সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বিদ্ব‘আতুম মির রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক


সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল
জান্নাহ, বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বিদ্ব‘আতুম মির রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক
সম্মানিত পরিচিতি মুবারক
নূরে মুজাসসাম, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আবনা আলাইহিমুস সালাম এবং বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন মোট আট জন। সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার ধারাবাহিকক্রমে উনাদের সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন,
১. সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বাসিম আলাইহিস সালাম,
২. সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম,
৩. সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বইয়্যিব আলাইহিস সালাম,
৪. সাইয়্যিদুনা হযরত ত্বাহির আলাইহিস সালাম,
৫. সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুক্বাইয়্যাহ আলাইহাস সালাম,
৬. সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে কুলছূম আলাইহাস সালাম
৭. সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম এবং
৮. সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি শুধু উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত মারিয়া ক্বিবতীয়াহ আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত বরতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। আর অন্য সকল আবনা আলাইহিমুস সালাম এবং বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনারা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
আফদ্বালুন নিসা ওয়ান নাস বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে কুলছূম আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে ‘ছালিছাহ’ বা তৃতীয়া। সুবহানাল্লাহ! এই ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই। আর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আবনা আলাইহিমুস সালাম এবং বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে তিনি হচ্ছেন ‘ষষ্ঠ’। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম তিনি যখন সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন দুনিয়াবী জিন্দেগীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলো ৩৫ বছর। আর উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক ছিলো ৫০ বছর। সময়টি ছিলো আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের প্রায় ৫ বছর পূর্বে। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ইসম বা নাম মুবারক
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত আওলাদ, লখতে জিগার সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সপ্তম দিনে উনার নাম মুবারক রাখেন ‘হযরত উমাইয়্যাহ আলাইহাস সালাম’। সুবহানাল্লাহ!
এই সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
وَاسْمُ حَضْرَتْ أُمِّ كُلْثُومٍ بِنْتِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَضْرَتْ أُمَيَّةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ،
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে কুলছূম বিনতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ইসম বা নাম মুবারক হচ্ছেন ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত উমাইয়্যাহ আলাইহাস সালাম’।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ৪/৫৩)
সম্মানিত কুনিয়াত মুবারক
সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত কুনিয়াত মুবারক ছিলো ‘উম্মে কুলছূম আলাইহাস সালাম’। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত আওলাদ লখতে জিগার সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে অত্যন্ত মুহব্বত মুবারক করে ‘উম্মে কুলছূম আলাইহাস সালাম’ বলে আহ্বান মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ! আরবী ‘কুলছূম’ শব্দ মুবারক উনার অর্থ মুবারক এমন একজন সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক, যার রয়েছে পূর্ণ গোলাকার মুখম-ল। সুবহানাল্লাহ! এরপর থেকেই তিনি সকলের নিকট ‘উম্মে কুলছূম’ হিসেবে পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি সেই সুমহান ব্যক্তিত্বা মুবারক যিনি নাম মুবারক দ্বারা পরিচিতি মুবারক গ্রহণ না করে, সম্মানিত কুনিয়াত মুবারক দ্বারা পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এই সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
وهى ممن عرف بكنيته ولم يعرف لها اسم.
অর্থ: “তিনি সেই সুমহান ব্যক্তিত্বা মুবারক যিনি কুনিয়াত মুবারক দ্বারা পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেছেন; কিন্তু নাম মুবারক দ্বারা পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেননি।” সুবহানাল্লাহ! (যখাইরুল ‘উক্ববা ১/১৬৪, তারীখুল খমীস ১/২৭৫)
সম্মানিত লক্বব মুবারক
মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وَلِلّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنى فَادْعُوه بِهَا
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার অনেক সুন্দর সুন্দর সম্মানিত নাম তথা লক্বব মুবারক রয়েছে, তোমরা উনাকে সেই সম্মানিত নাম তথা লক্বব দ্বারা আহ্বান করো।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আ’রাফ শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ১৮০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন অসীম ঠিক তেমনিভাবে উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার সংখ্যাও অসীম। সুবহানাল্লাহ! অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার সংখ্যাও অসংখ্য। এক কথায় তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন; এছাড়া সমস্ত লক্বব মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! ঠিক একইভাবে আফদ্বালুন নিসা ওয়ান নাস বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত সম্মানিত লক্বব মুবারক রয়েছে সমস্ত সম্মানিত লক্বব মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! এখানে উনার কতিপয় সম্মানিত বরকতময় লক্বব মুবারক উল্লেখ করা হলো:

বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বিদ্ব‘আতুম মির রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, আফদ্বালুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আস সাইয়্যিদাহ, আর রদ্বিয়াহ, আল মারদ্বিইয়্যাহ, হাবীবাতুল্লাহ, আল বালীগাহ, আল হাফিযাহ, আল হামিদাহ, আল হাকীমাহ, আল হালীমাহ, আল খালিছাহ, খলীলাহ, আয যাকিরাহ, আর রাজিয়াহ, আর রাগিবাহ, আর রাফিয়াহ, রহমতুল উম্মাহ, রহমতুল্লিল আলামীন, আর রশীদাহ, আর রফীক্বাহ, রফীক্বাতুল্লাহ, আয যাহিদাহ, আয যাকিয়াহ, আস সাবিক্বাতু বিল খইরাত, আস সাজিদাহ, আস সাখিয়াহ, সাঈদাহ, সাইয়্যিদাতুছ ছাক্বলাইন, সাইয়্যিদাতুল কাওনাইন, আশ শাফি‘য়াহ, আশ শাকিরাহ, আশ শাহিদাহ, আশ শারীফাহ, আছ ছাবিরাহ, আছ ছাহিবাহ, ছাহিবাতুল বুরহান, ছাহিবাতুল খইর, ছাহিবাতু দারাজাতিল ‘আলিয়্যাহ ওয়ার রফী‘য়াহ, আছ ছিদ্দীক্বাহ, আত্ব ত্বাহিরাহ, আত্ব ত্বইয়িবাহ, আত্ব ত্ববীবাহ, আয যাহিরাহ, আল ‘আবিদাহ, আল ‘আদিলাহ, আল ‘আরিফাহ, আল ‘আলিমাহ, আল ‘আলীমাহ, আল ‘আযীমাহ, আল ‘আযীযাহ, আল গালিবাহ, আল ফাদ্বিলাহ, আল ফায়িক্বাহ, আল ফাছীহাহ, আল ক্বাসিমাহ, আল ক্বাদ্বিয়াহ, আল ক্বায়িদাহ, আল ক্বায়িমাহ, আল কাফিয়াহ, আল কামিলাহ, আল কারীমাহ, আল মু’তামানাহ, আল মা’মূনাহ, আল মু’মিনাহ, আল মাজিদাহ, আল মুবারকাহ, আল মুবাশশিরাহ, আল মাব‘ঊছাতু বিল হাক্ক, আল মুবাল্লিগাহ, আল মুতাবাসসিমাহ, আল মুত্তাক্বিয়াহ, আল মুতাওয়াক্কিলাহ, আল মাতীনাহ, আল মুছাব্বিতাহ, আল মুজাহিদাহ, আল মুজতাহিদাহ, আল মুজীবাহ, আল মুজীরাহ, আল মাহফূযাহ, আল মাহমূদাহ, আল মাখ¦ছূছাতু বিল ‘ইজ্জা, আল মুখলিছাহ, আল মুখলাছাহ, আল মুযাক্কিরাহ, আল মুরশিদাহ, আল মুস্তাজীবাহ, আল মুস্তাক্বীমাহ, আল মাস‘ঊদাহ, আল মাছদূক্বাহ, আল মুত্বহ্হারাহ, আল মুয¦ফ্ফারাহ, আল মা’রূফাহ, আল মু‘আয্যারাহ, আল মু‘য়ায্যামাহ, আল মু‘য়াল্লিমাহ, আল মু‘ঈনাহ, আল মুক্বদ্দিসাহ, আল মুক্বসিত্বাহ, মুক্বীমাতুস সুন্নাহ, আল মুকাররামাহ, মালিকাতুল জান্নাহ, মালিকাতুল কায়িনাত, আল মুনতাছিরাহ, আল মুনজিদাহ, আন নাছিরাহ, নি’মাতুল্লাহ, আন নাক্বীবাহ ইত্যাদি ইত্যাদি।

সম্মানিত লালন-পালন মুবারক
আফদ্বলুন নিসা ওয়ান নাস বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং সম্মানিতা মাতা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাদের সর্বাধিক সম্মানিত আদর-যত্ন মুবারক-এ, সম্মানিত তত্ত্বাবধান মুবারক-এ লালিত-পালিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি উনার সম্মানিত পিতা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং সম্মানিতা মাতা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাদের যাবতীয় সমস্ত খুছূছিয়াত ও বৈশিষ্ট্য মুবারক উনার অধিকারিণী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ইলম মুবারক
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّمَا أَنَا قَاسِمٌ وَاللَّهُ يُعْطِي
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন দাতা আর আমি হচ্ছি বণ্টনকারী।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার ইলম মুবারক হাদিয়া করেছেন। সুবহানাল্লাহ! শুধু সম্মানিত ওহী মুবারক নাযিল হওয়া ব্যতীত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক উনার অধিকারিণী ছিলেন তিনি। মূলত উনার সম্মানার্থে সমস্ত কায়িনাত ইলম, আমল, ইখলাছ, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করেছে। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ছূরত মুবারক
বিদ্ব‘য়াতুম মির রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মুল আবীহা, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন বেমেছাল সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারিণী। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের মাক্বাম মুবারক-এ অনন্যা।” সুবহানাল্লাহ!

মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি যেরূপ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুবহু নকশা মুবারক ছিলেন, তদ্রƒপ সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হুবহু নকশা মুবারক। সুবহানাল্লাহ! আর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাদের নিসবত মুবারক উনার বিষয়টি ছিলো উভয় দিক থেকে। অর্থাৎ উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাদের উভয়ের থেকে সমানভাবে সম্মানিত নিসবত মুবারক পেয়েছিলেন।” সুবহানাল্লাহ!
আর এই কারণে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাদের উভয়ের মাঝে সীরত-ছূরত মুবারক, আকার-আকৃতি মুবারক, চাল-চলন মুবারক সর্বদিক থেকে হুবহু মিল ছিলো। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّـمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُـطَـهِّـرَكُمْ تَطْهِيْراً.
অর্থ: “হে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৩৩)
এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত শাদী মুবারক
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার শাদী মুবারক হয়েছিলো আবূ লাহাবের পুত্র উতবার সাথে এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার শাদী মুবারক হয়েছিলো উতাইবার সাথে। এটি ছিল শুধু একটি আনুষ্ঠানিক বিবাহ। উনাদেরকে তাদের গৃহে যেতে হয়নি। সুবহানাল্লাহ! তার আগেই সম্মানিত সূরা ‘লাহাব শরীফ’ নাযিল হওয়ার পর আবূ লাহাব ও তার স্ত্রীর কারণে উতবা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে যায় অর্থাৎ মুবারক খেদমত করার ব্যাপারে অযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়। এবং উতাইবাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে যায়। অর্থাৎ মুবারক খেদমত করার ব্যাপারে অযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়। নাঊযুবিল্লাহ!
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ
মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশ পাওয়ার পর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা সর্বপ্রথম উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট প্রকাশ করেন। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পুরুষ-মহিলা সকলের পূর্বে সর্বপ্রথম সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! উনার সাথে সাথে উনার সম্মানিত আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস তিনি, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে কুলছূম আলাইহাস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনারাও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত যয়নাব আলাইহাস তিনিও সংবাদ মুবারক পাওয়ার সাথে সাথে এসে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! উনারাই হচ্ছেন পুরুষ-মহিলা সকলের মাঝে সর্বপ্রথম সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারিণী। সুবহানাল্লাহ!
উতবাহ ও উতাইবার কঠিন পরিণতি
উসদুল গবাহতে উল্লেখ রয়েছে,
فلما أنزل الله عَزَّ وَجَلَّ {تَبَّتْ يَدَا ابِي لَـهَبٍ} قال ابو لـهب لابنيه: رأسي من رءوسكما حرام إن لم تطلقا ابنتي محمد.
অর্থ: “যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করলেন, ‘আবূ লাহাবের দু’হাত ধ্বংস হোক’। অর্থাৎ সম্মানিত সূরা লাহাব শরীফ নাযিল মুবারক করলেন, তখন আবূ লাহাব সে তার দুই পুত্রকে বললো, আমি পুনরায় তোমাদের চেহারা দেখবো না, যদি না তোমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে না যাও।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (উসদুল গবাহ)
আর তাদের মা উম্মে জামীল বলেছিলো,
فطلقاهما. ففعلا فطلقاهما قبل الدخول بهما.
অর্থ: “তোমরা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাদের থেকে জুদা হয়ে যাও। তারা তাদের মায়ের কথা অনুযায়ী কাজ করলো। ফলশ্রুতিতে উতবা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে গেলো এবং উতাইবাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে গলো। উনারা তখনও তাদের ঘরে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখেননি।” (উসদুল গবাহ)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,
وكانت قد تزوجها عتيبة بن أبي لهب، أخو عتبة الذي تزوج أختها رقية ـ ولم يدخلا بهما ـ فأمره أبوه وأمه أن يفارقها كما أمرا أخاه أن يفارق أختها. وجاء إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال له: كفرت بدينك، وفارقتُ ابنتك لا تحبني ولا أحبك، ثم سطا عليه فشق قميص النبي صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে উতাইবার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে উতাইবার ভাই উতবার শাদী মুবারক হয়েছিলো। কিন্তু উনারা তখনও তাদের গৃহে তাশরীফ মুবারক রাখেননি। এর পূর্বেই উতাইবার বাবা-মা তাকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলো, যেমনিভাবে উতবাকে নির্দেশ দিয়েছিলো সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে যাওয়ার জন্য। উতাইবাহ তার বাবা-মার নির্দেশ পেয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত হয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললো,
كفرت بدينك وفارقتُ ابنتك لا تحبني ولا أحبك ثم سطا عليه فشق قميص النبي صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: “আমি আপনার সম্মানিত দ্বীন উনাকে অস্বীকার করলাম এবং আপনার আওলাদ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে গেলাম। আপনি আমাকে মুহব্বত করেন না, আমিও আপনাকে মুহব্বত করি না। নাঊযুবিল্লাহ! অর্থাৎ আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। না‘ঊযুবিল্লাহ! অতঃপর সে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং উনার সম্মানতি কোর্তা মুবারক ছিঁড়ে ফেলে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উতাইবার এই অচরণে চরম অসন্তুষ্ট হন এবং তার বিরুদ্ধে বদদোয়া করেন,
أما إني أسأل الله أن يسلط عليك كلباً من كلابه .
অর্থ: “সাবধান! নিশ্চয়ই আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করছি, তিনি যেন উনার কুকুরসমূহ থেকে একটি কুকুরকে তোমার উপর প্রবল বা গালিব করে দেন।”
অপর বর্ণনায় এসেছে,
فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللَّهُمَّ سَلِّطْ عَلَيْهِ كَلْبًا مِنْ كِلَابِكَ.
অর্থ: অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, আয় আল্লাহ পাক, আপনি আপনার কুকুরসমূহ থেকে একটি কুকুরকে তার উপর প্রবল বা গালিব করে দিন।” (দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাক্বী, যখায়েরুল ‘উক্ববাহ)
অপর বর্ণনায় এসেছে,
أن عتبة إبن ابي لهب كان يسب الرسول صلى الله عليه وسلم ويؤذيه ويسخر من الرسول صلى الله عليه وسلم ومن القرآن فدعا عليه الرسول صلى الله عليه وسلم وقال اللهم سلط عليه كلباً من كلابك
অর্থ: “উতবাহ ইবনে আবূ লাহাব সে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গালি দিয়েছিলো, উনাকে কষ্ট দিয়েছিলো এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ও সম্মানিত কুরআন শরীফ উনাদেরকে নিয়ে উপহাস করেছিলো, ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করেছিলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! ফলশ্রুতিতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উতবার বিরুদ্ধে বদদোয়া করেছিলেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
اللَّهُمَّ سَلِّطْ عَلَيْهِ كَلْبًا مِنْ كِلَابِكَ.
অর্থ:- আয় আল্লাহ পাক, আপনি আপনার কুকুরসমূহ থেকে একটি কুকুরকে তার উপর প্রবল বা গালিব করে দেন।”
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র যবান মুবারক নিঃসৃত উপরোক্ত বাণী মুবারক শুনে উতবাহ ও উতাইবার মনে ভীষণ ত্রাসের সঞ্চার হলো। এমনকি তাদের পিতা আবূ লাহাবের মনেও সেদিন থেকে একটি প্রবল ভীতির সৃষ্টি হলো। সেদিন থেকে উতবাহ, উতাইবাহ এবং আবূ লাহাবের চেহারায় সেই ত্রাস ও ভীতির নিদর্শন এমনভাবে ফুটে উঠলো যে, যেকোন লোক তাদেরকে দেখেই মনে করতো যে, নিশ্চয়ই আবূ লাহাব ও তার দুই পুত্র উতবাহ ও উতাইবাহ কোনো অশুভ চিন্তায় আক্রান্ত হয়েছে। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আবূ লাহাব তার দুই পুত্রকে নিয়ে সিরিয়ায় বাণিজ্য যাত্রার জন্য প্রস্তুত হলো। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করার পর তারা যে ত্রাস ও ভীতির শিকার হয়েছিলো, তা তখনও তাদের মধ্যে পূর্ণরূপে বিরাজমান ছিলো। সিরিয়ায় বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে পথিমধ্যে একস্থানে রাত যাপনের জন্য তাঁবু খাটালো। কেউ কেউ উক্ত স্থানের নাম যারক্বা’ বলে উল্লেখ করেছে। কিন্তু এ সময় তাদের সেই ভীতি ও ত্রাস আরো প্রবল আকার ধারণ করলো। যার কারণে তারা নিরাপত্তার জন্য তাঁবুর চারদিকে তাদের ব্যবসায়িক পণ্যসমূহ উঁচু করে স্তূপাকার করে রাখল এবং তার মাঝখানে উতবাহ ও উতাইবার জন্য শোয়ার ব্যবস্থা করলো। যাতে করে কোনো জীবজন্তু তা অতিক্রম করে উতবাহ ও উতাইবাহকে হঠাৎ করে হামলা করতে না পারে। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি কাউকে নিশ্চিহ্ন করতে চান, তাহলে কায়িনাতের বুকে দ্বিতীয় কেউ নেই তাকে রক্ষা করে। গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমে অচেতন, তখন অত্যন্ত ভয়ঙ্কর গর্জন করে দুইটি সিংহ লাফ দিয়ে পণ্যের উঁচু স্তূপ ডিঙ্গিয়ে উতবাহ ও উতাইবাহর ঘাড়ের উপর যেয়ে পড়লো এবং চোখের পলকে তাদের ঘাড় মটকিয়ে তাদেরকে পিঠে নিয়ে উধাও হয়ে গেল। কাফিলার যেসব লোক তাঁবু প্রহরায় নিযুক্ত ছিলো তারা সবাই ভীত চকিত নয়নে এই ভয়ানক দৃশ্য দেখলো; কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিলো না। মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে যখন গযব আসে, তখন এভাবেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হয়। মুহূর্তের মধ্যে কাফিলার লোকজনের মাঝে হুলুস্থ’ুল পড়ে গেলো। কান্নার রোল উঠলো। কিন্তু করার কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না। আবূ লাহাবের এ যাত্রায় আর সিরিয়া গমন করা হলো না। সে সেখান থেকেই বিষাদ ভারাক্রান্ত চিত্তে সম্মানিত মক্কা শরীফ ফিরে এলো।
শিয়াবে আবী তালিবে সম্মানিত খিদমত মুবারক আনজাম দেয়া
শিয়াবে আবী তালিবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তিন বছর অবস্থান মুবারক করেন। তখন দুনিয়াবী দৃষ্টি মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক অনেক বেশি। সেই সময় বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল আছ আলাইহিস সালাম উনার গৃহে। তারাপরেও তিনি সেখান থেকে এসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেন। অর্থাৎ তিনি শিয়াব আবী তালীবে অবস্থান করে মুবারক খিদমতে আনজাম দেন। আর সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে হাবশায় হিজরত মুবারক-এ গিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় শিয়াবে আবী ত্বালিবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনিই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার মূল আনজাম মুবারক দেন। সুবহানাল্লাহ! পাশাপাশি সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনিও বেমেছাল সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেন। তবে দুনিয়াবী দৃষ্টিতে অনুযায়ী তখন উনার বয়স মুবারক ছিলো অল্প।
শুধু শিয়াবে আবী ত্বালিবে নয়; বরং এর পূর্বে এবং পরে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছিলেন। বিশেষত সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ পর সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তুলনাহীন সম্মানতি খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ! একজন মা তার সন্তানকে যেভাবে দেখা-শোনা করে থাকে; ঠিক সেইভাবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ! তাই মুজাদ্দিদে আ’যম সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনিও হচ্ছেন উম্মু আবীহা।” সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত হিজরত মুবারক
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মদীনা শরীফ সম্মানিত হিজরত মুবারক করার পর সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি উনার সম্মানিত ছোট বোন সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালামসহ উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম উনার সাথে সম্মানিত মদীনা শরীফ হিজরত মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে আযীমুশ শান মহাসম্মানিত শাদী মুবারক
উতবা যখন বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক থেকে মাহরূম হয়ে যায়, অর্থাৎ মুবারক খেদমত করার ব্যাপারে অযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ওহী মুবারক প্রেরণ করে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া করেন যে, হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি মহান আল্লাহ পাক সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাদী মুবারক জান্নাতে সুসম্পন্ন করেছি। সুবহানাল্লাহ! আপনিও উনাদের সম্মানিত শাদী মুবারক দুনিয়ার যমীনে সুসম্পন্ন করুন। সুবহানাল্লাহ! তাই নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাদী মুবারক প্রদান করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর দ্বিতীয় হিজরী সনের ১৮ রমাদ্বান শরীফ যখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাদী মুবারক প্রদান করেন। এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ ام المؤمنين حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ أَوْحَى إِلَيَّ أَنْ ازَوِّج كَرِيـْمَتَيَّ مِنْ حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ حَضْرَتْ رُقَيَّةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَحَضْرَتْ أمَّ كُلْثُوْمٍ عَلَيْهَا السَّلَامُ
“উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার নিকট সম্মানিত ওহী মুবারক প্রেরণ করেছেন, আমি যেন আমার সম্মানিতা দুই আওলাদ আলাইহিমাস সালাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাদের সম্মানিত শাদী মুবারক হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে সুসম্পন্ন করি।” সুবহানাল্লাহ! (মা’রিফাতুছ ছাহাবা-লিআবী নাঈম ২২/২২৪)

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حَضْرَتْ ابن عباس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى أَوْحَى إِلَيَّ أَنْ أزَوِّجَ كَرِيمَتَيَّ مِنْ حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ يعنى حَضْرَتْ رقية عَلَيْهَا السَّلَامُ وحَضْرَتْ أم كلثوم عَلَيْهَا السَّلَامُ.
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার নিকট সম্মানিত ওহী মুবারক প্রেরণ করেছেন, আমি যেন আমার সম্মানিতা দুই আওলাদ আলাইহিমাস সালাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাদের সম্মানিত শাদী মুবারক হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে সুসম্পন্ন করি।” সুবহানাল্লাহ!, (ফাদ্বাইলুছ ছাহাবা ১/১১২, আল মু’জামুল আওসাত্ব ৪/১৮, আল মু’জামুছ ছগীর ১/২৫৩, মাজমাউয যাওয়াইদ ৫/৩৮৯, আল ফাতহুল কাবীর ১/৩০৪, জামিউল আহদীছ ৭/৪৭৬, ইবনে আদী ৫/৭০, ইবনে আসাকির ৩৯/৪১, জামউল জাওয়ামি’ ১/৮৩৭২, যাখয়েরুল উক্ববা লি-মুহিব্বে ত্ববরী ১/১৬৩, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৩৩, আর রিয়াদ্বুন নাদ্বরাহ ১/২০২ ইত্যাদি)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْرُ الشَّفِيْعِ لِـحَضْرَتْ عُثْمَانَ مَا اَنَا اُزَوِّجُ بَنَاتِىْ وَلَكِنَّ اللهَ تَعَالـٰى يُـزَوِّجُـهُـنَّ.
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার জন্য সর্বোত্তম সুপারিশকারী রয়েছেন। আমি আমার আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সাথে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাদী মুবারক সুসম্পন্ন করিনি; বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই সেটা সুসম্পন্ন করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ اَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقِيَ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ وَهُوَ مَغْمُومٌ فَقَالَ مَا شَأْنُكَ يَا عُثْمَانُ قَالَ بِأَبِي أَنْتَ يَا رَسُولَ اللهِ وَأُمِّي هَلْ دَخَلَ عَلَى أَحَدٍ مِنَ النَّاسِ مَا دَخَلَ عَلَيَّ تُوُفِّيَتْ بِنْتُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَحِمَهَا اللهُ وَانْقَطَعَ الصِّهْرُ فِيمَا بَيْنِي وَبَيْنَكَ إِلَى آخِرِ الأَبَدِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَقُولُ ذَلِكَ يَا عُثْمَانُ وَهَذَا جِبْرِيلُ عَلَيْهِ الصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ يَأْمُرُنِي عَنْ أَمْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ أُزَوِّجَكَ أُخْتَهَا أُمَّ كُلْثُومٍ عَلَى مِثْلِ صَدَاقِهَا وَعَلَى مِثْلِ عِدَّتِهَا فَزَوَّجَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِيَّاهَا.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন, একদা) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে চিন্তিত অবস্থায় দেখলেন। তারপর তিনি উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, হে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম আপনার কী অবস্থা? (আপনাকে এরূপ চিন্তিত দেখা যাচ্ছে কেন?) তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক! আমার উপর যে মুছীবত এসেছে, সেটা কী অন্য কারো উপর অর্পিত হয়েছে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আওলাদ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার উপর রহম করুন! আর আমার এবং আপনার মাঝে যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক মুবারক ছিলো, সেটা চিরতরে শেষ হয়ে গেছে। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি এই কথা বলছেন? এইতো ইনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আমার নিকট এই সম্মানিত নির্দেশ মুবারাক নিয়ে এসেছেন যে, আমি যেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বোন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার অনুরূপ সম্মানিত মোহরানা মুবারক এবং উনার সমপরিমাণ মোহরনাসহ আপনার সাথে সম্মানিত শাদী মুবারক সুসম্পন্ন করি। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত মোহরানা মুবারক অনুযায়ী হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্মানিত শাদী মুবারক দেন। সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম শরীফ ৪/৫৪)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত শাদী মুবারক উনার বর্ণনা
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَن حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَا زَوَّجْتُ حَضْرَتْ عُثْمَانَ عليه السلام حَضْرَتْ أُمَّ كُلْثُومٍ عليها السلام إِلَّا بِوَحْي مِنَ السَّمَاءِ.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, আমি সম্মানিত ওহী মুবারক দ্বারা আদৃষ্ট হয়েই সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাদী মুবারক সুসম্পন্ন করেছি।” সুবহানাল্লাহ! (আশ শরী‘য়াহ ৪/১৯৩৯, আল মু’জামুল আওসাত্ব ৫/২৬৪, আল মু’জামুল কাবীর ২৫/৯২ ইত্যাদি)

সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত শাদী মুবারক উনার বর্ণনা দিতে যেয়ে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেছেন, যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার লখতে জিগার সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত শাদী মুবারক দেন, তখন তিনি হযরত উম্মে আইমন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলেন, আপনি আমার সম্মানিতা আওলাদ আলাইহাস সালাম উনাকে প্রস্তুত করুন এবং উনাকে যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার মধ্যে নিয়ে যান। সুবহানাল্লাহ! হযরত উম্মু আইমন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি তাই করলেন। অতঃপর সম্মানিত শাদী মুবারক হওয়ার তিন দিন পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার লখতে জিগার সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে দেখার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। তারপর তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন,
يابنية كيف وجدت بعلك قالت خير بعل فقال النبى صلى الله عليه وسلم أما إنه أشبه الناس بجدك إبراهيم وأبيك محمد عليهما السلام
অর্থ: “হে আমার সম্মানিতা আওলাদ আলাইহাস সালাম, আপনি আপনার সম্মানিত আহাল উনাকে কিরূপ পেয়েছেন? জবাবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি উনাকে সর্বোত্তম আহাল হিসেবে পেয়েছি। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাবধান! তিনি মানুষের মাঝে আপনার সম্মানিত দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে এবং আপনার মহাসম্মানিত আব্বাজান নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে সর্বাধিক সম্মানিত সাদৃশ্যতা মুবারক রাখেন।” সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত যুন নূরাইন লক্বব মুবারক উনার বিহঃপ্রকাশ মুবারক
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি এই সম্মানতি শাদী মুবারক উনার ফলশ্রুতিতে একটি লক্বব মুবারক-এ ভূষিত হন। আর সেই সম্মানিত লক্বব মুবারকখানা হলো ‘যুন নূরাইন’ অর্থাৎ সম্মানিত দুই নূর মুবারক উনাদের অধিকারী।’ সুবহানাল্লাহ! এই সম্মানিত দুই নূর মুবারক হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওযা সাল্লাম উনার দুই জন মহাসম্মানিতা আওলাদ আলাইহিমাস সালাম তথা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
এই সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وإني زوجته ابنتي فذلك سماه الله عند الملائكة ذا النور وسماه في الجنان ذا النورين، فمن شتم عثمان فقد شتمني.
অর্থ: “আর নিশ্চয়ই আমি আমার মহাসম্মানিতা দুই আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার সাথে শাদী মুবারক দিয়েছি। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক রেখেছেন ‘যুন নূর’ এবং সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ উনার সম্মানিত নাম মুবারক রেখেছেন ‘যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম’। সুবহানাল্লাহ! ফলে যে ব্যক্তি উনাকে তিরস্কার করলো, সে মূলত আমাকেই তিরস্কার করলো।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (কানযুল উম্মাল ১৩/৫৩)
এই সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত সীরাত বিশারদ হাফিয আবুল ফিদা আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
ثُمَّ زوَّجه بِأُخْتِهَا الْأُخْرَى أم كلثوم بِنْتُ عليها السلام رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلِهَذَا كَانَ يُقَالُ لِعُثْمَانَ بْنِ عفان ذو النورينعليه السلام
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ পাওয়ার পর উনার অপর বোন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান ইবনে আফ্ফান আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্মানিত শাদী মুবারক দেন। এই জন্য উনাকে ‘যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম’ বলা হয়।” (আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৩/৪১৯)
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনিই একমাত্র সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক যিনি পর পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে সম্মানিত শাদী মুবারক করে, উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত সুওয়াল মুবারক:
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنْ أُمِّ كُلْثُومٍ عليها السلام بِنْتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، أَنَّهَا قَالَتْ : يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم زَوْجِي خَيْرٌ أَو زَوْجُ فَاطِمَةَ عليها السلام؟ قَالَتْ : فَسَكَتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، ثُمَّ قَالَ : زَوْجُكِ مِمَنْ يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ، وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ فَوَلَّتْ فَقَالَ لَهَا : هَلُمِّي مَاذَا قُلْتُ ؟ قَالَتْ : قُلْتَ : زَوْجِي مِمَنْ يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ، قَالَ : نَعَمْ ، وَأَزِيدُكِ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَرَأَيْتُ مَنْزِلَهُ وَلَمْ أَرَ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِي يَعْلُوهُ فِي مَنْزِلِهِ.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমার সম্মানিত আহাল তথা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি শ্রেষ্ঠ অথবা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আহাল তথা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি শ্রেষ্ঠ? সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (আমার কথা মুবারক শুনে কিছু ক্ষণ সময়) চুপ থাকলেন। তারপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার সম্মানিত আহাল সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের অন্তর্ভুক্ত যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাও উনাকে মুহব্বত করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি (তিনি জওয়াব শুনে) চলে যেতে থাকলেন। এমতাবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি এখানে আসুন। আমি আপনাকে কী বলেছি? সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আপনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, আমার সম্মানিত আহাল (হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের অন্তর্ভুক্ত যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাও উনাকে মুহব্বত করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ (আমি তাই বলেছি)। আর এখন আমি আপনাকে আরো অবহিত করছি, (আমি সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার রাতে) সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রেখে আপনার সম্মানিত আহাল সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত মনযিল তথা মাক্বাম মুবারক দেখেছি। সুবহানাল্লাহ! উনাকে এমন এক সম্মানিত সুউচ্চ মানযিল তথা মাক্বাম মুবারক দেয়া হয়েছে, যেটা অন্য কারো দেয়া হয়নি। সুবহানাল্লাহ! আমি আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে অন্য কারো মনযিল তথা মাক্বাম মুবারক এতো সুউচ্চ দেখিনি।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ৪/৪৯, মুসনাদে শামিয়্যীন ১/৯৯, ইযালাতুল খফা ৬/২৭৯ ইত্যাদি)
সম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ তিনি সম্মানিত বিছাল শান মুবারক প্রকাশের পূর্বে কিছু দিন মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন এবং এই সম্মানিত মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় ৯ম হিজরী সনের ৬ রমাদ্বান শরীফ সম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত গোসল মুবারক এবং সম্মানিত কাফন মুবারক:
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দিক-নির্দেশনা মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত গোসল মুবারক ও সম্মানিত কাফন মুবারক সম্পন করা হয়। সুবহানাল্লাহ! ‘আবূ দাঊদ শরীফ’ উনার মধ্যে এসেছে,
أَنَّ لَيْلَى بِنْتَ قَانِفٍ الثَّقَفِيَّةَ، قَالَتْ: ্রكُنْتُ فِيمَنْ غَسَّلَ أُمَّ كُلْثُومٍ عليها السلام بِنْتَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ وَفَاتِهَا، فَكَانَ أَوَّلُ مَا أَعْطَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحِقَاءَ، ثُمَّ الدِّرْعَ، ثُمَّ الْخِمَارَ، ثُمَّ الْمِلْحَفَةَ، ثُمَّ أُدْرِجَتْ بَعْدُ فِي الثَّوْبِ الْآخَرِগ্ধ، قَالَتْ: ্রوَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ عِنْدَ الْبَابِ مَعَهُ كَفَنُهَا يُنَاوِلُنَاهَا ثَوْبًا ثَوْبًاগ্ধ
অর্থ: “হযরত লায়লাহ বিনতে ক্বানিফ ছাকাফিয়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, বিনতু রসূলিল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর যারা উনার সম্মানিত গোসল মুবারক করান, আমি উনাদের মধ্যে ছিলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রথমে আমাদের দিয়েছিলেন এক টুকরো কাপড় মুবারক, অতঃপর উপরের অংশ, একটি চাদর মুবারক এবং অবশেষে কাপড়ের একটি বড় টুকরো মুবারক। পরে উনাকে একটি কাপড় মুবারক দ্বারা জড়ানো হয়েছিলো। যখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে গোসল মুবারক করানো হচ্ছিলো, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত দরজা মুবারক-এ দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং প্রয়োজনীয় কাপড় মুবারক সরবরাহ করে যাচ্ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ)
সম্মানিত জানাযা উনার নামায মুবারক:
স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত ইমামতী মুবারক করে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত জানাযা উনার নামায মুবারক পড়ান। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখা এবং উনার জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল মুহব্বত মুবারক প্রকাশ :
عَنْ أَنَسٍ رَضِئ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: شَهِدْنَا بِنْتَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ عَلَى القَبْر فَرَأَيْتُ عَيْنَيْهِ تَدْمَعَانِ.
অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি যখন সম্মানিত বরকতময় বিছাল শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন আমরা উপস্থিত ছিলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত রওযা শরীফ উনার নিকট বসা ছিলেন। আর আমি দেখেছি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দু’চোখ মুবারক দিয়ে অজস্র ধারায় সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত হচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ)

অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছালিছাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত রওযা শরীফ মুবারক উনার মধ্যে রাখা হয়। সুবহানাল্লাহ!

0 Comments: