একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৫২

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে  ইসমে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদুর রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান

মুর্শিদ ক্বিবলা উনার বিরহে অতলান্ত মনোবেদনা-

  বিগত দিনের মশহুর ওলীগণের মুবারক জীবনচরিত পাঠে জানা যায়, আপন শায়েখ উনার সান্নিধ্যে উনারা প্রত্যেকেই পূর্ণমাত্রায় কামিয়াবী হাছিল করেছেন। উনারা সকলেই উত্তরণের এমন শীর্ষ সোপানে উপনীত হয়েছিলেন, যেখান থেকে বিচ্যূতির কোন পথই অবশিষ্ট ছিলোনা। আল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে নৈকট্য সোপানের এমন অটুট পর্যায়ে নতুন করে উনাদের কোন শায়েখ উনার ছোহবত ইখতিয়ারের ও প্রয়োজন ছিলোনা। তবু উনারা সকলেই আপন শায়েখ উনার ইন্তিকালে বিরহ-বিধুর মন ও মননে বাকরুদ্ধ হয়েছেন, বিমর্ষ হয়েছেন, অব্যক্ত বেদনায় অধীর থেকেছেন ইন্তিকাল অবধি। মাদারজাদ ওলী, আওলার্দু রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম ও উনার প্রাণের আঁকা শায়েখ উনার বিরহে অভিন্ন যন্ত্রণাকাতরতায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই নিদারুণ আক্রান্তি থেকে বিমুক্তি নেই। বিমুক্তি কাম্যও নয়।কারণ, বেদনার নিরন্তর দহন ও পীড়নে প্রাপ্ত নিয়ামতের অজস্রধারা সকল প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক হচ্ছে।     

 কামিয়াবীর শীর্ষ মন্জিলে অধিষ্ঠিত ওলীগণের বাহ্যিক আচরণ ও আমল সাধারণের আচরণ ও আমলের মতোই স্বাভাবিক মনে হওয়ায় উনাদের উত্তরণের নিগূঢ় স্তর এবং অতি উন্নত মর্যাদা সকলের অবহিতিতে থাকেনা। থাকা সম্ভবও নয়। পূর্ণতাপ্রাপ্ত ওলীগণের অনুভব ও অনুসন্ধানের ব্যাপ্তি উনাদের মুবারক জীবন যাপন প্রণালী, দৃশ্যমান আমল এবং যাবতীয় কর্মপ্রবাহে সঙ্গত কারণেই প্রতিফলিত হয়। আয়াসসাধ্য আয়োজনে নির্ধারিত সকল নিয়ামত হাছিল করেও আরো পাবার প্রত্যাশায় অথবা না পাবার উদ্বেগে উনারা নিশিদিন বেদনাদগ্ধ হতে থাকেন। এ যাতনা নিত্য সঙ্গী বলেই কামিয়াবীর আরো অগ্রযাত্রায় উনারা কখনো ক্লান্ত হননা। সাধারণ মানুষ, আশপাশের বাসিন্দা, এমনকি নিকট বন্ধু-পরিজনও এসব কিছুতেই বেখবর। সাধারণ মানুষ কেবল ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা প্রতিপালনকেই বুযূর্গী হাছিলের নিয়ামক মাধ্যম হিসেবে সাব্যস্ত করে নেয়। তাও আবার ঈমান ও আক্বীদার বিশুদ্ধতায় এসব আমলে ইখলাছ-উনার অপরিহার্যতার বিষয়টি তাদের কাছে অনুপস্থিত। অনেকের কাছে গৌণ এবং কারো কাছে অবোধ্য। আল্লাহ্ পাক-উনার নৈকট্যসুধায় পরিপ্লুত সূক্ষ্মদর্শী ওলীগণ উনাদের স্বভাবসঞ্জাত অন্তর্বেদনায় অনুক্ষণ ভারাক্রান্ত থাকেন। কামিয়াবীর প্রেক্ষিতে উনাদের অন্তর রাজ্যের গতিবিধি অন্যের কাছে অবোধ্য।

          আল্লাহ্ পাক-উনার নৈকট্য তালাশে আরম্ভকারী, আরম্ভে প্রবাহমান অথবা নিমজ্জিত এবং আরম্ভ শেষে গন্তব্যে উপনীত ব্যক্তির অবস্থা উনাদের প্রকৃতিগত কারণেই পৃথক। যদিও আরম্ভ শুরুই করেননি এবং প্রত্যাশিত মন্জিলে পৌঁছে গেছেন, এমন দুজনের দৃশ্যমান আচরণ অভিন্ন মনে হয়। এমনকি গন্তব্যে পৌঁছার কোশেশে নিয়োজিত ব্যক্তির (সালিক) প্রেক্ষিত একান্ত ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও উনাকে ও পরিপূর্ণ কামিয়াব ভেবে ভুল করার ঘটনাও অস্বাভাবিক এবং বিরল নয়। আসলে পরিপূর্ণরূপে কামিয়াব ওলীর দৃঢ় প্রত্যয় ও অবিচল স্থিতি উনার মনোগত এবং প্রশান্তি ও অন্তর্দহনও একান্তই উনার নিজস্ব সম্পদ। লব্ধ নিয়ামত ও অন্তরের বৈভব উনার বাইরের আচরণ, আমল ও কর্মপ্রবাহে যে প্রকৃতি ও প্রক্রিয়ায় প্রতিভাত হয়, তাঅতি সূক্ষ্ম। তাই সূক্ষ্মদর্শী ওলীগণের অবস্থা, কামিয়াবীর স্তর, মর্যাদা ও মাহাত্ম্য সাধারণের উপলব্ধিতে থাকেনা। 

          এ মর্মে আল্লাহ্ পাক হাদীসে কুদসীতে বলেন,

ان اوليائى تحت قبائى لايعرفهم غيرى الا اوليائى.

অর্থঃ- নিশ্চয়ই আমার মাহবুব ওলীগণ আমার কুদরতী জুব্বার নীচে (আমার ইল্ম-উনার অধীনে এবং একান্ত নিরাপত্তা হিফাজতে) অবস্থান করেন। আমি এবং আমার মনোনীত বন্ধুগণ (সমমর্যাদার সূক্ষ্মদর্শী ওলী)ছাড়া হাক্বীকীভাবে উনাদেরকে আর কেউই চিনতে পারেনা।

 (অসমাপ্ত)

আবা-১১১

 

0 Comments: