৯৪ হিজরী সনের ২৫ মুহররমুল হারাম শরীফ তারিখে আলে রসূল, আওলাদে রসূল, ইমামুর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আলী আওসাত ওরফে যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর পবিত্র শা’বান শরীফ উনার ৫ তারিখ ইয়াওমুল খামীস (বৃহস্পতিবার) হিজরী ৪৭ সনে তিনি যমীনে মুবারক তাশরীফ গ্রহণ করেন। উনার পিতা সম্মানিত বেহেশ্ত উনার যুবক উনাদের সাইয়্যিদ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শহীদে কারবালা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম এবং মাতা ছিলেন পারস্য সম্রাট ইয়াজদ্গির্দ-এর কনিষ্ঠা কন্যা হযরত শাহারবানু ওরফে গাযালা আলাইহাস সালাম। ইমামুর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম তিনি কথা বলার বয়স হতেই পরিবারের অন্যান্য শিশুগণের সাথে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফে যাতায়াত শুরু করেন এবং অতি অল্প বয়স মুবারকেই পবিত্র কুরআন শরীফ হিফ্য করেন। সুবহানাল্লাহ!
তখনকার যুগে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ ছিল দুনিয়ার সেরা শিক্ষাকেন্দ্র। বিজ্ঞ ছাহাবীগণ পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ-এ বসে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ, ফিক্বাহ্, ক্বিরায়াত প্রভৃতি দ্বীনি ইলমের বিভিন্ন শাখার উপর শিক্ষা দান করতেন। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীগণ অনেক সময় দল বেঁধে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের খিদমতে গিয়ে হাজির হতেন এবং উনাদের যবান মুবারকে বিভিন্ন ঘটনা শ্রবণ করে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করতেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেমন ছিলেন, উনার আদত-অভ্যাস মুবারক কেমন ছিল, উনার দিন-রাত কিভাবে কাটতো- এ সমস্ত বর্ণনা শ্রবণ করে তরুণ তাবিয়ীগণ নিজ নিজ জীবনে সেই আদর্শ মুবারক বাস্তবায়িত করার সাধনা করতেন। সুবহানাল্লাহ! এ সমস্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে অতি অল্প বয়সেই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি সকলের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অস্বাভাবিক মেধা ও সুতীক্ষè ধীশক্তিবলে মাত্র আট/নয় বছর বয়সেই তিনি বড় বড় জ্ঞানী-গুণীগণের মজলিসে সমাদর পেতে লাগলেন। উনারা শিশু সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ে পর্যন্ত খোলাখুলি আলোচনা করে মুগ্ধ হতেন। সুবহানাল্লাহ!
ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে মুবারক ইলম উনার খাছ উত্তরাধিকার ইমাম খান্দানে প্রবেশ লাভ করেছিল; যা ইমামুর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম তিনি রক্ষা করার জন্য কঠোর সাধনা করে গেছেন। যদিও তিনি খাছ ইলমে লাদুন্নি উনার পূর্ণ অধিকারী। ইল্মের সন্ধান তিনি যেখানেই পেতেন বিনা দ্বিধায় সেখানে হাযির হওয়াই ছিল উনার সাধারণ অভ্যাস মুবারক। তিনি সমগ্র মুসলিম জাহানে ইলমের ক্ষেত্রে অনন্য মর্যাদা এবং উম্মতের সম্মানিত ইমাম ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! সমকালীন মুসলিম জাহানে ইলমে হাদীছ শরীফ এবং ইলমে ফিক্বাহ উনাদের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন সকলের ইমাম, সর্বাপেক্ষা বিচক্ষণ আলিম। ইল্মে তরীক্বতে তিনি ছিলেন সাধককুলের মাথার মুকুট। ইলমে তরীক্বতের যত শাজরা শরীফ আছে তার প্রায় প্রত্যেকটির শীর্ষদেশে ইমাম হিসেবে হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক চোখে পড়ে। সুবহানাল্লাহ!
তাছাড়া ইমামুর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার ত্যাগ, অপূর্ব ধৈর্য ও রূহানিয়ত মুবারক উনার মহিমার দ্বারাই ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা কঠিন বিপর্যয়ের হাত হতে উদ্ধারপ্রাপ্ত হয়ে মুসলিম সমাজ পবিত্র কুরআন শরীফ- পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ভিত্তিক খিলাফতে রাশিদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
ভোগ-বিলাসের ক্রোড়ে লালিত উমাইয়া খান্দানের সর্বাপেক্ষা সৌখিন যুবক হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমামুর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার শিক্ষা, ছোহবত ও নীরব সাধনা মুবারক উনার গুণেই আদর্শ খলীফা ও দ্বিতীয় উমরে পরিণত হয়েছিলেন।
0 Comments:
Post a Comment