শহীদ বালাকোট সাইয়্যিদুনা আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি বাতিল ফির্কার মিথ্যা অপবাদ এবং একটি ইতিহাস বিকৃতির স্বরূপ উন্মোচন :
আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেছেন মুসলমানদের সবচাইতে বড় শত্রু হচ্ছে বিধর্মী কাফিররা।” আল্লাহ পাক উনার এ কালাম মুবারক অনুযায়ী ইসলামের ইতিহাসে আমরা মুসলমানদের প্রতি বিধর্মী দের অনেক শত্রুতা, অনেক ষড়যন্ত্র, অনেক কুটকৌশল অবলোকন করেছি। কাফিররা চায় মুসলমানদের একতাকে বিনষ্ট করে মুসলমানদের ক্ষমতাকে দমিয়ে রাখতে। ইসলামের প্রথম দিকে সম্মুখ সমরে বারবার পরাস্থ হয়ে ইহুদী খ্রিষ্টানরা চিন্তা করলো যুদ্ধ করে মুসলমানদের সাথে পারা যাবে না। মুসলমানদের ধ্বংস করতে তাদের একতা বিনষ্ট করে দিতে হবে, এবং তাদের মধ্যে বহু ফির্কা তৈরি করে দিতে হবে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় মুসলমানদের মধ্যে বহু দল সৃষ্টি করে, দ্বন্দ সৃষ্টি করে মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট করে ফেলে। এ জন্য তারা জন্ম দেয় প্রচুর পরিমান বাতিল ফের্কা। মুসলমানদের মূল কেন্দ্রভুমি হচ্ছে পবিত্র মক্কা শরীফ এবং মদীনা শরীফ। বিধর্মীরা চিন্তা করলো যদি এই জায়গাটা নিয়ন্ত্রনে আনা যায় তবে মুসলমানদের ধোঁকা দিতে খুবই সহজ হবে। সম্রজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের টার্গেট হলো এই পবিত্র ভূমি। এইখানে একটা ফেংনা সৃষ্টি করতে একটা ফাটল সৃষ্টি করতে তারা নিয়োগ দিলো এক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্রিটিশ স্পাইকে, যার নাম ছিলো হ্যামপার। আজ থেকে ৩০৪ বছর পূর্বে ১১২২ হিজরী মোতাবেক ১৭১০ ঈসায়ী সালে ব্রিটিশ সরকার এই হ্যামপারকে একটা মিশন দিয়ে পাঠায়। এই হ্যামফার মুসলমান নাম এবং পোষাক ধারন করে আরব ভুমিতে তার মিশন শুরু করে। আমি সেদিকে আলোচনা করতে চাই না। আপনারা যারা confession of a British spy বইটা পড়েছেন তারা সবাই জানেন। এই হ্যামফার তার মিশনের টার্গেট হিসাবে বেছে নেয় আরবের ইবনে আবদুল ওহাব নজদীকে। তার মাধ্যমে জন্ম দেয় ওহাবী ফের্কা নামক ভয়াবহ ইসলাম বিদ্বেষী উগ্র একটি ফের্কা। পরবর্তীতে ইবনে সাউদকে কব্জা করে তারা আরবে তাদের শাষন কায়েম করে। যার উত্তোসূরিরা আজও পূর্ব পুরুষের নাম অনুসারে আরব ভূমির নাম সৌদি আরব রেখে তাদের ওহাবী শাষন পরিচালনা করছে। যার শাখা প্রশাখা আজ লা-মাযহাবী, সালাফী, দেওবন্দী, জামাতি, আই এস ইত্যাদি বিভিন্ন নামে দুনিয়াতে বিস্তারিত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের মিশন। ভেঙ্গে গিয়েছে একতা….!!!
পরবর্তীতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন ভারতবর্ষে প্রবেশ করলো তখন এই ভারতবর্ষ ছিলো ওলী আউলিয়াদের আবাদস্থল। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি , শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের হেদায়েত এবং মারেফতের বিকাশস্থল। ইংরেজরা গায়ের জোরে এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নিলেও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতিতে তাদের কোন প্রভাব ছিলো না। পরবর্তীতে ইংরেজদের অমানুষিক নির্যাতন যখন সিমা অতিক্রম করলো বিখ্যাত ওলী হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তখন এই উপমহাদেশকে “দারূল হরব” হিসাবে ফতোয়া দিলেন। কারন তখন এখানে ব্রিটিশদের চরম নির্যাতনের ফলে ইসলাম পালন করাই অসম্ভব হয়ে পরে। এরই মধ্যে আল্লাহ পাক দুনিয়াবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ এবং মুসলমান জাহানের মুক্তির দিশারী রূপে আত্মপ্রকাশ ঘটান এক বিখ্যাত ওলী আল্লাহ উনাকে। যাঁর নাম মুবারক হচ্ছে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। ইতিপূর্বে তিনি বাইয়াত গ্রহন করেন হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার হাত মুবারকে। হযরত শাহ আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার এই মুরীদ সাইয়্যিদুনা আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সীমাহীন যোগ্যতা দেখে বিমোহিত হন, এবং চার তরীক্বায় খিলাফত প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, তিনি সাইয়্যিদুনা আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কামালত দেখে এক পর্যায়ে বলেন, কোন মানুষ আমার কাছে ১২ বছরে যা হাসিল করতে পারবে তারা সাইয়্যিদুনা আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট থেকে ১২ দিনে তা হাসিল করতে পারবে। সুবহানাল্লাহ্ !!
এ কারনে ইতিহাস সাক্ষী হযরত সাইয়্যিদুনা আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বেলায়েতের দাপটে চতুর্দিক থেকে মানুষ উনার কাছে বাইয়াত হতে আসতে লাগলো। কিতাবে বর্নিত আছে, উনার ত্রিশ লক্ষ মুরীদ ছিলো। সুবহানাল্লাহ্!
ইংরেজদের এহেন দুঃশাষন দেখে তিনিও উনার শায়েখ আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতোয়া অনুযায়ী ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ইংরেজরা বুঝতে পারলো সাইয়্যিদুনা আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে এখনি দমাতে না পারলে ভারতবর্ষে ইংরেজদের অস্তিত্ব বলে কিছু থাকবে না। কারন উনার বিপুল পরিমানের জানবাজ মুরীদে স্রোতে মূহূর্তেই ইংরেজরা ভেষে যাবে। তাই তারা উনাকে প্রতিরোধ করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করলো। ইতিপূর্বে তিনি খিলাফতের ডাক দেন। সমগ্র ভরতবর্ষের বড়বড় আলেমগন উনার হাত মুবারকে খিলাফতের বাইয়াত গ্রহন করেন। এসব দেখে ইংরেজদের ভিত কেঁপে ওঠে। পরবর্তীতে তারা এক ফাঁদ পাতে ষড়যন্ত্রের। তাদের ষড়যন্ত্র মোতাবেক সিমান্তের পাঠান দের (রেজা খার পূর্ব পুরুষ) বেঈমানীর মাধ্যমে বালাকোটের ময়দানে শিখদের মাধ্যমে অতর্কিত আক্রমণে সাইয়্যিদুনা আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উনার সঙ্গী সাথী সহ সেই হৃদয় বিদারক কারবালার শহীদদের মত নির্মম ভাবে শহীদ করা হয়।
ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারতো। ইতিহাস এখানেই থেমে যেতে পারতো। কিন্তু ইংরেজরা দেখলো সাইয়্যিদুনা আহমদ শহীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার যে বেলায়েতের দাপট রয়েছে এটাকেই পুঁজি করে পরবর্তীতে আবারো ইংরেজদের বিরুদ্ধে কেউ না কেউ জিহাদের ডাক দিবে। তখন সম্রাজ্যবাদী ইংরেজরা দেখলো এই চেতনাকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে দমিয়ে দিতে হবে। আর এজন্য করতে হবে ইতিহাস বিকৃতি। শুধু ইংরেজ ঐতিহাসিক দ্বারাই বিকৃতি ঘটালেইতো পাবলিক গ্রহণ করবে না। প্রয়োজন মুসলমানদের মধ্যে থেকে একজন ইতিহাস বিকৃতিকারী। তখন আবারো সেই হ্যামপারের ফর্মূলা অনুযায়ী আব্দুল ওহাব নজদীর মত একজন এজেন্ট আবিস্কার করলো যার নাম হচ্ছে “আহমদ রেজা খা”। বললেইতো আর ইতিহাস বিকৃতি করা যায় না, আর সেটাতো একদিনে করাও সম্ভব নয়। আর ঐ সময়ে সেটা বেশ অসম্ভবও ছিলো। কারন সাড়া ভারতবর্ষের সবাই সাইয়্যিদুনা আহমদ শহীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার শান মান সম্পর্কে অবহিত ছিলো।
আর এই ইতিহাস বিকৃতির জন্য দুইজন এজেন্ট কাজ করে-
(১) ইংরেজ লেখক উইলিয়াম হান্টার।
(২) ছদ্মবেশী মুসলমান আহমদ রেজা খা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী এ সময়ই ব্রিটিশ এজেন্ট ধুরন্ধর ও শঠ প্রকৃতির খৃষ্টান লেখক উইলিয়াম হান্টার তার The Indian Musalmans গ্রন্থ রচনা করে। অবশেষে সে তার গ্রন্থে তাদের ইতিহাস বিকৃতির কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে এবং বলেছে, “ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্যে ফাটল সৃষ্টির নিমিত্ত এই অপবাদ (ওহাবী বলা) ভারত বিপ্লবীদের মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে আমরাই চাপিয়ে দিয়েছি।”
উইলিয়াম হান্টার তার The Indian Musalmans গ্রন্থের ৬৫/৬৬ পৃষ্ঠায় আরো লিখেছে, “দেশদ্রোহীদের সকলকে সরকার কারাবাসে আটক রাখতে পারেন কিন্তু সমগ্র বিদ্রোহী দলটাকে কোনঠাসা করার আরও একটা সহজ উপায় আছে, সেটা হলো সাধারণ মুসলমান সমাজ থেকে তাদের আলাদা করে ফেলা। মুজাহিদদের সম্পর্কে মিথ্যা দুর্নাম ছড়িয়ে সে আরো লিখেছে, অসন্তোষের সামান্যতম মনোভাব সৃষ্টির আগেই অবাধ্য শ্রেণীকে (মুজাহিদদেরকে) অবশ্যই আলাদা করে ফেলতে হবে এবং এটা করতে হবে সম্পূর্ণ ভদ্র প্রক্রিয়ায় অথচ শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে।”
এই বৃটিশ লেখক মুসলমানদের চির শত্রু হান্টার তার ইতিহাস গ্রন্থে শুধু এতটুকু লিখেই ক্ষান্ত হয়নি বরং আমিরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (রহমতুল্লাহি) সম্পর্কে সে লিখিছে, পাঞ্জাব সীমান্তে বিদ্রোহীর শিবিরের পত্তন করে সৈয়দ আহমদ। কুখ্যাত এক দস্যু অশ্বারোহী যে সৈনিক হিসেবে জীবন আরম্ভ করে এবং বহু বছর যাবত মালওয়া অঞ্চলের আফিম সমৃদ্ধ গ্রামসমূহ লুটতরাজ চালায়। The Indian Musalmans ১২৬)
এই গেলো ইংরেজ লেখকের অপপ্রচার। এরপর মুসলমানদের আক্বায়িদী সেন্টিমেন্টকে উত্তেজিত করতে মাঠে নামানো হলো আহমদ রেজা খা কে। সে ইতিহাস বিকৃত করার জন্য পুঁজি করলো দুইটা কিতাবকে। যথা-
(১) সিরাতুল মুস্তাকীম।
(২) তকবিয়াতুল ঈমান।
এখন আসুন আসল মজায়, সর্বপ্রথম কথা হচ্ছে উক্ত কিতাবদ্বয় কোনটাই সাইয়্যিদুনা আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার স্বহস্তে লিখিত নয়। শুধুতাই নয়, সাইয়্যিদুনা আহমদ শহীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার স্বহস্তে লিখিত কোন কিতাবই দুনিয়াতে নেই। কিতাবদ্বয়ের লেখক হচ্ছেন হযরত ইসমাঈল শহীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি। রেজাখানের বক্তব্য হচ্ছে উক্ত কিতাবে অনেক কুফরী বক্তব্য আছে। আর এ কিতাব সাইয়্যিদুনা আহমদ শহীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নির্দেশে লেখা হয়েছে তাই তিনি ওহাবী/কাফির। নাউযুবিল্লাহ।
এবার আসুন রেজা খার বক্তব্যের বিশ্লেষণ মূলক জবাব দেয়া যাক।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, উক্ত কিতাবের যেসমস্ত আপত্তিকর বিভ্রান্তমূলক কথা-বার্তা পরিলক্ষিত হয় তা হচ্ছে মূলতঃ হিংসুক ও নিন্দুকের নিন্দার ফসল। অর্থাৎ ব্রিটিশ সরকার ও তাদের পদলেহী দালালেরা উক্ত কুফরীমূলক বাক্য হযরত ইসমাঈল শহীদ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “সিরাতুল মুস্তাকিম” কিতাবে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। কারণ এই কিতাব ১২৩৩ হিজরীতে লিখিত হয়েছে আর প্রকাশ করা হয়েছে ১৩৩৪ হিজরীতে অর্থাৎ দীর্ঘ প্রায় ১০০ বছর পর প্রকাশিত হয়েছে, তখন অর্থাৎ যখন কিতাবখানা হযরত ইসমাঈল শহীদ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন ঐ সময় হযরত শাহ্ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি জীবিত ছিলেন। যদি “সীরাতুল মুস্তাকীম” কিতাবে কুফরীমূলক আক্বীদা উল্লেখ থাকতো তাহলে হযরত শাহ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি অবশ্যই উনাকে সতর্ক করে শুধরিয়ে দিতেন।
পাঠাক ! বুঝেছেন কি রহস্যটা ?
আবারো পয়েন্ট গুলো ধরিয়ে দিচ্ছি,-
– কিতাব লেখা হয় ১২৩৩ হিজরীতে।
– ঐ সময় শাহ আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি হায়াতে ছিলেন।
– উক্ত কিতাবে কোন কুফরী থাকলে শাহ আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি কি প্রতিবাদ করতে না ? প্রতিবাদ করেছেন এমন কোন প্রমান আছে ?
– উপমহাদেশের অনেক আলেম ছিলেন তারা কি প্রতিবাদ করেছিলেন ?
– কেউ কোন প্রতিবাদ করে নাই কারন ওই সময় উক্ত কিতাবদ্বয়ের পান্ডুলিপিতে কোন কুফরী বক্তব্য ছিলো না।
এবার দেখুন,-
– কিতাবটা প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশ হয় ১৩৩৪ সালে।
– অর্থাৎ কিতাব লেখার ১০০ বছর পর।
– এ সময়ই কিতাব সম্পর্কে বিভিন্ন প্রতিবাদ প্রকাশ হতে থাকে।
– কিন্তু এ ১০০ বছর পর কিতাবের লেখক এবং উক্ত পান্ডুলিপি সম্পর্কে অবহিত কেউই কি হায়াতে ছিলেন ?
– কোন প্রত্যক্ষদর্শী কি জীবিত ছিলেন ?
– তাহলে এই ১০১ বছর পর উক্ত কিতাবে কেউ কিছু অনুপ্রবেশ করিয়ে দিলে কে প্রতিবাদ করবে, কে বাধা দিবে ?
আর মূলত হয়েছিলোও সেটাই। ব্রিটিশরা সাইয়্যিদুনা আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মানুষের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ১০০ বছর পর উক্ত কিতাব প্রকাশের ব্যবস্থা করে এবং সেখানে অনেক আপত্তিকর কথা ঢুকিয়ে দেয় যা পূর্বে ঐ কিতাবের পান্ডুলিপিতে ছিলো না।
আর এ সুযোগের অপেক্ষায় ছিলে রেজা খা ও তার সহচররা। তারাও এই সুযোগে সাইয়্যিদুনা আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইসমাঈল শহীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরুদ্ধে কাফের ফতোয়া জারি করে আবহাওয়া গরম করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে যার প্রচেষ্টা এখনো পর্যন্ত তারা জারি রেখেছে।
এখন দেখুন পূর্ববর্তী ইহুদী-নাসারাদের নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ যেমন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার উপর তাওরাত শরীফ, হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনার উপর যাবুর শরীফ, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার উপর ইনজিল শরীফ নাযিলকৃত আসমানী কিতাব যা-কিনা তাদের মন মত হয়নি। তাই তারা তাদের চাহিদানুযায়ী উক্ত পবিত্র আসমানী কিতাবগুলোর বিকৃতি ঘটিয়ে অর্থাৎ নিজেদের মনগড়া অভিমত উক্ত পবিত্র গ্রন্থে ঢুকিয়ে মূল আসমানী কিতাবগুলোর অস্তিত্বই নষ্ট করে ফেলেছে। এখন উক্ত চির পথভ্রষ্ট, গোমরাহ্ ইহুদী-নাসারাদের জন্য কি তাদের নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণকে দোষারোপ করা হবে? (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক)
এসব কিতাব বিকৃত করার অভ্যাস কাফিরদের বহু পুরানো। নিজেদের ধর্মগ্রন্থের পাশাপাশি তারা মুসলমানদের অনেক কিতাবও তারা সুকৌশলে বিকৃত করে ফেলেছে।
আপনারা সবাই ইমামে আযম ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার “ফিকহে আকবর” কিতাবের নাম শুনেছেন।
বর্তমান বিশ্বে এই ফিকহে আকবরের অনুবাদে সুকৌশলে ঢুকিয়ে দিয়েছে- ” হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি বলেন সাল্লাম উনার পিতা মাতা কাফির অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন।” নাউযুবিল্লাহ !!
অথচ ফিক্বহে আকবরের মূল পান্ডুলিপিতে আছে “ কাফির অবস্থায় ইন্তেকাল করেন নাই।” কিন্তু ইসলামের শত্রুরা মানুষের আক্বীদা নষ্ট করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে “না” শব্দটা মুছে দিয়েছিলো যা পরবর্তীতে অবশ্য ধরা পড়েছে।
৬৫৬ হিজরীতে যখন হালাকু খা বাগদাদ শরীফ জ্বালিয়ে দেয় এবং ৮০ হাজার মুসলমানকে হত্যা করে তখন “ফিকহে আকবর” পান্ডুলিপি হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার শাহাদাতের রক্তমাখা স্বহস্তে লিখিত কুরআন শরীফ এবং অন্যান্য মূল্যবান কিতাব সমরখন্দে নিয়ে যায়। যখন রাশিয়ানরা সমরখন্দ দখল করে তখন কিতাবগুলো পিটার্সবার্গে স্থানান্তরিত করা হয় এবং যত্নসহকারে রক্ষিত হয়। শামসুদ্দিন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার “কামাসুল আলম” কিতাবে সমরখন্দের ইতিহাসে এ সমন্ধে বিস্তারিত লিখেছেন।
এছাড়া বিখ্যাত হাদীস শরীফের কিতাব “মুছান্নাফে আবী শায়বা” কিতাবে নতুন এডিশনে হযরত আসওয়াদ আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করার হাদীস শরীফে ” رفع يديه ” অর্থাৎ হাত উত্তোলন করেছেন এ অংশটা বাদ দেয়া হয়েছে। অথচ পুরানো ছাপায় উক্ত অংশ স্পষ্টই রয়েছে। এভাবে বাজারে প্রকাশিত অনেক কিতাবেই সংযোজন বিয়োজনের অসংখ্য ঘটনা দৃশ্যমান হচ্ছে। সে কারনে বিখ্যাত ওলী হযরত জালালুদ্দীন রূমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি “মসনবী শরীফ” লিখেছেন কবিতার ছন্দে যাতে কেউ সহজেই কিছু কমবেশি করতে না পারে।
এখন নিশ্চয়ই বিষয়টা সহজেই বুঝেছেন ? এই ভাবেই হযরত ইসমাঈল শহীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবেও ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে অনেক কিছু ঢুকিয়ে দিয়েছে। যেটাকে পুঁজি করে রেজা খা এবং তার সহচররা কুয়োর ব্যং এর মত ছটফট করছে।
পাঠকগন খেয়াল করুন যেই ইসমাইল শহীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি অপবাদ দেয়া হয় উনার সম্পর্কে সিরাজুল হিন্দ, শাহ্ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এক মাকতুবে উনাকে হুজ্জাতুল ইসলাম (ইসলামের দলীল), তাজুল মুফাসসীরিন (মুফাসসীরগণের মাথার মুকুট), ফখরুল মুহাদ্দিসিন (হাদীছ শরীফ বিশারদগণের গৌরব) বলে উনার উচ্চ প্রশংসা করেন।” সুবহানাল্লাহ্ !!
যদি উনার আক্বীদায় কুফরি থাকতো তবে কি এমন সুমহান লক্বব মুবারক হাদিয়া পেতেন ?
– আর যদি উক্ত কিতাবের বিভ্রান্তি ও আপত্তিকর কথা-বার্তাগুলো সত্যিই হযরত সাইয়্যিদ শহীদ আহমদ বেরেলভী আলাইহিস সালাম ওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজের হতো তবে মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ, মিশর, আফ্রিকা, আফগানিস্থান, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশসহ বহু দেশের লক্ষ লক্ষ মুরীদ, শত শত হাজার হাজার আকাবিরে আলেম মুরীদগণ কি উনাকে এ ব্যাপারে সচেতন করাতেন না?
– বাংলা, ভারতসহ পবিত্র মক্কা শরীফ, পবিত্র মদীনা শরীফ ও মিশরের আলেমগণ যারা উনার নিকট মুরীদ হয়ে খেলাফত লাভের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন তারা কি এ সমস্ত কথা মেনে নিয়েছিলেন?
– তারা কি এ সমস্ত আপত্তিকর ও বিভ্রান্তিমূলক বাক্য শ্রবণ করে উনার নিকট বাইয়াত হয়েছিলেন?
– না মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে উনার মর্যাদা মর্তবা ও উচ্চ বেলায়েতের দরজা হাছিল হবার সুসংবাদ শুনে উনার নিকট মুরীদ হয়েছিলেন?
-; হযরত সাইয়্যিদ শহীদ আহমদ বেরেলভী আলাইহিস সালাম ওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সিলসীলা থেকে ফয়েজপ্রাপ্ত হয়ে শুরু থেকে এ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ গাউস, কুতুব, আবদাল, নুকাবা, নোজাবা ইত্যাদি হয়েছেন এমনকি গত শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদুয্ যামান হযরত আবু বকর সিদ্দীক ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিও ওনার সিলসিলার অন্তর্ভূক্ত। তাহলে তাদের কথামত তিনি যদি কুফরী করে থাকেন, আর যে কুফরী করে সে কাফের হয়। তাহলে একজন কাফেরের সিলসীলা থেকে কি করে লক্ষ লক্ষ গাউস, কুতুব, আবদাল, ও মুজাদ্দিদের আবির্ভাব ঘটাতে পারে?
এসব প্রশ্নের কোন জবাব কি নাকেছ ইংরেজ এজেন্ট রেজা খানি গং দের কাছে আছে ?
আর এ বিষয় গবেষণা করে বিখ্যাত ইতিহাসবিদ গোলাম মর্তুজা তার কলকাতা থেকে প্রকাশিত “চেপে রাখা ইতিহাস”- কিতাবের ২০৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন, “হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী (রহমতুল্লাহি)-এর ওফাত হওয়ার পর যে সব আন্দোলন, বিদ্রোহ বা সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছিলো, সেগুলোকে বিকৃত করে (বৃটিশ রাজশক্তি) তাদের নাম পাল্টে কোনটাকে ‘সিপাহী বিদ্রোহ’ কোনটাকে ‘ওহাবী আন্দোলন’ বলেছে।”
উক্ত কিতাবের ২০৫ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত আছে, “আলিগড়ের সৈয়দ আহমদ ও বেরেলীর হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ (রহমতুল্লাহি) দু’জনই ইতিহাস প্রসিদ্ধ মানুষ। তবে আলিগড়ের আহমদ সাহেবও পেয়েছেন ইংরেজদের পক্ষ থেকে ‘স্যার’ উপাধী, প্রচুর সম্মান, চাকুরীর পদন্নতি প্রভৃতি। আর বেরেলীর সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ (রহমতুল্লাহি) ইংজেদদের পক্ষ থেকে পেয়েছেন অত্যাচার ও আহত হওয়ার উপহার। আর সব শেষে শত্রুদের চরম আঘাতে তাঁকে শহীদ হতে হয়েছে- ভারতবাসীকে শেষ উপহার হিসেবে দিয়ে গেছেন তিনি তাঁর রক্তমাখা কাটা মাথা মোবারক।
0 Comments:
Post a Comment