নাস্তিকদের আপত্তি- কুরানে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে পুরুষের থেকে নির্গত বীর্য থেকে সন্তানের জন্ম হয় কিন্তু স্ত্রীর ডিম্বানুর যে ভূমিকা সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি! এটা কি মুহম্মদের অজ্ঞতা ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে?
নাস্তিকদের আপত্তি ৮ : কুরানে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে পুরুষের থেকে নির্গত বীর্য থেকে সন্তানের জন্ম হয় (Quran 86:5-6, 76:2, 23:13-14, 53:45-46, 80:19, 2:223)! কিন্তু স্ত্রীর ডিম্বানুর যে ভূমিকা সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি! এটা কি মুহম্মদের অজ্ঞতা ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে?
The term ‘nutfatun amshaajin’ could just as easily refer to the
sperm-menstrual blood union of Aristotle and the ancient Indian embryologists,
or the two sperm hypothesis of Hippocrates and Galen, or even the readily
observed mingling of semen and vaginal discharge during sexual intercourse. In
other words, the fact the Quran does not explicitly state that ‘nutfatun
amshaajin’ contains the ovum, together with the existence of other possible
explanations, means that it is illogical to assume the former and not the
latter.
খণ্ডণ : পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত نُطْفَةٍ “নুত্বফা” শব্দ মুবারক উনার অর্থ শুক্রাণু বা শুক্রবিন্দু গ্রহণ করার কারণেই নাস্তিকরা বলার সুযোগ পাচ্ছে যে, সন্তান জন্মের ব্যাপারে স্ত্রীর ডিম্বাণুর যে ভূমিকা সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি!
বস্তুত نُطْفَةٍ “নুত্বফা” শব্দ মুবারক উনার অর্থ হবে জননকোষ বা বীর্য, যা পুরুষ ও নারী উভয়ের থেকে নির্গত হয়। نُطْفَةٍ “নুত্বফা” শব্দ মুবারক উনার সাথে এমন কোন বিশ্লেষণ জুড়ে দেয়া হয়নি যে এটাকে শুধুমাত্র পুরুষের নির্গত বস্তু বলা যায়।
আর নুত্বফা যে নারী-পুরুষ উভয় থেকেই নির্গত হয় এই বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ اُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ جَاءَتْ اُمُّ سُلَيْمٍ اِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ اِنَّ اللهَ لاَ يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ، فَهَلْ عَلَى الْمَرْاَةِ مِنْ غُسْلٍ اِذَا احْتَلَمَتْ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم اِذَا رَاَتِ الْمَاءَ . فَغَطَّتْ اُمُّ سَلَمَةَ ـ تَعْنِي وَجْهَهَا ـ وَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ وَتَحْتَلِمُ الْمَرْاَةُ قَالَ نَعَمْ تَرِبَتْ يَمِينُكِ فَبِمَ يُشْبِهُهَا وَلَدُهَا ".
অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হযরত উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এসে বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি হক্ব কথা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। মহিলাদের ইহতিলাম (স্বপ্নদোষ) হলে কি গোসল করতে হবে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হ্যাঁ, যখন সে নুত্বফা দেখতে পাবে। তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম তিনি (লজ্জায়) উনার মুখ মুবারক ঢেকে নিয়ে বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহিলাদেরও ইহতিলাম হয় কি?’ তিনি বললেন, হ্যাঁ, (বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন) তোমার ডান হাতে মাটি পড়ুক! (তা না হলে) তাদের সন্তান মায়ের আকৃতি পায় কিভাবে?” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ اُمِّ سَلَمَةَ اُمِّ الْمُؤْمِنِينَ، اَنَّهَا قَالَتْ جَاءَتْ اُمُّ سُلَيْمٍ امْرَاَةُ اَبِي طَلْحَةَ اِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ، اِنَّ اللهَ لاَ يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ، هَلْ عَلَى الْمَرْاَةِ مِنْ غُسْلٍ اِذَا هِيَ احْتَلَمَتْ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَعَمْ اِذَا رَاَتِ الْمَاءَ
অর্থ : “ উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে হযরত আবূ তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া হযরত উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি হক্বের ব্যাপারে লজ্জা করেন না। স্ত্রীলোকের ইহ্তিলাম হলে কি ফরয গোসল করবে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হ্যাঁ, যদি তারা নুত্বফা দেখে।” (বুখারী শরীফ)
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ حَدَّثَهُمْ اَنَّ اُمَّ سُلَيْمٍ حَدَّثَتْ اَنَّهَا، سَاَلَتْ نَبِيَّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْمَرْاَةِ تَرَى فِي مَنَامِهَا مَا يَرَى الرَّجُلُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم اِذَا رَاَتْ ذَلِكِ الْمَرْاَةُ فَلْتَغْتَسِلْ . فَقَالَتْ اُمُّ سُلَيْمٍ وَاسْتَحْيَيْتُ مِنْ ذَلِكَ قَالَتْ وَهَلْ يَكُونُ هَذَا فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَعَمْ فَمِنْ اَيْنَ يَكُونُ الشَّبَهُ اِنَّ مَاءَ الرَّجُلِ غَلِيظٌ اَبْيَضُ وَمَاءَ الْمَرْاَةِ رَقِيقٌ اَصْفَرُ فَمِنْ اَيِّهِمَا عَلاَ اَوْ سَبَقَ يَكُونُ مِنْهُ الشَّبَهُ.
অর্থ : “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শুনছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে হযরত উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি এসে সুওয়াল করলেন, পুরুষরা স্বপ্নে যা কিছু দেখে মেয়েরাও যদি স্বপ্নে তাই দেখে (অর্থাৎ যদি ইহ্তিলাম হয়) তাহলে কি করবে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি তারা নুত্বফা দেখে তাহলে গোসল করবে। একথা শুনে উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি পুনরায় সুওয়াল করলেন, মেয়েদেরও এমন হয়? অর্থাৎ মেয়েদেরও কি ইহ্তিলাম ও নুুতফা বের হয়? তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, অবশ্যই! নয়তো সন্তান মায়ের মতো হয় কেমন করে? পুরুষের নতুফা হয় ঘন এবং সাদাটে আর নারীর নুত্বফা হয় পাতলা এবং হলুদ। অতঃপর তাদের মধ্য থেকে যে শক্তিশালী হয় বা যে অগ্রবর্তী হয় সন্তান তার মতোই হয়।” (মুসলিম শরীফ)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নারীদেরও নুত্বফা বের হয়। অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টির জন্য স্ত্রীর ডিম্বাণু ও পুরুষের শুক্রাণু দুটোই যে অপরিহার্য সে তথ্যটাই স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
আর তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
اِنَّا خَلَقْنَا الْاِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ اَمْشَاجٍ
অর্থ : “আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র নুত্বফা থেকে।” (পবিত্র সূরা ইনসান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
এখানে মিশ্র নুত্বফা বলতে নারী-পুরুষ উভয় থেকেই নুত্বফা দ্বারা মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তাই সন্তান মায়ের চেহারা বা বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে।
দ্বিতীয়ত মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً ۚ
অর্থ : “হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন উনাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১)
সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে যে, সন্তান জন্মের জন্য মাতা-পিতা উভয়েরই ভূমিকা রয়েছে।
0 Comments:
Post a Comment