ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্
দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ,
ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে
আ’যম, লিসানুল হক্ব,
গরীবে নেওয়াজ, আওলাদুর রসূল, আমাদের সম্মানিত
দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-
একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
মুর্শিদ ক্বিবলার ইন্তিকাল
দ্বীন ইসলাম প্রচার, হিদায়েত ও
সংস্কার কাজ, ইসলাম বিরোধী কুসংস্কার অপসারণ, শিক্ষা বিস্তার এবং ইল্মে শরীয়ত ও
ইলমে তাছাউফে আপামর মানুষকে অভ্যস্ত করে তোলার মহান দায়িত্ব তিনি আমৃত্যু পালন করেন
ভারতের ফুরফুরা শরীফ,
ফুরফুরা শরীফের নিকটবর্তী গ্রাম, কলিকাতা, অন্যান্য
অনেক স্থান এবং বাংলাদেশে। উনার ব্যাপ্তি, প্রভাব ও অনুশীলন সময়ের গন্ডি পেরিয়ে
পাক-ভারত-বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জনপদে, দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৫০
ঈসায়ী সালের এপ্রিল মাসে তিনি সপরিবারে ঢাকায় তাশরীফ আনেন। ফুরফুরা শরীফ থেকে তিনিই
প্রথম তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) আসেন। ঢাকায় এসে প্রথমে তিনি
সিদ্বেশ্বরীর একটি বাড়ীতে উঠেন। প্রায় সাত মাস তিনি ঐ বাড়ীতে অবস্থান করেন। অতঃপর ঢাকাস্থ
গেন্ডারিয়ায় তাশরীফ আনেন এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। সেখানে তিনি খানকা
শরীফ স্থাপন করেন। ১৯৫০ হতে ১৯৭১ ঈসায়ী সাল পর্যন্ত ঐ খানকা শরীফে তিনি পরিপূর্ণরূপে
হিদায়েতের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
১৯৭১ ঈসায়ী সালের মার্চ মাসের
তৃতীয় সপ্তাহে তিনি শেষ বারের মতো ফুরফুরা শরীফ থেকে বাংলাদেশে আসেন এবং এপ্রিল মাসের
প্রথম সপ্তাহে ফুরফুরা শরীফ চলে যান। উনারপর উনার আর বাংলাদেশে আসা সম্ভব হয়নি। দ্বীন
ইসলাম বিস্মৃত সমাজকে জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে ঢাকাস্থ গেন্ডারিয়া খানকা শরীফে তিনি অগণিত
মানুষকে ছহীহ্ দ্বীনি শিক্ষা ও দীক্ষা দান করেছেন।
অবিরাম কর্মব্যস্ততায় শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও
বাংলাদেশের বিভিন্ন জিলায়,
এমনকি দেশব্যাপী প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে তিনি ওয়াজ-নছীহত করেছেন, মানুষকে তা’লীম দিয়েছেন।
উনার মাধুর্যপূর্ণ ওয়াজ-নছীহত অবলীলায় সকল স্তরের মানুষের অন্তর স্পর্শ করতো। বিগলিত
অন্তরে তন্ময় হয়ে মানুষ উনার কথা শুনতো। উনার মুবারক ছোহ্বতে কতো মানুষ যে হিদায়েত
লাভ করেছে, উনার হিসাব মেলা ভার। ভারতের পশ্চিম বাংলা, আসাম ও বাংলাদেশে তিনি অনেক মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব ও খানকা
শরীফ স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ থেকে মাঝে মাঝে তিনি ফুরফুরা শরীফ ও কলিকাতার বাড়ীতে
চলে যেতেন। আবার ফিরে আসতেন।
অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৯৭১ ঈসায়ী
সাল থেকে উনার শরীর অসুস্থ হতে থাকে। ১৯৭১-উনার ১৭ এপ্রিল উনার ‘ষ্ট্রোক’ হয়। এতে তিনি
খুব আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তিনি আর কোথাও ছফরে যেতে পারেননি। ইন্তিকাল অবধি প্রায় এগার
বছর তিনি ফুরফুরা শরীফেই ছিলেন। বিশেষ প্রয়োজনে কলিকাতা ছাড়া তিনি কোথাও যাননি। একান্ত
অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি খানকা শরীফে উপস্থিত আপন খলিফা, মুরীদ ও অগণিত
মানুষের সমস্যার কথা শুনতেন, সমাধান দিতেন। উনাদেরকে ইল্মে জাহির ও ইল্মে বাতিন শিক্ষা দিতেন।
জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ‘আমল-আখলাক, আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি, দান-ধ্যান, নিষ্ঠা-ইখলাছ, ইবাদত-রিয়াজত, চাল-চলন, বলা-শোনা,. শোয়া-বসা, খাওয়া-দাওয়া, এমনকি রোগ-শোকে
ফানাফিশ্ শায়খ, ফানার্ফি রসূল ও ফানাফিল্লায় তিনি পরিপূর্ণরূপে ইস্তিকামাত (অবিচল) ছিলেন।
অবশেষে খলীফা ও মুরীদ-মু’তাকিদসহ দেশ-দেশান্তরের
অগণিত মানুষকে শোকসাগরে ভাসিয়ে ইল্মে জাহির ও ইল্মে তাছাউফের উজ্জ্বল নক্ষত্র, ওলীয়ে মাদারজাদ, কুতুবুল আলম, সুলতানুল
আরিফীন, শাইখুত্ তরীক্বত,
গাউছে যামান, ন’হুযূর ক্বিবলা, হযরতুল আল্লামা, শাহ্ ছূফী, আবূ নজম মুহম্মদ
নাজমুস্ সায়াদাত ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ১২ রবিউল আউয়াল ১৪০২ হিজরী, ২২ পৌষ ১৩৮৮
বঙ্গাব্দ, ০৭ জানুয়ারী ১৯৮২ ঈসায়ী রাতে চির নিদ্রায় শায়িত হন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি
রাজিউন) মুজাদ্দিদ পিতা হযরত আবু বকর ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার কবরের
পূর্ব পার্শ্বে ফুরফুরা শরীফের একই মাযার শরীফ প্রাঙ্গণে উনাকে দাফন করা হয়। (অসমাপ্ত)
আবা-১১৫
0 Comments:
Post a Comment