কাদিয়ানি রদ - ৭


মির্জ্জা গোলাম আহমদ সাহেব প্রতিশ্রুত মাহদী হইতে পারেন কিনা?
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
মাওলানা শাহ রফিউদ্দিন সাহেব কেয়ামতনামার ৩-৭ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন; “কেয়ামতের সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চিহ্ন প্রকাশিত হইলে, খ্রীষ্টান জাতিরা পরাক্রান্ত হইয়া বহু রাজ্যের অধিকারী হইবে, কতককাল পরে আরব ও শাম দেশে (হজরত) আবু ছুফ্ইয়ান বংশধর এক ব্যক্তি প্রকাশিত হইয়া ছৈয়দদিগকে হত্যা করিবে, শাম ও মিছর দেশে তাহার আইন বিস্তৃত হইয়া পড়িবে। এমতাবস্থায় তুরস্কের বাদশাহ্ একদল খৃীষ্টানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও অন্যদলের সহিত সন্ধি করিবেন। শত্রুদল কনষ্টান্টিনোপল অধিকার করিয়া লইবে, তখন বাদশাহ নিজের শহর ত্যাগ করিয়া শাম দেশে প্রবেশ করিবেন। তৎপরে সহকারী খৃীষ্টান দলের সহযোগিতায় শত্রু খৃীষ্টানদলের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করিবেন, ইহাতে মুছলমান সৈন্যদল জয়ী হইবেন। শত্রুদল পরাজিত হওয়ার পরে সহকারী খৃীষ্টানদিগের মধ্যে একজন বলিবে যে, ক্রুশ পরাক্রান্ত হইয়া জয় করিয়াছে। তৎশ্রবনে মুছলমান সৈন্যদিগের মধ্যে এক ব্যক্তি তাহাকে প্রহার করিয়া বলিবে, উহা সত্য নহে বরং দীন ইছলাম জয়যুক্ত হইয়াছে। উক্ত খৃীষ্টান নিজের দলকে আহবান করিবে এবং মুছলমানও নিজের দলকে আহবান করিবে, ইহাতে উভয় সৈন্যদলের মধ্যে গৃহবিবাদ উপস্থিত হইবে। ইহাতে মুসলমান বাদশাহ শহীদ হইয়া যাইবেন। খৃীষ্টানদল শাম দেশের অধিপতি হইবে ও বিরুদ্ধ খৃীষ্টানদিগের সহিত সন্ধি করিবে। অবশিষ্ট মুছলমানগণ মদিনা শরিফে আশ্রয় গ্রহণ করিবেন। খৃীষ্টানগণ খয়বরের নিকটস্থ স্থান পর্য্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করিবে। সেই সময় মুছলমানগণ হজরত এমাম মাহদীর অনুসন্ধান করিবেন যেন তদ্বারা এই বিপদ দূরীভূত হয় এবং খৃীষ্টানদিগের হস্ত হইতে নিস্কৃতি লাভ হয়। হজরত এমাম মাহদী সেই সময় মদিনা শরিফে থাকিবেন। পাছে লোকে তাঁহার উপর এই কার্য্যরে গুরুভার অর্পন করেন, এই ভয়ে তিনি মদিনা শরিফ হইতে মক্কা শরিফে উপস্থিত হইবেন। সেই জামানার আবদাল ও ওলীগণ উনার অনুসন্ধানে থাকিবেন, কেহ কেহ অযথাভাবে মাহদী হওয়ার দাবী করিবেন। হজরত এমাম মাহদী রোকন ও মাকামে এবরাহিমের মধ্যস্থলে বায়তুল্লাহ্ শরিফের তওয়াফ করিতে থাকিবেন, এমতাবস্থায় লোকে তাহাকে চিনিতে পারিবেন, উনার অনিচ্ছাসত্ত্বেও উনার নিকট বয়তে-খোলাফত করিবেন। ইহার চিহ্ন এই হইবে যে, ইহার পূর্ব্ব রমজান মাসে সূর্য্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণ হইবে। তাঁহার নিকট বয়য়ত করার সময় আছমান হইতে একটী শব্দ হইবে;
هذا خليفة الله المهدى فا سمعواله واطبعوا.
ইনি আল্লাহ্ তায়ালার খলিফা মাহদী, তোমরা তাঁহার কথা শ্রবণ কর এবং আদেশ পালন কর।এই শব্দটী তথাকার আম ও খাস সকল লোক শুনিতে পাইবে। হজরত এমাম ছৈয়দ ফাতেমার বংশধর হইবেন, তাঁহার চরিত্রাবলী সম্পূর্ণ হজরত নবি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামের অনুরূপ হইবে, তাঁহার নাম মোহাম্মদ, তাঁহার পিতা আবদুল্লাহ ও তাঁহার মাতার নাম আমেনা হইবে। তাঁহার জবান একটু তোৎলা হইবে, কথা বলার সময় কখন অস্থির হইয়া জানুর উপর হস্ত মারিবেন, তাহার এল্ম লাদুন্নি হইবে। সেই সময় তাহার বয়স ৪০ বৎসর হইবে। যখন তাঁহার বয়য়তের কথা প্রসিদ্ধ হইয়া পড়িবে, তখন মদিনার সৈন্যদল মক্কা শরিফের দিকে রওয়ানা হইবেন, শাম, ইরাক ও ইমনের আবদাল ও ওলিগণ তাঁহার খেদমতে উপস্থিত হইবেন এবং আরবদেশ হইতে বহু সৈন্য সমবেত হইবেন। উক্ত হজরত কাবা শরিফের দরওয়াজার সম্মুখে যে ধনভান্ডার প্রোথিত আছে তাহা বাহির করিয়া মুসলমানদিগের মধ্যে বিতরন করিবেন। এই সংবাদ মুসলমানদিগের মধ্যে প্রচারিত হইলে, খোরাছানবাসী এক ব্যক্তি বহু সৈন্যসহ তাঁহার সাহায্যের জন্য ধাবিত হইবেন এবং পথিমধ্যে বহু খৃষ্টান ও বিধর্ম্মী লোককে ধ্বংস করিবেন। উক্ত আহলে বয়তের শত্রু ছূফইয়ানি ব্যক্তি যাহার নানা আরবের বনু কলব সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল, উক্ত হজরত এমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে একদল সৈন্য প্রেরণ করিবেন, মক্কা ও মদিনার মধ্যস্থ একটী ময়দানে দুই ব্যক্তি ব্যতীত সকলেই ভূগর্ভে প্রোথিত হইয়া যাইবে। উভয়ের মধ্যে একজন ছূফইয়ানি ব্যক্তির নিকট এবং অন্য ব্যক্তি হজরত এমাম মাহদীর নিকট এই সংবাদ পৌঁছাইবেন। অন্যদিকে খ্রীষ্টানগণ নিজেদের দেশ হইতে এবং কনষ্টান্টিনোপল হইতে বহু সৈন্য সংগ্রহ করিয়া উক্ত এমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে ধাবিত হইবে। উক্ত সৈন্যদল ৮০টী পতাকার নীচে সংগৃহীত হইবে, প্রত্যেক পতাকার নীচে ১২ সহস্র করিয়া সৈন্য সমবেত হইবে। হজরত এমাম মাহদী মক্কা শরিফ হইতে রওয়ানা হইয়া মদীনা শরীফে উপস্থিত হইবেন, তখায় হজরতের গোর শরীফ জেয়ারত করিয়া শাম দেশের দিকে রওয়ানা হইয়া দেমাশ্কে পৌঁছিবেন। ( অসমাপ্ত )

0 Comments: