সুমহান পুত ও পবিত্র বরকতময় ১১ ই রবিউছ ছানী শরীফ


 
সুমহান পুত ও পবিত্র বরকতময় ১১ ই রবিউছ ছানী শরীফ
সুমহান পবিত্র ফাতিহায়ে ইয়াযদহম শরীফ
হযরত ইমাম গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবুবে সুবহানী হযরত বড়পীর ছাহেব শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিছাল শরীফ দিবস
উনার নুরুদ দরাজাত মুবারকে জানাই লক্ষ কোটি বেশুমার ছলাত ও সালাম ।



এক নজরে হযরত ইমাম গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবুবে সুবহানী হযরত বড়পীর ছাহেব শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত পরিচিতি মুবারক-

আজ , পবিত্র ফাতিহায়ে ইয়াযদহম শরীফ ।  সুমহান ১১ ই রবিউছ ছানী শরীফ

হযরত ইমাম গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবুবে সুবহানী হযরত বড়পীর ছাহেব শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার পবিত্র বিছাল শরীফ দিবস।


উনার পবিত্র সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-

সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি ৪৭১ হিজরীতে তৎকালীন ইরানের পবিত্র জিলান নগরে বিলাদত শরীফ লাভ করেন। উনার পিতার নাম মুবারক হযরত সাইয়্যিদ আবু সালিহ মুসা জঙ্গি দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি। (যেহেতু তিনি যুদ্ধ প্রিয় ছিলেন সেহেতু উনাকে জঙ্গি দোস্ত বলা হয়) উনার মাতার নাম মুবারক হযরত সাইয়্যিদাহ উম্মুল খায়ের আমাতুল জাব্বার ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা। তিনি পিতার দিক থেকে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং মাতার দিক থেকে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনাদের বংশধর।

সাওয়ানেহ উমরী মুবারক-

হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার বিলাদত শরীফ থেকে বিছাল শরীফ পর্যন্ত আমরা যে ওয়াকিয়া বা ইতিহাস দেখতে পাই; তার মধ্যে হাজারো নছীহত বা ইবরত রয়ে গেছে।
মূলত হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার সম্পর্কে পূর্ববর্তী আউলিয়ায়ে কিরামগণ ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। আওলাদে রসূল এবং আহলে বাইত, উনাদের অন্তর্ভুক্ত হযরত ইমাম জাফর সাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি (যিনি হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার পীর সাহেব ছিলেন) তিনি উনার ‘কাশফুল গুয়ূব’ নামক কিতাবে বড়পীর হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার সম্পর্কে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, ১৪৮ হিজরী সনের ১১ই রজব জুমুয়ার রাত্রে আমি যথারীতি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও যিকির আযকার করে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখতে পাই, আমি আলমে নাসুত থেকে (পৃথিবী হতে) ঊর্ধ্বারোহণ করে আলমে মালাকুত এবং আলমে মালাকুত থেকে আলমে জাবারুতে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে এক বিশাল ময়দান দেখতে পেলাম। সেই ময়দানের এক পার্শ্বে মারোয়ারীদ পাথরের একটা তাঁবু টাঙানো।

সেখান থেকে আল্লাহ পাক, উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমার কাছে এসে বললেন, “হে হযরত ইমাম জাফর সাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি! আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনি আপনাকে ডেকেছেন।

আমি সাথে সাথে নূরে মুজাসসাম, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার নিকট গেলাম। দেখলাম সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের পবিত্র রূহ মুবারক সেখানে উপসি'ত আছেন। এবং সমস্ত ফেরেশতা কাতারবন্দি হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন।

একটা খুব সুন্দর আসনের মধ্যে আল্লাহ পাক, উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসা অবস্থায় আছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনি আমাকে দেখামাত্র বসার জন্য ইশারা করলেনন। আমি বসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম উনার পার্শ্বে এসে বসলেন। ইত্যবসরে দেখা গেল দুটি রূহ মুবারক এসে নবীদের নবী, রসূলদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার ডান জানু মুবারক ও বাম জানু মুবারক-এ বসলেন।

বসার পর সারওয়ারে কায়িনাত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন: “হে হযরত ইমাম জাফর সাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি! আজ থেকে তিনদিন পর আপনি আমার কাছে চলে আসবেন। আমি চাই আপনি আলমে জাবারুতের অবস্থা দর্শন করে তা আলমে নাসুতের মধ্যে লিপিবদ্ধ করে আসেন। একথা বলার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনি বললেন: আপনি কি জানেন এ রূহ দু’টি কার? আমার ডান জানু মুবারক-এ যাঁর রূহ মুবারক দেখতে পেলেন তিনি আমার থেকে পাঁচশত বৎসর পর পৃথিবীতে আগমন করবেন

তিনি হলেন গাউসুল আ’যম হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আমার বাম জানু মুবারক-এ যে রূহটি আছে তিনি হলেন- হযরত আলী আহমদ সাবের কালিয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। আল্লাহ পাক, উনার এ দুই খাছ মকবুল বান্দা দ্বারা ইসলামের অনেক খিদমত নিবেন।

তারপর পার্শ্বে বসে থাকা অবস্থায় হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুদ্বয়কে বললেন: আপনাদের শাহাদাতের পর আমি আমার উম্মতের কথা ভেবে চিন্তিত হই। তখন আল্লাহ পাক, উনার এই দুই মাহবুব বান্দা দ্বারা আমাকে সুসংবাদ দান করেন। হযরত ইমাম জাফর সাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি উক্ত স্বপ্ন দেখার পর ঘুম থেকে জেগে উঠলাম এবং সকালে উঠে ‘কাশফুল গুয়ূব’ কিতাবে তা লিপিবদ্ধ করেনলাম। এই ‘কাশফুল গুয়ূব’ কিতাব তিনি বিছাল শরীফ লাভের পূর্বেই লিখেছিলেন এবং সত্যিই তিনি তিনদিন পরেই বিছাল শরীফ লাভ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজীউন।)

 একবার এক লোক বড়পীর সাহেব গাউসুল আ’যম হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, হুযূর! আপনি কি মুজাদ্দিদে যামান? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর বলা হল, আপনি কি সুলতানুল আরিফীন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবার বলা হল, আপনি কি কুতুবুল আলম? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবার বলা হলো আপনি কি গাউসুল আ’যম? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন সে নিশ্চুপ হয়ে গেল। তিনি বললেন, আপনার কি আর কোন লক্বব জানা নেই? লোকটি বললো: জ্বি-না, আমার আর কিছু জানা নেই। তখন তিনি বললেন- আমার মর্যাদা তারও উপরে, তারও উপরে, তারও উপরে। সুবহানাল্লাহ!
মোটকথা নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগণের পর একজন মানুষের পক্ষে যত মাকাম অর্জন করা সম্ভব আল্লাহ পাক গাউসুল আ’যম হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনাকে তা দিয়েছেন। এটা সত্যিই উনার জন্য এক বিশেষ মর্যাদা। (বলা হয়ে থাকে আল্লাহ পাক, উনার এমন ওলী কমই অতিবাহিত হয়েছেন, যাঁরা গাউসুল আ’যম হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার রূহানী তাওয়াজ্জুহ বা নিছবত হাসিল করেননি)

গাউসুল আ’যম হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার বয়স মুবারক যখন প্রায় আঠার বছর ছিল, তখন একবার তিনি আরাফার দিবসে গরু নিয়ে নিজের জমি চাষ করেনতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় সেই গরুটি উনার দিকে ফিরে বললেন, হে হযরত আব্দুল কাদির রহমতুল্লাহি আলাইহি! এই কাজের জন্য আপনাকে সৃষ্টি করা হয়নি এবং এই কাজের জন্য আপনাকে আদেশ করা হয়নি।

এই ঘটনায় তিনি চিন্তিত হয়ে বাড়িতে ফিরে গেলেন। এতদিন পর্যন্ত স্থানীয় মক্তবে যা কিছু শিখেছিলেন তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু শিক্ষার জন্য তিনি বাগদাদ যেতে মনস্থ করলেনন। (তিনি মাতৃরেহেম শরীফ থেকে অধিকাংশ মতে আঠার পারার হাফিয হয়েই বিলাদত শরীফ লাভ করেন। অতঃপর অতি শৈশবেই পূর্ণ কুরআন শরীফ হিফয করেন)। সুবহানাল্লাহ!

হযরত গাউসুল আ’যম শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বাগদাদে পৌঁছেই তৎকালীন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মাদরাসা নিযামিয়াতে ভর্তি হন। দুনিয়ার বিশিষ্ট উলামায়ে কিরামগণ এই মাদরাসায় তালিম দান করেনতেন। এই শ্রেষ্ঠ উলামায়ে কিরামগণের নিকটেই হযরত গাউসুল আ’যম শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বাহ, দর্শন, সাহিত্য, ইতিহাস, তর্কবিদ্যা, ইলমে কালাম, ইলমে উরূজ ইত্যাদি প্রত্যেকটি বিষয়ে খোদা প্রদত্ত তীক্ষ্ণ মেধা শক্তি বলে মাত্র নয় বৎসরের মধ্যেই ব্যুপত্তি লাভ করেন। তিনি বাগদাদে শুধু কিতাবী ইলমই অর্জন করেননি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি কালীন বাগদাদের শ্রেষ্ঠ বিখ্যাত আউলিয়ায়ে কিরামগণের ছোহবতও ইখতিয়ার করেন।


হযরত গাউসুল আ’যম শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ক্রমান্বয়ে চারটি বিবাহ করেছিলেন। উনাকে বিবাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার নির্দেশে বিবাহ করেছেন। উনার মোট ৪৯ জন সন্তান-সন্ততি ছিলেন। উনাদের মধ্যে ২৭ জন পুত্র সন্তান এবং ২২ জন মেয়ে সন্তান ছিলেন। উনারা সকলেই অতি উঁচু দরজার ওলীআল্লাহ ছিলেন। উনাদের অনেক বড় বড় সম্মানিত উপাধি ছিল।

হযরত গাউসুল আ’যম শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রায় সারা বৎসরই রোযা থাকতেন। সাধারণ রুটি খেতেন। অনেক সময় খুব মূল্যবান কাপড় পরতেন। অনেক সময় অল্প দামের কাপড়ও পরতেন। অর্থাহযরত গাউসুল আ’যম শায়খ সাইয়্যিদ মহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার উঠা-বসা, চলা-ফিরা, কথা-বার্তা, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-সংসার ইত্যাদি প্রতিটি কাজই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার অনুসরণ করেনতেন। কেননা তিনি ছিলেন খাছ নায়েবে নবী-ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া।

মূলত আল্লাহ পাক আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে, ইচ্ছে করলেন উনারা নিক্ষিপ্ত তীরকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছার পূর্বেই আবার তা ফিরিয়ে আনতে পারেন। সুবহানাল্লমূলত আল্লাহ পাক আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে, ইচ্ছে করলেন উনারা নিক্ষিপ্ত তীরকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছার পূর্বেই আবার তা ফিরিয়ে আনতে পারেন। সুবহানাল্লাহ!

সেই কারণেই আমরা প্রত্যেক আল্লাহওয়ালাগণের জীবনী মুবারক-এ কমবেশি কারামত দেখতে পাই। তদ্রূপ হযরত গাউসুল আ’যম শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার জীবনেও আমরা উনার অসংখ্য আশ্চর্য ধরনের কারামত দেখতে পাই। উনার দোয়ার বরকতে অনেক নেক সন্তান জন্মগ্রহণ করেছেন। যাঁরা নাকি পরবর্তীতে অনেক উঁচু পর্যায়ের ওলীআল্লাহ হয়েছেন। উনাদের মধ্যে হযরত শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের নাম মুবারক উল্লেখযোসেই কারণেই আমরা প্রত্যেক আল্লাহওয়ালাগণের জীবনী মুবারক-এ কমবেশি কারামত দেখতে পাই। তদ্রূপ হযরত গাউসুল আ’যম শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার জীবনেও আমরা উনার অসংখ্য আশ্চর্য কারামত মুবারক দেখতে পাই
ছোটবেলা-
হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক যখন মাত্র ৫ বৎসর তখনই তিনি পিতৃহীন হন। উনার লালন-পালন পড়াশোনার দায়িত্ব এসে পড়ে মায়ের উপর।মা চরকায় সুতা কেটে জিবীকা নির্বাহ করেনতে শুরু করেন। মাতা পুত্রকে কখনও কখনও অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। যেদিন ঘরে কিছু খাবার না থাকতো তখন মা বলতেন,”আজ আমরা আল্লাহপাকের মেহমান।”খুব অল্প বয়সেই হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মকতবে যাওয়া শুরু করেন।

বাল্যবয়সেই বিভিন্ন আলৌকিক ঘটনাও ঘটতে শুরু করে।একবার সমবয়সী বালকদের সাথে খেলায় যোগ দেয়ার ইচ্ছা করলেন গায়েবী আওয়াজ এলো,”হে বরকতময় সত্তা ,আমার কাছে এসো !”কথা শোনা গেলেও কন্ঠটি কার বা কোথা থেকে এলো কিছুই তিনি বুঝতে পারলেন না।তাছারা কোন লোকও তিনি সেখানে দেখতে পেলেন না।তাই ভয়ে দৌড়ে তিনি ময়ের কাছে চলে এলেন। এরকম আরো বহুবার হয়েছে। একবার নিদ্রাকাতর অবস্হায় সুখময় নিদ্রা যাচ্ছিলেন।

এমন সময় ঘুমের ঘরে তিনি স্বপ্নে দেখিলেন-একজন উজ্জল জ্যোতিবিশিষ্ট স্বর্গীয় ফিরেশতা তাহার শিয়রের নিকট এসে অত্যন্ত কোমল স্বরে বলিতেছেন- ”হে আল্লাহর মনোনিত আব্দুল কাদির! উঠুন ,আর নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে থেক না। সুখ শয্যার কোলে ঢলে পড়বার জন্য এই পৃথিবিতে আপনার আগমন ঘটেনি। আপনার কর্তব্য ও দায়িত্ব সুদুরপ্রসারী! মোহগ্রস্হ,নিদ্রাচ্ছন্ন জনগনকে নিদ্রার মোহ থেকে মুক্ত করিবার জন্যই আপানার আগমন ঘটেছে।

শিক্ষা জীবন ও ধর্ম প্রচার-

হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বাল্য শিক্ষার হাতে খড়ি হয়েছিল জ্ঞানবান পিতা ও গুনবতী মাতা উনাদের মাধ্যমে। তিনি স্বীয় পিতা -মাতার মাধ্যমেই প্রথমিক স্তরের শিক্ষনীয় বিষয়গুলি গৃহে বসেই সমাপ্ত করেছিলেন । সর্বপ্রথমেই তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করা শিক্ষা করেন ও সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ হিফজ করেন। গৃহশিক্ষার বাইরেও তিনি জিলান নগরের স্হানীয় মক্তবেও বিদ্যা শিক্ষা করেছিলেন।একবার তিনি মক্তবে উপস্হিত হলে সেখানে বসার জন্য কোন স্হান পাচ্ছিলেন না।এমন সময় অদৃশ্য হতে আওয়াজ হলো,”হে শিক্ষার্থীগন ! এই বালকের জন্য আপনারা একটু স্হান করে দিন,যাহাতে তিনি বসতে পারেন।” কেহই আওয়াজের দিকে তেমন লক্ষ্য দিল না।পরিশেষে আবার গম্ভীর কন্ঠে গায়েবী নেদা হলো, ”হে শিক্ষার্থীগন !আপনারা কি দেখিত এ পাইতেছ না যে,আল্লাহর প্রিয় অলী দাঁড়িয়ে আছেন ? উঠুন উনাকে বসিবার স্হান করে দিন। অযথা বিলম্ব করে সময় অপচয় করেনবেনন না।”

এই অদৃশ্য বানী ছাত্র শিক্ষক সকলের কর্ণেই ভীষণ ভাবে আঘাত করলেন। সকলেই হতচকিত ও বিষ্ময়াপন্ন হয়ে গেলেন এবং বড় পীর আব্দুল কাদির রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বসিবার স্হান করে দিলেন। উনার প্রখর মেধাশক্তি, প্রত্যুতপন্নমতিত্ব ও আল্লাহ প্রদত্ত প্রজ্ঞার ফলে বাল্যকালেই তিনি অসাধারন পান্ডিত্য অর্জন করেনতে সক্ষম হন। কোন এক জিলহজ্ব মাসের ৯ম দিবসে শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে গেলেন। সেখানে এক গাভীর গায়ে হাত দিতেই গাভীটি উনার দিকে তাকালো এবং বলতে লাগলো,”হে হযরত আব্দুল কাদির রহমাতুল্লাহি আলাইহি ! আল্লাহ পাক আপনাকে কৃষিকাজের জন্য সৃষ্টি করেন নি বা জীবিকা অর্জনের হুকুমও আপনাকেদেননি” গাভীর মুখে কথা শুনতে পেয়ে ভীত সন্ত্রস্হ অবস্হায় বাড়ী ফিরে এলেন এবং মনের উদ্বেগে ঘরের ছাদে উঠে নানা কথা ভাবছিলেন।

এমনসময় তিনি দেখতে পেলেন মক্কা শরীফ পর্যন্ত সমস্ত এলাকা উনার সামনে উন্মুক্ত চোখের সামনে তিনি আল্লাহর ঘর দেখতে পেলেন।তিনি আরো দেখতে পেলেন আরাফাতে হাজ্বী সাহেবরা অবস্হান করছেনন। অতএব গায়বী ইঙ্গিতের মর্ম বোঝতে চেষ্টা করে তিনি মাকে দ্বীনী উচ্চশিক্ষার জন্য বাগদাদ গমনের ইচ্ছার কথা জানালেন। মা হৃষ্টচিত্তে অনুমতি দিয়ে তার পাথেয় প্রস্তুতিতে লেগে গেলেন। রওনার দিন জামার ভেতরে ৪০টি স্বর্নমুদ্রা সেলাই করে দিয়ে উনার মা বললেন,”আল্লাহর নাম নিয়ে রওয়ানা হোন । সততা ও বিশ্বস্ততাকে নিজের আদর্শরুপে শক্ত হাতে ধারন করেনবেনন।”

ঘটনাক্রমে রাস্তায় ডাকাত পড়লো।এক ডাকাত হযরত আব্দুল কাদির রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে কিছু আছে কিনা জিজ্ঞেস করলেনন। তিনি অকপটে স্বীকার করলেনন জামার ভিতর সেলাইকরা ৪০টি স্বর্নমুদ্রার কথা। বালকের সততায় ও সরলতায় ডাকাত মুগ্ধ হয়ে জিজ্ঞেস করেনলো,এবিপদের মুহুর্তে লোকেরা প্রকাশ্য সম্পদও গোপন ফেলে আর আপনি এ গোপন সম্পদের কথা কেন আমাকে দিলেন ? বালক হযরত আব্দুল কাদির জবাব দিলেন, ”আমার আম্মা আমাকে সর্বদা সত্য কথা বলার উপদেশ দিয়েছেন।”

আল্লাহওয়ালাদের কথায় এমন প্রভাব থাকে যা পাষাণ হৃদয়ও একমুহুর্তে গলিত হতে পারে। ডাকাত সর্দার কাঁদতে শুরু করেনলো এবং বললেন,”এ বালকটি উনার মায়ের নির্দেশ এত বিপদের মধ্যেও যেভাবে মানল ,আমি কি আমার সৃষ্টিকর্তা উনার হুকুম কি এভাবে মানছি ? আমিতো অর্থ-সম্পদের লোভে মহান মহান মালিকের অবাধ্য হয়ে শত শত মানুষের সর্বনাশ করেনছি”।কাফেলার লুন্ঠিত সম্পদ ফিরিয়ে দিয়ে ডাকাত তার গোটা দলশ তওবা করে ডাকাতি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলো বলা হয়, এই ব্যক্তিটিই নাকি পরবর্তীতে আল্লাহর এক ওলীতে পরিনত হয়েছিলেন।

উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি ৪৮৮ হিজরীতে যখন প্রথম তিনি বাগদাদ গমন করেন তখন উনার বয়স মুবারক হয়েছিল আঠার বৎসর। বাগদাদ এসে তিনি শায়েখ আবু সাইদ ইবনে মুবারক মাখযুমী হাম্বলী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আবুল ওয়াফা আলী ইবনে আকীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং আবু মুহম্মদ ইবনে হোসাইন ইবনে মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট ইলমে ফিকহ শরীফ, শায়েখ আবু গালিব মুহম্মদ ইবনে হাসান বাকিল্লানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, শায়েখ আবু সাইদ ইবনে আব্দুল করীম রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও শায়েখ আবুল গানায়েম মুহম্মদ ইবনে আলী ইবনে মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখের নিকট ইলমে হাদীস শরীফ এবং শায়েখ আবু যাকারিয়া তাবরেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিকট সাহিত্যের উচ্চতর পাঠ লাভ করেন।হযরত বড় পীর ছহিব উনার বাহ্যিক ও আধ্যাত্নিক জ্ঞান চর্চার উস্তাদ শায়খ আবু সাঈদ মাখযুমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মনে তরুণ এ শিষ্যের যোগ্যতা ও প্রতিভা সম্পর্কে এতই সুধারণা ও আস্হাশীলতার সৃষ্টি করলেন যে, নিজ হাতে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার দায়িত্ব বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট অর্পণ করে তিনি নিজে অবসর গ্রহন করেন।

তখন তিনি এ মাদ্রাসার উন্নতি ও উৎকর্ষের কাজে আত্ননিয়োগ করেন। হাদীস শরীফ ,তাফসির শরীফ,ফিকহ ও অন্যান্য জ্ঞান বিজ্ঞানের শিক্ষাদান নিজেই শুরু করেন। পাশাপাশি ওয়াজ নসিহত ও চালু করেন । অল্প দিনের মধ্যেই এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম চারিদিকে ছরিয়ে পড়লো এবং দেশ বিদেশের বিদ্যার্থীরা ছুটে আসতে লাগলো। এ পর্যায়ে মাদরাসার নামকরেননও শায়খের সাথেই সম্পৃক্ত হয়ে ‘মাদরাসায়ে কাদেরিয়া” হয়ে গেল।

সুমহান বিছাল শরীফ :

বাহজাতুল আসরার’ নামক কিতাবে হযরত শায়েখ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আওলাদে রসূল হযরত গউছুল আ’যম বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৫৬১ হিজরী সনের রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস হতে কঠিন রোগে আক্রান্ত হন।

‘তাওয়ারিখে আউলিয়া’ নামক কিতাবে হযরত শায়েখ আব্দুল ফতেহ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইয়াওমুল আহাদ রোববারদিবাগত রাত্রে অর্থাৎ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম সোমবার শরীফ রাত্রে আওলাদে রসূল হযরত গউছুল আ’যম বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহিআলাইহি তিনি গোসল করেন। গোসল করার পর পবিত্র ইশা উনার নামায পড়ে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার উম্মতগণের গুনাহখতা মাফের জন্য ও উনাদের উপর খাছ রহমত নাযিলের জন্য দোয়া করলেনন।

এরপর গায়েব হতে আওয়াজ আসল, “হে প্রশান্ত নফ্স! আপনি প্রসন্ন ও সন্তুষ্ট চিত্তে এবং সন্তুষ্টি প্রাপ্ত হয়ে নিজ প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তন করুন। আপনি আমার নেককার বান্দা উনাদের মধ্যে শামিল হয়ে যান এবং সম্মানিত বেহেশতে প্রবেশ করুন।” এরপর তিনি পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করেতাআজ্জাজা (অর্থ বিজয়ী হওয়া) উচ্চারণ করেনতে লাগলেন এবং তিনি আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহ বললেন। এরপর জিহ্বা মুবারক তালুর সাথে লেগে গেল। এইভাবে ৫৬১ হিজরী সনের (১১১৬ ঈসায়ী) পবিত্র রবীউছ ছানী মাসের ১১ তারিখে মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, আওলাদে রসূলহযরত গউছুল আ’যম বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সুমহান আল্লাহ পাক উনার মহান দরবার শরীফ-এ প্রত্যাবর্তন করলেনন।  (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)।

0 Comments: