ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আ’যম,
লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদুর রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার
স্মরণে-
একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
হজ্ব সমাপন এবং মসজিদে নববীতে বিশেষ নিয়ামত মুবারক লাভ
ইল্মে জাহির ও ইল্মে বাতিন, অর্থাৎ
ইলমে ফিক্বাহ ও ইল্মে তাছাউফে অপরিমেয় ব্যুৎপত্তি হাছিলকারী, সূক্ষ্মদর্শী
আত্মজ্ঞ ওলী আল্লাহ্,
হক্ব প্রকাশে নিবেদিত প্রাণ, ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলার্দু
রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি
পরিপূর্ণরূপে সুন্নতের পাবন্দ ছিলেন। তিনি ছিলেন আশিকে রসূল। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, রোগ-শোক, আহার-অনাহার, আমল-আখলাক, রীতি-নীতি, নিদ্রা-জাগরণ
ও শয়নে-স্বপনে তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্
নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার
ধ্যানে-খেয়ালে মশগুল থাকতেন। জীবদ্দশায় নিমিষের তরেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে উনার যোগাযোগ-বিচ্ছেদ ঘটেনি। সম্পর্কের গভীরতা এমন
পর্যায়ের ছিল যে,
সাক্ষাতের জন্য নিদ্রার প্রয়োজন হয়নি। নিদ্রা ও জাগরণ উভয়
অবস্থায় অনুক্ষণ দিদার সংঘটিত হয়েছে।
বুঝতে কষ্ট হয়না যে, ইমামুল আউওয়ালীন
ওয়াল আখিরীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে উনার কতো নিগূঢ়
সম্পর্ক স্থাপিত ছিল। আর অতি সহজে একথাও বোঝা যায় যে, এই মধুর
সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তিনি কতো উঁচু স্তরের ওলী ছিলেন। এমন অবধারিত সম্পর্ক
স্থাপন ও যোগাযোগের মাধ্যমেই আল্লাহ্ পাক-উনার তরফ থেকে ওলীগণের মাহবুবিয়াত হাছিল
হয় এবং তাঁরা শীর্ষ মাকাম অর্জনকারী ওলী আল্লাহ্ অভিধায় অভিষিক্ত হয়ে থাকেন।
আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় ইচ্ছা এবং উনার প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় অনুমতি ও আগ্রহ ছাড়া কারো পক্ষেই এ সৌভাগ্য অর্জন করা সম্ভব
হয়না।
অনুক্ষণ
দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে। দিদার সংঘটিত হচ্ছে। যোগাযোগ হচ্ছে অবিরাম। পাক রওযা মুবারকে
হাজির হয়ে সালাম পেশ করার অদম্য আগ্রহ তিনি শৈশবকাল থেকেই অন্তরে লালন করছেন।
সাক্বিয়ে কাওছার,
দলীলে কা’বায়ে মাকছূদ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-উনার স্মরণ হৃদয়কে ব্যথিত করে তোলে। উনার প্রতি মুহব্বত সকল আনন্দ ও
প্রশান্তিকে যাতনাবহুল করে দেয়। দূর থেকে নিরন্তর সালাত ও সালাম পেশ এবং সাক্ষাৎ
লাভ করে প্রত্যাশা পূরণের অবশিষ্ট কিছু নেই। তবু আশিকের মনতো মানেনা।
জীবনের সব আয়োজন ও
ইচ্ছেগুলোতো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কেন্দ্র করেই পল্লবিত
হয়েছে। তাই রওযা মুবারকের নিকট সান্নিধ্যে গিয়ে অন্তর উজাড় করে সালাম পেশ এবং
বুকের অভ্যন্তরে জমে থাকা সকল দুঃখ-বেদনা-যাতনা ও মিনতি জানাবার মাধ্যমে একান্ত
অনুগত আশিক হিসেবে পুনর্বার স্বীকৃতিলাভে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের জন্য এতো
ব্যাকুল আগ্রহ। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় আহবানে মদীনা
শরীফ উপস্থিত হয়ে একাজটি সমাধা হতে পারে। আল্লাহ্ পাক উনার মাহবুব, মাদারজাদ
ওলী, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার
প্রার্থনা কবুল করেন।
১৯৬৭ ঈসায়ী সালে তিনি
পবিত্র হজ্ব সম্পন্ন করেন। এ লক্ষ্যে প্রথমে তিনি মদীনা শরীফের দিকে রওয়ানা হন।
মদীনা শরীফ অভিমুখে নির্বাক আশিক পথিকের লালিত ভাবনাগুলো বিন্যস্ত। কিন্তু অন্তর
দুরু দুরু। প্রত্যাশা পূরণের অগ্রযাত্রায় দ্বন্দ্ব-সংকট ও আনন্দ-বেদনায় মানসিক
অবস্থা নাজুক। চাওয়া-পাওয়ার অজানা শষ্কায় হৃদয় ভারাক্রান্ত। কেবল মনে হয় বিরহের
যাতনার চেয়ে মিলনের আনন্দের কষ্টও একটু কম নয়। না জানি কোন ত্রুটি হয়ে যায়। মাশুক
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে উনার কতো নিগূঢ় নৈকট্যের
সম্পর্ক, কতো জানাজানি,
কতো সাক্ষাৎ, কতো মধুর আলাপন। তবু কাঙ্খিত
মিলনের দ্বারপ্রান্তে সংকটের আবর্তে কেন এতো কষ্ট! সম্ভবতঃ এমন বেদনায় দগ্ধ হয়েই
কারো কারো উক্তিঃ “মিলন ভালো। বিচ্ছেদ আরো ভালো।” মূলতঃ শীর্ষ স্থানীয় ওলীগণের
সকলেই প্রাপ্তির প্রাক্কালে এবং প্রত্যাশা পূরণের মুহূর্তে বেদনা-বিমুগ্ধ ভাবনার
আবর্তে এমন মধুর যাতনায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এই কষ্ট থেকে আল্লাহ্ পাক-উনার মাহবুব
ওলীগণের নিস্তার নেই। পরম নিয়ামত লাভের মাধ্যমে শীর্ষ মাকামাত হাছিলের ক্ষেত্রে
ওলীগণের এই প্রেক্ষিত বেদনাকাতরতা অবধারিত শর্ত হিসেবে আরোপিত।
আবা-১১৭
0 Comments:
Post a Comment