পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হযরত
মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে হিজরত করার অনুমতি
দান:
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার
হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হিজরত মুবারক উনার
স্থান সৃষ্টির শুরু থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছিলেন পবিত্র মদীনা শরীফ। যখন পবিত্র
মক্কা শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার হযরত হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর কাফির মুশরিককরা যুলুম
নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিলো তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র মদীনা
শরীফ উনার মধ্যে হিজরত করার নির্দেশ মুবারক দিলেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت الزهرى رحمة الله عليه عن حضرت عروة رحمة الله عليه عن ام الـمؤمنين حضرت عائشة صديقة عليها السلام قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- وهو يومئذ بمكة- للمسلمين قد أريت دار هجرتكم، أريت سبخة ذات نخل بين لابتين. فهاجر من هاجر قبل المدينة حين ذكر ذلك رسول الله صلى الله عليه وسلم، ورجع إلى الـمدينة من كان هاجر إلى أرض الحبشة من الـمسلين.
অর্থ: হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি হযরত উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আর তখন তিনি ছিলেন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে। আমাকে দেখানো হয়েছে হিজরত
মুবারক উনার ভূমি বা স্থান মুবারক। জনবহুল এলাকা এবং খর্জুর বৃক্ষ পরিবেষ্টিত
কৃষ্ণ প্রস্তরময় দু’টি অঞ্চলের মধ্যেখানে তা অবস্থিত। আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন একথা বলেন, তখন কিছু সংখ্যক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনার
অনুমতি নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিকে হিজরত করেন এবং মুসলমান উনাদের মধ্যে
যাঁরা হাবশায় হিজরত করেছিলেন, উনাদের মধ্যে কেউ কেউ ফিরে
এসে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হিজরত করেন। (বুখারী শরীফ)
উল্লেখ্য যে, যেভাবে আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ উনার সূচনা হয়েছিলো সত্য স্বপ্ন মুবারক উনার
মাধ্যমে, তেমনিভাবে হিজরত মুবারক উনার সূচনাও হয় সত্য স্বপ্ন মুবারক উনার মাধ্যমে।
প্রথমে আনুষ্ঠানিকভাবে আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নযোগে হিজরতের স্থান মুবারক দেখানো
হয়েছিলো যে তিনি একটি খেজুর বাগান সমৃদ্ধ সবুজ-শ্যামল ভূমির দিকে হিজরত করছেন।
এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক তিনি ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে পবিত্র মদীনা শরীফ
নির্দিষ্ট করে দেন, তখন তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে হিজরতের অনুমিত দান করেন। (সীরাতুল মুস্তফা
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন- মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন জিহাদের অনুমতি দান করলেন নি আয়াত শরীফ উনার
দ্বারা-
أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ . الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِمْ بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّا أَن يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ
অর্থ: জিহাদের অনুমতি দেয়া হলো উনাদেরকে, যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ উনাদের উপর যুলুম করা হয়েছে। আর মহান আল্লাহ পাক
তিনি নিশ্চয়ই উনাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম, উনাদেরকে উনাদের বাড়িঘর থেকে
অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে শুধু এ কারণে যে, উনারা বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের
রব তায়ালা। (পবিত্র সূরা শরীফ হজ্জ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৯)
মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন জিহাদের অনুমতি
দান করেন, পবিত্র ইসলাম উনার ব্যাপারে
হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আখিরী নবী সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুকরণ ও অনুসরণ
করে যাচ্ছিলেন।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দেন এবং উনার হযরত
মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সাহায্য করেন এবং
অনেক হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হযরত আনছার
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করেন তখন
পবিত্র মক্কা শরীফ বসবাসরত মুসলমানগণ উনাদেরকে পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত করার
নির্দেশ দেন।
হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য বলেন। এ নির্দেশে তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের জন্য এমন কিছু ভাই ও এমন স্থানের ব্যবস্থা
করেছেন, যেখানে আপনারা নিরাপত্তা লাভ করবেন। ফলে হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা দলে দলে পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত করতে লাগলেন।
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার রব মহান
আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক উনার অপেক্ষায় পবিত্র মক্কা শরীফ অবস্থান করতে
থাকেন। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদের মধ্যে কুরাইশের বনূ মাখযুম শাখা থেকে যিনি সর্বপ্রথম হিজরত করেন তিনি
ছিলেন হযরত আবু সালামা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল আসাদ ইবনে হিলাল ইবনে আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর ইবনে মাখযুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। পবিত্র আকাবা উনার বাইয়াতের এক বছর
পূর্বে তিনি হিজরত করেন। হাবশা থেকে পবিত্র মক্কা শরীফ ফিরে আসার পর কুরাইশ কাফির
মুশরিকদের নির্যাতনের মুখে তিনি হাবশায় পুনরায় ফিরে যাওয়ার সংকল্প করেন। পবিত্র
মদীনা শরীফ শহরে কিছু মুসলমান ভাই অবস্থান করছেন বলে জানতে পেরে তিনি পবিত্র মদীনা
শরীফ হিজরত করার ইচ্ছা পোষণ করেন।
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ, ১৬৯ ও ১৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ হয়েছে-
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه فحدثنى أبى عن حضرت سلمة بن عبد الله بن عمر بن أبى سلمة رضى الله تعالى عنها عن جدته حضرت أم سلمة رضى الله تعالى عنها قالت لـما أجمع حضرت أبو سلمة رضى الله تعالى عنه الخروج إلى المدينة رحل لى بعيره ثم حملنى عليه وجعل معى ابنى حضرت سلمة بن أبى سلمة رضى الله تعالى عنه فى حجرى، ثم خرج يقود فى بعيره، فلما رأته رجال بنى الـمغيرة قاموا اليه فقالوا هذه نفسك غلبتنا عليها، أرأيت صاحبتنا هذه علام نتركك تسير بها فى البلاد؟ قالت فنزعوا خطام البعير من يده وأخذونى منه، قالت وغضب عند ذلك بنوعبد الاسد رهط أبى سلمة وقالوا والله لانترك ابننا عندها إذ نزعتموها من صاحبنا، قالت فتجاذبوا ابنى سلمة بينهم حتى حلعوا يده، وانطلق به بنو عبد الاسد وحبسنى بنو الـمغيرة عندهم وانطلق زوجى حضرت أبو سلمة رضى الله تعالى عنه إلى الـمدينة،
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন, আমার পিতা হযরত সালামা ইবনে
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে তদীয় দাদী হযরত উম্মে
সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণনা করে বলেন, হযরত আবূ সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত
করার সিদ্ধান্ত নেন তখন তিনি আমার জন্য উনার সাওয়ারী প্রস্তুত করেন এবং আমাকে তার
পিঠে আরোহন করান এবং আমার পুত্র হযরত সালামা ইবনে আবী সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনাকে আমার কোলে দেন।
তারপর আমাকে নিয়ে বের হয়ে উনার সাওয়ারী
চালনা করেন। বনূ মুগীরার লোকেরা উনাকে দেখে উনার দিকে তেড়ে এসে বলে, আপনি নিজেতো আমাদের থেকে হিজরত করে যাচ্ছেন, যা হোক, কিন্তু আমাদের কন্যাকে নিয়ে
কি কারণে আমরা আপনাকে দেশে দেশে ছফর করতে দেবো? হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, তাই তারা উনার হাত মুবারক থেকে রশি ছিনিয়ে নেয় এবং উনার নিকট থেকে আমাকে নিয়ে
নেয়।
তিনি বলেন, এ সময় বনূ আব্দুল আসাদ অর্থাৎ আবু সালামা উনার বংশের লোকেরা ক্রুদ্ধ হয়ে বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমরা আমাদের বংশের সন্তানকে তার কাছে থাকতে দেবো
না। তোমরা তো আমাদের সঙ্গীর নিকট থেকে উনাকে ছিনিয়ে নিয়েছো। হযরত উম্মু সালামা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহা তিনি বলেন, আমার পুত্র হযরত সালামা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নিয়ে তারা পরস্পর টানা হেঁচড়া করে এবং শেষ
পর্যন্ত তারা উনার হাতকে ছাড়িয়ে নেয়। বনূ আব্দুল আসাদ উনাকে নিয়ে চলে যায় এবং বনূ
মুগীরা আমাকে তাদের কাছে আটকিয়ে রাখে এবং আমার স্বামী হযরত আবূ সালামা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একা পবিত্র মদীন শরীফ উনার অভিমুখে রওয়ানা হলেন।
قالت ففرق بينى وبين ابنى وبين زوجى. قالت فكنت أخرج كل غداة فاجلس فى الابطح فما أزال أبكى حتى أمسى- سنة أوقريبا منها- حتى مربى رجل من بنى غمى أحد بنى الـمغيرة فرأى ما بى فرحمنى، فقال لبنى الـمغيرة ألا تخرجون من هذه الـمسكينة؟ فرقنم بينها وبين زوجها وبين ولدها؟ قالت فقالوا لى الحقى بزوجك إن شئت. قالت فرد بنو عبد الاسد إلى عند ذلك ابنى، قالت فرتحلت بعيرى، ثم أخذت ابنى فوضعته فى حجرى، ثم خرجت أريد زوجى بالمدينة، قالت وما معى أحد من خلق الله. حتى إذا كنت بالتنعيم لقيت حضرت عثمان بن طلحة بن أبى طلحة رضى الله تعالى عنه فقال الى أين يا ابنة أبى أمية؟ قلت أريد زوجى بالمدينة، قال أو ما معك أحد؟ قلت ما معى أحد إلا الله وبنى هذا،
তিনি বলেন, এভাবে তারা আমার, আমার স্বামী এবং সন্তানের
মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে দেয়। তিনি বলেন, প্রতিদিন ভোরে আমি বের হতাম
এবং প্রান্তরে গিয়ে কান্নাকাটি করতাম। এক বছর বা তার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত এ
অবস্থা চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বনূ মুগীরার মধ্য থেকে আমার চাচাতো ভাই এসে আমার
অবস্থা দেখে আমার প্রতি দয়া পরবশ হয়ে বনূ মুগীরাকে বলে যে, এ অসহায় নারী উনার প্রতি যুলুম-অবিচার থেকে তোমরা কি নিবৃত্ত হবে না? উনার স্বামী এবং সন্তানের মধ্যে তোমরা তো বিচ্ছেদ ঘটালে। তিনি বলেন, তখন তারা আমাকে বলে আপনি ইচ্ছা করলে আপনার স্বামী উনার সঙ্গে মিলিত হতে পারেন।
তিনি বলেন, এসময় আব্দুল আসাদ গোত্রের লোকজন আমার সন্তানকে আমার নিকট ফিরিয়ে দেয়। তিনি
বলেন, এ সময় আমার উটনী রওয়ানা হয় এবং আমি আমার সন্তানকে কোলে তুলে নেই। তারপর আমার
স্বামী উনার উদ্দেশ্যে আমি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিকে রওয়ানা হই এবং এ সময় মহান
আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টিকুলের কেউই আমার সঙ্গে ছিলো না। এমনকি আমি যখন তানয়ীন-এ এসে
পৌঁছি, তখন বনূ আদি গোত্রের হযরত উছমান ইবনে ত্বলহা ইবনে আবূ ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়।
বর্ণনাকারী উনার নিকট বর্ণনা করেছেন, হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাকে বললেন, হে আবূ উমাইয়্যার কন্যা! কোথায় যাচ্ছেন? আমি বললাম, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে আমার স্বামীর নিকট যেতে চাই। তিনি বললেন, আপনার সঙ্গে আরো কেউ আছে কি? আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং আমার এ সন্তান ছাড়া আমার সাথে আর কেউ নেই।
فقال والله مالك من مترك. فاخذ بخطام البعير فانطلق معى يهوى بى فوالله ما صحبت رجلا من العرب قط أرى أنه كان أكرم منه، كان إذا بلغ المنزل أناخ بى ثم استأخر عنى حتى إذا نزلت استأخر ببعيرى فحط عنه ثم قيده فى الشجر ثم تنحى الى شجرة فاضطجع تحتها، فاذا دنا الرواح قام إلى بعيرى فقدمه فرحله ثم استأخر عنى وقال اركبى فاذا ركبت فاستويت على بعيرى أتى فاخذ بخطامه فقادنى حتى ينزل بى، فلم يزل يصنع ذلك بى حتى أقدمنى المدينة فلما نظر إلى قرية بنى عمرو ابن عوف بقباء قال زوجك فى هذه القرية- وكان حضرت أبو سلمة رضى الله تعالى عنه بها نازلا- فاد خليها على بركة الله. ثم انصرف راجعا إلى مكة.
তখন তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমিতো আপনাকে একা ছাড়তে পারি না। এ বলে তিনি আমার
উটের লাগাম ধরে আমার সঙ্গে চলতে থাকেন। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আরবের যেসব
লোকের সঙ্গে আমি চলেছি, তাদের মধ্যে উনার চেয়ে বেশি
ভদ্র কাউকে দেখিনি আমি। কোনো মনযিলে উপনীত হলে তিনি আমার জন্যে উটকে বসাতেন এবং
নিজে পিছনে সরে যেতেন। আমি নিচে অবতরণ করলে তিনি সাওয়ারী থেকে হাওদাটি নামাতেন এবং
দূরে গাছের সঙ্গে বেঁধে তিনি নিচে বিশ্রাম গ্রহণ করতেন। রওয়ানা করার সময় এলে তিনি
উটের নিকট এগিয়ে আসতেন, উটকে এগিয়ে দিতেন এবং উটকে
তৈরি করে তিনি নিজে দূরে সরে যেতেন এবং আমাকে বলতেন, আপনি সাওয়ার হন।
আমি উটের পিঠে ঠিক মতো সাওয়ার হয়ে বসলে
তিনি এসে উটের লাগাম ধরতেন এবং আমাকে নিয়ে তিনি আগে আগে চলতেন। এভাবে তিনি আমাকে
আরেক মনযিলে নিয়ে যেতেন। আমাকে মদীনা শরীফ উনার মধ্যে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তিনি
আমার সঙ্গে এরূপই করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত কুবায় বনূ আমর ইবনে আওফের জনপদের প্রতি
সৃষ্টি পড়লে তিনি বলে উঠতেন। এ জনপদেই আপনার স্বামী রয়েছেন। আর হযরত আবূ সালামা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সে জনপদেই অবস্থান করছিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার
বরকত ও কল্যাণ নিয়ে আপনি এ জনপদে প্রবেশ করুন। একথা বলেই তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ
উনার পথে রওয়ানা হয়ে যান।”
আর বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৭২ পৃষ্ঠায়
আরো উল্লেখ রয়েছে-
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه ثم كان أول من قدمها من المهاجرين بعد حضرت أبى سلمة عامر بن ربيعة رضى الله تعالى عنه حليف بنى عدى، معه امرأته حضرت ليلى بنت أبى حثمة العدوية رضى الله تعالى عنها ثم حضرت عبد الله بن جحش بن رئاب بن يعمر بن صبرة ابن مرة بن كبير بن غنم بن دودان بن أسد بن خزيمة رضى الله تعالى عنه حليف بنى أمية بن عبد شمس احتمل بأهله وبأخيه حضرت عبد أبى احمد رضى الله تعالى عنه، اسمه عبد كماذ كره حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه وقيل ثمامة. قال حضرت السهيلى رحمة الله عليه ولاول أصح. وكان حضرت أبو احمد رضى الله تعالى عنه رجلا ضرير البصر وكان يطوف مكة أعلاها وأسفلها بغير قائد، وكان شاعرا وكانت عنده الفارعة بنت أبى سفيان بن حرب، وكانت أمه حضرت أميمة بنت عبد الـمطلب بن هاشم رضى الله تعالى عنها. فغلقت دار بنى جحش هجرة،
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আবূ সালামা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পর প্রথম যে ব্যক্তি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিকে
হিজরত করেন তিনি হলেন বনী আদীর মিত্র হযরত আমির ইবনে রাবীয়াহ। উনার সঙ্গে উনার
আহলিয়া হযরত লায়লা বিনতে আবূ হাছমা আল আদবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনিও
ছিলেন।
এরপর বনূ উমাইয়া ইবনে শামস উনার মিত্র
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ ইবনে রিয়াব ইবনে ইয়ামার ইবনে সুবরা ইবনে কাবীর ইবনে
গানাম দূদান ইবনে আসাদ ইবনে খুবায়মা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি উনার
পরিবার-পরিজন এবং উনার ভাই হযরত আবদ আবূ আহমদ উনাকেও সঙ্গে নিয়ে হিজরত করেন।
হযরত
ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা মতে উনার নাম মুবারক ছিলো আবদ। কারো
কারো মতে উনার নাম মুবারক ছিলো ছুমামা। হযরত সুহায়লী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, প্রথম অভিমতই বিশুদ্ধতর, আর আবূ আহমদ ছিলেন দৃষ্টি
শক্তিহীন ব্যক্তি, কিন্তু কোনো দিশারী সহকারী
ব্যতীতই তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার উচ্চ ভূমি নি¤œভূমি ঘুরে বেড়াতেন।
তিনি একজন কবিও ছিলেন। উনার আহলিয়া ছিলেন
হযরত আবূ সুফিয়ান ইবনে হারব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কন্যা হযরত ফারিআহ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। আর উনার মাতা ছিলেন হযরত উমাইমা বিনতে আব্দুল
মুত্তালিব ইবনে হাশিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। হিজরত করার ফলে বনূ জাহশের
ঘরবাড়ি জনশূন্য হয়ে পড়ে।
فمربها عتبة بن ربيعة وحضرت العباس بن عبد الـمطلب عليه السلام وأبو جهل بن هشام وهم مصعدون إلى أعلى مكة، فنظر اليها عتبة تخفق أبوابها يبابا ليس بها ساكن، فلما راها كذلك تنفس الصعداء وقال:
وكل دار وأن طالت سلامتها + يوما ستدر كها النكباء والجوب.
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه فنزل حضرت أبو سلمة رضى الله تعالى عنه وحضرت عامر بن ربيعة رضى الله تعالى عنه وبيعة وبنوجحش بقباء على مبشر بن عبد المنذر ثم قدم الـمهاجرون ارسالا.
একদিনের ঘটনা। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার
উচ্চ ভূমি দিয়ে যাচ্ছিলো উতবা ইবনে রাবীয়া, হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল
মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আবূ জাহল ইবনে হিশাম। উতবা দেখতে পেলো যে, বনূ জাহাশের বসতবাড়ির দরজা মুবারক বন্ধ। তাতে কেউ বসবাস করে না। এ অবস্থা দেখে
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আরোহনকারী বলে উঠে
وكل دار وأن طالت سلامتها + يوما ستدر كها النكباء والجوب.
“যেকোনো গৃহ যত দীর্ঘ দিন তা নিরাপদে
থাকুক না কেন একদিন বায়ূপ্রবাহ তা গ্রাস করবে, আচ্ছন্ন করবে তাকে ধ্বংসলীলা।”
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন, এরপর হযরত আবূ সালামা আমির
ইবনে রবীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং বনূ জাহাশ কুবায় মুবাশশির রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা হযরত মুবাশশির ইবনে আবদে মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার নিকট অবস্থান করতে থাকেন। এরপর হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা দলে দলে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে আগমন করতে থাকেন।
قال وكان بنوغنم بن دودان أهل اسلام قد أوعبوا إلى الـمدينة هجرة رجالهم ونساؤهم وهم حضرت عبد الله بن جحش رضى الله تعالى عنه، وأخوه حضرت أبو احمد رضى الله تعالى عنه، و حضرت عكاشة بن محصن رضى الله تعالى عنه، وحضرت شجاع رضى الله تعالى عنه، و حضرت عقبة ابنا وهب رضى الله تعالى عنه، وحضرت أربد بن جميرة رضى الله تعالى عنه و حضرت منقذ بن نباتة رضى الله تعالى عنه، وحضرت سعيد بن رقيش رضى الله تعالى عنه، و حضرت محرز بن نضلة رضى الله تعالى عنه، و حضرت زيد بن رقيش رضى الله تعالى عنه، وحضرت محرز بن نضلة رضى الله تعالى عنه، وحضرت زيد بن رقيش رضى الله تعالى عنه، وحضرت قيس بن جابر رضى الله تعالى عنه، و حضرت عمرو بن محصن رضى الله تعالى عنه، وحضرت مالك بن عمرو رضى الله تعالى عنه، و حضرت صفوان بن عمرو رضى الله تعالى عنه، و حضرت ثقف بن عمرو رضى الله تعالى عنه، و حضرت ربيعة بن أكثم رضى الله تعالى عنه، و حضرت الزبير بن عبيدة رضى الله تعالى عنه، و حضرت تمام بن عبيدة رضى الله تعالى عنه، و حضرت سخيرة بن عبيدة رضى الله تعالى عنه، و حضرت محمد بن عبد الله بن جحش رضى الله تعالى عنه، ومن نسائهم حضرت زينب بنت جحش رضى الله تعالى عنها، و حضرت أم حبيب بنت جحش رضى الله تعالى عنها، و حضرت جدامة بنت جندل رضى الله تعالى عنها، و حضرت أم قيس بنت محصن رضى الله تعالى عنها، و حضرت أم حبيب بنت ثمامة رضى الله تعالى عنها، وحضرت امنة بنت رقيش رضى الله تعالى عنه، و حضرت سخبرة بنت ثميم رضى الله تعالى عنها،
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন হযরত বনূ গানাম ইবনে দূদান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ইসলাম
গ্রহণ করেন এবং উনাদের নারী-পুরুষ উনারা হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে
আগমন করেন। আর উনারা ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনার ভাই হযরত আবূ আহমদ উক্কাশা ইবনে মিহসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ওয়াহব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পুত্র হযরত শুজা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু ও হযরত উফবা আরবাদ ইবনে জামীরার মুনফিয ইবনে নাবাতা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু, হযরত সায়ীদ ইবনে রাকীশ মিহরায়
ইবনে নাযলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত যায়িদ ইবনে ফাকীশ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত কায়স ইবনে জাবির
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আমর ইবনে মিহসান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সাফওয়ান ইবনে আমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সাফাফ ইবনে আমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত রাবীআ ইবনে আকছুম যুবায়র ইবনে উবায়দা তামাম ইবনে
উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সাখবারা ইবনে উবায়দা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ
ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনাদের নারীদের মধ্যে হযরত যাইনাব বিনতে
জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত বিনতে জাহাশ উম্মে হাবীব
বিনতে জাহাশ জুদামা বিনতে জন্দল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত উম্মু কায়স বিনতে মিহসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত উম্মু হাবীব বিনতে সুমাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত আমিনা বিনতে রাকীশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং হযরত সখিবারা বিনতে
তামীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা।
قال حضرت أبو احمد بن جحش رضى الله تعالى عنه فى هجرتهم إلى المدينة :
উনাদের পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত প্রসঙ্গে
হযরত আবূ আহমদ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিম্নোক্ত কবিতা রচনা
করেন।
ولـما رأتنى حضرت أم احمد رضى الله تعالى عنها غديا- بذمة من أخشى بغيب وأرهب
যে সত্তা মুবারক উনাকে না দেখে ভয় করি
উনার পানে ভোরে রওয়ানা হওয়ার সময় হযরত উম্মে আহমদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি
যখন আমাকে দেখে ফেলেন।
تقول فاما كنت لا بد فاعلا – فيم بنا البلدان ولننأ يثرب
তখন তিনি বলেন, আপনাকে যদি হিজরত করতেই হয়, তবে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে
দূরে সরে অপর কোনো নগরে আমাদেরকে নিয়ে চলুন।
فقلت لـها ما يثرب بمظنة – وما يشأ الرحمن فالعبد يركب
তাকে আমি বললাম, পবিত্র মদীনা শরীফ আনন্দ ও আকাঙ্খার স্থান নয়, বারে তায়ালা রহমান তিনি যা চান ইনসান বা মানুষ তো সেদিকেই ধাবিত হয়।
إلى الله وجهى والرسول ومن يقم – إلى الله يوما وجهه لا يخيب
মহান আল্লাহ পাক ও আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে আমার মুখ ফিরালাম আর যে মহান আল্লাহ পাক
উনার দিকে মুখ ফিরাবে সে কোনো দিন ব্যর্থ মনোরথ হবে না।
فكم قدتر كنا من حميم مناصح – وناصحة تبكى بدمع وتندب
কত উপদেশদাতা বন্ধুকে আমরা বিসর্জন দিয়েছি, কত উপদেশদাতা নারীকে বিসর্জন দিয়েছে, অশ্রুজলে ক্রন্দনরত আর
বিলাপরত অবস্থায়।
ترى أن وترا نائيا عن بلادنا – ونحن نرى أن الرغائب نطلب
তারা মনে করতো যুলুম আমাদের শহর থেকে দূরে
(তাই হিজরত নিষ্প্রয়োজন) নাঊযুবিল্লাহ! আর আমরা মনে করি, মূল্যবান বস্তুই আমরা সন্ধান করছি।
دعوت بنى غنم لحقن دمائهم – وللحق لما لاح للناس ملحب
আমি বনূ গুনামকে আহবান জানিয়েছি তাদের
রক্তের হিফাযতের, তার সত্যের তরে, যখন তার প্রকাশ পায় জনগণের নিকট স্পষ্টভাবে।
أجابوا بحمد الله لـما دعاهم – إلى الحق داع والنجاح فاوعبوا
যখন উনাদের ডাকা হয়, উনারা আলহামদুলিল্লাহ বলে সাড়া দেয়। যখন আহবান করে উনাদেরকে আরোহণকারী সত্যের
দিকে, সাফল্যের দিকে, তখন তারা সাড়া দেয়।
وكنا وأصحاب لنا فارقوا الهدى – أعانوا علينا بالسلاح وأجلبوا
আমরা এবং আমাদের বন্ধুগণ আমরা ছিলাম দূরে
হিফাজত থেকে। তারা আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে এবং হামলা চালায়।
كفوجين إما منهما فموفق – على الحق مهدى وفوج معذب
উনারা ছিলেন যেন দুটি বাহিনী একটি ছিলো
তাওফীক ধন্য হিদায়েতের পানে, আর অপর বাহিনী ছিলো আযাবে
নিপতিত।
طغوا وتمنوا كذبة وأزلهم – عن الحق ابليس فخابوا وخيبوا
একটি বাহিনী বিদ্রোহ করে আর মিথ্যা আশা
করে আর ইবলিস তাদের পদস্খলিত করে। ফলে তারা হয় ব্যর্থ মনোরথ।
ورعنا إلى قول النبى حضرت محمد صلى الله عليه وسلم – فطاب ولاة الحق منا وطيبوا
আমরা প্রত্যাবর্তনকারী আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাণীর প্রতি। ফলে
সত্যের সাধকরা হয় আমাদের প্রতি প্রসন্ন।
نمت بارحام اليهم قريبة – ولا قرب بالارحام إذ لا تقرب
আমরা তাদের সঙ্গে নৈকট্যের সম্পর্ক স্থাপন
করি। আর আত্মীয়তার সম্পর্কের তোয়াক্কা না করলে তা মজবুত হয় না। এমন সম্পর্ক কোনো
কাজেও আসে না।
فأى ابن أخت بعدنا يأمننكم – وأية صهر بعد صهرى يرقب
সুতরাং আমাদের পর কোন বোনের ছেলে তোমাদের
থেকে নিরাপদ থাকবে, আর আমার জামাই হওয়ার পর কোন
জামাইয়ের প্রতীক্ষায়।
ستعلم يوما أينا إذ تزايلوا – وزيل أمر الناس للحق أصوب.
একদিন তুমি জানতে পারবে আমাদের মধ্যে কে
সত্যের নিকটতর, যখন জনগণের ব্যাপার নিয়ে তারা
বিবাদে জড়িয়ে পড়বে।”
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه ثم خرج حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام، و حضرت عياش بن أبى ربيعة رضى الله تعالى عنه حتى قدما المدينة. فحدثنى حضرت نافع رحمة الله عليه عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه عن أبيه. قال اتعدنا لما أردت الهجرة إلى المدينة أنا و حضرت عياش بن أبى ربيعة رضى الله تعالى عنه و حضرت هشام بن العاص رضى الله تعالى عنه؛ التناضب من إضاة بنى غفار فوق سرف، وقلنا أينا لم يصبح عندها فقد حبس فليمض صاحباه، قال فاصبحت أنا و حضرت عياش رضى الله تعالى عنه عند التناضب وحبس حضرت هشام رضى الله تعالى عنه وفتن فافتتن، فلما قدمنا المدينة نزلنا فى بنى عمرو بن عوف بقباء، وخرج أبو جهل بن هشام والحارث بن هشام الى حضرت عياش رضى الله تعالى عنه- وكان ابن عمهما وأخاهما لامهما- حتى قدما المدينة ورسول الله صلى الله عليه وسلم بمكة،
অর্থ : “হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এরপর (হিজরত উনার উদ্দেশ্যে)
বের হন মদীনা শরীফ উনার দিকে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি এবং হযরত
আইয়্যাশ ইবনে আবী রবীআ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। হযরত নাফি’ রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে, তিনি উনার সম্মানিত পিতা উনার থেকে, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি যখন পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত উনার সংকল্প করি, তখন আমি হযরত আইয়্যাশ ইবনে আবী রবীআ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত হিশাম
ইবনে আল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সরফ নামক স্থানের কাছে বনূ গিফারের জলাশয়ের
নিকট ‘তানাদ্বুব’ নামক স্থানে মিলিত হয়ে শপথ করি যে, আমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সকাল সকাল সেখানে পৌঁছতে পারবেন না, ধরে নেয়া হবে যে, তিনি আটকা পড়েছেন সুতরাং উনার
সঙ্গীদ্বয় উনার অপেক্ষায় না থেকে রওয়ানা অব্যাহত রাখবে। ভোরে আমি এবং হযরত আইয়্যাশ
ইবনে আবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তানাদ্বুবে উপস্থিত হই। আর হযরত হিশাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আটকা পড়েন এবং যুলম-নির্যাতনের শিকার হন। পবিত্র
মদীনা শরীফ পৌঁছে আমরা কইবনয় বনূ আমর ইবনে আওফ উনার পল্লীতে অবস্থান করি। আবু
জাহল ইবনে হিশাম এবং হারিস ইবনে হিশাম বেরিয়ে হযরত আইয়্যাশ ইবনে আবী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার নিকট আসে। আর হযরত আইয়্যাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন
উভয়ের চাচাতো ভাই এবং বৈমাত্রেয় ভাই। আর আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখনো পবিত্র মক্কা শরীফ অবস্থান করছিলেন।
0 Comments:
Post a Comment