হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (الْاَصْلِيَةُ
اَلْـحَوَائِجُ) বা মৌলিক চাহিদা মিটানোর পর নিছাব পরিমাণ সম্পদ যদি নিজ
মালিকানায় পূর্ণ ১ বছর থাকে তাহলে যাকাত আদায় করতে হবে।
হাওল (الْـحَوْلُ) : সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় মালিকে নিছাবের হাওয়ায়িজে
আছলিয়াহ (الْاَصْلِيَةُ اَلْـحَوَائِجُ) বা মৌলিক চাহিদার অতিরিক্ত মাল-সম্পদ বা অর্থ-সম্পদ পূর্ণ ১ বছর
নিজ মালিকানায় থাকাকে হাওল (الْـحَوْلُ) বলে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
مَنِ اسْتَفَادَ مَالًا فَلَا زَكٰوةَ عَلَيْهِ حَتّٰى يَـحُوْلَ عَلَيْهِ الْـحَوْلُ عِنْدَ رَبّهٖ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি কোন মাল লাভ করেছে, তা এক বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার ওই মালের সম্মানিত
যাকাত নেই।” (তিরমিযী শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু মাজায়া লা যাকাতা ‘আলাল মালিল
মুসতাফাদ্বি হাত্তা ইয়াহূলা ‘আলাইহিল হাওলু : হাদীছ শরীফ নং ৬৩১ ও ৬৩২)
আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمـُؤْمِنِيْنَ
الثَّالِثَةَ عَلَيْهَا السَّلَامَ قَالَتْ لَيْسَ فِى مَالٍ زَكٰوةٌ حَتّٰى يَـحُوْلَ عَلَيْهِ الْـحَوْلُ.
অর্থ : “ হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে
মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা
করেন,
কোন সম্পদের বছর পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্বে সম্মানিত যাকাত ফরয
হবে না।” (ইবনে আবী শায়বা শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১০৩২২)
আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ
مَرْفُوْعًا لَيْسَ فِى مَالٍ زَكٰوةٌ حَتّٰى يَـحُوْلَ عَلَيْهِ الْـحَوْلُ.
অর্থ : “হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, কোন সম্পদের বছর পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্বে সম্মানিত যাকাত ফরয
হবে না।” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু ফী যাকাতিস সায়িমাহ : হাদীছ শরীফ
নং ১৫৭৩;
মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল শরীফ : ১ম খ- : পৃষ্ঠা ১৪৮ : বাবু
মুসনাদে আলী ইবনে আবি ত্বলিব আলাইহিস সালাম : হাদীছ শরীফ নং ১২৬৪; দারে কুতনী শরীফ : ২য় খ- : পৃষ্ঠা ৪৭০ : হাদীছ শরীফ নং
১৮৯২)
আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ لَيْسَ فِى مَالِ الْمُسْتَفِيْدِ زَكٰوةٌ حَتّٰى يَـحُوْلَ عَلَيْهِ الْـحَوْلُ
অর্থ : “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন,
কোন সম্পদের বছর পরিপূর্ণ হওয়ার পূর্বে সম্মানিত যাকাত ফরয
হবে না।” (দারে কুতনী শরীফ : ২য় খ- : পৃষ্ঠা ৪৬৮ : হাদীছ শরীফ নং ১৮৮৮; সুনানে কুবরা বায়হাক্বী শরীফ : ৪র্থ খ- : ১০৪ পৃষ্ঠা :
হাদীছ শরীফ নং ৭১১৫)
অগ্রীম যাকাত আদায়ের বিধান : যদিও যাকাত ফরয হওয়ার জন্যে বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত
অর্থাৎ নিছাব পরিমাণ সম্পদ কারো অধীনে পূর্ণ ১ বছর থাকা শর্ত। তারপরও বছর পূর্ণ
হওয়ার পূর্বেও যাকাত আদায় করা যায়।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ
اَنَّ حَضْرَتِ الْعَبَّاسَ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَاَلَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ تَعْجِيْلِ صَدَقَتِهٖ قَبْلَ اَنْ تَـحِلَّ فَرَخَّصَ لَهٗ فِى ذٰلِكَ.
অর্থ : “হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, একবার হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আপন
যাকাত বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই দেয়া সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে সম্মানিত
যাকাত আদায়ের অনুমতি দিলেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু ফী তা’যীলিয
যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ১৬২৪, তিরমিযী শরীফ :
কিতাবুয যাকাত ‘আন্না রসূলুল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : বাবু মাজায়া
ফী তা’যীলিয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ৬৭৮; ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু তা’যীলিয যাকাতি ক্ববলা মাহিল্লিহা :
হাদীছ শরীফ নং ১৭৯৫)
অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কোন মালিকে নিছাব বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই অগ্রীম যাকাত
আদায় করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ কোন ব্যক্তি ৫০ লক্ষ টাকার মালিক হওয়া সত্ত্বেও ১
কোটি টাকার যাকাত আদায় করে দিলো এবং বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই সম্পদ বেড়ে ১ কোটি
টাকায় উপনীত হলো। এমতবস্থায় ১ কোটি টাকার নতুন করে যাকাত আদায় করতে হবে না, বরং অগ্রীম আদায়ই যথেষ্ট হবে। আবার কোন ব্যক্তি ৫০ লক্ষ
টাকার মালিক, তিনি এই ভেবে ১ কোটি টাকার যাকাত
আদায় করে দিলেন যে, বছর পূর্ণ হওয়ার
পূর্বেই তিনি আরো ৫০ লক্ষ টাকার সম্পদের মালিক হবেন এবং পরবর্তীতে তাই হয়েছে।
এমতবস্থায় উনার ১ কোটি টাকার যাকাত আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে
যদি ৫০ লক্ষ টাকা অর্জিত না হয় তাহলে উক্ত ৫০ লক্ষ টাকার অগ্রীম আদায়কৃত যাকাত
পরবর্তী বছরের যাকাত থেকে কর্তন করা যাবে।
কোন মালিকে নিছাব অগ্রীম যাকাত আদায়ের কারণে যদি কোন অভাবী লোক বছর পূর্ণ
হওয়ার আগেই সম্পদশালী হয়ে যায় তাহলেও এই অগ্রীম যাকাত আদায় জায়িয এবং যাকাতদাতার
যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে অগ্রীম যাকাত আদায় করা জরুরী নয়। পূর্ণ এক বছর
অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বে মালিকে নিছাবের ইন্তিকাল হলে উক্ত মালিকে নিছাবের যাকাত
মওকুফ হয়ে যায়। উশর ও খনিজ সম্পদের অগ্রীম যাকাত আদায় করা সম্ভবপর নয়। কেননা
একদিকে এই সম্পদের অগ্রীম পরিমাপ জানা যায় না, অপরদিকে এক বছর পূর্ণ হওয়াও শর্ত নয়।
শুধুমাত্র বছরের মধ্যবর্তী সময়ে নিছাব ঠিক থাকলে সেক্ষেত্রে যাকাত আদায়ের
বিধান : বছরের শুরুতে ও শেষে নিছাব ঠিক থাকলেও বছরের মাঝখানে যদি কমেও যায়, তবু যাকাত দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবে ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন, বছরের শুরু এবং
শেষে তথা নির্ধারিত তারিখে নিছাব ঠিক থাকলে তাকে অবশ্যই সম্মানিত যাকাত দিতে হবে, যদিও মাঝখানে কখনো নিছাব থেকে কিছু অংশ কমে যায়। এরপরও তাকে
সম্মানিত যাকাত আদায় করতে হবে। (কুদূরী, আল হিদায়া)
বিগত বছরের কাযা বা অনাদায়ী যাকাত ঋণ হিসেবে গণ্য : কারো অতীত যাকাত অনাদায়ী
বা অবশিষ্ট থাকলে তা ঋণের মধ্যে গণ্য হবে। চলতি বছরে যাকাত আদায়ের পূর্বেই অনাদায়ী
কাযা যাকাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। (ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহ)
সম্মানিত যাকাত ও উশর হচ্ছে ফরয, আর ,
ফিত্বরা ওয়াজিব। আর তাই ফরযের ক্বাযা আদায় করাও ফরয, ওয়াজিবের ক্বাযা আদায় করা ওয়াজিব।
চলতি বছরে যাকাত আদায়ের পূর্বেই অনাদায়ী যাকাত, ফিত্বরা, উশর আদায় করতে হবে। তবে কারো
পক্ষে যদি সম্ভব না হয় তবে চলতি বছরেরটা আদায় করবে আর পিছনেরটা অল্প অল্প করে আদায়
করে দিতে হবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)
বিগত বছরগুলিতে তার যে পরিমাণ সম্পদ ছিলো তা হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, যদি কারো অতীত যাকাত, ফিত্বরা, উশর অনাদায়ী বা
অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তা ঋণের মধ্যে গণ্য হবে।
যার কোন কাফফারা নেই। নির্ধারিত যাকাত পরিশোধের পূর্বেই সম্পদের মালিক মারা গেলে
এই ঋণ তার ওয়ারিসদের উপর বর্তাবে। বর্তমান বাজার দরে আদায় করা।
ঋণগ্রস্তের পরিণতি :
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ ثَوْبَانَ
رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ فَارَقَ الرُّوْحُ الْـجَسَدَ وَهُوَ بَرِيْءٌ مِّنْ ثَلَاثٍ الْكَنْزِ وَالْغُلُوْلِ وَالدَّيْنِ دَخَلَ الْـجَنَّةَ.
অর্থ : “হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন ব্যক্তি তিনটি বিষয় হতে মুক্ত থাকা অবস্থায় উনার রূহ
দেহ হতে আলাদা হলে তিনি জান্নাতে যাবেন- সম্পদ পুঞ্জীভূত করা, গনীমতের মাল আত্মসাৎ করা ও ঋণ।” (তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ
নং ১৬৭৩;
ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৫০৫)
সুতরাং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির পরিণতি জাহান্নাম। বস্তুত ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির আত্মা
তার গৃহীত ঋণের সাথে ঝুলন্ত ও আবদ্ধ হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَفْسُ الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِهٖ حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন ব্যক্তির রূহ্ ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার ঋণের
সাথে বন্ধক অবস্থায় থাকে।” (তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১০৭৮; ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৫০৬)
ঋণগ্রস্ততা এত ভয়াবহ যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জানাযার
নামায পড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ مَاتَ رَجُلٌ فَغَسَّلْنَاهُ
وَكَفَّنَّاهُ وَحَنَّطْنَاهُ وَوَضَعْنَاهُ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيْثُ تُوضَعُ الْـجَنَائِزُ عِنْدَ مَقَامِ جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ ثُـمَّ اٰذَنَّا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الصَّلَاةِ فَجَاءَ مَعَنَا خُطَى ثُـمَّ قَالَ هَلْ عَلٰى صَاحِبِكُمْ دَيْنٌ قَالُوْا نَعَمْ دِينَارَانِ فَتَخَلَّفَ فَقَالَ لَهٗ رَجُلٌ مِنَّا يُقَالُ لَهٗ حَضْرَتْ اَبُوْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُـمَا عَلَيَّ فَجَعَلَ رَسُوْلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ هُـمَا عَلَيْكَ وَفِيْ مَالِكَ وَحَقُّ الرَّجُلِ عَلَيْكَ وَالْمَيِّتُ مِنْهُمَا بَرِيءٌ فَقَالَ نَعَمْ فَصَلُّى عَلَيْهِ فَجَعَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اِذَا لَقِيَ اَبَا قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ مَا صَنَعْتَ فِي الدِّينَارَيْنِ حَتّٰى كَانَ اٰخِرَ ذٰلِكَ قَالَ قَدْ قَضَيْتُهُمَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْاٰنَ حِيْنَ بَرَدَتْ عَلَيْهِ جِلْدُهٗ.
অর্থ : “হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে
বর্ণিত। একজন ব্যক্তি তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করলে উনারা উক্ত ব্যক্তি উনাকে গোসল ও
কাফন পরিয়ে সুগন্ধি লাগিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ আনা হলো। এমনকি মৃত ব্যক্তি
উনার লাশ মাক্বামে জিবরীল আলাইহিস সালাম নামক স্থানে রাখা হলো এবং জানাযার নামায
পড়ানোর ব্যাপারে আমরা আরজু পেশ করলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক এনে সুওয়াল
মুবারক করলেন, আপনাদের সাথী উনার উপর ঋণ রয়েছে? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা
জাওয়াব মুবারক দিলেন, হ্যাঁ, দুই দিনার ঋণ রয়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে আদেশ মুবারক করলেন, আপনারা আপনাদের সাথী উনার জানাযা পড়–ন। হযরত আবূ ক্বাতাদাহ্
আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ওই দুই দীনার ঋণ পরিশোধের
দায়িত্ব আমি নিলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এই দুই দীনার আপনার ও আপনার সম্পদের উপর ন্যস্ত, এই ইন্তিকালকৃত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই
দুই দীনার থেকে মুক্ত। হযরত আবূ ক্বাতাদাহ্ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
বললেন,
তাই হবে। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জানাযার নামায পড়লেন।
কিন্তু পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবূ
ক্বাতাদাহ্ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখলেই বলতেন, সেই দুই দীনারের কি হলো?
অতঃপর যখন আবু কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জানালেন যে, তিনি তা পরিশোধ করে দিয়েছেন, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন, তাহলে এখন আপনি উনার চামড়াকে শীতল
করলেন।” (দারে কুতনী শরীফ ৪র্থ খ-, ৫৪ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ৩০৮৪; দারে কুতনী শরীফ ৭ম খ-, ৩৯২ পৃষ্ঠা :
হাদীছ শরীফ নং ৩১২৯; মুসতাদরাকে
হাকীম শরীফ ২য় খ-, ৫৮ পৃষ্ঠা :
হাদীছ শরীফ নং ২৩৪৬)
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় শহীদ হলেও উনার ঋণ ক্ষমা করা
হবেনা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا
اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يُغْفَرُ لِلشَّهِيْدِ كُلُّ ذَنْبٍ اِلَّا الدَّيْنُ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর ইবনে ‘আছি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, শহীদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, তবে ঋণ ব্যতীত।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুল ঈমান : বাবু মান
ক্বুলিলা ফী সাবীলিল্লাহি কুফ্ফিরাত খ¦তাইয়াহু ইল্লাদ্ দাইন : হাদীছ শরীফ নং ৪৬৪৯; মুসতাদরাকে হাকীম শরীফ ২য় খ-, ৫৮ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ২৫৫৪)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مُـحَمَّدِ
بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ جَحْشٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ اِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاذَا لِيْ اِنْ قَاتَلْتُ فِي سَبِيْلِ اللهِ حَتّٰى اُقْتَلَ؟ قَالَ الْـجَنَّةُ قَالَ فَلَمَّا وَلّٰى قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلَّا الدَّيْنُ سَارَّنـِيْ بِهٖ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اٰنِفًا.
অর্থ : “হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ একজন ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এসে বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যদি মহান আল্লাহ পাক উনার
রাস্তায় শহীদ হই তবে আমার কি পুরস্কার হবে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন, জান্নাত। এই কথা শুনে উক্ত ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ইরশাদ মুবারক করলেন, ঋণ ছাড়া যা সম্পর্কে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে
এই মাত্র জানালেন।” (মুসনাদে আহমাদ শরীফ ৪র্থ খ-, ১৩৯ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ১৭৩৮৬)
উপরের বর্ণনা হতে দেখা যাচ্ছে যে, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি শহীদও হন তারপরেও ঋণের দায় ক্ষমা করা হয় না। তাহলে
সম্মানিত যাকাত অনাদায়ী ঋণ নিয়ে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার অবস্থা কত ভয়াবহ হবে তা সহজেই
অনুধাবনীয়।
সম্মানিত যাকাত উনার হিসাব কখন থেকে করতে হবে?
সম্মানিত যাকাত বছরান্তে ফরয হয় এবং বছরান্তে সম্মানিত যাকাত উনার হিসাব করা
ওয়াজিব। চন্দ্র বছরের তথা আরবী বছরের যে কোন একটি মাস ও তারিখকে সম্মানিত যাকাত
হিসাবের জন্যে নির্ধারণ করতে হবে। ফসলী বা ইংরেজী বছর হিসাব করলে তা শুদ্ধ হবে না।
সম্মানিত যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ ও পণ্যের বেলায় এই শর্ত আরোপিত কিন্তু কৃষিজাত ফসল, মধু, খনিজ সম্পদ
ইত্যাদি ক্ষেত্রে বছরান্তের শর্ত নেই। প্রতিটি ফসল তোলার সাথে সাথেই সম্মানিত
যাকাত (উশর) আদায় করতে হবে কম বেশি যা-ই হোক। তবে ছদাক্বাতুল ফিত্বর-এর জন্যে বছর
পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়। পবিত্র ঈদের দিন ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই ছাহিবে নিছাব হলে
ছদাক্বাতুল ফিত্বর আদায় করতে হবে। আর পবিত্র কুরবানী উনার হুকুমও অনুরূপ অর্থাৎ ১০, ১১, ১২ই যিলহজ্জ
শরীফ উনার মধ্যে যে কোন দিন মালিকে নিছাব হলে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব। হিসাবের
সুবিধার্থে পহেলা রমাদ্বান শরীফ; এ সম্মানিত
যাকাত হিসাব করা যেতে পারে। এটাই উত্তম ও পবিত্র সুন্নত মুবারক।
সম্মানিত যাকাত পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে দেয়াই উত্তম :
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে
১টি ফরয আদায়ে ৭০টি ফরয আদায়ের ছাওয়াব দান করেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ
মাস উনার মধ্যেই সম্মানিত যাকাত আদায় করতেন।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتِ السَّائِبِ
بْنِ يَزِيدَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّ حَضْرَتْ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ يَقُوْلُ هٰذَا (شَهْرُ رَمَضَانَ) شَهْرُ زَكَاتِكُمْ فَمَنْ كَانَ عَلَيْهِ دَيْنٌ فَلْيُؤَدِّ دَيْنَهٗ حَتّٰى تَـحْصُلَ اَمْوَالُكُمْ فَتُؤَدُّوْنَ مِنْهُ الزَّكَاةَ.
অর্থ : “হযরত সাইব ইবনে ইয়াযীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। হযরত যুন
নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে বলতেন, এ মাস আপনাদের সম্মানিত যাকাত আদায়ের মাস। অতএব, কারো ঋণ থাকলে তিনি যেন উনার ঋণ পরিশোধ করেন, যেন আপনাদের সম্পদ সঠিকভাবে নির্ণীত হয় এবং আপনারা
(সঠিকভাবে) তা থেকে সম্মানিত যাকাত আদায় করতে পারেন।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক শরীফ :
খ- ১৭ : কিতাবুয্ যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ৫৯৬)
যাকাত প্রদান করুন
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা উনার একাউন্ট নাম্বার সমূহ-
Account no.1
Muhammadia Jamia Shareef Madrasa & yatimkhana
A/C-200007569
Sonali Bank Limited, Malibag Branch
Dhaka, Bangladesh
Account no.2
name:-MD. Mufizul Islam
A/C-1020335489001 Naya-paltan branch
IFIC Bank Limited, Dhaka, Bangladesh
Swift Code: IFICBDDH
Account no.3
name:-MD. Mufizul Islam
A/C-108101277050 Shantinaghar branch
Dutch Bangla Bank Limited, Dhaka, Bangladesh
Swift Code: DBBLBDDH
Account no.4
Dutch Bangla mobile Banking-017187407422
Account no.5
Bkash-(parsonal) 01718740742, 01876043934, 01990770065
Bkash-(Agent)- 01709672605
0 Comments:
Post a Comment