সপ্তম উসত্বওয়ানাহ বা স্তম্ভ মুবারক:
مربعة البعير (মুরাব্বায়াতুল বায়ীর) উনার অপর নাম مقام حضرت جبريل عليه السلام (মাক্বামে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম)
কেননা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি অধিকাংশ সময় এ স্থান মুবারকে ওহী নিয়ে আগমণ
করতেন। এ উসত্বওয়ানা বা স্তম্ভ মুবারক এবং উসত্বওয়ানাতুল উফুদ উনার মাঝখানে আর
একটি স্তম্ভ মুবারক রয়েছে যা পবিত্র জানালা মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট। এ স্থান
মুবারকেই হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার দরজা মুবারক ছিলো। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুজরা শরীফ থেকে বের হয়ে এখানে দাঁড়াতেন এবং
হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম, ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম, ইমামুল ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে
লক্ষ করে ইরশাদ মুবারক করতেন।
السلام عليكم اهل البيت )انما يريد الله ليذ هب عنكم الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا.(
অর্থ: আসসালামু আলাইকুম আহলে বাইত শরীফ
আলাইহিমুস সালাম (“হে (মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার) আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালামগণ! মহান আল্লাহ পাক তিনি চান
আপনাদের থেকে (সর্বপ্রকার) অপবিত্রতা অশালীনতা দূর করতে। তিনি আপনাদের
সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান।”) (পবিত্র সূরা আহযাব : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
অর্থাৎ আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম
উনাদের মধ্যে কোন প্রকার অপবিত্রতা নেই বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং
আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন যে, উনাদের মধ্যে কোন প্রকার
অপবিত্রতা, অশালীনতা ইত্যাদি বিন্দু থেকে
বিন্দু মাত্র নেই। সুবহানাল্লাহ!
অষ্টম উসত্বওয়ানাহ বা স্তম্ভ মুবারক :
اسطوانة تهجد (উসত্বওয়ানাতু তাহাজ্জুদ) এ স্থান মুবারকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাহাজ্জুদ নামায
মুবারক আদায় করতেন। এ স্তম্ভ মুবারক সাইয়্যিদাতু নিসায়ী আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা
আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ উনার পশ্চাতে উত্তর দিকে অবস্থিত। বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিছানা মুবারক বিছিয়ে এখানে তাহাজ্জুদ নামায
আদায় করতেন।
উল্লেখিত বর্ণনায় এই সব স্তম্ভ মুবারক
স্থান পেয়েছে। যেগুলো অপরাপর স্তম্ভ মুবারক থেকেও অধিকতর মর্যাদাশীল। অন্যথায়
সমস্ত স্তম্ভ ও সম্পূর্ণ মসজিদুন নববী শরীফ উনার মধ্যেই তো বেমেছাল বরকত ও ফযীলত
বিদ্যমান। এমন কোনো স্তম্ভ মুবারক নেই যেখানে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা ছলাত পড়েননি। পবিত্র বুখারী শরীফ-এ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, আমি বিশিষ্ট ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দেখতাম যে, উনারা প্রত্যেকে ছলাতুল মাগরিবের সময় কোনো না কোনো স্তম্ভ মুবারক সম্মুখে রেখে
দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
روضة من رياض الجنة، (রওয়াজাতুমির রিয়াদ্বিল জান্নাহ)
উনার মধ্যে কোনো কোনো স্তম্ভ মুবারকে উনাদের নাম মুবারকও লেখা রয়েছে। যেমন
উসত্বওয়ানায়ে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম, হযরত ওমর ফারূক আলাইহিস সালাম, হযরত উসমান জুন নূরাইন
আলাইহিস সালাম, হযরত আলী কাররামাল্লাহু
ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম, হযরত সায়ীদ ইবনে যাঈদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের নাম মুবারক লিখিত রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (দিয়াবিল
মাহবুব ১০৩-১৭, জযবুল কুলুব ইলা দিয়ারিল
মাহবুব) (চলবে ইনশাআল্লাহ)
বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে
পবিত্র রওজা শরীফ ও পবিত্র মিম্বর শরীফ উনার ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা এসেছে-
عَنْ حضرت أَبِي بَكْرٍ الْحَضْرَمِى رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ أَبِى عَبْدِ اللَّهِ (عليه السلام) قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ( صلى الله عليه وسلم ) مَا بَيْنَ بَيْتِى وَ مِنْبَرِى رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ
অর্থ : “হযরত আবু বকর আল হাদ্বরামী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত তিনি হযরত আবু আব্দিল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার
থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার পবিত্র হুজরা শরীফ এবং
আমার পবিত্র মিম্বর শরীফ উনাদের মাঝখানে সম্মানিত বেহেশত উনার বাগানসমূহের মধ্য
থেকে একখানা বাগান মুবারক রয়েছে।” (কিতাবুল কাফী, ছহীহুল জামিউছ ছগীর, আল জামিউছ ছগীর ওয়া যিয়াদাহ, ছহীহু ওয়া দ্বয়ীফুল জামিউছ ছগীর ইত্যাদি)
কোন কোন বর্ণনা মুবারকে রয়েছে-
بين قبرى و منبرى
অর্থাৎ আমার পুত:পবিত্র রওজা শরীফ এবং
্আমার মিম্বর শরীফ উনাদের মাঝে সম্মানিত বেহেশত উনার বাগান মুবারক রয়েছে।
আর বুখারী শরীফ উনার মাঝে এসেছে-
منبرى على حوضى
অর্থ : আমার পবিত্র মিম্বর শরীফ আমার
পবিত্র হাউদ্ব উনার উপর। আবার কোন কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মাঝে এসেছে-
وَ مِنْبَرِى عَلَى تُرْعَةٍ مِنْ تُرَعِ الْجَنَّةِ
অর্থ: আমার পবিত্র মিম্বর শরীফ সম্মানিত
বেহেশত উনার দরজায় অথবা বেহেশতের সর্বোচ্চ বাগানে অবস্থিত।
একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
পবিত্র মিম্বর শরীফ উনার উপরে দাঁড়ানো অবস্থায় ইরশাদ মুবারক করলেন, “এখন আমার ক্বদম মুবারক সম্মানিত বেহেশত উনার বাগানসমূহ থেকে এক বাগানে অথবা
দরজা সমূহ থেকে এক দরজায় অবস্থিত।”
আরো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাঝে বর্ণিত
রয়েছে,
أنا عند عقر حوضى
অর্থ : এখন আমি আমার পবিত্র হাউদ্ব উনার
আক্বর এর উপর দাঁড়িয়েছি।” যে স্থান মুবারক দিয়ে পবিত্র হাউদ্ব উনার মধ্যে পানি
মুবারক আসে (অর্থাৎ নালা) উহাকে বলা হয় عقر (আক্বর)।
পবিত্র মিম্বর শরীফ উনার নিকটে মিথ্যা
ক্বসম গ্রহন করার উপর বিশেষভাবে ধমক দেয়া হয়েছে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মুসলমানদের হক্ব
নষ্ট করার জন্যে আমার মিম্বর শরীফ উনার নিকটে মিথ্যা ক্বসম খাবে, সে নিজের অবস্থান দোযখে তৈরী করবে।
অপর এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাঝে
এসেছে-
فعليه لعنة الله و الـملئكة والناس اجمعين
অর্থ : “তার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং সমস্ত মানুষের লা’নত বা অভিশাপ।”
বাস্তবই পবিত্র মিম্বর শরীফ সম্মানিত
বেহেশত উনার অংশবিশেষ বরং সম্মানিত বেহেশত উনার থেকে কোটি কোটি গুণ ফযীলপ্রাপ্ত ও
সম্মানিত। কারণ এই পুতঃপবিত্র মিম্বর শরীফ উনার মধ্যে স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব মহান
আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবস্থান মুবারক করেছেন। তিনি সেখানে বসেছেন।
সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, এই পুতঃপবিত্র মিম্বর শরীফ উনার মর্যাদা আসমান, যমীন, বেহেশত, লৌহ-কলম, সমস্ত কিছু থেকে মর্যাদাশীল ও
ফয়ীলতপূর্ণ। যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সম্মানিত বেহেশত উনার সম্পর্কে পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لا تسمعون فيها لغوا ولا كذابا
অর্থ: “আপনারা সম্মানিত বেহেশত উনার মধ্যে
বাজে ও মিথ্যা কথা শুনতে পাবেন না।” আর যে স্থান মুবারক সম্মানিত বেহেশত উনার থেকে
কোটি কোটি গুণ ফযীলত প্রাপ্ত তাহলে সে স্থান মুবারক উনার মাঝে মিথ্যা বলা কতটুকু
অপরাধ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো এসেছে-
عن حضرت انس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ما بين حجرتى ومصلاى روضة من رياض الجنة
অর্থ : “ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার পবিত্র হুজরা শরীফ এবং আমার পবিত্র মুছাল্লা বা নামায পড়ার স্থান মুবারক
উনাদের মধ্যে সম্মানিত বেহেশত উনার বাগান থেকে একটি বাগান আছে।” (আল মু’জামুল
আওসাত্ব, মাওসুয়াতু আত্বরাফিল হাদীছ, নাজমুল মুনতাছার, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ওয়া মানবাউল ফাওয়াদি)
অর্থাৎ এই স্থান মুবারক সম্মানিত বেহেশত
তথা আসমান যমীন তথা কুল কায়িনাতের সমস্ত কিছু থেকে মর্যাদাপূর্ণ ফযীলতপূর্ণ।
সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য যে, এখানে পবিত্র হুজরা শরীফ বলতে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস
সালাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফ উনাকে বুঝানো হয়েছে। এই পবিত্র হুজরা শরীফ সম্পর্কে
বলা হয়, এই পূত-পবিত্র হুজরা শরীফ উনার মাঝে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওজা শরীফ মুবারক অবস্থিত।
এই পবিত্র হুজরা শরীফ খেজুরের শাখা
প্রশাখা খুঁটির তৈরি ছিল। তেমনিভাবে অপরাপর পবিত্র হুজরা শরীফও খেজুর খাছ মুবারকের
শাখা-প্রশাখা দ্বারা নির্মিত ছিলো। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত-পবিত্র রওজা শরীফ যাঁর মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত বলার অপেক্ষাই রাখে না। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম মুবারকে যে
ধুলা-বালি ও মাটি মুবারক লেগেছে এবং লেগে রয়েছে উনাদের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে
‘ফতওয়ায়ে শামী’ ৩য় খ- জিয়ারত অধ্যায়ে উল্লেখ আছে-
ان التربة التى اتصلت الى اعظم النبى صلى الله عليه وسلم افضل من الارض والسماء حتى العرش العظيم
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারক উনার
সাথে যে মাটি মুবারক স্পর্শ করেছে তা আসমান-যমীন, আরশ-কুরসি, লওহো, কলম তথা সকল কিছুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ।”
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে যা কিছু
সংশ্লিষ্ট হয়েছে তা মার্যাদময় ও সম্মানিত হয়েছে। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়গুলো কুল-কায়িনাতের সমস্ত বিষয় থেকে
ব্যতিক্রম। কারণ তিনি কারো মতো নন এবং উনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কারো মতো নয়।
এজন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক হয়েছে-
لست كاحدكم
অর্থ: “আমি তোমাদের কারো মতো নই।” অর্থাৎ
তিনি সকলের থেকে উর্ধ্বে। যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে বাহরুল উলূম, শাইখুল মাশায়িখ, হযরত আল্লামা ইবনে সাবা
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “শিফাউছ ছুদুর” কিতাবে লিখেছেন-
ان ظله كان لا يقع على الارض لانه كان نورا فكان انا مشى فى الشمس او القمر لا ينظر له ظل.
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনার পবিত্র ছায়া মুবারক যমীনে পড়তো না। কেননা তিনি
ছিলেন পবিত্র নূর মুবারক।”
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন নূরে মুজাসসাম অর্থাৎ আপাদমস্তক
সম্মানিত নূর মুবারক দ্বারা সৃষ্টি হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর উনার সমস্ত কিছুই
পবিত্র থেকে পবিত্রতম। এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা আল কাওছার শরীফ উনার ১ নম্বর পবিত্র
আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
انا اعطنك الكوثر
অর্থ : “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার মুবারক
হাদিয়া করেছি।” এই কাওছার লফয মুবারক বা শব্দ মুবারকের লক্ষ কোটি অর্থ রয়েছে। তবে
প্রধানতম অর্থ মুবারক দুটি। এক. কাওছার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সমস্ত প্রকার ভালাই
কল্যাণকর বিষয় অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সঙ্গে যে বিষয়গুলো সম্পৃক্ত হয়েছে তা উৎকৃষ্ট থেকে উৎকৃষ্টতম হয়ে
গেছে। যেমন আমরা উল্লেখ করেছি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পুতঃপবিত্র মাটি মুবারক।
অনুরূপভাবে আরো উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘাম
মুবারকের ঘ্রাণ ছিলো মেশ্ক ও গোলাপের চেয়েও অধিক সুঘ্রাণযুক্ত। যা বরকতের জন্য
‘আতর’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت انسى رضى الله تعالى عنه قال دخل علينا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال عندنا فعرق وجاءت امى بقارورة فجعلت تسلت العرق فيتيقظ النبى صلى الله عليه وسلم فقال يا ام سلميم ما هذا الذى تصنعين قالت هذا عرق نجعله لطيبنا وهو اطيب الطيب.
অর্থঃ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের ঘরে আগমণ
করলেন এবং কায়লুলা বা দ্বিপ্রহরের নিদ্রা মুবারক করলেন। উনার পবিত্র শরীর মুবারক
থেকে ঘাম মুবারক বের হতে লাগল। আমার মা শিশি নিয়ে এলেন এবং ঘাম মুবারক তাতে ভরতে
লাগলেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাগ্রত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন হে
উম্মে সুলাইম! কি করছেন? তিনি বললেন এ ঘাম মুবারক
সুগন্ধি হিসেবে আমরা ব্যবহার করি কেননা এটা অত্যন্ত উৎকৃষ্ট সুগন্ধি মুবারক।
(মুসলিম শরীফ) অথচ অন্যান্য মানুষের ঘাম কি এরূপ? কখনই নয়।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
শরীর মুবারকের বাইরে ও অভ্যন্তরে যা কিছু রয়েছে সবকিছুই পবিত্র থেকে পবিত্রতম।
শুধু তাই নয়, পবিত্রতা দানকারী ও জাহান্নাম
থেকে নাজাত পাওয়ার উসীলা। যেমন, রক্ত মুবারক ও ইস্তিঞ্জা
মুবারক।
ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত
আছে যে, এ পবিত্র রক্ত মুবারক ও ইস্তিঞ্জা মুবারক যারা পান করেছেন তারা এত পবিত্রতা
অর্জন করেছেন যে, উনাদের জন্য জাহান্নাম হারাম
হয়ে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত
রয়েছে-
عن حكيمة بنت اميمة بنت دقيقة عن امها انها قالت: كان النبى صلى اله عليه وسلم يبول فى قدح عيدان ثم يرفع تحت سريره فبال فيه ثم جاء فاراده فاذا القدح ليس فيه شيئ فقال لامرأة يقال لها بركة، كانت تخدم ام حبيبة جائت بها من ارض الحبشة اين البول الذى كان فى القدح؟ قالت شربته، فقال لقد احتظرت من النار بحظار.
অর্থঃ “হযরত হাকীমা বিনতে আমীমা বিনতে
দাক্বীক্বা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার মাতা হযরত আমীমা বিনতে দাক্বীক্বা রহমতুল্লাহি
আলাইহা উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি বলেছেন, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি একটি পাত্রে পেশাব মুবারক রাখলেন অতঃপর চকি মুবারকের নিচে রেখে দিলেন। এরপর
তার একটা ব্যবস্থা করার ইচ্ছা করলে এসে দেখলেন পাত্রের মধ্যে কিছু নেই। তখন তিনি
বারাকা নামের এক মহিলা, যে হাবশা হতে হযরত উম্মু
হাবীবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-উনার খাদিমা হিসেবে এসেছিলেন, উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, পাত্রের মধ্যে যে পেশাব
মুবারক ছিল তা কোথায় গেল? উত্তরে তিনি বললেন, আমি উহা পান করে ফেলেছি। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, অবশ্যই আপনি নিজেকে জাহান্নাম
থেকে নিরাপদ রাখলেন।” সুবহানাল্লাহ!
(দালাইলুন্ নুবুওওয়াহ্ শরীফ ২য় জিঃ ৬৫৪, ৬৫৫ পৃষ্ঠা, আত্ ত্ববারানী ফিল্ মু’জামিল
কবীর শরীফ ২৪ জিঃ ১৮৯ পৃষ্ঠা, ২৫ জিঃ ৮৯ পৃষ্ঠা, আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনু হাব্বান শরীফ পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ১৪১৩, আল্ মুসতাদরিক লিল্ হাকিম শরীফ ১ম জিঃ ২৭২ পৃষ্ঠা ৫৯৩ নং হাদীছ ৪র্থ জিঃ ৭১
পৃষ্ঠা ৬৯১২ নং হাদীছ শরীফ, আদ্দারু কুতনী শরীফ, আবূ ইয়ালা শরীফ, মুসনাদে আব্দুর রাযযাক শরীফ, আল খাছায়িছুল কুবরা লিস্ সুয়ূতী শরীফ ১ম জিঃ ১২২ পৃষ্ঠা)
কিন্তু অন্যান্য মানুষের বেলায় কি তা
প্রযোজ্য? কস্মিনকালেও নয়। বরং কেউ যদি
সাধারণ মানুষের রক্ত বা ইস্তিঞ্জা পান করে তবে সে হারাম পান করলো ও কবীরা গুনাহে
গুনাহ্গার হলো। আর যদি তা হালাল মনে করে তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কেননা তা সম্পূর্ণ
হারাম।
কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
সঙ্গেও যা কিছু সংশ্লিষ্ট হয়েছে তার মর্যাদা-মর্তবা বেমেছাল থেকে বেমেছালতম হয়েছে।
অতএব পবিত্র মদীনা শরীফ, পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ, পবিত্র হুজরা শরীফ, পবিত্র মিম্বর শরীফ, পবিত্র উসত্বওয়ানাহ বা স্তম্ভ শরীফ, পবিত্র মাটি মুবারক ইত্যাদি
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
প্রতিটি স্পর্শ/ধন্য ও সংশ্লিষ্ট বিষয় মুবারক মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন।
সুবহানাল্লাহ!
সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ
মুজাদ্দিদ মুজাদ্দিদে আ’যম, গাউছুল আ’যম, কুতুবুল আলম, মুহইস সুন্নাহ, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত, ওয়াত ত্বরীক্বত সাইয়্যিদুল
আওলিয়া, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক করতে করতে বলেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক নন এছাড়া যত
মর্যাদা-মর্তবা, ছানা-ছিফত, ফাযায়িল-ফযীলত রয়েছে সমস্ত কিছুর অধিকারী হচ্ছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পবিত্র মদীনা শরীফ
সমস্ত কায়িনাতের সমস্ত স্থান থেকে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ, ফযীলতপূর্ণ। কারণ এই যমীনে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
চলা-ফেরা মুবারক করেছেন এবং এখনো এ পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে শায়িত রয়েছেন।
সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে পবিত্র
মদীনা শরীফ এবং পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ উনাদেরকে মুহব্বত এবং তা’যীম-তাকরীম করার
তাওফীক দান করুন। আমীন।
0 Comments:
Post a Comment