একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৫০

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে  ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদুর রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

মুর্শীদ ক্বিবলা উনার কর্ম পরিধি ও বিছাল শরীফ লাভ-

মুসলমান সমাজের এক মহা দুর্যোগকালে পিতার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে নায়িবে মুজাদ্দিদ হযরত মাওলানা আবূ নছর মুহম্মদ আবদুল হাই ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বাতিলের মূলোৎপাটনে অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বিপর্যস্ত ঈমান-আক্বীদায় অধিকাংশ মুসলমান তখন বিধর্মী আচরণ ও দর্শনে আকৃষ্ট হতে শুরু করেছিল। তিনি চির ধরা অনুভব ও বিশ্বাসের নবায়নে ব্রতী হয়ে মুসলমানদেরকে পরিপূর্ণরূপে ইসলাম পালনে অভ্যস্ত করে তুলেছিলেন। কাজটি সে সময়ে খুব কঠিন ছিল।

          তখনকার মুসলমানদের শোচনীয় অবস্থা সম্পর্কে জার্মান ঐতিহাসিক Hans Kohan তার "A History of Nation in The East" গ্রন্থে লিখেছেন, In India, especially, Many people were Mohammedans only in name. They observed the customs of Hindus, celebrated their festivals, maintained their laws of inheritance and marriage and prayed to their many Gods" অর্থঃ- সে সময়ে অনেক মানুষ, বিশেষ করে ভারতের মানুষ, মুসলমান ছিল নামে মাত্র। তারা হিন্দুদের ধর্মীয় প্রথা পালন করতো। তাদের অনুষ্ঠানাদি (পূজা-পার্বণ) উপভোগ করতো। সম্পত্তির উত্তরাধিকার ও বিয়ে শাদীতে হিন্দুদের রীতিনীতি মেনে চলতো এবং অনেক দেব-দেবীর উপাসনা করতো।        হাদীয়ে যামান হযরত মাওলানা আবূ নছর মুহম্মদ আবদুল হাই ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক জীবনব্যাপী ইসলাম ধর্মের জন্য যে সংগ্রাম করেছেন এবং তাতে কামিয়াবী হাছিল করেছেন, তা অতুলনীয়।

          বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ”-উনার ১ম খন্ডে উনার সম্পর্কে লিখা হয়েছে, “পিতার ন্যায় তিনিও র্শিক, বিদয়াত ও কুফরীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। সমাজে বিরাজিত যাবতীয় অপসংস্কৃতি, কুসংস্কার ও ইসলাম বিরোধী আচার-অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হন। খৃষ্টান মিশনারীদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধেও তিনি রুখে দাঁড়ান।

          তিনি উনার সময়কালে যে সব ফিত্নার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেন এবং প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, সে সবের বিশেষ কটি হলো-

১. কমিউনিজম ও নাস্তিকতা,

২. কাদিয়ানী মতবাদ,

৩. পবিত্র মুর্হরম পালনে শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ,

৪. মুতাজিলা মতবাদ,

৫. পুনর্জন্ম ও জন্মান্তরবাদ,

৬. পবিত্র কুরআন শরীফ হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বাণী-এ ভ্রান্ত মতবাদ ৭. ভন্ড পীর, ফকীর ও উলামায়ে ছূদের বিরুদ্ধে আন্দোলন।

৮. র্শিক, বিদয়াত ও কুফরীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম,

৯. খৃষ্টান মিশনারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন,

১০. সুন্নত পালনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করণ এবং সর্বোপরি.

১১. মানুষের মানসিক পরিশোধন (ইসলাহ্) করণ।

          ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও প্রতিরোধের জন্য হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি বাহ্যিক যে পদ্ধতি অবলম্বন করেন এবং যে সব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, সংক্ষেপে তা হলো-

১. অবিরাম ওয়াজ-নছীহত,

২. ঈছালে ছাওয়াব মাহ্ফিল প্রতিষ্ঠা,

৩. লাইব্রেরী ও গবেষণা বিভাগ স্থাপন,

৪. প্রকাশনা কার্যক্রম,

৫. মসজিদ ও মাদ্রাসা স্থাপন,

৬. খানকাহ্ শরীফ প্রতিষ্ঠা,

৭. ভারত, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য স্থানে খলিফা প্রেরণ,

৮. সমাজ হিতৈষণামূলক বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন প্রতিষ্ঠা,

৯. বাহাস-মুবাহাসা ও মানবসেবা কার্যক্রম। সার্বিকভাবে এসব কাজ পরিচালনার জন্য তিনি ইসলাম মিশননামে একটি কেন্দ্রীয় সংগঠন তৈরী করেন। উনার জন্য তিনি কমিটি গঠন করেন। সারা দুনিয়াব্যাপী-উনার কর্মবিস্তৃতির উল্লেখসহ তিনি একটি অতুলনীয় গঠনতন্ত্রও প্রণয়ন করেন।

  তিনি অত্যন্ত সহজ-সরল জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। উনার অনেক কারামত প্রকাশিত হয়েছে মর্মে জীবনী গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণে কঠোর পরিশ্রম এবং ইসলাম-সম্পৃক্ত আমল ও বিপুল কর্মপরিচালনায় তিনি আজীবন ব্যস্ত থাকেন। এতে উনার শরীর মুবারকে প্রভাব পড়ে। ১৯৭৭ ঈসায়ী সনের ১২ মে তিনি এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। ২৪ জুমাদাল উলা ১৩৯৭, ১৩ মে ১৯৭৭, ৩০ বৈশাখ ১৩৮৪ শুক্রবার ৭৩ বছর বয়স মুবারকে কলিকাতার সেন্ট মারিস নার্সিং হোমে উনার দুনিয়ার যাবতীয় কর্মসম্পৃক্তির অবসান হয়। মহান আল্লাহ্ পাক-উনার দিদারে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। নিজ গ্রাম ভারতের পশ্চিম বাংলার হুগলী জেলাধীন ফুরফুরা শরীফেউনার পিতার মাযার শরীফের সন্নিকটে উনাকে দাফন করা হয়।  (অসমাপ্ত) 

আবা-১০৯

 

0 Comments: