ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আ’যম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলার্দু রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-
একজন
কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-
হজ্ব এবং যিয়ারত মুবারক শেষে দেশে ফেরার পালা ॥
মন পড়ে রয়েছে পবিত্র রওযা মুবারকে প্রতিটি বিষয়েরই দু’টি দিক রয়েছে। একটি যাহিরী এবং অপরটি বাতিনী। দৃশ্যমান এবং উপলব্ধ যাবতীয় বিষয়ের ফায়সালা মেধা, প্রজ্ঞা এবং শরীয়তের মানদণ্ডে নির্ধারিত হয়ে থাকে। অদৃশ্য এবং অনুপলব্ধ বিষয় সাধারণ মানুষের একান্তই অজ্ঞাত। তাই এসবের সমাধানে শরীয়তের নিয়ামক ভূমিকা নেই। কৌতূহলী ও অনুসন্ধিৎসু মানব মন অজানাকেও জানতে চায়। মানুষের এ দুর্নিবার আকাঙ্খার আরম্ভ ও নিবৃত্তি কেবলই অনুমান নির্ভর। ব্যক্তিভেদে আপেক্ষিক ধারণা ও অনুমানে আত্মগত পন্থায় সত্য সন্ধানে বিচরণ করা গেলেও আদৌ হাক্বীক্বতে পৌঁছা যায় না। পক্ষান্তরে মাহবুব ওলীগণকে আল্লাহ্ পাক ইলহাম, ইলকা এবং ইলমে লাদুন্নী দ্বারা সমৃদ্ধ ও সম্মানিত করে থাকেন।
আকরামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে দিদার ও অবিরাম সংযোগ-সম্পৃক্ততায়
সূক্ষ্মদর্শী ওলীআল্লাহগণ কামিয়াবীর যে পরিণত মাকামে উপনীত হন, তাতে
আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় ইচ্ছায় অজানা বিষয় ও রহস্যের দরজাও উনাদের কাছে অবারিত হয়ে
যায়। অর্থাৎ উনারা হক্কুল ইয়াক্বীনের স্তরে পৌঁছে যান। আর হক্কুল ইয়াক্বীন এমন
পরিপূর্ণ স্তর যে স্তরে জানা ও অজানার ভেদরেখা মুছে যায়।
প্রকৃত কামালত হাছিলের ক্ষেত্রে বান্দার জন্য এটি একটি মূল
সোপান। সাধারণ মানুষ ওলীআল্লাহ্গণের মর্যাদা লাভের প্রক্রিয়া এবং পরিধি সম্পর্কে
অজ্ঞাত। এমনকি অতি উচুঁ মাকামের ওলীগণের অবস্থা সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত নীচু মাকামের
ওলীগণও অনবহিত থাকেন,
যতক্ষণ না ঐ উচুঁ মাকামে উনাদের উত্তরণ ঘটে। কাজেই বিরহকাতর অন্তরের ব্যাকুল আগ্রহে মদীনা
শরীফে স্বশরীরে হাজির হয়ে ওলীয়ে মাদারজাদ, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ
মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি ছহিবু ফাতহিম মুবীন, আশিকে
উম্মত, মাশুকে মাওলা,
হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-উনার পবিত্র যবান মুবারক থেকে স্বীকৃতিলাভে যে পরিপূর্ণতা হাছিল করলেন, তা সবিস্তার
আলোচনায় জানা গেলেও উনার লব্ধ অতল গভীর মাকাম
ও কামিয়াবীর স্তর ও মর্যাদার সোপান আমাদের কাছে অজ্ঞাত রয়ে গেল।
হজ্ব সমাপন হয়েছে এবং প্রত্যাশিত পরম নিয়ামতও হাছিল হয়েছে।
বাহ্যতঃ সকল কাজই সমাপ্ত হয়েছে। এখন দেশে ফেরার পালা। সে প্রস্তুতিও চলছে। কিন্তু
মন পড়ে রয়েছে পবিত্র রওযা মুবারকে। পবিত্র রওযা মুবারক এবং মসজিদে নববীতে যে পরম
নিয়ামত হাছিল হয়েছে তারপরে পাবার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মনতো কিছুতেই চায়না
মদীনা শরীফ ছেড়ে আসতে। মূলতঃ মদীনা শরীফের সঙ্গে ওলীআল্লাহ্গণের মনঃসংযোগ এরূপই
হয়ে থাকে।
বর্তমান বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারতের
বিশাল জনপদে তৎকালে হাদীছ শরীফ প্রচার ও প্রসারকারী আশিকে রসূল, হযরত
শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র রওযা মুবারকে হাজির
হয়ে সবিনয়ে প্রার্থনা জানালেনঃ “ইয়া রসূল্লাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ্, ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম,
মন কিছুতেই চায়না আপনার মুবারক সন্নিধান ছেড়ে দূরে যেতে।
আপনি বিহনে জীবন আমার দুর্বিষহ এবং অবশেষে ইন্তিকাল। দয়া করে আমাকে আপনার মুবারক
ছোহবতে থাকার অনুমতি দান করুন।”
রওযা মুবারক থেকে জবাব
এলোঃ “হে শায়খ আব্দুল হক,
তোমার কর্মক্ষেত্র দিল্লী।আপনি দিল্লী চলে যান। সেখানে আমার
হাদীছ শরীফ এবং দ্বীন ইসলামের প্রচার-প্রসার করেন। একই সঙ্গে আমার অবলুপ্ত
সুন্নতগুলো যিন্দা করেন।আপনি আশ্বস্ত হও যে, প্রতিদিনই অন্ততঃ একবারআপনি
আমার সাক্ষাৎ পাবেন।” আশ্বাসবাণী পেয়ে নির্দেশমতো তিনি দিল্লী চলে এলেন এবং
প্রতিদিনই মুবারক দিদার লাভ করতে থাকলেন।
(অসমাপ্ত)
আবা-১২১
0 Comments:
Post a Comment