৯৪ হিজরী সনের ২৫ মুহররমুল হারাম ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার শরীফ পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহন করেছেন এবং পবিত্র মাহে শা’বান মাস উনার সুমহান ও বরকতময় ৫ তারিখ মুবারকে যমীনের বুকে তাশরীফ এনেছেন, যিনি পূত-পবিত্র হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের চতুর্থ ইমাম- সুলত্বানুল আউলিয়া, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম তিনি। উনার সুমহান পবিত্র শানে শুকরিয়া প্রকাশস্বরূপ উনার পবিত্র যবান মুবারক থেকে নিসৃত কতিপয় মহামূল্যবান নছীহত মুবারক উল্লেখ করছি-
ইমামুর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তায়াজ্জুব (আশ্চর্য) হই ওই ব্যক্তি সম্পর্কে- যে ফখর ও অহঙ্কার করে। কারণ গতকাল যে সামান্য পানি ছিল এবং আগামীকাল যে মৃত্যুবরণ করে আবার মাটিতে মিশে যাবে, তার অহঙ্কার দেখলে বড়ই আশ্চর্য হই।
* আর ঐ ব্যক্তির জন্যও আশ্চর্য হতে হয়- যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার আযমত সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনিই তাকে সৃষ্টি করেছেন।
* ওই ব্যক্তি সম্পর্কেও আশ্চর্য হই- যে পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে; অথচ প্রথমবার মহান আল্লাহ পাক তিনিই তাকে পয়দা করেছেন।
* আর ঐ ব্যক্তি সম্পর্কেও আশ্চর্য হই- যে ক্ষণস্থায়ী জিন্দেগী অর্থাৎ দুনিয়ার জন্য সবসময় আমল করে; কিন্তু চিরস্থায়ী জিন্দেগী অর্থাৎ পরকালের জন্য আমল করে না। হে ব্যক্তিগণ! তোমরা লক্ষ্য করো, দুনিয়া হচ্ছে মুসাফিরখানা। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ওই আমল থেকে পানাহ তলব করছি- যা লোকদের নিকট জাহিরীভাবে (বাহ্যিকভাবে) ভালো মনে হয়। কিন্তু হাক্বীক্বতে তা অত্যন্ত খারাপ।
ইমামুর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম তিনি আরো বলেন, কিছু লোক আছেন, যাঁহারা মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে ইবাদত করেন। মূলত ইহাই বান্দা বা গোলামদের ইবাদত। কিছু লোক আছে যারা জান্নাত উনার আশায় ইবাদত করে ইহা ব্যবসায়ীদের ইবাদত। আর কিছু লোক রয়েছে যারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায়ের লক্ষ্যে ইবাদত করে মূলত ইহা হচ্ছে আযাদ বা স্বাধীন ব্যক্তির ইবাদত। (সফওযাতুছ্ ছাফওয়া, সিয়ারুছ্ ছাহাবা)
ইমামুর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম তিনি উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পূর্বে একদিন উনার সুযোগ্য পুত্র সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, ইমামুল খামীস সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু জা’ফর মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম- যিনি হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ৫ম ইমাম, উনাকে ডেকে কিছু মহামূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ নছীহত মুবারক করেন। মুয়ামিলাত-মুয়াশিরাত তথা সংসার জীবনযাপন করার ব্যাপারে। তিনি বললেন, হে আমার প্রিয় আওলাদ!
* পাঁচ ধরনের লোকদের সাথে কখনো বন্ধুত্ব করবেন না। এমনকি তাদের সাথে দুশমনিও করতে যাবেন না।
প্রথমত, ফাসিক বা পাপীদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন না। তাদের সহচার্য হতে সবসময় দূরে সরে থাকবেন। ওই সমস্ত লোক আপনাকে প্রবৃত্তির গোলামে পরিণত করতে চাইবে এবং যে বিষয়ের কোনো প্রয়োজন নেই- এমন সব বিষয়ে আত্মনিয়োজিত হতে প্ররোচিত করবে।
দ্বিতীয়ত, কৃপণের সাথে বন্ধুত্ব করবেন না। কেননা যদি কখনো আপনার আর্থিক সমস্যা দেখা দেয়, তখন সে-ই ব্যক্তি বখিলীর কারণে আপনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে পালিয়ে যাবে।
তৃতীয়ত, মিথ্যাবাদীর সাথে কখনো বন্ধুত্ব করবেন না। কেননা এমন লোক মরীচিকার মতো; সে তার অভ্যাসবশতই আপনার আপনজনদেরকে আপনার থেকে দূরে সরিয়ে দিবে।
চতুর্থত, আহমক/বোকা লোকের সাথে বন্ধুত্ব করবেন না। কারণ এ ধরনের লোক উপকার করতে গিয়েও এমন ভয়ানক ক্ষতি করে ফেলবে, যার প্রতিকার করা অনেক সময় সম্ভবপর হবে না।
পঞ্চমত, রক্তের সম্পর্ক ছিন্নকারী লোকদের সাথে সম্পর্ক রাখবেন না। কারণ আমি যে সমস্ত আসমানী কিতাব পাঠ করেছি, প্রত্যেক আসমানী কিতাবে এ ধরনের লোকদেরকে অভিশপ্ত হিসেবে উল্লেখ দেখেছি। (হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন/৭৫)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে ইমামুর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার গুরুত্বপূর্ণ এবং মহামূল্য নছীহত মুবারক অনুযায়ী আমল করার তাওফীক ইনায়েত করুন। আমীন!
0 Comments:
Post a Comment