হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৭

 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৭

عَنْ عُمَارَةَ بْنِ خُزَيْمَةَ، أَنَّ عَمَّهُ، حَدَّثَهُ وَهُوَ، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم ابْتَاعَ فَرَسًا مِنْ أَعْرَابِيٍّ فَاسْتَتْبَعَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِيَقْضِيَهُ ثَمَنَ فَرَسِهِ فَأَسْرَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَشْىَ وَأَبْطَأَ الأَعْرَابِيُّ فَطَفِقَ رِجَالٌ يَعْتَرِضُونَ الأَعْرَابِيَّ فَيُسَاوِمُونَهُ بِالْفَرَسِ وَلاَ يَشْعُرُونَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم ابْتَاعَهُ فَنَادَى الأَعْرَابِيُّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنْ كُنْتَ مُبْتَاعًا هَذَا الْفَرَسَ وَإِلاَّ بِعْتُهُ ‏.‏ فَقَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم حِينَ سَمِعَ نِدَاءَ الأَعْرَابِيِّ فَقَالَ ‏"‏ أَوَلَيْسَ قَدِ ابْتَعْتُهُ مِنْكَ ‏"‏ ‏.‏ فَقَالَ الأَعْرَابِيُّ لاَ وَاللَّهِ مَا بِعْتُكَهُ ‏.‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ بَلَى قَدِ ابْتَعْتُهُ مِنْكَ ‏"‏ ‏.‏ فَطَفِقَ الأَعْرَابِيُّ يَقُولُ هَلُمَّ شَهِيدًا ‏.‏ فَقَالَ خُزَيْمَةُ بْنُ ثَابِتٍ أَنَا أَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَايَعْتَهُ ‏.‏ فَأَقْبَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى خُزَيْمَةَ فَقَالَ ‏"‏ بِمَ تَشْهَدُ ‏"‏ ‏.‏ فَقَالَ بِتَصْدِيقِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ‏.‏ فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم شَهَادَةَ خُزَيْمَةَ بِشَهَادَةِ رَجُلَيْنِ ‏.‏
হযরত উমারাহ ইবনু খুযাইমাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত,উনার চাচা জানিয়েছেন যে, তিনি হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। একদা হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক বেদুঈনের কাছ হতে একটি ঘোড়া কিনলেন। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ঘোড়ার দাম নেয়ার জন্য উনার পিছে পিছে আসতে বললেন। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্রুত চলতে লাগলেন। তাতে বেদুঈন পিছে পড়ে গেলো। তখন কতিপয় ব্যক্তি বেদুঈনের সামনে এসে দরদাম করতে শুরু করলো। তারা জানতো না যে, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা কিনেছেন। বেদুঈন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ডেকে বললো, যদি আপনি কিনতে চান তবে কিনুন, নতুবা আমি এটা বিক্রি করে দিচ্ছি। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেদুঈনের ডাক শুনে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, আমি কি তোমার কাছ হতে এটা ক্রয় করিনি? বেদুঈন বললো, আল্লাহর কসম! না, আমি আপনার নিকট তা বিক্রি করিনি (নাউযুবিল্লাহ)। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হাঁ, আমি কিছুক্ষণ আগেই তোমার কাছ হতে এটা কিনেছি। বেদুঈন বলতে লাগলো, তাহলে সাক্ষী পেশ করুন। তখন হযরত খুযাইমাহ্ ইবনু সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই তুমি এই ঘোড়া হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট বিক্রি করেছো। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত খুযাইমাহ ইবনু সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বললেন, তুমি কী সাক্ষ্য দিচ্ছো? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কথার সত্যতার অনুকূলে সাক্ষ্য দিচ্ছি। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত খুযাইমাহ ইবনু সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর একার সাক্ষ্য দুইজনের সাক্ষ্যের সমান গণ্য করলেন। (আবু দাউদ শরীফ ৩৬০৭)
এ বিষয়ে বর্নিত আছে,
من طريق مُحَمَّد بْن زُرَارَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ، حَدَّثَنِي عُمَارَةُ بْنُ خُزَيْمَةَ، عَنْ أَبِيهِ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ : " أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ابْتَاعَ مِنْ سَوَاءَ بْنِ الْحَارِثِ الْمُحَارِبِيِّ فَرَسًا فَجَحَدَهُ فَشَهِدَ لَهُ خُزَيْمَةُ بْنُ ثَابِتٍ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا حَمَلَكَ عَلَى الشَّهَادَةِ وَلَمْ تَكُنْ مَعَهُ؟ قَالَ: صَدَقْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَلَكِنْ صَدَّقْتُكَ بِمَا قُلْتَ وَعَرَفْتُ أَنَّكَ لَا تَقُولُ إِلَّا حَقًّا، فَقَالَ: مَنْ شَهِدَ لَهُ خُزَيْمَةُ أَو شهِدَ عَلَيْهِ ؛ فَحَسْبُهُ .
মুহম্মাদ ইবনু জরারাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু খুযাইমাহ ইবনু সাবিত বলেন, আমাকে বর্ণনা করেছেন উমারাহ ইবনু খুযাইমাহ, তিনি তাঁর পিতা হযরত খুযাইমাহ ইবনু সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বলেন,
হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাওয়া ইবনুল হারিস আল-মুহারিবী নামের একজনের কাছ থেকে একটি ঘোড়া ক্রয় করেন। কিন্তু সে ব্যক্তি (মূল্য পাওয়ার পর) তা অস্বীকার করে। তখন খুযাইমাহ ইবনু সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পক্ষে সাক্ষ্য দেন।
তখন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন,
“তুমি তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলে না, তবু তোমাকে কোন বিষয় সাক্ষ্য দিতে অনুপ্রাণিত করল?”
হযরত খুযাইমাহ ইবনু সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উত্তর দিলেন,
“হে আল্লাহর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সত্য বলেছেন। আমি আপনাকে বিশ্বাস করেছি, কারণ আমি জানি আপনি কখনো মিথ্যা বলেন না; আপনি কেবল সত্যই বলেন।”
তখন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
যার পক্ষে বা বিপক্ষে খুযাইমাহ সাক্ষ্য দেবে, সেটাই যথেষ্ট (অর্থাৎ উনার একক সাক্ষ্যই প্রমাণস্বরূপ গণ্য হবে)। (ইবনে আবি শায়বা ১৯, সুনানুল কুবরা বায়হাকী ২০৫১৬, মুজামুল কবীর তাবরানী ৩৮৩০)
এ কারণে হযরত খুযাইমাহ ইবনু সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-কে “ذو الشهادتين” (দুই সাক্ষ্যধারী) উপাধি দেওয়া হয়। অর্থাৎ উনার এক সাক্ষ্যই দুজন সাক্ষ্যের সমান ধরা হতো, কারণ তিনি হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সত্যবাদিতার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখেছিলেন।
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৬


 
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৬

وَسُئِلَ عَلِيّ بن أَبِي طَالِب رَضِيَ اللَّه عَنْهُ كَيْفَ كَانَ حُبُّكُمْ لِرَسُولِ اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ ‌كَانَ ‌والله ‌أَحَبَّ ‌إِلَيْنَا ‌من ‌أَمْوَالِنَا ‌وَأَوْلادِنَا ‌وَآبَائِنَا ‌وأُمَّهَاتِنَا ‌وَمِنَ ‌المَاءِ ‌الْبَارِدِ ‌عَلَى ‌الظَّمَإِ،
হযরত আলী ইবন আবি তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এর প্রতি আপনাদের ভালোবাসা কেমন ছিল? তিনি এ প্রশ্নের জবাবে বলেন,
"আল্লাহ পাকের শপথ! তিনি আমাদের কাছে আমাদের ধন সম্পদ, আমাদের সন্তান-সন্ততি, আমাদের পিতৃবর্গ, আমাদের মায়েদের এবং পিপাসার্ত অবস্থায় ঠান্ডা পানির চেয়েও অধিক প্রিয় ছিলেন ।" (আশ শিফা ২/২২)
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের থেকে শিখতে হবে। তবেই ঈমানের স্বাদ পাওয়া যাবে।
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৫

 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৫

হযরত জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছিলেন,
لَوْ قَدْ جَاءَنَا مَالُ الْبَحْرَيْنِ قَدْ أَعْطَيْتُكَ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا ‏"‌‏.‏ فَلَمَّا قُبِضَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَجَاءَ مَالُ الْبَحْرَيْنِ قَالَ أَبُو بَكْرٍ مَنْ كَانَتْ لَهُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عِدَةٌ فَلْيَأْتِنِي‏.‏ فَأَتَيْتُهُ فَقُلْتُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ كَانَ قَالَ لِي ‏"‏ لَوْ قَدْ جَاءَنَا مَالُ الْبَحْرَيْنِ لأَعْطَيْتُكَ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا ‏"‌‏.‏ فَقَالَ لِي احْثُهْ‏.‏ فَحَثَوْتُ حَثْيَةً فَقَالَ لِي عُدَّهَا‏.‏ فَعَدَدْتُهَا فَإِذَا هِيَ خَمْسُمِائَةٍ، فَأَعْطَانِي أَلْفًا وَخَمْسَمِائَةٍ‏.‏
যদি আমার নিকট বাহরাইন থেকে মাল আসে তবে আমি তোমাকে এ পরিমাণ, এ পরিমাণ, এ পরিমাণ দিব। পরে যখন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিছাল শরীফ সংঘটিত হয়, পরে বাহরাইনের সম্পদ এসে যায় তখন খলীফা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যে ব্যক্তির কোন ওয়াদা থাকে, সে যেন আমার নিকট আসে। তখন আমি উনার নিকট গেলাম এবং বললাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছিলাম, যদি আমার নিকট বাহরাইনের সম্পদে আসে, তবে আমি তোমাকে এ পরিমাণ, এ পরিমাণ ও এ পরিমাণ দিব। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আমাকে বললেন, তুমি অঞ্জলি ভরে নাও। আমি এক অঞ্জলি উঠালাম। তিনি আমাকে বললেন, এগুলো গুণে দেখ। আমি গুণে দেখলাম যে, তাতে পাঁচশ রয়েছে। তখন তিনি আমাকে এক হাজার পাঁচশ দিলেন। (বুখারী শরীফ ৩১৬৪)
ফিকিরের বিষয় হচ্ছে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কাছে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা বলা মাত্র কোন ফিকির কোন যাচাই, কোন সাক্ষী তলব না করেই সে পরিমাণ সম্পদ দিয়ে দিলেন। হুব্বে রসূল এটাকেই বলে। সুবহানাল্লাহ!
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৪

 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৪

হযরত যায়দ ইবন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিনে আমাকে হযরত সা'দ ইবনুর রাবী' রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর অনুসন্ধানে এই বলে পাঠালেন যে,
إن رأيته فالمرأه مني السلام، وَقُلْ لَهُ يَقولُ لَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسَلَّمَ كَيْفَ تَجِدُكَ ؟
'যদি তুমি তাকে পাও তাহলে আমার সালাম পৌঁছে দিও এবং তাকে বলো, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে বলেছেন, 'আপনার অবস্থা কি?
হযরত যায়েদ ইবন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে উনাকে খুঁজতে থাকলাম এবং উনাকে জীবনের শেষ প্রহরে দেখতে পেলাম। দেখি উনার শরীরে ৭০টি তীর, বল্লম, বর্শা ও তরবারীর আঘাত রয়েছে। আমি তাকে বললাম, হে সা'দ। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার নিকট সালাম পাঠিয়েছেন এবং তিনি আপনার উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, আপনার অবস্থা কি? তা যেন আমাকে অবহিত করেন।
হযরত সা'দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এবং আপনার প্রতি আমার সালাম। উনাকে বলবেন যে, আমি জান্নাতের সুঘ্রান পাচ্ছি। আর আনসারদেরকে বলবেন,
لا عُذْرَ لَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَنْ يُخْلِصَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ وَفِيْكُمْ شُفْرٌ يَطْرِفُ
তোমাদের জীবনের শেষ বিন্দু দিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি নিষ্ঠাবান থেকো, অন্যথায় আল্লাহর নিকট তোমাদের কোনো ওযর গ্রহণযোগ্য হবে না'।
যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এই কথা বলার সাথে সাথেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
(মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন ৪৯০২, দালায়েলুন নবুওয়া লিল বায়হাকী ৩/২৪৮)
জিহাদে প্রচন্ড আহত হয়েও , শরীরে ৭০ টি আঘাত নিয়েও উনার চিন্তা ছিলো হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে। এরই নাম হুব্বে রসূল।
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৩

 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৩

বদরের জিহাদে সময় হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, 'আমি আল-মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর একটি শান মুবারক দেখেছি, যে সে ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া আমার নিকট পৃথিবীর সমস্ত বস্তুর চেয়ে অধিক প্রিয়।
হযরত আল-মিকদাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এমন সময় আসলেন, যখন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুশরিকদের বিরুদ্ধে দু'আ করছিলেন। হযরত আল-মিকদাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
لَا تَقُولُ كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوسَى اذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلَا وَلَكِنَّا نُقَاتِلُ عَنْ يَمِينِكَ وَعَنْ شِمَالِكَ وَبَيْنَ يَدَيْكَ وَخَلْفَكَ فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَشْرَقَ وَجْهُهُ وَسَرَّهُ
আমরা এমনটি বলবো না, যেমন হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালামকে উনার কওম বলেছিল, 'আপনি আর আপনার রব দুজনে গিয়ে যুদ্ধ করুন', বরং আমরা আপনার ডান পাশে, বাম পাশে, সম্মুখ থেকে এবং পেছন থেকে লড়াই করবো'। আমি হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে, (আল-মিকদাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর এ কথার পর) উনার মুখমন্ডল উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তিনি আনন্দিত হয়েছেন' ।
একইভাবে আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরো বলেন,
فَقَامَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ، فَقَالَ : إِيَّانَا تُرِيدُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ تُحِيضَهَا الْبَحْرَ لَأَحْضْنَاهَا ، وَلَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ نَضْرِبَ أَكْبَادَهَا إِلَى بَرْكِ الْغمَادِ لَفَعَلْنَا،
তখন সা'দ ইবন 'উবাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দাঁড়ালেন, অতঃপর বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন! আপনি যদি আমাদের ঘোড়াসহ সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে নির্দেশ করেন আমরা অবশ্যই সাগরে ঝাঁপ দেব। আপনি যদি নির্দেশ দেন যে, আমরা ঘোড়াগুলোকে পদাঘাত করে অগ্রসর হয়ে বারকুল গিমাদ পর্যন্ত পৌছে যাই, আমরা অবশ্যই তা করব' (মুসনাদে আহমদ ৩৬৯৮, ১৩৭০৩)
মদীনা শরীফ থেকে বারকুল গিমাদ সাগর তীর প্রায় ১৭০০ কিলোমিটার দূরত্ব।
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-২

 

হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-২

মক্কার কাফিরদের হাতে বন্দী সাহাবী হযরত যায়েদ ইবনুদ দাসিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কে যখন হত্যার উদ্দেশ্যে কা'বার আঙ্গিনা থেকে বের করে নেওয়া হয়, তখন আবু সুফইয়ান ইবন হারব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখন ঈমান গ্রহন করেন নাই) তাকে জিজ্ঞাসা করেন, হে যায়েদ। আল্লাহর নামে তোমাকে বলছি, তুমি কি এটা পছন্দ কর যে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মুহূর্তে আমাদের নিকট তোমার স্থানে থাকুক, আমরা উনাকে শহীদ করি (নাউযুবিল্লাহ), বিনিময়ে তুমি মুক্ত হয়ে তোমার পরিবারে ফিরে যাও? তিনি উত্তরে বলেন:
وَاللَّهِ مَا أُحِبُّ أَنَّ مُحَمَّدًا الآن في مَكَانِهِ الَّذي هُوَ فِيْهِ تُصِيبُه شَوْكَةٌ تُؤْذِيهِ وَإِنِّي جَالِسٌ فِي أَهْلِي
আল্লাহ পাকের শপথ! এখন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে আছেন, সেখানে থেকেই উনার শরীরে কাঁটার আঁচর লেগে তিনি কষ্ট পাবেন, আর আমি আমার পরিবারে বসে থাকবো, আমি তাও পছন্দ করি না। তখন আবু সুফইয়ান বলেন,
مَا رَأَيْتُ مِنَ النَّاسِ أَحَدًا يُحِبُّ أَحَدًا حُبِّ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ مُحَمَّدًا
"আমি মানুষের মধ্যে কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তিকে এমন ভালোবাসতে দেখিনি, যেমন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথীগণ উনাকে যেরুপ ভালোবাসেন। (ইবনে হিশাম- সিরাতুন নাবাবিয়াহ ২/১৭২)
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-১

 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-১

عَنْ أَنَسٍ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمُ أُحُدٍ انْهَزَمَ النَّاسُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَبُوْ طَلْحَةَ بَيْنَ يَدَيْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مُجَوِّبٌ بِهِ عَلَيْهِ بِحَجَفَةٍ لَهُ وَكَانَ أَبُوْ طَلْحَةَ رَجُلًا رَامِيًا شَدِيْدَ الْقِدِّ يَكْسِرُ يَوْمَئِذٍ قَوْسَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا وَكَانَ الرَّجُلُ يَمُرُّ مَعَهُ الْجَعْبَةُ مِنْ النَّبْلِ فَيَقُوْلُ انْشُرْهَا لِأَبِيْ طَلْحَةَ فَأَشْرَفَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَنْظُرُ إِلَى الْقَوْمِ فَيَقُوْلُ أَبُوْ طَلْحَةَ يَا نَبِيَّ اللهِ بِأَبِيْ أَنْتَ وَأُمِّيْ لَا تُشْرِفْ يُصِيْبُكَ سَهْمٌ مِنْ سِهَامِ الْقَوْمِ نَحْرِيْ دُوْنَ نَحْرِكَ
হযরত আনাস ইবন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, ওহুদ যুদ্ধের এক সময়ে হযরত সহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগন যুদ্ধ করতে করতে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে আলাদা হয়ে পড়েছিলেন। তখন হযরত আবূ ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ঢাল হাতে নিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে প্রাচীরের মত দৃঢ় হয়ে দাঁড়ালেন। হযরত আবূ ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সুদক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন। এক নাগাড়ে তীর ছুঁড়তে থাকায় তাঁর হাতে ঐদিন দু’ বা তিনটি ধনুক ভেঙ্গে যায়। ঐ সময় তীর ভর্তি তীরাধার নিয়ে যে কেউ উনার নিকট দিয়ে যেতো হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকেই বলতেন, তোমরা তীরগুলি হযরত আবূ ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর জন্য রেখে দাও। এক সময় হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাথা উঁচু করে শত্রুদের অবস্থা দেখতে চাইলে হযরত আবূ ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহ পাকের নবী! আমার মাতা পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি মাথা উঁচু করবেন না। হয়ত শত্রুদের নিক্ষিপ্ত তীর এসে আপনার শরীর মুবারকে লাগতে পারে। আমার বক্ষ আপনার বক্ষের সামনে ঢাল হিসেবে রয়েছে। (অর্থাৎ, আমি আপনাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছি যদি শত্রুদের কোনো তীর এসে যায়ও তাহলে আমার শরীরে আগে বিদ্ধ হবে। আপনার শরীর মুবারকে স্পর্শ করবে না।)
(বুখারী শরীফ- কিতাবু মানাকিবুল আনছার- বাবু মানাকিবে আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু- হাদীছ ৩৮১১ )