আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুত্ব‘ইমুল ইন্সি ওয়াল ওয়াহ্শি ওয়াত ত্বইরি, সাইয়্যিদুছ ছাক্বালাইন, মালিকুল জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক পূণরুদ্ধার
জুরহুম গোত্র সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়কাল পর্যন্ত সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক উনার কোনো চিহ্ন বিদ্যমান ছিলো না। কেউ কেউ এর সময়কাল ৫০০ বছর বলে উল্লেখ করেছেন।
একদা সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরে তথা হাতিমে ঘুমিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হিজরে ঘুমন্ত অবস্থায় আমি স্বপ্ন মুবারক দেখলাম যে, এক সম্মানিত বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক তিনি তাশরীফ নিলেন। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, احفر طيبة ‘আপনি ‘ত্বইয়্যিবাহ’ খনন করুন।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ত্বইবাহ’ কী? তারপর আমার প্রশ্ন মুবারক উনার জবাব না দিয়েই তিনি চলে গেলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, পরদিন রাতে আমি যখন বিছানা মুবারক-এ গেলাম এবং ঘুমিয়ে পড়লাম, সেই সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক তিনি এসে পুনরায় আমাকে বললেন, احْفِرْ بَرَّةَ. আপনি ‘বাররাহ’ খনন করুন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘বাররাহ’ কী? তারপর কোনো জবাব না দিয়েই তিনি চলে গেলেন। এরপর পরবর্তী রাতে আমি যখন বিছানা মুবারক-এ গেলাম এবং ঘুমিয়ে পড়লাম, সেই সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক তিনি এসে আমাকে বললেন, احْفِرِ الْمَضْنُونَةَ আপনি ‘মাদ্বনূনাহ’ খনন করুন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মাদ্বনূনাহ’ কী? তিনি কিছু না বলেই আমার কাছ থেকে চলে গেলেন।
অতঃপর এর পরবর্তী রাতে যখন আমি বিছানা মুবারক-এ গেলাম এবং ঘুমিয়ে পড়লাম, লোকটি আবারো আসলেন এবং আমাকে বললেন,
احْفِرْ زَمْزَمَ.قَالَ قُلْتُ وَمَا زَمْزَمُ؟ قَالَ لَا تنزف أبداً ولا تزم، تَسْقِي الْحَجِيجَ الْأَعْظَمَ وَهِيَ بَيْنَ الْفَرْثِ وَالدَّمِ عِنْدَ نُقْرَةِ الْغُرَابِ الْأَعْصَمِ عِنْدَ قَرْيَةِ النَّمْلِ.
অর্থ: ‘আপনি ‘যমযম’ খনন করুন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘যমযম’ কী? তিনি বললেন, যা কখনো শুকাবে না, নষ্ট হবে না এবং মহান হাজীগণ উনারা যার পানি মুবারক পান করবেন। আর উনার অবস্থান মুবারক হচ্ছে গোবর ও রক্তের মধ্যখানে। সাদা পা বিশিষ্ট কাকের নিকটে, পিঁপড়ার বসতির কাছে।’
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক’ উনার পরিচয় ও জায়গার নির্দেশনা মুবারক পেয়ে কোদাল মুবারক নিয়ে সেখানে গেলেন।
وَمَعَهُ ابْنُهُ الْحَارِثُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَلَيْسَ لَهُ يَوْمئِذٍ وَلَدٌ غَيْرُه
অর্থ: ‘আর উনার সাথে ছিলেন উনার সম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত হারিছ ইবনে আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! তখন সাইয়্যিদুনা হযরত হারিছ আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্য কোনো আওলাদ (পুত্র) আলাইহিস সালাম ছিলেন না।’
অপর বর্ণনায় রয়েছেন, মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বারবার স্বপ্নে দেখানো এবং নিদর্শন দেখানোর ফলে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরাইশদের সাথে পরামর্শ করলেন এবং তাদেরকে স্বপ্ন মুবারক উনার কথা বললেন যে, তিনি এই স্থান খুঁড়তে চান। কুরাইশদের অনেকেই বিরোধিতা করে। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই বিরোধিতার পরওয়া করলেন না, বরং কোদালসহ আরো ইত্যাদি সরঞ্জাম নিয়ে নিজ পুত্র হযরত হারিছ আলাইহিস সালাম উনাকেসহ ওই স্থানে পৌঁছলেন এবং চিহ্নিত স্থান খুঁড়তে শুরু করলেন। তিনি নিজে খুঁড়ছিলেন এবং উনার সম্মানিত আওলাদ (ছেলে) হারিছ আলাইহিস সালাম তিনি মাটি তুলে ফেলছিলেন। তিনদিন খুঁড়ার পর এর চিহ্ন দেখা গেলো। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশিতে তাকবীর ধ্বনি দিলেন এবং বললেন,
هذا طوى اسماعيل عليه السلام.
অর্থ: এটি হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম উনার কূপ মুবারক।”
অপর বর্ণনায় রয়েছেন, খনন কাজ শুরু হয়ে এক সময় তা শেষ হলো। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পানি দেখতে পেয়ে উচ্চস্বর মুবারক-এ ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উঠলেন। তাকবীর ধ্বনি মুবারক শুনে কুরাইশরা বুঝলো যে, সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত উদ্দেশ্য হাছিল হয়ে গেছেন। ফলে তারা উনার নিকট গিয়ে বললো, হে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনি যে সম্মানিত কূপ মুবারক উনার সন্ধান মুবারক পেয়েছেন, তা আমাদের পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম উনার কূপ মুবারক এবং নিঃসন্দেহে তাতে আমাদের অধিকার আছে। অতএব, আমাদেরকে উনার ভাগ দিতে হবে। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না, তা হবে না। এ সম্মানিত কূপ মুবারক শুধু আমাকেই দেয়া হয়েছে, উনার মধ্যে তোমাদের কোনো অংশ নেই। কুরাইশরা বললো,
فَإِنَّا غَيْرُ تَارِكِيكَ حَتَّى نُخَاصِمَكَ فِيهَا.قَالَ فَاجْعَلُوا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ مَنْ شِئْتُمْ أُحَاكِمْكُمْ إِلَيْهِ قَالُوا كَاهِنَةُ بَنِي سَعْدِ بْنِ هُذَيْمٍ قَالَ: نَعَمْ
অর্থ: “আমরা এর দাবি ছাড়বো না। প্রয়োজনে আপনার সাথে লড়াই করে হলেও আমরা আমাদের অধিকার আদায় করে ছাড়বো। না‘ঊযুবিল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ঠিক আছে, তা-ই যদি করো, তাহলে একজন লোক ঠিক করো, আমরা তার উপর এর বিচারের ভার অর্পণ করবো। কুরাইশরা বললো, বনূ সা’দ ইবনে হুযাইমের মহিলা পাদ্রীর কাছে চলুন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ঠিক আছে।”
এই মহিলা পাদ্রীর আবাসস্থল ছিলো সিরিয়ায়। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সাথে বনূ উমাইয়ার একদল এবং কুরাইশ বংশের প্রত্যেক গোত্র থেকে একদল করে লোক নিয়ে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলেন। তখনকার দিনে তা ছিলো এক বিরান মরু প্রান্তর। পথিমধ্যে এক জায়গায় এসে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও উনার সঙ্গী-সাথীদের পানি শেষ হয়ে গেলো। উনারা অত্যন্ত কঠিনভাবে পিপাসার্ত হলেন। এমনকি ইন্তিকাল করার উপক্রম হলেন। ফলে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথীরা অন্যদের নিকট পানি চাইলেন। কিন্তু তারা পানি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বললো, আমরা নিজেরাও এই মরু প্রান্তরে আপনাদের মতো কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছি। অর্থাৎ আমরাও একই অবস্থার সম্মুখীন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সঙ্গীদেরকে বললেন, গায়ে কিছুটা শক্তি-সামর্থ্য থাকতেই তোমরা নিজেদের জন্য কবর খনন করে রাখো, যাতে কেউ ইন্তিকাল করলে সঙ্গীরা তাকে সেই কবরে দাফন করতে পারে। এভাবে সর্বশেষ একজন দাফন থেকে বঞ্চিত হবেন। তা হয় হোক। গোটা কাফেলা বিনা দাফনে থাকা অপেক্ষা একজন থাকাই ভালো। সঙ্গীরা বললো, আপনার এই আদেশ অতি উত্তম। আমরা তা-ই করবো। প্রত্যেকেই নিজের জন্য কবর খনন করলো এবং বসে মৃত্যুর অপেক্ষা করতে লাগলো।
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরাতো নিজেদেরকে মৃত্যুর হাতে সোপর্দ করেছি। এই অবস্থায় আমরা পানির খোঁজে বের হই না কেন? ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের জন্য পানির ব্যবস্থা করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সঙ্গী-সাথীদের বললেন, বসে না থেকে তোমরা সামনে অগ্রসর হয়ে দেখ। তারা রওয়ানা হলো। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার কি কুদরত সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উষ্ট্রীর পিঠে বসতেই উষ্ট্রী হোঁচট খেলো এবং তার পায়ের নিচ থেকে সুমিষ্ট পানির ফোয়ারা বইতে শুরু করলো। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত তাকবীর ধ্বনি মুবারক দিলেন এবং উনার সাথে সাথে সঙ্গীরাও সম্মানিত তাকবীর মুবারক দিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাহন মুবারক থেকে নেমে পানি পান করলেন। সঙ্গীরাও পানি পান করে পিপাসা নিবারণ করলো এবং আপন আপন মশক ভরে নিলো। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত কুরাইশ গোত্রসমূহের প্রতিনিধিদেরকে আহ্বান করলেন। এতক্ষণ তারা তাকিয়ে এসব অবস্থা দেখছিলো। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
هَلُمُّوا إلى الماء فقد سقانا الله فجاؤوا فشربوا واستقواكلهم ثم قالوا قَدْ وَاللَّهِ قُضِيَ لَكَ عَلَيْنَا وَاللَّهِ مَا نُخَاصِمُكَ فِي زَمْزَمَ أَبَدًا إِنَّ الَّذِي سَقَاكَ هذا الماء بهذه الفلاة هو الَّذِي سَقَاكَ زَمْزَمَ فَارْجِعْ إِلَى سِقَايَتِكَ رَاشِدًا فَرَجَعَ وَرَجَعُوا مَعَهُ.
অর্থ: “এসো এসো এই যে পানি! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের পিপাসা নিবারণ করেছেন। অতঃপর তারা প্রত্যেকেই এসে সেই পানি পান করলো এবং পরিতৃপ্ত হলো। অতঃপর বললো, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে আমাদের উপর বিজয়ী করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ, সম্মানিত যমযম কূপ উনার ব্যাপারে আমরা আপনার সাথে আর কখনো বিবাদ করবো না। এই মরু অঞ্চলে যিনি আপনাকে এই পানি হাদিয়া করেছেন, তিনিই আপনাকে সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক হাদিয়া করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অতএব, নিরাপদে আপনি আপনার (সম্মানিত যমযম) কূপ মুবারক উনার নিকট ফিরে যান। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যাবর্তন মুবারক করলেন এবং উনার সাথে কাফেলার সকলে প্রত্যাবর্তন করলো।”
সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক সম্পর্কিত বিবাদের মীমাংসা কুদরতীভাবেই হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! মহিলা পাদ্রীর কাছে আর যাওয়ার প্রয়োজন হলো না। তারা সকলে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারকেই সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক উনার অধিকার ছেড়ে দিলো। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত যমযম কূপ উনার নিকটে কিছু হাউজ মুবারক নির্মাণ করলেন, যেগুলোতে হাজীদের পানি পান করানোর জন্য পানি ভরে রাখা হতো। কিছু দুষ্টলোক অপকীর্তি শুরু করলো। তারা রাতে এসে হাউজগুলোতে ময়লা ফেলে যেতো। না‘ঊযুবিল্লাহ! আর সকালে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেগুলো পরিষ্কার করতেন। অবশেষে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক উনার পানি ও হাউস নোংরাকারীদের বিরুদ্ধে বদদোয়া মুবারক করলেন। তখন স্বপ্ন মুবারক উনার মাধ্যমে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলা হলো যে, আপনি দোয়া করুন,
اللهم انى لا احلها المغتسل ولكن هى لشارب حل.
অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক, আমি সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক উনার পানিতে লোকদের গোসল করার অনুমতি দেইনি; শুধু পান করার অনুমতি দিয়েছি।”
সকালে উঠে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এটা ঘোষণা মুবারক করে দেন। অতঃপর যে এই হাউজ নষ্ট করার ইচ্ছা করতো, সেই কঠিন অসুখে পতিত হতো। যখন বারবার এ ঘটনা ঘটতে থাকলো, তখন দুষ্টলোকগুলো সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাউজ মুবারক উনার বিরোধিতা করা ছেড়ে দিলো।
আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ’ উনার মধ্যে বলেন,
قَالَ ابْنُ إِسْحَاقَ وَكَانَ سيدنا حضرت جد رسول الله صلى الله عليه وسلم (سيدنا حَضْرَتْ عَبْدُ الْمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ) فِيْمَا يَزْعُمُونَ نَذَرَ حِينَ لَقِيَ مِنْ قُرَيْشٍ مَا لَقِيَ عِنْدَ حَفْرِ زَمْزَمَ لَئِنْ وُلِدَ لَهُ عَشَرَةُ نَفَرٍ ثم بلغوا معه حتى يمنعوه ليذبحن أَحَدَهُمْ للَّه عِنْد الْكَعْبَةِ
অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সম্মানিত যমযম কূপ মুবারক খনন করার সময় কুরাইশদের সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে বিবাদ হয়েছিলো, তার প্রেক্ষিতে তিনি সম্মানিত মানত মুবারক করেছিলেন যে, যদি উনার দশ জন আওলাদ (পুত্র সন্তান) আলাইহিমুস সালাম উনারা সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং প্রাপ্ত বয়স মুবারক-এ উপনীত হয়ে উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার উপযুক্ত হন, তাহলে উনাদের একজনকে মহান আল্লাহ পাক উনার রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার নিকটে সম্মানিত যবেহ মুবারক বা কুরবানী মুবারক করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
এইভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সম্মানিত যমযম কুপ মুবারক ফিরে পেলো। সুবহানাল্লাহ! ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকলে এই সম্মানিত যমযম কুপ মুবারক উনার সম্মানিত পানি মুবারক দ্বারা উপকৃত হতেই থাকবে। সুবহানাল্লাহ!
তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য কতো বড় নিয়ামত মুবারক এবং উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল তা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
0 Comments:
Post a Comment