একমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম ব্যতীত পৃথিবীর কোন মানুষ মাটির সৃষ্টি নয়, পর্ব-৩

Related imageএকমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম ব্যতীত পৃথিবীর কোন মানুষ মাটির সৃষ্টি নয়, পর্ব-৩


ইসলামের দুশমন, ধর্মব্যবসায়ী, ওহাবী/দেওবন্দী/তাবলিগি/জামাতি/সালাফি সহ সকল বাতিল ফির্কা মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফের অপব্যাখ্যা করে বলে থাকে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নাকি মাটির সৃষ্টি মানুষ।
নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক।

তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য কুরআন শরীফ থেকে কিছু আয়াত শরীফ ভুল ভাবে উপস্থাপন করে।
যেসব আয়াত শরীফে মানুষ মাটির সৃষ্টি ইত্যাদি কথা বলা হয়েছে।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে কুরআন শরীফে ১৪ খানা আয়াত শরীফ আছে যেখানে “মানুষ মাটির সৃষ্টি” এরকম কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উক্ত ১৪ খানা আয়াত শরীফ এর তাফসীর খুলে দেখা যায় “মানুষ মাটির সৃষ্টি” বলতে শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে, আর দুনিয়ার কোন মানুষকেই মাটির সৃষ্টি বলা হয় নাই।
ওহাবীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে আপনাদের জন্য উক্ত ১৪ খানা আয়াত শরীফ এবং এর তফসীর ধারাবাহিক ভাবে উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ !!

(পূর্ববর্তী পোস্টের পর….)

৩ নং আয়াত শরীফ :

মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-

ولقد خلقنا الانسان من سلالة من طين

অর্থ: আমি মানুষ মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।”

[ সূরা মু’মিনুন ১২ নং আয়াত শরীফ]

উক্ত আয়াত শরীফ এর তাফসীরে নির্ভরযোগ্য এবং সর্বজনমান্য মুফাসসিরানে কিরামগন কি বলেছেন দেখুন–>>

→ বিখ্যাত মুফাসসির, আল্লামা আবু আবদুল্লাহ মুহম্মদ ইবনে আহমদ আনছারী আল কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেন-

(ولقد خلقنا الانسان) الانسان هنا ادم عليه اصلاة والسلام قاله وغيره

অর্থ: (নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি) এখানে “ইনসান” বা মানুষ দ্বারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং উন্যান্য মুফাসসিরগন এরূপই বলেছেন।”

দলীল-
√ তাফসীরে কুরতুবী ৬ষ্ঠ খন্ড ১০৯ পৃষ্ঠা।

→ ইমামুল হুদা, আল্লামা ক্বাজী ছানাউল্লাহ পানীপথি রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেন-

(ولقد خلقنا) الجنس (الانسان) او ادم عليه السلام (سلالة من طين)

অর্থ: নিঃসন্দেহে আমি মানুষের জিনস অথবা আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।”

দলীল-
√ তাফসীরে মাযহারী ৬ষ্ঠ খন্ড ৩৬৭ পৃষ্ঠা।

→ বিখ্যাত মুফাসসির, আল্লামা আবু লাইছ সামারকান্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেন-

(ولقد خلقنا الانسان مم سلالة من طين) يعني ادم عليه السلام قال الكلبي ومقاتل

অর্থ: ( নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে (মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি)। ক্বলবী ও মাকাতিল রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের অভিমত এটাই।”

দলীল-
√ তাফসীরে সামারকান্দী ২য় খন্ড ৪০৯ পৃষ্ঠা।

→ ইমামুল মুফসসিরিন, আল্লামা আলাউদ্দীন আলী মুহম্মদ ইবনে ইব্রাহিম বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেন-

(ولقد خلقنا الانسان)… المراد من الانسان هو ادم عليه السلام

অর্থ: (নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ আদম আলাইহিস উনাকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।”

দলীল-
√ তাফসীরে খাযেন ৩য় খন্ড ৩০১ পৃষ্ঠা।

→ ইমামুল মুফাসসিরিন, আল্লামা ইমাম বাগবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

(ولقد خلقنا الانسان) اي ادم عليه السلام

অর্থ: (নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছি (মাটির সারাংশ থেকে)।

দলীল-
√ তাফসীরে বাগবী ৩য় খন্ড ৩০১ পৃষ্ঠা।

→ উক্ত আয়াত শরীফ সম্পর্কে তাফসীরের কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-

(ولقد خلقنا الانسام من سلالة من طين) اور مقرر پيدا كيا همنے ادم كو جو وه سب ادميوی كا باپ هے اچہی کسے اچہی گوند هي هوءي سے

অর্থ: (নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম যিনি সকল মানুষের পিতা, উনাকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।”

দলীল-
√ তাফসীরে মুদ্বিহুল কুরআন ৩৫১ পৃষ্ঠা।

সূতরাং “সূরা মু’মিনুন ১২ নং আয়াত শরীফ” এবং উক্ত আয়াত শরীফ এর ব্যাখ্যা এটাই প্রমান করে যে, সকল মানুষের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনিই সরাসরি মাটি দ্বারা সৃষ্টি। অন্যকোন মানুষ নয়। যে কারনে মুফাসসিরিনে কিরামগন উক্ত আয়াত শরীফে “ইনসান” দ্বারা আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝিয়েছেন।



0 Comments: