ক) ঈমান দৃঢ় হয় : সম্মানিত যাকাত আদায়ের মাধ্যমে ঈমানদারদের ঈমানের দলীল
নিশ্চিত হয় এবং ঈমান আরো মজবুত হয়।
اَلَّذِيْنَ
يُقِيمُوْنَ الصَّلٰوةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَهُمْ بِالاٰخِرَةِ هُمْ يُوْقِنُوْنَ.
অর্থ : “যাঁরা সম্মানিত নামায কায়িম করেন ও সম্মানিত যাকাত আদায় করেন; আর উনারাই পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস করেন।” (পবিত্র সূরা
নামল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
আবার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত যাকাত উনাকে সম্মানিত ঈমান উনার
দলীল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الرَّحْـمٰنِ
بْنِ غَنْمٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّ حَضْرَتْ اَبَا مَالِكٍ الاَشْعَرِيَّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ حَدَّثَهٗ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِسْبَاغُ الْوُضُوْءِ شَطْرُ الْاِيـْمَانِ وَالْـحَمْدُ لِلّٰهِ تَـمْلاُ الْمِيْزَانَ وَالتَّسْبِيْحُ وَالتَّكْبِيْرُ يـَمْلَاُ السَّمٰوَاتِ وَالاَرْضَ وَالصَّلٰوةُ نُوْرٌ وَالزَّكٰوةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْاٰنُ حُجَّةٌ لَّكَ اَوْ عَلَيْكَ.
অর্থ : “হযরত আব্দুুর রহমান ইবনে গান্ম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, হযরত আবূ মালিক আশ‘য়ারী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি শুনেছেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পূর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করা ঈমানের অঙ্গ।
আর আলহামদুলিল্লাহ্ মীযানকে পরিপূর্ণ করে, তাসবীহ্ ও তাকবীর আসমান-যমীনকে পরিপূর্ণ করে, ছলাত নূর স্বরূপ, যাকাত দলীল
স্বরূপ,
ছবর আলো স্বরূপ এবং পবিত্র কুরআন শরীফ তোমার নেক বা পাপের
ক্ষেত্রে দলীল স্বরূপ। সুবহানাল্লাহ!
খ) দোয়া মুবারক লাভ হয় যা দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবী : এ সম্পর্কে পবিত্র
কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
خُذْ مِنْ اَمْوَالِـهِمْ
صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكّيْهِمْ بِـهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ اِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّـهُمْ وَاللهُ سَـمِيْعٌ عَلِيْمٌ.
অর্থ : “(ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি উনাদের
ধন-সম্পদ থেকে যাকাত, ফিত্বরা, উশর, দান, ছদক্বা, হাদিয়া ইত্যাদি
গ্রহণ করুন, দয়া করে গ্রহণ করে এর মাধ্যমে
প্রদানকারীদেরকে যাহিরী পবিত্রতার সাথে সাথে বাতিনী পবিত্রতা প্রদান করুন এবং আপনি
উনাদের জন্যে দোয়া মুবারক করুন। নিশ্চয়ই আপনার দোয়া মুবারকই উনাদের জন্যে শান্তি, নিরাপত্তা এবং কামিয়াবী হাছিলের কারণ হবে। মহান আল্লাহ পাক
তিনি সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু জানেন।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত
শরীফ ১০৩)
সুতরাং যাকাতদাতা ধন-সম্পদের প্রাচুর্যতার পাশাপাশি জিসমানী ও রূহানী উভয়ভাবে
পবিত্রতা হাছিল করবে। সর্বোপরি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিশ্চিতভাবে কবুলকৃত দুয়া মুবারক লাভ করবে।
ফলে যাকাতদাতার দুনিয়া-আখিরাতের সর্বপ্রকার চাহিদা পূর্ণ হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ!
কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র
যাকাতদাতার জন্যে দুয়া মুবারক করেন না বরং তার পরিবার-পরিজন সকলের জন্যই দুয়া
মুবারক করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ اَبِـي اَوْفٰـى رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا اَتَاهُ قَوْمٌ بِصَدَقَتِهِمْ قَالَ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى اٰلِ فُلَانٍ. فَاَتَاهُ اَبِـىْ بِصَدَقَتِهٖ فَقَالَ اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى اٰلِ اَبِـىْ اَوْفٰـى رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ. وَفِىْ رِوَايَةٍ اِذَا اَتَى الرَّجُلُ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِصَدَقَتِهٖ قَالِ اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, কোন পরিবারের লোকেরা যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
নিকট তাদের সম্মানিত যাকাত নিয়ে আসতেন, তখন তিনি দোয়া মুবারক করতেন, আয় মহান আল্লাহ
পাক! আপনি অমুক পরিবারের প্রতি রহমত, বরকত,
সাকীনা বর্ষণ করুন। হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনি বলেন, একদা আমার পিতা উনার নিকট
সম্মানিত যাকাত নিয়ে আসলেন, তখন নূরে
মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
দোয়া মুবারক করেন, আয় মহান আল্লাহ
পাক! আপনি রহমত, বরকত, সাকীনা বর্ষণ করুন হযরত আবু আওফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার পরিবার উনাদের প্রতি।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু
ছলাতিল ইমামি ওয়া দু‘য়ায়িহি লিছহিবিছ ছদাক্বহ : হাদীছ শরীফ নং ১৪৯৭; মুসলিম শরীফ : কিতাবুয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ১০৭৮; নাসায়ী শরীফ : কিতাবুয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ২৪৫৯)
অপর বর্ণনায় রয়েছে, যখন এক ব্যক্তি
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আপন সম্মানিত যাকাত নিয়ে আসতেন, তখন তিনি দোয়া মুবারক করেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি উনার প্রতি রহমত, বরকত,
সাকীনা বর্ষণ করুন। সুবহানাল্লাহ!
سَكَنٌ শব্দ মুবারক উনার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ :
سَكَنٌ
শব্দ মুবারক বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন তাফসীরে ইবনে কাছীর উনার মধ্যে হযরত
ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বরাত দিয়ে বলা হয়,
سَكَنٌ অর্থ رَحْـمَةٌ আর হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার বরাত দিয়ে বলা হয় سَكَنٌ অর্থ وِقَارٌ, একইভাবে অনেক লুগাতে سَكَنٌ শব্দ মুবারক উনার প্রতিশব্দ হিসেবে اِطْمِئْنَانٌ
শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
এখন رَحْـمَةٌ শব্দের অর্থ দয়া,
অনুগ্রহ, অনুকম্পা, করুণা আর وِقَارٌ
শব্দের অর্থ গাম্ভীর্য, মর্যাদা, সম্মান, সহনশীলতা। আর اِطْمِئْنَانٌ
শব্দের অর্থ প্রশান্তি লাভ করা, নিশ্চিন্ত হওয়া, নিশ্চিত হওয়া, আস্থাশীল হওয়া।
অর্থাৎ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক
তিনি سَكَنٌ শব্দ মুবারক ব্যবহার করে বান্দা-বান্দী-উম্মতের জন্য বহুমুখী
নিয়ামত মুবারক উনাদের ঘোষণা মুবারক দিয়েছেন।
গ) ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত : যেহেতু যথাযথভাবে যাকাত আদায়ের ফলে একদিকে
যেমন মালী পবিত্রতা হাছিল হয়। ফলে শরীরের কোন হারাম বৃদ্ধি ঘটে না। অন্যদিকে
জিসমানী-রূহানী পবিত্রতা, জাহিরী-বাতিনী
পবিত্রতা হাছিল হয়। ফলে অন্তরের কোন প্রকার কুলষতা থাকে না। তাই যাকাতদাতার সমস্ত
ইবাদত-বন্দেগীই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুল হয়।
ঘ) মাল-সম্পদ বৃদ্ধি পায় : সম্মানিত যাকাত যথাযথভাবে আদায় করলে দুনিয়া ও
আখিরাত উভয় স্থানেই কামিয়াবী হাছিল করা যাবে। যেহেতু যাকাত শব্দ মুবারক উনার অর্থই
হচ্ছে বরকত বা বৃদ্ধি এবং অন্য আরেকটি অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা। সুতরাং যাকাত প্রদানের
মাধ্যমে যাকাতদাতার মালে বরকত বা বৃদ্ধি হয়ে থাকে।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَثَلُ الَّذِيْنَ
يُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَـهُمْ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ اَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِىْ كُلِّ سُنْبُۢلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَّشَاءُ ۗ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ ◌
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক পথ-এ যাঁরা ধন-সম্পদ ব্যয় করেন উনাদের
উদাহরণ হলো সেই শস্য দানার মতো যা থেকে পয়দা হয় ৭টি শীষ, প্রত্যেকটি শীষে ১০০টি করে দানা (উৎপন্ন) হয়। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে চান বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। মহান আল্লাহ পাক
তিনি প্রাচুর্য্যময়, প্রশস্ত, সর্বজ্ঞানী।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত
শরীফ ২৬১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
يَـمْحَقُ
اللهُ الرِّبَا وَيُرْبِـيى الصَّدَقَاتِ
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি সুদকে ধ্বংস করে দেন এবং দান-ছদকা তথা সম্মানিত
যাকাত উনাকে বৃদ্ধি করেন অর্থাৎ দান, ছদকা ও যাকাতদানকারীর সম্পদ বৃদ্ধি পায়।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারা
শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭৬)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, যাকাতদাতার মাল-সম্পদ মহান আল্লাহ পাক তিনি বেহিসাব অর্থাৎ
কোন প্রকার হিসাব ছাড়াই বাড়িয়ে দিবেন। যার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে হযরত খুলাফায়ে
রশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের খিলাফতকালের প্রাচুর্যময় অবস্থা। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ১ম খলীফা, আফদ্বানুল নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম
তিনি জিহাদ করে সম্মানিত যাকাত ব্যবস্থা জারী করেছিলেন। আর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম
উনার ২য় খলীফা, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হিসাব করে করে যাকাত আদায়
করতেন। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ৩য় খলীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত আমলে যাকাত ব্যবস্থা
যখন সর্বত্র জারী হয়েছিল, তখন এত সমৃদ্ধি
হয়েছিল যে, তখন ঘরে ঘরে কোটি-কোটি
দিনার-দিরহাম। সুবাহানাল্লাহ!
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি আহলে সুফ্ফার অন্তর্গত ছিলেন, উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুনা
হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত আমলে উনাদের তখন এত ধন-সম্পদ যে উনারা
তখন কাততানের কাপড় দিয়ে নাকের ময়লা পরিষ্কার করতেন। সুবহানাল্লাহ! কাততানের কাপড়
রাজা-বাদশারা একসময় তাদের পোষাক হিসেবে ব্যবহার করতো। (তুরষ্কের টপকাপি মিউজিয়ামে
উক্ত কাপড়ের নমুনা রাখা আছে)। রাজা-বাদশাদের কাপড় দিয়ে যদি নাকের ময়লা পরিষ্কার
করা হয় তাহলে অন্যান্য বিষয়গুলো উনারা কত দামী জিনিস দিয়ে ব্যবহার করেছেন।
সুবহানাল্লাহ!
তখন এত ধন-সম্পদ, এত ঐশ্বর্য যে হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে
কান্নাকাটি করেছেন যে হায় আল্লাহ পাক! আমরা কি দুনিয়ার বুকেই জান্নাত পেয়ে গেলাম? পরকালে আমরা আসল জান্নাত পাবো তো ! সুবহানাল্লাহ!
কাজেই এটা ফিকির করতে হবে যে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবে সে ব্যবস্থা
জারী করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ! এটা কোন মানব রচিত যেমন ‘সোসালিজম’ বা
‘ক্যাপিটালিজম’ কোনোটা দিয়ে কখনই অর্জন করা সম্ভব নয়। মুসলমানদেরকে মহান আল্লাহ
পাক যে যাকাত ব্যবস্থা দিয়েছেন এই যাকাত ব্যবস্থা কায়িম না হওয়া পর্যন্ত কোনদিন
সচ্ছলতা আসবে না।
মূলতঃ সম্মানিত যাকাত ব্যবস্থা যখনই জারী হয়েছে তখনই সমাজে সচ্ছলতা এসেছে। এ
ব্যাপারে আরেকটি উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার খিলাফতকাল। হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আড়াই
বছরের খিলাফতকালে সচ্ছলতা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, খিলাফতের বায়তুল মালের কোষাগার থেকে যাকাতের অর্থ গ্রহণ করার কোন গ্রহীতা
পাওয়া যাচ্ছিল না। এমতবস্থায় গর্ভনরের এক চিঠির জবাবে খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল
আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন যে, সম্মানিত যাকাত নেয়ার ব্যাপারে যাকাত গ্রহীতার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে বাজারে
বাজারে ঘোষণা দেয়ার জন্য। খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার উক্ত আদেশের প্রেক্ষিতে বাজারে বাজারে ঘোষণা দেয়া হলো, কিন্তু একজন লোকও সম্মানিত যাকাত গ্রহণ করতে আসেনি।
পরবর্তী খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পক্ষ থেকে
গভর্নরকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঘোষণা দিতে বলা হলো কিন্তু এবারও সম্মানিত যাকাত নেয়ার
কোন লোক পাওয়া গেল না। প্রতিটি মুসলমান উনারা এতো সমৃদ্ধিশালী হয়েছেন যে, সম্মানিত যাকাত নেয়ার কোন লোক পাওয়া গেল না। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকাতদাতাকে শুধু ধন-সম্পদের প্রাচুর্য প্রদান করেই
ক্ষান্ত হবেন না বরং তাকে পবিত্রতা দান করবেন ধন-সম্পদের দিক দিয়ে এমনকি জিসমানী ও
রূহানী উভয়ভাবে।
ঙ) হালাল রিযিকের সু-বন্দোবস্ত হয় : যেহেতু যাকাত প্রদানের মাধ্যমে ধন-সম্পদে
বরকত ও পবিত্রতা হাছিল হয়। তাই এই ধন-সম্পদে কোন ধরনের হারাম মিশ্রিত হওয়ার সুযোগ
থাকে না। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু কাউকে সাধ্যের অতিরিক্ত কোন কষ্ট দেন না
তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهٗ فَلْيُنفِقْ
مِـمَّآ اٰتَاهُ اللهُ ۚ لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا مَآ اٰتَاهَا ۚ سَيَجْعَلُ اللهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُّسْرًا ◌
অর্থ : “যার উপরে রিযিকের সংর্কীণতা এসেছে, তার উচিত মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে যা দিয়েছেন, তা থেকে সাধ্যমত ব্যয় করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশি কাউকে দায়িত্ব দেননা। অতিশীঘ্রই মহান আল্লাহ
পাক তিনি কষ্টের পর সুখ দিবেন।” (পবিত্র সূরা ত্বলাক্ব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত যাকাত যারা যথাযথভাবে আদায় করবে তাদের
হালাল রিযিকের সু-বন্দোবস্ত মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই করে দিবেন। নতুন নতুন
হালাল রিযিকের পথ তাদের জন্যে উম্মুক্ত হতেই থাকবে।
চ) তক্বদীর পরিবর্তন হয় : দোয়া ও দানের দ্বারা তাকদীর পরিবর্তন হয়।
এ প্রসঙ্গে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি ঘটনা
বর্ণিত আছে। একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ফয়সালা হয়েছে আগামীকাল
তিনি ইন্তিকাল করবেন। উনাকে তাকদীরের এই ফয়সালা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন উনার শেষ
ইচ্ছা তিনি উনার আহলিয়ার হাতে রুটি খাবেন। কিন্তু তিনি বিয়ে-শাদী করেননি। যা হোক
উনার শাদীর ব্যবস্থা হলো। উনার আহলিয়া রুটি তৈরী করলেন। তিনি যখন খেতে বসেছেন তখন
একজন ভিক্ষুক এসে বললো আমি ক্ষুধার্ত; আমাকে কিছু খেতে দিন। উনার এই শেষ ইচ্ছার রুটি তিনি না খেয়ে ভিক্ষুককে দিয়ে
দিলেন।
এখন রাত পার হয়ে গেল কিন্তু তিনি ইন্তিকাল করলেন না। দেখা গেল একটা বিরাট অজগর
সাপ উনার বিছানার নিচে মরে পড়ে আছে এবং মুখে রুটির টুকরা। মহান আল্লাহ পাক তিনি
কুদরতীভাবে সেই রুটির টুকরো দিয়ে অজগর সাপটিকে মেরে তাকদীরের যে মন্দ সেই মন্দটিকে
ঘুরিয়ে ভাল ফয়সালা করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই একটি সাধারণ দানের ক্ষেত্রে (যা ছিল ঐচ্ছিক) যদি এমন হয় তাহলে ফরয দানের
ক্ষেত্রে (যাকাত, ফিত্বরা, উশর) কিরূপ ফয়সালা হবে তা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি।
আবার যেহেতু সাধারণভাবে দোয়ার দ্বারা তাকদীর পরিবর্তন হয়। তাহলে একটি বিষয়
চিন্তনীয় যে, যথাযথভাবে কেউ যদি যাকাত আদায় করে
তাহলে যাকাতদাতার সুনিশ্চিতভাবেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুয়া মুবারক লাভ করবে। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
خُذْ مِنْ اَمْوَالِـهِمْ
صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكّيْهِمْ بِـهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ اِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّـهُمْ وَاللهُ سَـمِيْعٌ عَلِيْمٌ.
অর্থ : “(ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি উনাদের
ধন-সম্পদ থেকে যাকাত, ফিত্বরা, উশর, দান, ছদক্বা, হাদিয়া ইত্যাদি
গ্রহণ করুন, দয়া করে গ্রহণ করে এর মাধ্যমে
প্রদানকারীদেরকে যাহিরী পবিত্রতার সাথে সাথে বাতিনী পবিত্রতা প্রদান করুন এবং আপনি
উনাদের জন্যে দোয়া মুবারক করুন। নিশ্চয়ই আপনার দোয়া মুবারকই উনাদের জন্যে শান্তি, নিরাপত্তা এবং কামিয়াবী হাছিলের কারণ হবে। মহান আল্লাহ পাক
তিনি সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু জানেন।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত
শরীফ ১০৩)
তাহলে যাকাতদাতা কতটুকু প্রশান্তি লাভ করবে, তার কতটুকু তাকদীর পরিবর্তন ঘটবে, তা সহজেই বোধগম্য।
চ) মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সন্তুষ্ট
হবেন এবং অভিভাবক ও হিফাযতকারী হবেন : যথাযথভাবে যাকাত আদায়কারীর প্রতি মহান
আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সন্তুষ্ট হবেন। আর তাই উনারা
উক্ত যাকাতদাতার অভিভাবক হয়ে হিফাযত করবেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন-
فَاَقِيْمُوا
الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الزَّكٰوةَ وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ ۖ فَنِعْمَ الْمَوْلٰى وَنِعْمَ النَّصِيْرُ ◌
অর্থ : “তোমরা নামায কায়িম করো, যাকাত আদায় করো এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে শক্তভাবে ধারণ করো। তিনিই তোমাদের
মালিক। অতএব তিনি কতইনা উত্তম অভিভাবক এবং সবচেয়ে বড় অভিভাবক ও উত্তম
সাহায্যকারী।” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৮)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যাকাতদাতার
অভিভাবক হবেন অর্থাৎ সমস্ত অনিষ্ট থেকে হিফাযত করবেন এবং গায়েবী মদদ করবেন।
যেখানে স্বাভাবিক দানশীল ব্যক্তির ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ
رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلسَّخِيُّ قَرِيْبٌ مِّنَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْـجَنَّةِ قَرِيْبٌ مِّنَ النَّاسِ بَعِيْدٌ مِّنَ النَّارِ وَالْبَخِيْلُ بَعِيْدٌ مِّنَ اللهِ بَعِيْدٌ مِّنَ الْـجَنَّةِ بَعِيْدٌ مِّنَ النَّاسِ قَرِيْبٌ مِّنَ النَّارِ وَلَـجَاهِلٌ سَخِيٌّ اَحَبُّ اِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مِّنْ عَابِدٍ بَـخِيْلٍ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে
মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দানশীল মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটে, পবিত্র জান্নাত উনার নিকটবর্তী, মানুষের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম থেকে দূরে। আর বখিল মহান
আল্লাহ পাক থেকে দূরে, পবিত্র জান্নাত
উনার থেকে দূরে, মানুষের থেকে দূরে এবং
জাহান্নামের নিকটবর্তী। মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটে বখিল আবিদ অপেক্ষা কম জ্ঞান
সম্পন্ন দানশীল অধিক প্রিয়।” (তিরমিযী শরীফ : কিতাবু বাব্বি ওয়াছ ছলাত : বাবু
মা-জা-য়া ফিস সাখায়ি : হাদীছ শরীফ নং ১৯৬১)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلسَّخِىُ
حَبِيْبُ اللهِ وَلَوْ كَانَ فَاسِقَا.
অর্থ : “দানশীল মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু যদিও সে ফাসিক হোক না কেন।”
সুবহানাল্লাহ!
তাহলে ফরয ইবাদত সম্মানিত যাকাতদাতা উনার প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি কতটুকু
ইহসান করবেন, কত বড় অভিভাবক হবেন, তা সহজেই বোধগম্য।
যাকাত প্রদান করুন
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা উনার একাউন্ট নাম্বার সমূহ-
Account no.1
Muhammadia Jamia Shareef Madrasa & yatimkhana
A/C-200007569
Sonali Bank Limited, Malibag Branch
Dhaka, Bangladesh
Account no.2
name:-MD. Mufizul Islam
A/C-1020335489001 Naya-paltan branch
IFIC Bank Limited, Dhaka, Bangladesh
Swift Code: IFICBDDH
Account no.3
name:-MD. Mufizul Islam
A/C-108101277050 Shantinaghar branch
Dutch Bangla Bank Limited, Dhaka, Bangladesh
Swift Code: DBBLBDDH
Account no.4
Dutch Bangla mobile Banking-017187407422
Account no.5
Bkash-(parsonal) 01718740742, 01876043934, 01990770065
Bkash-(Agent)- 01709672605
0 Comments:
Post a Comment