সাইয়্যিদাতুনা হযরত সাইয়্যিদাতুল উমাম আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন- ৩ রজবুল হারাম শরীফ

সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হাবীবাতুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত সাইয়্যিদাতুল উমাম আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ৩রা রজবুল হারাম শরীফ, সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (ইছনাইনিল আযীম শরীফ) সকালে। সুবহানাল্লাহ!
গুল হাসান
একি উপহার! (আজ) হাসান গুলে (আজ) নাওয়াসী র’বীয়া, আহালী নয়ন দূরাকাশ হতে জোঁছনার ঢল উজাড় দিলে জানাই সম্ভাষণ উজাড় দিলে সাদর সম্ভাষণ ॥ লাখো অধর ছানায় মশগুল ঈদের সমাচার দেখ বিলকুল আপন সুষমা দিয়ে ছড়িয়ে পুরো কায়িনাহ হয় সঞ্চারণ ॥ আহালী অধ্যায় নব সূচনায় সমাগত জনস্রোত সিক্ত ছঁটায় অপরিমেয় নাজে সব সাজে সম্মিলিত ধ্বনী আহলান-সাহলান ॥ মাদানী আফতাব সাহারায় আযান করেন সজীব তালকিনে সুশোভন মহিমা নির্ঝরন আপন ভূষণ আনন্দে মাতোয়ারা হয় ত্রিভূবন ॥ কবিতার অক্ষর প্রতিটি বর্ণমালা আজ খুশি, বানিয়ে উছিলা মুক্তির অভিলাষী আপনি স্বয়ং পেয়ে মামদূহয়ী অভ্যর্থনা ॥ পেতে উমিদ, আবির আপন অসার হৃদয় হোক বিকিরণ আপনি রূহামা, মুরিদী মুঈন 
শ্রেষ্ঠ ইনাম, নহর বুনন ॥ 
সাইয়্যিদাতুনা হযরত সাইয়্যিদাতুল উমাম আল খমিসাহ আলাইহাস সালাম -৩ রজবুল হারাম শরীফ

সাইয়্যিদাতুনা হযরত সাইয়্যিদাতুল উমাম আল খমিসাহ আলাইহাস সালাম
সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হাবীবাতুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে সিবত্বতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, **সাইয়্যিদাতুনা হযরত সাইয়্যিদাতুল উমাম আল খ¦মিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন**, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ৩রা রজবুল হারাম শরীফ, সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (ইছনাইনিল আযীম শরীফ) সকালে। সুবহানাল্লাহ!

মালিকা খমীসা মালিকা খমীসা, সমুদয় শুকরিয়া নসীব উজ্বালা, আসেন শাফিয়া ॥ঐ মোদের রয় সকল সিজদা মামদূহ শানে হোক সর্বদা দিয়েছেন খুলে মাগফিরাত কবুলিয়তের নিয়ে বরাত আজ দিলেন নব হাদিয়া ॥ যাহরায়ী ভূষণে নব মেহমান আউয়াল নূরে নূর হাসান খুশির বানে মোরা উতলা সলাত-সালাম সবে ভেঁজিয়া ॥ ঐ সব শাহী আয়োজন আজ নব মেহমান তরে দারাজ বাগিচার সব ফুল বিভোর ছেড়ে দিয়ে সকল আলেয়া ॥ঐ আজ আঁধারি ঘনঘটা তাড়ায় নব আফতাব দেখ উদয় নূরে মামদূহ ও আম্মাজী পাক আহালী গুলে ছোঁয়া ॥ ঐ তাবাসসুমে সুষমা পাক হুজরা বিকিরণ দেখো কায়িনা পুরা ঈদ শুধু ঈদ পেয়ে মুঈনা নাজে প্রশান্ত মোর হিয়া ॥ঐ সুবহ-শাম সবে করি মহরত তাসাউরে কভু চাইনা ফুরসত দিলরুবা তিনি ইনামে বিস্তর 
আনজাম সদা নাজাতী খেয়া ॥ঐ 
 পবিত্র লাইলাতুর রগাইব শরীফ (১লা রজবুল হারাম শরীফ)

 

পবিত্র লাইলাতুর রগাইব শরীফ (১লা রজবুল হারাম শরীফ)


رغائب (রগায়িব) শব্দ মুবারকটি رغيب উনার বহুবচন। যার অর্থ কাঙ্খিত বিষয়, প্রচুর দান। (মিছবাহুল লুগাত-২৯৮)
পারিভাষিক বা ব্যবহারিক অর্থে- আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মুবারক রাত্রিতে উনার সম্মানিত আম্মা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ পবিত্র নূর মুবারক হিসেবে কুদরতীভাবে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন সেই মুবারক রাতকে ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ বলা হয়।
দু’আ মুবারক: اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ
অর্থ : ‘হে আল্লাহ পাক! আপনি সম্মানীত রজবুল হারাম মাস ও পবিত্র শা’বান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে মহাসম্মানীত রামাদ্বান শরীফ মাস পর্যন্ত (হায়াত দিন) পৌঁছার তাওফীক্ব দান করুন। (বায়হাকি শরীফ, শুআবুল ঈমান, হাদিস শরীফ : ৩৫৩৪)
দোয়া কবুল: : ৫ রাত : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِـىْ خَـمْسِ لَيَالٍ اَوَّلُ لَيْلَةٍ مّنْ رَجَبَ وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ وَلَيْلَةُ الْقَدْرِ الْـمُبَارَكَةِ وَلَيْلَتَا الْعِيْدَيْنِ
অর্থ : “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।” (মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ, আমালুল ইয়াত্তমি ওয়াল লাইলাতি)
হযরত আবু রসূলিনা আলাইহিস সালাম-বিলাদত শরীফ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার প্রায় ৭৮ বছর ৮ মাস ১০ দিন পূর্বে ২রা রজবুল হারাম শরীফ লাইলাতুস সাবত্ শরীফ সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার সম্মানিত কুরাইশ বংশ উনার হাশিমী গোত্রে মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ!
হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম-বিলাদত শরীফ: তিনি আনুষ্ঠানিক নবুওয়ত প্রকাশের ৫৯ বছর পূর্বে, হিজরতের ৭২ বছর পূর্বে, ঈসায়ী ৫৫২ সন মুতাবিক শামসী পূর্ব ৮১ সনে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নাযযার গোত্রের বনী যুহরায় সাইয়্যিদুশ শুহূর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার ৫ই তারিখ পবিত্র জুময়াহ শরীফ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
পবিত্র নিসবতে আযীম মুবারক: আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাবীবাতুল্লাহ আলাইহাস সালাম উনাদের সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দিবস, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ৮ মাস ১২ দিন পূর্বে, ১ রজবুল হারাম শরীফ লাইলাতুল জুম‘য়াহ। সুবহানাল্লাহ! তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বয়স মুবারক ছিলেন ২৪ বছর ১১ মাস ২৯ দিন এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়স মুবারক ছিলেন ১৮ বছর ৩ মাস ২৫ দিন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত মোহরানা মুবারক: সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার সম্মানিত মোহরানা মুবারক ছিলো নগদ এক উকিয়া স্বর্ণ ও এক উকিয়া রৌপ্য। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ওলীমা মুবারক: সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন সমস্ত কুরাইশ সম্প্রদায় উনাদের সাইয়্যিদ। তিনি তো জিন-ইনসানকে খাওয়াতেনই; শুধু তাই নয়, বরং বন্যপশু-পাখীদেরকেও খাদ্য খাওয়াতেন। সুবহানাল্লাহ! তাই তিনি সকলের মাঝে‘মুত্ব‘ইমুল ইন্সি ওয়াল ওয়াহ্শি ওয়াত ত্বইর’ তথা মানুষ, বন্য পশু ও পাখীদেরকে খাদ্যদানকারী এই সম্মানিত লক্বব মুবারক-এ পরিচিত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! কিতাবের এক বর্ণনায় দেখা যায় যে, তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ওলীমা মুবারক উপলক্ষে একশত উট, একশত গরু, একশত বকরী জবাই করে প্রচুর পরিমাণে খাবার প্রস্তুত করেছেন এবং সম্মানিত মক্কা শরীফ ও তৎসংলগ্ন এলাকার সবাইকে দাওয়াত করে মেহমানদারী মুবারক করেছেন। এই সম্মানিত মেহমানদারী মুবারক চারদিন পর্যন্ত চলেছে। সুবহানাল্লাহ!
খুতবা মুবারক: সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক অনুযায়ী প্রথমে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা ও ছানা-ছিফত মুবারক করেন।
তারপর সকলের উদ্দেশ্যে সম্মানিত নছীহত মুবারক করেন। এভাবে সাইয়্যিদুনা খাজা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সংক্ষিপ্ত নছীহত মুবারক শেষ করেন। তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দোয়া মুনাজাত পরিচালনা করেন।
সর্বশ্রেষ্ঠ রাত: ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি: হযরত মাওলানা শাহ কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব, “বারাহীনুল ক্বতইয়াহ ফী মাওলিদী খাইরিল বারীয়াহ” নামক কিতাবে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, এ মুবারক রাত্রির ফযীলত বা শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে হাম্বলী মাযহাবের সম্মানিত ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি যখন ফতওয়া করলেন, ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব’ শরীফ উনার ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর ও লাইলাতুল বরাত অর্থাৎ পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর, পবিত্র লাইলাতুল বরাতসহ অন্যান্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রি অপেক্ষা লক্ষ-কোটিগুণ বেশি। (সুবহানাল্লাহ!)
তখন সমসাময়িক ইমাম ও ফক্বীহগণ উনার নিকট জানতে চাইলেন, হে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি! লাইলাতুল ক্বদর এবং লাইলাতুল বরাত উনাদের ফযীলত সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন। কিন্তু ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ উনার ফযীলত সম্পর্কে কোথাও বর্ণনা করা হয়নি। তাহলে আপনি কিসের ভিত্তিতে ফতওয়া দিলেন যে, পবিত্র ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ উনার ফযীলত উক্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রিগুলো অপেক্ষাও বেশি?
হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জবাবে বলেন, আপনারা কি জানেন-লাইলাতুর রগাইব কি?
পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর ও পবিত্র লাইলাতুল বরাত উনাদের ফযীলত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে সত্যিই; কিন্তু লাইলাতুল ক্বদর ও লাইলাতুল বরাতসহ অন্যান্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রির সৃষ্টি হয়েছে পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার উসীলায়। অর্থাৎ ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ না হলে ‘লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাতসহ’ ফযীলতপূর্ণ কোনো রাত্রির সৃষ্টিই হতো না। এ কারণেই উক্ত রাত মুবারক উনার ফযীলত সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রির চেয়ে লক্ষ-কোটিগুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ!
বিশেষ ওয়াকেয়া: জান্নাতে মেহমানদারি: ১৪৪০ হিজরী: ১লা রজবুল হারাম শরীফ যদি বড় করে করা হয় তাহলে জান্নাতে মেহমানদরীর ব্যবস্থা করা হবে। ২২ জুমাদ্বাল উলা ১২ পদের করা হয়েছিলা, ১ লা রজবুল হারাম ১৩ পদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -১১


হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -১১

আবু সুফইয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুদাইবিয়া সন্ধি নবায়ন উপলক্ষে মদীনা শরীফে গিয়ে উনার কন্যা উম্মুল মুমিনীন উম্ম হাবীবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে দেখতে তার ঘরে যান (তখন আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম গ্রহন করেননি)। তিনি উনার গৃহে প্রবেশ করে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিছানার উপর বসতে উদ্যত হন। এমন সময় তার কন্যা বিছানাটি গুটিয়ে ফেলেন। আবু সুফইয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হে আমার কন্যা! আপনি কি আমার জন্য এ বিছানাকে অপছন্দ করছেন? নাকি বিছানার জন্য আমাকে অপছন্দ করছো? তিনি উত্তরে বলেন,
هُوَ فِراشُ رَسولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنْتَ مُشْرِكٌ نَجَسٌ، فَلَمْ أُحِبَّ أَنْ تَجْلِسَ عَلَى فِرَاشِهِ
এটা হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছানা। আর আপনি মুশরিক, অপবিত্র। সুতরাং আপনি উনার বিছানায় বসুন তা আমি পছন্দ করি না। (বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/২৮০)
ফিকিরের বিষয় হচ্ছে, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহব্বত ও মর্যাদার কতটা গুরুত্ব দেয়া হতো। সুবহানাল্লাহ
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -১০

 
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -১০

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কিবলা ছিলেন স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
أَخْبَرَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ الأَنْصَارِيُّ ـ وَكَانَ تَبِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَخَدَمَهُ وَصَحِبَهُ أَنَّ أَبَا بَكْرٍ كَانَ يُصَلِّي لَهُمْ فِي وَجَعِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ، حَتَّى إِذَا كَانَ يَوْمُ الاِثْنَيْنِ وَهُمْ صُفُوفٌ فِي الصَّلاَةِ، فَكَشَفَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم سِتْرَ الْحُجْرَةِ يَنْظُرُ إِلَيْنَا، وَهْوَ قَائِمٌ كَأَنَّ وَجْهَهُ وَرَقَةُ مُصْحَفٍ، ثُمَّ تَبَسَّمَ يَضْحَكُ، فَهَمَمْنَا أَنْ نَفْتَتِنَ مِنَ الْفَرَحِ بِرُؤْيَةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَنَكَصَ أَبُو بَكْرٍ عَلَى عَقِبَيْهِ لِيَصِلَ الصَّفَّ، وَظَنَّ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم خَارِجٌ إِلَى الصَّلاَةِ، فَأَشَارَ إِلَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ أَتِمُّوا صَلاَتَكُمْ، وَأَرْخَى السِّتْرَ،
“হযরত আনাস ইবনে মালিক আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাদিম এবং সাহাবী ছিলেন উনার থেকে বর্ণিত, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারিদ্বী শানে অবস্থান করা অবস্থায় হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম ছাহাবীগণকে নিয়ে নামায আদায় করতেন। অবশেষে যখন সোমবার এল এবং লোকেরা নামাযের জন্য কাতারে দাঁড়ালেন, তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা শরীফের পর্দা উঠিয়ে আমাদের দিকে তাকালেন। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন, উনার চেহারা মুবারক যেন কুরআন শরীফের পৃষ্ঠার ন্যায় ঝলমল করছিল। তিনি মুচকি হাসলেন। আমরা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পেয়ে খুশীতে প্রায় আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম এবং হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম ইমামতি থেকে কাতারে দাঁড়ানোর জন্য পিছন দিকে সরে আসছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হয়তো নামাযের বেরিয়ে আসবেন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে ইশারায় জানালেন যে, তোমরা তোমাদের নামায পূর্ণ করে নাও। অতঃপর তিনি পর্দা ছেড়ে দিলেন।” (বুখারী শরীফ- কিতবুল আযান- হাদীছ শরীফ ৬৮০, মুসলিম শরীফ ৪১৯)
পোষ্টে সংযুক্ত ছবিটি খুবই ভালো করে লক্ষ্য করুন, অন্তরে গেঁথে নিন। তাহলে সেসময় পরিস্থিতিটা ভালো বুঝতে পারবেন।
১) হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগন ক্বাবা শরীফের দিকে মুখ করে মসজিদে নববীতে নামায আদায় করছিলেন।
২) হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফ ছিলো মসজিদের সাথে সংযুক্ত ঠিক বাম দিকে।
৩) নামায তখন চলছিলো।
৪) এমতাবস্থায় হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফ থেকে পর্দা উঠিয়ে তাকালেন। উনার চেহারা মুবারক এসময় ছিলো অত্যান্ত উজ্জল।
৫) ছাহাবায়ে কিরাম নামাযরত অবস্থায় বিষয়টা কিভাবে বুঝলেন? ছবির দিকে তাকান , উনাদের নামাযের মধ্যেই মিনিমাম ৯০ ডিগ্রী ঘুরে তাকাতে হয়েছে।
৫) হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাসি মুবারক দেখে যেভাবে আন্দন্দে আত্মহারা হলেন, সেভাবে দেখতে গেলে কি কাতারবদ্ধ থাকা যায়?
৬) কাতারের সামনে ছিলেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি। উনি কি করলেন? নামাযের ইমামতি ছেড়ে দিয়ে পিছনের কাতারে চলে আসতে লাগলেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সেটা না করার জন্য ইশারা করলেন। কি বুঝা গেলো এ ইশারা দেখতে হলে স্বয়ং ইমাম সাহেবকেও কিবলা থেকে মুখ ঘুরিয়ে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে তাকাতে হয়েছিলো।
৭) হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায চালিয়ে যেতে বললেন।
তারমানে এতক্ষণ যা কিছু হলো নামায কিন্তু চলমান। সকল কিবলার কিবলা যখন উনার নূরানী চেহারা মুবারক দেখালেন তখন ছাহাবায়ে কিরাম উনারা ক্বাবা শরীফের দিক থেকে মুখ সরিয়ে মিনিমাম ৯০ ডিগ্রী ঘুরে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে কিবলা স্থির করে নিলেন। সম্ভবত ঐসময় ইমাম হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম সূরা কিরয়াতও পাঠ করাও বন্ধ রেখেছিলেন।
নবীজী কি বলেছিলেন আপনাদের নামায হয়নি। আপনারা নামায দোহরিয়ে পড়ুন। আপনারা নামায বাদ দিয়ে তাকাচ্ছেন কেন? বরং তিনি হাসি মুবারক দিয়েছিলেন, ইশকে রসূলের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং সে চলমান নামাযও শেষ করতে বলেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
ঘটনাটা ফিকির করেন অনেক কিছু বুঝবেন।
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -৯

 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -৯

হযরত ইমাম কাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আশ শিফা বিতারিফে হুকুকীল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ কিতাবে বর্ণনা করেন,
وَمِنْ إِعْظَامِهِ وَإِكْبَارِهِ إِعْظَامُ جَمِيعِ أَسْبَابِهِ، وَإِكْرَامُ مَشَاهِدِهِ وَأَمْكِنَتِهِ مِنْ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ، وَمَعَاهِدِهِ. وَمَا لَمَسَهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْ عُرِفَ به. عَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ نَجْدَةَ قَالَتْ: كَانَ لِأَبِي مَحْذُورَةَ قُصَّةٌ فِي مُقَدَّمِ رَأْسِهِ إِذَا قَعَدَ وأرسلها أصابت الأرض.. فقيل له: أَلَا تَحْلِقُهَا؟! فَقَالَ: لَمْ أَكُنْ بِالَّذِي أَحْلِقُهَا وَقَدْ مَسَّهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ.
হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি গভীর সম্মান ও আদব প্রদর্শনের অন্যতম দিক হলো উনার সঙ্গে সম্পর্কিত সব কিছুর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা। উনার কদম মুবারক স্পর্শীত স্থানসমূহকে মর্যাদা দেওয়া। উনার অবস্থানস্থল যেমন মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ, উনার অবস্থান ও ইবাদতের স্থান গুলোকে সম্মান করা। এবং যেসব জিনিস হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পর্শ করেছেন বা যেগুলো উনার সঙ্গে সম্পর্কিত হিসেবে পরিচিত সেসবেরও ।
হযরত সাফিয়্যা বিনতে নাজদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহিহা থেকে বর্ণিত,
হযরত আবূ মাহযূরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কপালের সামনের দিকে একটি লম্বা চুলের গোছা ছিল। যখন তিনি বসতেন, সেই চুলের আগা মাটিতে লেগে যেত। কেউ উনাকে বললেন, ‘আপনি এটা ছেটে ফেলেন না কেন?’
তখন তিনি বললেন, ‘আমি কখনোই এটা ছাটবো না। কারণ হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিজের হাতে এই স্থানটি স্পর্শ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
وَكَانَتْ فِي قَلَنْسُوَةِ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ شَعَرَاتٌ مِنْ شَعَرِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.. فَسَقَطَتْ قَلَنْسُوَتُهُ فِي بَعْضِ حُرُوبِهِ فَشَدَّ عَلَيْهَا شَدَّةً أَنْكَرَ عَلَيْهِ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَثْرَةَ مَنْ قُتِلَ فِيهَا.. فَقَالَ: ‌لَمْ ‌أَفْعَلْهَا ‌بِسَبَبِ ‌الْقَلَنْسُوَةِ، ‌بَلْ ‌لِمَا ‌تَضَمَّنَتْهُ ‌مِنْ ‌شَعَرِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِئَلَّا أُسْلَبَ «٥» بَرَكَتَهَا وَتَقَعَ فِي أَيْدِي الْمُشْرِكِينَ.
হযরত খালিদ ইবনু ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর টুপিতে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুলের কয়েকটি কেশরাশি রাখা ছিল।
এক যুদ্ধে উনার সেই টুপিটি পড়ে গেল। তখন হযরত খালিদ ইবনু ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সেটি উদ্ধার করার জন্য এমন প্রবলভাবে শত্রুর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়লেন যে, এতে অনেক মানুষ শহীদ হলো।
হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্যান্য ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগন এই ঘটনায় উনার প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করলেন। অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম অবাক হলেন যে, এত বিপদ মাথায় নিয়ে তিনি কেন টুপিটির জন্য এত লড়লেন?
তখন হযরত খালিদ ইবনু ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি টুপির জন্য এমন করিনি; বরং টুপির ভেতরে ছিল হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চুল মুবারক। আমি ভয় পেয়েছিলাম যেন উনার বরকত থেকে বঞ্চিত না হই, এবং যেন তা মুশরিকদের হাতে না পরে। (আশ শিফা বিতারিফে হুকুকীল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২য় খন্ড ১২৭ পৃষ্ঠা)
সুবহানাল্লাহ! এই হচ্ছে হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নমুনা। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগন সব কিছুর উপর হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতেন।
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - ৮

 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - ৮

ইন্তেকাল পথযাত্রী হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাক্ষাত লাভের সুযোগ হচ্ছে মর্মে আনন্দ প্রকাশ-
হযরত বিলাল ইবন রাবাহ রদ্বিয়াল্লাহ তা'আলা 'আনহু যখন ইন্তেকাল পথযাত্রী, তখন উনার স্ত্রী দুঃখ ও বেদনায় ভরাক্রান্ত হয়ে কাঁদছেন আর বলছেন, হায় কষ্ট! হায় দুশ্চিন্তা! তখন বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্ত্রীর দুঃখ-বেদনা প্রকাশের প্রেক্ষিতে নিজের মনের কথা তুলে ধরে বলেন,
بَلْ وَا طَرَبَاهُ غَدًا نَلْقَى الأَحِبَّةَ مُحَمَّدًا وَصَحِبَه
'বরং খুশী ও আনন্দের কথা যে, কালকেই আমি আমার সর্বাধিক প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার সাথীদের সাথে মিলিত হব' (মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৩২৫)
অর্থাৎ তিনি স্ত্রীকে শান্ত্বনা দিচ্ছেন যে, উনার ইন্তেকাল স্ত্রীর জন্য দুঃখ ও বেদনার বিষয় হলেও এই ইন্তোকালের মাধ্যমেই তিনি হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাত লাভে ধন্য হবেন। এটা উনার জন্য পরম আনন্দের বিষয়। কতটা হুব্বে রসূল প্রকাশ করতেন ছাহাবীগন সেটা চিন্তা করে দেখেন।
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৭

 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৭

عَنْ عُمَارَةَ بْنِ خُزَيْمَةَ، أَنَّ عَمَّهُ، حَدَّثَهُ وَهُوَ، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم ابْتَاعَ فَرَسًا مِنْ أَعْرَابِيٍّ فَاسْتَتْبَعَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِيَقْضِيَهُ ثَمَنَ فَرَسِهِ فَأَسْرَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَشْىَ وَأَبْطَأَ الأَعْرَابِيُّ فَطَفِقَ رِجَالٌ يَعْتَرِضُونَ الأَعْرَابِيَّ فَيُسَاوِمُونَهُ بِالْفَرَسِ وَلاَ يَشْعُرُونَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم ابْتَاعَهُ فَنَادَى الأَعْرَابِيُّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنْ كُنْتَ مُبْتَاعًا هَذَا الْفَرَسَ وَإِلاَّ بِعْتُهُ ‏.‏ فَقَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم حِينَ سَمِعَ نِدَاءَ الأَعْرَابِيِّ فَقَالَ ‏"‏ أَوَلَيْسَ قَدِ ابْتَعْتُهُ مِنْكَ ‏"‏ ‏.‏ فَقَالَ الأَعْرَابِيُّ لاَ وَاللَّهِ مَا بِعْتُكَهُ ‏.‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ بَلَى قَدِ ابْتَعْتُهُ مِنْكَ ‏"‏ ‏.‏ فَطَفِقَ الأَعْرَابِيُّ يَقُولُ هَلُمَّ شَهِيدًا ‏.‏ فَقَالَ خُزَيْمَةُ بْنُ ثَابِتٍ أَنَا أَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَايَعْتَهُ ‏.‏ فَأَقْبَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى خُزَيْمَةَ فَقَالَ ‏"‏ بِمَ تَشْهَدُ ‏"‏ ‏.‏ فَقَالَ بِتَصْدِيقِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ‏.‏ فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم شَهَادَةَ خُزَيْمَةَ بِشَهَادَةِ رَجُلَيْنِ ‏.‏
হযরত উমারাহ ইবনু খুযাইমাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত,উনার চাচা জানিয়েছেন যে, তিনি হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। একদা হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক বেদুঈনের কাছ হতে একটি ঘোড়া কিনলেন। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ঘোড়ার দাম নেয়ার জন্য উনার পিছে পিছে আসতে বললেন। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্রুত চলতে লাগলেন। তাতে বেদুঈন পিছে পড়ে গেলো। তখন কতিপয় ব্যক্তি বেদুঈনের সামনে এসে দরদাম করতে শুরু করলো। তারা জানতো না যে, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা কিনেছেন। বেদুঈন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ডেকে বললো, যদি আপনি কিনতে চান তবে কিনুন, নতুবা আমি এটা বিক্রি করে দিচ্ছি। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেদুঈনের ডাক শুনে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, আমি কি তোমার কাছ হতে এটা ক্রয় করিনি? বেদুঈন বললো, আল্লাহর কসম! না, আমি আপনার নিকট তা বিক্রি করিনি (নাউযুবিল্লাহ)। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হাঁ, আমি কিছুক্ষণ আগেই তোমার কাছ হতে এটা কিনেছি। বেদুঈন বলতে লাগলো, তাহলে সাক্ষী পেশ করুন। তখন হযরত খুযাইমাহ্ ইবনু সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই তুমি এই ঘোড়া হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট বিক্রি করেছো। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত খুযাইমাহ ইবনু সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বললেন, তুমি কী সাক্ষ্য দিচ্ছো? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কথার সত্যতার অনুকূলে সাক্ষ্য দিচ্ছি। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত খুযাইমাহ ইবনু সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর একার সাক্ষ্য দুইজনের সাক্ষ্যের সমান গণ্য করলেন। (আবু দাউদ শরীফ ৩৬০৭)
এ বিষয়ে বর্নিত আছে,
من طريق مُحَمَّد بْن زُرَارَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ، حَدَّثَنِي عُمَارَةُ بْنُ خُزَيْمَةَ، عَنْ أَبِيهِ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ : " أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ابْتَاعَ مِنْ سَوَاءَ بْنِ الْحَارِثِ الْمُحَارِبِيِّ فَرَسًا فَجَحَدَهُ فَشَهِدَ لَهُ خُزَيْمَةُ بْنُ ثَابِتٍ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا حَمَلَكَ عَلَى الشَّهَادَةِ وَلَمْ تَكُنْ مَعَهُ؟ قَالَ: صَدَقْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَلَكِنْ صَدَّقْتُكَ بِمَا قُلْتَ وَعَرَفْتُ أَنَّكَ لَا تَقُولُ إِلَّا حَقًّا، فَقَالَ: مَنْ شَهِدَ لَهُ خُزَيْمَةُ أَو شهِدَ عَلَيْهِ ؛ فَحَسْبُهُ .
মুহম্মাদ ইবনু জরারাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু খুযাইমাহ ইবনু সাবিত বলেন, আমাকে বর্ণনা করেছেন উমারাহ ইবনু খুযাইমাহ, তিনি তাঁর পিতা হযরত খুযাইমাহ ইবনু সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বলেন,
হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাওয়া ইবনুল হারিস আল-মুহারিবী নামের একজনের কাছ থেকে একটি ঘোড়া ক্রয় করেন। কিন্তু সে ব্যক্তি (মূল্য পাওয়ার পর) তা অস্বীকার করে। তখন খুযাইমাহ ইবনু সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পক্ষে সাক্ষ্য দেন।
তখন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন,
“তুমি তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলে না, তবু তোমাকে কোন বিষয় সাক্ষ্য দিতে অনুপ্রাণিত করল?”
হযরত খুযাইমাহ ইবনু সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উত্তর দিলেন,
“হে আল্লাহর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সত্য বলেছেন। আমি আপনাকে বিশ্বাস করেছি, কারণ আমি জানি আপনি কখনো মিথ্যা বলেন না; আপনি কেবল সত্যই বলেন।”
তখন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
যার পক্ষে বা বিপক্ষে খুযাইমাহ সাক্ষ্য দেবে, সেটাই যথেষ্ট (অর্থাৎ উনার একক সাক্ষ্যই প্রমাণস্বরূপ গণ্য হবে)। (ইবনে আবি শায়বা ১৯, সুনানুল কুবরা বায়হাকী ২০৫১৬, মুজামুল কবীর তাবরানী ৩৮৩০)
এ কারণে হযরত খুযাইমাহ ইবনু সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-কে “ذو الشهادتين” (দুই সাক্ষ্যধারী) উপাধি দেওয়া হয়। অর্থাৎ উনার এক সাক্ষ্যই দুজন সাক্ষ্যের সমান ধরা হতো, কারণ তিনি হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সত্যবাদিতার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখেছিলেন।
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৬


 
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৬

وَسُئِلَ عَلِيّ بن أَبِي طَالِب رَضِيَ اللَّه عَنْهُ كَيْفَ كَانَ حُبُّكُمْ لِرَسُولِ اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ ‌كَانَ ‌والله ‌أَحَبَّ ‌إِلَيْنَا ‌من ‌أَمْوَالِنَا ‌وَأَوْلادِنَا ‌وَآبَائِنَا ‌وأُمَّهَاتِنَا ‌وَمِنَ ‌المَاءِ ‌الْبَارِدِ ‌عَلَى ‌الظَّمَإِ،
হযরত আলী ইবন আবি তালিব আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এর প্রতি আপনাদের ভালোবাসা কেমন ছিল? তিনি এ প্রশ্নের জবাবে বলেন,
"আল্লাহ পাকের শপথ! তিনি আমাদের কাছে আমাদের ধন সম্পদ, আমাদের সন্তান-সন্ততি, আমাদের পিতৃবর্গ, আমাদের মায়েদের এবং পিপাসার্ত অবস্থায় ঠান্ডা পানির চেয়েও অধিক প্রিয় ছিলেন ।" (আশ শিফা ২/২২)
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের থেকে শিখতে হবে। তবেই ঈমানের স্বাদ পাওয়া যাবে।
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৫

 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৫

হযরত জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছিলেন,
لَوْ قَدْ جَاءَنَا مَالُ الْبَحْرَيْنِ قَدْ أَعْطَيْتُكَ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا ‏"‌‏.‏ فَلَمَّا قُبِضَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَجَاءَ مَالُ الْبَحْرَيْنِ قَالَ أَبُو بَكْرٍ مَنْ كَانَتْ لَهُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عِدَةٌ فَلْيَأْتِنِي‏.‏ فَأَتَيْتُهُ فَقُلْتُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ كَانَ قَالَ لِي ‏"‏ لَوْ قَدْ جَاءَنَا مَالُ الْبَحْرَيْنِ لأَعْطَيْتُكَ هَكَذَا وَهَكَذَا وَهَكَذَا ‏"‌‏.‏ فَقَالَ لِي احْثُهْ‏.‏ فَحَثَوْتُ حَثْيَةً فَقَالَ لِي عُدَّهَا‏.‏ فَعَدَدْتُهَا فَإِذَا هِيَ خَمْسُمِائَةٍ، فَأَعْطَانِي أَلْفًا وَخَمْسَمِائَةٍ‏.‏
যদি আমার নিকট বাহরাইন থেকে মাল আসে তবে আমি তোমাকে এ পরিমাণ, এ পরিমাণ, এ পরিমাণ দিব। পরে যখন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিছাল শরীফ সংঘটিত হয়, পরে বাহরাইনের সম্পদ এসে যায় তখন খলীফা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যে ব্যক্তির কোন ওয়াদা থাকে, সে যেন আমার নিকট আসে। তখন আমি উনার নিকট গেলাম এবং বললাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছিলাম, যদি আমার নিকট বাহরাইনের সম্পদে আসে, তবে আমি তোমাকে এ পরিমাণ, এ পরিমাণ ও এ পরিমাণ দিব। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আমাকে বললেন, তুমি অঞ্জলি ভরে নাও। আমি এক অঞ্জলি উঠালাম। তিনি আমাকে বললেন, এগুলো গুণে দেখ। আমি গুণে দেখলাম যে, তাতে পাঁচশ রয়েছে। তখন তিনি আমাকে এক হাজার পাঁচশ দিলেন। (বুখারী শরীফ ৩১৬৪)
ফিকিরের বিষয় হচ্ছে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কাছে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা বলা মাত্র কোন ফিকির কোন যাচাই, কোন সাক্ষী তলব না করেই সে পরিমাণ সম্পদ দিয়ে দিলেন। হুব্বে রসূল এটাকেই বলে। সুবহানাল্লাহ!
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৪

 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৪

হযরত যায়দ ইবন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিনে আমাকে হযরত সা'দ ইবনুর রাবী' রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর অনুসন্ধানে এই বলে পাঠালেন যে,
إن رأيته فالمرأه مني السلام، وَقُلْ لَهُ يَقولُ لَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسَلَّمَ كَيْفَ تَجِدُكَ ؟
'যদি তুমি তাকে পাও তাহলে আমার সালাম পৌঁছে দিও এবং তাকে বলো, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে বলেছেন, 'আপনার অবস্থা কি?
হযরত যায়েদ ইবন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে উনাকে খুঁজতে থাকলাম এবং উনাকে জীবনের শেষ প্রহরে দেখতে পেলাম। দেখি উনার শরীরে ৭০টি তীর, বল্লম, বর্শা ও তরবারীর আঘাত রয়েছে। আমি তাকে বললাম, হে সা'দ। হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার নিকট সালাম পাঠিয়েছেন এবং তিনি আপনার উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, আপনার অবস্থা কি? তা যেন আমাকে অবহিত করেন।
হযরত সা'দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এবং আপনার প্রতি আমার সালাম। উনাকে বলবেন যে, আমি জান্নাতের সুঘ্রান পাচ্ছি। আর আনসারদেরকে বলবেন,
لا عُذْرَ لَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَنْ يُخْلِصَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ وَفِيْكُمْ شُفْرٌ يَطْرِفُ
তোমাদের জীবনের শেষ বিন্দু দিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি নিষ্ঠাবান থেকো, অন্যথায় আল্লাহর নিকট তোমাদের কোনো ওযর গ্রহণযোগ্য হবে না'।
যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এই কথা বলার সাথে সাথেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
(মুসতাদরাক আলাস সহীহাইন ৪৯০২, দালায়েলুন নবুওয়া লিল বায়হাকী ৩/২৪৮)
জিহাদে প্রচন্ড আহত হয়েও , শরীরে ৭০ টি আঘাত নিয়েও উনার চিন্তা ছিলো হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে। এরই নাম হুব্বে রসূল।
 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৩

 হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-৩

বদরের জিহাদে সময় হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, 'আমি আল-মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর একটি শান মুবারক দেখেছি, যে সে ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া আমার নিকট পৃথিবীর সমস্ত বস্তুর চেয়ে অধিক প্রিয়।
হযরত আল-মিকদাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এমন সময় আসলেন, যখন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুশরিকদের বিরুদ্ধে দু'আ করছিলেন। হযরত আল-মিকদাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
لَا تَقُولُ كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوسَى اذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلَا وَلَكِنَّا نُقَاتِلُ عَنْ يَمِينِكَ وَعَنْ شِمَالِكَ وَبَيْنَ يَدَيْكَ وَخَلْفَكَ فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَشْرَقَ وَجْهُهُ وَسَرَّهُ
আমরা এমনটি বলবো না, যেমন হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালামকে উনার কওম বলেছিল, 'আপনি আর আপনার রব দুজনে গিয়ে যুদ্ধ করুন', বরং আমরা আপনার ডান পাশে, বাম পাশে, সম্মুখ থেকে এবং পেছন থেকে লড়াই করবো'। আমি হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে, (আল-মিকদাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর এ কথার পর) উনার মুখমন্ডল উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তিনি আনন্দিত হয়েছেন' ।
একইভাবে আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরো বলেন,
فَقَامَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ، فَقَالَ : إِيَّانَا تُرِيدُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ تُحِيضَهَا الْبَحْرَ لَأَحْضْنَاهَا ، وَلَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ نَضْرِبَ أَكْبَادَهَا إِلَى بَرْكِ الْغمَادِ لَفَعَلْنَا،
তখন সা'দ ইবন 'উবাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দাঁড়ালেন, অতঃপর বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন! আপনি যদি আমাদের ঘোড়াসহ সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে নির্দেশ করেন আমরা অবশ্যই সাগরে ঝাঁপ দেব। আপনি যদি নির্দেশ দেন যে, আমরা ঘোড়াগুলোকে পদাঘাত করে অগ্রসর হয়ে বারকুল গিমাদ পর্যন্ত পৌছে যাই, আমরা অবশ্যই তা করব' (মুসনাদে আহমদ ৩৬৯৮, ১৩৭০৩)
মদীনা শরীফ থেকে বারকুল গিমাদ সাগর তীর প্রায় ১৭০০ কিলোমিটার দূরত্ব।