যাকাতদাতার দায়িত্ব-কর্তব্য।পর্ব-১৬


Image result for যাকাতযাকাতদাতার দায়িত্ব-কর্তব্য
লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে যাকাত আদায় করা শিরক : সম্মানিত যাকাত একটি শ্রেষ্ঠ মালি ইবাদত এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অন্যতম তৃতীয় রোকন। সম্মানিত যাকাত উনার মাল তার হক্বদারকে দিয়ে দেয়াই হচ্ছে ধনীদের জন্যে ফরয কাজ। গরীবের জন্যে যাকাত গ্রহণ করা ফরয নয়, বরং ধনীদের জন্যে যাকাত আদায় করা ফরয। গরীবরা ধনীদের যাকাত গ্রহণের মাধ্যমে যাকাত আদায় করার ফরয যে ঋণ ধনীদের উপরে বর্তানো আছে তা পরিশোধে ধনীদেরকে সাহায্য করছে।
তাই ধনীদের কর্তব্য হলো গরীবদের নিকট যাকাত পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিন্তু বর্তমানে অবস্থা হয়ে গিয়েছে উল্টা। ধনীরা যাকাতের নাম করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে গরীবদেরকে ডেকে এনে লাইন ধরিয়ে যাকাত আদায় করে। তাই এ ধরনের কাজ একদিকে যেমন রিয়ার অন্তর্ভুক্ত অন্যদিকে গরীবদেরকে অপমান-অবমাননা করার শামীল।
উপরন্তু প্রতি বছরই ধনীদের কাছ থেকে যাকাতের টাকা বা মালামাল গ্রহণ করতে এসে ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে অনেক গরীব মুসলমান ইন্তিকালও করে থাকেন। নাঊযুবিল্লাহ!
রিয়া সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ سَعِيْدِنِ الْـخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلرِّيَاءُ شِرْكٌ خَفِىٌ
অর্থ : “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, রিয়া হলো গোপন র্শিক।” (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّهٗ خَرَجَ يَوْمًا اِلٰى مَسْجِدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَجَدَ حَضْرَتْ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَاعِدًا عِنْدَ قَبْرِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَبْكِىْ فَقَالَ مَا يُبْكِيكَ قَالَ يُبْكِيْنِىْ شَىْءٌ سَـمِعْتُهٗ مِنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سـَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اِنَّ يَسِيْرَ الرِّيَاءِ شِرْكٌ.
অর্থ : “হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একদিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মসজিদে গিয়ে হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত রওযা শরীফ উনার পাশে বসে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখতে পান। তিনি উনাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কাঁদছেন কেন? হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শ্রবণ করা কিছু বিষয় আমাকে কাঁদাচ্ছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, রিয়ার সামান্য অংশও শিরকের অন্তর্ভুক্ত।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুল ফিতান : হাদীছ শরীফ নং ৩৯৮৯; মিশকাত শরীফ)
¦লিক্ব, মালিক, রব, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَآ اُمِرُوْآ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُـخْلِصِيْنَ لَهُ الدّيْنَ
অর্থ : “খালিছভাবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করার জন্যই তাদেরকে আদেশ মুবারক করা হয়েছে।” (পবিত্র সূরা বাইয়্যিনাহ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي اُمَامَةَ الْبَاهِلِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ اِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ اَرَاَيْتَ رَجُلًا غَزَا يَلْتَمِسُ الاَجْرَ وَالذّكْرَ مَا لَهٗ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا شَىْءَ لَهٗ‏. فَاَعَادَهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ يَقُوْلُ لَهٗ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا شَىْءَ لَهٗ. ثُـمَّ قَالَ اِنَّ اللهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ اِلَّا مَا كَانَ لَهٗ خَالِصًا وَابْتُغِيَ بِهٖ وَجْهُهٗ.
অর্থ : “হযরত আবূ উমামা বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সুওয়াল করলেন, ওই ব্যক্তি সম্বন্ধে আপনি কি বলেন, যে ব্যক্তি ছওয়াব এবং সুনামের জন্যে জিহাদ করে, তার জন্যে কি রয়েছে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তার জন্যে কিছুই নেই। সেই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তা তিনবার পুনরাবৃত্তি করলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে (একই কথাই) বললেনঃ তার জন্যে কিছুই নেই। তারপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই আমল কবূল করবেন না, যা ইখলাছের সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জনের জন্যে করা না হয়।” (নাসায়ী শরীফ : কিতাবুল জিহাদ : বাবু মান গাজা ইয়ালতামিসু আযরা ওয়ায যিকরা : হাদীছ শরীফ নং ৩১৪০; দায়লামী শরীফ)
সুতরাং একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই যাকাত দিতে হবে, লোক দেখানোর জন্যে বা দাতা খেতাব পাওয়ার জন্যে যাকাত আদায় করা রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে শিরকের অন্তর্ভুক্ত।


সম্মানিত যাকাত উনার টাকা দিয়ে ব্যবহার অযোগ্য নি¤œমানের কাপড় ক্রয় ও তা গরীবের মাঝে বিতরণ সম্মানিত যাকাত ইহানত করার শামীল : বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, সম্মানিত যাকাত উনার টাকা-পয়সা দিয়ে এমন নিম্নে মানের শাড়ী-লুঙ্গি ক্রয় করে যা ব্যবহারের অযোগ্য। যা সম্মানিত যাকাতদাতা ও তার পরিবার-পরিজন কখনোই সেটা পরিধান করবে না।
অথচ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ لَا يُؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتّٰى يُـحِبَّ لِاَخِيْهِ مَا يُـحِبُّ لِنَفْسِهٖ‏‏.
অর্থ : “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের কেউ ঈমানদার হতে পারবেননা যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের জন্যে আপনারা যা পছন্দ করেন আপনার ভাইয়ের জন্যেও তা পছন্দ না করবেন।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুল ঈমান : হাদীছ শরীফ নং ১৩; তিরমিযী শরীফ : কিতাবু ছিফাতিল ক্বিয়ামাতি ওয়াল রাক্বায়িক্ব ওয়াল ওয়ারায়ি’ : হাদীছ শরীফ নং ২৭০৫)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ لَا يُؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتّٰى يُـحِبَّ لِاَخِيْهِ اَوْ قَالَ لِـجَارِهٖ مَا يُـحِبُّ لِنَفْسِهٖ‏‏.
অর্থ : “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের কেউ ঈমানদার হতে পারবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের জন্যে আপনারা যা পছন্দ করেন আপনার ভাইয়ের বা আপনার প্রতিবেশীর জন্যেও তা পছন্দ না করবেন।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুল ঈমান : বাবুদ দালীলি ‘আলা আন্না মিন খি¦ছালিল ঈমানি আন ইউহিব্বাল আখীহিল মুসলিমি মা ইউহিব্বু লি নাফসিহি মিনাল খ¦ইরি : হাদীছ শরীফ নং ৭৪; ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুল মুক্বাদ্দিমা : হাদীছ শরীফ নং ৬৯)
সুতরাং যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে যাকাতদাতার উৎকৃষ্ট মাল থেকেই যাকাত দেয়া ফরয।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتّٰى تُنْفِقُوْا مِـمَّا تُـحِبُّوْنَ
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় তোমরা তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কস্মিনকালেও কোন নেকী হাছিল করতে পারবে না।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে- “সবচেয়ে উত্তম ও প্রিয় বস্তু মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান না করলে তা কবুল হয় না।” (মিশকাত শরীফ)
সুতরাং মালিকে নিছাব কখনোই তাদের খেয়াল-খুশি মুতাবিক যাকে তাকে ও যেখানে সেখানে যাকাত উনার অর্থ প্রদান করতে পারবে না। সে অধিকারও তাদের নেই। সম্মানিত যাকাত ধনী-গরীবদের মাঝে পার্থক্য করার জন্যে আসেনি। তাহলে যাকাত উনার কাপড় বলতে আলাদা নাম থাকবে কেন? অতএব, বুঝা যাচ্ছে সম্মানিত যাকাত উনাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার জন্যই ‘যাকাতের কাপড়’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!
কাজেই লোক প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নি¤œমানের অব্যবহার্য শাড়ী-লুঙ্গি সম্মানিত যাকাত উনার টাকা দিয়ে ক্রয় করে যাকাত দেয়া সম্মানিত যাকাত উনাকে ইহানত বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার শামীল। নাঊযুবিল্লাহ!
স্বাভাবিকভাবে সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাকে ইহানত করাই কুফরী।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَكَفَرْتُـمْ .
অর্থ : ““হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা যদি তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত তরক (অবজ্ঞা) করো, তবে অবশ্যই তোমরা কাফির হয়ে যাবে।” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুছ ছলাত : বাবু ফীত তাশদীদি ফী তারকিল জামা‘য়াহ : হাদীছ শরীফ নং ৫৫০)
এর উপর ভিত্তি করেই বলা হয় যে-
اِهَانَةُ السُّنَّةِ كُفْرٌ
অর্থাৎ “সুন্নতকে ইহানত তথা অবজ্ঞা, অপছন্দ ও অস্বীকার করা কুফরী।”
যেখানে সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাকে ইহানত করলেই কুফরী হয়, ইহানতকারী কাফির হয়ে যায়। তাহলে সেখানে সম্মানিত ফরয উনাকে ইহানত করলে কি হবে? কাট্টা কুফরী হবে এবং ইহানতকারী কাট্টা কাফির হবে। অর্থাৎ যাকাত উনার টাকা দিয়ে নিম্নে মানের কাপড় ক্রয় করে সম্মানিত যাকাত আদায় করলে, এতে সম্মানিত যাকাততো কবুল হবেই না বরং পবিত্র ঈমান, আমল, আক্বীদা সব বরবাদ হয়ে যাবে। নাঊযুবিল্লাহ! এটা মুসলমান উনাদেরকে বেঈমান করার জন্যে ইহুদী-নাছারাদের এক সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। যা গাফিল মুসলমান উনাদের উপলব্ধিতেও নেই। এরূপ ইহানতপূর্ণ কাজ থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলাদের জন্যে ফরয।
আবার যাকাতদাতা কম টাকায় নিম্ন  মানের বেশি কাপড় কিনে অনেক লোককে বিতরণ করে নিজেকে সমাজে দানশীল হিসেবে প্রচারের জন্য। নাঊযুবিল্লাহ!
অথচ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ شَدَّادِ بْنِ اَوْسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ صَامَ يُرَائِـيْ فَقَدْ اَشْرَكَ وَمَنْ صَلّٰى يُرَائِـيْ فَقَدْ اَشْرَكَ وَمَنْ تَصَدَّقَ يُرَائِـيْ فَقَدْ اَشْرَكَ.
অর্থ : “হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি রোযা রাখে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে, সে র্শিক করলো, যে ব্যক্তি নামায আদায় করলো লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে, সে র্শিক করলো, যে ব্যক্তি যাকাত প্রদান করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে, সে র্শিক করলো।” (শু‘য়াবুল ঈমান লি বায়হাক্বী : হাদীছ শরীফ নং ৬৩৪০)
সম্মানিত যাকাত উনার নিয়ত থাকা আবশ্যক :
সম্মানিত যাকাত আদায়ে অবশ্যই নিয়ত করতে হবে। এটা ফরয ইবাদত। নিয়ত করা ওয়াজিব। মুখে উচ্চারণ করা বা যাকাত গ্রহণকারীকে শুনিয়ে বলা প্রয়োজন নেই। তবে মনে মনে নিয়ত অবশ্যই করতে হবে যে ‘আমি সম্মানিত যাকাত আদায় করছি’ অন্যথায় সম্মানিত যাকাত আদায় হবে না। তা সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে। তবে নিয়ত ছাড়াই সমস্ত সম্পদ ব্যয় করলে তার উপর আর কোন সম্মানিত যাকাত উনার হুকুম বর্তাবে না।
এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
وَلَا يَـجُوْزُ اَدَاءُ الزَّكٰوةِ اِلَّا بِالنِّيَّةِ مُقَارِنَةٍ لِّلْاَدَاءِ اَوْ مُقَارِنَةٍ لِّعَزْلٍ مِقْدَارِ الْوَاجِبِ وَمَنْ تَصَدَّقَ بِـجَمِيْعِ مَالِهٖ وَاِلَّا يَنْوِيَ الزَّكٰوةَ سُقِطَ فُرُوْضُهَا عَنْهُ
অর্থ : “যাকাত আদায়ের সময় অথবা মূল মাল হতে সম্মানিত যাকাত উনার মাল পৃথক করে রাখার সময় যাকাত আদায়ের নিয়ত করতে হবে। অন্যথায় যাকাত দিতে হবে না। যে ব্যক্তি সমস্ত মাল দান করল কিন্তু নিয়ত করল না সে যাকাতের দায় থেকে মুক্ত হবে না।” (মুখতাসারুল কুদূরী, পৃষ্ঠা ১১৫, প্রকাশনী মুওয়াসসাতুর রাইয়্যান)


সম্মানিত যাকাত উনার মাল গোপন না করে বরং যাকাত উছূলকারীকে সন্তুষ্ট করা যাকাতদাতার কর্তব্য : পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا اَتَاكُمُ الْمُصَدّقُ فَلْيَصْدُرْ (عَنْكُمْ) وَهُوَ عَنْكُمْ رَاضٍ‏.
অর্থ : হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন আপনাদের নিকট যাকাত উছূলকারী আসবেন, তখন তিনি যেন আপনাদের নিকট হতে আপনাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু ইরদ্বয়িস সায়ী’ মা লাম ইত্বলুব হারামা : হাদীছ শরীফ নং ৯৮৯; নাসায়ী শরীফ : কিতাবুয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ২৪৬১)
ইহতিকার বা মওজুদকরণের বিধান : মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মানুষের জীবন ধারণের পক্ষে আবশ্যক কোন খাদ্যবস্তুকে মওজুদ রাখা, ধরে রাখা, আটক রাখা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, বিশেষ করে দুষ্প্রাপ্যতার সময়ে। এটাকে সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় ‘ইহতিকার’ বলে। ইহতিকার দ্বারা মানুষের মনুষ্যত্ব লোপ পায়, পাপ বৃদ্ধি পায় এবং তাদের মধ্যে হিং¯্র প্রবৃত্তি ও ডাকাতী স্বভাব প্রকাশ পায়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مَعْمَرٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏ مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ‏.
অর্থ : “হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি ‘ইহতিকার’ করে, সে পাপী।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুল মুসাক্বাহ : বাবু তাহরীমিল ইহ্তিকারি ফিল আক্বওয়াত : হাদীছ শরীফ নং ৩৯৭৭)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اِحْتَكَرَ طَعَامًا اَرْبَعِيْنَ يَوْمًا يُرِيْدُ بِهِ الْغَلَاءَ فَقَدْ بَرِئَ مِنَ اللهِ وَبَرِئَ اللهُ مِنْهُ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন কোন খাদ্যবস্তু ঘরে আটকে রাখে, ইচ্ছা রাখে যেন এর মূল্য বৃদ্ধি হোক, সে মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত হতে বঞ্চিত হয় এবং তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি গোস্বাও করেন” নাঊযুবিল্লাহ! (রযীন; মিশকাত শরীফ ২য় খ- ১৫৪ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ২৮৯৬)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ اُمَامَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ اِحْتَكَرَ طَعَامًا اَرْبَعِينَ يَوْمًا ثُـمَّ تَصَدَّقَ بِهٖ لَـمْ يَكُنْ لَهٗ كَفَّارَةً.
অর্থ : “হযরত আবূ উমামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন কোন খাদ্যবস্তু ঘরে আটকে রাখে, সে তার ওই মাল দান-ছদক্বা করে দিলেও তার (গুণাহ মাফের) জন্যে কাফ্ফারা স্বরূপ হবে না।” নাঊযুবিল্লাহ! (রযীন, মিশকাত শরীফ ২য় খ- ১৫৪ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ২৮৯৮)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مَالِكٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّهٗ بَلَغَهٗ اَنَّ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنَ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ لَا حُكْرَةَ فِي سُوْقِنَا لَا يَعْمِدُ رِجَالٌ بِاَيْدِيْهِمْ فُضُوْلٌ مِّنْ اَذْهَابٍ اِلَى رِزْقٍ مِّنْ رِزْقِ اللهِ نَزَلَ بِسَاحَتِنَا فَيَحْتَكِرُونَهٗ عَلَيْنَا وَلٰكِنْ اَيُّـمَا جَالِبٍ جَلَبَ عَلٰى عَمُوْدِ كَبِدِهٖ فِي الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ فَذٰلِكَ ضَيْفُ حَضْرَتْ عُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَلْيَبِعْ كَيْفَ شَاءَ اللهُ وَلْيُمْسِكْ كَيْفَ شَاءَ اللهُ.
অর্থ : “হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। উনার নিকট রিওয়ায়েত পৌঁছেছে যে, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমাদের বাজারে কেউ ইহতিকার করবেন না। যাদের হাতে অতিরিক্ত মুদ্রা রয়েছে উনারা যেন মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত জীবিকাসমূহ হতে কোন জীবিকা বা খাদ্যশস্য ক্রয় করে আমাদের উপর মজুতদারী করার ইচ্ছা না করেন। আর যে ব্যক্তি শীত মৌসুমে ও গ্রীষ্মকালে নিজের পিঠে বোঝা বহন করে খাদ্যশস্য আনবেন তিনি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মেহমান, তিনি যেরূপ ইচ্ছা বিক্রয় করুক, যেরূপ ইচ্ছা মজুত করুক।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক : হাদীছ শরীফ নং ১৩২৩)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ مَالِكٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّهٗ بَلَغَهٗ اَنَّ حَضْرَتْ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ يَنْهٰى عَنْ الْـحُكْرَةِ.
অর্থ : “হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। উনার নিকট রিওয়ায়েত পৌঁছেছে যে, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ইহতিকারকে নিষেধ করেছেন।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক : হাদীছ শরীফ নং ১৩২৫)
ইহতিকার বা মাল-সম্পদ মওজুদকারীর শাস্তি :
ফিকাহর কিতাবে রয়েছে, ইহতিকারের ফলে দেশে সঙ্কট দেখা দিলে ইহতিকারকারীর ও তার পরিবারের জন্য আবশ্যক পরিমাণ খাদ্যশস্য রেখে বাকী সমস্ত খাদ্য-শস্য বিক্রি করে দেয়ার নির্দেশ জারী করা মুসলমান সরকারের কর্তব্য। এতে সে বাধ্য না হলে সরকার নিজেই তা বিক্রি করবেন এবং তাকে সমুচিত শাস্তি দিবেন। অবশ্য পবিত্র খিলাফত চালু থাকলে তাই করা হতো। (দুররুল মুখতার, বাবুল হজর ওয়াল ইবাহাত)
একজন যাকাত গ্রহীতাকে কি পরিমাণ যাকাত দেয়া উচিত :
যাকাতের টাকা প্রদানের ক্ষেত্রে যাকাতদাতা স্বাধীন। ইচ্ছা করলে তিনি উপযুক্ত যে কোন একজনকে পূর্ণ টাকা দিতে পারেন অথবা চাইলে কয়েকজন দরিদ্র মানুষের মাঝেও তা বন্টন করে দিতে পারেন। যাকাত ব্যয়ের একটি খাতেও দিতে পারেন। আবার একাধিক খাতেও দিতে পারেন। অনুরূপভাবে, ইচ্ছা করলে একদিনেই পূর্ণ টাকা প্রদান করতে পারেন। অথবা অল্প অল্প করে একাধিক সময়েও তা প্রদান করতে পারেন। অবশ্য, একজন হক্বদারকে এত বেশি দেয়া মাকরূহ, যে পরিমাণ মালের কারণে সে শরয়ী সংজ্ঞায় ধনী তথা যাকাত গ্রহণের অযোগ্য হয়ে যান। তবে, কেউ একসাথে সে পরিমাণ দিয়ে ফেললে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে নিছাব পরিমাণ থেকে কম দেয়া জায়িয, মাকরূহ নয়। আর উত্তম হচ্ছে একজনকে ন্যূনতম এ পরিমাণ প্রদান করা যা তার ঐ দিনের খরচের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। সে দিনের খরচের জন্য তাকে অন্য কারো দ্বারস্থ না হতে হয়। (আহকামু যাকাত ৩২, রদ্দুল মুহতার ২/৩৫৩, ফতওয়ায়ে আলমগীরি ১/১৮৮)
যাকাত প্রদান করুন


মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা উনার একাউন্ট নাম্বার সমূহ-

Account no.1
Muhammadia Jamia Shareef Madrasa & yatimkhana

A/C-200007569
Sonali Bank Limited, Malibag Branch
Dhaka, Bangladesh



Account no.2
name:-MD. Mufizul Islam

A/C-1020335489001 Naya-paltan branch
IFIC Bank Limited, Dhaka, Bangladesh
Swift Code: IFICBDDH



Account no.3
name:-MD. Mufizul Islam

A/C-108101277050 Shantinaghar branch
Dutch Bangla Bank Limited, Dhaka, Bangladesh
Swift Code: DBBLBDDH



Account no.4
Dutch Bangla mobile Banking-017187407422

Account no.5
Bkash-(parsonal) 01718740742, 01876043934, 01990770065
Bkash-(Agent)- 01709672605



0 Comments: