ঈদ মুবারক ! ঈদ
মুবারক !! ঈদ মুবারক !!!
সুমহান পুত ও
পবিত্র ২৩ শে জুমাদাল উখরা শরীফ
মহাস্মানীত পুত
ওপবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস”
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম
উনার নুরুদ দরাজাত মুবারকে জানাই লক্ষ
কোটি বেশুমার ছলাত ও সালাম ।
গোলামীর আরজুতে ,
মুহম্মদ ইউসুফ রাজী
খাজা
তারিখ – ২৩/০৬/১৪৪১
হিজরী
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ মুবারক
পরিচিতি মুবারক:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র নাম
মুবারক হযরত যয়নব আলাইহাস সালাম। কুরাইশ গোত্রের বনু আসাদ বংশে উনার বিলাদত শরীফ।
উনার সম্মানিত পিতার নাম হযরত জাহাশ আলাইহিস সালাম, যিনি ইসলাম-পূর্ব যুগে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
পিতার দিক থেকে তিনি ১০ম পুরুষে গিয়ে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সাথে মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ। উনার ৯ম পূর্ব-পুরুষ হচ্ছেন হযরত আসাদ ইবনে
খুযাইমা আলাইহিস সালাম। হযরত আসাদ আলাইহিস সালাম ছিলেন বনু আসাদ বংশের প্রথম পুরুষ
এবং একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব। উনার নাম মুবারক অনুযায়ী উনার বংশের নামকরণ হয়েছে
“বনু আসাদ”।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মাতা হযরত উমাইমাহ বিনতু
আবদুল মুত্তালিব আলাইহাস সালাম ছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আপন ফুফু। সেই হিসাবে সাইয়্যিদাতু
নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস
সালাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আপন ফুফাতো বোন।
উনার তিন ভাই এবং দুই বোন ছিলেন। তিন ভাই- হযরত আবদুল্লাহ বিন জাহাশ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবু আহমদ বিন জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং ওবায়দুল্লাহ বিন
জাহাশ। এক ভাই হযরত আবদুল্লাহ বিন জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উহুদের জিহাদে
শাহাদাতি শান মুবারক প্রকাশ করেন। কাফিরগুলো উনার পেট মুবারক ফেঁড়ে জিসিম মুবারক
ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলেছিল। উনাকে উনার সম্মানিত মামা, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনার সাথে একই মাজার
শরীফে দাফন মুবারক করা হয়।
উনার দুই বোন হযরত হামনা বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং হযরত
উম্মে হাবীবা বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বিশিষ্ট ছাহাবিয়া ছিলেন।
উনাদের ‘ইস্তিহাজা’ রোগ ছিল। উনারা দু’জনই নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নিকট এ রোগ সম্পর্কে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে
নানা মাসয়ালা জিজ্ঞেস করে জেনে নিতেন। এজন্য পবিত্র হাদীছ শরীফে উনাদের উল্লেখ
রয়েছে। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, তিরমিযী শরীফ)
ইসলাম গ্রহণ এবং হাবশায় হিজরত:
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার সকল ভাই-বোন
ইসলাম উনার প্রথম যুগেই ইসলাম কবুল করেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
দারুল আরকামে যাওয়ার পূর্বেই উনারা সকলেই মুসলমান হয়েছিলেন। অতঃপর পরিবারের সব
সদস্য একসঙ্গে হাবশায় হিজরত করেন। সেখানে উনাদের ভাই ওবায়দুল্লাহ বিন জাহাশ ঈসায়ী
ধর্ম গ্রহণ করে, কিন্তু তার
আহলিয়া সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে হাবীবা আলাইহাস সালাম বিনতে হযরত আবু সুফিয়ান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম উনার উপর অটল থাকেন। হাবশার বাদশাহ স¤্রাট
নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে হাবীবা আলাইহাস সালাম বিনতে হযরত আবু সুফিয়ান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার ব্যবস্থা করে উনাকে
পবিত্র মদীনা শরীফ পাঠিয়ে দেন এবং তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আল হাদিয়া আশার
আলাইহাস সালাম লক্বব মুবারকে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। এক পর্যায়ে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল
আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস
সালাম এবং উনার অন্যান্য ভাই বোন সকলে হাবশা থেকে পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে আসেন।
শুধু ওবায়দুল্লাহ বিন জাহাশ ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করার কারণে হাবশায় থেকে যায়।
পরবর্তীতে সে অত্যধিক মদ পান করে অকালে মৃত্যুবরণ করে। নাঊযুবিল্লাহ!
পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত:
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরত করে
পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক আনয়ন করলে হযরত আবদুল্লাহ বিন জাহাশ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবু আহমদ বিন জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
আপন পরিবারবর্গ এবং বোনদের নিয়ে একসঙ্গে পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত করেন (আসাহহুস
সিয়ার)।
ঐতিহাসিকদের মতে এই পরিবারই পবিত্র মদীনা শরীফে প্রথম হিজরতকারী পরিবার ছিলেন।
সুবহানাল্লাহ!
শাদী মুবারক:
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক
নির্দেশে উনার পালক পুত্র হযরত যায়িদ বিন হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
সঙ্গে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার শাদী মুবারক অনুষ্ঠিত হয়।
শাদী মুবারকের সময় উনার বয়স মুবারক হয়েছিল ৩৪ বছর এবং তিনি অবিবাহিতা ছিলেন বলে
জানা যায়। অন্য এক বর্ণনায় উনাকে বিধবা বলা হয়েছে, কিন্তু উনার প্রথম আহালের নাম উল্লেখ করা হয় নি। এই মতের
সমর্থনে যে রেওয়ায়েতটি পাওয়া যায়, তা হলো এই যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু-উনার সঙ্গে উনার নিকট শাদী মুবারকের প্রস্তাব দিলে তিনি বলেছিলেন- ইয়া
রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! উনাকে আমি আমার জন্য পছন্দ করি না।
কারণ, আমি কুরাঈশ বংশের একজন বিধবা
মহিলা (তাবাকাত)।
পবিত্র কা’বা শরীফ উনার খাদিম হিসাবে গোটা আরবে কুরাইশ খান্দান, বিশেষত বনু হাশিমের যে উচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের আসন ছিল, তৎকালীন ইয়েমেনের কোন
বাদশাহও উনাদের সমকক্ষতার দাবী করতে দুঃসাহসী হতো না। হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু ছিলেন পিতৃকুলের দিক দিয়ে আরবের অন্যতম মশহুর খান্দান বনু কাল্ব এবং
মাতৃকুলের দিক দিয়ে ত্বাঈ গোত্রের। মর্যাদায় ও আভিজাত্যে এই দুই গোত্র কুরাঈশ
গোত্রের চেয়ে কম ছিলেন না। কিন্ত বাল্যকালে একদল দস্যু হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনাকে বন্দী করে নিয়ে যায় এবং উকাজ মেলায় বিক্রয় করে দেয়। সাইয়্যিদাতু
নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন
আল-উলা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা
আলাইহাস সালাম উনার ভ্রাতু®পুত্র হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনাকে খরিদ করে নিয়ে আসেন এবং ফুফুর খিদমতে পেশ করেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আল উলা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম হযরত যায়দ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার খিদমতে পেশ করলে তিনি উনাকে
আযাদ করে দেন এবং পালক পুত্র হিসাবে লালন পালন করেন। যালিমের যুলুমের কারণে উনাকে
গোলামীর শিকলে আবদ্ধ হতে হয়েছিলো। তাই এটাকে দাসত্ব বলা যায় না। কিন্তু
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি একে দাসত্ব মনে না করলেও
কুরাইশ খান্দানের হাশেমী বংশের সমকক্ষ মনে করেননি। তাই তিনি এ শাদী মুবারক নিয়ে
চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু শুধু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নির্দেশ মুবারক পালনের জন্যই
তিনি এই শাদী মুবারকে সম্মতি জ্ঞাপন করেছিলেন। তদনুযায়ী শাদী মুবারক অনুষ্ঠিত হয়ে
যায়।
ইহা সুস্পষ্ট যে, ইসলামী
সাম্যের বাস্তব শিক্ষাদান ছিল এই শাদী মুবারকে উদ্দেশ্য। ইসলাম স্বাধীন অথবা দাস
হওয়ার মধ্যে মর্যাদার পার্থক্য নির্দ্ধারণ করে না। তাক্ওয়া বা পরহেজগারীই হচ্ছে
মর্যাদা নির্দ্ধারণের মানদন্ড। তাকওয়া ও পরহেজগারীতে যে অগ্রগন্য সেই মার্যাদাবান
হিসাবে পরিগণিত। এই শাদী মুবারকের আরো একটি উদ্দেশ্য ছিল, যা হযরত ইবনুল আছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন
এভাবে:-
زَوَّجَهَا
لِيُعَلِّمَهَا
كِتَابَ
اللهِ
وَ سُنَّةَ
رَسُوْلِهِ -
(নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যায়িদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে হযরত যয়নব আলাইহাস সালাম উনার শাদী মুবারক
এজন্য দিয়েছিলেন, যাতে হযরত যায়িদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে কিতাবুল্লাহ এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারকের তা’লীম ও
তারবিয়ত দান করেন (উসুদুল গাবা)।
কুরাঈশ বংশের হাশেমী শাখার সম্ভ্যান্ত
মহিলা, সাইয়্যিদাতু
নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস
সালাম উনার শাদী মুবারক হযরত যায়দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনার সাথে স্থায়ী হয়
নি। শাদী মুবারকের এক বছর পার না হতেই হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নূরে
মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হূযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার দরবার শরীফে
এসে অভিযোগ পেশ করেন। তিনি বলেন যে, উনার আহলিয়া উনার সাথে কড়া ভাষায় কথা বলেন, কোন ভাবেই উনাদের বনি-বনা হচ্ছে না, সেজন্য তিনি উনাকে তালাক দিতে ইচ্ছা করেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ ব্যাপারে নিষেধ করেন এবং
মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করতে বলেন (তাফসীরে সূরা আহযাব শরীফ)। কিন্তু শেষ
পর্যন্ত উনাদের মনোমালিন্য এতটুকু পৌঁছে গেল যে, হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনাকে তালাক দিতে
বাধ্য হলেন এবং তালাক দেয়ার পর তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ বিষয়ে অবহিত করেন।
নিসবাতুল আযীম শরীফ:
ইতোমধ্যে খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ হতে কুরআন পাক উনার পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয় নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীমের বিষয়ে। নূরে
মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিন্তা করছিলেন, কারণ হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু ছিলেন উনার
পালক পুত্র। পালক পুত্রের আহলিয়ার সাথে কিভাবে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত
হতে পারে ? তখন খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক
উনার তরফ হতে এই মর্মে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয় -- মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা
-- আরবে যে কু-প্রথা প্রচলিত আছে, পালক পুত্রকে আপন পুত্রের সমান জ্ঞান করা হয়, ইহা রহিত করা। মহান আল্লাহ পাক নাযিল করলেন-
مَا
كَانَ
مُحَمَّدٌ
أبَا أحَدٍ
مِنْ رِجَالِكُمْ
-
অর্থ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে কারো পিতা
নন।
মহান আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ মুবারক করলেন-
أدْعُوْهُمْ
لِأبَآئِهِمْ
هُوَ أقْسَطُ
عِنْدَ
اللهِ - (الأحزاب-
৩৭)
অর্থ: তাদেরকে তাদের পিতৃ পরিচয়ে ডাক, ইহা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিকতর ন্যায়সঙ্গত।
তখন হতে পালক পুত্র হিসাবে হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনাকে যায়িদ
বিন মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডাকার পরিবর্তে, এই নিয়ম রহিত করে উনার আসল পিতার নামে অর্থাৎ যায়িদ বিন
হারেছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলে ডাকা হতে লাগল। অতঃপর খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার
নির্দেশক্রমে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হূযুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার নিসবতে
আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হলো। পবিত্র কুরআন মজীদে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে মহান আল্লাহ
পাক তিনি বিষয়টি পরিষ্কার করে দিলেন যে, এই নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার ব্যবস্থা মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই করেছেন। এ
বিষয়ে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হলো-
فَلَمَّا
قَضَى
زَيْدٌ
مِنْهَا
وَطَرًا
زَوَّجْنَاكَهَا
لِكَىْ
لَا يَكُوْنُ
عَلَى
الْمُؤْمِنِيْنَ
حَرَجٌ
فِى أزْوَاجِ
أدْعِيَائِهِمْ
إذَا قَضَوْا
مِنْهُنَّ
وَطَرًا
وَ كَانَ
أمْرُ
اللهِ
مَفْعُوْلًا
-
অর্থ: হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু যখন উনার নিকট থেকে নিজ প্রয়োজন পূর্ণ করে নিলেন, তখন আমি আপনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত করে
দিলাম। যেন নিজেদের মুখে-ডাকা পুত্রদের আহলিয়াদের ব্যাপারে মু’মিন লোকদের কোন
অসুবিধা না থাকে- যখন তারা তাদের নিকট থেকে নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করে নেয়। মহান
আল্লাহ পাক উনার আদেশ তো বাস্তবায়ন হতেই হবে। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৩৭) সুবহানাল্লাহ!
এই আয়াত শরীফ দ্বারা খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার সাথে আপনার নিসবাতুল আযীম
শরীফ উনার কাজটি আমিই সমাধা করে দিলাম। এ ব্যাপারে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার ইচ্ছা বা
অনিচ্ছার কোন প্রয়োজন ছিল না। পবিত্র আয়াত শরীফে উল্লেখিত “আমি আপনার সাথে উনার
নিসবাতুল আযীম শরীফ করিয়ে দিলাম” এই ক্বওল শরীফ ও ব্যবহৃত শব্দ মুবারকগুলো দ্বারা
একথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, নূরে
মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার নিজের
মুবারক ইরাদা উনার ভিত্তিতে হয়নি, বরং মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক ইরাদা ও মুবারক নির্দেশ মতই সম্পাদিত হয়েছে।
এই নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার কাজটি সম্পন্ন হয় ৫ম হিজরী সনের জিলক্বদ মাসের ৮ তারিখ, লাইলাতু সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ অর্থাৎ লাইলাতু
ইছনাইনিল আযীম শরীফ। সুবহানাল্লাহ! এই সময় উনার বয়স মুবারক হয়েছিল ৩৭ বছর ৬ মাস ১৯
দিন। সুবহানাল্লাহ (সিয়ারু আলামিন নুবালা, দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)।
ওলীমা মুবারক অনুষ্ঠান:
পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
এ উপলক্ষে পবিত্র ওলীমা মুবারক উনার অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেন। খাদিমু রসুলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
রেওয়ায়েত আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার ওলীমা
মুবারকের মত আর কারো ওলীমা মুবারকে এত পর্যাপ্ত পরিমাণে আহারের ব্যবস্থা করেন নি।
এতে তিনি বকরি জবাই করে রুটি ও গোশতের ব্যবস্থা করেন। হযরত আবদুল আযীয ইবনে সুহায়র
রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে রেওয়ায়েত করেন, এত উত্তম ও এত বেশী পরিমাণে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা তিনি
অন্য কারো ওলীমা শরীফে করেন নি যেরূপ তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার ওলীমা
শরীফে করেছেন। সুবহানাল্লাহ ! (আসুহহুস সিয়ার)।
এই অনুষ্ঠানে খাদ্য পরিবেশন সম্পর্কে অপর একটি বর্ণনা রয়েছে। এই অনুষ্ঠানে
খাদিমু রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার সম্মানিত মাতা হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, যিনি সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খালা হতেন, হাদিয়া হিসাবে কিছু খাবার পাঠিয়েছিলেন। হযরত আবু হাতিম
রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত- হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা
তিনি ‘হাইস’ (খেজুর ও অন্যান্য উপকরণ দ্বারা তৈরী) এক প্রকার উপাদেয় খাবার তৈরী
করে কাঠের পাত্রে ঢালেন। তারপর উনার ছেলে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনাকে ডেকে বলেন- ইহা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নিয়ে গিয়ে
বলবে, আমাদের পক্ষ থেকে (এই ওলীমা
শরীফ উপলক্ষে) সামান্য হাদিয়া। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন- মানুষ
সে সময় দারূন অন্নকষ্টে ছিল। আমি পাত্রটি নিয়ে গিয়ে বললাম- এটা উম্মে সুলাইম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। তিনি আপনাকে সালাম পেশ করেছেন
এবং বলেছেন- এ হচ্ছে আমাদের তরফ থেকে সামান্য হাদিয়া। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
পাত্রটির দিকে তাকিয়ে বললেন- এটা ঘরের এক কোনে রাখুন এবং অমুক অমুককে ডেকে আনুন।
তিনি অনেক লোকের নাম বললেন। তাছাড়া আরো বললেন- পথে যে মুসলমানের সাথে দেখা হবে, সাথে নিয়ে আসবেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
বলেন- যাঁদের নাম তিনি বলেছিলেন, উনাদেরকে তো দাওয়াত দিলাম। আর পথে আমার সাথে যে মুসলমানের দেখা হলো উনাদের
সকলকেও দাওয়াত দিলাম। আমি ফিরে এসে দেখি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গোটা বাড়ী, আহলে সুফফার স্থান ও হুযরা শরীফ- সবই লোকে লোকারণ্য।
বর্ণনাকারী হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞেস করলেন- সেখানে
লোকসংখ্য কত হবে ? তিনি বললেন-
প্রায় তিন শত। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে খাবার পাত্রটি আনতে বললেন। আমি উহা উনার
কাছে নিয়ে আসলাম। তিনি পাত্রটির উপর হাত রেখে দোয়া করলেন। তারপর বললেন- আপনারা
দশজন দশজন করে বসবেন, বিসমিল্লাহ
বলবেন এবং প্রত্যেকে নিজের পাশ থেকে খাবেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নির্দেশ মত সবাই পেট ভরে খেলেন। তারপর তিনি আমাকে বললেন- পাত্রটি উঠিয়ে নিন। হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন- আমি এগিয়ে এসে পাত্রটি উঠালাম। এর মধ্যে
তাকিয়ে দেখলাম। কিন্তু আমি বলতে পারব না, যখন ইহা রেখেছিলাম তখন এতে খাবার বেশী ছিল, না যখন উঠালাম তখন খাবার বেশী ছিল। অর্থাৎ তিন শত লোকে আহার
করার পরও উক্ত খাদ্য একটুও কমে নি এবং সেজন্য কম-বেশী তিনি অনুমান করতে পারেন নি।
সুবহানাল্লাহ! (হায়াতুছ ছাহাবা)।
নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
(১) পালিত ও ধর্মপুত্রকে যে ঔরসজাত
পুত্রের সমান জ্ঞান করা হতো, সেই ভ্রান্তি দূর করে দেয়া হয়।
(২) সম-সাময়িক আরবে কেনা গোলাম ও
স্বাধিন ব্যক্তির মধ্যে মর্যাদার যে পর্বত পরিমাণ ব্যবধান ছিল তা দূর করে ইসলামী
সাম্যের বাস্তব দৃষ্টান্ত এই নিসবাতুল আযীম শরীফে প্রতিষ্ঠিত হয়। হযরত যায়িদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ক্রয় করে লালন পালন করা হয়েছিল অতঃপর উনাকে আরবের
সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক অভিজাত খান্দান বনু হাশিমের সম-মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা
হয়।
(৩) এই নিসবাতুল আযীম শরীফ উনাকে
কেন্দ্র করে হিজাবের (পর্দ্দার) হুকুম নাযিল হয় অথবা বলা চলে এই নিসবাতুল আযীম
শরীফই ছিল হিজাব বা পর্দ্দার হুকুম নাযিলের পটভূমি।
(৪) এই নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার জন্য
ওহী নাযিল হয়।
বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি হিজরী ২০ সালের ২৩শে জুমাদাল
উখরা শরীফ, সাইয়্যিদু
সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ অর্থাৎ ইছনাইনিল আযীম শরীফ বিছালী শান মুবারক প্রকাশ
করেন। দুনিয়াবী দৃষ্টিতে উনার হায়াত মুবারক তখন হয়েছিলেন ৫২ বছর ২ মাস ৪ দিন।
পবিত্র জান্নাতুল বাকী শরীফে উনার পবিত্র রওযা শরীফ।
জীবিত থাকতেই তিনি উনার নিজ কাফন মুবারক প্রস্তুত করে রেখেছিলেন।
সুবহানাল্লাহ! তিনি ওছীয়ত করে যান যে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম যদি আর একটি
কাফনের ব্যবস্থা করেন, তবে উনার
নিজের কাফনটি যেন গরীবদের মধ্যে বন্টন করা হয়। তিনি আরো ওছীয়ত করে যান যে, উনার জিসিম মুবারক যেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জিসিম মুবারক যে মুবারক
খাটিয়ায় রাখা হয়েছিল, সে
খাটিয়ায় বহন করে নেয়া হয়। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পর
তিনিই প্রথম মহিলা যে, উনাকে এই
পবিত্র খাটিয়ায় উঠানো হয়। এভাবে উনার দু’টি ওছীয়ত মুবারকই পালিত হয়। সাইয়্যিদুনা
হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার জানাযার নামায পড়ান। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সুলাইত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- আমি হযরত আবু আহমদ
ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (হযরত যয়নব আলাইহাস সালাম উনার ভাই) উনাকে
দেখলাম কাঁদতে কাঁদতে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মুবারক
লাশবাহী খাটিয়া মুবারক নিজ কাঁধে বহন করছেন। তিনি ছিলেন অন্ধ। আমি শুনলাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বলছেন, হে আবু আহমদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি খাটিয়া থেকে
সরে আসুন, যাতে মানুষের
চাপে কষ্ট না পান। হযরত আবু আহমদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন- জেনে রাখুন, উনারই ওয়াছীলায় আমরা সব ধরণের খায়র ও বরকত লাভ করেছি। আমার
এই কান্না আমার ভিতরের তীব্র জ্বালাকে প্রশমিত করছে। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে
আ’যম আলাইহিস সালাম বললেন- ঠিক আছে, থাকুন, থাকুন
(তাবাক্বাত, হায়াতুছ
ছাহাবা)। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মাহাতুল
মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের নিকট ইরশাদ মুবারক করেছিলেন-
أسرعكن
بى لحوقا
اطولكن
يدًا –
(আপনাদের মধ্যে যাঁর হাত সবচেয়ে লম্বা তিনি আমার সঙ্গে অতিসত্ত্বর সাক্ষাত
করবেন)।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বিছালী শান
মুবারক প্রকাশের পর হযরত উম্মাহাতুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে উক্ত
মজলিসে উপস্থিত হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে তিনিই
সর্বপ্রথম বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন
আলাইহিন্নাস সালাম প্রথমে শাব্দিক অর্থ হিসাবে যাঁর হাত লম্বা তিনিই প্রথমে বিছাল
শরীফ লাভ করবেন, এইরূপ ধারণা
পোষণ করতেন। সেই হিসাবে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কেই সকলের ধারণা
ছিল যে, তিনিই প্রথমে বিছালী শান
মুবারক প্রকাশ করবেন। কারণ উনার হাত মুবারক সকলের চেয়ে লম্বা ছিলেন। পরে
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি যখন বিছালী শান মুবারক
প্রকাশ করলেন, উনারা সকলেই
বুঝতে পারলেন যে, হাত লম্বা
দ্বারা অত্যধিক দানশীলা বুঝানো হয়েছে।
কারণ সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মুবারক হাত স্বাভাবিক থেকে
বেশী লম্বা ছিল না। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ-ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম এ সম্পর্কে বলেন-
كَانَتْ
أطْوَلُنَا
يَدًا
زَيْنَبُ
لِأنَّهَا
كَانَتْ
تَعْمَلُ
بِيَدٍ
وَ تَتَصَدَّقُ
-
অর্থ: আমাদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা হাতের অধিকারিণী ছিলেন হযরত যয়নব আলাইহাস
সালাম। কারণ, তিনি হাতের কাজ
করিয়ে উপার্জিত অর্থ প্রচুর দান করতেন।
ফযীলত ও মর্যাদা মুবারক:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম মাঝে মধ্যে উনার নিজ নিসবাতুল
আযীম শরীফ উনার কথা উল্লেখ করে বলতেন- অন্যান্যদের নিসবাতুল আযীম শরীফ উনাদের
পিতা-মাতা ব্যবস্থা করেছেন, আর আমার নিসবাতুল আযীম শরীফ স্বয়ং খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক
আসমানে ব্যবস্থা করেছেন (ইছাবা)।
একবার কোন এক প্রসঙ্গে তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সম্মুখে বলেছিলেন- ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার অন্য
কোন আহলিয়ার মত নই। উনাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার পিতা, ভাই, অথবা খান্দানের কোন অভিভাবক ব্যবস্থা করেন নি। একমাত্র আমার নিসবাতুল আযীম
শরীফই মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান থেকে আপনার সাথে সম্পন্ন করিয়েছেন। আপনার ও আমার
দাদা একই সম্মানিত ব্যক্তি অর্থাৎ হযরত আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম। আর আমার
নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার ব্যাপারে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম ছিলেন দূত।
(তাবাক্বাত, আনসাবুল আশরাফ)।
হাফেজ যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
فَزَوَّجَهَا
اللهُ
بِنَبِيِّهِ
بِلَا
وَلِىٍّ
وَ لَا
شَاهِدٍ -
অর্থাৎ খালিক, মালিক, রব, মহান
আল্লাহ পাক তিনি উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার সম্মানিত নবী নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সাথে কোন অভিভাবক ও সাক্ষী ছাড়াই করিয়ে দেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার
সম্পর্কে মন্তব্য করেন :-
يَرْحَمُ
اللهُ
زَيْنَبْ
بِنْتِ
جَحْشٍ
لَقَدْ
نَالَتْ
فِىْ هَذِهِ
الدُّنْيَا
الشَّرَفَ
لَا يَبْلُغُهُ
شَرَفٌ
- إنّ اللهَ
زَوَّجَهَا
بنبيهِ
فِى الدُّنْيَا
وَ نَطَقَ
بِهِ الْقُرْآنُ
-
(অর্থ : খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনার প্রতি সদয় হোন!
সত্যিই তিনি দুনিয়াতে অতুলনীয় সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেছেন। খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক
স্বয়ং উনার নবীর সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার ব্যবস্থা করিয়ে দিয়েছেন এবং
উনার উপলক্ষে কুরআন পাক উনার কয়েকটি আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে)। সুবহানাল্লাহ! (তাবাক্বাত)
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা উম্মুল মু’মিনীন আস-সাদিসাহ (হযরত উম্মে সালামাহ আলাইহাস সালাম)
আলাইহাস সালাম তিনি উনার প্রশংসায় বলেন-
كَانَتْ
صَالِحةً
صَوَّامَةً
قَوّاَمَةً -
অর্থাৎ তিনি ছিলেন খুব বেশী সৎকর্মশীলা, বেশী রোযা পালনকারিনী ও বেশী বেশী নামায আদায়কারিনী। সুবহানাল্লাহ! (ইছাবা, সিয়ারু আলামিন নুবালা)্
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আস সাবিয়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম খুব বেশী দান খয়রাত করতেন। তিনি
নিজস্ব প্রক্রিয়ায় চামড়া দাবাগত করে পাকা করাতেন এবং তা থেকে যে আয় হতো তা সবই
অভাবী লোকদের দান করে দিতেন (সিয়ারু আলামিন নুবালা, ইছাবা)।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা, উম্মুল মু’মিনীন
হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার প্রশংসায় আরো বলেন: দ্বীন
সংক্রান্ত ব্যাপারে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত যয়নব আলাইহাস সালাম
অপেক্ষা উত্তম কোন মহিলা আমি দেখি নি, যিনি ছিলেন অত্যন্ত খোদাভীরু, অত্যন্ত সত্যবাদী, আত্মীয়তার
স¤পর্ক
রক্ষাকারীনি, শ্রেষ্ঠ
আমানতদার ও দান-খয়রাত কারীনি।
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন: হযরত যয়নব বিনতে জাহাস
আলাইহাস সালাম لأَوَّاحَةٌ (অর্থাৎ অবশ্যই আল্লাহ পাক উনার প্রতি অনুরাগিনী)। এক ব্যক্তি
জিজ্ঞাসা করল: ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম! আল্লাহ পাক উনার প্রতি
অনুরাগীনির অর্থ কি? নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন: আল্লাহ পাক
উনাকে অধিক ভয়কারীনি এবং অধিক ক্রন্দনকারীনি। সুবহানাল্লাহ !
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা
হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম হযরত উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম বায়তুল মাল
থেকে উনাদের প্রত্যেকের বার্ষিক নির্ধারিত বরাদ্দকৃত ভাতা হিসাবে উনার নিকট ১২
হাজার দিরহাম পাঠালেন। তিনি ইহা গ্রহণ করে আত্মীয়-স্বজন ও ইয়াতিমদের মধ্যে বন্টন
করে দিলেন। তৎপর দোয়া করলেন: আয়
আল্লাহ পাক ! হযরত উমর ইবনে খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার ভাতা যেন এরপর আমার নিকট
আর না পৌঁছে। অতঃপর এক বছর শেষ না হতেই তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সাইয়্যিদুনা
হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার প্রদত্ত ভাতা আর উনাকে গ্রহণ করতে হয়নি।
(ইছাবা)।
উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন,উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা
আলাইহাস সালাম উনার প্রশংসায় বলেন যে: এই সম্মানিতা নারী তিনি আর হায়াত মুবারকে
নেই। তাই ইয়াতীম ও বিধবাগণ এখন ভগ্ন হৃদয় হয়ে গেল (তাবাকাত)।
উনার পর উনার কোন সম্পদ বাকি ছিল না। কারণ যা কিছু উনার নিকট আসত, সবই তিনি দান করে দিতেন। পবিত্র মদীনা শরীফের গরীব
দুঃখীরাসহ সকলেই উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর গভীর শোক প্রকাশ করেছিল
(ইছাবা)।
সূত্রসমূহ: উসুদুল গাবা, ইছাবা, তাবাকাত, আসাহুহুস সিয়ার, অন্যান্য সীরত গ্রন্থাবলী, দৈনিক আল-ইহসান শরীফ।
এক নজরে
সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল
মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত
পরিচিতি মুবারক
সাইয়্যিদাতুন
নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন, আফদ্বলুন
নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মু’মিনীন আস
সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল
মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্বা মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
তিনি শুধু যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত
মুহব্বত মুবারকই হচ্ছেন সম্মানিত ঈমান। সুবহানাল্লাহ!
নিম্নে এক নজরে উনার সম্মানিত পরিচিতি মুবারক তুলে ধরা হলো-
সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক: সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ও পবিত্র কুনিয়াত মুবারক: সইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল হাকাম আলাইহাস সালাম।
সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ও পবিত্র লক্বব মুবারক: উম্মুল মু’মিনীন, আহলু বাইতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি
আহলিল জান্নাহ, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আত্ব ত্বাহিরাহ, আত্ব ত্বইয়্যিবাহ্, মালিকাতুল জান্নাহ, মালিকাতুল কায়িনাত, যাতুল হিজরাতাইন এছাড়াও আরো অসংখ্য-অগণিত। সুবহানাল্লাহ!
যেই সম্মানিত লক্বব মুবারক-এ সম্মানিত পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেছেন: উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু
ইয়াদান আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম: সাইয়্যিদুনা হযরত জাহ্শ ইবনে রিআব আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উমাইমাহ্ বিনতে আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত বংশ মুবারক: বনূ আসাদ। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক প্রকাশের
২০ বছর পূর্বে ১৯শে রবী‘উছ ছানী শরীফ ইয়াওমুল জুমু‘য়াহ্ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার সম্মানিত স্থান
মুবারক: সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত অবস্থান মুবারক: সম্মানিত ও পবিত্র
মক্কা শরীফ, সম্মানিত ও পবিত্র
হাবশাহ শরীফ এবং সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ: সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সূচনালগ্নে। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত হিজরত মুবারক: দুইবার। প্রথবার
সম্মানিত ও পবিত্র হাবশাহ শরীফ। দ্বিতীবার সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ‘আযীমুশ শান মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র নিসবতে ‘আযীম শরীফ: ৫ম হিজরী শরীফ উনার ৮ই যিলক্বদ শরীফ লাইলাতু সাইয়্যিদি
সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (লাইলাতু ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ)। সুবহানাল্লাহ!
‘আযীমুশ শান মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় দুনিয়াবী
দৃষ্টিতে উনার সম্মানিত বয়স মুবারক: ৩৭ বছর ৬ মাস ১৯ দিন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক
দেয়া: ৫বছর ৪ মাস ৪ দিন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ২০ হিজরী শরীফ উনার ২৩শে জুমাদাল উখরা শরীফ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল
আইয়্যাম শরীফ (ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ)। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার সম্মানিত স্থান
মুবারক: সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক: ৫২ বছর ২ মাস ৪ দিন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ: সম্মানিত জান্নাতুল বাক্বী’ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল
মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক-১
যিনি খালিক্ব
মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلنَّبِـىُّ
اَوْلـٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُهۤٗ اُمَّهٰتُهُمْ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
হচ্ছেন মু’মিন উনাদের নিকট উনাদের জানের চেয়ে অধিক প্রিয়, উনাদের মহাসম্মানিত পিতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং
উনার মহাসম্মানিতা ‘আযওয়াজুম মুত্বহহারাত’ (হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম)
উনারা হচ্ছেন সমস্ত মু’মিন উনাদের মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহিন্নাস সালাম।” সুবহানাল্লাহ!
(সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস
সালাম উনারা ছিলেন মোট ১৩ জন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ
সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেয়ার মুবারক ধারাবাহিকক্রম অনুযায়ী সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল
‘আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন ‘আস সাবি‘য়াহ্ তথা সপ্তম’। এ জন্য উনাকে ‘উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবি‘য়াহ্
আলাইহাস সালাম’ বলা হয়। তিনি সকলের মাঝে ‘উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম’ হিসেবে পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
তিনি শুধু যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার মাহবূব হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিনী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত
মুহব্বত মুবারকই হচ্ছেন সম্মানিত ঈমান। সুবহানাল্লাহ! উনাকে সম্মানিত মুহব্বত মুবারক
করা, উনার সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম
মুবারক করা, সম্মানিত ছানা-ছিফত
মুবারক করা এবং উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের জন্য ফরযে আইন। সুবহানাল্লাহ! তাই উনার
সম্মানিত জীবনী মুবারক জানাও সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের জন্য ফরযে আইন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম:
সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল
মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত
পিতা আলাইহিস সালাম হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত জাহ্শ ইবনে রিআব আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
তিনি ছিলেন বনূ আসাদ গোত্রের একজন অনুসরণীয়-অনুকরণীয় সম্মানিত বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক
এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ফুফা উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবাহনাল্লাহ!
উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, তিনি হচ্ছেন উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত
আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
। সুবাহনাল্লাহ! সকলেই উনাকে বেমেছাল
সম্মান-ইজ্জত ও তা’যীম-তাকরীম মুবারক করতো। সুবহানাল্লাহ! উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস
সালাম উনার দিক থেকে ১০ম পুরুষে যেয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সাথে মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! উনার ৯ম পূর্বপুরুষ হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত আসাদ
ইবনে খুযাইমাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত আসাদ ইবনে খুযাইমাহ্
আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন আরবের প্রসিদ্ধ গোত্র ‘বনূ আসাদ’ গোত্রের মহাসম্মানিত প্রথম
পুরুষ। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক অনুযায়ী উনার সম্মানিত
বংশ বা গোত্র মুবারক উনার নামকরণ মুবারক করা হয় ‘বনূ আসাদ’ গোত্র হিসেবে। সুবহানাল্লাহ!
এজন্য উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস
সালাম উনাকে ‘আল আসাদিয়্যাহ্’ বলা হয়। সুবাহনাল্লাহ! যেমন- কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
اُم
الْـمُوْمِنيْنَ سيدتنا حَضْرَتْ زَيْنَبَ
بِنْتَ جَحْشِ بْنِ رِئَابٍ الْأَسَدِيّةَ عليها السلام
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব বিনতে জাহ্শ ইবনে
রিআব আল আসাদিয়্যাহ আলাইহাস সালাম।” সুবহানাল্লাহ! (আর রওদ্বুল উন্ফ ৪/৪২৮)
মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম:
উম্মুল মু’মিনীন উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান
আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিতা মাতা হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উমাইমাহ্ বিনতে আব্দুল
মুত্ত্বালিব ইবনে হাশিম আলাইহিমুস সালাম, যিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
আপন ফুফু। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
আপন ফুফাতো বোন। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
وَأُمُّهَا
أُمَيْمَةُ بِنْتِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ بْنِ هَاشِمِ عَمَّةُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “আর উনার মহাসম্মানিতা মাতা হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উমাইমাহ্ বিনতে আব্দুল
মুত্ত্বালিব ইবনে হাশিম আলাইহিমুস সালাম, যিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
আপন ফুফু। সুবহানাল্লাহ! (ইবনে হিশাম, আর রওদ্বুল উন্ফ, সুবুলুল হুদা
ওয়ার রশাদ, আনসাবুল আশরাফ, মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ্, ‘উয়ূনুল আছার, আল মুখতাছারুল কাবীর, ইবনে সা’দ, তারীখুল ইসলাম ইত্যাদী)
সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল
মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক-২
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম
উনার সম্মানিত ইখ্ওয়ান ভাইগণ এবং সম্মানিতা আখাওয়াত বা বোনগণ:
সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল
মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনারা ছিলেন
তিন (৩) ভাই এবং তিন (৩) বোন।। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত ভাইগণ উনারা হচ্ছেন-
১. বিশিষ্ট ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা
আনহু তিনি। সুবহানাল্লাহ! তিনি সম্মানিত উহুদ উনার জিহাদে সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক
প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! কাফিরেরা উনার অঙ্গ-প্রতঙ্গ মুবারক কেটে সম্মানিত জিসিম
মুবারক ক্ষতবিক্ষত করে। উনাকে এবং উনার সম্মানিত মামা সাইয়্যিদুশ শুহাদা’ সাইয়্যিদুনা
হযরত হামযাহ্ আলাইহিস সালাম উনাকে অর্থাৎ উনাদের উভয়কে একই রওযা শরীফ-এ দাফন মুবারক
করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
২. বিশিষ্ট ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ আহমদ ইবনে জাহ্শ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা
আনহু। তিনি হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত
ফারি‘য়াহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনাকে শাদী মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
৩. ‘উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহ্শ। সে প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করলেও পরবির্তে মুরতাদ
হয়ে যায়।
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম
উনার সম্মানিত বোনগণ উনারা হচ্ছেন-
১. উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস
সালাম
২. সাইয়্যিদাতুনা হযরত হামনাহ্ ইবনে জাহ্শ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা। প্রথমে
উনার শাদী মুবারক হয় হযরত মুছ‘আব ইবনে ‘উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সাথে।
উনার সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের পর উনার শাদী মুবারক হয় হযরত ত্বলহাহ্
ইবনে ‘উবাইদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সাথে। সুবহানাল্লাহ।
৩. সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু হাবীবাহ্ বিনতে জাহ্শ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা।
তিনি ছিলেন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে ‘আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার আহলিয়া। সুবহানাল্লাহ!
(যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ১/২৫১, শারহুয যারক্বানী ৪/৪৯৩, উস্দুল গবাহ্ ২/৮৮, ইস্তি‘য়াব
৩/৮৭৮)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
পৃথিবীর কোনো কিতাবে উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু
ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের
মহাসম্মানিত তারীখ মুবারক উল্লেখ নেই। এটা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত আফসোসের বিষয় যে, মুসলমানরা উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত
আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক
প্রকাশের মহাসম্মানিত তারীখ মুবারক সংরক্ষণ করতে পারেনি। না‘ঊযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা
ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি হচ্ছেন একমাত্র যিনি
খ¦ালিক্ব মালিক
রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মাহবূব হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মানিত নি‘য়ামত মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু
বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে আখাছ্ছুল খাছভাবে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন
আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সাথে উনার রয়েছেন বেমেছাল হাক্বীক্বী দায়িমী তা‘য়াল্লুক্ব-নিসবত
মুবারক এবং যিয়ারত মুবারক। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে একমাত্র উনার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম
উনাদের, আখাছ্ছুল খাছভাবে হযরত উম্মাহাতুল
মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মহাম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক
এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের মহাসম্মানিত তারীখ
মুবারকসমূহ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তারীখ মুবারকসমূহ প্রকাশ করা। সুবহানাল্লাহ!
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ মুজাদ্দিদে
আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ
ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, “উম্মুল মু’মিনীন আস
সাবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত
নুবুওওয়াত ও রিসালাত মুবারক প্রকাশের ২০ বছর পূর্বে ১৯শে রবী‘উছ ছানী শরীফ ইয়াওমুল
জুমু‘য়াহ্ শরীফ বনূ আসাদ গোত্রে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক
প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
وَكَانَ
اسْمُهَا بُرَّةُ فَسَمَّاهَا رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
زَيْنَبَ
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস
সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক ছিলেন ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত র্বুরাহ্
আলাইহাস সালাম’। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রাখেন ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব আলাইহাস
সালাম’।” সুবহানাল্লাহ! (‘উয়ূনুল আছার ১/২০৮, তাহ্যীবুল আসমা’ ২/৩৪৪)
সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল
মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক-৩
সম্মানিত
ও পবিত্র কুনিয়াত মুবারক-
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম
উনার সম্মানিত ও পবিত্র কুনিয়াত মুবারক হচ্ছেন ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল হাকাম আলাইহাস
সালাম।’ সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
زينب بنت
جحش بن رئاب الأسدية، تكَنّٰى أم الحكم،
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস
সালাম উনাকে ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল হাকাম আলাইহাস সালাম’ সম্মানিত ও পবিত্র কুনিয়াত
মুবারক-এ সম্বোধন করা হতো।” সুবহানাল্লাহ! (তাহ্যীবুল আসমা’ ২/৩৪৪, উস্দুল গবাহ্ ৭/১২৬)
এই সম্মানিত ও পবিত্র কুনিয়াত মুবারক উনার অর্থ মুবারক হচ্ছেন- অত্যন্ত তীক্ষ্ম
সমঝ, সীমাহীন সম্মানিত ইলম ও হিকমত
মুবারক উনাদের অধিকারী, মালিক। সুবাহনাল্লাহ!
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম
তিনি ছিলেন অত্যন্ত তীক্ষ্ম সমঝ, সীমাহীন ইলম ও হিকমত মুবারক উনাদের অধিকারী, মালিক। এ কারণে উনাকে সবাইকে ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল হাকাম
আলাইহাস সালাম’ এই সম্মানিত ও পবিত্র কুনিয়াত মুবারক-এ সম্বোধন করতো। প্রকৃতপক্ষে উম্মুল
মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার কোন
আওলাদ আলাইহিস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম ছিলেন না।
উনার সম্মানিত ও পবিত্র লক্বব মুবারক:
উম্মুল মু’মিনীন, আহলু বাইতি
রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, আত্ব ত্বাহিরাহ, আত্ব ত্বইয়্যিবাহ্, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, যাতুল হিজরাতাঈন, মালিকাতুল জান্নাহ, মালিকাতুল কায়িনাত এছাড়াও আরো অসংখ্য-অগণিত। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত শৈশবকাল মুবারক
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম
তিনি উনার মহাসম্মানিত শৈশবকাল মুবারক উনার মহাসম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম
উনাদের সাথে এবং উনার সম্মানিত ভাই-বোন উনাদের সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা
শরীফ-এ অতিবাহিত করেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ:
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম
তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সূচনালগ্নেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং সম্মানিত
ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ্! এই সম্পর্কে আল্লামা হযরত ইবনে আছীর রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘উসদুল গ¦বাহ্ শরীফ’ উনার মধ্যে বলেন,
وكانت
قديمة الإسلام،
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস
সালাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সূচনালগ্নে সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ করেন।” সুবাহানাল্লাহ!
(উস্দুল গবাহ্ ৭/১২৬)
হাবশায় সম্মানিত হিজরত মুবারক:
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম
তিনি উনার তিন ভাই ও দুই বোনসহ হাবশায় দুই বার হিজরত মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! এই
সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
اسلم قبل
دخول رسول الله صلى الله عليه وسلم دار الأرقم، وهاجر الهجرتين إلى أرض الحبشة هو
وأخواه أبو أحمد، وعبيد الله، وأختهم زينب بنت جحش، زوج النبي صلى الله عليه وسلم
وأم حبيبة وحمنة بنات جحش، فأما عبيد الله فإنه تنصر بالحبشة ومات ومات بالحبشة
نصرانيًا..
অর্থ: “নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘দারুল আরক্বামে’ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ
করার পূর্বেই সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবনে জাহ্শ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু
তিনি সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি, উনার ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ আহমাদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা
আনহু তিনি, ‘উবাইদুল্লাহ এবং
উনাদের মহাসম্মানিত বোন উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু
ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু হাবীবাহ্ বিনতে জাহ্শ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি
ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত হামনাহ্ বিনতে জাহ্শ
রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি অর্থাৎ উনারা হাবশায় দুই বার সম্মানিত হিজরত মুবারক
করেন। সুবহানাল্লাহ! ‘উবাইদুল্লাহ সেখানে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ এবং খ্রিষ্টান অবস্থায় সেখানে মারা যায়।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (উস্দুল গ¦বাহ্ ফী মা’রিফাতিছ
ছাহাবাহ্ লিইবনে আছীর ২/৮৯, তাহ্যীবুল আসমা লিন নববী ১/২৬২)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ-এ সম্মানিত হিজরত মুবারক
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম
তিনি হাবশা থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। তারপর
তিনি সেখান থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ সম্মানিত হিজরত মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
আল্লামা ইবনে কাছীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
كانت
زينب بنت جحش رضي الله عنها من المهاجرات الاول
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস
সালাম তিনি ছিলেন সর্বপ্রথম হিজরতকারী মহিলাগণ উনাদের মধ্যে অন্যতম।” সুবহানাল্লাহ!
(বিদায়া-নিহায়া ৪/১৬৯)
প্রথম শাদী মুবারক
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম
উনার প্রথম শাদী মুবারক হয় সাইয়্যিদুনা হযরত যায়েদ ইবনে হারিছাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা
আনহু উনার সাথে। সাইয়্যিদুনা হযরত যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সাথে প্রায়
এক বছর সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। তারপর উনাদের উভয়ের মাঝে জুদায়ী ঘটে।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ:
সাইয়্যিদুনা হযরত যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার থেকে জুদা হয়ে গেলে স্বয়ং
মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন
আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম
শরীফ সম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ! সময়টি ছিলো ৫ম হিজরী শরীফ উনার ৮ই যিলক্বদ শরীফ লাইলাতু
সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ রাত)। সুবহানাল্লাহ! তখন দুনিয়াবী দৃষ্টিতে উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান
আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন ৩৭ বছর ৬ মাস ১৯ দিন। সুবহানাল্লাহ!
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম
উনার সম্মানিত জবান মুবারক-এ উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্
আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত প্রশংসা মুবারক:
ইফকরে ঘটনার সময় মুনাফিক্বরা যখন উম্মুল
মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার প্রতি মিথ্যা
অপবাদ দেয়, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে এ বিষয়ে সুওয়াল করেন। হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা প্রত্যেকেই অনেক শক্ত জবাব দেন এবং
বলেন, এটা মুনাফিক্বদের কাট্টা একটা
মিথ্যা অপবাদ। না‘ঊযুবিল্লাহ! উনাদের মধ্যে কেউ কেউ মুনাফিক্ব সর্দার উবাই ইবনে সুলূকে
হত্যা করা জন্য আরজী পেশ করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনাকেও এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। তিনিও অনেক শক্ত
জবাব দেন এবং বলেন যে,
والله ما
علمت إلا خيرا
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা
হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে ভালো ব্যতীত আর কিছুই জানিনা।” সুবহানাল্লাহ!
(ইমতা‘উল আসমা’ ১/২১৪, ‘উয়ূনুল আছার
২/৯০, দালাইলুন নুবুওওয়াহ্ লিলবাইহাক্বী
৪/৭২, বিদায়া-নিহায়া ৪/১৬৯ ইত্যাদী)
অর্থাৎ মুনাফিক্বরা যেটা ছড়িয়েছে এটা কাট্টা একটা মিথ্যা অপবাদ। না‘ঊযুবিল্লাহ!
আল্লামা ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وقد وصفت
عائشة زينب بالوصف الجميل في قصة الإفك
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম
উনার ‘ইফক’-এর ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত
আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি উনার অনেক উত্তম প্রশংসা মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
(ইছাবাহ্ ৭/৬৬৭)
সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল
মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক-৪
হযরত উম্মাহাতুল
মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্মানিত জবান মুবারক-এ উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত প্রশংসা মুবারক:
উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম তিনি
বলেন,
وَلَمْ
أَرَ امْرَأَةً قَطُّ خَيْرًا فِي الدِّينِ مِنْ زَيْنَبَ. وَأَتْقَى لِلَّهِ
وَأَصْدَقَ حَدِيثًا، وَأَوْصَلَ لِلرَّحِمِ، وَأَعْظَمَ صَدَقَةً، وَأَشَدَّ
ابْتِذَالًا لِنَفْسِهَا فِي الْعَمَلِ الَّذِي تَصَدَّقُ بِهِ، وَتَقَرَّبُ بِهِ
إِلَى اللهِ تَعَالَى
অর্থ: “আমি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার
চেয়ে অধিক দ্বীনদার, অধিক পরহেযগার, অধিক সত্যভাষী, অধিক উদার, অধিক দানশীল, সৎকর্মশীল এবং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত
রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে বেশি তৎপর কাউকে দেখিনি।” সুবহানাল্লাহ!
(মুসলিম শরীফ, নাসায়ী শরীফ, আল মু’জামুল আওসাত্ব লিত ত্ববারনী ৯/৮৮)
উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম তিনি
আরো বলেন,
ما رأيت
امرأة قط، خيرا في الدين من زينب
অর্থ: “আমি উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান
আলাইহাস সালাম উনার চেয়ে অধিক দ্বীনদার কোনো মহিলা দেখিনি।” সুবহানাল্লাহ! (উস্দুল
গবাহ্ ৬/১২৭, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা’
৩/৪৭৪)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ
عَائِشَةَ قَالَتْ: يَرْحَمُ اللَّهُ زَيْنَبَ بِنْتَ جَحْشٍ لَقَدْ نَالَتْ فِي
هَذِهِ الدُّنْيَا الشَّرَفَ الَّذِي لا يَبْلُغُهُ شَرَفٌ. إِنَّ اللَّهَ
زَوَّجَهَا نَبِيَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الدُّنْيَا وَنَطَقَ
بِهِ الْقُرْآنُ. وَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ قَالَ لَنَا وَنَحْنُ حَوْلَهُ:
أَسْرَعُكُنَّ بِي لُحُوقًا أَطْوَلُكُنَّ بَاعًا. فَبَشَّرَهَا رَسُولُ اللَّهِ
بِسُرْعَةِ لُحُوقِهَا بِهِ.
অর্থ: “যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়াল ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার প্রতি অবিরত ধারায় সম্মানিত
রহমত মুবারক বর্ষণ করছেন! অবশ্যই নি:সন্দেহে তিনি কায়িনাতের বুকে এমন বেমেছাল সীমাহীন
সম্মান-ইজ্জত ও মর্যাদা-র্মতবা মুবারক হাছিল করেছেন, যেটা আর কেউ হাছিল করতে পারেনি। সুবহানাল্লাহ! স্বয়ং যিনি খালিক্ব
মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজে উনার মহাসম্মানিত নবী, মাহবূব হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ম্মুল মু’মিনীন
আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়াল ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত নিসবতে
‘আযীম শরীফ (শাদী মুবারক) দিয়েছেন এবং তিনি উনার বেমেছাল সীমাহীন সম্মান-ইজ্জত ও মর্যাদা-র্মতবা
মুবারক সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আলোচনা মুবারক করেছেন।
সুবহানাল্লাহ! আর একদা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম আমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত ছিলাম, তখন তিনি আমাদেরকে উদ্দেশ্যে করে ইরশাদ মুবারক করেছেন, আপনাদের মধ্যে যাঁর সম্মানিত ও পবিত্র হাত মুবারক লম্বা, তিনি সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবেন। সুবহানাল্লাহ! এই মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনাকে
দ্রুত উনার সাথে মিলিত হওয়ার সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
(ইবনে সা’দ ৮/৮৫)
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম
উনার সম্পর্কে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাদিসাহ্ আলাইহাস সালাম তিনি
বলেন,
وَكَانَتِ
امْرَأَةً صَالِحَةً صَوَّامَةً قَوَّامَةً.
অর্থ: “তিনি ছিলেন অত্যন্ত নেককার, অধিক রোযা পালনকারিণী, অনেক বেশি
নামায আদায়কারিণী।” (ইবনে সা’দ ৮/৮২)
ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘তারীখে দিমাশক্ব’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
قالت أم
سلمة وكانت لرسول الله صلى الله عليه وسلم معجبة وكان يستكثر منها وكانت امرأة
صالحة صوامة قوامة صناعا تصدق بذلك كله على المساكين
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাদিসাহ্ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু
ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নিকট অত্যন্ত প্রিয় এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বেশি বেশি উনার সম্মানিত
ছানা-ছিফত মুবারক, সম্মানিত প্রশংসা
মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ছিলেন অত্যন্ত
নেককার, অধিক রোযা পালনকারিণী, অনেক বেশি নামায আদায়কারিণী এবং হাতের কাজে অত্যন্ত পারদর্শী।
তিনি নিজ হাত মুবারক-এ কাজ করে উপার্জিত সমস্ত অর্থ ফক্বীর-মিসকীনদেরকে দান করে দিতেন।”
সুবহানাল্লাহ! (দারীখে দিমাশক্ব ৩/২১২)
দানশীলতা-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ
عَائِشَةَ ، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :
أَسْرَعُكُنَّ بِي لُحُوقًا أَطْوَلُكُنَّ يَدًا ، قَالَتْ : فَكُنَّ
يَتَطَاوَلْنَ أَيُّهُنَّ أَطْوَلُ يَدًا ، قَالَتْ : فَكَانَ أَطْوَلَنَا يَدًا
زَيْنَبُ لأَنَّهَا كَانَتْ تَعْمَلُ
بِيَدِهَا وَتَتَصَدَّقُ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম
উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের মধ্যে যাঁর সম্মানিত ও পবিত্র হাত মুবারক লম্বা তিনি
সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস
সালাম উনারা পরস্পর হাত মুবারক মেপে দেখতেন যে, কার হাত মুবারক সবচেয়ে লম্বা। আমাদের মধ্যে লম্বা হাত মুবারক
উনার অধিকারী ছিলেন, উম্মুল মু’মিনীন
আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি। কেননা, তিনি নিজ হাত মুবারক-এ কাজ করে, সেই অর্থ দান করতেন।” সুবহানাল্লাহ! (ছহীহ্ ইবনে হিব্বান ৮/১০৮)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্
সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন,
فكنا إذا
اجتمعنا في بيت إحدانا بعد وفاة رسول اللَّه صلّى اللَّه عليه وسلّم نمدّ أيدينا
في الجدار نتطاول، فلم نزل نفعل ذلك حتى توفيت زينب بنت جحش، وكانت امرأة قصيرة،
ولم تكن بأطولنا، فعرفنا حينئذ أنّ النبيّ صلّى اللَّه عليه وسلّم إنما أراد طول
اليد بالصدقة، وكانت زينب امرأة صناع اليدين، فكانت تدبغ وتخرز وتتصدق به في سبيل.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম
তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর উম্মাহাতুল মু’মিনীন
আলাইহিন্নাস সালাম আমরা সবাই যখন আমাদের কোনো একজনের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা
শরীফ-এ একত্রিত হতাম, তখন আমরা
সকলে আমাদের হাত মুবারক লম্বা করে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে মেপে দেখতাম যে, আমাদের মধ্যে কার হাত মুবারক সবচেয়ে লম্বা। উম্মুল মু’মিনীন
আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত আমরা এ রকম করতাম। তিনি
তত বেশি লম্বা ছিলেন না এবং উনার সম্মানিত হাত মুবারকও আমাদের সকলের চেয়ে বেশি লম্বা
ছিলো না। যখন তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক করলেন, তখন আমরা বুঝতে পারলাম যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
হাতের প্রশস্ততা (আত্বওয়ালু ইয়াদান) দ্বারা দান-ছদক্বাহ বুঝিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! উম্মুল
মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি হাতের
কাজে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। তিনি দাবাগাত এবং সেলাই কাজ করে, অর্জিত সমস্ত অর্থ মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করে দিতেন।”
সুবহানাল্লাহ! (ইছাবাহ্ ৮/১৫৪)
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
مَا
تَرَكَتْ زَيْنَبُ بِنْتُ جَحْشٍ دِرْهَمًا وَلَا دِينَارًا كَانَتْ تَصَدَّقُ
بِكُلِّ مَا قَدَرَتْ عَلَيْهِ وَكَانَتْ مَأْوَى الْمَسَاكِينِ
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস
সালাম তিনি যায়নাব বিনত জাহশ দিরহাম-দীনের কিছুই রেখে যাননি। কারণ উনার সম্মানিত হাত
মুবারক-এ যা কিছু আসতো সমস্ত কিছুই দান করে দিতেন। তিনি ছিলেন ফক্বীর-মিসকীনদের আশ্রয়স্থল।”
সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ ৮/১১৪)
সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল
মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক-৫
কিতাবে বর্ণিত
রয়েছে,
كان عطاء
زينب بنت جحش اثني عشر ألفا لم تأخذه إلا عاما واحدا، فجعلت تقول: اللَّهمّ لا
يدركني هذا المال من قابل فإنه فتنة، ثم قسمته في أهل رحمها وفي أهل الحاجة، فبلغ
عمر، فقال: هذه امرأة يراد بها خير، فوقف عليها، وأرسل بالسلام، وقال: بلغني ما
فرقت. فأرسل بألف درهم تستبقيها، فسلكت به ذلك المسلك.
অর্থ: “দ্বিতীয় খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উম্মুল
মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার জন্য
বাৎসরিক ১২ হাজার দিরহাম ভাতা নির্ধারণ করেন।
কিন্তু তিনি কখনও তা গ্রহণ করেননি। তবে একবার তিনি তা গ্রহণ করে মহান আল্লাহ পাক উনার
নিকট দোআ করেন,
اللَّهمّ
لا يدركني هذا المال من قابل فإنه فتنة،
অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ
পাক! আগামীতে এই সম্পদ যেন আমাকে আর না পায়। এই সম্পদ হচ্ছে মানুষের জন্য পরীক্ষা।”
তারপর তিনি দিরহামগুলো আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করে দেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সংবাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ
পৌঁছলে, তিনি বলেন,
هذه
امرأة يراد بها خير،
অর্থ: তিনি এমন একজন সুমহান ব্যক্তিত্বা মুবারক যে, উনার থেকে শুধু খায়ের-বরকতই আশা করা যায়। সুবহানাল্লাহ!
তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র হুজরা শরীফ
উনার নিকট গিয়ে উনার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সালাম
পেশ করেন। তিনি উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান
আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, আপনি যে, সমস্ত সম্পদ বণ্টন
করে দিয়েছেন, সে সংবাদ আমার কাছে
পৌঁছেছে। তারপর তিনি উনার খরচের জন্য উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ এক হাজার দিরহাম
পাঠান। তিনি সেগুলিও পূর্বের ন্যায় দান করে দেন।” সুবহানাল্লাহ! (শরহুয যারক্বানী ৪/৪১৫, ইবনে সা’দ)
তিনি ছিলেন অত্যন্ত নরম দিল মুবারক উনার অধিকারী:
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
أن رسول
الله - صلى الله عليه وسلم قال لعمر بن الخطاب
إن زينب بنت جحش أواهة "
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস
সালাম উনাকে উদ্দেশ্যে করে ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু
ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত নরম দিল মুবারক উনার অধিকারী।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল
হুদা ওয়ার রশাদ ১১/২০৩)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن
ميمونة بنت الحارث أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال إنها أواهة
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম (সাইয়্যিদাতুনা
হযরত মাইমূনাহ্ বিনতে হারিছ আলাইহাস সালাম) তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু
ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত নরম দিল মুবারক উনার অধিকারী।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল
হুদা ওয়ার রশাদ ১১/২০৩)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ
আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “উম্মুল মু’মিনীন আস
সাবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি ২০ হিজরী শরীফ উনার
২৩শে জুমাদাল উখরা শরীফ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র
বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ!
দুনিয়ার যমীনে ৫২ বছর ২ মাস ৪ দিন সম্মানিত
অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত গোসল মুবারক:
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা নিজে উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান
আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত গোসল মুবারক করান। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত কাফন মুবারক
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি নিজের সম্মানিত কাফন মুবারক উনার ব্যবস্থা
নিজেই করে যান। আর তিনি উনার আপনজনদের বলে যান, আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের
পর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত কাফন মুবারক উনার কাপড় পাঠাতে পারেন, যদি তিনি সম্মানিত কাফন মুবারক উনার কাপড় পাঠান, তাহলে দুইটির যেকোন একটি গরীব-মিসকীনদেরকে দান করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!
দেখা গেলো যে, সত্যিই উম্মুল মু’মিনীন
আস সাবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর উনার সম্মানিত কাফন মুবারক সম্পন্ন
করার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পাঁচখানা কাপড় মুবারক
পাঠান। তারপর তা দিয়ে উনার সম্মানিত কাফন মুবারক সম্পন্ন করা হয়। আর উনার রেখে যাওয়া
কাপড় মুবারক গরীব-মিসকীনদেরকে দান করে দেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত জানাযা উনার নামায মুবারক:
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান
আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জানাযা উনার নামায মুবারক পড়ান। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখা:
উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনার
মধ্যে রাখার জন্য হযরত মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে জাহ্শ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা
আনহু তিনি, হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি, আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ আহমদ ইবনে জাহ্শ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা
আনহু তিনি এবং মুহম্মদ ইবনে ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা তিনি অর্থাৎ উনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ-এ নামেন। সুবহানাল্লাহ!
উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন উনার নিকট আত্মীয় উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! উনার মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ জান্নাতুল বাক্বী’ শরীফ অবস্থিত। সুবহানাল্লাহ!
0 Comments:
Post a Comment