সাইয়্যিদু সুলত্বানিল আউলিয়া, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, আবূ আব্দুল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংক্ষিপ্ত পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক

সাইয়্যিদু সুলত্বানিল আউলিয়া, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, আবূ আব্দুল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংক্ষিপ্ত পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক-

 হযরত আহালু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে জানা, উনাদের মুহব্বত করা, উনাদের খিদমত মুবারক করা, উনাদের তা’যীম-তাকরীম করা এবং উনাদের মুবারক ছানা-ছিফত করা সমস্ত মুসলমান তথা জিন-ইনসান সমস্ত কায়িনাতের জন্য ফরয। যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কিতাব কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, 

قل لا أسألكم عليه أجرأ الا المودة  في القربى. ومن يقترف حسنة نزد له فيها حسنا. ان الله غفورشكور.

অর্থ: “(হে আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, “তোমাদের কাছে কোনো কিছু চাওয়া হচ্ছে না (আর তোমাদের পক্ষে কোনো বিনিময় দেয়াও সম্ভব নয়, বরং বিনিময় দেয়ার চিন্তা করাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত); তবে তোমরা আমার ক্বরীব তথা আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে সদাচরণ (তা’যীম-তাকরীম, ছানা-ছিফত ও খিদমত মুবারক) করবে। যে কেউ এই মহান নেক কাজ (আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের তা’যীম-তাকরীম, ছানা-ছিফত, খিদমত মুবারক) করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে আরো উত্তম প্রতিদান হাদিয়া করবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল এবং আমলে উত্তম প্রতিদান দানকারী।” সুবহানাল্লাহ!

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা আমার আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার মুহব্বতে।” সুবহানাল্লাহ! 

বারো ইমাম:

হযরত আহালু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ইমাম বারো (১২) জন। এই ১২ জন ইমাম উনারা হলেন- 

১. ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আসাদুল্লাহিল গালিব, বাবু মদীনাতিল ইলম, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, 

২. ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম,

 ৩. ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শহীদে কারবালা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম, 

৪. ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদু সুলত্বানুল আউলিয়া, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, আবূ আব্দুল্লাহ, সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত আলী আওসাত যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম, 

৫. ইমামুল খামীস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম, 

৬. ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম, 

৭. ইমামুস সাবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুসা কাযিম আলাইহিস সালাম, 

৮. ইমামুছ ছামিন মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আলী রিযা আলাইহিস সালাম, 

৯. ইমামুত তাসি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহম্মদ তকী আলাইহিস সালাম, 

১০. ইমামুল আশির মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহম্মদ নকী আলাইহিস সালাম, 

১১. ইমামুল হাদি আশার মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আসকারী আলাইহিস সালাম এবং 

১২. ইমামুছ ছানী আশার মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহম্মদ মাহদী আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

প্রথম ১১ জন ইমাম উনারা পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। আর ১২তম ইমাম তিনি আখিরী যামানায় তাশরীফ আনবেন। উনাদের জীবনী মুবারক জানা সকলের জন্যই ফরয। এখানে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী তথা জীবনী মুবারক আলোচনা করার কোশেশ করবো। ইনশাআল্লাহ! 

পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন- ৪৭ হিজরী সন উনার ৫ই শা’বান শরীফ ইয়াওমুল খমীস বা বৃহস্পতিবার।

পবিত্র নাম ও নসব মুবারক:

ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, সুলত্বানুল আউলিয়া, যীনাতুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের চতুর্থ ইমাম। উনার মূল নাম মুবারক ‘আলী আওসাত’ আলাইহিস সালাম। ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন যাওজাতুম মুকাররমাহ ছিলেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত লাইলা বিনতে মুররা আলাইহাস সালাম। (তারিখুত তাবারী- ৩/৩৩০)

উনার পবিত্র রেহেম শরীফে যিনি তাশরীফ এনেছিলেন উনারও নাম মুবারক ছিল সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আলী’ আলাইহিস সালাম। পরবর্তী সময়ে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আলী আকবর’ আলাইহিস সালাম হিসেবে মাশহুর হন। 

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার আরো একজন পুত্র আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারকও ছিল সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আলী’ আলাইহিস সালাম। উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আলী আছগর’ আলাইহিস সালাম বলা হয়। আর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকের সাথে ‘আওসাত’ সংযুক্ত করে বলা হয় ‘আলী আওসাত’ আলাইহিস সালাম। কারবালার প্রান্তরে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আলী আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আলী আছগর আলাইহিস সালাম উনারা শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। হযরত আলে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র একজন আওলাদ কারবালার ময়দান থেকে ফিরে আসেন। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার মাধ্যম দিয়েই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নসব মুবারক জারি রয়েছে। ইহুদীদের মদদপুষ্ট, কাট্টা কাফির, চির লা’নতগ্রস্ত, মালউন ইয়াযীদ কাফির এবং তার শয়তান সাঙ্গপাঙ্গরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বংশধারা মিটিয়ে দিতে চাইলেও তারা তা পারেনি। 

 কুনিয়াত মুবারক:

উনার কুনিয়াত মুবারক বা উপনাম মুবারক আবুল হাসান ও আবূ মুহম্মদ। উনাকে আবূ আব্দুল্লাহ মাদানীও বলা হয়। (তাহযীবুত তাহযীব-৭/২৬০) 

সম্মানিতা মাতা:

সম্মানিতা মাতা ছিলেন পারস্য শাসকের কন্যা সাইয়্যিদাতুনা হযরত শহরবানু আলাইহাস সালাম। ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সাথে নিসবতে আযীম মুবারক হওয়ার পর উনাকে “সালমা” আলাইহাস সালাম এই মুবারক নামে নামকরণ করা হয়। কেউ কেউ “গাযালা” আলাইহাস সালামও বলেছেন। (তাহযীবুল কামাল- ১৩/২৩৭, সুয়ারুল মিন হায়াতিত তাবিয়ীন/৩৩৭)

পবিত্র লক্বব মুবারক:

ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, সুলত্বানুল আউলিয়া, যীনাতুল আরিফীন আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র “আল্লাহ পাক” এবং “রসূল পাক” ব্যতীত যত লক্বব মুবারক রয়েছে তিনি সমস্ত লক্বব মুবারকেরই অধিকারী তথা মালিক ও বণ্টনকারী। উনার বিশেষ লক্বব মুবারক হচ্ছেন ‘যাইনুল আবিদীন’। এই লক্বব মুবারকেই তিনি সারা দুনিয়ায় পরিচিত। এখানে উনার কিছু লক্বব মুবারক উল্লেখ করা হলো। 

ইয়াদগারে নবুওয়াত (নুবুওয়াত উনার স্মারক),

যাইনুল আবিদীন (ইবাদতকারীগণের সৌন্দর্য),

 পেশওয়ায়ে দ্বীন (পবিত্র দ্বীন উনার ধারক-বাহক),

যাক্বী (অত্যন্ত বুদ্ধিমান), 

আমীন (চরম বিশ্বাসী),

যীনাতুল আরিফীন (নৈকট্যপ্রাপ্তদের সৌন্দর্য),

সাইয়্যিদুল মুতাওয়াককিলীন (তাওয়াককুলকারীগণের সাইয়্যিদ),

ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন (মুহাক্বক্বিক্বীনগণের ইমাম),

আফদ্বালুল উম্মাহ (সর্বশেষ্ঠ উম্মত),

ফকীহুদ দ্বীন (দ্বীনের ফকীহ), 

আফকাহুন্ নাস (মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সমঝদার)। (তাহযীবুল কামাল-১৩/২৩৮, তাহযীবুত তাহযীব-৭/২৬০) 

ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুসলিম জাহানের চতুর্থ খলীফা, বাবুল ইলম ওয়াল হিকাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি যেদিন পবিত্র শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন তার প্রায় ৭ বৎসর পর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে আগমন করেন। কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় তিনি প্রায় ১৪ বছর বয়স মুবারকের অধিকারী ছিলেন।

 তা’লীম তরবিয়ত মুবারক:

সুলত্বানুল আরিফীন, পেশওয়ায়ে দ্বীন, ইয়াদগারে নুবুওয়াত, যীনাতুল আরিফীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি ইমামে আহলে বাইত, আওলাদে রসূল। আর হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা সমস্ত ইলমের মালিক। উনাদের প্রতি পবিত্র ওহী নাযিল হয়নি, তবে উনারা কুদরতীভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং উনাদেরকে সমস্ত ইলমই হাদিয়া করা হয়েছে। উনাদের জিসিম মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুন নাজাত মুবারক প্রবাহিত। তাই উনারা অন্যান্য মানুষের মতো নন এবং উনাদের ইলম হাছিলের বিষয়টিও সাধারণ মানুষের মতো নয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে সৃষ্টিজগৎ রক্ষাকারী ও পবিত্রকারী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।             সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি যেদিন কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন, সে সময় উনার বয়স মুবারক ছিল প্রায় ১৪ বছর। এর পূর্ব পর্যন্ত উনার সম্মানিত পিতা উনার খাছ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ পেয়ে ছিলেন। নবী পরিবার উনার পূর্ণ হিসসা তিনি পেয়েছেন। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি ইলমের শহর আর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন সেই শহরের দরজা।” সেই ইলম ও হিকমাহ সাইয়্যিদুশ শুহাদা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীনা মুবারক হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীনা মুবারকে স্থান পায়। খোদ সাইয়্যিদুশ শুহাদা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরবিয়ত দাতা; তাহলে তিনি কিরূপ ইলম, আকল, সমঝ, প্রাপ্ত তা সহজেই অনুমেয়। 

একবার হযরত মুহম্মদ হানাফিয়া ইবনে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত ইমামত উনার ব্যাপারে মুসলিম উম্মতকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সুলত্বানুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজ করলে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইহা উত্তম হবে যে, আমরা উভয়ে লোকজনসহ পবিত্র কা’বা শরীফ প্রাঙ্গণে হাজরে আসওয়াদ উনার নিকট যাই। উনাকে জিজ্ঞাসা করি- বর্তমান সময়ের ইমাম কে? তাতে প্রকৃত সত্য সকলের নিকট প্রকাশিত হবে। 

অতঃপর উনারা হাজরে আসওয়াদ উনার নিকট গেলেন। হাজরে আসওয়াদ উনাকে (কালো পাথর) জিজ্ঞাসা করলে উনার জবান খুলে গেল। হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) স্পষ্টভাবে বলে দিলেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে ‘সম্মানিত ইমামত’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছেছে। তিনিই বর্তমান সময়ের ইমাম।” সুবহানাল্লাহ!

মূলত, এভাবে আনুষ্ঠানিকতা দ্বারা হযরত মুহম্মদ হানাফিয়া ইবনে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার ইমামত জগদ্বাসীর সামনে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! আর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই কারামত দেখে উপস্থিত সকলেই অন্তর থেকে উনাকে ইমামুর রবি’ হিসেবে গ্রহণ করলেন এবং উনার খিমতে নিজদের উৎসর্গ করলেন। সুবহানাল্লাহ!

একদিন জনৈক ব্যক্তি সুলত্বানুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন- হে আওলাদে রসূল! দুনিয়া ও আখিরাতে সবচেয়ে নেককার ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি সচ্ছল ও সুখী থাকা সত্ত্বেও অন্যায় পথ অবলম্বন না করে। আর রাগের সময় ইনছাফের সীমা অতিক্রম না করে, সে ব্যক্তিই হচ্ছে নেককার।” (কাশফুল মাহযুব/৮৫)

তিনি উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার নিকট থেকে ইলম ও হিকমত মুবারক শিক্ষা করেন। এছাড়া উনার সম্মানিত পিতা, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সম্মানিত চাচা সাইয়্যিদু শাবাবি আহলি জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রঈসুল মুহাদ্দিছীন হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ছাহিবে রসূলিল্লাহ হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং ফকীহুল আছর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ অনেক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের নিকট ইলম ও হিকমত শিক্ষা করেন। সুবহানাল্লাহ! (তায্কিরাতুল হুফফায-১/৭৮, তাযীবুল কামাল ১৩/২৩৭, তাহযীবুত্ তাহযীব-৭/২৬০, সিয়ারু আলা মিন নুবালা-৪/৩৮৭)

উনার পবিত্রতম ছোহবতে থেকে যে সকল মহান ব্যক্তিত্বগণ উনারা তা’লীম ও তরবিয়ত হাছিল করেন উনাদের মধ্যে উনার আওলাদগণ হযরত আবু জা’ফর আলাইহিস সালাম, হযরত মুহম্মদ আলাইহিস সালাম, হযরত যায়িদ আলাইহিস সালাম, হযরত উমর আলাইহিস সালাম উনারা ব্যতীত হযরত যায়িদ ইবনে আসলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আসিম ইবনে উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইয়াহহিয়া ইবনে সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব যিনাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি অন্যতম। (তায্কিরাতুল হুফফাজ-১/৭৮, তাহযীবুল কামাল-১৩/২৩৭, তাহযীবুত্ তাহযীব-৭/২৬০, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৪/৩৮৭)

হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন- আমি ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ফকীহ আর দ্বিতীয় কাউকে দেখিনি। অথচ তিনি খুব কম পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। (তাযকিরাতুল হুফফাজ-১/৭৮)

মূলত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারাই তো ফক্বীহ পয়দা করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার পরবর্তী বংশধর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার দয়া-দান-ইহসান মুবারকে তো ইমামে আয’ম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এত সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ মাযহাব হাদিয়া পেয়েছেন। বর্ণিত রয়েছে আখিরী যামানায় হযরত রূহুল্লাহ ইবনে মরিয়ম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হিসেবে দুনিয়ায় আসবেন ১২তম ইমাম হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাকে সহযোগিতা করার জন্য। সুবহানাল্লাহ!

অর্থাৎ হযরত  রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিও হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত-খিদমত করবেন। কারণ সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত। আর উম্মতের জন্য ফরয হচ্ছে হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, উনাদের খিদমত মুবারক করা। হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যেহেতু জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল, অথচ উম্মত হিসেবে এসেছেন, তাই তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে ইজতিহাদ করে চলবেন। কিন্তু মানুষ উনাকে হানাফী মাযহাব উনার অনুসারী মনে করবেন। কারণ উনার ইজতিহাদগুলো ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে মিলে যাবে। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা খাছ ইলম মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!

ইবাদত-বন্দেগী:

হযরত ইমাম আবু হাজিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন- বনি হাশিমগণের সমসাময়িকদের মধ্যে উনাকেই আমি শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন দেখেছি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুসাইয়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, আমি উনার মতো পরহিযগার আর কাউকে দেখিনি। সুবহানাল্লাহ!

মালিকী মাযহাবের ইমাম, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন- “আমার নিকট এই মর্মে খবর পৌঁছেছে যে, হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দিন-রাতে এক হাজার রাকাত নামায আদায় করতেন। আর এটা উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ পর্যন্ত জারি ছিল। এ কারণে উনাকে হযরত ‘যাইনুল আবিদীন’ তথা ইবাদতকারীগণের সৌন্দর্য লক্বব মুবারকে অভিহিত করা হয়। তিনি ছিলেন সেই যামানার সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত গুজার। সুবহানাল্লাহ! 

(তাযকিরাতুল হুফফাজ-১/৭৮, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৪/৩৮৮, তাহযীবুত্ তাহযীব-৭/২৬০, তাহযীবুল কামাল-১৩/২৩৯, হিলয়াতুল আউলিয়া-৩/১৬৫, সুয়ারুম মিল হায়াতিত্ তাবিয়ীন/৩৪২) 

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হিকমতপূর্ণ বাক্য জ্ঞানীর হারানো সম্পদ। কাজেই যেখানে বা যার নিকট উহা পাবে সেখান থেকে বা উনার নিকট থেকেই তা সংগ্রহ করবে।” সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবন মুবারকে উহার পূর্ণ বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয়। ইলমের প্রতি ছিল উনার অদম্য আগ্রহ। তিনি যেখানে ইলমের সন্ধান পেতেন সেখানেই ছুটে যেতেন। ধনী-গরিব উঁচু-নিচু কারো ভেদাভেদ করতেন না। 

একদিন হযরত ইমাম নাফে রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করুন। আপনি সমস্ত মানুষের সাইয়্যিদ। সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আর আপনি একজন গোলামের মজলিসে বসেন। উল্লেখ্য যে, তিনি হযরত যায়িদ ইবনে আসলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইলমের মজলিসে বসতেন। আর তিনি ছিলেন গোলাম। 

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “ইলম হাছিলের ক্ষেত্রে এরূপ মনোভাব থাকা সমীচীন নয়। বরং যেখানে ইলমের সন্ধান যাওয়া যাবে সেখান থেকে তা হাছিল করা উচিত।” সুবহানাল্লাহ!

 (হিলয়াতুল আউলিয়া-৩/১৬২, তাহযীবুল কামাল-১৩/২৩৯, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৪/৩৮৮)

হযরত ইমাম নাফে ইবনে যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, আপনি এমন লোকদের ছোহবত মুবারকে যান- যারা আপনার সমতুল্য নয়। এর হিকমত কি? তিনি বললেন, আমার দ্বীনের ফায়দার জন্য উনাদের ছোহবত মুবারকে গিয়ে থাকি। (সিয়ারু নুবালা-৪/৩৮৮)

মুলত, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মানুষকে ফায়দা দেয়ার জন্যই এমন হিকমত করতেন। তিনি ছিলেন দ্বীনের গৌরব। বিনয়-নম্রতার শাহী মুকুট।

মূলত, সুলত্বানুল আউলিয়া, ইয়াদগারে নুবুওয়াত, পেশওয়ায়ে দ্বীন, যীনাতুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সালিক বা শিক্ষার্থীদের জন্য এমন আদর্শ রেখে গেছেন, যা অনাগত ভবিষ্যতে সবার জন্য অনুসরণীয়-অনুকরণীয় কামিয়াবী লাভের সোপান। 

মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বাণী, “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য বিনীত হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।” তারই বাস্তব প্রতিফলন।

পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:

ইমামুল মুত্তাক্বীন, সুলত্বানুল আউলিয়া, পেশওয়ায়ে দ্বীন, যীনাতুল আরিফীন আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৯৪ হিজরী ২৫ মুহররমুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন ৪৭ বছর বয়স মুবারকে। মুনাফিক ও কাফিরেরা উনাকে বিষ পান করিয়েছিল। নাউযুবিল্লাহ! উনার পবিত্র রওযা শরীফ পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী শরীফে অবস্থিত।

মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি আমাদের সকলকে হযরত আহালু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে হাক্বীক্বীভাবে মুহব্বত করার, তা’যীম-তাকরীম করার, উনাদের ছানা-ছিফাত ও খিদমত মুবারক করার তাওফীক দান করুন। আমীন!

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কিছু ছিফাত মুবারক-

 আলে রসূল, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র শা’বান শরীফ উনার ৫ তারিখ ইয়াওমুল খামীস (বৃহস্পতিবার) হিজরী ৪৭ সনে যমীনে মুবারক তাশরীফ গ্রহণ করেন। উনার পিতা সম্মানিত বেহেশ্ত উনার যুবক উনাদের সাইয়্যিদ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শহীদে কারবালা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম এবং মাতা ছিলেন পারস্য সম্রাট ইয়াজদ্গির্দ-এর কনিষ্ঠা কন্যা হযরত শাহারবানু ওরফে গাযালা আলাইহাস সালাম। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কথা বলার বয়স হতেই পরিবারের অন্যান্য শিশুগণের সাথে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফে যাতায়াত শুরু করেন এবং অতি অল্প বয়স মুবারকেই পবিত্র কুরআন শরীফ হিফ্য করেন। সুবহানাল্লাহ!

তখনকার যুগে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ ছিল দুনিয়ার সেরা শিক্ষাকেন্দ্র। বিজ্ঞ ছাহাবীগণ পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ-এ বসে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ, ফিক্বাহ্, ক্বিরায়াত প্রভৃতি দ্বীনী ইলমের বিভিন্ন শাখার উপর শিক্ষা দান করতেন। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীগণ অনেক সময় দল বেঁধে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের খিদমতে গিয়ে হাজির হতেন এবং উনাদের যবান মুবারকে বিভিন্ন ঘটনা শ্রবণ করে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করতেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেমন ছিলেন, উনার আদত-অভ্যাস মুবারক কেমন ছিল, উনার দিন-রাত কিভাবে কাটতো- এ সমস্ত বর্ণনা শ্রবণ করে তরুণ তাবিয়ীগণ নিজ নিজ জীবনে সেই আদর্শ মুবারক বাস্তবায়িত করার সাধনা করতেন। সুবহানাল্লাহ!

এ সমস্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে অতি অল্প বয়সেই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তিনি সকলের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অস্বাভাবিক মেধা ও সুতীক্ষè ধীশক্তিবলে মাত্র আট/নয় বছর বয়সেই তিনি বড় বড় জ্ঞানী-গুণীগণের মজলিসে সমাদর পেতে লাগলেন। উনারা শিশু সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ে পর্যন্ত খোলাখুলি আলোচনা করে মুগ্ধ হতেন। সুবহানাল্লাহ!

ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে মুবারক ইলম উনার খাছ উত্তরাধিকার ইমাম খান্দানে প্রবেশ লাভ করেছিল; যা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রক্ষা করার জন্য কঠোর সাধনা করে গেছেন। যদিও তিনি খাছ ইলমে লাদুন্নি উনার পূর্ণ অধিকারী। ইল্মের সন্ধান তিনি যেখানেই পেতেন বিনা দ্বিধায় সেখানে হাযির হওয়াই ছিল উনার সাধারণ অভ্যাস মুবারক। তিনি সমগ্র মুসলিম জাহানে ইলমের ক্ষেত্রে অনন্য মর্যাদা এবং উম্মতের সম্মানিত ইমাম ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

সমকালীন মুসলিম জাহানে ইলমে হাদীছ শরীফ এবং ইলমে ফিক্বাহ উনাদের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন সকলের ইমাম, সর্বাপেক্ষা বিচক্ষণ আলিম। 

ইল্মে তরীক্বতে তিনি ছিলেন ছূফীগণের মাথার মুকুট। ইলমে তরীক্বতের যত শাজরা শরীফ আছে তার প্রায় প্রত্যেকটির শীর্ষদেশে ইমাম হিসেবে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক চোখে পড়ে। সুবহানাল্লাহ!

তাছাড়া সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ত্যাগ, অপূর্ব ধৈর্য ও রূহানিয়ত মুবারক উনার মহিমার দ্বারাই ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা কঠিন বিপর্যয়ের হাত হতে উদ্ধারপ্রাপ্ত হয়ে মুসলিম সমাজ পবিত্র কুরআন শরীফ- পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ভিত্তিক খিলাফতে রাশিদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। 

ভোগ-বিলাসের ক্রোড়ে লালিত উমাইয়া খান্দানের সর্বাপেক্ষা সৌখিন যুবক হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শিক্ষা, ছোহবত ও নীরব সাধনা মুবারক উনার গুণেই আদর্শ খলীফা ও দ্বিতীয় উমরে পরিণত হয়েছিলেন।

আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দোয়ায় মুষলধারে বৃষ্টি-

 একবার পবিত্র হজ্জের সময় মক্কা শরীফ উনার মাঝে ভয়ানক খরা (অনাবৃষ্টি) দেখা দিলো। পানির অভাবে লোকজনের মধ্যে হাহাকার পড়ে গেল। বিদেশ হতে আগত পবিত্র হজ্জযাত্রীগণের সাথে সাথে খোদ মক্কাবাসীগণের মধ্যেও পানির এমন সঙ্কট দেখা দিলো যে, লোকজন হয়রান-পেরেশান হয়ে চারিদিকে পানির তালাশে ছুটাছুটি করতে লাগলো। পবিত্র কা’বা শরীফ উনার মাঝে পর্যায়ক্রমে লোকেরা দোয়া-ইস্তিসকা করছেন, কিন্তু এক ফোটা বৃষ্টির চিহ্ন কোথাও দেখা গেল না। 

বসরা হতে একদল দরবেশ পবিত্র হজ্জে আসলেন। লোকজন উনাদের নিকট গিয়ে দোয়ার জন্য আবেদন-নিবেদন করলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। গরম উত্তরোত্তর বাড়তে লাগলো। শেষ পর্যন্ত নিরাশ জনতার দৃষ্টি অপূর্ব দেহসৌষ্ঠব বিশিষ্ট এক যুবকের উপর নিবদ্ধ হলো। তিনি নিবিষ্ট মনে তাওয়াফ করছেন। উনার চেহারা মুবারক হতে যেন অপূর্ব নূরের আভা ফুটে বাহির হচ্ছিল। সম্মানিত যুবক তিনি তাওয়াফ হতে অবসর হওয়ার পর লোকজন গিয়ে উনার চতুর্দিকে সমবেত হলেন। কিছু সংখ্যক লোক উনাকে চিনে ফেললেন। 

বলতে লাগলেন, হে আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মাঝে আজ লাখ লাখ লোক পিপাসায় কাতর হয়ে ছুটাছুটি করছে। আপনি দোয়া মুবারক করুন, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন বৃষ্টি বর্ষণ করেন। 

লোকজনের অস্থিরতা লক্ষ্য করে সুলত্বানুল আউলিয়া, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় পবিত্র কা’বা শরীফ উনার সন্নিকটে ফিরে গেলেন। দুই রাকাত নামায পড়ে সিজদারত অবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে পানির জন্য দোয়া মুবারক করতে লাগলেন। 

দেখা গেল, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদারত অবস্থাতেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে প্রবল বর্ষণ শুরু হলো। 

এমন বর্ষণ হলো যে, পবিত্র কা’বা শরীফ উনার প্রাঙ্গণে রীতিমত পানির স্রোত প্রবাহিত হতে লাগল। পিপাসার্ত মক্কাবাসীগণ শান্ত হলো। হজ্জে আগত লাখ লাখ লোকের মধ্যেও সুলত্বানুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যথার্থ পরিচয় মুবারক আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লো।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনার পর আর কখনো হাসেননি -

কারবালার ঘটনার পর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখনই পানি দেখতেন, তখনই কারবালায় আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পিপাসার কথা মনে পড়তো ও তিনি এতে অত্যন্ত ব্যথিত হতেন।

তিনি কোনো ভেড়া বা দুম্বা জবাই করার দৃশ্য দেখলেও কেঁদে আকুল হতেন। তিনি প্রশ্ন করতেন- এদেরকে জবাইর আগে পানি পান করানো হয়েছে কিনা। পানি দেয়া হয়েছে একথা শোনার পর তিনি বলতেন, কিন্তু আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পানি না দিয়েই শহীদ করেছিল ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির সৈন্যরা।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবসময় রোযা রাখতেন। ইফতারির সময় তিনি অত্যন্ত বেদনাতুর হয়ে বলতেন, হযরত আওলাদে রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শহীদ করা হয়েছে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত অবস্থায়।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার এই দুনিয়াবী জিন্দেগীর পুরো সময়ই সম্মানিত আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য অশ্রু ঝরিয়েছেন, উনাদের ব্যথায় বেদনাতুর সময় কাটিয়েছেন। যে কারণে উনাকে কারাবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর কেউ কখনো হাসতে দেখেনি।

কখনো কখনো কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা স্মরণ হলেই উনার এত বেশি কান্না আসতো যে- অশ্রুতে খাবার মুবারক ভিজে যেত এবং খাবার মুবারকের পানিতেও অশ্রু মুবারক মিশে যেত। একদিন উনার খাদিম উনার এমন অবস্থা দেখে বললো, আপনার ব্যথা-বেদনা এখনো রয়ে গেলো? উত্তরে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমার জন্য আফসুস! মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তিনি উনার ১২ জন আওলাদ উনাদের একজন আওলাদ হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনাকে কয়েক বছর না দেখে উনার ব্যথা-বেদনায় উনার চক্ষু মুবারক উনাদের দৃষ্টি মুবারক হারিয়েছেন, উনার চুল মুবারক সাদা হয়ে যায়, উনি দ্রুত বৃদ্ধ হয়ে যান। আর আমি আমার সম্মানিত পিতা, ভাই এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সবাইকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় অত্যন্ত নির্মমভাবে শহীদ হতে দেখেছি, তাহলে কিভাবে আমার ব্যথা-বেদনা থামতে পারে?

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইল্ম ও তাক্বওয়া মুবারক-

 হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ফকীহ আর দ্বিতীয় কাউকে দেখিনি। অথচ তিনি খুব কম সংখ্যক পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। (তাযকিরাতুল হুফফাজ-১/৭৮) 

হযরত ইমাম আবু হাজিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন- বনি হাশিমগণের সমসাময়িকদের মধ্যে উনাকেই আমি শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন দেখেছি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুসাইয়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, আমি উনার মতো পরহেযগার আর কাউকে দেখিনি। 

মালিকী মাযহাবের ইমাম, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন- “আমার নিকট এই মর্মে খবর পৌঁছেছে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দিন-রাতে এক হাজার রাকায়াত নামায আদায় করতেন। সুবহানাল্লাহ! আর এটা উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ পর্যন্ত জারি ছিল। সুবহানাল্লাহ! এ কারণে উনাকে ‘যাইনুল আবিদীন’ তথা ইবাদতকারীগণের সৌন্দর্য লক্বব মুবারকে অভিহিত করা হয়। তিনি ছিলেন সেই যামানার সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত গুজার। (তাযকিরাতুল হুফফাজ-১/৭৮, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৪/৩৮৮, তাহযীবুত্ তাহযীব-৭/২৬০, তাহযীবুল কামাল-১৩/২৩৯, হিলয়াতুল আউলিয়া-৩/১৬৫, সুয়ারুম মিল হায়াতিত্ তাবিয়ীন/৩৪২) 

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “হিকমতপূর্ণ বাক্য জ্ঞানীর হারানো সম্পদ। কাজেই যেখানে বা যার নিকট উহা পাবে সেখান থেকে বা উনার নিকট থেকেই তা সংগ্রহ করবে।” 

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবন মুবারকে এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পূর্ণ বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয়। ইলমের প্রতি ছিল উনার অদম্য আগ্রহ। যেখানে পবিত্র ইলম উনার সন্ধান পেতেন সেখানেই ছুটে যেতেন। ধনী-গরিব উঁচু-নিচু কারো ভেদাভেদ করতেন না। সুবহানাল্লাহ!

একদিন হযরত ইমাম নাফে’ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন- “মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করুন। আপনি সমস্ত মানুষের ‘সাইয়্যিদ’ এবং সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আর আপনি একজন গোলামের মজলিসে বসেন। উল্লেখ্য যে, তিনি যায়িদ ইবনে আসলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইলমী মজলিসে বসতেন। আর তিনি ছিলেন গোলাম। 

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন- “ইলম হাছিলের ক্ষেত্রে এরূপ মনোভাব থাকা সমীচীন নয়। বরং যেখানে ইলমের সন্ধান পাওয়া যাবে সেখান থেকে তা হাছিল করা উচিত।” (হিলয়াতুল আওলিয়া-৩/১৬২, তাহযীবুল কামাল-১৩/২৩৯, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৪/৩৮৮)

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহামূল্যবান নছীহত মুবারক-

 পবিত্র মুহররমুল হারাম মাস উনার সুমহান ও বরকতময় ২৫ তারিখ মুবারকে শাহদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, যিনি পূত-পবিত্র হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের চতুর্থ ইমাম- সুলত্বানুল আউলিয়া, ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। উনার সুমহান পবিত্র শানে শুকরিয়া  প্রকাশস্বরূপ উনার পবিত্র যবান মুবারক থেকে নিসৃত কতিপয় মহামূল্যবান নছীহত মুবারক উল্লেখ করছি-

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, 

* আমি তায়াজ্জুব (আশ্চর্য) হই ওই ব্যক্তি সম্পর্কে- যে ফখর ও অহঙ্কার করে। কারণ গতকাল যে সামান্য পানি ছিল এবং আগামীকাল যে মৃত্যুবরণ করে আবার মাটিতে মিশে যাবে, তার অহঙ্কার দেখলে বড়ই আশ্চর্য হই।

* আর ওই ব্যক্তির জন্যও আশ্চর্য হতে হয়- যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার আযমত সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনিই তাকে সৃষ্টি করেছেন। 

* ওই ব্যক্তি সম্পর্কেও আশ্চর্য হই- যে পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে; অথচ প্রথমবার মহান আল্লাহ পাক তিনিই তাকে পয়দা করেছেন। 

 * আর ওই ব্যক্তি সম্পর্কেও আশ্চর্য হই- যে ক্ষণস্থায়ী জিন্দেগী অর্থাৎ দুনিয়ার জন্য সবসময় আমল করে; কিন্তু চিরস্থায়ী জিন্দেগী অর্থাৎ পরকালের জন্য আমল করে না। হে ব্যক্তিগণ! তোমরা লক্ষ্য করো, দুনিয়া হচ্ছে মুসাফিরখানা। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ওই আমল থেকে পানাহ তলব করছি- যা লোকদের নিকট জাহিরীভাবে (বাহ্যিকভাবে) ভালো মনে হয়। কিন্তু হাক্বীক্বতে তা অত্যন্ত খারাপ। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন, কিছু লোক আছেন, যাঁহারা মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে ইবাদত করেন। মূলত ইহাই বান্দা বা গোলামদের ইবাদত। কিছু লোক আছে যারা জান্নাত উনার আশায় ইবাদত করে ইহা ব্যবসায়ীদের ইবাদত। আর কিছু লোক রয়েছে যারা একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায়ের লক্ষ্যে ইবাদত করে মূলত ইহা হচ্ছে আযাদ বা স্বাধীন ব্যক্তির ইবাদত। (সফওযাতুছ্ ছাফওয়া, সিয়ারুছ্ ছাহাবা)

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পূর্বে একদিন উনার সুযোগ্য আওলাদ সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খামিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- যিনি হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ৫ম ইমাম, উনাকে ডেকে কিছু মহামূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ নছীহত মুবারক করেন। মুয়ামিলাত-মুয়াশিরাত তথা সংসার জীবনযাপন করার ব্যাপারে। তিনি বললেন, হে আমার প্রিয় আওলাদ! 

* পাঁচ ধরনের লোকদের সাথে কখনো বন্ধুত্ব করবেন না। এমনকি তাদের সাথে দুশমনিও করতে যাবেন না।

প্রথমত, ফাসিক বা পাপীদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন না। তাদের সহচার্য হতে সবসময় দূরে সরে থাকবেন। ওই সমস্ত লোক আপনাকে প্রবৃত্তির গোলামে পরিণত করতে চাইবে এবং যে বিষয়ের কোনো প্রয়োজন নেই- এমন সব বিষয়ে আত্মনিয়োজিত হতে প্ররোচিত করবে। 

দ্বিতীয়ত, কৃপণের সাথে বন্ধুত্ব করবেন না। কেননা যদি কখনো আপনার আর্থিক সমস্যা দেখা দেয়, তখন সে-ই ব্যক্তি বখিলীর কারণে আপনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে পালিয়ে যাবে। 

তৃতীয়ত, মিথ্যাবাদীর সাথে কখনো বন্ধুত্ব করবেন না। কেননা এমন লোক মরীচিকার মতো; সে তার অভ্যাসবশতই আপনার আপনজনদেরকে আপনার থেকে দূরে সরিয়ে দিবে।

 চতুর্থত, আহমক/বোকা লোকের সাথে বন্ধুত্ব করবেন না। কারণ এ ধরনের লোক উপকার করতে গিয়েও এমন ভয়ানক ক্ষতি করে ফেলবে, যার প্রতিকার করা অনেক সময় সম্ভবপর হবে না। 

পঞ্চমত, রক্তের সম্পর্ক ছিন্নকারী লোকদের সাথে সম্পর্ক রাখবেন না। কারণ আমি যে সমস্ত আসমানী কিতাব পাঠ করেছি, প্রত্যেক আসমানী কিতাবে এ ধরনের লোকদেরকে অভিশপ্ত হিসেবে উল্লেখ দেখেছি। (হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন/৭৫)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গুরুত্বপূর্ণ এবং মহামূল্য নছীহত মুবারক অনুযায়ী আমল করার তাওফীক ইনায়েত করুন। আমীন!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আহলে বাইত শরীফ ও হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনারাই হচ্ছেন উনার ঘনিষ্ঠ বা আপনজনের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

 মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক  করেন, “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জানিয়ে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও; তাহলে তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া।”

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হে হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদেরকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে দূরে রাখতে চান এবং আপনাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সর্বপ্রকার অপবিত্রতা থেকে দূরে রেখে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যেমন উনার শ্রেষ্ঠতম নবী, শ্রেষ্ঠতম রসূল এবং উনার হাবীব হিসেবে মনোনীত করেছেন, তদ্রƒপ উনার যারা পবিত্র আহলে বাইত শরীফ ও হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেও তিনি মনোনীত করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নবী, রসূল ও হাবীব যেরূপ রিয়াজত-মাশাক্কাত শিক্ষা-দীক্ষা, আমল-আখলাকের দ্বারা হওয়া যায় না, তদ্রƒপ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত শরীফ ও হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালামও রিয়াজত-মাশাক্কাত দ্বারা হওয়া যায় না।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো, কেননা তিনি তোমাদেরকে নিয়ামত দানের মাধ্যমে অনুগ্রহ করে থাকেন। আর আমাকে মুহব্বত করো মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত লাভ করার জন্য। আর আমার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ, হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার মুহব্বত পাওয়ার জন্য।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, যদি তারা (বান্দা-বান্দী, উম্মত) মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো, মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট মুবারক করা। উনারাই সন্তুষ্টি মুবারক পাওয়ার ক্ষেত্রে সমধিক হক্বদার।

পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা স্পষ্টভাবেই ফুটে উঠেছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে হলে হযরত আহলে বাইত শরীফ ও হযরত আওলাদে আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে নিসবত মুবারক স্থাপন করা সকলের জন্যই দায়িত্ব-কর্তব্য।

সুলত্বানুল আউলিয়া, ইমামুল মুহাক্কিকীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংক্ষিপ্ত সম্মানিত পরিচিতি মুবারক-

 ইয়াদগারে নুবুওওয়াত, পেশওয়ায়ে দ্বীন, সুলত্বানুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক নাম আলী। তবে তিনি ‘আলী আওসাত’ নাম মুবারকে ভূষিত হন। উনার মুবারক কুনিয়াত আবুল হাসান ও আবু মুহম্মদ আলাইহিস সালাম। আবু আব্দিল্লাহ মাদানী আলাইহিস সালামও বলা হয়।

‘যাইনুল আবিদীন’ উনার অসংখ্য অগণিত লক্বব মুবারকের মধ্যে একখানা বিশেষ লক্বব মুবারক। সারাবিশ্বে তিনি এই মহান লক্বব মুবারকে পরিচিত বা মশহুর রয়েছেন।

সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি হচ্ছেন উনার সম্মানিত পিতা।

উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার অপর যাওজাতুল মুকাররমাহ ছিলেন হযরত লাইলা বিনতে মুররা আলাইহাস সালাম। উনার পবিত্র রেহেম শরীফে যিনি তাশরীফ এনেছিলেন উনারও মুবারক নাম ছিল হযরত আলী আলাইহিস সালাম। সঙ্গতকারণে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আলী আকবর নাম মুবারকে ভূষিত হয়েছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার অপর একজন আওলাদ আলাইহিস সালাম উনারও মুবারক নাম ছিল আলী। যিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আলী আসগর আলাইহিস সালাম নামে মশহুর বা পরিচিত ছিলেন। তিনি কারবালার প্রান্তরে শান শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত আলী আকবর এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আলী আছগর আলাইহিমাস সালাম উনারা দু’জনই কারবালার প্রান্তরে পবিত্র শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।

উনার সম্মানিতা মাতা: পারস্য শাসক-এর কন্যা শহরবানু আলাইহাস সালাম। ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিদমতে আসার পর উনার নাম মুবারক হয় হযরত সালমা আলাইহাস সালাম। কেউ কেউ হযরত গাযালা আলাইহাস সালাম বলেও উল্লেখ করেছেন।

সে সময় ছিল আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকাল। সারাবিশ্বে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পতাকা পত পত করে উড়তেছিল। অনেক এলাকা বিজিত হয়। রোম ও পারস্যের মতো দুই পরাশক্তিও ইতোমধ্যে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পতাকাতলে ঠাঁই পায়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিম সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে সারা পৃথিবীর খলীফা বলা হয়। কারণ রোম ও পারস্যের মতো পরাশক্তিকে পরাভূত করতঃ সম্মানিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার অর্থই হচ্ছে সারা দুনিয়ায় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। সুবহানাল্লাহ!

পারস্য শাসক রাজধানী মাদায়েন হতে কাবুলের নিকট এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার সেনাপতি উনাকে বললেন, “যদি পারস্য শাসক বাড়াবাড়ি না করে তাহলে আর তাড়া করার দরকার নেই। বিজিত এলাকার জনগণের কল্যাণের দিকে মনোযোগ দিন। কিন্তু পারস্য শাসক নিজের হাতে তার শেষ পরিণতি ডেকে আনলো। সে বিপুল সম্পদ ব্যয় করে শাহী ফৌজকে পুনর্গঠিত করলো এবং পার্শ্ববর্তী চীন শাসক খাকানের দরবারে হাজির হয়ে সাহায্য প্রার্থনা করলো। চীন শাসক খাকানও আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করতো। কারণ পারস্যের পরেই চীন সীমান্ত। কাজেই আগেভাগে মুসলমানগণের গতিরোধ করা বুদ্ধিমানের কাজ মনে করে এগিয়ে আসলো। কিন্তু সেই স্বপ্ন খড়কুটোর মতো ভেসে গেলো। পারস্য ও চীন শাসকের সম্মিলিত বাহিনীও মুসলিম সেনাপতি উনার গতিরোধ করতে পারলো না। তিন দিন যুদ্ধের পর চীন শাসক খাকান তার বাহিনীসহ পিছটান দিলো। আর পারস্য শাসক নিহত হলো। পারস্য শাসকের পরিবার-পরিজনসহ অনেক লোক মুসলমানগণের পবিত্র হাতে বন্দি হলো। পারস্য শাসক পরিবারের কয়েক শতাব্দীর সঞ্চিত রতœভা-ার খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র দরবার শরীফে হাজির করা হলো। বন্দিদের মধ্যে ছিলেন পারস্য শাসকের তিন কুমারী কন্যা। যারা ছিলেন রূপে গুণে অনন্যা। (মিরয়াতুল আছরার-২০৭, ইমাম যাইনুল আবিদীন-২)

পারস্য শাসকের মেয়েদের জন্য মজলিসে শুরা (পরামর্শ মজলিস) ডাকানো হলো। অনেক আলোচনা হলো। এক পর্যায়ে আসাদুল্লাহিল গালিব, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া আমীরুল মু’মিনীন! তারা খান্দানী মেয়ে। তাদের সাথে সাধারণ বন্দিদের মতো আচরণ করা ঠিক হবে না। কাজেই তাদের জন্য একটা মুক্তিপণ ধার্য করা হোক। আর আমিই সেই মুক্তিপণ বাইতুল মালে জমা দিবো ইনশাআল্লাহ। তারপর তাদেরকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দিকে আহবান করা হবে। যদি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার তিনজন যুবককে যাওজ হিসেবে গ্রহণ করার ইখতিয়ার দেয়া হোক। তাতে যদি সম্মত না হয়, তাহলে অন্য কোনো স্থানে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারবে।

এই প্রস্তাব সকলেরই মনঃপুত হলো। সবাই এই প্রস্তাব মেনে নিলেন। আর পারস্য শাসকের মেয়েগণও অত্যন্ত খুশি হলেন। তারা সবাই সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র হাত মুবারকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম কবুল করলেন।

স্মর্তব্য যে, উনারা পূর্বেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে নতুন করে তওবা করলেন উনার হাত মুবারকে। অতঃপর বড় মেয়ে তিনি যাওজুল মুকাররম হিসেবে গ্রহণ করলেন খোদ সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে। মধ্যমা আওলাদ তিনি পছন্দ করলেন খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আফযালুন নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ হযরত মুহম্মদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে। আর ছোট্ট মেয়ে হযরত শহরবানু আলাইহাস সালাম তিনি পুলক কম্পিত চিত্তে আঙ্গুলী মুবারক নির্দেশ করলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররমাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার পাশে বসা সম্মানিত জান্নাতী যুবকদের সাইয়্যিদ হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি রাইতি রসূলিল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দিকে। সাথে সাথে নিসবাতুল আযীম মুবারক সুসম্পন্ন হলো।

আসাদুল্লাহিল গালিব, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনাদেরকে মুবারকবাদ জানালেন এবং প্রাণ খুলে দোয়া করলেন। বললেন আরব আ’যমের দুইটি শ্রেষ্ঠ রক্তধারার মহামিলন হওয়ার ফলে আপনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়ার সেরা প্রতিভাবান সন্তান দান করবেন। মহান আল্লাহ পাক উনার অন্তর নিংড়ানো দোয়া কবুল করেছেন। সেই সৌভাগ্যবর্তী মেয়ে উনাদের রেহেম শরীফে তাশরীফ আনেন ইমামুল মুহাক্কিকীন, সুলত্বানুল আউলিয়া, ইয়াদগারে নবুওওয়াত, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইমাম কাসিম ইবনে মুহম্মদ ইবনে  আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম এবং ইলমে ফিক্বাহ উনার যুগ শ্রেষ্ঠ ইমাম হযরত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বুযুর্গী, সম্মান ও ফযীলত মুবারক-

 আলে রসূল, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র শা’বান শরীফ উনার ৫ তারিখ ইয়াওমুল খামীস (বৃহস্পতিবার) হিজরী ৪৭ সনে তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন।

উনার পিতা সম্মানিত বেহেশ্ত উনার যুবক উনাদের সাইয়্যিদ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শহীদে কারবালা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম এবং মাতা ছিলেন পারস্য শাসক-এর কনিষ্ঠা কন্যা হযরত শাহারবানু ওরফে গাযালা বা হযরত সালমা আলাইহাস সালাম। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কথা বলার বয়স হতেই পরিবারের অন্যান্য শিশুগণের সাথে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফে যাতায়াত শুরু করেন এবং অতি অল্প বয়স মুবারকেই পবিত্র কুরআন শরীফ হিফ্য করেন।

তখনকার যুগে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ ছিল দুনিয়ার সেরা শিক্ষাকেন্দ্র। বিজ্ঞ ছাহাবীগণ পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ-এ বসে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ, ফিক্বাহ্, ক্বিরায়াত প্রভৃতি দ্বীনি ইলমের বিভিন্ন শাখার উপর শিক্ষা দান করতেন। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীগণ অনেক সময় দল বেঁধে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের খিদমতে গিয়ে হাজির হতেন এবং উনাদের যবান মুবারকে বিভিন্ন ঘটনা শ্রবণ করে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করতেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেমন ছিলেন, উনার আদত-অভ্যাস মুবারক কেমন ছিল, উনার দিন-রাত কিভাবে কাটতো এ সমস্ত বর্ণনা শ্রবণ করে তরুণ তাবিয়ীগণ নিজ নিজ জীবনে সেই আদর্শ মুবারক বাস্তবায়িত করার সাধনা করতেন। 

এ সমস্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে অতি অল্প বয়সেই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি সকলের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অস্বাভাবিক মেধা ও সুতীক্ষè ধীশক্তিবলে মাত্র আট/নয় বছর বয়সেই তিনি বড় বড় জ্ঞানী-গুণীগণের মজলিসে সমাদর পেতে লাগলেন। উনারা শিশু সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সূক্ষ্মতিসূক্ষ্ম বিষয়ে পর্যন্ত খোলাখুলি আলোচনা করে মুগ্ধ হতেন।

মুবারক ইলম উনার খাছ উত্তরাধিকারী সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনিই আর উনার মাধ্যমেই ইমাম খান্দানে প্রবেশ লাভ করেছিল। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি তা রক্ষা করার জন্য কঠোর সাধনা করে গেছেন। যদিও তিনি খাছ ইলমে লাদুন্নি উনার পূর্ণ অধিকারী। ইল্মের সন্ধান তিনি যেখানেই পেতেন বিনা দ্বিধায় সেখানে হাযির হওয়াই ছিল উনার সাধারণ অভ্যাস মুবারক। ফলে সমগ্র মুসলিম জাহানে ইলমের ক্ষেত্রে তিনি অনন্য মর্যাদা এবং উম্মতের সম্মানিত ইমাম হওয়ার দুর্লভ সম্মান লাভ করেছিলেন।

সমকালীন মুসলিম জাহানে ইলমে হাদীছ শরীফ এবং ইলমে ফিক্বাহ উনাদের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন সকলের ইমাম, সর্বাপেক্ষা বিচক্ষণ আলিম। 

ইল্মে তরীক্বতে তিনি ছিলেন সাধককুলের মাথার মুকুট। ইলমে তরীক্বতের যত শাজরা আছে তার প্রায় প্রত্যেকটির শীর্ষদেশে ইমাম হিসেবে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক চোখে পড়ে।

তাছাড়া সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ত্যাগ, অপূর্ব ধৈর্য ও রূহানিয়ত মুবারক উনার মহিমার দ্বারাই ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা কঠিন বিপর্যয়ের হাত হতে উদ্ধারপ্রাপ্ত হয়ে মুসলিম সমাজ পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ শরীফ ভিত্তিক খিলাফতে রাশিদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ভোগ-বিলাসের ক্রোড়ে লালিত উমাইয়া খান্দানের সর্বাপেক্ষা সৌখিন যুবক হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার শিক্ষা, ছোহবত ও নীরব সাধনা মুবারক উনার গুণেই আদর্শ খলীফা দ্বিতীয় উমরে পরিণত হয়েছিলেন। 

কারবালার বিভীষিকাময় সন্ধিক্ষণে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসুস্থ ছিলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে কুদরতীভাবে হিফাযত করতঃ উনার মাধ্যমেই দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা পবিত্র বংশধারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ধারাবাহিকতা জারি করেছেন।

ইল্ম ও আধ্যাত্মিকতার সাধনা ছিল হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রধান উত্তরাধিকার। জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে অকল্পনীয় প্রতিকূলতা অতিক্রম করেও এই মহান নিয়ামতের উত্তরাধিকারীগণ দুনিয়ার বুকে আদর্শের গৌরবময় নূরটি সবসময় নূরান্বিত করে রেখেছেন।

যুগ পরম্পরায় উনাদের সাধনার ধারাবাহিকতা সমগ্র জগৎ প্লাবিত করেছে। গাওছূল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, আশিকে রসূল হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ আহমদ কবীর রিফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মুজাদ্দিদে যামান, হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি আরিফবিল্লাহ হযরত খাজা নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, এবং মুজাদ্দিদে যামান, শহীদে আ’যম, হযরত শায়েখ শহীদ আহমদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাদের ন্যায় দুনিয়ার শীর্ষস্থানীয় ওলী-আউলিয়াগণ সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ উনাদেরই পবিত্র বংশধারার উত্তরাধিকারী। এ পবিত্র বংশধারায় এত মহান ওলীআল্লাহ উনাদের আবির্ভাব হয়েছেন যে, সাধারণভাবে তার বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়। 

ইমামুল মুত্তাক্বীন, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইমামত সম্পর্কে হাজরে আসওয়াদ উনার সাক্ষী-

 ইমামুল মুত্তাক্বীন, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম তিনি শহীদী শান মুবারক প্রকাশ করার পর উনার ক্বায়িম-মক্বাম বা গদ্দিনসীন হন। উনার ইমামতের মাক্বামটি তিনিই অলংকৃত করেন। 

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি ইলমের শহর আর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন সেই শহরের দরজা।” সেই ইলম ও হিকমাহ সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সীনা মুবারক হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীনা মুবারকে স্থান পায়। খোদ সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার তরবিয়ত দাতা; তাহলে তিনি কিরূপ ইলম, আকল, সমঝ প্রাপ্ত তা সহজেই অনুমেয়। 

একবার হযরত মুহম্মদ হানাফিয়া ইবনে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত ইমামত সম্পর্কে মুসলিম উম্মতকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে। সুলত্বানুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজ করলে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ইহা উত্তম হবে যে, আমরা উভয়ে লোকজনসহ পবিত্র কা’বা শরীফ প্রাঙ্গণে হাজরে আসওয়াদ উনার নিকট যাই। উনাকে জিজ্ঞাসা করি- বর্তমান সময়ের ইমাম কে? তাতে প্রকৃত সত্য সকলের নিকট প্রকাশিত হবে। 

অতঃপর উনারা সম্মানিত হাজরে আসওয়াদ উনার নিকট গেলেন। সম্মানিত হাজরে আসওয়াদ উনাকে (কালো পাথর) জিজ্ঞাসা করলে উনার জবান খুলে গেল। সম্মানিত হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) স্পষ্টভাবে বলে দিলেন, “ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে ইমামত সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছেছে। তিনিই বর্তমান সময়ের ইমাম। সুবহানাল্লাহ!

মূলত, এভাবে আনুষ্ঠানিকতা দ্বারা হযরত মুহম্মদ হানাফিয়া ইবনে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার ইমামত জগদ্বাসীর সামনে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! আর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই কারামত দেখে উপস্থিত সকলেই অন্তর থেকে উনাকে ইমামুর রবি’ হিসেবে গ্রহণ করলেন এবং উনার খিমতে নিজদের উৎসর্গ করলেন। সুবহানাল্লাহ!

ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, আওলাদু রসূলিল্লাহ, ইয়াদগারে নুবুওওয়াহ, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রাবি’ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক উসীলায় নিয়ামতে পরিপূর্ণ হয়েছে মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, মুহিউদ্দিন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মক্ববূল মাশহূর ক্বাদিরিয়া তরীক্বা -

 একথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট ইলমসহ সমস্ত নিয়ামতরাজি পুঞ্জীভূত। যা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয়েছে। হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উসীলা ব্যতিত কোনো কিছুই পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে না। যার বাস্তব নমুনা ইলমে তাছাউফ উনার তরীক্বাসমূহ।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার অসীম রহমত বরকত সাকীনা মুবারক উনার বদৌলতে এবং সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ইহসান উনার উসীলায় আজো বিশ্বব্যাপী জারি রয়েছে মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গউছুল আ’যম, দস্তগীর, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মক্ববূল মাশহূর পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বা। সুবহানাল্লাহ! ইনশাআল্লাহ ক্বিয়ামত পর্যন্ত তা ছহীহ তরতীবে জারি থাকবে সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তবে এ তরীক্বা নিয়ামতে পরিপূর্ণ হয়েছে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক উসীলায়। যা এ মহান ত্বরীক্বা উনার পবিত্র শাজরা শরীফ পর্যালোচনা করলেই দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হবে। বিশ্বব্যাপী সুমহান শান মুবারক-এ জারি থাকা মুবারক ক্বাদিরিয়া তরীক্বা উনার সুমহান শাজরা শরীফ এখানে উল্লেখ করা হলো:-

১। ইলাহী বহুরমতে কুল-মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, হায়াতুন নবী, ছাহিবে ইলমে গইব, ছাহিবে মুত্তালা’ ‘আলাল গইব, জামিউল ইলম, ছাহিবে মাফাতীহুল ইলম, আল্হাদ্বির, আন্নাযির, ছাহিবে লাওলাক, ছাহিবে ক্বাবা ক্বওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, ছাহিবে মাক্বামে মাহমূদ, ছাহিবে লিওয়ায়িল হামদ্, ছাহিবে শাফা‘আতে কুবরা, ছাহিবে লাসতু কাআহাদিকুম, ছাহিবে মি’রাজ, ছাহিবে কুন ফাইয়াকুন, ছাহিবে ওয়াহ্য়ি, ছাহিবে শারীআহ, আলগনিইয়্যূ, রঊফুর রহীম, আত্ত্বাহির, আত্তইয়িব, শাফিউল উম্মাহ, খতীবুল আম্বিয়া ওয়াল উমাম, সাইয়্যিদুল মাখদূম, ছাহিবে জামিউল আসমা ওয়াছ ছিফাত, ফাদ্বলুল্লাহ, আকরামুল আওওয়ালীন ওয়াল আখিরীন, ফখরুল আম্বিয়া, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

২। ইলাহী বহুরমতে সাইয়্যিদুল আরব, বাবুল ইলমি ওয়াল হিকমাহ, আমীনু আহলি আরদ্ব, কুদওয়াতুল মুত্তাক্বীনা, যীনাতুল আরিফীন, নূরুল মুত্বীয়ীন, ইমামুল আদিলীন, আহলু বাইতিন নাবিইয়ি, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আসাদুল্লাহিল গালিব, আল ইমামুল আউওয়াল মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম।

৩। ইলাহী বহুরমতে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সিবতু রসূলিল্লাহ, আলু রসূলিল্লাহ, আল ইমামুস সাইয়্যিদ, আল ইমামুল হুমাম, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আল ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৪। ইলাহী বহুরমতে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সিবতু রসূলিল্লাহ, আলু রসূলিল্লাহ, আল ইমামুস সাইয়্যিদ, আল ইমামুল হুমাম, কাবীরুশ শা’ন, শহীদে কারবালা, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, আল ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৫। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, আওলাদু রসূলিল্লাহ, ইয়াদগারে নুবুওওয়াহ, পেশওয়ায়ে দ্বীন, আস সাজ্জাদ, আল ইমামুর রাবি’ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৬। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল হুদা, ইমামু আহলিল ইয়াক্বীন, সুলালাতুন নুবুওওয়াহ, সিরাজুল মিল্লাহ, আল ইমামুল খামিস মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৭। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, আওলাদু রসূলিল্লাহ, ইয়াদগারে নুবুওওয়াহ, ইমামুস সাদিস মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৮। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, আওলাদু রসূলিল্লাহ, ইয়াদগারে নুবুওওয়াহ, ইমামুস সাবি’ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

৯। ইলাহী বহুরমতে ইমামুল মুহাক্বক্বিক্বীন, আওলাদু রসূলিল্লাহ, ইয়াদগারে নুবুওওয়াহ, ইমামুছ ছামিন মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

১০। ইলাহী বহুরমতে ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত শায়েখ মা’রূফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১১। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূল হাসান সাররী সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১২। ইলাহী বহুরমতে হযরত খাজা সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা জুনায়িদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৩। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৪। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আব্দুল আযীয বিন হারিছ তামিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৫। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আব্দুল ওয়াহিদ বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৬। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূল ফাররাহ মুহম্মদ তারতুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৭। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূল হাসান হাককারী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৮। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আবূ সাঈদ মুবারক মখদুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

১৯। ইলাহী বহুরমতে ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, ইমামুর রাসিখীন, সুলত্বানুল আরিফীন, গাউছে সামদানী, মাশায়েখে আকবর মাশরিক ওয়াল মাগরিব, কুতুবুল আলম, ফরদুল আহবাব, গউছুল আ’যম, শায়খে শুইয়খিল আলম, গাউসে সাক্বালাইন, শাইখুল ইসলাম, ইমামুল আইম্মা, সাইয়্যিদুনা হযরত মুহিউদ্দীন বড়পীর ছাহিব আল হাম্বলী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

* তিনিই পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বা উনার সম্মানিত ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি। সকলের নিকট তিনি বড়পীর ছাহিব গাউছুল আ’যম, দস্তগীর লক্বব মুবারক-এ মশহূর।

২০। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ আব্দুর রাযযাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২১। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ শরফুদ্দীন কাত্তাল রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২২। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আব্দুল ওয়াহহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৩। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ বাহাউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৪। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আক্বীল রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৫। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ শামসুদ্দীন সাহরায়ি রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৬। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ গাদায়ে রহমান আউয়াল রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৭। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ শামসুদ্দীন আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৮। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ গাদায়ে রহমান ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

২৯। ইলাহী বহুরমতে হযরত শাহ ফাযিল রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩০। ইলাহী বহুরমতে হযরত শাহ কামাল কায়থালী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩১। ইলাহী বহুরমতে হযরত শাহ সিকান্দার কায়থালী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩২। ইলাহী বহুরমতে আফযালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, কাইয়্যুমে আউওয়াল, আজিমুল বারাকাত, গউছুছ ছাক্বালাইন, খাযীনাতুর রহমাহ, মাখদূমে যামান, আল মুনাওওয়ার, খাজায়ে খাঁজেগা, আবূল বারাকাত বদরুদ্দীন হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী সিরহিন্দী আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। 

* তিনি একাদশ হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ।

* তিনি মহান মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা উনার ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনিই হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খেরকা মুবারক হযরত শাহ সিকান্দার কায়থালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক মারফত প্রাপ্ত হয়েছেন।

৩৩। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আদম বিন নূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩৪। ইলাহী বহুরমতে হযরত সাইয়্যিদ আব্দুল্লাহ আকবরাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩৫। ইলাহী বহুরমতে হযরত শায়েখ আব্দুর রহীম মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩৬। ইলাহী বহুরমতে রঈসুল মুহাদ্দিছীন, মুজাদ্দিদে যামান ও মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

* তিনি দ্বাদশ হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ।

৩৭। ইলাহী বহুরমতে হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৩৮। ইলাহী বহুরমতে আমীরুল মু’মিনীন, মুজাদ্দিদে যামান, হযরত শাহ সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী আলাইহিস সালাম।

* তিনিই ত্রয়োদশ হিজরী শতাব্দীর মহান মুজাদ্দিদ এবং সুপ্রসিদ্ধ ‘মুহম্মদিয়া তরীক্বা’ উনার সম্মানিত ইমাম।

৩৯। ইলাহী বহুরমতে কুতুবুল আকতাব হযরত মাওলানা শাহ ছূফী নূর মুহম্মদ নিজামপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৪০। ইলাহী বহুরমতে ওয়াসিল বিল্লাহ, আশিক্বে রসূলিল্লাহ, কুতুবুল ইরশাদ হযরত মাওলানা শাহ ছূফী ফতেহ আলী বর্ধমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

* উনাকে রসূলে নোমা বলা হয়। কারণ তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত করিয়ে দিতে পারতেন।

৪১। ইলাহী বহুরমতে আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, মুজাদ্দিদে যামান, কুতুবুল আলম শাহ ছূফী আলহাজ্জ হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহিল মা’রূফ মুহম্মদ আবূ বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

* তিনি চতুর্দশ হিজরী শতকের মহান মুজাদ্দিদ।

৪২। (ক) ইলাহী বহুরমতে ওলীয়ে মাদারযাদ, কুতুবুল আলম, সুলত্বানুল আরিফীন, হযরত মাওলানা শাহ ছূফী আবূ নজম মুহম্মদ নাজমুস সায়াদাত ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

(খ) ইলাহী বহুরমতে, কুতুবুল আলম, কাইয়্যুমে যামান, শায়েখুল মাশায়িখ, হযরত মাওলানা শাহ ছূফী আবূ নছর মুহম্মদ আব্দুল হাই ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৪৩। ইলাহী বহুরমতে কুতুবুল আলম, আমীরুশ শরীয়ত, মাহতাবে তরীক্বত, সুলত্বানুল আরিফীন, মাহিয়ে বিদয়াত, মুহইয়ে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে যামান, হুজ্জাতুল ইসলাম, তাজুল মুফাসসিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা আলহাজ্জ হযরত মাওলানা শাহ ছূফী আবূল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি।

তিনি উপরোক্ত উনাদের দু’জন থেকেই খিলাফত প্রাপ্ত হন। তবে উনার প্রধান শায়েখ হচ্ছেন হযরত নাজমুস সায়াদাত ছিদ্দীক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

৪৪। ইলাহী বহুরমতে, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইউস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, হুজ্জাতুল ইসলাম, সুলত্বানুল আরিফীন, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যূল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম।

* তিনিই সারা বিশ্বে সমাদৃত, প্রশংসিত, গ্রহণযোগ্য ও হক্ব সিলসিলা “রাজারবাগ শরীফ”-উনার মহা সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। তিনিই হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর ‘মহান মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম।’

 এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, উনার সুমহান তরীক্বা শরীফ উনার সুযোগ্য আকাবির খলীফা আজমাঈন উনাদের মাধ্যমে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে সম্প্রসারিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! তবে বর্তমানে খুব কম খানকায়, কম সিলসিলায়, কম দরবারে গদ্দীনশীন ব্যক্তিবর্গ মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গউছুল আ’যম, দস্তগীর, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তর্জ-তরীক্বা মুতাবিক আমল-আক্বীদা ইত্যাদি হুবহু নকশায় জারি রেখেছেন। বরং প্রায় সকলেই বিভিন্নভাবে উনার তরীক্বা মুবারক উনার সবক, আমল-আখলাক আদর্শ ইত্যাদিকে বিকৃত করেছে, অনেক কিছু ছেড়ে দিয়েছে কেউবা কমবেশি করেছে। নাউযুবিল্লাহ!

কিন্তু বর্তমান যামানায় একমাত্র ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ কিবলা কা’বা মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমেই বর্তমান যামানা পর্যন্ত জারি রয়েছে মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গউছুল আ’যম, দস্তগীর, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মক্ববূল মাশহূর পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বা। সুবহানাল্লাহ! 

আয় বারে ইলাহী! উনাদের উসীলায় আমাদের উপর আপনার খাছ রহমত, মুহব্বত ও মা’রিফাত এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ তাওয়াজ্জুহ, ফায়িয, যিয়ারত, মুহব্বত ও মা’রিফাত দান করুন। সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করার তাওফীক দিন। যাহিরী ও বাতিনী দৃঢ়তা আর ইহকাল ও পরকালের সুস্থতা দান করুন। এই সকল বুযুর্গানে দ্বীন উনাদের ফুয়ূজাত, বারাকাত ও কামালাতের পূর্ণ হিসসা নছীব করুন। আমীন!

মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত ঈমানের মূল।

তাই উনাদের ছানা ছিফত ও ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা মুসলমান উনাদের ঈমানী দাবি।

 মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- 

قُل لَّا اَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ اَجْرً‌ا اِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْ‌بٰـى ۗ وَمَن يَقْتَرِ‌فْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهٗ فِيْهَا حُسْنًا ۚ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ‌ شَكُوْرٌ.

অর্থ: “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) উম্মাহকে বলে দিন যে, তোমাদেরকে ঈমান-হিদায়েত দেয়ার কারণে তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চাওয়া হচ্ছে না। বিনিময় দেয়া তোমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিনিময় দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করাও তোমাদের জন্য কুফরী। তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে আমার ক্বুরবা বা নিকটাত্মীয় আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে তোমরা সদাচরণ করো। যে ব্যক্তি নেকী হাছিল করে, আমি তা বৃদ্ধি করে দেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি উনাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে তার জন্য রয়েছে সর্বোত্তম প্রতিদান। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল এবং প্রতিদান প্রদানকারী।” (পবিত্র সূরা শু‘য়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সদাচরণ তথা সর্বোচ্চ হুসনে যন বা সুধারণা পোষণ করতে হবে, উনাদের ছানা-ছিফত করতে হবে, উনাদের সাওয়ানেহ উমরী মুবারক বা জীবনী মুবারক বেশি বেশি আলোচনা-পর্যালোচনা করতে হবে। তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়া-আখিরাতে উত্তম প্রতিদান প্রদান করবেন। মহান আল্লাহ পাক উনাকে ক্ষমাশীল হিসেবে লাভ করা যাবে। জিন্দেগীর সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হবে। খাছ খায়ের, বরকত, রহমত, সাকীনাহ নাযিল হবে। সমস্ত নেক মক্বছূদ পূরণ হবে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে বিশেষ নিসবত মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এবং উনাদের আখাছছুল খাছ সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক হাছিল হবে। সুবহানাল্লাহ! আর এ বিষয়টিই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়- 

عَنْ حضرت جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَجَلِىِّ رضى الله تعالى عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَاتَ شَهِيْدا. أَلا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم مَاتَ مغفورا لَهُ. أَلا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَاتَ تَائِبًا. أَلا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم مَاتَ مُؤمنا مُسْتَكْمل الْإِيمَان. الا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بشره ملك الْمَوْت بِالْجنَّةِ ثمَّ مُنكر وَنَكِير. أَلا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يزف إِلَى الْجنَّة كَمَا تزف الْعَرُوس إِلَى بَيت زَوجهَا. أَلا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فتح الله لَهُ فِي قَبره بَابَيْنِ إِلَى الْجنَّة. أَلا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم جعل الله قَبره مَزَار مَلَائِكَة الرَّحْمَة. أَلا وَمن مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم مَاتَ عَلَى السّنة وَالْجَمَاعَة. 

অর্থ: “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি শহীদ হিসাবে ইন্তিকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি তওবাকারী হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি পরিপূর্ণ ঈমানদার মু’মিন হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, উনাকে মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম, হযরত মুনকার ও নকীর আলাইহিমাস সালাম উনারা সম্মানিত বেহেশত মুবারক উনার সুসংবাদ মুবারক দিবেন। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, উনাকে এমনভাবে সুসজ্জিত করে জান্নাতে নেয়া হবে, যেমনভাবে  নববধূকে সাজিয়ে তার স্বামীর ঘরে নেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, উনার কবরে সম্মানিত জান্নাত উনার দিকে দুটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক ইন্তেকাল করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত কবরকে সম্মানিত রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিয়ারতের স্থান বানাবেন। সুবহানাল্লাহ। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি আহলু সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার আকাইদের উপর ইন্তেকাল করবেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!! সুবহানাল্লাহ!!! (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে রূহুল বয়ান,  নুজহাতুল মাজালিস)  

অর্থাৎ যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, (১) তিনি শহীদী মৃত্যু পাবেন। (২) তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ইন্তেকাল করবেন। (৩) তিনি তওবাকারী হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। (৪) তিনি পরিপূর্ণ ঈমানদার মু’মিন হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। (৫) উনাকে মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম, হযরত মুনকার ও নকীর আলাইহিমাস সালাম উনারা সম্মানিত বেহেশত মুবারক উনার সুসংবাদ মুবারক দিবেন। (৬) উনাকে নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত করে জান্নাতে নেয়া হবে (৭) উনার কবরে সম্মানিত জান্নাত উনার দিকে দুটি দরজা খুলে দেয়া হবে। (৮)  মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কবরকে সম্মানিত রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিয়ারতের স্থান বানাবেন। (৯)  তিনি সম্মানিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার আকাইদের উপরই ইন্তেকাল করবেন।” সুবহানাল্লাহ! 

হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করলে উপরোক্ত নিয়ামতসমূহ লাভ করা যায়, কেউ যদি জীবিত অবস্থায় হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত না করে, উনাদের খিদমতের আঞ্জাম না দেয়, তাহলে সে কি ইন্তিকালের সময় উনাদের মুহব্বত অন্তরে রাখতে পারবে? কখনোই নয়। হ্যাঁ, যদি জীবিত অবস্থায় হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত করে, উনাদের খিদমতের আঞ্জাম দেয়, তাহলে তার জন্য উভয়কালেই কামিয়াবী। যা অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন-

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اربعة انا لـهم شفيع يوم القيامة الـمكرم لذريتى والقاضى لـهم حوائجهم والساعى لهم فى امورهم عند اضطرارهم اليه والمحب لهم بقلبه ولسانه- 

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ক্বিয়ামতের দিন আমি নিজেই চার শ্রেণীর লোককে খাছভাবে সুপারিশ করবো- ১. যে ব্যক্তি আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মান করবে। ২. যে ব্যক্তি অর্থ-সম্পদ দ্বারা আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খিদমত করবে। ৩. যে ব্যক্তি শারীরিক শক্তি দিয়ে, শ্রম দিয়ে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খিদমত করবে। ৪. যে ব্যক্তি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মনে প্রাণে, জবানে গভীরভাবে মুহব্বত করবে।” সুবহানাল্লাহ! (আল বুরহানু ফী তাফসীরিল কুরআন লিল বাহরানী- ১/২৩, তাফসীরু নূরিছ ছাক্বালাইন লিল হুয়াইযী ২/৫০৪)  

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ سَلمَةَ بْنِ الأَكْوَع رَضِىَ الله تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النجوم أمان لأهل السماء ، وأهل بيتي أمان لأهل الأرض، فإذا ذهبت النجوم ذهب أهل السماء، وإذا ذهب أهل بيتي ذهب أهل الأرض ..

অর্থ: “হযরত সালমা ইবনে আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- আকাশের তারকারাজি আসমানবাসীদের জন্য নিরাপত্তা দানকারী। আর আমার পবিত্র আহলু বাইত শরীফ তথা আওলাদুর রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার উম্মত তথা  গোটা কায়িনাতবাসীর একমাত্র নিরাপত্তা দানকারী তথা নাজাত দানকারী। সুবহানাল্লাহ! তারকারাজি যখন বিদায় নিবে, তখন আসমানবাসীগণও বিদায় নিবেন। আর আমার পবিত্র আহলু বাইত শরীফ তথা আওলাদুর রসূল আলাইহিমুস সালাম যখন বিদায় নিবেন, তখন জমীন ধ্বংস হয়ে যাবে।”  (কানযুল উম্মাল) 

অর্থাৎ যমীনে দায়িমীভাবে সবসময় খাছ পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কেউ না কেউ অবস্থান মুবারক করবেন। উনাদের উসিলায় এই জমীন টিকে থাকবে। কিয়ামতের আগে এই জমীন পবিত্র আহলু বাইত শরীফ তথা আওলাদুর রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে খালি হবে না। তাহলে বর্তমান সময়ে পবিত্র আহলু বাইত শরীফ তথা আওলাদুর রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা কারা? সে বিষয়টিই বলা হয়েছে-

মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার যবান মুবারক-এ আমরা শুনেছি। তিনি বলেন: “আমি মুবারক স্বপ্নে দেখলাম- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অতি সুন্দর জায়গায় সুন্দর একটি আসন মুবারকে বসে রয়েছেন। উনার মুবারক সামনে ঘেরাও করা মনোরম জায়গা মুবারক রয়েছে। তিনি আমাকে এবং আমার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে ডেকে নিয়ে ওই মুবারক জায়গায় বসালেন এবং বললেন: ‘আপনারা সবাই আমার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।’ সুবহানাল্লাহ! 

মূল কথা হচ্ছে, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে যারা দুনিয়া হতে পর্দা করেছেন এবং যারা দুনিয়াতে অবস্থান মুবারক করছেন, উনাদের সকলকে সর্বাধিক মুহব্বত করতে হবে, সার্বিকভাবে উনাদের খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিতে হবে এবং উনাদের মুবারক শানে সর্বোচ্চ হুসনে যন পোষণ করতে হবে। যা পবিত্র ঈমান পূর্ণতার পূর্বশর্ত। আর এ জন্যই মুসলিম সন্তাদেরকে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যাপারে অবগত করতে সিলেবাসে উনাদের আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করা অতীব জরুরী। অর্থাৎ এদেশের ৯৮ ভাগ মুসলমান উনাদের একান্ত দাবি।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল শান মুবারক কারবালার প্রান্তরে এবং পরবর্তী সময়ে-

কারবালার ঘটনার সময়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী বয়স মুবারক প্রায় চৌদ্দ বছর। সে সময়ে তিনি মারিদ্বী শান মুবারকে ছিলেন। যার কারণে উনাকে ইয়াযিদ লা’নতুল্লাহির বাহিনীর মুকাবিলা করতে দেয়া হয়নি।

কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ময়দানে অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে তাঁবুর অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন। তখন উনার চৌদ্দ বছর বয়স্ক সম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি মারাত্মক রোগ ও জ্বরে ভুগছিলেন। তিনি কষ্ট করে কোন রকমে উনার সম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার সামনে এসে আরয করলেন, “আব্বাজান! আমাকেও বিদায় দিন, আমিও শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করতে চাই।” সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের আপন আওলাদ উনাকে সান্ত¡না দিলেন এবং সম্মানিত বুক মুবারক উনার মধ্যে জড়িয়ে ধরে বললেন, “হে হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকেও যদি বিদায় দিই, তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান ‘সিলসিলা’ কার থেকে জারি হবে? বাবা শুনুন! আপনার থেকেই আমার পবিত্র বংশের সুমহান ‘সিলসিলা’ জারি হবে। আমি দোয়া করছি, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে জীবিত রাখুন এবং আপনার থেকে আমার পবিত্র বংশধর উনার সুমহান ‘সিলসিলা’ জারি রাখুন।” তিনি উনাকে বাতিনী খিলাফত ও ইমামত প্রদান করলেন। উনাকে সম্মানিত বুক মুবারক উনার সঙ্গে জড়িয়ে বাতিনী নিয়ামত প্রদান করলেন এবং কিছু পবিত্র ওছীয়ত মুবারক করার পর ফরমালেন, “প্রিয় বৎস! আমি চলে যাওয়ার পর পবিত্র মদীনাতুল মুনাওওয়ারা শরীফ উনার মধ্যে পৌঁছার যদি সৌভাগ্য হয় তাহলে সবার আগে আপনার মহাসম্মানিত নানাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ গিয়ে সর্বপ্রথম আমার সালাম মুবারক জানাবেন এবং কারবালায় আপনার দেখা সমস্ত ঘটনা উনার মুবারক খিদমতে পেশ করবেন।”

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের পর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বারবার হাত মুবারক তুলে দুআ মুবারক করেন-

يا رحـمة للعالـمين- ادركنى زين العابدين

“ইয়া রহমাতাল্লিল আলামীন! আদরিকনী যাইনাল আবিদীন”

অর্থাৎ “হে রহমাতুল্লিল আলামীন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম উনার উপর রহম করুন।”

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যখন কাফেলার সাথে কুফা নেয়া হলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ইবনে যিয়াদ লা’নতুল্লাহি আলাইহির চোখ পড়লো। সে জিজ্ঞাসা করলো, ইনি কে? ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি বাহিনীরা বললো, ইনি হলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। ইবনে যিয়াদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি বললো, তোমরা উনাকে কেন রেখে দিয়েছ? উনাকে শহীদ করনি কেন? ওরা বললো, উনি অসুস্থ ছিলেন এবং আমাদের সাথে মোকাবেলা করতে আসেননি। এজন্য আমরা উনাকে শহীদ করিনি। ইবনে যিয়াদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি বললো, উনাকেও শহীদ করে দাও। আমি চাই না যে, উনাদের একজনও বেঁচে থাকুক। নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক! নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক!! নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক!!!

পাপিষ্ঠ ইবনে যিয়াদ লা’নতুল্লাহি আলাইহি এ কথাগুলো বলার সাথে সাথে জল্লাদ তলোয়ার নিয়ে এগিয়ে আসলো। তখন হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জড়িয়ে নিলেন এবং বললেন, “ওহে যালিমেরা! আমাদের সাথে কোন পুরুষ মাহরাম (আপনজন) নেই। উনি একমাত্র আমাদের মাহরাম। যদি তোমরা উনাকেও শহীদ করো, তাহলে আমাদের সাথে কোন মাহরাম থাকবে না। তাই তোমরা এটা জেনে রেখো, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা আমাকে শহীদ না করবে, এর আগে তোমরা উনার কাছেও পৌঁছতে পারবে না। যদি উনাকে শহীদ করতে চাও তাহলে প্রথমে আমাকে শহীদ করো। ওহে যালিমেরা! তোমরা যুলূম করা থেকে বিরত থাকো। তিনি যদি পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তাহলে আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সুমহান ‘সিলসিলা’ কিভাবে জারি থাকবে?” এ কথাগুলো বলার পর মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইবনে যিয়াদ লা’নতুল্লাহি আলাইহির অন্তরে এমন এক ভীতি সৃষ্টি করে দিলেন, শেষ পর্যন্ত সে তার এ ঘৃণিত সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রইলো।

হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যখন মদীনা শরীফে পৌছানো হলো। মযলূম কাফেলা উনাদের সকলেই তখন কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তখন কাফেলার একমাত্র জীবিত পুরুষ সদস্য সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শোকে পাথর হয়ে এক কিনারে দাঁড়িয়েছিলেন। সবাই যখন উনাকে হুজরা শরীফ যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন, তিনি বললেন, আমার সম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে ওছীয়ত মুবারক করেছেন যে, পবিত্র মদীনা শরীফ পৌঁছে যেন সর্বপ্রথম মহাসম্মানিত নানাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নেই। তাই আমি পবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নেওয়ার আগে কোথাও তাশরীফ মুবারক নিব না।

অতঃপর তিনি পবিত্র রওযা শরীফ তাশরীফ মুবারক নিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি এতক্ষণ পর্যন্ত ছবর ও ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে নিশ্চুপ ছিলেন, তিনি পবিত্র রওযা শরীফ উনার সামনে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। শুধু এতটুকু বলতে পারছিলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার কলিজার টুকরা, নয়নের মনি সম্মানিত নাতী সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সালাম মুবারক গ্রহণ করুন।”

এরপর উনার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো এবং অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে উনার চোখ মুবারকে দেখা কারবালার সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করতে লাগলেন। আর উনার কান্নার সাথে সাথে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সমস্ত দেয়াল থেকে কান্নার রোল বের হচ্ছিল এবং পবিত্র রওযা মুবারক তিনিও থরথর করে কাঁপছিল। হঠাৎ পবিত্র রওযা শরীফ থেকে আওয়াজ বের হলো, “হে হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম! আপনি আমাকে যা শুনাচ্ছেন আমি তা সবকিছু স্বচক্ষু মুবারকে দেখেছি।”

উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসা হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, “পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে একবার সেই দিন ক্বিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যেই দিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সান্নিধ্যে গমন করেছিলেন। আর একদিন ক্বিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হলো, যেদিন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কারবালা থেকে ফিরে এসেছেন।” তিনি আরো বর্ণনা করেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিন অদৃশ্য থেকে যেভাবে ক্রন্দনের আওয়াজ শুনা গিয়েছিল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের সময় একইভাবে অদৃশ্য থেকে কান্নার আওয়াজ শুনা গিয়েছিল।” 

পবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়ে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করার পর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফ উনার মধ্যে ফিরে গেলেন এবং একান্ত ছবর ও ধৈর্য সহকারে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান মুবারক করতে লাগলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এমন অবস্থা হয়েছিল যে, যখন তিনি পানি দেখতেন তখন তিনি সীমাহীন কান্নাকাটি করতেন এবং বলতেন, এই সেই পানি, যা হযরত ইমাম আলী আছগর আলাইহিস সালাম উনাকে পান করতে দেয়া হয়নি, হযরত ইমাম আলী আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে পান করতে দেয়া হয়নি, হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পান করতে বাঁধা দেয়া হয়েছিলো। উনার সামনে যখন খাবার আনা হতো তিনি দু এক লোকমা গ্রহণ করে অবশিষ্টগুলো সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে বলতেন। সবসময় একাকী থাকতে পছন্দ করতেন। সাধারণ লোকদের সাথে মেলামেশা করতেন না এবং যতদিন পর্যন্ত জীবিত ছিলেন, এ সময়ের মধ্যে কোনদিন হাসেননি।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আওলাদ ইমামুল খ¦ামিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম তিনি একদিন উনাকে সুওয়াল মুবারক করলেন, সম্মানিত আব্বাজান! কী ব্যাপার? আমি আপনাকে কোনদিন হাসতে দেখিনি।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, বৎস! আমার চোখের সামনে কারবালার যে দৃশ্য ফুটে রয়েছে, তা দেখলে আপনার মুখ থেকেও চিরদিনের জন্য হাসি বন্ধ হয়ে যেত! আপনিও সারা জীবনে কোনদিন হাসতেন না। বৎস! আমি পূত-পবিত্র জিসিম মুবারক উনাদেরকে মাটিতে অবস্থান মুবারক করতে দেখেছি, প্রিয় নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নকশা মুবারক উনাদেরকে দাফন-কাফন মুবারক বিহীন অবস্থায় কারবালার প্রান্তরে পড়ে থাকতে দেখেছি। আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয় সম্মানিত নাতী উনাকে আঘাতে জর্জরিত হয়ে কারবালার তপ্ত বালিরাশির উপর দাফন-কাফন মুবারক বিহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি।

হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা লিখেছেন, এই পৃথিবীতে পাঁচজন ব্যক্তি খুব বেশি কান্নাকাটি করেছেন। উনারা হলেন-

 এক. আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম। তিনি জান্নাত থেকে যমীনে তাশরীফ আনার পর দুইশত হতে তিনশত বছর কান্নাকাটি করেছেন।

দুই. হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম। তিনি হযরত ইঊসুফ আলাইহিস সালাম উনার বিচ্ছেদের কারণে ৪০ বৎসর কেঁদেছিলেন এবং অজস্র ধারায় চোখের পানি ফেলেছিলেন।

তিন. হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম। তিনি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ভয়ে প্রায় ২৫ বৎসর কেঁদেছিলেন। তিনি এত বেশি কান্নাকাটি করেছিলেন যে, দু’গ- মুবারক বেয়ে চোখের পানি পড়তে পড়তে চেহারা মুবারক উনার মধ্যে দাগ পড়ে গিয়েছিল।

 চার. সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম। তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর সুদীর্ঘ ছয় মাস যাবত কেঁদেছিলেন।

পাঁচ. সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি কারবালার ঘটনার পর সুদীর্ঘ ৩৩ বছর কেঁদেছিলেন।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক হতে ইবরত হাছিল করে তা আমলে বাস্তবায়ন করা সকলের জন্য ফরয। মহান আল্লাহ পাক উম্মাহর সকলকে তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।



0 Comments: