ان كنتم تؤمنون
بالله و اليوم الاخر ذلك خير و احسن تاويلا. (سورة النساء شريف ۵۹ الاية شريف)
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা
উনার আনুগত্য করো, সাইয়্যিদুনা নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
অনুসরন-অনুকরণ করো এবং তোমাদের মধ্যে যাঁরা উলিল আমর অর্থাৎ যিনি বা যাঁরা মহান
আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পরিপূর্ণ অনুগত এবং অনুসরণ ও অনুকরণকারী উনাদের অনুসরণ
করো।
তোমাদের
মধ্যে যদি কোন বিষয়ে মতবিরোধ হয়, তাহলে উক্ত বিষয়ে
মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ও উনার রসূল,
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে প্রত্যাবর্তন করো। অর্থাৎ যে উলিল আমর উনার
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দলীল বেশী সে উলিল আমর উনাকে
ইত্বায়াত করতে হবে। যদি তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ও শেষ দিবসের প্রতি
বিশ্বাস স্থাপন করে থাকো। এটাই কল্যাণকর ও পরিনতির দিক দিয়ে উত্তম। (পবিত্র সূরাতুন্
নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে و اولى الامر منكم অর্থাৎ
আদেশদাতা উনাদেরকে অনুসরণ করার দ্বারা
ইমাম, মুজতাহিদ, ওলীআল্লাহ, ফক্বীহ, মুফতী ও উলামা
কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহহিম উনাদেরকে ইত্তিবা তথা অনুসরণ করতে নির্দেশ করা হয়েছে। আর ইহাই ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’। সুবহানাল্লাহ।
মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার কালামুল্লাহ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
(২৪৫)
والسابقون الاولون من الـمهاجرين و الانصار و
الذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم و رضوا عنه و اعدلـهم جنت تجرى تحتها الانـهر
خالدين فيها ابدا ذلك الفوز العظيم. (سورة التوبة شريف ۱۰۰ الاية شريف)
অর্থাৎ: যাঁরা সর্বপ্রথম মুহাজিরীন
(হিজরতকারী) ও আনছার (হিজরতকারী উনাদেরকে সাহায্যকারী) হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুম উনাদের মধ্যে অগ্রগামী এবং পরবর্তীতে উত্তমভাবে উনাদেরকে যাঁরা (ইমাম, মুজতাহিদ, উলামা-আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহিম) অনুসরণ করেছেন; মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনাদের প্রতি
সন্তুষ্ট হয়েছেন, আর উনারাও উনার
প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা উনাদের জন্য এমন জান্নাত প্রস্তুত করে
রেখেছেন যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত আছে,
উনারা
সেখানে চিরকাল অবস্থান করবেন। এটাই হলো মহান সফলতা। (সূরাতুত্ তাওবাহ শরীফ- ১০০)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ
রব্বুল আলামীন তিনি তিন শ্রেণীর মহান ব্যক্তিত্ব উনাদের প্রতি যে সন্তুষ্ট রয়েছেন
সে বিষয়টি ঘোষনা করেছেন। উনারা হলেন: অগ্রগামী হযরত মুহাজিরীন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুম, অগ্রগামী হযরত আনছার
ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ও উলিল্ আমর তথা হযরত ইমাম, মুজতাহিদ, উলামা-আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহিম। সুবহানাল্লাহ।
মূলত: এ সুমহান মর্যাদা উনারা পেয়েছেন ছুহবাত
ও ইত্তিবাহ তথা অনুসরণ-অনুকরণ উনাদের মাধ্যমে। আর ইহাই তো ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’। সুবহানাল্লাহ।
(২৪৬)
يايها الذين امنوا اتقوا الله و كونوا مع الصادقين.
(سورة التوبة شريف ۱۱۹ الاية شريف)
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা
উনাকে ভয় করো এবং ছাদিক্বীন উনাদের সঙ্গী হয়ে যাও। (পবিত্র সূরাতুত্ তাওবাহ
শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)
এখানে সঙ্গী হওয়ার অর্থ হলো- তোমরা উলিল আমর
অর্থাৎ সত্যবাদী, ইমাম, মুজতাহিদ, উলামা কিরাম ও আওলিয়া কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের
ছোহবত অর্জন করো এবং উনাদেরকে অনুসরণ করো। আর ইহাই ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’। সুবহানাল্লাহ।
মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার কালামুল্লাহ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
(২৪৭)
الرحمن فاسئل به خبيرا. (سورة الفرقان شريف ۵۹ الاية شريف)
অর্থ: তিনিই রহমান। উনার সম্পর্কে যিনি অবগত, উনাকেই জিজ্ঞাসা করুন। (পবিত্র সূরাতুল ফুরক্বান
শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)
এখানে যাঁকে বা যাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করতে বলা
হয়েছে তিনি বা তাঁরা হলেন উম্মাতের মধ্যে: হক্কানী-রব্বানী উলামা কিরাম, আউলিয়া কিরাম, ইমাম, মুজতাহিদ, ফক্বীহ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। আর ইহাই ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’। সুবহানাল্লাহ।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
করা হয়েছে-
(২৪৮-২৫০)
عن انَس بْنَ مَالِكٍ رضى الله عنه يَقُولُ:
سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ يَقُولُ : انَّ أُمَّتِى لاَ
تَجْتَمِعُ عَلى ضَلاَلَةٍ، فَاذَا رَايْتُمُ اخْتِلاَفًا فَعَلَيْكُمْ
بِالسَّوَادِ الاعْظَمِ. (سنن ابن ماجة كتاب الفتن باب السواد الاعظم الـمولف:
حضرت الامام ابن ماجة ابو عبد الله محمد بن يزيد القزوينى رحمة الله عليه المتوفى
: ۲۷۳ هجرى.
مسند احمد بن حنبل رحمة الله عليه. مشكوة الـمصابيح)
অর্থ: ছাহাবী হযরত আনাস বিন মালিক
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুনেছি যে,
তিনি
ইরশাদ মুবারক করেছেন: নিশ্চয়ই আমার প্রকৃত উম্মত উনারা গুমরাহীর উপর একমত হবেন না। যখন তোমরা উনাদের
মধ্যে মতবিরোধ দেখতে পাবে, তখন তোমাদের জন্য
ফরয-ওয়াজিব হলো বড় দল অর্থাৎ আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ উনাদের অনুসরণ করা। (সুনানে ইবনু মাজাহ
কিতাবুল ফিতান বাবুস্ সাওয়াদিল আ’যম লেখক: হযরত
ইমাম ইবনু মাজাহ আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইয়াযীদ ক্বাযবীনী হাম্বালী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওফাত মুবারক: ২৭৩ হিজরী,
মুসনাদ
আহমাদ বিন হাম্বাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি,
মিশকাতুল
মাছাবীহ)
এখানে ‘আস-সাওয়াদুল আ’যম তথা বড় দল’
বলতে
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ উনার অনুসারীদেরকে বুঝানো হয়েছে। এই দলটিই মূলত: হানাফী, মালিকী,
শাফিয়ী
ও হাম্বালী মাযহাব উনার হক্কানী-রব্বানী ইমাম, মুজতাহিদ ও উলামা কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে উনাদেরকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। আর ইহাই ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’। সুবহানাল্লাহ।
এভাবে এসম্পর্কে অসংখ্য দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে। আসল কথা হলো-
শারীয়াত সম্মত অনুসরণ ছাড়া আর কোন অনুসরণ জায়িয নেই।