খইরু খলক্বিল্লাহ, খইরুল বারিয়্যাহ, খইরুল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বাজান ও আম্মাজান আলাইহিমাস সালাম উনার দিক থেকে সম্মানিত নসবনামা মুবারক ও উনাদের মর্যাদা মুবারক
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
الله اعلم حيث يحعل رسلته
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বাধিক জ্ঞাত আছেন রিসালত কাকে দেয়া আবশ্যক।” (পবিত্র সূরা আনয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৪)
পবিত্র নুবুওওয়াত ও রিসালত সাধনালব্ধ কোনো বিষয় নয়। “এটা মহান আল্লাহ পাক উনার একান্ত ফজল ও করম। তিনি যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে তা দান করেন।”
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন। এছাড়া যত মর্যাদা-মর্তবা রয়েছে, সকল মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী তিনি।
উনার পবিত্র অজুদ বা নূর মুবারকই সর্বপ্রথম সৃষ্টি। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اول ما خلق الله نورى
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন।”
তবে তিনি সর্বশেষে দুনিয়াতে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
انا خاتم النبيين لا نبى بعدى.
অর্থ: “আমি নবীগণ উনাদের মধ্যে সর্বশেষ। আমার পরে কোনো নবী নেই।”
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনাকে সৃষ্টি করে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার পেশানী মুবারকে স্থাপন করেন। মূলত, সেই নূর মুবারক উনাকে সম্মানার্থে তিনি সম্মানিত হলেন। আর সেই সম্মানের কারণে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুবারক নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, উনারা যেন আবুল বাশার হযরত ছফীউল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনাকে সিজদা করেন। আবুল বাশার হযরত ছফীউল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনার আওলাদ এবং নবী-রসূল হযরত শীস আলাইহিস সালাম উনাকে তিনি ওসীয়ত মুবারক করেন যে,
ان لا يوضع هذا النور الا فى المطهرات من النساء.
অর্থ: “এই পবিত্র নূর মুবারক উনাকে পবিত্রা মহিলা ব্যতীত অন্য কারো নিকট যেন আমানত রাখা না হয়।” (সীরাতুল হালাবিয়া-১/৪৭, মাওলেদুল মুনাবী)
“তাহ্ক্বীকুল মাক্বাম আলা কিফাইয়াতিল আওয়াম” কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات.
অর্থ: “আমি সবসময় পবিত্র পুরুষগণ উনাদের পৃষ্ঠ মুবারক হতে পবিত্রা মহিলাগণ উনাদের রেহেম শরীফে স্থানান্তরিত হয়েছি।” সুবহানাল্লাহ!
নিম্নে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম নসব মুবারক তুলে ধরা হলো।
১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।
২। যাবীহুল্লাহিল মুকাররম, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অতি প্রিয় নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ও আর্ব্দু রহমান।” আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা সেই প্রিয় নামেরই অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়া ১/৯)
৩। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্ সালাম। তিনি উনার সম্প্রদায়ের সাইয়্যিদ .ছিলেন। (রওদুল উন্ফ ১/২৩)
তিনি সেই ব্যক্তি যিনি জাহিলী যুগেই নিজের জন্য শরাবকে হারাম করেছেন। তিনি ছিলেন মুসতাজাবুদ দাওয়াত। কুরাইশদের সহনশীল ধৈর্যশীল এবং সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তিগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। মানুষ উনার দানশীলতার জন্য উনাকে “ফাইয়াজ” লক্ববে অবহিত করতেন।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৯)
৪। সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস্ সালাম।
৫। সাইয়্যিদুনা হযরত আবদে মানাফ আলাইহিস্ সালাম। উনার নাম মুগীরা।
তিনি অতি সুন্দর সীরত-ছূরত মুবারকের অধিকারী ছিলেন। সেই সৌন্দর্যের কারণে উনাকে ‘উপত্যকার চাঁদ’ লক্বব মুবারকে সম্বোধন করা হতো।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/১৩ রওদুল উন্ফ ১/২৫, তারিখতু তাবারী ১/২৩৭)
মূলত, সেই পবিত্র নসবনামার সকলেরই আকৃতি-প্রকৃতি, সীরত-ছূরত মুবারক ছিলো অতি উজ্জ্বল এবং সৌন্দর্যময়। সে কারণ হলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক বা নূর মুবারক উনার অবস্থান।
৬। সাইয়্যিদুনা হযরত কুসাই আলাইহিস্ সালাম।
৭। সাইয়্যিদুনা হযরত কিলাব আলাইহিস্ সালাম।
৮। সাইয়্যিদুনা হযরত র্মুরা আলাইহিস্ সালাম।
৯। সাইয়্যিদুনা হযরত কা’ব আলাইহিস্ সালাম।
১০। সাইয়্যিদুনা হযরত লুয়াই আলাইহিস্ সালাম।
১১। সাইয়্যিদুনা হযরত গালিব আলাইহিস্ সালাম।
১২। সাইয়্যিদুনা হযরত ফিহির আলাইহিস্ সালাম।
১৩। সাইয়্যিদুনা হযরত মালিক আলাইহিস্ সালাম।
১৪। সাইয়্যিদুনা হযরত নযর আলাইহিস্ সালাম।
১৫। সাইয়্যিদুনা হযরত কিনানাহ্ আলাইহিস্ সালাম।
১৬। সাইয়্যিদুনা হযরত খুযাইমাহ্ আলাইহিস্ সালাম।
১৭। সাইয়্যিদুনা হযরত মাদ্রিকাহ্ আলাইহিস্ সালাম।
উনার নাম মুবারক আমর। এই কারণে উনাকে মাদরিকাহ্ বলা হয় যে, তিনি সেই যুগের সমস্ত সম্মান-ইজ্জত ও গৌরবের অধিকারী ছিলেন। উনার মধ্যে আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক এমন উজ্জ¦লভাবে প্রকাশ ঘটেছিল, যা সবাই দেখতে পেতেন।” সুবহানাল্লাহ! (রওদুল উন্ফ ১/৩০)
১৮। সাইয়্যিদুনা হযরত ইলিয়াস আলাইহিস্ সালাম। তিনি ছিলেন উনার সম্প্রদায়ের সাইয়্যিদ। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমরা হযরত ইলিয়াস আলাইহিস্ সালাম উনাকে গালি দিও না। কারণ, তিনি ছিলেন প্রকৃত মু’মিন। তিনিই উনার পিঠ মুবারক উনার মধ্যে আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তালবিয়া (যা হজ্জের মধ্যে পড়া হয়) পাঠ শুনতে পেতেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৭, রওদুল উন্ফ- ১/৩০)
১৯। সাইয়্যিদুনা হযরত মুদ্বার আলাইহিস্ সালাম।
উনার কন্ঠস্বর মুবারক ছিলো অত্যন্ত সুন্দর। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমরা হযরত মুদ্বার আলাইহিস সালাম উনাকে গালি দিও না, মন্দ বলিও না। কারণ তিনি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম উনার পবিত্র দ্বীন উনার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৭ রওদুল উন্ফ ১/৩০)
২০। সাইয়্যিদুনা হযরত নিযার আলাইহিস্ সালাম।
তিনি স্বীয় চক্ষু মুবারক উনার সামনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক দেখতে পেতেন।” সর্বপ্রথম আরবী ভাষায় বিশুদ্ধ কিতাব তিনিই রচনা করেন। (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৮)
২১। সাইয়্যিদুনা হযরত মা’য়াদ আলাইহিস্ সালাম।
তিনি জিহাদপ্রিয় ছিলেন অর্থাৎ তিনি বড় মুজাহিদ ছিলেন। এমন কোনো জিহাদ নেই যে, তিনি বিজয়ী হননি। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/২৮)
২২। সাইয়্যিদুনা হযরত আদ্নান আলাইহিস্ সালাম।
২৩। সাইয়্যিদুনা হযরত আদ্দ আলাইহিস্ সালাম।
২৪। সাইয়্যিদুনা হযরত মা’কুম আলাইহিস্ সালাম।
২৫। সাইয়্যিদুনা হযরত নাহুর আলাইহিস্ সালাম।
২৬। সাইয়্যিদুনা হযরত তারিহ্ আলাইহিস্ সালাম।
২৭। সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়ারিব আলাইহিস্ সালাম।
২৮। সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়াশ্যুব আলাইহিস্ সালাম।
২৯। সাইয়্যিদুনা হযরত নাবিত আলাইহিস্ সালাম।
৩০। সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাইল আলাইহিস্ সালাম।
তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার জলিলুল ক্বদর রসূল।
৩১। সাইয়্যিদুনা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম।
তিনি মুসলিম মিল্লাতের পিতা। মহান আল্লাহ পাক উনার জলিলুল ক্বদর রসূল। উনার উপর ১০খানা ছহীফা নাযিল হয়েছিল। সুবহানাল্লাহ!
৩২। সাইয়্যিদুনা হযরত তারাহ আলাইহিস্ সালাম।
যদিও কেউ কেউ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম উনার পিতা হিসাবে আযরের নাম উল্লেখ করেছে। নাউযুবিল্লাহ! এটা কুফরী আক্বীদা। কারণ আযর কাফির ছিলো। তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও অশুদ্ধ এবং কাট্টা কুফরী। কারণ ‘সীরাতুল হালাবিয়া’সহ অন্যান্য সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ আছে
اجمع اهل الكتاب على أن ازر كان عمه. والعرب سمى العم ابا كما تسمى الخالة
অর্থাৎ আহলে কিতাবগণ উনাদের ইজমা হয়েছে যে, আযর ছিল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম উনার চাচা। আরবরা সাধারণত চাচাকে বাবা বলে সম্বোধন করেন। যেমন খালাকে মা বলে সম্বোধন করতেন। (সীরাতুল হালাবিয়া-১/৪৫)
৩৩। সাইয়্যিদুনা হযরত নাহুর আলাইহিস্ সালাম।
৩৪। সাইয়্যিদুনা হযরত আরগুবী আলাইহিস্ সালাম।
৩৫। সাইয়্যিদুনা হযরত সারিহ্ আলাইহিস্ সালাম।
৩৬। সাইয়্যিদুনা হযরত ফালিহ্ আলাইহিস্ সালাম।
৩৭। সাইয়্যিদুনা হযরত আবির আলাইহিস্ সালাম।
৩৮। সাইয়্যিদুনা হযরত শালিখ আলাইহিস্ সালাম।
৩৯। সাইয়্যিদুনা হযরত আরফাখ্শাজ আলাইহিস্ সালাম।
৪০। সাইয়্যিদুনা হযরত শাম আলাইহিস্ সালাম।
৪১। সাইয়্যিদুনা হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম।
তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার জলিলুল ক্বদর রসূল। সুবহানাল্লাহ!
৪২। সাইয়্যিদুনা হযরত লাম্ক আলাইহিস্ সালাম।
৪৩। সাইয়্যিদুনা হযরত মাতুশালাখ আলাইহিস্ সালাম।
৪৪। সাইয়্যিদুনা হযরত আখনুখ আলাইহিস্ সালাম।
যিনি হযরত ইদ্রীস আলাইহিস্ সালাম নামে মাশহুর। উনার উপর ৩০খানা ছহীফা নাযিল হয়েছিল। (তারিখুত তাবারী ১/৫১৮)
৪৫। সাইয়্যিদুনা হযরত ইর্য়াদ আলাইহিস্ সালাম।
৪৬। সাইয়্যিদুনা হযরত মাহ্লাইল আলাইহিস্ সালাম।
৪৭। সাইয়্যিদুনা হযরত কাইনান আলাইহিস্ সালাম।
৪৮। সাইয়্যিদুনা হযরত আনুশ আলাইহিস্ সালাম।
৪৯। সাইয়্যিদুনা হযরত শীস আলাইহিস্ সালাম।
তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছিলেন। উনার উপর ৫০খানা সহীফা নাযিল হয়েছিল।
৫০। সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম শফীউল্লাহ আলাইহিস্ সালাম।
তিনি সর্বপ্রথম নবী ও রসূল। উনার উপর ১০খানা ছহীফা নাযিল হয়েছিল।
(দালায়িলুন্ নবুওওয়াত লিল বাইহাক্বী ১/১৭৯- সীরাতু ইবনে হিশাম- ১/১-২, সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৯, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, তারিখুত্ তাবারী ১/৪৯৭ রাওদুল উন্ফ ১/২৩ শরহুল আল্লামাতিয্ যারকানী ১/৩৫ ইত্যাদি)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা ফাতরাত যুগের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং উনারা দ্বীনে হানিফ উনাকে গ্রহণ করেছিলেন
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত ঘোষণার বহু পূর্বে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে প্রায় পাঁচশত বছর পরে উনার সম্মানিতা পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা উভয়েই পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। উনারা কোনো হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনার আমল বা যামানা পাননি। উনাদের নিকট পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত পৌঁছেনি এবং উনারা দুই নবী আলাইহিমাস সালাম উনাদের অন্তবর্তীকালীন সময়ে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। এ সময়টাকে বলা হয় ফাতরাত যুগ।
ذلك ان لم يكن ربك مهلك القرى بظلم واهلها غافلون.
অর্থ: “আপনার প্রতিপালক কোনো জনপদবাসীকে অন্যায়ভাবে অনবহিত অবস্থায় ধ্বংস করেন না।” (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩১)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
ولولا ان تصيبهم مصيبة بما قدمت ايديهم فيقولوا ربنا لولا ارسلت الينا رسولا فنتبع ايتك ونكون من المؤمنين.
অর্থ: “যারা ফাত্রাত যুগের উনাদের কৃতকর্মের জন্য যখনই কোনো মুছীবত আসতো তখন উনারা বলতো, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি কেন কোনো হযরত রসূল আলাইহিস সালাম প্রেরণ করেননি, আমরা উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অনুসরণ করতাম এবং ঈমানদার হতাম।” (পবিত্র সূরা কাছাছ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৭)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
ولو انا اهلكنهم بعذاب من قبله لقالوا ربنا لولا ارسلت الينا رسولا فنتبع ايتك من قبل ان نذل ونخزى.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের পূর্বে আমি যদি উনাদেরকে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম, তাহলে উনারা বলতেন, হে আমাদের প্রতিপালক! কেন আমাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেননি, তাহলে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার পূর্বেই আমরা আপনার আয়াতের অনুসরণ করতাম।” (পবিত্র সূরা ত্ব-হা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৪)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وما كان ربك مهلك القرى حتى يبعث فى امها رسولا يتلوا عليهم ايتنا.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি কোনো জনপদবাসীকে ধ্বংস করেন না, যতক্ষণ না উহার কেন্দ্রস্থলে কোনো হযরত রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে প্রেরণ করেন, যিনি তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে শুনান।” (পবিত্র সূরা কাছাছ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وما اهلكنا من قرية الا لها منذرون ذكرى وما كنا ظالمين.
অর্থ: “আমি কোনো জনপদবাসীকে ভীতি প্রদর্শনকারী ও উপদেশ প্রদানকারী প্রেরণ ব্যতীত ধ্বংস করিনি এবং আমি সীমালংঘনকারী নই।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৮,৯)
এই সমস্ত পবিত্র আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে হযরত আবদ বিন হামীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে মনযর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হাতেম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা নিজ নিজ তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, “হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ ও নির্দেশ-উপদেশ প্রদান ব্যতীত মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি কোনো জনপদবাসীকে ধ্বংস করেননি। কেননা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি সর্বাপেক্ষা ন্যায়পরায়ণ; তিনি সীমালঙ্ঘনকারী নন।”
এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে, হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুশরিকদের সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে বলেছেন, তারা জান্নাতবাসী। কেননা পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার ঘোষণানুযায়ী প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যাদের নিকট পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত পৌঁছেনি তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না। অর্থাৎ (যদি তারা কুফরী ও শিরেকী না করে থাকে) তবে তাদেরকে মিটিয়ে দেয়া হবে। আর যাদের নিকট পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত পৌঁছেছে, অথচ কুফরী ও শিরেকী পরিত্যাগ করেনি তারা অবশ্যই জাহান্নামী। এতে কারো দ্বিমত নেই।
সুতরাং দুই নবী আলাইহিমাস সালাম উনাদের অন্তরবর্তীকালীন সময়ে মৃত বা ইন্তিকালকারীগণ আহলে ফাতরাত হওয়ার কারণে উনাদের হুকুম ব্যতিক্রম। অর্থাৎ উনারা যদি শুধু কুফরী ও শেরেকী থেকে মুক্ত থাকেন তাহলে উনারা আযাব বা শাস্তি থেকেও মুক্ত থাকবেন। (মাসালিকুল হুনাফা লিস সুয়ূতী দ্রষ্টব্য)
যেমন ছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনারা। উনারা কোনো প্রকার কুফরী ও শিরকী করেননি। অর্থাৎ উনারা উভয়ে পবিত্র দ্বীন হানিফে কায়িম ছিলেন। উনারা কখনো তাওহীদ বিরোধী কোনো আমল করেছেন এমন কোনো প্রমাণ কেউই পেশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে সমস্ত হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা একমত পোষণ করেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম ও সম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনাদের সম্পর্কে খুব সাবধানে এবং অত্যন্ত আদব ও শরাফতের সহিত কথা বলতে হবে।
পবিত্র আয়াত শরীফ ও ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম ও সম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনারা জান্নাতী এবং জান্নাতের মালিক। সুবহানাল্লাহ!
আর সাধারণ আকলের প্রেক্ষিতেও বলা যায়, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারককে চুম্বন করার কারণে একজন বনী ইসরাইলীকে জান্নাত দেয়া হয়, উনার জন্য জাহান্নাম হারাম করা হয়। শুধু তাই নয়; বরং উনার মর্যাদা আরো বৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার গোছল, কাফন ও দাফন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ ওই বনী ইসরাইলী তিনি জান্নাতী হয়েছিলেন। তাহলে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেশানী মুবারকে ধারণ করেছেন, যিনি সম্মানিত রেহেম শরীফ উনার মধ্যে ধারণ করেছেন, যিনি সরাসরি চুম্বন করেছেন উনাদের জান্নাতী হওয়া সম্পর্কে এরপরও কি প্রশ্ন উঠতে পারে?
বরং স্বয়ং পবিত্র জান্নাতই উদগ্রীব হয়ে আছে কখন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন। উনারা জান্নাতে প্রবেশ করলেই জান্নাতের জীবন স্বার্থক হবে।
মূলত, শুধু এ বিষয়ই নয়, বরং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম ও সম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনাদের পবিত্র শান-মান মুবারক সম্পর্কে জানা এবং উনাদের তা’যীম, তাকরীম মুবারক করা পৃথিবীর সর্বপ্রধান ও সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ফরয। সুবহানাল্লাহ!
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম ও সম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনাদের নাম সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আব্দুল্লাহ’ আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত ‘আমিনা’ আলাইহাস সালাম হওয়ার হাক্বীক্বত- “আব্দ” অর্থ ‘আনুগত্য স্বীকারকারী’ আর এর সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক যুক্ত হয়ে ‘আব্দুল্লাহ’ অর্থাৎ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বশ্যতা-আনুগত্যতা স্বীকার করতেন। তিনি যদি মূর্তিপূজারী হতেন, তাহলে উনার নাম হতো ‘আব্দুল উজ্জা’। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ উনার নাম মুবারক হলো হযরত ‘আব্দুল্লাহ’ আলাইহিস সালাম। তেমনিভাবে হযরত ‘আমিনা’ (আলাইহাস সালাম) শব্দটি মুবরকের অর্থ হলো, ‘ঈমান আনয়নকারী বা নিরাপদ’। অর্থাৎ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান এনে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম ও সম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনারা ফিতরাত যুগের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং উনারা দ্বীনে হানিফের উপর কায়িম ছিলেন।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনার স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়টিও ছিল সিজদাকারীগণ উনাদের মাধ্যমে।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)
আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে আল্লামা হযরত ইমাম ইবনে হিববান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূর মুবারক সিজদাকারীগণ উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন।” (সীরাতুল হালাবিয়া- ১/৪৫)
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার মধ্যস্থিত সবকিছু পাক-পবিত্র এবং তা গলধঃকরণ নাজাত হাছিলের কারণ হলে যাঁদের মাধ্যমে তিনি দুনিয়াতে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন উনাদের জন্য কি হুকুম?
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শধন্য পবিত্র রওযা শরীফ উনার ধূলি মুবারকের মর্যাদা পবিত্র আরশে আযীম উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হলে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ধারক-বাহক উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের ফায়ছালা কি?
উল্লেখ্য, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই উনার সম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম ও সম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনাদেরকে পবিত্র সোহবত মুবারক দিয়েছেন।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম ও সম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনাদের এবং উনাদের পূর্বতন কেউই ব্যভিচারী, বেপর্দা, কাফির, মুশরিক এবং অশ্লীল ও অশালীন কাজে লিপ্ত ছিলেন না। উনাদের ব্যাপারে কেউ এরূপ কল্পনা করলেও ঈমানহারা হবে। বরং উনারা সবাই পবিত্র থেকে পবিত্রতম ছিলেন। উনাদের মধ্যে কেউ ছিলেন যামানার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম আবার কেউ ছিলেন যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের পর যখন লক্ষ লক্ষ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেমেছাল তা’যীম, তাকরীম করে দ-ায়মান তখন উনার সম্মানিতা দুধমাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালিমা সাদীয়া আলাইহাস সালাম তিনি আসলে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার চাদর মুবারক বিছিয়ে দিলেন উনাকে বসার জন্য। উনার প্রতি এ তা’যীম-তাকরীম দেখে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা সবাই মহা আশ্চার্যান্বিত হলেন। সুবহানাল্লাহ!
সঙ্গতকারণেই উপলব্ধি করা উচিত যে, সম্মানিতা দুধমাতা হযরত হালিমা সাদীয়া আলাইহাস সালাম উনাকেই যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এতে সম্মান বণ্টন করেন, তাহলে যবীহুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং উনার সম্মানিতা আম্মাজান সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনাদেরকে উনি কত সম্মান ও নিয়ামত এবং শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা, ফযীলত বণ্টন করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই উনাদের স্মরণ, মূল্যায়ন, উনাদের বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ দিবস অত্যন্ত মুহব্বত, খুলুছিয়ত, জওক, শওক ও আদবের সাথে পালন করলে তা উম্মাহর জন্য কত ফযীলত নাজাত, নিয়ামতের কারণ হবে তা কল্পনা করা দুঃসাধ্য। বিপরীত দিকে যারা উনাদের সম্পর্কে অজ্ঞতা ও আদবহীনতার পরিচয় দিবে তারাও যে কত হালাক তা চিন্তা করাও দুঃসাধ্য। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক!
নূরে মুজাসসাম সাইয়্যিদুল কাওনাইন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফে অবস্থানকালীন সময় উনার সাথে জলীলুল ক্বদর হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে কথোপকথনের বর্ণনা
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, আমি আপনাদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করবো। অতঃপর আপনাদেরকে প্রদত্ত কিতাবকে সত্য বলে প্রতিপাদনকারী হিসেবে একজন রসূল অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আগমন করবেন। আপনারা উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনাকে পেলে খিদমত করবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা কি এ অঙ্গীকার স্বীকার ও গ্রহণ করলেন? উনারা বললেন, হ্যাঁ- আমরা স্বীকার করে নিলাম। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-৮১)
মূলত, কোনো হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নুবুওওয়াত মুবারক দেয়া হয়নি এবং কোনো হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে রিসালাত মুবারক দেয়া হয়নি যতক্ষণ না উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর পবিত্র ঈমান না এনেছেন অর্থাৎ উনারা সকলেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন। তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় আর্বিভাবের পূর্বেই উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনাকে ধারাবাহিকভাবে মুবারক স্বপ্নে সে সুসংবাদ জ্ঞাপন করেছেন।
এখন আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার পবিত্রতম জবানী মুবারকে নূরে মুজাসসাম, হাীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক উনার বার্তা সম্পর্কে অন্যান্য হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তা জানবো।
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, যখন আমি আমার প্রাণপ্রিয় কলিজা মুবারক উনার টুকরা মুবারক, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র রেহেম শরীফে ধারণ করলাম, ধারণ করার প্রথম মাস হলো পবিত্র রজবুল আছাম। সে মাস উনার মধ্যে একসময় আমি একরাত্রে স্বপ্নের আবেশে ছিলাম। তখন আমার কক্ষে প্রবেশ করলেন এক ব্যক্তি যিনি ছিলেন লাবন্যময় চেহারা বিশিষ্ট সুঘ্রাণে ভরপুর এবং আলোকোজ্জ্বল। তিনি বলছিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে স্বাগতম। আমি (হযরত হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) উনাকে প্রশ্ন করলাম: আপনি কে? তিনি বললেন, আমি মানব জাতির পিতা হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম। আমি বললাম, আপনার অভিপ্রায় কি? তিনি বললেন, হে হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনি মূলত, রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন যিনি রবিয়া ও মুদার গোত্রের ফখর (গৌরবের কারণ)। যিনি সাইয়্যিদুল বাশার।” সুবহানাল্লাহ!
“যখন দ্বিতীয় মাস (পবিত্র শা’বান শরীফ) সমাগত হলো- তখন এক ব্যক্তি আমার নিকট আগমন করলেন। তিনি বললেন, আসসালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি (হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) উনাকে বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি হযরত শীছ আলাইহিস সালাম। আমি (হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) বললাম, আপনার অভিপ্রায় কি? তিনি বললেন, হে হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন, যিনি রহস্যের উন্মোচনকারী উনাকে এবং ছহিবে হাদীছ শরীফ।” সুবহানাল্লাহ!
তৃতীয় মাস (পবিত্র রমাদ্বান শরীফ) যখন আগমন করলো তখন আমার নিকট এলেন (স্বপ্নে) এক ব্যক্তি। তিনি বললেন, আসসালামু আলাইকা ইয়া নাবিআল্লাহ! আমি (হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) উনাকে বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি হযরত ইদরীস আলাইহিস সালাম। আমি (হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) বললাম, আপনার অভিপ্রায় কি? তিনি বললেন, হে হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিনি সাইয়্যিদ উনাকে পবিত্র রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
চতুর্থ মাস (পবিত্র শাওওয়াল শরীফ) যখন আগমন করলো তখন এক ব্যক্তি আমার নিকট আগমন করলেন। তিনি বললেন, আসসালামু আলাইকা ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি (হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি হযরত নূহ আলাইহিস সালাম। আমি (হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) উনাকে বললাম, আপনার অভিপ্রায় কি? তিনি বললেন, হে হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। নিশ্চয় আপনি রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন যিনি সাহায্য ও বিজয়ের ছাহিব বা অধিকারী।” সুবহানাল্লাহ!
পঞ্চম মাস (পবিত্র যিলক্বদ শরীফ) যখন আগমন করলো তখন এক ব্যক্তি আমার নিকট আগমন করলেন। তিনি বললেন, আসসালামু আলাইকা ইয়া ছফওয়াতাল্লাহ! হে মহান আল্লাহ পাক উনার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন! আপনার প্রতি সালাম। আমি (হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) উনাকে বললাম আপনি কে? তিনি বললেন, আমি হযরত হূদ আলাইহিস সালাম। আমি বললাম, আপনার অভিপ্রায় কি? তিনি বললেন, হে হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কেননা আপনি রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন প্রতিশ্রুত দিবসের (হাশরের দিনের) শাফায়াতে উজমার যিনি অধিকারী বা মালিক হবেন উনাকে।
ষষ্ঠ মাস (পবিত্র যিলহজ্জ্ব শরীফ) যখন আগমন করলো তখন এক ব্যক্তি আমার নিকট আগমন করলেন। তিনি বললেন, আসসালামু আলাইকা ইয়া রহমাতাল্লাহ্! হে মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত, আপনার প্রতি সালাম। আমি (হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) উনাকে বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম। আমি বললাম, আপনার অভিপ্রায় কি? তিনি বললেন, হে হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কেননা আপনি রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন মহাসম্মানিত নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে।
সপ্তম মাস (পবিত্র মহররমুল হারাম শরীফ) যখন আগমন করলো তখন এক ব্যক্তি আমার নিকট আগমন করলেন। তিনি বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত রসূল, আপনার প্রতি সালাম। আমি (হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) উনাকে বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি হযরত ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম। আমি বললাম, আপনার অভিপ্রায় কি? তিনি বললেন, হে হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কেননা আপনি রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন সবিশেষ লাবণ্যময় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে।
অষ্টম মাস (পবিত্র মাহে ছফর শরীফ) যখন আগমন করলো তখন এক ব্যক্তি আমার নিকট আগমন করলেন। তিনি বললেন, আসসালামু আলাইকা ইয়া খইরাতাল্লাহ্! হে মহান আল্লাহ পাক উনার সমূহ কল্যাণ! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি (হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) উনাকে বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি হযরত মূসা ইবনে ইমরান আলাইহিস সালাম! আমি বললাম, আপনার অভিপ্রায় কি? তিনি বললেন, হে (হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কেননা আপনি রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন যার উপর পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হবে উনাকে।
যখন নবম মাস (পবিত্র রবিউল আউওয়াল শরীফ) আগমন করলো, তখন এক ব্যক্তি আমার নিকট আগমণ করলেন। তিনি বললেন, ইয়া খাতামা রুসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার আগমন নিকটবর্তী ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমি (হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহাস সালাম। আমি (হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) বললাম, আপনার অভিপ্রায় কি? তিনি বললেন, হে হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কেননা আপনি রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন মহাসম্মানিত নবী ও মহিমান্বিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে। আপনার থেকে দূর হয়ে গেল দুঃখ, কষ্ট-রোগ-যন্ত্রণা। (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম, ইবনে হাজার হায়ছামী)
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদুতুল উম্মাহাত, সাইয়্যিদাতুনাম হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস্ সালাম তিনি সৃষ্টির আদি থেকেই সবচেয়ে উত্তম মাতা ও ইলমে গাইব উনার অধিকারিনী
تقلبك فى السجد ين.
অর্থ:- হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার মুবারক স্থানান্তর তথা মুবারক আগমনের সূত্রধারা ছিল উত্তম সিজদাকারীগণের মাঝে।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)
আর এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি যাদের মাধ্যমে কুদরতীভাবে স্থানান্তরিত হয়েছি তারা সবাই সব কালেই সবযুগেই উত্তম হতে উত্তম এবং পবিত্র থেকে পবিত্রতম ছিলেন।” (মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি সব সময় পবিত্রতম পৃষ্ঠ মুবারক হতে অতিপবিত্রা রেহেম শরীফে স্থানান্তরিত হয়েছি। আমার পূর্ববর্তী যত পুরুষ এবং মহিলা হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম হতে ও হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম পর্যন্ত অতীত হয়েছেন উনাদের মধ্যে কেউই সামান্যতম দোষে দোষী কিংবা না-শোকর গোযারী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। বরং সর্বকালের সবযুগের খাছ-বান্দার-বান্দীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।” (শারহুয় যারক্বানী/ মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ, তাফসীরে মাযহারী, মাদারিক)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক পরশ এর কারণেই সৃষ্টির আদি থেকেই উনার পূর্ব-পূরুষ ও পূর্ব-মহিলা উনাদেরকে সার্বিক দিক থেকে হিফাযত ও পবিত্রতম করেছেন। অনেককে নবুওওয়াত, হিকমত, খিলাফত, নিসবত ও মহব্বত দিয়ে ধন্য করেছেন। এবং যারা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধারণ করেছেন তারা সবাই সে যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল ছিলেন। এতে বিন্দু থেকে বিন্দুতম সন্দেহ করলে সে মুসলমান থাকতে পারবে না। যে এ ব্যাপারে সামান্যতম সন্দেহ পোষণ করবে কিংবা চু-চেরা কিল-কাল করবে, সে কাট্টা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হবে। শুধু বর্তমানে নয়। শুরু থেকে মুনাফিকদের একটি গোষ্ঠি মুসলমানদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে মুসলিম ছদ্বাবরণে মুসলমানদের মুসলমানিত্ব, মু’নিনের মু’মিনত্ব নস্যাৎ করার লক্ষ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার পূর্ব-পূরুষদের সম্পর্কে এলোমেলো কুফরীমূলক কথা-বার্তা বলে থাকে এবং আরো বলে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা নাকি ইমানদার ছিলেন না। (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক)
মূলত, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, বনী ইসরাইলের দুইশত বছরের পাপী ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার শুধুমাত্র নাম মুবারকে চুমু খাওয়ার কারণে সর্বোত্তম বান্দার অন্তর্ভুক্ত হলেন এবং জান্নাতী হলেন। সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিব লাদুন্নিয়্যাহ দালায়িলুন্ নবুয়াত)
তাছাড়াও সকল হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইজমা হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারকে যে মাটি মুবারক স্পর্শ করে আছে তার মর্যাদা এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- না’লাইন শরীফে স্পর্শ করা ধুলাবালি মুবারকের মর্যাদা সম্মানিত আরশে আযীম উনার মর্যাদার চেয়ে অনেক মর্যাদাবান। (সুবহানল্লাহ) (ফতওয়া শামী)
এটার মর্যাদা যদি এ রকম হয়, তাহলে যেই নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যিনি দীর্ঘদিন ধারণ করে রাখলেন, আবু রসূলিনা সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহি ওয়া সালাম ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস্ সালাম উনাদের মর্যাদা সম্মানিত আরশে আযীম উনার চেয়ে কত কোটিগুণ বেশি হবে- তার বর্ণনা দিয়ে শেষ করা কোনো মুফতী, মুহাদ্দিছ, গাউছ, কুতুব, অলী, আবদাল, নকীব-নুকাবা উনাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। তাহলে কি করে বলতে পারে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আম্মাজান ও আব্বাজান আলাইহিমাস সালাম উনারা ঈমানদার ও জান্নাতী নন। নাউযুবিল্লাহ! অথচ উনারা শুধু জান্নাতী নন, বরং জান্নাত উনাদের দ্বারা মার্যাদাবান হবেন।
মূলত, উনাদের শানে চরম বিয়াদুবীমূলক কথা তাদের মুখেই শোভা পায় ও বলতে পারে, যারা কাফির, মুশরিক ইহুদী নাছাদের চর এবং মুনাফিকের দল তথা ওহাবী, খারেজী, লা-মাযহাবী জামাতী ইত্যাদি বাতিল ফিরকার লোকেরাই।
এটা বুঝার জন্য দলীলের কোনো প্রয়োজনেই হয় না। মূলত, এটা সাধারণ আক্বলেই বুঝা উচিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা যদি জান্নাতে প্রবেশ করতে না পারেন, তাহলে কার পিতা-মাতা এমন আছে যে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করার অধিকার পাবে?
তাহলে কশ্মিনকালেও কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। কাজেই এটাই শতসিদ্ধ ও প্রণিধানযোগ্য কথা যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারাই সর্বপ্রথম ও সর্বোত্তম জান্নাত উনার মালিক। এবং উনারা উনাদের সময়ে মহান আল্লাহ পাক উনার যমীনে খাছ লক্ষ্যস্থল তো বটেই; তাছাড়াও সমস্ত কায়িনাতের মধ্যে সর্বোত্তম পিতা-মাতা হিসেবে পরিগণিত।
উনাদের নাম মুবারকই প্রমাণ করে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস্ সালাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের কত গভীরতম ঘনিষ্ঠতা ছিল। যেমন (عبد الله) ‘আব্দুল্লাহ’ (আলাইহিস্ সালাম) এই নাম মুবারকের অর্থ হচ্ছেন: মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত ও পছন্দনীয় বান্দা, যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য বিলীন বা ফানা (এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁর প্রতি সর্বদা খুশি থাকেন) আর (امنة) ‘আমিনা’ আলাইহাস্ সালাম এই নাম মুবারকের অর্থ হচ্ছেন: চরম বিশ্বাসীনী বা সর্বোত্তম মু’মিনা। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস্ সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ বান্দীদের মধ্যে অদ্বিতীয়া ছিলেন। যার প্রতি সদা-সর্বদা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ইলহাম ইলকা করতেন।
উম্মুল বাশার সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম, উম্মু যাবীহুল্লাহিল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত সারাহ আলাইহাস্ সালাম, উম্মু যাবীহুল্লাহিছ ছানিয়া সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাযিরা আলাইহাস সালাম, রব্বাতু কালীমিল্লাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছিয়া আলাইহাস্ সালাম ও উম্মু রূহিল্লাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত মারইয়াম আলাইহাস্ সালাম উনারা জান্নাতী হুরগণসহ আগমন করে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাক্ষাৎ করে দোয়া নিয়েছেন এবং নিজেদেরকে ধন্য করেছেন।
তাছাড়া ও তিনি ছিলেন সবচেয়ে প্রজ্ঞাসম্পন্না মাতা এবং ইলমে গায়িব উনার অধিকারীনী। বিশ্বখ্যাত ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘কিতাবুল আযীম ওয়া সুন্নাহ’ -উনার মধ্যে উল্লেখিত সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস্ সালাম উনার একখানা অবিস্মরণীয়, অদ্বিতীয় স্বরচিত ক্বাছীদা শরীফ যার জ্বলন্ত প্রমাণ। তিনি ওই কাছীদা শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সমস্ত ছানা-ছিফত ও কার্যক্রম তুলে ধরেন।
পবিত্র ক্বাছীদা শরীফখানার অর্থ:- “হে আমার নয়নমণি সুযোগ্য আওলাদ! আমি বিদায় বেলায় বলে যাচ্ছি, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার জীবনকে ধন্য ও বরকতময় করেছেন। মহীয়ান, গরীয়ান মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে বিশ্ব জগতের জন্য আপনি নবী-রসূল আলাইহি ওয়া সাল্লাম রূপে প্রেরিত হয়েছেন। আপনি পবিত্র মক্কা শরীফ, পবিত্র মদীনা শরীফ- এমনকি সারা বিশ্বে ইসলামী ঝা-া উড়াবে। আপনি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনার সঠিক দ্বীনকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে মূর্তিপূজা ধ্বংস করার জন্যই প্রেরণ করেছেন এবং পবিত্র ও সম্মানিত বংশেই প্রেরিত হয়েছেন।
সবকিছুই ধ্বংস হবে। আমিও মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতেই চলে যাবো। কিন্তু আমার আলোচনা চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। কারণ আমি অতি উত্তম ও পবিত্রতম রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ঘটিয়েছি এবং সেই পবিত্রতম রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই রেখে যাচ্ছি।”
কাজেই উল্লেখিত ক্বাছীদা শরীফ থেকে প্রমাণিত হল যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস্ সালাম ইলহাম ইলকা ও ইলমে গাইয়েব উনার অধিকারিনী। আর পরিশেষে অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি পনের শতকের মহান মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, গাউছুল আ’যম, আমার প্রাণের আক্বা রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ক্বদমে- যিনি আমাদেরকে উক্ত হারানো ইলম্, আমল ও আক্বীদা বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব থেকে এক্স-রে রিপোর্টের চেয়ে কোটিগুণ বেগবান গতিতে দলীল দিয়ে দ্বীনি ইলমের সুমহান তাজদীদ করলেন। যা মুসলিম উম্মাহর ঈমান হিফাযতের জন্য এক বিরাট নিয়ামত।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে শুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা অবশ্যই জান্নাতী উনার মালিক
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত মুবারক ঘোষণার বহুপূর্বে এবং হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার থেকে প্রায় পাঁচশত বছর পরে উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা উভয়েই পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। যাঁরা কোনো হযরত নবী আলাইহিস সালাম উনার আমল পাননি, যাঁদের নিকট পবিত্র দ্বীন উনার দাওয়াত পৌঁছেনি এবং যাঁরা দুই জন হযরত নবী আলাইহিমাস সালাম উনাদের অন্তর্বতীকালীন সময়ে ইন্তিকাল বা বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এ সময়টাকে বলা হয় ফিতরাত যুগ। কার আযাব হবে আর কার আযাব হবে না- এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وما كنا معذبين حتى نبعث رسولا.
অর্থ: “হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করা ব্যতিরেকে আমি কাউকে শাস্তি দেইনা।” (পবিত্র সূরা বনী ইসরাইল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
ولولا ان تصيبهم مصيبة بما قدمت ايديهم فيقولوا ربنا لولا ارسلت الينا رسولا فنتبع ايتك ونكون من الـمؤمنين.
অর্থ: “যারা ‘ফিতরাত’ যুগের উনাদের কৃতকর্মের জন্য যখনই কোনো মুছীবত আসত তখন তারা বলত, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি কেনো কোন রসূল প্রেরণ করেননি, আমরা উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অনুসরণ করতাম এবং ঈমানদার হতাম।” (পবিত্র সূরা কাছাছ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৭)
উল্লেখ্য যে, হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুশরিকদের নাবালক সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে বলেছেন, তারা জান্নাতবাসী। কেননা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার ঘোষণানুযায়ী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যাদের নিকট পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত পৌঁছেনি তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না (যদি তারা কুফরী ও শিরিকী না করে থাকে)। (মাসালিকুল হুনাফা লিস সুয়ূতী)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের বিষয়টিও তদ্রƒপ। উনারা কোনো প্রকার কুফরী ও শিরকী করেননি। অর্থাৎ উনারা উভয়ে পবিত্র দ্বীনে হানীফ উনার মধ্যে পরিপূর্ণরূপে কায়িম ছিলেন। উনারা কখনো তাওহীদবিরোধী কোনো আমল করেছেন এমন কোনো প্রমাণ মহান আল্লাহ পাক উনার যমীনে কেউই পেশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা একমত পোষণ করেছেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা আহলে হক্ব উনার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
আহলে কিতাব উনাদের মধ্যে অনেকেই হক্ব তালাশী ছিলেন। উক্ত আহলে কিতাব উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ليسوا سواء من اهل الكتاب امة قائمة يتلون ايت الله اناء اليل وهم يسجدون.
অর্থ: “উনারা সবাই সমান নন। আহলে কিতাব উনাদের মধ্যে কিছু লোক এমনও আছেন যাঁরা রাতের একাংশে অবিচলভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ তিলাওয়াত করেন এবং পবিত্র সিজদাহ করেন।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৩)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরকারকগণ উনারা বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে যমীনে তাশরীফ আনয়ন করার পূর্বে উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম এবং উনার সকল পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম ও পূর্ব মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছাড়াও আরো অনেকেই মহান আল্লাহ পাক উনাকে বিশ্বাস করতেন এবং উনারা সত্য পথের উপর অর্থাৎ পবিত্র দ্বীনে হানীফ উনার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগে সকল মানুষই মুশরিক ছিলো এ দাবি আদৌ সত্য নয়। কারণ বর্ণিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার প্রথমাংশ স্পষ্টতই প্রমাণ বহন করছে যে, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আগমন পূর্ব সময়ে সকল মানুষ এক সমান ছিল না।
“তিবরানী শরীফ” উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, নিম্ন বর্ণিত ব্যক্তিগণ মহান আল্লাহ পাক উনার একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন এবং উনারা পাক-নাপাকীতেও বিশ্বাসী ছিলেন। যদি উনাদের কেউ নাপাক হতেন, তাহলে অযু-গোসল করে পবিত্র হতেন, এমনকি উনারা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র দ্বীনে বিশ্বাসী হয়ে আমল করতেন। উনাদের নাম মুবারক হলো- (১) সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম, (২) সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম, (৩) হযরত আসওয়াদ বিন সারারা বিন মাইরুর আনছারী, (৪) হযরত মুহম্মদ বিন মাসলামা ও (৫) হযরত আবূ কাইস বিন সারমা প্রমুখ। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র আয়াত শরীফ ও ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারাই প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা অবশ্যই ঈমানদার ও সর্বোচ্চ মর্যাদার ব্যক্তিত্ব
পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وتقلبك فى الساجدين.
অর্থ: “আমি আপনাকে সিজদাকারী (তাওহীদপন্থী, ঈমানদার মুত্তাক্বী) গণের মাধ্যমে স্থানান্তরিত করেছি।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)
তাফসীরে মাদারিক শরীফ ও জুমাল শরীফ উনাদের গ্রন্থকার এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুধু সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারাই নন বরং উনার সকল পূর্বপুরুষ ও পূর্ব মহিলা উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার তাওহীদভুক্ত বলে ঘোষণা দেন। প্রকৃতপক্ষে উনার পূর্বপুরুষ ও পূর্বমহিলা উনারা সকলেই খালিছ ঈমানদার ও সর্বোৎকৃষ্ট ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لـم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات على ان جميع ابائه صلى الله عليه وسلم وامهاته صلى الله عليه وسلم الى حضرت ادم و حضرت حواء عليهما السلام ليس فيهم كافر.
অর্থ: “আমি সর্বদা পবিত্র পৃষ্ঠ মুবারক হতে পবিত্রা রেহেম শরীফ উনাদের মাঝে স্থানান্তরিত হয়েছি। আমার সকল পূর্বপুরুষ ও পূর্বমহিলা আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদের পর্যন্ত যাঁরা অতীত হয়েছেন, উনাদের কেউই কাফির ছিলেন না।” (নূরে মুহম্মদী, মাওয়াহেব শরীফ, যারকানী শরীফ)
এ পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফই প্রমাণ করে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ ও পূর্বমহিলা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নবী ও রসূল। আর যারা নবী-রসূল ছিলেন না উনারা সকলেই ছিলেন উনাদের যুগের সব চাইতে শ্রেষ্ঠ, সম্ভ্রান্ত, মর্যাদাশীল ও মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ও মকবুল বান্দা ও বান্দিগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র পুরুষ ও পবিত্রা মহিলাগণ উনাদের মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় এ যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। চাই পিতা উনার দিক থেকে হোন কিংবা মাতা উনার দিক থেকে হোন উনাদের কেউই মুশরিক বা কাফির ছিলেন না। এমন কি উনাদের মধ্যে কেউ চারিত্রিক দোষেও দোষী ছিলেন না। প্রত্যেকেই পূতঃপবিত্র চরিত্র মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা আছে- لـم يلتق ابواى قط على سفاح.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম ও পূর্বমহিলা আলাইহিন্নাস সালামগণ উনারা কেউই চারিত্রিক দোষে দোষী ছিলেন না।” সুবহানাল্লাহ!
এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ, পূর্বমহিলাগণ উনারা শুধু ঈমানদারই নন, বরং উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ মাহবুব বান্দা-বান্দী উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি সর্বযুগে যুগশ্রেষ্ঠ বান্দা-বান্দী অর্থাৎ তাওহীদপন্থী, সিজদাকারী, ঈমানদার, মুত্তাক্বী ও সচ্চরিত্রবান উনাদের মাধ্যম দিয়ে যমীনে তাশরীফ এনেছেন। তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা কি করে কাফির, মুশরিক হতে পারেন? নাঊযুবিল্লাহ!
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দেহ মুবারক উনার সবকিছু পাক ও তা গলধঃকরণ নাজাত হাছিলের কারণ হলে, যাঁদের মাধ্যমে তিনি এসেছেন উনাদের দেহাবয়বের কি হুকুম হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, উহুদের ময়দানে কিছু হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মুবারক উনার ক্ষতস্থান হতে নির্গত রক্ত মুবারক যাতে যমীনে না পড়তে পারে সেজন্য উনারা তা চুষে চুষে পান করেছিলেন। এতদ্বশ্রবণে তিনি উনাদেরকে বললেন, আপনাদের জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে গেল। অর্থাৎ আপনারা নিশ্চিত জান্নাতী। এছাড়া যে সকল হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারকে শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন উনাদের ক্ষেত্রেও তিনি উক্ত সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فقال عليه الصلاة والسلام من مس دمى لـم تصبه النار.
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার নূরুন নাজাত মুবারক (রক্ত মুবারক) যার রক্তের সাথে মিশেছে, তাঁকে জাহান্নামের আগুন কখনো স্পর্শ করবে না।” (আলমাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ বিল মিনাহিল মুহম্মদিয়া লিল আল্লামাতিল কুসত্বলানী ২য় জিঃ ৪২৬ পৃষ্ঠা)
এখন কথা হলো, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম নূরুন নাজাত মুবারক (রক্ত মুবারক), পবিত্র নূরুল গইব মুবারক (ইস্তিঞ্জা মুবারক) স্বল্পকালীন, স্বল্প পরিমাণ পান করার কারণে কোনো ব্যক্তির জন্য যদি জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় আর জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়, তাহলে খোদ নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ সময় যাঁর বা যাঁদের পবিত্র রেহেম শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক করলেন এবং এর পূর্বে যাঁর বা যাঁদের ললাট মুবারকে অবস্থান মুবারক করলেন, অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম এবং সম্মানিত পিতা ও মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা কি জান্নাতী হবেন না? অবশ্য অবশ্যই উনারাই জান্নাতী। সুবহানাল্লাহ! এতে সামান্যতম সন্দেহ যে পোষণ করবে মূলত সেই জাহান্নামী হবে। নাঊযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য, সমস্ত হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা ইজমা করেছেন যে, যে মাটি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারক স্পর্শ করেছে তা পবিত্র আরশে আযীম উনার থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি মর্যাদাবান ও সম্মানিত। সুবহানাল্লাহ! বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার কিতাব ‘ফতওয়ায়ে শামী’ ৩য় খ-ের ‘যিয়ারত’ অধ্যায়ে উল্লেখ আছে-
ان التربة التى اتصلت الـى اعظم النبى صلى الله عليه و سلم افضل من الارض والسـماء حتـى الـعرش الـعظيم
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারক-এ যে মাটি মুবারক বা যা কিছু স্পর্শ করেছে সে মাটি মুবারক উনার মর্যাদা যমীন, আসমান এমনকি আরশে আযীম উনার থেকেও অনেক বেশি।” সুবহানাল্লাহ!
তাহলে নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে পিতা-মাতা ও পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনারা ধারণ করেছেন এবং যাঁদের শরীর মুবারক উনার স্পর্শ মুবারক-এ ছিলেন উনাদের ফযীলত কত বেশি এবং উনারা কতটুকু সম্মানিত তা বলার অপেক্ষাই রাখে না। আর বেহেশতে উনাদের সুউচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে দুনিয়াবাসী কোনো মানুষের পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনাদের পবিত্র নাম মুবারক হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম হওয়াই প্রমাণ করে উনারা সর্বশ্রেষ্ঠ ঈমানদার
“আব্দ” অর্থ ‘আনুগত্য স্বীকারকারী’ আর এর সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক যুক্ত হয়ে আব্দুল্লাহ অর্থাৎ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বশ্যতা স্বীকার করতেন। তিনি যদি মূর্তি পূজারী হতেন তাহলে উনার নাম হতো ‘আব্দুল উজ্জা। নাউযুবিল্লাহ! অথচ উনার নাম মুবারক হলো ‘আব্দুল্লাহ’। এতে বুঝা গেল, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব উনার মহান ওয়ালিদ বা পিতা আলাইহিস সালাম উনাকে উনার প্রতি বিশ্বাসীই পেয়েছিলেন। ফলে কুদরতী ব্যবস্থায় উনার অসাধারণ নাম মুবারক রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন “আব্দুল্লাহ।’ সুবহানাল্লাহ! তেমনিভাবে “আমিনা” শব্দ মুবারক উনার অর্থ হলো, ‘ঈমান আনয়নকারী বা নিরাপদ’। অর্থাৎ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান এনে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
والطيب للطيبين والطيبون للطيبت
অর্থ: “সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য ও সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬)
তাছাড়া কোনো একজন নবী আলাইহিস সালাম-উনার পিতা-মাতা কাফির ও মুশরিক ছিলেন এ মর্মে কারো নিকট কোনো প্রমাণ নেই বা কেউ তা পেশ করতে পারবে না। কেননা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার উছূল হলো, প্রত্যেক হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনার পিতা-মাতা ও পূর্বপুরুষ-পূর্বমাতা উনারা সকলেই সর্বশ্রেষ্ঠ ঈমানদার ছিলেন। যেমন, এ সম্পর্কে তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে-
فالاية دالة على ان جميع ابائه صلى الله عليه وسلم كانوا مسلمين وحينئذ يجب القطع بان والدحصرت ابراهيم عليه السلام كان مسلما.
অর্থ: “উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ আলাইহিমাস সালাম উনারা সকলেই পরিপূর্ণ মুসলমান ছিলেন। সুতরাং এর দ্বারা অকাট্যরূপে প্রমাণিত বা সাব্যস্ত হয় যে, নিশ্চয়ই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পিতা তিনিও মুসলমান ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কবীর- ১৩ তম জিলদ ৩৮ পৃষ্ঠা)
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-
فلا يمكن ان يكون كافرا فى سلسلة ابائه صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পূর্বপুরুষ উনাদের পবিত্র সিলসিলা উনাদের মধ্যে কেউই কাফির হওয়া সম্ভব নয়।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ৪র্থ খ- ৩০৮ পৃষ্ঠা)
এ সম্পর্কে তাফসীরে আরো বর্ণিত রয়েছে-
ان احدا من اجداده ما كان من المشركين
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাপ-দাদা অর্থাৎ পূর্বপুরুষগণ উনারা কেউই মুশরিক ছিলেন না।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কবীর শরীফ- ১৩ খ- ৩৯ পৃষ্ঠা)
অতএব, সম্মানিত আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা ও ফতওয়া হলো- আখিরী রসূল, সরকারে দো’আলম, খাতামুল আম্বিয়া, ছহিবে মীছাক্ব, উসওয়ায়ে হাসানা, ছহিবে আছালিবে ত্বাহিরীনা ওয়া আরহামি ত্বাহিরা, ছহিবে আসমাউল হুসনা, ছহিবে আলক্বাব, ছহিবে ইক্বরা, সাইয়্যিদুল খালায়িক্ব, রউফুর রহীম, ছহিবে ছলাত ও সালাম, ছহিবে বাশীর ওয়া নাজীর, ছহিবে লাওলাক, ফখরে বাহ্র ওয়া বার সাইয়্যিদুল আম্বিয়া, সরওয়ারে কাওনাইন, সিরাজাম মুনীরা, ফখরে কায়িনাত, আল আমীন, সাইয়্যিদুল আলম, ইমামুন্ নাবিইয়ীন, শাফিউল উমাম, হুব্বুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, সাইয়্যিদুল জিন্নে ওয়াল ইন্স, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম উনারা উভয়েই জান্নাতী তো অবশ্যই বরং জান্নাত উদগ্রীব হয়ে আছে কখন উনারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন আর উনারা জান্নাতে প্রবেশ করলেই জান্নাত উনার সৃষ্টি হওয়ার স্বার্থকতা হাছিল হবে। কাজেই এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ প্রকাশ করাও কাট্টা কুফরী।
খইরু খলক্বিল্লাহ, খইরুল বারিয়্যাহ, খইরুল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আম্মাজান আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নসবনামা মুবারক
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اَيُّهَا النَّاسُ مَنْ اَنَا قَالُوْا اَنْتَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَنْسِبُوْنِـىْ قَالُوْا سَيِّدُنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الْـمُطَّلِبِ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ.
অর্থ: “হে লোক সকল! আমি কে? সবাই বললেন, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা আমাকে মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র নসবনামাহ মুবারক উনার সাথে সম্পৃক্ত করুন। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম ইবনে আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম।” সুবহানাল্লাহ! (যাখায়েরুল ‘উক্ববা, শরফুল মুস্ত¡ফা, কাশফুল আসতার ইত্যাদি)
অপর বর্ণনায় এসেছে-
عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيْزِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَحَضْرَتْ اِسْـمَاعِيْلَ بْنِ رَافِعٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَا قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْسِبُوْنِـىْ ثُـمَّ قَالَ اَنَا مُحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ بْنِ هَاشِمِ بْنِ عَبْدِ مَنَافِ بْنِ قُصَىِّ بْنِ كِلَابِ بْنِ مُرَّةَ بْنِ كَعْبِ بْنِ لُؤَىِّ بْنِ غَالِبِ بْنِ فِهْرِ بْنِ مَالِكِ بْنِ النَّضْرِ بْنِ كِنَانَةَ بْنِ خُزَيـْمَةَ بْنِ مُدْرِكَةَ بْنِ اِلْيَاسَ بْنِ مُضَرَ بْنِ نِزَارِ بْنِ مَعَدِّ بْنِ عَدْنَانَ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ.
অর্থ: “হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এবং হযরত ইসমাঈল ইবনে রাফি’ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অর্থাৎ উনাদের থেকে বর্ণিত। উনারা বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা আমাকে মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র নসবনামাহ মুবারক উনার সাথে সম্পৃক্ত করুন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (নিজেই) ইরশাদ মুবারক করেন, আমি হচ্ছি মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্ত্বালিব ইবনে হাশিম ইবনে আবদে মানাফ ইবনে কুছাই ইবনে কিলাব ইবনে র্মুরাহ ইবনে কা’ব ইবনে লুয়াই ইবনে গালিব ইবনে ফিহ্র ইবনে মালিক ইবনে নদ্বর ইবনে কিনানাহ্ ইবনে খুযাইমাহ্ ইবনে মুদ্রিকাহ্ ইবনে ইলইয়াস ইবনে মুদ্বর ইবনে নিযার ইবনে মা‘আদ্দ ইবনে ‘আদনান আলাইহিমুস সালাম।” সুবহানাল্লাহ! (তারীখে দিমাশক্ব)
এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
اَنْسِبُوْنِـىْ
অর্থ: “আপনারা আমাকে মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র নসবমাহ মুবারক উনার সাথে সম্পৃক্ত করুন।” সুবহানাল্লাহ!
তারপর তিনি নিজেই উনার মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র নসবনামাহ মুবারক বর্ণনা মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তাসাউফের একটি উছূল রয়েছে যে, যারা নিজ শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাজরা শরীফ সম্পর্কে জানেনা, তারা মুরীদ হওয়ার উপযুক্ত না। ঠিক একইভাবে যারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র নসবনামাহ মুবারক জানে না, তারা উম্মত হওয়ার উপযুক্ত না। তাই সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন হচ্ছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র নসবনামাহ মুবারক সম্পর্কে ইলম অর্জন করা।” সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, স্বাভাবিকভাবে কিতাব-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র নসবনামাহ মুবারক-এ ৫০ জন উনাদের নাম মুবারক উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত তাহ্কীক্ব মুবারক করে মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র নসবনামাহ মুবারক-এ আরো ৫২ জন উনাদের সম্মানিত নাম মুবারক সংযোজন করে ১০২ জন উনাদের সম্মানিত ইসম বা নাম মুবারক সম্বলিম মহাসম্মানিত বরকতময় নসবনামাহ মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! নি¤েœ সেই মহাসম্মানিত বরকতময় নসবনামাহ মুবারক উল্লেখ করা হলো-
মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র
নসবনামাহ মুবারক
মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার দিক থেকে-
سَيِّدُ الْـمُرْسَلِيْنَ اِمَامُ الْـمُرْسَلِيْنَ خَاتَـمُ النَّـبِـيِّـيْنَ النُّوْرُ الْـمُجَسَّمُ حَبِيْبُ اللهِ سَيِّدُنَـا مَوْلَانَا مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ابْنُ ذَبِيْحِ اللهِ الْـمُكَرَّمِ سَيِّـدِنَـا حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ بْنِ هَاشِمِ بْنِ عَبْدِ مَنَافِ بْنِ قُصَىِّ بْنِ كِلَابِ بْنِ مُرَّةَ بْنِ كَعْبِ بْنِ لُؤَىِّ بْنِ غَالِبِ بْنِ فِهْرِ بْنِ مَالِكِ بْنِ النَّضْرِ بْنِ كِنَانَةَ بْنِ خُزَيـْمَةَ بْنِ مُدْرِكَةَ بْنِ اِلْيَاسَ بْنِ مُضَرَ بْنِ نِزَارِ بْنِ مَعَدِّ بْنِ عَدْنَانَ بْنِ مَيْدَعِ بْنِ مَنِيْعِ بْنِ اُدِّ بْنِ اُدَدَ بْنِ كَعْبِ بْنِ يَشْجُبَ بْنِ يَعْرُبَ بْنِ الْيَسَعِ بْنِ الْـهَمَيْسَعِ بْنِ شَاجِبِ بْنِ سَلَامَانَ بْنِ عَوْصِ بْنِ بُوْزِ بِنْ شُوْحَا بْنِ قَمْوَالِ بْنِ كَسْدَانَا بْنِ اُبَـىِّ بْنِ الْعَوَّامِ بْنِ نَاشِدِ بْنِ حَزَّا بْنِ بِلْدَاسَ بْنِ يَدْلَافِ بْنِ طَابِخِ بْنِ جَاحِمِ بْنِ تَاحِشِ بْنِ مَاخِىِ بْنِ عَيْـفَى بْنِ عَبْقَرِ بْنِ عُبَيْدِ بْنِ الدَّعَّا بْنِ حَمْدَانَ بْنِ سَنْۢـبَرِ بْنِ يَـثْرِبـِــىِّ بْنِ يَـحْزَنَ بْنِ يَلْحُنَ بْنِ اَرْعَوِىِّ بْنِ عَيْفَى بْنِ دَيْشَانَ بْنِ عَيْصَرِ بْنِ اَقْنَادِ بْنِ اِيْهَامَ بْنِ مُقَصَّرِ بْنِ نَاحِثِ بْنِ زَارِحِ بْنِ شُـمِّـىِّ بْنِ مَزَى بْنِ عَوْصِ بْن عَرَّامِ بْن نَبْتِ بْنِ حَمْلِ بْنِ قَيْذَرِ بْنِ الْمُقَوِّمِ بْنِ نَاحُوْرَ بْنِ تَارَحَ بْنِ يَعْرُبَ بْنِ يَشْجُبَ بْنِ نَابِتِ بْنِ اِسْـمَاعِيْلَ بْنِ اِبْرَاهِيْمَ بْنِ تَارَحَ بْنِ نَاحُوْرَ بْنِ سَارُوْغِ بْنِ اَرْغُوَا بْنِ سَارِحِ بْنِ فَالِحِ بْنِ قَيْنَانَ بْنِ عَابِرِ بْنِ شَالَـخِ بْنِ اَرْفَخْشَذَ بْنِ سَامِ بْنِ نُوْحِ بْنِ لَمْكِ بْنِ مَتُّوْشَلَخَ بْنِ اَخْنُوْخَ وَهُوَ اِدْرِيْسُ النَّبِىُّ بْنِ يَرْدَ بْنِ مَهْلَائِيْلَ بْنِ قَيْنَانَ بْنِ اَنُوْشِ بْنِ شِيْثِ بْنِ اٰدَمَ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ.
১. سَيِّدُ الْـمُرْسَلِيْنَ اِمَامُ الْـمُرْسَلِيْنَ خَاتَـمُ النَّبِيِّيْنَ اَلنُّوْرُ الْـمُجَسَّمُ حَبِيْبُ اللهِ سَيّـِدُنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা মাওলানা মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
২. ذَبِيْحُ اللهِ الْـمُكَرَّمُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ যাবীহুল্লাহিল মুর্কারম সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম।
৩. عَبْدُ الْمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম।
৪. هَاشِمٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম।
৫. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ مَنَافٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আবদু মানাফ আলাইহিস সালাম।
৬. قُصَىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত কুছাই আলাইহিস সালাম।
৭. كِلَابٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত কিলাব আলাইহিস সালাম।
৮. مُرَّةُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত র্মুরাহ আলাইহিস সালাম।
৯. كَعْبٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত কা’ব আলাইহিস সালাম।
১০. لُؤَىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত লুআই আলাইহিস সালাম।
১১. غَالِبٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত গ¦ালিব আলাইহিস সালাম।
১২. فِهْرٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ফিহ্র আলাইহিস সালাম।
১৩. مَالِكٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত মালিক আলাইহিস সালাম।
১৪. اَلنَّضْرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত নদ্বর আলাইহিস সালাম।
১৫. كِنَانَةُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত কিনানাহ্ আলাইহিস সালাম।
১৬. عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ خُزَيـْمَةُ সাইয়্যিদুনা হযরত খুযাইমাহ্ আলাইহিস সালাম।
১৭. مُدْرِكَةُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত মুদ্রিকাহ আলাইহিস সালাম।
১৮. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اِلْيَاسُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ইলইয়াস আলাইহিস সালাম।
১৯. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ مُضَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত মুদ্বর আলাইহিস সালাম।
২০. نِزَارٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত নিযার আলাইহিস সালাম।
২১. مَعَدٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত মা‘আদ্দ আলাইহিস সালাম।
২২. عَدْنَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আদ্নান আলাইহিস সালাম।
২৩. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ مَيْدَعٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত মাইদা’ আলাইহিস সালাম।
২৪. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ مَنِيْعٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত মানী’ আলাইহিস সালাম।
২৫. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اُدٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত উদ্দ আলাইহিস সালাম।
২৬. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اُدَدُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত উদাদ আলাইহিস সালাম।
২৭. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ كَعْبٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত কা’ব আলাইহিস সালাম।
২৮. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ يَشْجُبُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়াশজুব আলাইহিস সালাম।
২৯. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ يَعْرُبُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়া’রুব আলাইহিস সালাম।
৩০. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اَلْيَسَعُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত আল ইয়াসা’ আলাইহিস সালাম।
৩১. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اَلْـهَمَيْسَعُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত হামাইসা’ আলাইহিস সালাম।
৩২. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ شَاجِبٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত শাজিব আলাইহিস সালাম।
৩৩. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ سَلَامَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত সালামান আলাইহিস সালাম।
৩৪. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَوْصٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আওছ্ আলাইহিস সালাম।
৩৫. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ بُوْزٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত বূয আলাইহিস সালাম।
৩৬. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ شُوْحَا عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত শূহা আলাইহিস সালাম।
৩৭. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ قَمْوَالٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বমওয়াল আলাইহিস সালাম।
৩৮. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ كَسْدَانَا عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত কাসদানা আলাইহিস সালাম।
৩৯. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اُبَـىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত উবাই আলাইহিস সালাম।
৪০. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اَلْعَوَّامُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত আওওয়াম আলাইহিস সালাম।
৪১. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ نَاشِدٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত নাশিদ আলাইহিস সালাম।
৪২. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ حَزَّا عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত হায্যা আলাইহিস সালাম।
৪৩. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ بِلْدَاسُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত বিলদাস আলাইহিস সালাম।
৪৪. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ يَدْلَافٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়াদলাফ আলাইহিস সালাম।
৪৫. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ طَابِــخٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বাবিখ আলাইহিস সালাম।
৪৬. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ جَاحِمٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত জাহিম আলাইহিস সালাম।
৪৭. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ تَاحِشٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত তাহিশ আলাইহিস সালাম।
৪৮. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ مَاخِىْ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত মাখী আলাইহিস সালাম।
৪৯. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَيْـفٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আইফা আলাইহিস সালাম।
৫০. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَبْقَرٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আব্ক্বর আলাইহিস সালাম।
৫১. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عُبَيْدٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘উবাইদ আলাইহিস সালাম।
৫২. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اَلدَّعَّا عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত আদ দা‘আ আলাইহিস সালাম।
৫৩. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ حَمْدَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত হামদান আলাইহিস সালাম।
৫৪. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ سَنْۢـبَـرٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত সাম্বার আলাইহিস সালাম।
৫৫. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ يَثْرِبـِـىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়াছরিবী আলাইহিস সালাম।
৫৬. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ يَـحْزَنُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়াহ্যান আলাইহিস সালাম।
৫৭. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ يَلْحُنُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়ালহুন আলাইহিস সালাম।
৫৮. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اَرْعَوِىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত আর‘আওয়ী আলাইহিস সালাম।
৫৯. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَيْـفٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আইফা আলাইহিস সালাম।
৬০. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ دَيْشَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত দাইশান আলাইহিস সালাম।
৬১. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَيْصَرٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আইছর আলাইহিস সালাম।
৬২. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اَقْنَادٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত আক্বনাদ আলাইহিস সালাম।
৬৩. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اِيْهَامُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ঈহাম আলাইহিস সালাম।
৬৪. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ مُقَصَّرٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত মুক্বছ্ছর আলাইহিস সালাম।
৬৫. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ نَاحِثٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত নাহিছ আলাইহিস সালাম।
৬৬. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ زَارِحٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত যারিহ্ আলাইহিস সালাম।
৬৭. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ شُـمِّـىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত শুম্মী আলাইহিস সালাম।
৬৮. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ مَزٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত মাযা আলাইহিস সালাম।
৬৯. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَوْصٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আওছ আলাইহিস সালাম।
৭০. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَرَّامٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘র্আরাম আলাইহিস সালাম।
৭১. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ نَبْتٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত নাব্ত আলাইহিস সালাম।
৭২. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ حَـمْلٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত হাম্ল আলাইহিস সালাম।
৭৩. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ قَيْذَرٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বইযার আলাইহিস সালাম।
৭৪. اَلْمُـقَـوِّمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত মুক্বওওইম আলাইহিস সালাম।
৭৫. نَاحُوْرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত নাহূর আলাইহিস সালাম।
৭৬. تَارَحُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত তারাহ্ আলাইহিস সালাম।
৭৭. يَعْـرُبُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়া’রুব আলাইহিস সালাম।
৭৮. يَشْجُبُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়াশ্জুব আলাইহিস সালাম।
৭৯. نَابِتٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত নাবিত আলাইহিস সালাম।
৮০. اِسْـمَاعِيْلُ ذَبِيْحُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম।
৮১. اِبْرَاهِيْمُ خَلِيْلُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম।
৮২. تَارَحُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত তারাহ্ আলাইহিস সালাম। (তাওরাত শরীফ উনার মধ্যে উনার সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত তারিখ আলাইহিস সালাম।)
৮৩. نَاحُوْرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত নাহূর আলাইহিস সালাম।
৮৪. سَارُوْغٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত সারূগ আলাইহিস সালাম।
৮৫. اَرْغُوَا عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত আরগুওয়া আলাইহিস সালাম।
৮৬. سَارِحٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত সারিহ্ আলাইহিস সালাম।
৮৭. فَالِحٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ফালিহ্ আলাইহিস সালাম।
৮৮. قَيْنَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বয়নান আলাইহিস সালাম।
৮৯. عَابِرٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আবির আলাইহিস সালাম।
৯০. شَالَـخٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত শালাখ আলাইহিস সালাম।
৯১. أَرْفَخْشَذُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত আরফাখ্শায আলাইহিস সালাম।
৯২. سَامٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত সাম আলাইহিস সালাম।
৯৩. نُوْحٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত নূহ আলাইহিস সালাম।
৯৪. عَلَيْهِ السَّلَامُ لَمْكٌ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত লাম্ক আলাইহিস সালাম।
৯৫. مَتُّوْشَلَخُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত মাত্তূশালাখ আলাইহিস সালাম।
৯৬. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اَخْنُوْخُ وَهُوَ اِدْرِيْسُ النَّبِىُّ عَلَيْهِ السَّلَام সাইয়্যিদুনা হযরত আখনূখ আলাইহিস সালাম। আর তিনি হচ্ছেন সম্মানিত নবী সাইয়্যিদুনা হযরত ইদ্রীস আলাইহিস সালাম।
৯৭. يَرْدُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ইর্য়াদ আলাইহিস সালাম।
৯৮. مَهْلَائِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত মাহ্লাঈল আলাইহিস সালাম।
৯৯. قَيْنَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বয়নান আলাইহিস সালাম।
১০০. اَنُوْشٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত আনূশ আলাইহিস সালাম।
১০১. شِيْثٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত শীছ আলাইহিস সালাম।
১০২. اَبُو الْبَشَرِ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اٰدَمُ صَفِىُّ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
(দলীল: ইবনে হিশাম, আর রওদ্বুল উন্ফ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিলবাইহাক্বী, শুয়াবুল ঈমান, জামি‘উল আহাদীছ, তালক্বীহ, আস সুনানুল কুবরা, মাওয়াহিবুল লাদুনইনয়্যাহ, শারহুয যারক্বনী আলাল মাওয়াহিব, সীরতুল হালবিয়্যাহ, বিদায়া-নিহায়াহ, তারীখে ত্ববারী, আত ত্ববাক্বতুল কুবরা লিইবনে সা’দ, তারীখে দিমাশক্ব, মরূজুয যাহাব, আত তারীখুল কাবীর লিল বুখারী ইত্যাদি)
বিশেষ দ্রষ্টব্য: অধিকাংশ ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অভিমত অনুযায়ী সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আদনান আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র নসবনামাহ মুবারক উনার ধারাবাহিকতা মোটামোটি ঠিক রয়েছে। উনার থেকে আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সকলের সম্মানিত নাম মুবারক উল্লেখ নেই; বরং মাঝে মাঝে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের সম্মানিত নাম মুবারক উল্লেখ করা হয়েছে। আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন কোন ক্ষেত্রে ৫ জন, ১০ জন, ২০ জন, ৩০ জন উনাদের সম্মানিত নাম মুবারকও বাদ পড়েছেন। অর্থাৎ এই মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র নসবনামাহ মুবারকখানা পূর্ণাঙ্গ নয়; বরং আংশিক।
মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার দিক থেকে মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র নসবনামাহ মুবারক-
اُمُّ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيّـِدَتُنَا حَضْرَتْ اٰمِنَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِنْتُ وَهْبِ بْنِ عَبْدِ مَنَافِ بْنِ زُهْرَةَ بْنِ كِلَابِ بْنِ مُرَّةَ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ.
১. اُمُّ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيّـِدَتُنَا حَضْرَتْ اٰمِنَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম।
২. وَهْبٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيّـِدُنَا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম।
৩. عَبْدُ مَنَافٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيّـِدُنَا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আবদু মানাফ আলাইহিস সালাম।
৪. سَيّـِدُنَا حَضْرَتْ زُهْرَةُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত যুহ্রাহ আলাইহিস সালাম।
৫. كِلَابٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيّـِدُنَا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত কিলাব আলাইহিস সালাম।
৬. مُرَّةُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيّـِدُنَا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত র্মুরাহ আলাইহিস সালাম।
উল্লেখ্য যে, আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র নসবনামাহ মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত কিলাব আলাইহিস সালাম উনার নিকট গিয়ে একত্রিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! (ইবনে হিশাম, আর রওদ্বুল উন্ফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে এই মহাসম্মানিত বরকতময় পবিত্র নসবনামাহ মুবারক সম্পর্কে ইলম অর্জন করা, মহাসম্মানিত বরকতময় নসবনামাহ মুবারক মুখস্ত করা এবং এই মহাসম্মানিত বরকতময় নসবনামাহ মুবারক উনার মাধ্যমে হাক্বীক্বী বরকত হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
সাইয়্যিদাতুল উম্মাহাত, ছহিবাতুল হাসানাত, জামিয়াতুল মাক্বামাত, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সীরাত মুবারক.
انك لـمن الـمرسلين
على صراط مستقيم.
অর্থ: (হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চয়ই আপনার পূর্বপূরুষগণ উনারা রসূলগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। (আর যারা রসূলগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত নন, উনারা) সিরাতুল মুস্তাকীম উনার উপর পুরোপুরি দায়িম এবং অবিচল। (পবিত্র সূরা ইয়াসীন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩-৪)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপূরুষ উনারা সকলেই মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ মনোনীত ব্যক্তিত্ব। আর সাইয়্যিদাতুনা উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শান তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। তিনি তো মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক আখাছছুল খাছভাবে মনোনীত। সঙ্গতকারণেই উনার পবিত্র সীরাত মুবারক সম্পর্কে জানা সকলের জন্য অতীব জরুরী। নিম্নে সংক্ষিপ্তাকারে উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক আলোচনা করা হলো।
পবিত্র নসব মুবারক:
সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ও প্রণিধান প্রাপ্ত মতে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতাজান উনার নসবনামা মুবারক যাবীহুল্লাহিল মুকাররম সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্ সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস্ সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত আবদে মানাফ আলাইহিস্ সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত কুসাই আলাইহিস্ সালাম ইবনে সাইয়্যিদুনা হযরত কিলাব আলাইহিস্ সালাম।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান উনার নসবনামা মুবারক- সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিনতে হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম ইবনে যুহরা আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত কিলাব আলাইহিস সালাম। (দালায়িলুন নবুওওয়াত লিল বাইহাক্বী)
অর্থাৎ আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নসবনামা মুবারক হযরত কিলাব আলাইহিস সালাম উনাতে গিয়ে একত্রিত হয়েছে।
সম্মানিত ওয়ালিদাইনিশ শরীফাইন আলাইহিমাস সালাম:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহতারাম পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম উনার মুবারক শানে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
هو يومئذ سيد بنى زهرة نسبا وشرفا
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি উনার গোত্র বনী যুহরার সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।” (মাওয়াহিবুর লাদুন্নিয়া)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা মাতা ছিলেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত বাররাহ বিনতে আব্দিল উযযা আলাইহাস সালাম।
সম্মানিত পিতা উনার মানত:
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম উনার কোনো আওলাদ ছিলেন না। এহেন পরিস্থিতিতে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরয করলেন, “আয় বারে ইলাহী! আমাদেরকে একজন আওলাদ হাদিয়া করুন। সম্মানিত আওলাদ প্রাপ্তির শুকরিয়াস্বরূপ আমি পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ উনার তাওয়াফ মুবারক করবো।”
উনার পবিত্র দোয়া মহান আল্লাহ পাক তৎক্ষণাত কবুল করে নেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত বাররাহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফে একজন সম্মানিত আওলাদ বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তিনিই হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম।
একখানা সুসংবাদ:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرة ابن عباس رضى الله تعالى عنه عن ابيه ان حضرة عبد الـمطلب عليه السلام لما سافر الى اليمن فى رحلة الشتاء نزل على حبر من اليهود يقرا الزبور فقال يا عبد الـمطلب بن هاشم عليه السلام ائذن لى انظر الى بعضك قال انظر ما لم تكن عورة قال ففتح احدى منخريه فنظر فيه ثم نظر فى الاخر فقال اشهد ان فى احدى يديك ملكا وفى الاخرى نبوة وانا نجد ذلك فى بنى زهرة قال الك زوجة قلت اما اليوم فلا فقال فاذا رجعت فتزوج منهم
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি যখন শীতের মৌসুমে ইয়ামান ছফর করেন, তখন তাওরাত শরীফে অভিজ্ঞ ইহুদী এক পাদ্রীর নিকট অবস্থান করেন। পাদ্রী উনাকে বলেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম! আপনি যদি অনুমতি মুবারক প্রদান করেন, তাহলে আমি আপনার জিসম মুবারকে কিছু আলামত তালাশ করবো। তিনি বললেন, ছতর ব্যতীত সারা জিসম মুবারকই আপনি দেখতে পারেন। তখন সেই পাদ্রী উনার দু’হাত মুবারক পরীক্ষা করে বললেন, আমি আপনার একহাত মুবারকে মুলকিয়াত তথা শাসন ক্ষমতা এবং অপর হাত মুবারকে নবুওয়াত দেখতে পাচ্ছি। আর সেটা পাওয়া যাবে বনী যুহরা গোত্রে। পাদ্রী উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সাথে কি আপনার যাওজাতুম মুকাররমাহ রয়েছেন? তিনি বললেন, আমার সাথে আমার যাওজাতুম মুকাররমাহ নেই। তখন পাদ্রী বললেন, আপনি আপনার ছফর হতে ফিরে গিয়ে সেই যুহরা গোত্রে নিসবাতুল আযীম মুবারক করবেন। (মুসতাদরেকে হাকীম)
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি সেই সফর হতে ফিরে এসে সাইয়্যিদুনা আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহতারামা আম্মা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম উনাকে নিসবতে আযীম মুবারক করেন। এই ঘটনার অল্প কয়েকদিনের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনিও কুরাইশদের একক ‘সাইয়্যিদ’ হিসেবে ঘোষিত ও স্বীকৃত হন। যা দ্বারা পাদ্রীর বর্ণিত মুলকিয়াত প্রকাশ পায়। আর পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক জাহিরের মাধ্যমে নবুওয়াত উনার বিষয়টিও সুস্পষ্ট হয়। সামগ্রিকভাবে এ ঘটনাবলী দ্বারা যুহরা গোত্র পূর্ব বর্ণিত হওয়ার বিষয়টিই প্রমাণিত হয়।
পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক জাহির:
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ নিয়ে কোনো আলোচনা প্রচলিত কিতাবাদিতে পাওয়া যায়না। কায়িনাত মাঝে একক ব্যক্তিত্ব যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম। তিনি সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে জেনে উম্মাহকে জানিয়েছেন যে, উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুশ শুহূর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার ৫ই তারিখ পবিত্র জুময়াহ শরীফ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এ মুবারক দিনকে কেন্দ্র করে রাজারবাগ শরীফে মাহফিল হতে শুরু করে বহুমুখী কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থান মুবারকের মোট সময় দ্বারা উনার বিভিন্ন বিষয়ের সন বের করা যায়। আর উনার দুনিয়ার যমীনের অবস্থান মুবারকের মোট সময় সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
انها ماتت فى حدود العشرين.
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি বিশের দশকে বিছালী শান মুবারক জাহির করেন।
আর বিষয়টাকে আরো সুস্পষ্ট করেছেন যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম। তিনি বলেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি দুনিয়ার যমীনে ২৫ বছর অবস্থান মুবারক করেন।
এ হিসাব অনুযায়ী, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনুষ্ঠানিক নবুওয়ত প্রকাশের ৫৯ বছর পূর্বে, হিজরতের ৭২ বছর পূর্বে, ঈসায়ী ৫৫২ সন মুতাবিক শামসী পূর্ব ৮১ সনে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নাযযার গোত্রের বনী যুহরায় পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক জাহির করেন।
পবিত্র নাম মুবারক:
একথা অত্যধিক প্রসিদ্ধ যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক হলো হযরত ‘আমিনা’ আলাইহাস সালাম। কিন্তু এ পূত-পবিত্র নাম মুবারক কোথা হতে আসলো। উনার পূর্বে আরবে এ নাম মুবারকে অন্য কাউকে নামকরণ করা হয়নি।
আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে امنة শব্দের অর্থ হলো ঈমান আনয়নকারিণী বা নিরাপদ। অর্থাৎ সাইয়্যিদাতুনা উম্মু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক সার্বিকভাবে নিরাপদ করে সমস্ত খ¦ইর বরকত হাদিয়া মুবারক করেই দুনিয়ার যমীনে প্রেরণ করেন।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি উনার মুহতারামা আম্মাজান উনার পবিত্র রেহেম শরীফে অবস্থান মুবারক কালে উনার মুহতারাম পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি একখানা বিশেষ স্বপ্ন মুবারক দেখেন। মুবারক স্বপ্নে গায়েব হতে উনাকে বলা হচ্ছে, হে সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম! কায়িনাত মাঝে আপনি কতই না সৌভাগ্যবান। যিনি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহতারামা আম্মাজান আলাইহাস সালাম হিসেবে আপনার মুহতারামা দুহিতা উনাকে মনোনীত করা হয়েছে। আপনি উনার নাম মুবারক রাখবেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ‘আমিনা’ আলাইহাস সালাম। মুবারক স্বপ্ন অনুযায়ী উনার এ নাম মুবারক ঘোষণা করা হলো।
দুনিয়ার যমীনে মুবারক অবস্থান:
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার প্রতিটি বিষয় সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক তত্ত্বাবধানে সুসম্পন্ন হয়। বিধায় উনার শিশু বয়স মুবারক হতে শুরু করে অনন্তকালব্যাপী মহান কুদরতেই উনার অবস্থান মুবারক।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি একদা উনার মুহতারাম আব্বাজান উনাকে বলেন, আমি যখন নিরিবিলি বা নির্জনে অবস্থান মুবারক করি, তখন গায়েব হতে আমাকে বলা হয়-
السلام عليكم يا ام رسول الله صلى الله عليه و سلم
السلام عليكم يا ام سيد الـمرسلين صلى الله عليه وسلم.
মুবারক নিসবাতুল আযীম মুবরকের প্রস্তাবনা:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ‘মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া’ কিতাবে উল্লেখ আছে-
وهى يومئذ افضل امراة فى قريش نسبا وموضعا.
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন কুরাইশ তথা কায়িনাতের সমস্ত মহিলা হতে মুবারক বংশ ও সামগ্রিকভাবে সর্বশ্রেষ্ঠ।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুলিয়া মুবারক, হুসনিয়াত মুবারক, ইলম মুবারক, খুলক্ব মুবারকসহ সামগ্রিকভাবে সারা কায়িনাতে তিনি ছিলেন অনন্যা। তাছাড়া পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহেও রয়েছে উনার ছিফত মুবারকের বর্ণনা। সঙ্গতকারণেই আরবের বিত্তশালী অনেক পরিবার হতেই উনার ব্যাপারে প্রস্তাবনা এসেছে। এমনকি তৎকালীন তথাকথিত পরাশক্তি রোম ও পারস্য সম্রাটদের পক্ষ হতেও অনেকবার প্রস্তাবনা এসেছে। যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
খোদায়ী মুবারক ফায়ছালা:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার ব্যাপারে বিভিন্ন জনের পক্ষ হতে বারবার প্রস্তাবনা আসায়, উনার মুহতারাম পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েন। আর এহেন পরিস্থিতিতে আসে খোদায়ী মুবারক ফায়সালা।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সাইয়্যিদুনা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি একদা স্বপ্ন মুবারক দেখেন। কেউ একজন উনাকে লক্ষ্য করে বলেন, আপনি আপনার লখতে জিগার উনাকে নিয়ে চিন্তিত হবেন না। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত তত্ত্বাবধায়ক। আপনি এমন সৎ ও উত্তম পাত্রে উনাকে পাত্রস্থ করুন, যিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত ‘যবীহুল্লাহিল মুকাররাম’ আলাইহিস সালাম।
এই মুবারক স্বপ্ন দ্বারা অন্যান্য সমস্ত প্রস্তাবনাই বাতিল করা হয়।
পবিত্র নিসবতে আযীম মুবারক:
মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা আলাইহিস সালাম উনাকে যেরূপ পূর্বেই মনোনীত করে রেখেছেন, তদ্রƒপ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও মনোনীত করেই দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। সঙ্গতকারণেই উনাদের নিসবতে আযীম মুবারক ছিলো মহান বারী তায়ালা কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত। তাই তো অন্যান্য মহিলাদের প্রস্তাবনা বাতিল করে উনাদের নিসবতে আযীম মুবারক সম্পন্ন হয়। বিশ্ব বিখ্যাত ‘আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আ’লাম’ কিতাবে উল্লেখ আছে-
قال حسن بن احـمد البكرى رحمة الله عليه لـما اراد الجليل جل جلاله ان ينقل نور سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم حرك فى قلب عبد الله بن عبد الـمطلب عليه السلام ان يتزوج فقال عبد الله عليه السلام لامه عليها السلام اريد منك ان تـخطبى لى امراة ذات حسن وجمال وقد اعتدال وبـهاء وكمال وحسب ونسب عال، قالت حبا وكرامة يا ولدى ثـم انـها دارت احياء قريش وبنات العرب، فلم يعجبها الا امنة بنت وهب عليها السلام، فقال يا اماه انظريها مرة ثانية، فمضب ونظرتـها فاذا هى تضىء كانـها كوكب درى،
অর্থ: হযরত হাসান বিন আহমদ বাকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন মহান আল্লাহ জাল্লা জালালুহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারককে উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার খিদমতে স্থানান্তরিত করার ইচ্ছা মুবারক করলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক অন্তরে পবিত্র নিসবতে আযীম মুবারক করার আগ্রহ সৃষ্টি করে দিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম তিনি নিজ মাতা উনাকে বললেন, আমি চাচ্ছি আপনি আমার সাথে একজন যাওজাতুম মুকাররমাহ উনাকে নিসবতে আযীম মুবারক করিয়ে দেন; যিনি হবেন উত্তম চরিত্রের অধিকারিনী, সুদশর্না, ন্যায় নিষ্ঠাবান, জ্যোতির্ময়, পূর্ণতাপ্রাপ্তা ও সুউচ্চ বংশ ও গোত্রের ব্যক্তিত্বা। উনার মাতা তিনি উত্তরে বললেন, হে আমার স্নেহের আওলাদ! আপনার জন্যই সমস্ত মুহব্বত ও সম্মান-ইজ্জত। অতঃপর তিনি (উনার মাতা) কুরাইশ বংশের ও আরবের সকল কুমারী মেয়েগণের ব্যাপারে প্রতিটি বাড়ি থেকে সংবাদ নিলেন। উনার কাছে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা বিনতে ওয়াহাব আলাইহাস সালাম তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে উপযুক্ত মনে হলো না। বলা হলো, হে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মাতা! আপনি দ্বিতীয়বারের মতো আবারো উনাকে দেখুন। অতএব, তিনি আবারো দেখলেন এমতাবস্থায় যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি নূরানী আলোকময়, যেন মুক্তা সাদৃশ্য তারকা। সুবহানাল্লাহ!
মোহর মুবারক:
বিশ্ব বিখ্যাত ‘আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আ’লাম’ কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,
فانقدوها اوقية من فضة واوقية من ذهب، ومائة من الابل ومثلها من البقر والغنم وذبح واصلح طعام كثير،
অর্থ: এই মুবারক নিসবতে আযীম মুবারকে উনাকে নগদ এক আউকিয়া স্বর্ণ ও এক আউকিয়া রৌপ্য মুবারক মোহর হিসেবে প্রদান করা হয়েছিলো। সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র নিসবতে আযীম মুবারক উনার ওলীমায় একশতটি উট, একশত গরু, একশত বকরী (খাশি, মেষ, ভেড়া, দুম্বা, ছাগল) জবাই করা হয়েছিলো এবং প্রচুর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো।
নূরে হাবীবী মুবারক গ্রহণ:
বিশ্ব বিখ্যাত ‘আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আ’লাম’ কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,
لاجل عرس عبد الله بن عبد الـمطلب عليه السلام و زفت له ثـم اختلا بـها عبد الله عليه السلام فى خلوة الـطاعة عشبة، وكانت ليلة الـجمعة روى انه لـما اراد الله ان يـخلق مـحمدا صلى الله عليه وسلم فى بطن امه امنة عليها السلام ليلة الـجمعة من شهر رجب الاصم،
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ফুল সজ্জিত ঘর মুবারকে পাঠানো হলো। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার যাওজাতুম মুকাররমাহ উনার সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎ মুবারক লাভ করলেন। সেই মুবারক রাতখানা ছিলো লাইলাতুল জুমুয়াহ বা জুমুয়াহ শরীফ উনার রাত।
বর্ণিত রয়েছে যে, “যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইচ্ছা মুবারক করলেন যে, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার বরকতময় খিদমত মুবারকে তাশরীফ মুবারক নেন, সে সময়টি ছিলো রজবুল আছাম মাস উনার ১লা লাইলাতুল জুমুয়াহ বা জুমুয়াবার রাত (লক্ষণীয় যে, সেই বছর পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ১লা জুমুয়াবার ছিলো ১লা তারিখেই)। সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ হযরত ওয়ালিদাইনিশ শরীফাইনে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পবিত্র নিসবতে আযীম মুবারক পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ উনার পহেলা তারিখে রাতে সংঘটিত হয়। এবং উনাদের পবিত্র উরুস মুবারক পবিত্র রজবুল আছম শরীফ উনার পহেলা তারিখ জুমুয়াবার রাতে সংঘটিত হয়। এই সম্মানিত রাত্রি মুবারক পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ নামে অত্যধিক মশহুর। হাম্বলী মাযহাবের সম্মানিত ইমাম- হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ পবিত্র রাত উনাকে পবিত্র শবে ক্বদর ও পবিত্র শবে বরাত উনাদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। তাছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফে ঘোষিত দোয়া কবুলের বিশেষ পাঁচ রাত্রি উনাদের মধ্যে রজব মাসের প্রথম রাত অন্যতম। বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র ১২ই সাইয়্যদুশ শুহূর রবীউল আউওয়াল শরীফে যেরুপ অসংখ্য মু’জিযা শরীফ জাহির হয়েছিল, ঠিক তদ্রƒপ পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফেও অসংখ্য কুদরত ও মু’জিযা শরীফ জাহির হয়েছিল।
মুবারক খিদমতে হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমতে প্রায় নয় (৯) মাস অবস্থান মুবারক করেন। এ সময়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হযরত আম্বিয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে প্রতি মাসে প্রেরণ করেছেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, প্রথম মাস পবিত্র রজবুল আছাম শরীফে মানবজাতির আদি পিতা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি, দ্বিতীয় মাস পবিত্র শা’বান শরীফে হযরত শীছ আলাইহিস সালাম তিনি, তৃতীয় মাস পবিত্র রমাদ্বানুল মুবারকে হযরত ইদ্রীস আলাইহিস সালাম তিনি, চতুর্থ মাস পবিত্র শাওয়াল শরীফে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম তিনি, পঞ্চম মাস পবিত্র যিলক্বদ শরীফে হযরত হুদ আলাইহিস সালাম তিনি, ষষ্ঠ মাস পবিত্র যিলহজ্জ শরীফে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি, সপ্তম মাস পবিত্র মুহররম শরীফে হযরত ইসমাইল যবীহুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি, অষ্টম মাস ছফর শরীফে হযরত মূসা ইবনে ইমরান আলাইহিমাস সালাম তিনি, নবম মাস মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সাইয়্যিদুশ শুহূর রবীউল আউওয়াল শরীফে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ ইবনে মারইয়াম আলাইহিমাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে বিভিন্ন সুসংবাদ নিয়ে তাশরীফ মুবারক রাখেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে হাবীবী উনার মুবারক প্রকাশ:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন উনার মুহতারামা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমত হতে জাহির মুবারক হন অর্থাৎ তিনি যখন পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, সেই মুবারক সময় বা প্রেক্ষাপটে অসংখ্য অগণিত কুদরত মুবারক ও মু’জিযা শরীফ প্রকাশিত। সীরাত গ্রন্থসমূহে এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। যা একত্রিত করলে অনেকগুলো বৃহৎ কিতাব হয়ে যাবে। তবে হযরত আল্লামা জা’ফর ইবনে হুসাইন বারযানজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত “আল ইক্বদুল জাওহার ফি মাওলিদিন নাবিইয়ীল আযহার” নামক কিতাব উনার বর্ণনা অনুযায়ী পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার পবিত্র তাওয়াল্লুদ শরীফে সংক্ষিপ্তাকারে আমরা পাঠ করি-
لَـمَّا تَمَّ مِنْ حَمْلِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الرَّاجِحِ تِسْعَةُ اَشْهُرٍ قَمَرِيَّةٍ، وَاٰنَ لِلزَّمَانِ اَنْ يَّنْجَلِىَ عَنْهُ صَدَاهُ، حَضَرَتْ سَيِّدَةَ نِسَاءِ الْعَالَمِيْنَ اُمَّهٗ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ مَوْلِدِهٖ حَضَرَتْ حَوَّاءُ عَلَيْهَا السَّلَامُ حَضَرَتْ سَارَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ حَضَرَتْ اٰسِيَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ حَضَرَتْ مَرْيَمُ عَلَيْهَا السَّلَامُ فِىْ نِسْوَةٍ مِّنَ الْحَظِيْرَةِ الْقُدْسِيَّةِ،
অর্থ: তারজিহ্ তথা প্রাধান্যপ্রাপ্ত মতে, যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহতারামা আম্মা আলাইহাস্ সালাম উনার খিদমত মুবারকে অবস্থানকাল মুবারক চন্দ্র মাসসমূহের প্রায় নয় (৯) মাস পূর্ণ হলো, অর্থাৎ নয় (৯) মাস চলছিল তখনই উনার আনন্দের ফোয়ারা নিয়ে দুনিয়াতে তাশরীফ নেয়ার সময় নিকটবর্তী হলো আর উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের রাত্রী মুবারকে উনার মুহতারামা আম্মা আলাইহাস্ সালাম উনার মুবারক খিদমতে পবিত্র জান্নাত হতে উম্মুল বাশার সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম, উম্মু যাবীহুল্লাহিল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত সারাহ আলাইহাস্ সালাম, উম্মু যাবীহুল্লাহিছ ছানিয়া সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাযিরা আলাইহাস সালাম, রব্বাতু কালীমিল্লাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছিয়া আলাইহাস্ সালাম ও উম্মু রূহিল্লাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত মারইয়াম আলাইহাস্ সালাম উনারা জান্নাতী হুরগণসহ (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইস্তিকবাল জানাতে) আগমন করেন। (এবং খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দেন।) সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে পূর্ববর্তী আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিতা মাতা, যাওজাতুম মুকাররমাহ, অভিভাবক উনাদের প্রেরণ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল বুযুর্গী মুবারকই প্রকাশ করেছেন। একথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেরূপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, তদ্রƒপ উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান তিনি ‘সাইয়্যিদাতুল উম্মাহাত’। সুবহানাল্লাহ!
মুবারক কোলে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া:
উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিয়েছেন। যা বলার অপেক্ষাই রাখে না। তবে চিন্তা ও ফিকিরের বিষয় হলো, ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া’ নামক কিতাবে বর্ণিত বনী ইসরাইলের সেই ব্যক্তির ঘটনা। মাত্র একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওযা সাল্লাম উনার নাম মুবারকে চুম্বন করার কারণে দুই শত বছরের জিন্দেগীর সমস্ত গুনাহখাতা ক্ষমা করে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সেই ব্যক্তির কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করতে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ মুবারক করেছেন। তাহলে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযীমী শান মুবারক কতটুকু বিস্তৃত, তা ফিকিরের বিষয়। কারণ একজন মা উনার সন্তানকে কতটুক মুহব্বত করেন, কতবার বুছা মুবারক দেন, কতবার বুকে জড়িয়ে ধরেন, কতক্ষণ খিদমত করেন, তা বলাই বাহুল্য।
পবিত্র মদীনা শরীফে ছফর:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال لما بلغ رسول الله صلى الله عليه وسلم ست سنين خرجت به امه الى اخواله بين عدى بن النجار بالمد ينة تزورهم ومعه ام ايمن رضى الله تعالى عنها فنزلت به دار التابعة فاقامت به عندهم شهرا.
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক যখন ছয় (৬) বছর, তখন উনার মুহতারামা আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি উনাকে নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বনী নাযযার গোত্রে উনার মামা উনাদের সাথে মুবারক সাক্ষাৎ করার জন্য যান। তখন উনাদের সাথে হযরত উম্মু আইমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ছিলেন। উনারা সেখানে এক মাস অবস্থান মুবারক করেন। (ইবনু সা’দ)
অর্থাৎ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে এক মাস অবস্থান মুবারক করেন। সেখানেও অনেক মু’জিযা শরীফ প্রকাশিত হয়। যা বিভিন্ন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে।
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার স্থান এবং উনার পবিত্র রওযা শরীফ নিয়ে ইকতিলাফ রয়েছে। তবে মশহুর মতে-
رجعت به امه الى مكة فلما كانت بالابواء توفيت.
অর্থ: (পবিত্র মদীনা শরীফে এক মাস অবস্থান মুবারক করার পর) সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ অভিমুখে রওয়ানা হলেন। (পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পার্শ্ববর্তী এলাকা) ‘আবওয়া’ নামক স্থানে (পবিত্র মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করতঃ) সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া)
প্রাধান্যপ্রাপ্ত ও মশহুর মতে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ ‘আবওয়া’ নামক স্থানেই স্থাপিত রয়েছে। তবে কতিপয় ঐতিহাসিক ‘হুযুন’ নামক স্থানের কথা বর্ণনা করেছেন।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ নিয়ে কোনো আলোচনা প্রচলিত কিতাবাদিতে পাওয়া যায় না। তবে মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে জেনে উম্মাহকে জানিয়েছেন যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুশ শুহূর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার ১০ই তারিখ পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এ মুবারক দিনকে কেন্দ্র করে পবিত্র রাজারবাগ শরীফে মাহফিল হতে শুরু করে বহুমুখী কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
উল্লেখ্য যে, উঁচু শ্রেণীর হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা অনেক বিষয় সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ জিজ্ঞাসা করে বর্ণনা করেন। যা শরীয়তে হুজ্জত হিসেবে স্বীকৃত হয়। যেমন- হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, গাউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা উনাদের কিতাবসমূহে অনেক পবিত্র হাদীছ শরীফ কোনো সনদ ব্যতীতই বর্ণনা করেছেন। যা অন্য কোনো সনদেও পাওয়া যায় না। ফলশ্রুতিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে সরাসরি বর্ণনা করার বিষয়টিই সুস্পষ্ট হয়।
কাজেই সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ নিয়ে সন্দেহ সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই।
মূলত, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে সর্বোচ্চ হুসনে যন পোষণ করা ঈমানদার হওয়ার পূর্বশর্ত। কিছু লোক উনার জান্নাতী হওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে। নাউযুবিল্লাহ! আসলে তাদের এ বিরূপ প্রশ্ন তাদের নিফাকীরই প্রকাশ ঘটায়। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদা হলো, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেবল জান্নাতীই নন; বরং উনার মুবারক উসীলায় জান্নাত সম্মানিত হয়েছে। কারণ জান্নাতসহ সারা কায়িনাতের সৃষ্টি ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে। আর সেই ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজস্র শান মুবারক সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে জাহির হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই বর্তমান সময়ে মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ছোহবত ইখতিয়ারের কোনো বিকল্প নেই। তিনি একক ব্যক্তিত্ব, যিনি হযরত ওয়ালিদাইনিশ শরীফাইন আলাইহিমাস সালাম উনাদের মুবারক শানে সর্বোচ্চ হুসনে যন উম্মাহকে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলিম মিল্লাতকে উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শান উপলব্ধি করে উনার ব্যাপারে হুসনে যন পোষণ করতঃ উনার হক্ব হাক্বীক্বীভাবে আদায় করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
0 Comments:
Post a Comment