সাইয়্যিদুন নাস, সাইয়্যিদু কুরাইশ, সাইয়্যিদুল আরব ওয়াল আজম, আল ফাইয়্যায, যুল মাজদি ওয়াস সু’দাদ, মুত্ব‘ইমুল ইন্সি ওয়াল জিন্নি ওয়াল ওয়াহ্শি ওয়াত ত্বইর, আহলু বাইতি রসূল্লিাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ইমামুছ ছাক্বালাইন, আবূ যাবীহিল্লাহ আলাইহিস সালাম সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক

 
সাইয়্যিদুন নাস, সাইয়্যিদু কুরাইশ, সাইয়্যিদুল আরব ওয়াল আজম, আল ফাইয়্যায, যুল মাজদি ওয়াস সু’দাদ, মুত্ব‘ইমুল ইন্সি ওয়াল জিন্নি ওয়াল ওয়াহ্শি ওয়াত ত্বইর, আহলু বাইতি রসূল্লিাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ইমামুছ ছাক্বালাইন, আবূ যাবীহিল্লাহ আলাইহিস সালাম সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক

 সম্মানিত পরিচিতি মুবারক: মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টিজগতে যেই সকল সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক এবং শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক উনার দিক থেকে সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত উনাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন সাইয়্যিদুন নাস, সাইয়্যিদু কুরাইশ, সাইয়্যিদুল আরব ওয়াল আজম, আল ফাইয়্যায, মালিকুল জান্নাহ, মালিকুল কায়িনাত, জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারকই হচ্ছেন সম্মানিত ঈমান। সুবহানাল্লাহ! উনার সবচেয়ে বড় পরিচয় মুবারক হচ্ছেন- তিনি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত দাদাজান আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! তাই মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আস সাফফাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত ফতওয়া মুবারক দিয়েছেন যে, “সাইয়্যিদু কুরাইশ, সাইয়্যিদুল ‘আরব ওয়াল আজম, আল ফাইয়্যায, যুল মাজদি ওয়াস সু’দাদ, মুত্ব‘ইমুল ইন্সি ওয়াল জিন্নি ওয়াল ওয়াহ্শি ওয়াত ত্বইর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক জানা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন।” সুবহানাল্লাহ! 

মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে আমারা এখানে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জীবনী মুবারক আলোচনা করার নিয়াত করেছি। মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আস সাফফাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বদম মুবারক-এ) চুমু খেয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানার্থে হাক্বীক্বী তাওয়াল্লুক্ব-নিছবত মুবারক, ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ, ইলম, ইখলাছ, ইছলাহী ও দয়া, দান, ইহসান মুবারক ভিক্ষা চেয়ে শুরু করছি। 

সম্মানিত বংশীয় পবিত্রতা মুবারক:

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

وَتَقَلُّبَكَ فِـى السّٰجِدِيْنَ.

অর্থ: “আর (আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনার স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়টিও ছিল মহাসম্মানিত সিজদাকারীগণ উনাদের মাধ্যমে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)

‘তাফসীরে কবীর শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, 

فَالْاٰيَةُ دَالَّـةٌ عَلـٰى اَنَّ جَمِيْعَ اٰبَاءِ مُحَمَّدٍ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ كَانُوْا مُسْلِمِيْنَ.

অর্থ: “এই সম্মানিত আয়াত শরীফ থেকে প্রমাণিত হয় যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই মুসলমান ছিলেন, ঈমানদার ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কবীর শরীফ ১৩/৩২) 

اِنَّهٗ كَانَ يَنْقُلُ نُوْرُهٗ مِنْ سَاجِدٍ اِلـٰى سَاجِدٍ

অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক সিজদাকারীগণ উনাদের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কবীর শরীফ ১৩/৩২, মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ শরীফ ১/১০৪, শারহুয যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব ১/৩২৬, তারীখুল খমীস ১/২৩৪, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ শরীফ)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَـمْ اَزَلْ اُنْقَلُ مِنْ اَصْلَابِ الطَّاهِرِيْنَ اِلـٰى اَرْحَامِ الطَّاهِرَاتِ.

অর্থ: “আমি সবসময় পূত-পবিত্র পুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে পূত-পবিত্রা মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্মানিত ও পবিত্র রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তরিত হয়েছি।” সুবহানাল্লাহ!

এখান থেকেই সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বংশীয় পবিত্রতা মুবারক উনার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! 

সম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম: সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা ছিলেন সাইয়্যিদুল ‘আরব ওয়াল আজম, সাইয়্যিদু কুরাইশ, মাহবূবে এলাহী, আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনারা ছিলেন চার ভাই-

১. সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম,

২. সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুশ শামস ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম,

৩. সাইয়্যিদুনা হযরত মুত্তালিব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম,

৪. সাইয়্যিদুনা হযরত নাওফিল ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম।

কেউ কেউ বলেছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন উনার ভাই উনাদের মধ্যে সকলের বড়। আবার কেউ কেউ ভিন্ন মতও পোষণ করেছেন।

আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন উনার মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম উনার এবং সম্মানিত পরিবার উনাদের সকলের নিকট সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিত্ব মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তিনি আল জাদ্দাতুছ ছালিছাহ লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ‘আতিকাহ বিনতে মুররাহ আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ-এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

তিনি কুরাইশ বংশের বনু হাশিম শাখার মহাসম্মানিত প্রথম পুরুষ আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত আমর আলাইহিস সালাম। উনার সীমাহীন সম্মান ও মর্যাদা-মর্তবা মুবারক উনার কারণে উনাকে ‘আমরু ‘উলা বা আমরুল ‘আলী’ বলে সম্বোধন করা হতো। সুবহানাল্লাহ! তিনি সকলের মাঝে সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম হিসেবে পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেন। এর কারণ হিসেবে সীরাতগ্রন্থসমূহে অনেক বর্ণনা রয়েছে। অনেকের মতে তিনি সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ-এ দুর্ভিক্ষের সময় রুটি টুকরা টুকরা করে ছারীদ তৈরি করে সবাইকে খাওয়ান, যার কারণে তিনি সকলের মাঝে সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম হিসেবে পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! কেননা ‘হাশমুন’ শব্দ মুবারক উনার অর্থ মুবারক হচ্ছেন, চূর্ণ করা, গুঁড়ো করা, টুকরো করা ইত্যাদি। আর সেখান থেকে ‘হাশিম’। অর্থ- টুকরাকারী, গুঁড়োকারী, চূর্ণকারী।

তিনি ছিলেন বেমেছাল দানশীল। উনার বদান্যতার বিষয়টি আরব এবং অনারব তথা সারা পৃথিবীতে প্রসিদ্ধ ছিলো। সুবহানাল্লাহ!

তিনিই সর্বপ্রথম কুরাইশদের জন্য শীত ও গ্রীষ্মকালীন দুটি বাণিজ্য সফর প্রচলন করেন। সুবহানাল্লাহ! যে বিষয়টি স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ‘সম্মানিত ও পবিত্র সূরা কুরাইশ শরীফ’ উনার মধ্যে আলোচনা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আবার তিনিই সর্বপ্রথম সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ-এ হাজীদেরকে ছারীদ দ্বারা আপ্যায়ন করেন। সুবহানাল্লাহ!

আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিত পিতা আল জাদ্দুছ ছালিছ লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আবদু মানাফ ইবনে কুছাই আলাইহিস সালাম উনার পর রিফাদাহ ও সিক্বায়াহ তথা হাজীদের খাদ্য খাওয়ানো ও পানি পান করানোর দায়িত্ব মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন বেমেছাল সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারী। এই সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, 

وكان من أحسن الناس وأجملهم،

অর্থ: “তিনি ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বোত্তম ও সর্বাধিক সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারী।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খইরিল ইবাদ ১/২৭০)

কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

كان النور يرى على وجهه كالهلال يتوقّد، لا يراه أحد إلا أحبّه وأقبل نحوه.

অর্থ: “চাঁদ যেরূপ প্রজ্বলিত হয়, তদ্রুপ সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত চেহেরা মুবারক-এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রজ্বলিত অবস্থায় দেখা যেতেন। সুবহানাল্লাহ! যে কেউ সেই সম্মানিত নূর মুবারক দেখতো, সে উনাকে মুহব্বত না করে পারতো না এবং সে উনার নিকট চলে আসতো।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খইরিল ইবাদ ১/২৭০)

আবূ সা’দ আব্দুল মালিক ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম নীশাপুরী খরকূশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (বিছাল শরীফ: ৪০৭ হিজরী) উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘শরফুল মুস্তফা শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,

وكان النور على وجهه كالهلال يتوقد شعاعه، لا يمر بشيء إلا سجد له، ولا يراه أحد إلا أقبل نحوه

অর্থ: ‘চাঁদ যেমন তার আলোক রশ্মি প্রজ্বলিত করে থাকে, ঠিক তেমনিভাবে আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত চেহারা মুবারক-এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক ঝলমল করতেন। অর্থাৎ আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত চেহারা মুবারক-এ চাঁদের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখা যেতেন এবং চাঁদের আলোর ন্যায় সেখান থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক উনার রশ্মি মুবারক বিচ্ছূরিত হতেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি কোনো কিছু (যেমন পশু-পাখি, গাছ-পালা, তরুলতা ইত্যাদির) পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে সেগুলো উনাকে সিজদা করতো আর জিন-ইনসান উনাকে সম্মান করতো। সুবহানাল্লাহ! আর যে ব্যক্তিই সেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক দেখতো, সে মুহব্বতের সাথে উনার নিকট অগ্রসর হতো। সুবহানাল্লাহ! (শরফুল মুস্তফা শরীফ ১/৩৩১)

সুতরাং এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল, যেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!

আল জাদ্দুছ ছানী সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার আলোচনা মুবারক পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে এবং রোম ও পারস্য কথিত সম্রাটদের নিজ মেয়েদেরকে উনার নিকট সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দেয়ার জন্য দূত প্রেরণ:

আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আলোচনা মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক পূর্ববর্তী সম্মানিত আসমানী কিতাব মুবারকেও ছিলো। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে যারা সম্মানিত আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের ইলম মুবারক রাখতেন, উনারা উনাকে দেখেই চিনে ফেলতেন যে, তিনিই সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক যিনি আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক ধারণ করে আছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ উনার মাঝে এখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবস্থান মুবারক করছেন। সুবহানাল্লাহ! তাই আরব-অনারবের সকল সম্ভ্রান্তশীলা মহিলাগণ উনার নিকট সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ হওয়ার জন্য বেকারার ছিলো। সুবহানাল্লাহ! এ প্রসঙ্গে মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আস সাফফাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “স্বয়ং রোম ও পারস্য কথিত সম্রাটরা তাদের নিজ মেয়েদেরকে আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার নিকট সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দেয়ার জন্য দূত প্রেরণ করেছিলো। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।” সুবহানাল্লাহ! 

এ সম্পর্কে ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত ইমাম মুহম্মদ ইবনে ইঊসুফ ছালিহী শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (বিছাল শরীফ: ৯৪২ হিজরী শরীফ) উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,

وبعث إليه قيصر رسولا ليتزوج ابنته لما وجد في الإنجيل من صفته فأبى.

অর্থ: “রোমের কথিত সম্রাট সম্মানিত ও পবিত্র ইনজিল শরীফ-এ আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার ছিফত তথা গুণাবলী মুবারক পেয়ে, উনার নিকট দূত প্রেরণ করেছিলো, তার কন্যাকে উনার নিকট সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দেয়ার জন্য। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত প্রস্তাব অস্বীকার করেন। অর্থাৎ তিনি রোমের কথিত সম্রাটের প্রস্তাব ফিরেয়ে দেন।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খইরিল ইবাদ ১/২৭০)

আবূ সা’দ আব্দুল মালিক ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম নীশাপুরী খরকূশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (বিছাল শরীফ: ৪০৭ হিজরী) উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘শরফুল মুস্তফা শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,

وبعث إليه قيصر حفيد هرقل ملك الروم، وطلب إليه أن يزوج ابنته منه لما وجد في الإنجيل من قصته، وهو أن النور كان في وجهه ظاهرا فأبى

অর্থ: “আর তৎকালীন রোম শাসক বা কথিত সম্রাট আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ দূত প্রেরণ করে উনার নিকট এই আরজী পেশ করে যে, সে তার স্বীয় কন্যাকে উনার নিকট সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দিতে চায়। সুবহানাল্লাহ! আর এই ঘটনাটি ঘটেছিলো, যখন রোমের কথিম সম্রাট সম্মানিত ও পবিত্র ইনজীল শরীফ-এ সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম উনার আলোচনা মুবারক পেয়েছিলো তখন। সুবহানাল্লাহ! আর নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম তিনি সেই সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক যে, উনার সম্মানিত চেহারা মুবারক-এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুস্পষ্টভাবে দেখা যেতেন। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম তিনি (রোমের কথি সম্রাটের) উক্ত প্রস্তাব অস্বীকার করেন, ফিরেয়ে দেন।” সুবহানাল্লাহ! (শরফুল মুস্তফা শরীফ ১/৩৩১)

 অনুরূপ বর্ণনা পারস্যের কথিত সম্রাটের ক্ষেত্রেও রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল ছিলো এবং তিনি আরব-অনারব তথা সারা পৃথিবীতে কত বেমেছাল সম্মান মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন যে, স্বয়ং তৎকালীন কথিত পরাশক্তি রোম ও পারস্যের কথিত সম্রাটরা তাদের কন্যাদেরকে উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ (শাদী মুবারক) দেয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলো; কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং তিনি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সকলের নিকট কতটুকু সম্মানিত ছিলেন, সেটা চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!

আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ:

আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি যখন রোম ও পারস্যের কথিত সম্রাটের রাজকন্যাদের সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন, তখন এক রাতে এক অপূর্ব স্বপ্ন মুবারক দেখতে থাকেনÑ “স্বয়ং যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বনী আদী ইবনে নাজ্জার গোত্রের সম্ভ্রান্তশীলা, বিস্ময়কর সৌন্দর্য মুবারক এবং পূত-পবিত্র চরিত্র মুবারক মুবারক উনার অধিকারিণী আল জাদ্দাতুছ ছানিয়াহ লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে ‘আমর আলাইহাস সালাম উনাকে দেখিয়ে বলতেছেন যে, আপনি উনাকে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ (শাদী মুবারক) করুন।” সুবানাল্লাহ!

এই স্বপ্ন মুবারক দেখার পর আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি শাম দেশে সফরকালে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ কিছু দিনের জন্য সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। অতঃপর সেখানে কুরাইশ বংশীয় বিশেষ শাখা বনী আদী ইবনে নাজ্জার গোত্রের সবচেয়ে সম্ভ্রান্তশীলা, সীমাহীন ইলম মুবারক উনার মালিকাহ, ত্বাহিরাহ, পূত-পবিত্রা ব্যক্তিত্বা মুবারক আল জাদ্দুছ ছানিয়াহ লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম উনাকে দেখতে পান। তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ে সমগ্র কুরাইশ, আবর এবং আজম তথা সারা পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে পবিত্রতা, সম্মানিতা এবং সর্বাধিক সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারিণী। সুবহানাল্লাহ!

আল জাদ্দুছ ছানীলিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি আল জাদ্দাতুছ ছানিয়াহলিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম উনাকে দেখার সাথে সাথেই চিনে ফেলেন যে, তিনিই স্বপ্ন মুবারক-এ দেখা সেই সুমহান ব্যক্তিত্বা মুবারক। সুবাহানাল্লাহ! আর উনাকেই সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ করার জন্য স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ করেন। এ সম্পর্কে ‘শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ’ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, 

فأري في المنام أن تزوج بنت زيد بن عمرو فتزوج بها

অর্থ: “অতঃপর উনাকে স্বপ্ন মুবারক দেখানো হয় যে, তিনি যেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে আমর বিনতে যায়েদ ইবনে আমর আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ করেন। অতঃপর তিনি উনাকে নিসবতে আযীম শরীফ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (শরফুল মুস্তফা শরীফ ১/৩৩১)

আল জাদ্দাতুছ ছানিয়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম উনার মাঝে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাশরীফ মুবারক নেয়া:

আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার সাথে আল জাদ্দাতুছ ছানিয়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম উনার আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় সম্মানিত মদীনা শরীফ-এ। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম আলাইহিস সালাম তিনি বেশ কিছু দিন সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ অবস্থান মুবারক করেন। তখনই উনার সম্মানিত ও পবিত্র কপাল মুবারক থেকে ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক’ আল জাদ্দাতুছ ছানিয়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ (সম্মানিত রেহেম শরীফ-এ) কুদরতীভাবে মহাসম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখেন। সুবহানাল্লাহ! সে রাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে অফুরন্ত রহমত-বরকত সাকীনাহ মুবারক নাযিল করেন এবং সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনাকে অপরূপ সাজে সুসজ্জিত মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:

আল জাদ্দুছ ছানী সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম উনার এবং আল জাদ্দাতুছ ছানিয়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের উভয়ের মাঝে আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম তিনি উনার সম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বাড়িতে অর্থাৎ সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফেই অবস্থান মুবারক করতে থাকনে। সুবহানাল্লাহ! এ বিষয়ে অনেক বর্ণনা রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, আযীমুশ শান মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই বলা হয়েছে যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফেই অবস্থান মুবারক করবেন এবং সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফেই উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করবেন। সুবহানাল্লাহ! আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন এবং সম্মানিত অবস্থান মুবারকও করেছেন। কিতাবে এরূপ আরো অনেক মত উল্লেখ রয়েছে। তবে এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত নানাজান সাইয়্যিদুনা হযরত আমর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বাড়িতে তথা সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশে উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত জান্নাত মুবারক থেকে বিশেষ সম্মানিত মহিলা আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন উনারা সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, আপনার যিনি মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম তিনি এখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করবেন, তিনি হবেন যিনি সমস্ত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দাদাজান আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! তাই উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে আপনার নিকট প্রেরণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুদরতীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! উনার মাঝে তখন ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি’ সম্মানিত অবস্থান মুবারক করছিলেন। সুবহানাল্লাহ! ফলে সেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোতে সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র হুজরা শরীফ, সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ এবং উনার আশপাশ সমস্ত কিছু আলোকিত হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রাখা এবং সম্মানিত আক্বীক্বাহ মুবারক দেয়া:

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সপ্তম দিনে উনার সম্মানিত আক্বীক্বা মুবারক দেয়া হয় এবং উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রাখা হয়। উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক কি এ বিষয়ে সীরাতগ্রন্থগুলোতে অনেক বর্ণনা রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক ‘সাইয়্যিদুনা হযরত আমির আলাইহিস সালাম।’ আবার কেউ কেউ বলেছেন, উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক ‘সাইয়্যিদুনা হযরত শায়বাহ আলাইহিস সালাম।’ আবার কেউ কেউ বলেছেন, উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক ‘সাইয়্যিদুনা হযরত শায়বাতুল হামদ আলাইহিস সালাম।’ সুবহানাল্লাহ!

এ বিষয়ে মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আস সাফফাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বোত্তম ফায়ছালা মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “প্রকৃপক্ষে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র মূল ইসম বা নাম মুবারক ছিলেন, ‘সাইয়্যিদুনা হযরত শায়বাহ আলাইহিস সালাম।’ সুবহানাল্লাহ! তবে একজন মানুষের যেমন একাধিক নাম মুবারক থাকে সেই হিসেবে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আরো একখানা সম্মানিত নাম মুবারক ছিলেন, ‘সাইয়্যিদুনা হযরত আমির আলাইহিস সালাম’। আর ‘শায়বাতুল হামদ’ হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একখানা সম্মানিত বিশেষ লক্বব মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক কেন ‘সাইয়্যিদুনা হযরত শায়বাহ আলাইহিস সালাম’ রাখা হয়েছে, এ বিষয়ে সীরাতবিশারদগণ উনারা বিভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আল জাদ্দাতুছ ছানিয়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত ওছীয়ত মুবারক করেন যে, তিনি যেন উনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রাখেন ‘সাইয়্যিদুনা হযরত শায়বাহ আলাইহিস সালাম।’ সুবহানাল্লাহ! তাই উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রাখা হয় ‘সাইয়্যিদুনা হযরত শায়বাহ আলাইহিস সালাম।’ সুবহানাল্লাহ! যেমন কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, 

لأن أباه وصّى أمه بذلك.

অর্থ: “কেননা উনার মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনাকে এ বিষয়ে সম্মানিত ওছীয়ত মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খইরিল ইবাদ শরীফ ১/২৬২)

আর এটা এই জন্য যে, সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শুভ পরিণাম সম্পর্কে, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে অবহিত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি জানতেন যে, ‘উনার যেই মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করতে যাচ্ছেন, তিনি ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনাকে বহন করবেন এবং তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত দাদাজান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি কায়িনাতের মাঝে সবচেয়ে বড় সৌভাগ্যবান হবেন। সবহানাল্লাহ! অল্প বয়স মুবারক থেকেই উনার বেমেছাল ইলম, হিকমত ও সম্মান মুবারক উনার বিষয়টি প্রকাশিত হতে থাকবে। সুবহানাল্লাহ! তাই তিনি উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র নাম মুবারক ‘সাইয়্যিদুনা হযরত শায়বাহ আলাইহিস সালাম’ রাখার জন্য সম্মানিত ওছীয়ত মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! কেননা, আরবরা স্বীয় সন্তানদের বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তাতার কামনা করে উনাদের সন্তানদের নাম রাখতেন শায়বাহ। সুবহানাল্লাহ!

মূল কথা হলো, আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি এবং আল জাদ্দাতুছ ছানিয়াহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত সালমা বিনতে আমর আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত ইলহাম-ইলক্বা’ মুবারক এবং সম্মানিত স্বপ্ন মুবারক-এ আদিষ্ট হয়ে উনাদের মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রেখেছেন ‘সাইয়্যিদুনা হযরত শায়বাহ আলাইহিস সালাম।’ সুবহানাল্লাহ! আর উনাদের সম্মানিত ইলহাম-ইলক্বা মুবারক এবং সম্মানিত স্বপ্ন মুবারক ছিলেন সম্মানিত ওহী মুবারক উনার ন্যায় অকাট্য। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত কুনিয়াত মুবারক: আবূ হারিছ আলাইহিস সালাম, আবূ আব্দিল্লাহ আলাইহিস সালাম, আবূ বাত্বহা’ আলাইহিস সালাম।

জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: 

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ (রেহেম শরীফ-এ) অবস্থান মুবারক করেন, তখন উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান, আল জাদ্দুছ ছানী লিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাশিম ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি ব্যবসার উদ্দেশ্যে শাম দেশে রওয়ানা হন। অতঃপর ফিলিস্তিনের গাযা শহরে মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! সেখানে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ অবস্থিত, যা সকলের নিকট সুপরিচিত। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক অনুযায়ী গাযা শহরে ‘মসজিদুস সাইয়্যিদি হাশিম’ নামে একখানা মসজিদও রয়েছে। উনার কারণে গাযা শহরকে ‘গাযায়ে হাশিম’ বলা হয়। সুবহানাল্লাহ! 

 শৈশবকালে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত লালন-পালন মুবারক:

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ উনার মহাসম্মানিত নানাজান আলাইহিস সালাম উনার বাড়িতে উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার বেমেছাল আদর-যত্ম মুবারক-এ লালিত-পালিত হন। সুবহানাল্লাহ! সেখানে তিনি ৬, ৭ বা ৮ বছর সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন।

 সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকলের মাঝে ‘সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম’ হিসেবে মশহূর হওয়ার কারণ:

এ বিষয়েও সীরাতগ্রন্থগুলোতে অনেক মত পরিলক্ষিত হয়। তবে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর থেকে সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ উনার মহাসম্মানিত নানাজান আলাইহিস সালাম উনার বাড়ীতে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করতে থাকেন। যখন উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ৬, ৭ বা ৮ বছর, তখন উনার সম্মানিত চাচা সাইয়্যিদুনা হযরত মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ আনার জন্য সম্মানিত ও পবিত্র মদীনা শরীফ যান। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার অনুমতিক্রমে সাইয়্যিদুনা হযরত মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ নিয়ে আসেন। তারপর তিনি উনাকে অত্যন্ত আদর-যত্ম ও মায়া-মুহব্বত মুবারক করে লালন-পালন মুবারক করতে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত চাচা সাইয়্যিদুনা হযরত মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম উনার নিকট সর্বাধিক প্রিয় ও মুহব্বতের পাত্র ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! আর আরবীতে ‘আবদ’ শব্দ মুবারক উনার একখানা অর্থ মুবারক হচ্ছেন, ‘হাবীব, মাহবূব, প্রিয়’। যেহেতু সাইয়্যিদুনা হযরত মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত মুবারক করতেন, তাই সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘আব্দুল মুত্ত্বালিব’ তথা মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম উনার প্রিয়পাত্র বলে সম্বোধন করা হতো। সুবহানাল্লাহ! সেখান থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকলের মাঝে ‘আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম’ হিসেবে পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক:

মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আস সাফফাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সময় পর্যন্ত যেই সুমহান ব্যক্তিত্ব এবং ব্যক্তিত্বা মুবারক উনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধারণ মুবারক করেছেন উনারা প্রত্যেকেই হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।” সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের যত খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক রয়েছে, সমস্ত খূছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

اِنَّـمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُـطَـهِّـرَكُمْ تَطْهِيْرًا.

অর্থ: “হে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

فَاَنَا وَاَهْلُ بَيْتِىْ مُطَهَّرُوْنَ مِنَ الذُّنُوْبِ.

অর্থ: “আমি এবং আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম আমরা সকলেই যুনূব তথা সমস্ত প্রকার ছগীরা-কবীরা এবং যাবতীয় অপছন্দনীয় কাজ থেকে পূত-পবিত্র।” সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ লিল বায়হাক্বী, শিফা ১/৩২৫, সীরাতে হালবিয়্যাহ ১/৪২, আল মা’রিফাতু ওয়াত তারীখ ১/৪৯৮, খছাইছুল কুবরা ১/৬৬, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/২৩৫, তাফসীরে দুররে মানছূর লিস সুয়ূত্বী ৬/৬০৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩ ইত্যাদি) 

সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

اَنَّ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُوْلُ نَـحْنُاَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ اللهُ مِنْ شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ وَمَوْضِعِ الرِّسَالَـةِ وَمُـخْتَلِفِ الْمَلَائِكَةِ وَبَيْتِ الرَّحْمَةِ وَمَعْدِنِ الْعِلْمِ.

অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবসময় ইরশাদ মুবারক করতেন, আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে (আমাদেরকে) সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার বৃক্ষ, সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার স্থান, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের, উনাদের দ্বারা সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক (ইত্যাদি সমস্ত কিছু) থেকে পবিত্র রেখেছেন, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে দুররে মানছূর ৬/৬০৬, ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩)

এ সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ এবং সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! তাহলে উনার সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক কতো বেমেছাল, তা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’:

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দৃষ্টিকাড়া বেমেছাল সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত ও পবিত্র চেহারা মুবারক-এ সবসময় মহাসম্মানিত এবং মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঝলমল করতেন। সুবহানাল্লাহ! কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, 

ونور رسول الله صلى الله عليه وسلم يضيء في غرته،

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ ‘নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ ঝলমল করতেন।” সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ শরীফ)

কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

"وكان نور رسول الله صلى الله عليه وسلم يضيء في غرته" أي: جبهته بينًا واضحًا،

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত কপাল মুবারক-এ ‘নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ অত্যন্ত সমুজ্জ্বলভাবে ঝলমল করতেন।” (শারহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব)

কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

على شيبة الحمد الذي كان وجهه ...

 يضيء ظلام الليل كالقمر البدري

অর্থ: “পূর্ণ চাঁদের মতো শায়বাতুল হামদ সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র চেহারা মুবারক অন্ধকার রাতকে আলোকিত করতেন।” সুবহানাল্লাহ! (শারহুয যারক্বানী)

সম্মানিত বিশেষ শান মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ:

عن كعب الأحبار: أن نور رسول الله صلى الله عليه وسلم- لما صار إلى عبد المطلب وأدرك، نام يوما فى الحجر فانتبه مكحولا مدهونا، قد كسى حلة البهاء والجمال، فبقى متحيرا لا يدرى من فعل به ذلك، فأخذه أبوه بيده ثم انطلق به إلى كهنة قريش فأخبرهم بذلك، فقالوا له: اعلم أن إله السماوات قد أذن لهذا الغلام أن يتزوج، فزوجه قيلة فولدت له الحارث

অর্থ: “হযরত কা’ব ইবনে আহবার রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে, ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ যখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে স্থান্তরিত হলেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিণত বয়স মুবারক-এ উপনীত হলেন, তখন তিনি একদিন সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার হাতিম-এ ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখলেন যে, উনার সম্মানিত চোখ মুবারক-এ সুরমা লাগানো, সম্মানিত মাথা মুবারক উনার চুল মুবারক তৈল লাগানো এবং এক সেট অতি উজ্জ্বল ও সুন্দর মূল্যবান কাপড় পরিহিত। সুবহানাল্লাহ! সমস্ত লোক উনার সৌন্দর্য মুবারক ও মাহাত্ম্য দেখে অবাক হয়ে গেলো যে, তিনি এটা কিভাবে পেলেন, কে উনাকে এই উচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করলেন। এই ঘটনার পর উনার সম্মানিত চাচা উনাকে কুরায়শদের কয়েকজন বিশেষ ব্যক্তি যারা আসমানী কিতাবসমূহের ইলম রাখতেন উনাদের নিকট নিয়ে গেলেন এবং উনাদেরকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। উনারা বললেন, আপনি জেনে রাখুন, আকাশের রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ’ করার ইযাযত মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তখন উনার চাচা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ক্বায়লা আলাইহাস সালাম উনার সাথে উনার সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ! উনার মাধ্যমে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত হারিছ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! (তিনি ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বড় আওলাদ।) (‘মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ শরীফ)

আযওয়াজুম মুত্বহ্হারাতগণ-

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আযওয়াজুম মুত্বহ্হারাত আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন ৬ জন। উনারা হচ্ছেন,

১. সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাত্বিমা বিনতে আমার ইবনে ‘আয়িয আলাইহাস সালাম। উনার মাধ্যমেই আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

২. সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছফিয়্যাহ বিনতে জুনদুব আলাইহাস সালাম। উনার সম্মানিত লক্বব মুবারক সাইয়্যিদাতুনা হযরত ক্বায়লা আলাইহাস সালাম,

৩. সাইয়্যিদাতুনা হযরত হালাহ বিনতে ওয়াহাইব আলাইহাস সালাম। তিনি ছিলেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আপন চাচাতো বোন।

৪. সাইয়্যিদাতুনা হযরত নুতাইলাহ্ বিনতে জানাব আলাইহাস সালাম,

৫. সাইয়্যিদাতুনা হযরত লুব্না বিনতে হাজার আলাইহাস সালাম,

৬. সাইয়্যিদাতুনা হযরত মুমান্না‘আহ্ বিনতে ‘আমর আলাইহাস সালাম। 

 সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চাচা সাইয়্যিদুনা হযরত মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:

هَلَكَ الْمُطَّلِبُ بِرَدْمَانَ مِنْ أَرْضِ الْيَمَنِ،

 অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি ইয়ামেনের রাদমান এলাকায় মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” (ইবনে হিশাম)

তখন জনৈক এক আরব্য কবি উনার উদ্দেশ্যে শোক প্রকাশ করে বলেন, 

قَدْ ظَمِئَ الْحَجِيجُ بَعْدَ الْمُطَّلِبِ ...

 بَعْدَ الْجِفَانِ وَالشَّرَابِ المُنْثَعِبْ

لَيْتَ قُرَيْشًا بَعْدَهُ عَلَى نَصَبْ

অর্থ: “হাজীগণ কানায় কানায় পূর্ণ পেয়ালায় যমযমের পানি পান করেও সাইয়্যিদুনা হযরত মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের কারণে পিপাসার্ত রয়ে গেলো।

 হায়! যদি কুরায়শগণ উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর এক পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হতো।” (ইবনে হিশাম)

সিকায়া ও রিফাদা:

‘সীরাতে ইবনে হিশাম শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,

ثُـمَّ وَلِيَ عَبْدُ الْمُطَّلِبِ بْنُ هَاشِمِ السِّقَايَةَ وَالرِّفَادَةَ بَعْدَ عَمِّهِ الْمُطَّلِبِ، فَأَقَامَهَا لِلنَّاسِ وَأَقَامَ لِقَوْمِهٖ مَا كَانَ اٰبَاؤُهُ يُقِيْمُوْنَ قَبْلَهٗ لِقَوْمِهِمْ مِنْ اَمْرِهِمْ، وَشَرُفَ فِـىْ قَوْمِهٖ شَرَفًا لَـمْ يَبْلُغْهُ اَحَدٌ مِنْ اٰبَائِهِ.

অর্থ: “চাচা সাইয়্যিদুনা হযরত মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘সিকায়া ও রিফাদা’ তথা হাজীদের পানি পান করানো ও খাদ্য খাওয়ানোর দায়িত্ব মুবারক গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি উনার পূর্বপুরুষ উনাদের ন্যায় ক্বাওমের যাবতীয় দায়িত্ব সুচারুরূপে আনজাম দেন এবং সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তি ও মর্যাদায় তিনি উনার পূর্বসূরীদের ছাড়িয়ে যান।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে হিশাম)

সাইয়্যিদু কুরাইশ, সাইয়্যিদুন নাস, মালিকু আহলি বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার প্রায় ৮৭ বছর পূর্বে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২০শে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবী‘উল আউওয়াল শরীফ) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ অর্থাৎ সোমবার) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর দুনিয়াবী দৃষ্টিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বয়স মুবারক যখন ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন, তখন ২২শে জুমাদাল ঊলা শরীফ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (ইছনাইনিল আযীম শরীফ অর্থাৎ সোমবার) মালিকুল জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন অর্থাৎ পবিত্র দীদার মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক নেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি দুনিয়ার যমীনে ৯৫ বছর ২ মাস ২ দিন সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেন। 

মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাওয়ানেহ্ ‘উমরী মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক জানার, উনার সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করার, উনাকে সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম মুবারক করার এবং দায়িমীভাবে অনন্তকাল যাবৎ উনার সম্মানিত গোলামী মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন! আমীন! আমীন!  

0 Comments: