আদ্ দুরারুল মুখতারাহ্ - ফী নিসবাতি সুলত্বানিন নাছীর (১ম খণ্ড) প্রায় সাড়ে ১৪০০ বছর পর ঈলা, তাখীর ও তাহ্ রীম সর্ম্পকে হাক্বীক্বী বর্ণনা মুবারক-পর্ব-৪৫

প্রায় সাড়ে ১৪০০ বছর পর ঈলা, তাখীর ও তাহ্ রীম সর্ম্পকে হাক্বীক্বী বর্ণনা মুবারক-পর্ব-৪৫

ছোট - বড় যতো কিতাব পাওয়া যায় কোনো কিতাবেই ঈলা, তাখীর, তাহ্রীমের সুস্পষ্ট কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তা বিভ্রান্তিতে পরিপূর্ণ। যেটা বিশ্বাস করলে কখনোই কারো ঈমান ঠিক থাকবে না।

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্বহ্হার, মুত্বহহির, আছ ছমাদ মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১৪৪১ হিজরী শরীফ উনার ১৯শে যিলহজ্জ শরীফ লাইলাতু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (লাইলাতুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার রাত) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ফালইয়াফরহূ শরীফ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি আলাদা। মহান আল্লাহ পাক আল্লাহ পাক উনি আলাদা। উনারা হিসাবের উর্ধ্বে মূল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আব্বা আলাইহিস সালাম তিনি, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আম্মা আলাইহাস সালাম তিনি, তারপর হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিনড়বাস সালাম উনারা এবং হযরত আবনাউ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা। উনারা হচ্ছেন মূল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। ইলিম-কালাম হোক, মুহব্বত-মা’রিফত হোক, নিসবত-কুরবত হোক, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক, যেটাই হোক উনাদের থেকেই বের হবে। পবিত্র নিয়ামত মুবারক প্রকাশ করা উনাদের ইখতিয়ারের মধ্যে। যেমন- একদিন উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনি বসা। উনার সাথে ছিলেন উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম। উনি বললেন, তাহলে আমার নিসবত হাছিল করতে হবে না? আমি বললাম, হ্যাঁ; করতে হবে। বললেন, ইলিম-কালাম তো আমার থেকে নিতে হবে। আমি বললাম, হ্যাঁ। উনার মাধ্যমে ইলিমটা বের হয়েছে। এরপর উনি আমাকে ঈলা, তাখীর, তাহ্রীমের বিষয়গুলো দেখালেন। পুরোপুরি দৃশ্যটা আমাকে দেখালেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি সম্মানিত জুমু‘আহ শরীফ উনার সম্মানিত নামায মুবারক পড়িয়ে আসলেন। এসে বললেন যে, উনি এক মাসের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ মুবারক নিবেন না। তখন উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনারা ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি গেলেন, থাকলেন। এক মাস পার হলো। উনি আবার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ মুবারক আনলেন। তখন উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনি ছিলেন। উনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলেছিলেন, এক মাস থাকবেন। ২৯ দিন! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বললেন যে, চাঁদ উঠে গেছে। পরে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনি আমাকে দেখালেন এবং বললেন যে, এভাবে, এরকম-

৮ম হিজরী শরীফ উনার সম্মানিত ও পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসে তাহ্রীমের ঘটনা সংঘটিত হয়। অর্থাৎ সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাহ্রীম শরীফ উনার সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিনড়বাস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত বেমেছাল শান মুবারক সুস্পষ্ট করে দেন। সুবহানাল্লাহ!

আর ৮ম হিজরী শরীফ উনার সম্মানিত ও পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ উনার ৩০ তারীখ ইয়াওমুল জুমু‘আহ্ শরীফ জুমু‘আর নামায উনার পর থেকে ৯ম হিজরী শরীফ উনার সম্মানিত ও পবিত্র মুর্হরামুল হারাম শরীফ উনার ২৯ তারীখ পর্যন্ত এক মাস মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওহী মুবারক উনার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একাকী সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ১লা ছফর শরীফে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিনড়বাস সালাম উনাদের নিকট সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেন। যাকে ঈলা বলা হয়ে থাকে। তবে পরবর্তীতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈলার জন্য ৪ মাস নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

তারপর (১লা সফর শরীফের পর) তাখীরের সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই মুনাফিক্বদের চূ-চেরা, ক্বীলও ক্বালের জবাব দিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হরযত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিনড়বাস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত বেমেছাল শান মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক ঘটান। সুবহানাল্লাহ!

৯ম হিজরী শরীফ উনার মুহাররামুল হারাম শরীফ মাসটা ছিলো ২৯শা। এগুলো উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনি পুরোটাই আমাকে দেখিয়েছেন এবং জানিয়েছেন। তারপর এই যে তাহ্রীমের আয়াত শরীফের আগে নাযিল হয়েছে, পরে নাযিল হইছে কতোটুকু, তাখীরের আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। এটা উনি বলছেন। এগুলিতো কোনো কিতাবে নাই। মানুষ অন্য রকম চিন্তা করে। উনি দেখানোর পর দেখলাম যে, মানুষ যে প্রকার বলে বিষয়টা সে প্রকার না আসলে। উনি বললেন যে, না, এভাবে না। এভাবে নাযিল হয়েছে। তারপর এই ঘটনা। তারপরে এটা নাযিল হয়েছে।

্এররপর তাখীরের সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনি আমাকে পুরো জিনিসটা স্পষ্ট, একদম যে দৃশ্যটা ওটা দেখালেন এবং বুঝালেন, বললেন। এটা উনারা ছাড়া কিভাবে সম্ভব? এটা মানুষ জানে না যে, সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাহরীম শরীফ কিভাবে নাযিল হয়েছে। কিতাবে লিখে এলোমেলো। আবার তাখীরের আয়াত শরীফ নিয়ে এখতিলাফ রয়েছে কখন নাযিল হয়েছে। কেউ বলে- খন্দকের সময়, কেউ বলে- খায়বরের সময়, মক্কা শরীফ বিজয়ের সময় ইত্যাদি নানান কিছু বলে। কিন্তু আসল মূল বিষয়টা উনি বললেন যে, আসলে এটা এভাবে হয়েছে। মানুষ জানে না এগুলি। এখন উনারা না বললে তো এটা জানাটা সম্ভব না। এটা আমি দেখলাম যে, এটা কি করে সম্ভব? কিতাব পড়ে কোনো দিন জানা সম্ভব না। আর উনাদের যে খুছূছিয়াত-বৈশিষ্ট্য, উনাদের পবিত্রতা মুবারক মানুষ কিভাবে বুঝবে? এই যে মূর্খ লোকগুলি উনাদের ব্যাপারে চূ-চেরা, ক্বীলও ক্বাল এবং মিথ্যা প্রপাকা-া করে। এখন প্রত্যেকটা বিষয় তো সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত। বিষয়গুলো উনার মাধ্যমে অথবা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিনড়বাস সালাম উনাদের মাধ্যমে ফায়ছালা করতে হবে। এছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেই। উনাদের বাহিরে কিছু নেই- শূন্য। উনাদের থেকে যে সবকিছু যাহির হয়, সেটাই যাহির হলো। ইলিম-কালাম হোক, মুহব্বত-মা’রিফত হোক, নিসবত-কুরবত হোক, যা কিছুই হোক। উনাদের মাধ্যম দিয়ে আসতে হবে। এছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেই। কেউ কিছু করতে পারবে না। এই যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা যে বললেন,

لِىْ وَلَنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقْتٌ لَّ يَسْعٰنِىْ فِيْهِ مَلَكٌ مُّقَرَّبٌ وَلَ نَبِىٌّ مُّرْسَلٌ

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমার এবং আমাদের এমন একটি সময় রয়েছে, অর্থাৎ দায়েমীভাবে এমন নিছবত মুবারক রয়েছেন যেখানে কোনো নৈকট্যপ্রাপ্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্থান সঙ্কুলান হয় না।” সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

অর্থাৎ এটা তো ঠিকই আছে। আমাদের সাথে নূরে মুজাসসাম উনার সাথে নিসবত আছে। কাজেই এখানে অন্য কারো প্রবেশ করার কোনো সুযোগ নেই। উনাদের যে মাক্বামগুলো এখানে প্রবেশ করার এবং সেখানে যেয়ে বসার কারো কোনো অধিকার নেই। যেতেই তো পারবে না কেউ। ওখান থেকেই তো সব বের হবে, ইলিম-কালাম হোক, মুহব্বত-মা’রিফত হোক, নিসবত-কুরবত হোক, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক, যা কিছুই হোক। ওখান থেকে বের হবে। এই তাহ্রীম, তাখীর, ঈলা বা এগুলোর যে বিস্তারিত বর্ণনা, এগুলো তো এভাবে পৃথিবীর কোনো কিতাবে নেই। কিতাবগুলোতে সব উল্টা, এলোমেলো আর বিচ্ছিনড়ব ও কুফরী লেখা। ছোট-বড় সব কিতাবে কুফরী লেখা। তারা প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পারেনি। এগুলো বিশ্বাস করলে, কারো ঈমান থাকবে না। আসলে উনাদের ছাড়া তো ইলিম পাওয়া যাবে না। সেটাই বললাম যে, বাত্বিনী যে রিয়াযাত-মাশাক্কাত মূল বিষয় হলো সেটা।” (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!)

তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে আখাছ্ছুল খাছভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিনড়বাস সালাম উনাদের সাথে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমতুল্লিল আলামীন, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কত বেমেছাল মহাসম্মানিত তা‘য়াল্লুক্ব-নিসবত মুবারক, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানা মুর্শিদ ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে হাক্বীক্বী ছহীহ সমঝ, এবং সর্বোত্তম বিশুদ্ধ আক্বীদাহ ও সর্বোচ্চ হুসনে যন মুবারক দান করুন। আমীন!


0 Comments: